এবার এসেছি সারান্ডায়(২৩ থেকে ২৬শে জানুয়ারি)। সাতশো পাহাড়ের দেশ থেকেই সারান্ডা শব্দের উৎপত্তি। তারই অংশ কিরিবুরু আর মেঘাতুবুরু। হো ভাষায় মেঘাতুবুরু কথার অর্থ জমাট বাঁধা মেঘেদের মতো জমাটি বুরু অর্থাৎ জঙ্গল। তেমনই ছিল কিরিদের বুরু অর্থাৎ পোকাদের জঙ্গল কিরিবুরুতে। যমজ দুই গঞ্জ শহরের অবস্থান পাশাপাশি একই শৈলশিখরে সারান্ডার জঙ্গলে। মেঘাতুবুরুতে বোকারো স্টিল আর কিরিবুরুতে কিরিবুরু আয়রন ওর কোম্পানির কারখানায় পাথর গুঁড়িয়ে লোহা মেলে। সেই লোহা যাচ্ছে ভারতের বিভিন্ন ইস্পাত প্রকল্পে।
সারন্ডা বন সীমান্ত উভয় রাজ্য ওড়িশা ও ঝাড়খন্ড সীমান্তে অবস্থিত। সারন্ডা মানে হঠাৎ এই ঘন বনভূমির মধ্যে বিশাল সংখ্যক হাতির উপস্থিতির কারণে হাতির নাম পাওয়া যায়। সেইল (স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড) কর্তৃক পরিচালিত আয়রন ওরস্ খনিগুলির উপস্থিতির কারণে ঝাড়খন্ডে অবস্থিত কিরিবুুরু এবং মেঘহাতুবুরু সারান্ডা বন বরাবর সবচেয়ে পরিচিত গন্তব্যস্থল। যদিও এই জায়গায় পর্যটনের সাথে সম্পর্কিত ইন্টারনেটে খুব কম তথ্য উপস্থিত থাকার কারণে, প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের প্রথমে কিছুটা সংগ্রাম করতে হয়েছিল। এখানে আমরা এসেছি সকালে হাওড়া থেকে ইস্পাত এক্সপ্রেসে মনোহরপুর ষ্টেশনে, মনোহরপুর গঞ্জ শহরটি বেশীরভাগ খৃষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাস। এখানে আমাদের জন্য রিসর্ট থেকে গাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিল। এখানে আমরা উঠেছি “সন্তুর গেস্ট হাউসে”। মনোহরপুর গঞ্জের মধ্যে একটা সুন্দর রিসর্ট। রিসর্টের তত্বাবধায়ক/অধিকর্তী শ্রীমতী মঞ্জুষা গাঙ্গুলি। এত সুন্দর তার অতিথি আপ্যায়ন যেটার কোনো তুলনা হয়না। পুরোপুরি ঘরোয়া পরিবেশে থাকা ও খাওয়া। প্রায় দুই একর জমির ওপর সবরকম গাছগাছালি দিয়ে সাজানো এই রিসর্ট। কাছাকাছি ঘোরার জায়গা কিরিবুরু ও মেঘাতুবুরু জঙ্গলের ভেতরে সুন্দর কয়েকটা ফলস্ ও কোয়েল নদী ও কোয়েনা নদীর সঙ্গম এবং কোয়েল নদী ও কোরা নদীর সঙ্গম। যারা প্রকৃতি প্রেমিক তাদের কাছে এটি একটি সুন্দর জায়গা। আবার যারা একসাথে ১২-১৩ জনের গ্রুপে বেড়ানো পছন্দ করেন তাদের কাছে রিসর্টে বসে আড্ডা মেরে সময় কাটানোর পক্ষে দারুন জায়গা। একসাথে ২০ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। প্রথম দিন আমরা এখানে “শমিজ আশ্রম”(শঙ্করাচার্যের আশ্রম) দেখতে গেলাম, যেখানে কোয়েল ও কোরা নদীর সঙ্গমস্থল। দ্বিতীয় দিন মেঘাতুবুরু ও কিরিবুরুর জঙ্গলের ঘুরে ঝিঙরি ফলস্ ও পাচরি ফলস্ দেখে এলাম। খুব ভালো লাগে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যেতে।বিকেলে কিরিবুরুতে “SAIL” এর এলাকার ভেতরে সুন্দর একটা সান সেটা ভিউ পয়েন্ট থেকে সূর্যাস্তের দৃশ্য অপূর্ব। তৃতীয় দিন যাওয়ার কথা ছিল থোলকাবাদ কিন্তু CRPF এর অনুমতি না পাওয়ার দারুন সারাদিন রিসর্টে জমিয়ে আড্ডা হল ও বিকেলে মনোহরপুর গঞ্জ ঘুরে দেখলাম। চতুর্থ দিন আজ (২৬শে জানুয়ারি) ইস্পাত এক্সপ্রেসে ফিরে এলাম।
1 Comment
সিদ্ধার্থ দত্ত ।
2/10/2019 09:17:45 pm
অসাধারণ বর্ণনা । যে লেখা দূরকে করে নিকট ও জীবন্ত তাকে তো কুর্ণিশ জানাতেই হয় । সাবাশ।
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |