প্রায় তিন মাস পড়ে হালকা শীতের আবহে মিষ্টি রোদ গায়ে মেখে দুই বন্ধু চলেছি এক অনেক দিনের জানা, অনেকেরই না জানা এক Off-Beat জায়গায়। আজকে জায়গাটার নাম প্রথমেই বলে দিচ্ছি, সেটি হল “সবুজ দ্বীপ”। সেই ছোট্টো বেলা থেকে শূনে এসেছি, যাইনি কখনো। আর সত্যি সবুজ, প্রাণবন্ত সবুজে ভরা। তবে এই সবুজ দ্বীপ কিন্তু সেই কাকাবাবূ বা শোণ্টূর সবুজ দ্বীপ নয়। আর আমাদের সঙ্গে ছিলেন না কোন কাকাবাবুও। ছিলাম শুধু আমরা দুজন ভাইপো। কাদের ভাইপো আবার, আপনাদেরই ভাইপো। এবার চলে আসি আমাদের ভ্রমণ কাহিনীতে...
২২শে নভেম্বড়,২০২০ আমি আর আমার বন্ধু সম্রাট প্রায় তিন মাস পরে চলেছি এই সংসার থেকে বেড়িয়ে এক্টূ মুক্ত খোলা আকাশের হাওয়া খেতে। সকাল ৭ঃ৩০ টায় বেরলাম আমাদের বাড়ী থেকে। বেড়িয়ে প্রথমে বন্ধুটিকে বাইকে তুললাম তার বাড়ী থেকে। উঠলাম কল্যাণী রোডে, তেল ভরিয়ে হাইরোড ধরে এগিয়ে চললাম বলাগড়ের উদ্দেশে। বাড়ী থেকেই গুগুলে দেখে নিয়েছি কি ভাবে যাব। ঈশ্বরগুপ্ত সেতু পেড়িয়ে, কিছুটা গিয়ে ডানদিকে বেকে উঠলাম SH-6এ । এই রাস্তাই সোজা চলে গিয়েছে বলাগড়ে। নৈহাটি থেকে দূরত্ব দেখলাম প্রায় ৪০ কিমি। কিছু ঘিঞ্জি এলাকা বাদ দিয়ে আমরা চলেছি একদম ফাঁকা রাস্তা ধরে। চারপাশের মাঠ সবুজে সবুজ, চাষ হচ্ছে। হাওয়া যা দিচ্ছিল, শীতও লাগছিল বেশ। এই পথে আসতে আপনাদের কিন্তু মন জুড়িয়ে যাবে। কিন্তু আস্তে গেলে আবার ফিরতে দেরী হয়ে যাবে, এই ভেবে স্পীড একই রেখে এগিয়ে চললাম। এই ভাবে প্রায় দেড় ঘণ্টা চলার পর, একজন স্থানীয় লোককে জিজ্ঞাসা করে নিলাম ডান দিকের মোড়, সামনেই রেলগেট। একদিকে বলাগড় অন্যদিকে সোমরা বাজার। এখানে কিছুক্ষণ থামলাম টিফিন করার জন্য। সদ্য ভাজা গরম গরম কচুরি ছোলার ডাল সহযোগে ৬ পিস সাঁটিয়ে দিলাম, সঙ্গে নিলাম ২ টো নলেন গুঁড়ের রসোগোল্লা।এরপর আরও ১৫ মিনিট মত এসে আমরা পৌছালাম জেটীঘাটে। সবুজ দ্বীপের কাছে জেটিঘাটে যখন আমরা পউছালাম তখন ঘড়িতে পৌনে ১০ টা বাজে। আপনাদেরকে একটা কথা বলি, এই সবুজ দ্বীপে সব লোকই আসে কিন্তু পিকনিক করতে, আবার অনেকে শান্ত পরিবেশে থাকতে। কিন্তু অনেক দিন না বেরোনোর জন্য মন ও ভালো ছিল না। তাই আমরা চলে এলাম সবুজ দ্বীপ ঘুরে দেখতে, একটু কাছ থেকে নিরবতা অনুভব করতে। পাশেই আছে দেখলাম থাকবার জন্য একটি ছোটো হোটেল, যদিও বন্ধ। স্থানীয় একটি বাড়ীতে বাইক রেখে এগিয়ে যেতেই একটি ছেলের সঙ্গে দেখা, বললাম সবুজ দ্বীপে যাব, নিয়ে গেল। কাঠের নৌকায় ইঞ্জিন লাগান, ভোটভোটী। কিছুটা এগোনোর পরই, তেল যাওয়ার লাইনে হাওয়া ঢুকে বন্ধ হয়ে গেল। কিছুটা টানল দাঁড় বেয়ে, বাকি কিছুটা হাতে টানা নৌকাতে। এখানে জেটী আছে, তবে আমরা নামলাম চড়ে। এখান থেকে হেঁটে দ্বীপে গেলাম। নৌকা থেকে দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, দ্বীপটা অনেকটা বড়। মাঝিকে জিজ্ঞাসা করাতে বলল জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৪০ মিনিট মত। দ্বীপে নেমেই আমরা প্রথমেই উঠলাম সামনের ওয়াচ টাওয়ারে। আপনি যদি ভাবেন ভিতর দিকে অনেকটা দেখতে পাবেন তাহলে ভুল করছেন। একমাত্র নদীর দিক ও তার আশেপাশের দিকটাই একমাত্র দেখা যাচ্ছে। আর গাছ বড় থাকার জন্য ভিতরের দিকে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। তবে একটা কথা প্রথমেই বলে রাখি, এখানে যা জঙ্গল, আর যা সবুজে সবুজ আপনার একটা বেলা নিশ্চিন্তে কেটে যাবে ঘুরে ঘুরে। এখানে নতুন করে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার চেষ্টা চলছে, এদিক ওদিক বালি, সিমেন্ট সব ছড়ান। তাই আমরা ওয়াচ টাওয়ার থেকে নেমে নদীর পাশ বরাবর দ্বীপেরই উঁচু জায়গা ধরে চলতে লাগলাম। যত এগচ্ছি জঙ্গল তত ঘন হচ্ছে। তবে মাঝে মাঝে কিছু জায়গা বেশ ফাঁকা দেখতে পেলাম। আমরা চলেছি বাঁ দিক ধরে, একটা জায়গায় গিয়ে দেখলাম লোহা দিয়ে বাড়ীর structure তৈরি করা আছে, কিন্তু তৈরি আর হয়নি ঐ অবস্থাতেই রয়ে গেছে। তবে একটা জিনিষ দেখলাম, এখানে প্রত্যেকটি গাছে শামুকখোলের বাসা। আর কোন একটা আওয়াজ করলেই ঝাঁক ধরে উড়ে যাচ্ছে, আবার কিছুক্ষণ পর এসে ডালে বসে পড়ছে। আমরা এবার ডানদিকে এগলাম। একটা ফাঁকা জায়গার মধ্যে দিয়ে গিয়ে মানুষ যেখান দিয়ে চলাচল করে সেই রাস্তায় গিয়ে পড়লাম। এই জায়গাটা থেকে আবার সোজা চলে গেলে আরও গভীর জঙ্গল। আমরা এগিয়ে চললাম আরও গভীরের দিকে। যতদূর মনে হয় তেলাকুচের ফুল হলুদ রঙের হয়, এই ফুল সারা পথ জুড়ে ফুটে থাকে দেখা গেল। আর এর যে ফল সেগুল বেশ লাল লাল এবং বড়। আমরা অনেকটা ভিতরে ঢুকে গিয়ে দেখলাম এখানে আর একটা ওয়াচ টাওয়ার আছে। কিন্তু পাশেই গাছে উঁচুতে মৌমাছির চাক, ভনভন করছে। ওয়াচ টাওয়ারে জং ধরে গেছে, লতায় পাতায় জড়িয়ে ধরেছে, তাও সিঁড়ি দিয়ে ওঠা যায়। আমরা দুই জন ছিলাম একসাথে উঠেছি, তবে আপনারা যদি যান দেখে শুনে উঠবেন। তবে বেশ শক্ত দেখলাম, ভেঙে যাওয়ার চান্স যদিও নেই। এখানেও এত জঙ্গল যে চারপাশে জংগল ছাড়া কিছু বেশি দেখা গেল না, পাশেই মৌমাছির চাকটা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছিল, অনেকটা বড়। একটা কথা বলে রাখা প্রয়োজন এখানে কিন্তু বেশ মশা আছে, ছোট ছোট কামড়ালে দেখলাম ফুলে যাচ্ছে। তবে এইটুকু বোঝা গেল এখানে শেয়াল আর ভামও আছে। আবার সেই জঙ্গল পথ দিয়ে আমরা ফিরে চললাম আমরা যেখানে এসেছিলাম সেইখানে। মাঝ পথে কিছুক্ষণের বিশ্রাম একটি দালানে। মাঝি ভাই আমাদের বলে দিয়েছিল ফেরত যাওয়ার ২০ মিনিট আগে আমাদের ফোন করতে, তাই করে দিলাম। আমরা জঙ্গলে ঢুকেছিলাম বাঁ দিক দিয়ে তাই ডান পাশে কাত গুলো ভাঙ্গাচোরা কটেজ আছে সেগুলো দেখা হয়নি। চললাম সেদিকে। এখানে উম্পুনের সময় অনেক গাছ ভেঙে পড়েছে, আবার অনেক জঙ্গলও হয়ে গেছে, সেগুলি পরিস্কার করার জন্য লোক লাগান হয়েছে। তাদের কাছ থেকে জানতে পারলাম এই কটেজ গুলোতে আগে খাট ছিল কিন্তু এখন সেগুলো চুরি হয়ে গেছে। এখানে সারিবদ্ধ ভাবে প্রায় ১০ টি মত কটেজ আছে, সব গুলোতে ওঠার পথ একদম ভেঙে গিয়েছে, আবার যেটাতে উঠা যাচ্ছে সেটাতে হয়ত বারান্দা ভাঙ্গা। এবার আমরা চললাম চড়ের দিকে। যেতে গিয়ে চোখে পড়ল হাতি আর জিরাফের statue। দোলনাও আছে। আর একটু এগোতেই দেখলাম মাঝি ভাই আমাদের নিতে এসেছে। আমরা যখন দ্বীপ ছাড়লাম তাখন বাজে প্রায় পৌনে ১২ টা। পাড়ে এসে মাঝির টাকা মিটিয়ে জানতে চাইলাম এখানে দেখার মত আর কিছু আছে কিনা। মাঝি ভাই বলল, কাছেই ২ মিনিট মত এগোলেই পড়বে সিদ্ধেশরি মন্দির। তার কথা মত বেশ কিছুটা এগিয়েই একটা পুকুরের পাড়ে পড়ল সেই মন্দির। এই মন্দিরের দুই পাশে ছোট ছোট ছটি করে মন্দির আছে। এই গুলির একটিতে আছেন গণেশ ঠাকুর, অন্য গুলিতে আছে শিব লিঙ্গ। এখানে কিছুক্ষণ কাটিয়েই পাশেই গেলাম একটি পুরানো রাজ বাড়িতে। যদিও কেও থাকে না এখন। দোতলা রাজবাড়িতে উপরের তলায় ঘাস, আগাছা জন্মে নষ্ট হয়ে গেছে। কিন্তু একতলায় সদর দরজার মুখোমুখি কোন পূজার প্রস্তুতি চলছে দেখলাম। মাঝ খানে আবার এক সময় হাড়িকাঠে বলি হত দেখলাম। এখান থেকে আমরা ধরলাম বাড়ীর পথ। শেষে একটা কথা বলি, এটি পিকনিক স্পট হলেও একসময় এখানে লোকে ছুটি কাটাতেও আসত। তাই অন্তত একবেলা এখানে কাটিয়ে গেলে খারাপ লাগবে না। মনটাও ফ্রেশ হয়ে যাবে। বাংলায় লেখার সময় ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |