..... আমার শহর আমার ঐতিহ্য ছোট্টো প্রচেষ্টা 🌟🌟🌟 ️কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ির ঐতিহ্যময় দুর্গোৎসব 🌟🌟🌟 💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯💞🔯 মুর্শিদাবাদের বনেদিবাড়ির পূজোগুলির মধ্যে অন্যতম কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িরর পূজো। সেই রাজাও নেই, নেই সেই রাজ্যপাঠ। তবে রয়ে গেছে ঐতিহ্য ও পরম্পরা। সেই ঐতিহ্যই বাঁচিয়ে রেখেছে কাশিমবাজারের রায় বাড়ির পূজোকে। ১৭৪০ সালে রেশমের ব্যাবসায়ী শ্রী দীনবন্ধু রায় অধুনা বাংলাদেশের ফিরজপুর থেকে ব্যবসার জন্য এসেছিলেন কাশিমবাজারে। পরে এই কাশিমবাজারেই বসবাস করতে শুরু করেন তিনি। ব্রিটিশ সরকার শ্রী দীনবন্ধু রায়কে রেশম কুটিরের প্রধান হিসেবে ঘোষনা করেন। ব্রিটিশ সরকারের আনুকুল্যে ফুলে ফেঁপে ওঠে সেই ব্যবসা। ১৭৯৩ সালে ব্রিটিশ সরকার রায় পরিবারকে জমিদারির স্বত্ব দেয়। মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজারের ছোট রাজবাড়িতে তারপর থেকেই শুরু হয় দুর্গাপূজো। ওবাড়ির উত্তরসূরিরা এখন শহর নিবাসী। কিন্তু বছরের এই সময়টা জেগে ওঠে সারা বছর অবহেলায় পড়ে থাকা এই জমিদার বাড়ি। রায়বাড়ির উত্তরসূরিদের তত্ত্বাবধানে সাজোসাজো রব পড়ে যায় পূজোর কটা দিন। পরিবারের সদস্যেরা সপরিবারে এই রাজবাড়িতেই কাটান পূজোর কটা দিন। রথের দিন কাঠামো পূজোর মধ্যে দিয়ে পূজোর সূচনা হয়। ওই দিনই প্রতিমা তৈরির কাজে হাত দেন শিল্পীরা। চতুর্দশীর দিন প্রতিমার গায়ে রং লাগে। মহালয়ার দিন বেদীতে তোলা হয় মাকে। শুক্লা পঞ্চমী থেকে প্রতিপদ পর্য্যন্ত ছ'জন পুরোহিত পূজো করেন। ষষ্টির দিন আমন্ত্রণ, অধিবাস, ও বোধন হয়। সপ্তমীর দিন সকালে নবপত্রিকা গঙ্গায় নিয়ে গিয়ে স্নান করানো হয়। প্রাচীন ঐতিহ্য মেনেই সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী ও সন্ধিপূজো অনুষ্ঠিত হয়। প্রাচীন প্রথা অনুযায়ী সপ্তমী থেকে নবমী পর্য্যন্ত, তিনদিনই এখানে কুমারী পূজো হয়, যা রাজবাড়ির মহিলারা করেন। দশমীর দিন হয় অপরাজিতা পুজো। আগে এই পূজোতে বলি দেওয়ার প্রথা থাকলেও এখন আর বলি হয় না। মাকে ভোগে মাছ-মিস্টি নিবেদন করা হয়। লুচি-পায়েস থেকে পোলাও-ইলিশ। ভোগের আয়োজনে এখনও রাজকীয় মুর্শিদাবাদের কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ি। রাজকীয় ভোগের আয়োজন শুরু হয়ে যায় প্রতিপদ থেকেই। ষষ্ঠী পর্যন্ত লুচি, বোঁদে, মিষ্টি, সন্দেশ, পায়েস, আনারস, নাসপাতি, সরবতি আলু, আপেল আখ, পেয়ারা, বাতাবি লেবুর মতো ফল দিয়ে ভোগ নিবেদন করা হয় দেবীকে। রাতে লুচি, পায়েস, সুজি ও ক্ষীরের শীতল ভোগ। শুরুর এই আয়োজন সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীর এলাহি ভোগের সলতে পাকানোর ব্যবস্থা মাত্র। এলাহি ভোগের মেনুতে থাকে পোলাও থেকে সাদা ভাত, পাঁচ তরকারি থেকে পাঁচ রকমের ভাজা— বেগুন, কুমড়ো, আলু, পটল, ডালের বড়া। তরকারির মধ্যে ফুলকপির ডালনা থেকে মোচার ঘণ্ট, লাউ-চিংড়ি, মুগের ডাল। অবশ্যই থাকে ইলিশ মাছের ঝোল আর রুই মাছের কালিয়া। শেষ পাতে টমেটোর চাটনি। কোনও দিন গোবিন্দভোগ চাল আর সোনামুগের ডালের উপাদেয় খিচুড়িভোগ রান্না করা হয়। সন্ধিপুজোর জন্য পৃথক ভোগের বন্দোবস্ত থাকে। রাজবাড়ির প্রধান পুরোহিত সৌমেশ্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সপ্তমী থেকে নবমীর ভোগকে বলা হয় বাল্যভোগ। প্রতিদিন এই ভোগ দেবীর পদতলে নিবেদন করার পর প্রসাদ হিসাবে ভক্তকুলের মধ্যে বিলি করা হয়। নবমীর দুপুরে পংক্তি ভোজন।’’ সপ্তমী থেকে নবমীর বিশাল আয়োজনের ভার চার জন ঠাকুর আর ছ’জন সহযোগীর কাঁধে। পুজোপাঠের দলও নেহাত ছোট নয়। সেই দলে থাকেন সাত জন। প্রধান পুরোহিত নদিয়ার দেবগ্রাম নিবাসী ৬৮ বছরের বৃদ্ধ সৌমেশ্বর চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে তিন জন পুরোহিত চণ্ডীপাঠে ব্যস্ত থাকেন বাকি তিন জন পুরোহিত থাকেন দুর্গানাম জপে মগ্ন। সৌমেশ্বরবাবুর প্রধান সহযোগী পুরোহিত গোপাল রায় জানিয়েছেন, রাজত্বের সঙ্গে অবলুপ্ত হয়েছে সামন্ত যুগের পুজোর বেশ কিছু প্রথা। বর্তমান রানিমা সুপ্রিয়াদেবী আর রাজা প্রশান্ত রায়ের কল্যাণে ফের টিকেও আছে ঐতিহাসিক আমলের কিছু নিজস্ব ঐতিহ্য। সপ্তমী, অষ্টমী ও নবমীতে কুমারী পুজোর পাশাপাশি সধবা পুজো হয় কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়িতে। বেদিতে শাড়ি, শাঁখা, লোহা, সিঁদুর দিয়ে সধবা বসানোর পর তাঁর পুজো করা হয়। আবার বন্ধ হয়ে গিয়েছে পশুবলি ও সন্ধিপুজোয় তোপ দাগার মতো প্রাচীন প্রথা। পশুবলি বন্ধের কাহিনিটা শোনালেন সৌমেশ্বরবাবু। সেটা ১৯৮৪ সাল। তখন বেঁচে ছিলেন রাজা কমলারঞ্জন রায়। নিয়ম, এক কোপে বলি দিতে হবে। কিন্তু সে বার পরপর দু’টো ছাগবলির ক্ষেত্রেই দু’কোপ দিতে হয়েছিল। সেই থেকে রাজা কমলারঞ্জন রায় পুরোহিতের নিদান মেনে পশুবলি বন্ধ করে দেন। বিকল্প হিসাবে এখন উৎসর্গ করা হয় রুই মাছের ঝোল ও কাঁচা সন্দেশ। বলি প্রথা বাতিল হলেও স্বমহিমায় বিরাজ করছে কয়েকশো বছরের প্রাচীন তুলোট কাগজে হাতে লেখা ৪৫ পাতার পুঁথি। রাজপুরোহিত জানালেন, ওই পুঁথি লেখা হয়েছে কালিকাপুরাণ, বৃহৎ নান্দি কেশর ও দেবীপুরাণের সমন্বয়ে। প্রাচীন এই পুঁথি থেকে চণ্ডীপাঠ করে রাজবাড়ির দেবীদুর্গার আরাধনা হয় বরাবর। যেমন, রাজার আমলের পেল্লাই সাইজের পিতলের হাঁড়িতে ভোগ রান্নার রেওয়াজ চলছে এখনও। কিছু বছর আগেও এই বাড়িতে নীলকন্ঠ পাখী ওড়ানো হত। কিন্তু কালের নিয়মে এখন সেসব অতীত। সকলের রইলো সাদর আমন্ত্রণ........। ছবি :- সংগৃহিত Post By-Ritam Dev Roy
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |