এবছর পুজোর পর বেরিয়ে পরেছিলাম বাঁকুড়ার উদ্দেশ্যে, 2 রাত 3 দিনের জন্য। অত্যন্ত দ্বিধার সাথেই স্বীকার করছি, সিকিম থেকে আন্দামান ইত্যাদি ঘুরে বেড়োলেও আমার অবস্থা ওই 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া'... শিশির বিন্দু না দেখা অবস্থা। সেই কারণে তো বটেই, আর তার সাথে সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখেই বেছে নিয়েছিলাম এই ট্রিপটা।
বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর, গনগনি, মুকুটমণিপুর ইত্যাদি বাংলার মনিমুক্তার খবর তো সকলেই রাখে, কিন্তু এর সাথে আমরা জুড়ে নিয়েছিলাম একটি 'অফ-ট্রাক স্পট', বাঁকুড়ার বিকনা গ্রাম। প্রসঙ্গত এব্যাপারে আমি এই গ্রুপের কাছে কৃতজ্ঞ, কেননা এই গ্রামের কথা আমি এই গ্রুপেই জানতে পারি। ডোকরা শিল্পের প্রতি আগ্রহ আমার ছোটবেলা থেকেই, স্বাভাবিকভাবেই নিজের চোখে শিল্পীর শিল্পচর্চা দর্শনের সুযোগ ছাড়তে চাইনি। কিন্তু মুশকিল হল বিষ্ণুপুর পৌঁছেও যাকেই বিকনা গ্রামের কথা জিজ্ঞেস করি, আকাশ থেকে পরে। বুঝলাম পাঁচমুড়া গ্রামটি বেশ পরিচিত হলেও এখনও তেমন পরিচিতি পায়নি বিকনা। অগত্যা লাঞ্চ সেরে 'জয়বাবা গুগলনাথ' বলে বেরিয়ে পড়লাম গাড়ি নিয়ে বিকনার উদ্দেশ্যে। বিষ্ণুপুর থেকে বিকনা যেতে সময় লাগলো ঘণ্টাখানেকের একটু বেশি। পিচঢালা রাস্তা থেকে তণ্বী রাঙ্গামাটির পথ খানিকটা গিয়ে মিশেছে তারই আরেক সহোদরার সাথে। তার দুই পাশেই গুটিকয়েক পরিবার বংশপরম্পরায় ধরে রেখেছে এই সুপ্রাচীন শিল্পকে। গালা আর মোমের সন্নিবেশে এবং দক্ষ হাতের কারসাজিতে আকার নিচ্ছে লকেট, বালা, পালকি, আদিবাসী, পেঁচা, ঘোড়া থেকে শুরু করে দেবদেবীর মূর্তি পর্যন্ত। সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাজের কারিগরি দেখতে দেখতে সময় কখনই যথেষ্ট মনে হবে না। সকলেই নিজেদের বাড়ির সামনে সাজিয়ে রেখেছেন তাদের শিল্পের পসরা, পড়ন্ত সূর্যের আলোয় যা সোনার মত ঝিলমিলিয়ে উঠছে। আমরাও সংগ্রহ করে এনেছি আমাদের সাধ্যমত কিছু, হাসিমুখগুলিকে কথা দিয়ে এসেছি পরেরবার বাঁকুড়া গেলে বিকনা গ্রামে আরেকবার পদার্পণ বাদ পরবে না। সাথে রইল কিছু ছবি আর অনুরোধ, বিষ্ণুপুর গেলে অবশ্যই যান একবার, নিরাশ হবেন না। প্রাচীন এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখা শুধু শিল্পীদেরই নয়, আমাদেরও সমান দায়িত্ব। ©Pallabi Saha
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |