বাঙালি আর শীত শব্দদুটি অনেকটা নলেন গুড়ের মতোই আঁঠালো । আর এসবের সাথে যদি ছুটি যোগ হয় তাহলে অজৈব রসায়নের নিয়ম মাফিক তৈরী হয় ভ্রমণ পিপাসা । অগত্যা ভাবনা চিন্তা শুরু করতেই হলো যে এবারের ভ্রমণ বৃত্তান্তে কি যোগ করা যায়। চিন্তা শুরু করলেই তো হলোনা, আমাদের মতো বাঙালিদের জন্যই আজ কোথাও যাওয়ার ৪ মাস আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু করতে হয়। কপালে ভাঁজ নিয়ে গরু খোঁজা শুরু। কোথাও ওয়েটিং লিস্ট সেঞ্চুরি করেছে তো কোথাও হাত তুলে দিয়ে বলছে আর নিতে পারবনা বস, ক্ষেমা দাও । ইন্টারনেট , ভ্রমণ , মগজ সব মিলেও যখন একটি ঘোরার মতো জায়গা আর irctc থেকে দুটি টিকিট জোগাড় করতে পারা যাচ্ছে না তখন হটাৎ ঘুমের মধ্যে অশরীরীর আনাগোনা উপলব্ধি করা গেলো । আর দেরি না করে তড়িঘড়ি রওনা দিলাম গয়া । ও কি, গয়া বলতেই মনের মধ্যে পিন্ড , প্রেত এসব এলো নাকি? এর বাইরে গয়ার একটা পরিচয় আছে। অদ্ভুত সুন্দর বিহারের এই জায়গাটির আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে মৌর্য, গুপ্ত ও কুষান যুগের ইতিহাস। চলুন এবার জেনেনি আমাদের ভ্রমণ বৃত্তান্ত।
১) গন্তব্যস্থল : বুদ্ধগয়া (Bodhgaya) ২) কেন যাবেন : অলিতে গলিতে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস , হাড় কাঁপানো শীত , ঝকঝকে তকতকে রাস্তাঘাট , নানা রঙে সাজানো আন্তর্জাতিক মন্দির , কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় লামা , চারিদিকে বুদ্ধের স্ত্রোত্র পাঠ আর গরম গরম তিবত্তী থুকপা যদি আপনাকে আকৃষ্ট করে, তো যেতে পারেন বুদ্ধগয়া।বিশেষ করে ডিসেম্বর আর জানুয়ারী মাসে এখানে দলায় লামার [উপস্থিতি থাকে বলে দেশ বিদেশ থেকে অগুনতি ভক্তের ভিড় দেখা যায়। তার সাথে পাল্লা দিয়ে আসে নানা রকম দোকান। কোথাও খাবার তো কোথাও হস্তশিল্প। ৩) কিভাবে যাবেন : কলকাতা থেকে গয়া যাওয়ার ট্রেনের অভাব নেই। দিল্লিগামী সব ট্রেন গয়ার ওপর দিয়ে যাচ্ছে। একরাতের যাত্রায় একদম কাকভোরে আপনি পৌঁছে যাবেন গয়া। সবথেকে ভালো ট্রেন হাওড়া যোধপুর এক্সপ্রেস। রাত ১১.৩৫ এ ছেড়ে গয়া পৌঁছে দেবে সকাল ৬.৩০ এ। স্টেশন এ নেমে একটু এগোলেই দেখতে পাবেন অটো আছে। এখানে রিসার্ভ বা শেয়ার দুটো বিকল্পই আছে। অনেকে শেয়ার নেয় আর মাঝের চারটে সিট এর টাকা দিয়ে ৩ জন বসে। তবে এটা তখন ই করা যাবে যখন আপনার luggage কম থাকবে। গয়া থেকে বুদ্ধগয়া যেতে সময় লাগে ৩০ মিনিট থেকে ৪৫ মিনিট। শেয়ার অটো ভাড়া নেয় ৩০ টাকা প্রতি সিট আর রিসার্ভ নেয় ৩৫০-৪০০। অটোগুলো আপনাকে নামিয়ে দেবে পোস্ট অফিসের সামনে কারন অক্টোবর ২০১৮ থেকে main মন্দির (মহাবোধি ) এর সামনে গাড়ি ঢোকা বন্ধ করা হয়েছে। তাই পোস্ট অফিস থেকে আপনাকে টোটো (লোকালে বলে e - রিকশা ) নিতে হবে। টোটো ভাড়া প্রতিজন ১০ টাকা। ৪) কোথায় থাকবেন : থাকার জন্য আপনি ফ্রি থেকে দিনপ্রতি ৫০০০ টাকার হোটেল পাবেন। হোটেল নেয়ার সময় চেষ্টা করবেন main মন্দিরের কাছাকাছি নেওয়ার কারণে সিটি থেকে দূরে নিলে ফেরার রাস্তা রাতে বেশ ফাঁকা হয়ে যায়। তাই আপনি মহাবোধি মন্দিরের রাতের সন্ধ্যা আরতি দেখতে পারবেন না। থাকার ভালো জায়গা হচ্ছে দামির মধ্যে সিদ্ধার্থ ইন্টারন্যাশনাল আর মঝারির মধ্যে satiya guest house . সাঁথিয়া গেস্ট হাউসের সুবিধা হলো এখান থেকে সব কটা মন্দির হাটা পথে দেখা যায়।বিহার ট্যুরিজমের তিনটি হোটেল আছে এখানে তবে একটু দূরে। ৫) কি দেখবেন : একের পর এক সুন্দর কারুকার্য করা মন্দিরে সাজানো বুদ্ধগয়া। এখানে পাবেন থাইল্যান্ড , বাংলাদেশ , চীন , জাপান , কম্বোডিয়া , ভুটান আরো অনেক দেশের মন্দির। সঙ্গে পাবেন ৮০ ফুট উঁচু বুদ্ধমূর্তি। তবে সবথেকে বেশি নজর কাড়বে এখানকার সংগ্রহশালা। বুদ্ধগয়া খনন কালে যত শিল্পকর্ম পাওয়া গেছে সবই প্রায় এখানে আছে। এই সংগ্রহশালা শুক্রুবার বাদে রোজ খোলা থাকে। ৬) ফেরা : ফেরার জন্য গয়া হয়ে ফিরতে পারেন বা পাটনা হয়ে। বুদ্ধগয়া থেকে শেয়ার অটো গয়া স্টেশন অবধি পাবেন না। আপনাকে কাছারি মোড়ে গিয়ে স্টেশনের অটো নিতে হবে। অথবা শিকারিয়া মোড় থেকে পাওয়া যায়। খরচ একই ৩০ টাকা প্রতি সিট। গয়া থেকে পাটনার memu ট্রেন আছে। দিনে ৪ জোড়া সময় লাগে ৩.৩০ ঘন্টা। ৭) আনুসাঙ্গিক ঘোরাঘুরি : পুরো প্ল্যান টা এরম হলে সবচেয়ে ভালো হয় Day ১: গয়া সকালে পৌঁছে হোটেল এ পৌঁছে যান। একটু বিশ্রাম নিয়ে পায়ে হেটে ঘুরে নিন সব মন্দির। রাতে মহাবোধি মন্দিরে আরতি দেখুন day ২: সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান রাজগীর। বাসে যেতে চাইলে আপনাকে আগে গয়া যেতে হবে। গয়া বাস স্ট্যান্ড থেকে আপনি বাস পাবেন। রাজগীরে হোটেল এ একটু বিশ্রাম নিয়ে টাঙ্গা তে করে ঘুরে নিন, রোপওয়ে চড়ুন। পরের দিন সকালে গাড়ি নিয়ে চলে যান নালন্দা আর পাওয়া পুরি জলমন্দির। বিকালে ট্রেন ধরুন বখতিয়ার পুর স্টেশন থেকে। ৮) আনুসাঙ্গিক তথ্য : i) গয়া থেকে বুদ্ধগয়ার রাস্তার অনেক বদনাম আছে। রাত্রে যাওয়া একদম avoid করবেন। ii) মহাবোধি মন্দিরে মোবাইল ফোন জমা রাখতে হয়। জমা রাখার দুটো কাউন্টার আছে। একটা মন্দির কতৃপক্ষের সেটাতেই ভিড় বেশি থাকে। সেটাতেই রাখার চেষ্টা করবেন iii) ক্যামেরা ব্যবহার করার জন্য কুপন নিতে হবে। ১০০ থেকে ৩০০ টাকা খরচ iv) বিহারে বাস খুব আস্তে চলে। যতটা পারবেন ট্রেনে যাতায়াত করবেন। v) শীতকালে দিল্লি থেকে আসা সব ট্রেন বেশ লেট করে। তাই ফেরার সময় গয়া দিয়ে না ফিরে পাটনা থেকে দুরন্ত নিতে পারেন। পাটনা অনেক বড়ো আর safe station গয়ার থেকে। vi) এর বাইরে দেখার অনেক জায়গা আছে যেমন গয়া তে বিষ্ণুপাদ মন্দির , সূর্য মন্দির , পাটনাতে কুমারহর। গয়া পুরো ঘুরতে একদিন লাগে , পাটনা দুদিন বৈশালি একদিন, বুদ্ধগয়া একদিন , রাজগীর দু দিন । vii) এটি ঐতিহাসিক জায়গা শুধু নয় , এটি একটি প্রবিত্র ধর্মস্থান ও। তাই নিজের পোশাক ব্যবহারে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। জায়গাটি খুব পরিষ্কার সেটাও রক্ষার দায়িত্ব আমাদের। viii) বিহারের স্থানীয় বাসিন্দারা খুব helpful , দরকার হলে সাহায্য নিতে দ্বিধাবোধ করবেন না
1 Comment
Pratik Gupta
1/15/2019 08:45:24 pm
Nice and very useful information.
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |