জুন ২০১৮
রঘুরাজপুর এর কথা আমি কখনো কারুর কাছে শুনিনি। পুরী এসে things to do করতে গিয়ে TripAdvisor এ প্রথম জানলাম। বাকিটা অনুভব করলাম গ্রামে পৌঁছে। পুরী থেকে আধঘণ্টার drive. গ্রামটিতে একশো চল্লিশ থেকে একশো পঞ্চাশটা ঘর অর্থাৎ পরিবার। প্রত্যেকেই পেশায় পটচিত্রকার। পটচিত্র যা কিনা পুরাণকথা বর্ণনা করে থাকে। শুনলাম গোড়ার দিকে গোটা কুড়ি ঘর ছিল আদতে এই শিল্পী, মূলত যাদের পদবী মহারাণা, মহাপাত্র, বারিকি। পরে যখন গ্রাম heritage village এর মর্যাদা পেল আরো কিছু ঘর এসে যোগ দিল। এভাবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এরা পটচিত্রকে বাঁচিয়ে চলেছে। আমাদের সমস্ত গ্রামবাসী প্রায় ছেঁকে ধরেছে শুধু ওদের কাজ দেখানোর জন্য নয়...ওদের কথা সবার কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কারণ সরকার ওদের জন্য সেভাবে কিছুই করেনি। প্রচারের আলো এসে না পৌঁছলেও ওরা আঁকড়ে ধরে আছে দেড়শো-দুশো বছর পুরনো ঠাকুর্দার করা কাজ, বিশেষত পারম্পরিক পটচিত্র যা দেখে বাবা শিখেছে, আবার বাবার কাছে ছেলের হাতেখড়ি। অনেকেই বিভিন্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পী। তারপরেও কী আকুতি...কিনতে হবেনা, একটু দেখে যান, আমাদের ভালো লাগবে, একটু বলবেন তো, পরের বার আসবেন তো..... বিশদে বলতে গেলে সত্যি কথা হল দেখতে হবে স্বচক্ষে। তবে হ্যাঁ গ্রামের শেষ ঘর, সেখানে অভিমন্যু বারিকি বলছিল ওদের পরিবার জগন্নাথ মন্দিরে সেবা করে। অর্থাৎ স্নানযাত্রার সময় যখন প্রভুর পনেরো দিন জ্বর থাকে তখন পটেই পুজো হয়। অভিমন্যু দেখাল কীভাবে দুটো কাপড় আঠা দিয়ে জুড়ে পাথরে ঘষে ঘষে পট তৈরি হয়। Acrylic নয়, ওরা natural colour ব্যবহার করে। খণ্ডনীল পাথর থেকে নীল রঙ, শঙ্খ থেকে শাদা, হেঙ্গুর পাথর থেকে লাল, হরিতার পাথর হলুদ, গেরিমাটি থেকে খয়েরি এবং কাজল থেকে কালো রঙ। পাথর grind করে হয় মণ্ড, মণ্ড থেকে রঙ। কৎবেল গাছের আঠা ব্যবহার করা হয় রঙ যাতে fade না হয়। অভিমন্যু দেখাল রাজবেশে জগন্নাথ সুভদ্রা বলরাম। বছরে চার বার রাজবেশ পরানো হয়। ওদের এই পটচিত্র হল চান্দুয়া style এ...মণ্ডলাও বলে কারণ গোল গোল করে এঁকে তার ভেতরে আবার কোনো কাহিনীবর্ণন। বৃত্তের ওপরে পাঁচ নিচে পাঁচ এভাবে দশাবতার থাকে চান্দুয়া পটচিত্রে। রঘুরাজপুর গ্রাম সম্পর্কে আরেকটি উল্লেখ্য বিষয় হল এটি ওডিসি নৃত্যগুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের জন্মস্থান। দেখলাম তাঁর ভাইকে যিনি একমনে এঁকে চলেছেন গোবর থেকে বানানো বাঘ হাতি ঘোড়ার গায়ে। বৃদ্ধ কানে শোনেন না, প্রথমে খেয়ালও করেননি আমাদের। হঠাৎ দেখতে পেয়ে নিজের ভাষায় কথা বলে উঠলেন...ভাই এর ছবি আগলে রেখেছেন পরম যত্নে...সেও দেখালেন। অনুরোধ সবাইকে...পুরী বেড়াতে গেলে রঘুরাজপুর অবশ্যই যাবেন। কিছু না কিনলে ওরা জোর করবেনা, খুশি হবে শুধু গেলেই।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |