"বয়স হোক আট কিংবা আশি ।
চলো সময় পেলেই ঘুরে আসি ।।" বাঙালি আর ভ্রমণ একে অপরের পরিপূরক।বাঙালি ঘুরতে ভালোবাসে না এই রকম খুঁজে পাওয়া মুশকিল।আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তাই 26 শে জানুয়ারির ছুটিতে মোট 6 বন্ধু বেড়িয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে।কলকাতা থেকে গেছি 3 জন আর বাকি 3 জন ওখানকারই।সকাল 6.55 এর হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেস এ উঠে পড়লাম আমরা তিনজন। ঠিক 9.20 তে নেমে পড়লাম ঝাড়গ্রাম রেলওয়ে স্টেশনে ।সেই দিনের আকাশ বেশ কুয়াশাচ্ছন্ন। সেই দেখে মন খানিকটা বিষণ্ণ ।পাহাড় এ যাবো কিন্তু চারপাশ পরিষ্কার না থাকলে হয়?? যাই হোক এই সব ভাবতে ভাবতে বন্ধুর ফোন আসে । ওরাই ওখানে আগে থেকে একটা গাড়ি ভাড়া করে রেখেছিল ।আমরা যেতেই স্টেশনে টিফিন সেরে ঠিক 10টার সময় বেড়িয়ে পড়লাম বেলপাহাড়ির উদ্দেশ্যে ।সেই কলেজের পর দেখা বাকি 3 জনের সাথে । শুরু হলো মজা, ঠাট্টা। সাথে জানলা দিয়ে দেখতে থাকলাম গোটা ঝাড়গ্রাম কে । অনেকে একে জঙ্গল মহল বলে। তাই বটে চারপাশ শুধু শাল আর শাল গাছের সারি। কোন সিনেমার চেয়ে কম নয় ।মাঝে মাখনের মত রাস্তা আর দুপাশে শালের বন ।গাড়ি 90 এর কম যায় না।। মাঝে বাধ্য হলাম ড্রাইভার কাকুকে থামিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি তুলতে।এই ভাবে ঢুকে পড়লাম বেলপাহাড়ি। ঝাড়গ্রাম থেকে বেলপাহাড়ি প্রায় 45 কিমি । তবে আমাদের প্রথম গন্তব্য গাডরাসিনি পাহাড় । সেখান থেকে আরো 12 কিমি প্রায় । পাহাড়ি রাস্তায় একে বেঁকে পৌঁছালাম গাডরাসিনি ।গাড়ি থেকে নেমে প্রায় 30 মিনিট এর একটা ছোট ট্রেক। উঠতে হবে পাহাড়ের চূড়ায় । পাথুরে মাটি আর বেশ চড়াই রাস্তাটা। তবে রোমাঞ্চ প্রতি পদে পদে। শেষে চড়লাম শিখরে ।ততক্ষনে আকাশ একটু পরিষ্কার হয়েছে। সুদূর ঘাটশিলা দেখা যায় ওই চূড়া থেকে । খানিকক্ষণ থেকে ছবি তুলে নেমে এলাম নীচে । যাদের পাহাড়ে চড়ার অভিজ্ঞতা নেই তাদের কাছে এটা একটা নতুন রোমাঞ্চের জায়গা। পাহাড় থেকে নেমে আবার গাড়িতে উঠলাম । এবার আমাদের পরের গন্তব্য ধান্দারানী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে যার তুলনা হয়না ।একদিকে বাঁধ । অন্য দিকে জল আর পাহাড় । জলে দেখা যাচ্ছে বালি হাঁস । যে পাখি আজ প্রায় বিরল ।সেখানে খানিক ক্ষণ দেখে আবার ফিরে এলাম বেলপাহাড়ি।সেখানে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা হলাম ঘাঘরা । ছোট্ট একটা জলপ্রপাত ।দূর থেকে বয়ে আসা ছোট নদী বড়ো বড়ো কঠিন শিলায় ধাক্কা খেয়ে মাঝ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ।এক মায়াবী পরিবেশ ।প্রকৃতির কি অপরূপ সৃষ্টি ।সত্যি চাক্ষুস না করলে কত কি না দেখাই থেকে যেত । সেখান থেকে গেলাম তারাফেনী ।একই একটি বাঁধ । শীতকাল বলে জল প্রায় নেই বললে চলে তবে বর্ষায় এক ভয়ংকর ব্যাপার তৈরি হয় ।পাশে আছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মৎস প্রকল্প ।সব দেখে শেষে বেড়িয়ে পড়লাম এবার ঝাড়গ্রামের উদ্দেশ্যে । রাস্তায় একটা জায়গায় নেমে চা , চপ খেয়ে আর কেজি 2 মাংস কিনে ফিরলাম বন্ধুর বাড়ি । না আমরা কোনো হোটেলে থাকিনি ছিলাম বন্ধুর বাড়িতে তবে খোঁজ নিয়ে দেখেছি 700-2000 সব রকমের হোটেল আছে ওখানে । রাতের বন্ধুর বাড়িতে জমিয়ে রান্না করলো আমার বন্ধু সায়ান্তন। খেয়ে এবার ঘুমানোর পালা তবে ঘুম আর আসে কই ?? যা দেখলাম সেটা নিয়ে আলোচনা শুরু হলো সবার মধ্যে ।পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আবার টিফিন সেরে বেড়িয়ে পড়লাম ঝাড়গ্রাম ঘুরতে। সকাল 10টায় একটি টোটো ভাড়া করে চারপাশ ঘুরে ফেললাম । দেখালাম চিলকিগড় কনকদুর্গা মন্দির , বন্ধুরা মিলে boating ও করে ফেললাম কিছুক্ষন । পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ডুলুং নদী,কি অপরূপ । যদিও এখন হেটে পার করা যায় ।তবে বর্ষায় নৌকায় পার হতে হয় ।এই সব দেখে ঝাড়গ্রাম রাজবাড়ী ও ডিয়ার পার্ক দেখে ফিরলাম বন্ধুর বাড়ি তখন দুপুর 2 টো। দুপুরের খাবার খেয়ে 3 টের সময় বেড়িয়ে পড়লাম বাড়ির উদ্দেশ্যে ।সেদিন ট্রেনের অসুবিধা থাকায় বাসে করে ফিরতে হলো বাড়ি। তবে হ্যা যারা বলে ঝাড়গ্রাম মানে মাওবাদী তাদের উদ্দেশ্যে বলবো ঝাড়গ্রাম মানে প্রকৃতি, বিশুদ্ধ অক্সিজেন,পর্যটনের আনন্দতীর্থ । পাহাড় হোক কিংবা জঙ্গল খেয়াল রাখবেন প্লাস্টিক জাত দ্রব্য একদম ব্যবহার না করাই ভালো ।এগুলো আমাদের সম্পদ। দেখাশোনা করা,ভালো রাখার দায়িত্ব আমাদের এই । বলে রাখি গাড়ির ভাড়া নিয়েছিল 2500 টাকা এবং টোটো ভাড়া নিয়েছিলো 650 টাকা। আশাকরি সবাই যাবেন ঘুরতে । **কিছু ছবি পোস্ট করছি আমাদের এই ছোট্ট দুদিনের ট্রিপের***
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |