ফুলের দেশ ক্ষীরাই
পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার পরের স্টেশন ক্ষীরাই । শীতকালে একদিন ছুটিতে হাওড়া থেকে ট্রেন ধরে চলে আসুন এই ক্ষীরাই তে । না হতাশ হবেন না । চোখ আর মনের আরামের জন্য আসতেই হবে ক্ষীরাই তে । শীতকালে মরসুমী ফুলের চাষের জন্য বিখ্যাত এই ক্ষীরাই । গাঁদা, আষ্টার, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগঝুঁটি এবং আরো কত নাম না জানা ফুলের চাষ দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে । ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি ফুলচাষের মরসুমী সময় । ক্ষীরাই স্টেশনে নেমে রেললাইন ধরে পাঁশকুড়ার দিকে এগিয়ে চলুন এক কিমি পথ । চারিদিকে লাল, হলুদ, নীল, সাদা রঙের চাদর দেখতে পাবেন । না এগুলো কোনো সাধারণ চাদর নয় । গাঁদা, আষ্টার, চন্দ্রমল্লিকা, মোরগঝুঁটি ফুলের চাঁদর । হাঁটতে হাঁটতে কাঁসাই ব্রীজ পার হয়ে বামদিকে আরো ভিতরে গ্রামে চলে আসুন । মোরগঝুঁটি আর চন্দ্রমল্লিকার দেশে । সারাদিন কিভাবে কেটে যাবে বুঝতেই পারবেন না । ইচ্ছে করলে পাঁশকুড়া স্টেশনে নেমে টোটো নিয়ে ক্ষীরাই এর দিকেও আসতে পারেন । পাঁশকুড়া লোকাল ছাড়া (পাঁশকুড়া পর্যন্ত), পরের স্টেশন ক্ষীরাই তে আসতে বালিচক, মেদিনীপুর, খড়্গপুর লোকাল আছে । মনে রাখবেন ক্ষীরাই একটা ছোট গ্রাম । খাওয়ার দোকান কিছুই পাবেন না । পাঁশকুড়া তে সবকিছু পাওয়া যাবে । খাওয়ার কথা উঠলো যখন বলি, ফুলের দেশ ঘুরে ফেরার সময় বিখ্যাত পাঁশকুড়ার চপ খেতে ভুলবেন না । স্বাদ মুখে লেগে থাকবে । তাহলে শীতকালে এক ছুটির সকালে ঘুরে আসুন ফুলের দেশ ক্ষীরাই তে ।
0 Comments
অরুনাচলের ডায়েরি
অরুণাচল! উত্তর-পুর্ব ভারতের অন্যতম অঙ্গরাজ্য।প্রাকৃতিক ভূস্বর্গ।শুধু পাহাড় আর পাহাড়।সবুজ বনানী। বরফের স্তূপ।অপরূপ লেকের মায়াবি হাতছানি।অরুণাচল শব্দের অর্থ–ভোরের আলোকিত পাহাড়ভূমি।আবার কেউ বলেন ‘মেঘের রাজ্য’ কিম্বা প্রকৃতির গুপ্তধন।শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যে নয়।অরুণাচলের সঙ্গে মিশে রয়েছে ইতিহাস পুরাণ লোকশ্রুতি। শ্রীকৃষ্ণ ঘরণী রুস্কিণীর বাপের বাড়ি ছিল ভীষ্মকনগরে। সেই নগরী আজকের অরুণাচল প্রদেশ। অরুণাচল ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যই আমার এই ভ্রমন কাহিনী। এবারের যাত্রা অরুণাচল,সূর্যোদয়ের দেশ।ভারতবর্ষের প্রথম সূর্যোদয় দেখা যায় এখান থেকেই। এছাড়া এখানকার প্রধান আকর্ষন প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। অরুণাচল যেতে ইনার লাইন পরমিট (ILR)দরকার হয়। সেইমতো সমস্ত কাগজপত্র রেডি করে রওনা দিলাম। এবার আসল রহস্য উদ্ঘাটনের দরকার, আমরা সমস্ত রাস্তাটাই রোড জার্নি করছি ডাস্টার(AWD)এ সওয়ারী হয়ে। সারথী আমাদের জামাতা। মূলত তারই আগ্রহ ও রোমাঞ্চকে ফলপ্রসু করার জন্যই আমাদের সঙ্গ দেওয়া। সঙ্গে আমার স্ত্রী ,আমাদের মেয়ে ও তিন বছরে নাতি। কোলকাতা থেকে রাত ১টায় যাত্রা শুরু। ফরাক্কা ব্রীজ পেড়িয়ে বেশ কিছুদুর যাওয়ার পর সকাল নটা নাগাদ একটা ছোটখাটো দোকানে চায়ের জন্য দাড়ালাম,সেখানে হাল্কা ব্রেকফাস্ট করে আবার যাত্রা। মাঝে রাস্তায় লাঞ্চ সেরে শিলিগুড়ি পৌছলাম তখন বিকেল চারটে, এখানে আমাদের প্রথম রাত্রির বিশ্রাম। পরদিন ভোর ৫টায় গাড়ী চলা শুরু । এর পরের গন্তব্য ৪৭৫ কিমি ,গৌহাটি থেকে আরও এগিয়ে মঙ্গলদই নামে একটা ছোটখাটো শহর। NH17 ধরে জলঢাকা নদীর ব্রীজ পেরিয়ে এগিয়ে চলা , মাঝে বাঁদিকে ভূটান বর্ডার। ভুটানের মিষ্টি কমলালেবুর পসরা নিয়ে রাস্তার ধারে ভূটানী মেয়েরা বসে আছে। দাম বেশী হলেও ব্যাগ ভর্তি লেবু কিনলাম। এইভাবেই বিকেল প্রায় ৫টায় দ্বিতীয় রাতের বিশ্রামের জন্য মঙ্গলদইএর এক হোটেলে থামলাম। পরদিন সকাল ৬-২০তে আবার শুরু করলাম। পরের গন্তব্য ২৫০ কিমি দুরে অরুনাচলের দিরাং। উদলগিরি হয়ে আমাদের অরুনাচল যাত্রা শুরু। ২১১কিমি দুরে বোমডিলা মাঝে ৬৫কিমি এগিয়ে গেলেই ভৈরবকুন্ড, অরুনাচলের বর্ডার, আর কয়েক কিলোমিটার যাওয়ার পরেই পাহাড়ি রাস্তা শুরু হলো চড়াই উৎরাই। অরুণাচল ঢুকতেই রাস্তায় একবার সেনাবাহিনীর চেকিং। আমাদের অবশ্য কিছু না দেখেই ছেড়ে দিলো, জানিনা গায়ে থাকা মিলিটারির ছাপা জ্যাকেট টুপি অধিক সম্মন দিলো কিনা। আঁকাবাঁকা জঙ্গলে ঘেরা রাস্তা, সামনেই নজরে পড়লো খাড়া পর্বতরাশি, কোনোটা সবুজ আবার কোনোটা গাছপালা হীন কালো পাথর, তারই মাঝে চুনাপাথরের সাদা প্রলেপ যাকে বরফ ভেবে উৎফুল্ল হয়ে উঠছি। তখনও বুঝতে পারিনি এর থেকে আরও কয়েক গুন রোমাঞ্চকর দৃশ্যের সাক্ষী হতে চলেছি। যতো উপরে উঠছি প্রকৃতির রুপ ততই মোহিত করছে। নিজেদের গাড়ী ,বারবার থামছি আর মোবাইল ও ক্যামেরাতে ছবি তুলে চলেছি।ভৈরবকুন্ড থেকে ১৩১কিমি দুরে ছোট্ট সুন্দর পাহাড়ী শহর রুপা। পাহাড়ের গা বেয়ে নদীর ধারে ছোট বড়ো নানা ধরনের বাড়ী। সঙ্গে রয়েছে মিলিটারী ব্যারাক। খুবই সাজানো গোছানো এলাকা। নদীতে বেশী জল নেই, এবড়ো খেবড়ো পাথর তার মধ্যে ডাস্টার নামিয়ে টেস্ট করা হলো। ঘন্টা খানেক প্রকৃতিকে উপভোগ করার পর বুঝলাম ২-৩০টে বাজে।কাছেই মিলিটারী ক্যান্টিনে বিশেষ কিছু না পাওয়ায় সোজা বোমডিলার উদ্দেশে রওনা দিলাম। ১৭কিমি রাস্তা প্রায় ঘন্টাখানেক লাগবে। ৩-৩০টে নাগাদ বোমডিলা পৌঁছলাম, এখানকার থুকপা বিখ্যাত। ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একটা রেস্টোরেন্টে থুকপার অর্ডার দিলাম। গরম গরম খাবার এই ঠান্ডায় খুবই উপাদেয় লাগলো। অরুনাচলে ৪টে ৪-৩০টে তেই সন্ধে নেমে আসে তাই স্থানীয় দর্শনীয় জিনিসগুলো দেখা হয়ে উঠলনা। রাস্তার ধারে আখরোট,কাজু, নানারকম ডাল,শুকনো বীফ ইত্যাদির পসরা নিয়ে স্থানীয় মেয়েরা বসে আছে। যাইহোক অন্ধকার নামার আগেই দিরাং এর উদ্দেশে রওনা দিলম। ৪২কিমি রাস্তা পার করে প্রায় দেড় ঘন্টা পরে দিরাংএর নির্দ্দিস্ট হোটেল আউ রিসর্টে পৌঁছলাম। প্রায় ৫০০০ফুট উপরে NH13 ধারেই দিরাং শহর। পরের দিন স্থানীয় জায়গাগুলো দেখতে বেরোবো। ঠান্ডায় আজ আর কোনো কাজ নেই বিশ্রাম। হোটেল থেকেই একজনকে গাইড হিসেবে সঙ্গে নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। সীপ অর্চাড ঘুরে সাঙ্গতি ভ্যালী । ঘন সবুজ জঙ্গলে মোড়া পাহাড় ও তার নিচে ভ্যালীর মধ্যে বয়ে চলা বেশ চওড়া পাথর বেছানো নদী এগিয়ে চলেছে, অনেকটা কাশ্মীরের লীডার নদী ও ভ্যালী বা তার থেকেও আরও আকর্ষনীয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য। পথে গাছ ভর্তি কমলালেবু উপরি পাওনা। এরপর গেলাম এখানকার সবথেকে উল্লেখযোগ্য বস্তু কিউইর বাগান। কিছুদিন আগেই বেশিরভাগ গাছ থেকে ফল তুলে নেওয়া হয়েছে তবুও কোন কোন গাছে এই অমূল্য ফলের দেখা পেলাম। নিজের চোখে গাছের ডালে কিউই ঝুলে থাকতে দেখা ও হাতে স্পর্শ করা এক দূর্লভ অভিজ্ঞতা। এরপর আরও দূর্গম পথ বেয়ে ৮২০০ ফুট ওপরে অ্যাপেল অর্চাড দেখতে ওঠা। দূর্ভাগ্যবশতঃ কিছুদিন আগে আগুন লাগার ফলে আপেল বা তার গাছ দেখতে পাইনি। কিন্তু আরও একটু ওপড়ে উঠে বিশাল হেলিপ্যাড ও চারপাশে ঘিরে থাকা হিমলয়ের নানান নাম না জানা পর্বতমালা। কোনোটা একদম তুষারাবৃত, কোনোটা আংশিক তুষারাছন্ন,আবার কোনটায় এখনো তুষারের ছোঁয়া লাগেনি। এরপর কিছুটা নেমে এসে কামেং নদীর ধারে উষ্ণ প্রস্রবন ও দিরাং মনেস্ট্রী ঘুরেঘুরে দেখলাম। পরদিন সকালবেলায় গোছগাছ করে তাওয়াং এর উদ্দেশে রওনা হলাম। ১২৮কিমি পাহাড়ী রাস্তা দুরে ১০০০০ফুট উপরে তাওয়াং অরুনাচলের এক জেলাশহর। যদিও চীন মনে করে এটি দক্ষিন তিব্বতেরই একটা অংশ। ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক দিক থেকে তাওয়ংএর গুরুত্ব অপরিসীম। ১৯১৪ সালের সিমলা কনভেনশন অনুযায়ী ব্রিটিশ সরকার ভারত ও তীব্বত সীমারেখার জন্য যে ম্যাকমোহন লাইন ঠিক করা হয়েছিলো চীন তা মানতে রাজি হয়নি। অনেক ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে এবং বিভিন্ন ঘটনার পরবর্তী কালে ১৯৬২ ভারত চীন যুদ্ধের পর তাওয়াং সাময়িক চীনের দখলে যায় পরে আবার ভারত সরকারের শাষনে এলেও চীন এখনো অরুনাচলের অধিকাংশ এলাকার দাবী থেকে সরে আসেনি। NH13 ধরে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে উপড়ে উঠে চলেছি। ৬২ কিমি দুরে ১৩৭০০ফুট উপড়ে সেলা পাস। কাছাকাছি যেতেই পাহাড়ের গায়ে বরফের আস্তরণ। যতো বরফের মাত্রা বাড়ছে উত্তেজনা ততো বাড়ছে। একটু এগিয়েই সেলা লেক। প্রচন্ড ঠান্ডায় সমস্তটাই জমে বরফের আকার ধারন করেছে। গাড়ী থেকে নামলাম,হাই অল্টিচিউড হওয়ার জন্য সাময়িক শরীর অস্বাভাবিক বোধ হচ্ছিলো। ৫-৭মিনিটের মধ্যেই স্বাভাবিক হলাম। খানিক্ষণ চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দ্যর্য উপভোগ করে আবার এগিয়ে চললাম। রাস্তার ধারে পাহাড়ী ঝর্ণাগুলোর বেশিরভাগটাই জমে বরফ হয়ে আছে, কোথাও জলের ধারার অবস্থাতেই জমে গেছে। আবার কোথাও গোটা রাস্তাটাই বরফ জমে পিচ্ছিল হয়ে আছে, খুব সন্তর্পণে গাড়ী এগোতে হচ্ছে। এক জায়গায় প্রচুর তুষারপাত দেখে গাড়ী থেকে নেমে বরফের খেলায় মেতে উঠেছি,সামনে শুধু তুষারাবৃত পর্বত আর ঠান্ডায় কাঁপছি। নিজের চোখে প্রকৃতির এই নৈস্বর্গিক রুপ দেখে যা অনুভব করা যায় তার সবটা হয়তো প্রকাশ করা সম্ভব নয়। আর একটু এগিয়ে যসবন্তগড় ওয়ার মেমোরিয়াল। ১৯৬২ যুদ্ধের স্মৃতি ও সৈনদের মনোবল বাড়ানর জন্যই ১৪০০০ ফুট উচুতে তৈরী এই সৌধ। প্রধান দ্বারে সৈনরা গরম কফি ও স্ন্যাক্স নিয়ে অপেক্ষা করছে। শরীরটা একটু গরম করে উপরে উঠলাম। এই সৌধ না দেখলে সেলা পাস ভ্রমন অসম্পূর্নই থেকে যেতো। মাঝে মাঝে দেখি ইয়াকের দল ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে , কোথাও আবার রাস্তায় আমাদের গাড়ীর কাছাকাছি চলে আসছে।নির্জন তুষার মাখা পাহাড় গুলোকে একলা রেখে আবার এগোতে শুরু করলাম । তাওয়াং থেকে ৪০ কিমি আগে জঙ্গ শহরের কাছে নুরানং ফল্স। অরুনাচলের এটি একটি অত্যাশ্চর্য্য ফল্স। ১০০ ফুট উচু এই ঝর্নার উৎপত্তি সেলা লেক ও তাওয়াং নদীর সঙ্গে মিশছে। এই ফল্সের সৌন্দর্য্যতা খুবই আকর্ষণীয় এবং জঙ্গ ফল্স নামেও পরিচিত। তাওয়াং হোটেলে পৌঁছতে সন্ধ্যে হয়ে গেলো। সারাদিনে যাত্রাপথের ধকল আর এখানের হাড় হিম করা ঠান্ডায় আমরা আর ঘর থেকে বেরোতে পারলামনা। পরদিন সকালে লোকাল অ্যাডমিনিস্ট্রাশন অফিস থেকে বুমলা পাস ও চীনের বর্ডার যাওয়ার পারমিশন নিতে গেলাম। হোটেল বা লোকাল ট্যাক্সির মত অনুযায়ী তাদের গাড়ী ছাড়া বুমলা পাস যাওয়া যাবেনা।অ্যাডমিনিস্ট্রাশন অফিসে গিয়ে কিন্তু ধারনা বদলে গেলো। দ্রুত তৎপরতার সঙ্গে তারা পারমিশনের প্রথম ধাপের কাগজ দিয়ে দিলো। তারপরের ধাপের জন্য মিলিটারি অফিসে জমা দিতে হলো, পরদিন সকাল ৮টার মধ্যে সেই পারমিশনের কাগজ পাওয়া যাবে। আজ আমাদের লোকাল সাইট সিয়িং ও মার্কেট ঘোরা। উল্লেখযোগ্য হলো ওয়ার মেমোরিয়াল । ১৯৬২ সালের ভারত চীন যুদ্ধের স্মৃতিতে তৈরী হয়েছে ওয়ার মেমোরিয়াল ও মিউজিয়াম। বিভিন্ন যুদ্ধের ঘটনার ব্যক্ষ্যা শুনে ও যুদ্ধের নানা সামগ্রীর সাক্ষী হয়ে রীতিমতো রোমাঞ্চিত হতে হয়। এখানকার স্মৃতিসৌধটি বৌদ্ধ নিয়ম মেনে প্রতিদিন পুজো করা হয়। এরপর যথারীতি শপিং।এখানকার বাজারে খুব ভালো ভালো জ্যাকেট ও নানারকম জুতো পাওয়া যায়, দরাদরি করে কিনলেই হলো। তবে রেষ্টোরেন্টে সতর্ক থাকার দরকার, চারিদিকে ইয়াক ও বিফের ছড়াছড়ি। পরদিন সকালেই তাড়াতাড়ি বেড়িয়ে পড়লাম। অরুনাচল ভ্রমনের আজই গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৫২০০ ফুট উচুতে উঠতে হবে বুমলা পাস, ভারতের শেষ প্রান্তে চীনের বর্ডার। সেলা পাসের অসুবিধার কথা ভেবে একটা ছোট অক্সিজেন ক্যান সঙ্গে নিয়েছি। প্রথমেই মিলিটারি অফিস থেকে পারমিশনের ডকুমেন্ট নিয়ে আমরা যাত্রা শুরু করলাম। খুবই ভাঙ্গাচোরা ও আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে উঠে চলেছি। কিছুটা যাওয়ার পর কুয়াশায় সমস্ত পাহাড় ঢেকে আছে ,পাঁচ সাত ফুট দূরের রাস্তা ভালোভাবে দেখা যাচ্ছেনা। খুবই সন্তর্পনে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছি। কুয়াশা অনেকটা হাল্কা হচ্ছে পথের ধারেই পিটিসো [P T Tso (Pangang Teng Tso) Lake]লেক। চারিদিকে পাহাড় ঘেরা এই লেকের দৃশ্য খুবই মনোরম। আরও কয়েক পাক উপরে ওঠার পর কুয়াশা কেটে গিয়ে রোদ দেখা গেলো। পাহাড়ের উল্টোদিকে তাকিয়ে হঠাৎ এক অবর্ণনীয় দৃশ্য নজরে এলো , পাহাড়গুলোর মাঝে কেউ যেন ধবধবে সাদা চাদর বিছিয়ে দিয়েছে । দু একটা উচু পাহাড়ের চূড়া ছাড়া আর কিছুই নজরে আসছেনা। ধবধবে সাদা পাহাড়ের ওপর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। তাওয়াং থেকে ২২কিমি Y জংশান , এখান থেকে বাঁদিকে ২০কিমি গেলে সাংগাটসার লেক আর ডানদিকে ১৮কিমি গেলে বুমলা। আমরা প্রথমে লেকের পথেই এগোলাম। ঘুরপাক ভগ্নপ্রায় পাকদন্ডী পেরিয়ে এগোচ্ছি। মাঝে মাঝে মিলিটারী ব্যারাক। ঠিক রাস্তার জন্য সেনাদের কাছে জানতে হচ্ছে। এইভাবেই পৌঁছে গেলাম সাংগাটসার লেক (Shonga-tser Lake) । ১৯৭১ সালে ভূমিকম্পের ফলে এই লেকের সৃস্টি , লেকের মাঝে বড় বড় গাছের অংশবিশেষ দেখলে যা বোঝা যায়। চারিদিকে বড়বড় পাহাড় ও মাঝখান জুড়ে এই বিশাল লেক। লেক ও আশপাশের এলাকা সেনারা খুব সুন্দরভাবে দেখাশোনা করে। প্রাকৃতিক সৌন্দ্যর্যে ভরপুর লেকের কথা অনেকদিন মনে থাকবে।এতো বেশী ঠান্ডা যে মিলিটারী ক্যান্টিনে গরম গরম ম্যাগী খেতেই হবে। আমাদের সঙ্গের নাতির জন্য জুস ও চকলেট দিলো, অনুরোধ স্বত্তেও দাম নেয়নি। বেশ কিছুক্ষন কাটিয়ে ঐ পথ ধরেই আবার ফেরা। Y জংশান থেকে ডানদিকের পথ, গন্তব্য বুমলা। মাঝে রাস্তায় চেকপোস্টে একবার সমস্ত পারমিট চেক করা হলো। একই রকম এবড়োখেবড়ো রাস্তা বেয়ে পৌঁছলাম বুমলা, চীনের বর্ডার যা অটুট রাখার জন্য সদা জাগ্রত আমাদের দেশের প্রহরী। ১৫২০০ ফুট উপরে উঠে স্বাভাবিক ভাবেই শরীর একটু গোলমাল করছে , মাথা ঘোরাচ্ছে শ্বাসপ্রশ্বাসের অসুবিধা হচ্ছে। দু তিনবার অক্সিজেন মুখে স্প্রে করার পর একটু একটু করে স্বাভাবিক হলাম। একজন সেনা তাড়াতাড়ি এসে আমাদের অভ্যর্থনা জানালো ও ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিস্কুট ও চকোলেট উপহার দিলো। ওই আমাদের দেখিয়ে বুঝিয়ে দিল যে এখানেই ভারতের সীমা শেষ। গেটের এদিকটা অব্দি ভারত ঐ দিকটা চীন। হাল্কা তারের ঘেরা, আমাদের বলে দিলো ঐ পাশে যেন না যাই। কিভাবে কতবার দুই দেশের বর্ডারের সেনাদের মধ্যে মিটিং হয় ও বন্ধুত্বপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকে। দুই দেশের ঐতিহাসিক ও ভৌগলিক সীমারেখায় দাঁড়িয়ে নিজেদের রীতিমতো রোমাঞ্চিত বোধ হচ্ছিল। প্রায় আধঘন্টা সময় কাটিয়ে মনের মধ্যে অনেক কিছু সংগ্রহ করে আবার ফেরার জন্য তৈরী হলাম। ওই একই পথে একই ভাবে তাওয়াং ফিরলাম তখন ঠিক বিকেল ৫টা। এরপর ফেরার রাস্তা। তাওয়াং থেকে ভালুকপং ৩০০ কিমি,১২ ঘন্টা লেগে যাবে তাই যতটা সম্ভব তাড়াতাড়ি বেরোতে হলো। সেই একই পথে ফেরা তফাৎ শুধু রাস্তায় আরও বেশী বরফ আরও বেশী সাদা আরও বেশী উৎসাহ ও উদ্দীপনা। সেলাপাসের কাছে রাস্তার ওপর রাশি রাশি বরফ দেখে গাড়ী থেকে সবাই নেমে হইচই আর ছবি তোলার পালা। আবার চলা শুরু , পথে বৈশাখী নামে ছোট্ট এলাকা । হঠাৎ নজরে এলো রাস্তার দুপাশে পাইন ও ছোট ছোট ঝোপগুলো সাদা হয়ে আছে , অঝোরে তুষার পাত হচ্ছে আর আমরা ততই রোমাঞ্চিত হয়ে উঠছি। ইচ্ছে না থাকলেও গাড়ী চলতে শুরু করলো , জানিনা আবার কবে এই সুযোগ আসবে , মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেলো। দিরাংএ এসে লাঞ্চ সেরে রুপা পার করে ভালুকপং এর রাস্তা ধরলাম। এই রাস্তাটুকুর (প্রায় ৮০ কিমি) হাল খুবই খারাপ, রাস্তা নেই বললেই চলে। রাতের ঘন অন্ধকারে অতি সন্তর্পনে ধীর গতিতে এসে যখন ভালুকপং হোটেলে পৌঁছলাম তখন রাত ৮টা। পরেরদিন ফেরার পালা। বিদায় অরুনাচল, গত ৯দিনের চড়াই উৎরাই এর পাহাড়ী সফর অনেক রোমাঞ্চ অনেক ভালোলাগা অনেক স্মৃতি নিয়ে এখানেই শেষ হলো।
"প্রকৃতির টানে ডুয়ার্সের প্রানে"
*************************** চলুন আজ আমি আপনাদের নিয়ে যাব এমন এক জায়গায় যেখানে উন্মুক্ত প্রকৃতি সর্বদা পাহাড়, নদী, জঙ্গল ও বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উষ্ণ স্পর্শে আপনাদের আলিঙ্গনের মাধ্যমে প্রতিটি মূহুর্ত জানিয়ে দেবে তার অস্তিত্বের অনুভূতি। আপনাদের হৃদয় কখন যে তার অনুভূতির ছোঁয়ায় বিহ্বল হয়ে যাবে তা আপনারা বুঝতেই পারবেন না। চলুন তাহলে যাওয়া যাক ? না কি? কলকাতর শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ২০-৩০মি.এ ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে চলে আসুন নিউ ম্যাল জ্্শান। সকাল ৯-৩৩মি. এ পৌঁছে যাবেন আপনাদের গন্তব্য স্থল নিউ ম্যাল স্টেশনে। এখান থেকে ৮০০- ১০০০ টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে আসুন গরুমারা অভয় অরণ্যের টিকিট কাউন্টারের সামনে। এখানেই নেমে ID Proof দেখিয়ে বিকালের শেষ ট্রিপের "যাত্রাপ্রসাদ" ওয়াজ টাওয়ারের টিকিট কেটে নিন। এরপর কাউন্টারের ঠিক উল্টো দিকে "টাস্কের ডেন" রিসোর্টে সোজা গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ুন। প্রসঙ্গত বলে রাখি আগে থেকে বুকিং করে রাখাটা ভালো। তাহলে পিক আপ কার ও দুপুরের খাবার বলে রাখলে অনেকটা সময় বাঁচাতে পারবেন। নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকেও এখানে সরাসরি আসতে পারেন তবে, সেক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি হবে। চলুন এবার বাঙালি জাতির মধ্যাহ্নে কব্জি ডুবিয়ে ডান হাতের কাজটি সেরে বেলা ৩টে নাগাদ চলে আসুন কাউন্টারের সামনে জঙ্গল সাফারি করার জন্য। সঙ্গে পানীয় জল ও গরমের পোশাক অবশ্যই রাখবেন কারন হুটখোলা গাড়িতে ঠাণ্ডা লাগবে। এবার আপনাদের চালক কাম গাইড পারমিশন করিয়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকবে। কাঁচা রাস্তা ধরে পড়ে থাকা শুকনো পাতার উপর দিয়ে মজ্ মজ্ শব্দ করে গাড়ির চাকা গড়াতে থাকবে। চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু খাড়া ঘন গাছের নিচ দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলবে। কখনো কখনো পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলো ঘন গাছের ভিতর দিয়ে উঁকি মারবে আবার কখনো ভেদ না করতে পেরে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় আগের পথে ফিরে যাবে। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতির স্বাদ উপভোগ করতেই লোকেরা জঙ্গল সাফারিতে আসে। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এরই মধ্যে দর্শন মিলতে পারে ময়ূর,বানর,বনমুরগি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বাইসনের। গাড়ি যখন "যাত্রাপ্রসাদ" ওয়াজ টাওয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে তখনই দেখা মিলতে পারে গন্ডার,হরিন,হাতি অথবা বুনো সুয়োরের। এখানে আধঘন্টা সময় দেওয়া হবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ ও ফটো সেশন করার জন্য। এভাবে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই সমাপ্ত হবে জঙ্গল সাফারি। এবার দেখবেন প্রতিটি গাড়ি একটা ছোট্ট অডিটোরিয়ামের সামনে নামিয়ে দেবে। এখানে আপনাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনের। শীতের রাতে মাদলের তালে তালে আদিবাসী নারীদের নৃত্য আশাকরি সবাইকে জঙলি মাদকতার মায়া জালে আবদ্ধ করবে। মন চাইলে আপনাদের সঙ্গে থাকা মহিলারাও নাচে অংশ গ্রহণ করে মনের আশা পূরণ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন কেবল শেষ ট্রিপের জন্য রাখা হয়। এর পর রিসোর্টে ফিরে একটু গল্প ও খুনসুটি করে আজকের দিনটা এ ভাবেই সমাপ্ত করুন। পরদিন একটি গাড়ি ভাড়া করে (২৫০০-৩০০০ টাকা) সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন সুন্দরী ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রথমে চলে আসুন জন প্রসিদ্ধ মূর্তি নদীর তীরে। এখানে নদীটি হীম শীতল স্বচ্ছ জল ধারা নিয়ে প্রতিটি মূহুর্তে কুলু কুলু শব্দ উৎপন্ন করে ছোট বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির অপর তীরে অবস্থান করছে সুদূর প্রসারীত ঘন সবুজে ঘেরা অরণ্যের সীমারেখা। এরই অন্তস্থলে সূর্যের কিরণে ঝিকিমিকি করছে সোনালী রঙের বালুকাময় তটরাশি যেখানে সর্বদা চরে বেড়ায় বক বা পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। এক কথায় এই রোমান্টিক দৃশ্য আপনাদের হৃদয়কে সিক্ত করবেই। এরপর ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে কিছুক্ষণ চলার পর পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলে আসুন ঝালঙ পয়েন্ট। চলার পথে অবশ্যই দেখে নেবেন চা বাগান,কফি বাগান ও রবার plantation Garden. ঝালঙ জায়গাটি মূলত একটি ভূটিয়া জনপদ। জলঢাকা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। নদীর অপর প্রান্তে অবস্থান করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটানের সীমান্তরেখা। এখান থেকেই চরিতার্থ করতে পারেন বিদেশ সফরের হালকা অনুভূতি। এখানের পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য ও অতি মনোরম। পরবর্তী দ্রষ্টব্য স্থান পারেন ও বিন্দু। এগুলি মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল। এখানে নদীর জল অপেক্ষাকৃত বড় বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখান থেকে চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। এগুলি ওখানকার উল্লেখযোগ্য পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। এবার আপনাদের যাত্রা পথ বহু আকাঙ্খিত সেই সানথালেখোলার উদ্দেশ্যে। প্রকৃতি এখানে নিজেকে এক অদ্ভুত মায়াবী রুপে আবির্ভূত হয়েছে। চারিদিকে ঘিরে থাকা বিশাল বিশাল গাছের সমাবেশে সূর্যের আলোর প্রবেশ পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্ত অঞ্চলটা এক অদ্ভুত আলো আঁধারের মধ্যে দিয়ে নিস্তব্ধতার মায়াজাল বুনে চলেছে। এরই মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা এক পাহাড়ি ঝর্ণার জলের শব্দ এবং ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক নিস্তব্ধতার মায়াজালকে বারে বারে ছিন্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই মায়াবী রূপ আপনাদের মতো কোলাহলমূখর জীবন যাত্রার মানুষদের একটু স্তম্ভিত করে দিতে পারে। এখানে আপনারা কিছু খাবার খেয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলুন রকি আইল্যান্ডের অভিমুখে। বিশাল বিশাল পাথরের ভিতর দিয়ে প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত হওয়া নদীর জল শব্দ ও ফেনা উৎপন্ন করে ঝর্নার ন্যায় বয়ে চলেছে ক্রমশঃ নীচের দিকে। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে ও ফটো সেশন করে রহনা হয়ে যান সামসিঙ-এর পথে। সামসিঙ সাধারণত বিশেষ ভাবে পরিচিত চা বাগানের জন্য। একর কে একর জুড়ে বিরাজ করছে চোখ ধাঁধানো মন জুড়ানো চায়ের বাগান। এরই ভিতর পাহাড়ি রমনীদের গান গেয়ে চা পাতা তোলার বিরল দৃশ্য আপনাদের শহুরে মানুষদের মন মুগ্ধ করবেই। আপনারাও চাইলে কয়েকটি মূহুর্ত ওনাদের সাথে যুক্ত হয়ে চা পাতা তোলার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন যা সারা জীবন স্মৃতিতে থেকে যাবে। দেখতে দেখতে সূর্য পশ্চিম আকাশের গায়ে কমলা রঙের আলোয় আলোকিত করে দিনের বিদায় জানিয়ে প্রস্থানের জন্য প্রস্তুত হবে। গোধূলির এই রাঙা আলোয় চা বাগানের বুক চীরে আঁকা বাঁকা পথে ধূলো উড়িয়ে আপনারাও চলে আসুন আজকের সফর শেষ করে আপনার রিসোর্টের আঙিনায়। এরপর বিছানায় শুয়ে স্মৃতি চালনার মধ্যে দিয়ে উপভোগ করতে থাকুন সুন্দরী ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ রস। আশাকরি আপনাদের সকলের কাছে এটা একটি অন্যতম রোমাঞ্চকর সফর হিসেবে জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রকৃতির মাঝে নিবিড়ভাবে দুটো দিন কাটিয়ে তৃতীয় দিন নিউ ম্যাল স্টেশন বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কলকাতায় ফিরে আসতে পারেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি হাতে সময় থাকলে এখান থেকে লাভা ও রিশপ ঘুরে আসা যায়। তাহলে জঙ্গল, নদী ও পাহাড় এক যাত্রায় দর্শন হয়ে যায়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ভ্রমণ সূচী কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করতে পারেন। কি বন্ধুরা ভালো লাগলো? তবে আর দেরি কেন? টিকিট কেটে বেরিয়ে পড়ুন বসন্তের আগে। সকল বন্ধুদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই লেখা শেষ করছি। ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করে মতামত জানান। ধন্যবাদ। ****** সমাপ্ত ******
Vizag /// Vishakhapatnam
Prothom ei sorry j Ami mobile e Bengali type korte pari na bole. Doya kore khoma kore deben. Ami ei matro Vizag ba Visakhapatnam theke ghure Elam. Amar tour ta chilo 5N/6D. Jaihok ei group e onekei Vizag gechen r sei jonno Vizag niye ekhane khub valo Kichu post o ache, tobuo Amar Mone holo kichu jinis group members der janano darkar, Tai ei post. First of all tour plan-- DAY 1:: Amra Kanyakumari express e kore Vizag giyechilam. Train ta Monday te Howrah theke 4:10 pm e chare. Vizag pouchay next day 5:35am. Train theke neme station ei breakfast sere Amra chollam hotel e check in korte. Erpor ektu fresh hoye Amra first ei chole gelam RK Beach by auto (rs. 25 per head). Amader hotel ta beach road e chilo APTDC er hotel Haritha er kachcha kachi. RK Beach er kacher hotel ei lunch korlam. Tarpor RK Beach ta full ghurlam. Last e Sandhya belay gelam Matsyadarsini dekhte. Erpor Kichu snack r Raat er khabar kine chole elam hotel e. DAY 2:: Amra Amader Madam der jalay sakale RK Beach e snan khaoa kore chole giyechilam Marketing e.??? Tarpor fire ese bikal ta katalam VUDA Park e. Ei din ta puro nosto.!! DAY3:: Ei din amra APTDC er city tour ( Heritage tour) e giyechilam. Ora bus e kore First e Simachalam temple (Narasimha temple) then Kailasagiri, then Thotlakonda then Rushikonda Beach. Then lunch at Rushikonda beach resort?. Then Vishakha Museum, Submarine Museum, Aircraft Museum. To be contd.
সুন্দরবন
মাতলা নদীর বুকে দুইদিন প্রায় ঘন্টা চারেকের অপেক্ষার পর বোট আসে পৌঁছলো কেল্লায়।রাত তখন আটটা ,পিয়ালী নদী ধরে অন্ধকারে মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললো আমাদের বোট।দূর থেকে ছুটে আসা জেলে দের বোটের কৃত্তিম আলো ছাড়াও আমাদের মাথার ওপর জ্বল জ্বল করে জ্বলছিল অসংখ্য নক্ষত্র।অনেক বছর আগের সেই কোন ছোট বেলায় দেখেছিলাম এত সুন্দর একটা নক্ষত্র খচিত আকাশ।সেই আদিম ধ্রুবতারা কে পাথেয় করে বোট যখন কৈখালী এসে পৌঁছলো রাত তখন ১০.৩০ প্রায়। ইঞ্জিনের শব্দে যখন ঘুম ভাঙল তখন ভোর ৫.২৫ প্রায়।ব্ল্যাংকেট সরিয়ে ডেকে আসতেই মনটা সতেজ হয়ে গেল।ঠিক এরকম একটা সূর্যোদয় দেখা হয়নি বহুদিন হয়তো বা বহুবছর। কৈখালী থেকে অনুমতি নিয়ে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম আবার।গত রাতের অন্ধকারে যে ম্যানগ্রোভ অরণ্য দেখা যায়নি তা সকালের আলোয় আমাদের অবাক করে দিলো।এত সুন্দর বনাঞ্চল দেখা হয়নি আগে।সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ বনভূমি।সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। আমাদের বোট দুই ধারের সুন্দরী,গড়ান,কেওড়া ও হেতালের বনের মাঝ দিয়ে খাঁড়ি পথে এগিয়ে চললো।সে এক অদ্ভুত রোমাঞ্চকর মুহূর্ত,আমাদের সকলের চোখ তাক করে আছে দুই ধারের বনাঞ্চলের দিকে।বেশ কয়েকটা খাঁড়ি ঘুরেও বাঘের দেখা মিলল না।ক্লান্ত চোখ ও নিরাশ মন নিয়ে আমরা বনী ক্যাম্প ঘুরে ঝড়খালী পৌঁছলাম সন্ধের পরে।সেই রাত সেখাইনেই নোঙ্গর করা হলো বোট। পরেরদিন আবার বোট চললো বাঘ দেখার আশা বুকে নিয়ে।এরপর সজনেখালী ,সুধন্যখালী, পাখিরালয় ও দোবাঁকি ঘুরে কিছু হরিণ আর কুমিরের দেখা মিললো। নাহ সুন্দরবনের রাজা রয়্যাল বেঙ্গল আর দেখা হলনা,কিন্তু দেখেছি সুন্দরবনের অপরূপ সৌন্দর্য,বহুদিন না দেখা একটা অপূর্ব সুন্দর সূর্যোদয়,আর দেখেছি প্রীতিকূল পরিবেশে স্থানীয় মানুষের অন্ন সংস্থানের জন্য প্রতিদিন প্রতিমুহূর্ত জীবন বাজী রেখে জীবিকা নির্বাহ।শহরের দামী রেস্তরাঁয় খাবার নষ্ট করা মানুষ গুলো যদি একবার এই দরিদ্র অসহায় মানুষগুলোর কঠীন জীবন সংগ্রাম দেখতো তাহলে হয়তোবা তাদের বোধোদয় হত। নিজেদের শ্রেষ্ঠ জীব মনে করা মানুষগুলো যখন সেখানে গিয়ে বক্স বাজিয়ে নাচগান করছে,খাবার এর পাতা গ্লাস প্লাস্টিক নদীতে ফেলে এসে বনাঞ্চলের ভারসাম্য নষ্ট করছে তখন নিজেদের সত্যিই নিকৃষ্ট জীব মনে হয়।
এবার ভেরেটার
শুরুটা হলো কলকাতা স্টেশন থেকে, কলকাতা - যোগবাণী এক্সপ্রেস এ, চব্বিশে ডিসেম্বর, রাত আঁট টা পঞ্চান্ন তে | গন্তব্য যোগবাণী | দূরত্ব বেশি না হলেও সাধারণ মেইল/এক্সপ্রেস ট্রেন এ যোগবাণী পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা পাঁচ মিনিট | যোগবাণী পৌঁছে গেলাম সঠিক সময়ের সামান্য আগেই | স্টেশন থেকে দুটো মারুতি ওমনি তে দশ জন মিলে সওয়ার হলাম | যোগবাণী স্টেশন কমপ্লেক্স এর বাইরে বেরোতেই ওয়েলকাম টু নেপাল | ভারত - নেপাল সীমান্ত কে পেছনে ফেলে আমরা এগিয়ে চললাম আমাদের মূল গন্তব্যের পথে | যাচ্ছি ভেরেটার | ভেরেটার কথার অর্থ ভেড়া চারণ ক্ষেত্র | কথিত আছে এই পুরো অঞ্চল টি এই ভেড়া চারণভূমি হিসেবেই ব্যবহৃত হতো, এবং গোটা এলাকার উপর নজরদারি চালানো হতো চার্লস পয়েন্ট থেকে | ভৌগোলিক ভাবে ভেরেটারের অবস্থান এরকম - 26.8718° N, 87.3265° E | বিরাটনগর, ইটাহারি, ধরন পেরিয়ে এগোতে থাকলাম কাঙ্ক্ষিত উদ্যেশে | পথে চলতে চলতে একবার চা বিরতি ও হলো | ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই দুটো কুড়ি নাগাদ পৌছালাম ভেরেটার | গিয়ে উঠলাম ড্রিমস হোটেল এন্ড ইন এ | আগে থেকেই বুকিং করা ছিল পূর্বপরিচিতি থেকেই | গাড়ি থেকে নামা মাত্রই ভালোভাবে টের পাওয়া গেল যে ঠান্ডা বাবাজি বেশ কোমর বেঁধেই এসেছেন | সবাই নিজের নিজের রুম এ গিয়ে স্নান সেরে সেজেগুজে তৈরী | অসময় মধ্যাহ্নভোজ সারলাম গরম ভাত আর দেশী মুরগির ঝোল দিয়ে | কেউ কেউ দিবানিদ্রামগ্ন হলো আর আমরা কয়েকজন বেরিয়ে পড়লাম আশেপাশে একটু হেঁটে ঘুরে আসার জন্য | ঝোড়ো হওয়ার দাপটে ঠান্ডা বেশ ভালোই ছিল | অন্ধকার নেমে এলো, আমরাও হোটেলে ফিরে এলাম | শরীরে ক্লান্তি থাকার দরুন সকলেই একটু তাড়াতাড়ি ডিনার সেরে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলাম | মোবাইল এ টেম্পারেচার দেখলাম চার ডিঃ | দ্বিতীয় দিন তাড়াতাড়ি প্রাতরাশ সেরে রওনা দিলাম | গন্তব্য হিলে | হিলে জায়গাটি ভেরেটারের থেকেও বেশ খানিক টা উঁচুতে | স্বাভাবিক ভাবেই তাপমাত্রা ওখানে আরো কম | বারোটা নাগাদ পৌঁছালাম হিলে তে | বেশী উচ্চতার কারণে ঠান্ডাও যেমন বেশী তেমনি চারপাশের পরিষ্কার ভিউ পাওয়া যায় | গাড়ি থেকে নেমেই মন ভরে গেল ঠান্ডায় | উপরি পাওনা ছিল মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও হিমালয়ান শ্রেণীর মাউন্ট মাকালু, মাউন্ট কুম্ভকর্ণ এবং দ্যা গ্রেট মাউন্ট এভারেস্ট এর পরিষ্কার দর্শন পাওয়া | যদিও বেশিক্ষন সেই সৌভাগ্য বজায় থাকেনি, মিনিট খানেকের মধ্যেই আকাশ মেঘলা হওয়ার কারণে | তবুও এভারেস্ট দর্শন মন ভরিয়ে দিলো | আবার গাড়িতে উঠে পৌঁছালাম হোটেল হরাইজন | ওখান থেকে চারপাশের স্পষ্ট দৃশ্য মন ভরালো আবার | খানিক্ষন ফটোসেশন চলার পর রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের দিকে | এলাম টেমর নদীর পারে | আহা, কি দারুন প্রকৃতির খেলা | মনে হলো যেন পুরোটা একদম সাজানো, প্রকৃতি মন ভরে তার সর্বস্ব উজাড় করে সাজিয়েছে | পাহাড়ি নদী সবসময়েই নজর কাড়ে, কিন্তু এ যেন এক অভাবনীয় সৌন্দর্য | নিজের খেয়ালে দৃঢ় প্রত্যের সাথে বয়ে চলেছে টেমর নদী দু পাশের পাহাড় ভেদ করে সে তার নিজের গতিপথ বেছে নিয়েছে আর সেই পাহাড়গুলিও তাতে কোনো আপত্তি করেনি, বরং আরও সাহায্য করছে, টেমর নদী কে ঢেলে সাজাতে তারাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ | আমরাও সেই প্রতিজ্ঞার প্রত্যখ্যদর্শী হতে পেরে নিজেদের সৌভাগ্যবান মনে করলাম | ঘড়ির কাঁটা বলছে তখন তিনটে | প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মন ভরিয়ে আমরা চললাম পরবর্তী স্থানে | গাড়ি এসে থামলো নমস্তে ফলস | সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো লাঞ্চ সেরেই নমস্তে ফলস দেখতে যাওয়া হবে | সেই অনুযায়ী পাশের একটি হোটেল এ মোমো আর নুডলস দিয়ে লাঞ্চ সেরে রওনা হলাম ফলস এর দিকে | কিন্তু বাধ সাধলো প্রকৃতি নিজেই | খানিক টা যাওয়ার পরই জানা গেল ধস নামার ফলে রাস্তা বন্ধ আছে এবং দেখা ও গেল যে মেরামতির কাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় | কিছুটা নিরাশ হয়েই ফিরতে হলো | বাধ্য হয়েই নমস্তে ফলস কে নমস্তে জানিয়ে বিদায় নেওয়া হলো সেখান থেকে | সূর্য পশ্চিমে ঢলে পড়ায় বোঝা গেল হাতে সময় কম তাই হোটেলে ফেরার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো | হোটেল এ ফিরে চা বিরতির পর সবাই নিজের রুম এ | সন্ধ্যে টা আড্ডা গল্পের মাধ্যমে কাটলো | তৃতীয় দিন টা ছিল একটু স্পেশাল, কারণ টা পরে বলছি | যথারীতি তারাতারি প্রাতরাশ সেরে বেরিয়ে পৌঁছে গেলাম বুড়া সুব্বা ও গৌরী মাতা মন্দির এ | আঞ্চলিক কথোপকথন থেকে বোঝা গেল যথেষ্ট জাগ্রত এই মন্দির | আসেপাশে ঘুরে, পুজো দিয়ে আমরা গেলাম পরবর্তী গন্তব্য, দন্তকালী মন্দিরে | পুরান মতে এটা একান্ন সতীপীঠের একটি পীঠ | মিথ অনুযায়ী সতীর দাঁত পড়েছিল এখানে | গর্ভগৃহ দর্শনে সেকথা সোনা গেল পুরোহিত মশাইএর কথায় | জোরালো অনুরোধে পুরোহিত মশাই দেখালেন ও সেই দাঁত | (বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর) যাই হোক, দর্শনের পর মন্দির প্রস্থান করে এগিয়ে যাওয়া হলো পরবর্তী স্থানের দিকে | গেলাম বাবা পিণ্ডেশ্বর মন্দির এ | এখানে পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তির উদ্যেশে পিণ্ড দান করা হয় | রুদ্রাক্ষ গাছের জঙ্গলে ঘেরা এই মন্দির টি | দর্শন সেরে আমরা চললাম বিষ্ণুপাদুকা মন্দিরের পথে | আগের মন্দির মন্দির গুলি কাছাকাছি ছিল | কিন্তু বিষ্ণুপাদুকা মন্দির সম্পূর্ণ অন্য দিকে | ওখানে পৌঁছানো টা একটা এক্সপেডিশন এর চেয়ে কোনো অংশে কম নয় | একটি শুকনো নদীবক্ষের উপর দিয়ে এগিয়ে চললো গাড়ি, পথ আরও দুর্গম হয়ে উঠলো নদীবক্ষ পার হতেই | পথে কোথাও পুরোনো ধসের চিহ্ন প্রকট আবার কোথাও পুরোটাই মেঠো পথ | পাহাড়ি অঞ্চলে মেঠো পথ যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা আমরা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম | খাঁড়া চড়াই, মাটির রাস্তা, সামান্যতম ভুলের ও কোনো ক্ষমা নেই | তাই ড্রাইভার সাহেব খুব সাবধানতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে গেলেন আমাদের | পৌঁছালাম বিষ্ণুপাদুকা মন্দির এ | ছোট্ট একটি মন্দির, ভেতরে ভগবান শ্রী বিষ্ণুর পাদুকাদ্বয়, এছাড়াও আছে বিভিন্ন মূর্তি | জায়গাটির সৌন্দর্য ও কম নয় | মন্দিরের ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে রয়েছে একটি ঝুলন্ত সেতু, সেতুটির কার্যকারিতা বিশেষ জানা নেই | তবে দারুন কিছু ছবি তোলা যায় সেতুটির উপর থেকে | ওখান থেকে আমরা ফিরলাম আবার সেই ভয়ঙ্কর কিন্তু সুন্দর পথ ধরেই | এলাম ধরন, ধরনে নুডলস, মোমো, থুকপা, চিল্লি চিকেন সহযোগে লাঞ্চ সেরে এগিয়ে এগিয়ে চললাম আমাদের বহুপ্রতীক্ষিত গন্তব্য আত্মা বস্তে ঘর এর উদ্যেশ্যে | বেশ খানিক টা সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়, বেশ খাড়াই | উঠলাম, উঠতে উঠতে বীভৎস ঠান্ডার সম্মূখীন হলাম, সাথে প্রবল বেগে হাওয়া, যেন যেখানে লাগছে কেটে নিচ্ছে, অবশ হয়েযাচ্ছে | উপরে উঠে দেখলাম একটি ছাদহীন পাথুরে ঘরে | স্থানীয় একজনের কাছে জানা গেল, কোনো এক সময় ভূমিকম্পের ফলে একশো চার জনের মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের এখানে সমাধিস্থ করা হয়েছে | ওখান থেকে সামান্য কিছুটা নামলেই রয়েছে একটি বুদ্ধ সাধনাগৃহ | আবার আগের জায়গায় ফিরে গিয়ে প্রবল ঠান্ডায় অসম্ভব সুন্দর ভাবে পাহাড়ের কোলে সূর্যের ঢলে পড়ার সাক্ষ্যি হলাম | তারপর নেমে এলাম গাড়ির কাছে, উঠে পড়লাম, চলে এলাম হোটেল হোটেল এ | হোটেল হোটেলে ফিরে সকলেই প্রস্তুতিতে লেগে পড়লো | আগেই বলেছি যে তৃতীয় দিন টা একটি স্পেশাল দিন ছিল, কারণ সাতাশে ডিসেম্বর আমাদের টিম এর একজন, প্রবীর দার জন্মদিন | সামান্যতম ভাবে সেলেব্রেশন হলো | কেক কাটাও হলো, যদিও বার্থডে কেক নয়, বড়দিনের কেক দিয়েই পালন করা হলো প্রবীর দার জন্মদিন | আমাদের চমকে আপ্লুত হয়ে বার্থডে বয় আমাদের রিটার্ন গিফট এর ঘোষণা করলেন, পরের দিন উনি আমাদের মটন বার্বিকিউ খাওয়াবেন | জন্মদিন পালনের পর ডিনার সেরে সবাই ঘরে ফিরলাম | চতুর্থ দিন ছিল ছুটির দিন | আনন্দে ছুটি কাটানো, কোথাও বেরোনোর তারা নেই, সেই আনন্দে সকলেই লেট রাইজার হয়ে গেল | ঘুম থেকে উঠে, কোনো কাজ নেই, কোনো তারা নেই তাই নিজেই একটু কেজো হওয়ার চেষ্টা করলাম | সবাই কে ডেকে নিয়ে একটু হাঁটতে বেরোলাম, হেঁটে গেলাম ভেরেটার চক পর্যন্ত | রাস্তায় দেখলাম অপূর্ব এক শঙ্খ মন্দির | পূর্ব অভিজ্ঞতার জন্য প্রবীর দার কাছে শুনেছিলাম চার্লস পয়েন্ট এর কথা | চক পর্যন্ত গিয়ে হঠাৎ মনে পড়লো সেটার কথা, সবার কাছে প্রস্তাব রাখলাম, কেউ খুব একটা আগ্রহ দেখলোনা বুঝে নিজেই হাঁটা লাগলাম পুলিশ চৌকি তে খোঁজ নিয়ে, সবার অজান্তেই | কেউ জানেনা আমি কোথায় গেছি, চার্লস পয়েন্ট পৌঁছানোর জন্য রাস্তায় কয়েকজন কে জিজ্ঞেস করেছি ঠিক রাস্তায় যাচ্ছি কিনা সেটা জানার জন্য আর তাঁদের কাছে জানতে চাইলাম ওনাদের কতক্ষন লাগে ওখানে পৌঁছাতে, তাঁদের সময়ের দ্বিগুন সময় লাগবে ধরে নিয়ে চলা শুরু করলাম, কিন্তু দ্বিগুন সময়ের বেশ কিছুটা আগেই পৌঁছে গেলাম চার্লস পয়েন্ট এ | এই জায়গাটি আঞ্চলিক ভাবে ভিউ টাওয়ার নামেও পরিচিত | যাই হোক, উপরে উঠে নিচে থাকা আমাদের সাথে আসা দুইজন কে চিৎকার করে ডাকলাম, তারাতো অবাক | আমি ই যে ডাকছিলাম সেটা বুঝতেই তাঁদের সময় লাগলো, তারপর দেখলাম সবাই একে একে এসে পৌছালো চার্লস পয়েন্ট | এই চার্লস পয়েন্ট হলো ওই অঞ্চলের সর্বোচ্চ স্থান, ওখান থেকেই নাকি গোটা ভেরেটারের উপর নজর রাখা যায়, নিজেও বুঝতে পারলাম কথাটা সত্যি, ওই পয়েন্ট থেকে তিনশো ষাট ডিগ্রি পরিষ্কার দেখা যায়, স্থানীয় মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেল ভেরেটার নামকরণ নিয়ে | ভেরেটার শব্দের মানে হলো ভেড়া চারণ ক্ষেত্র, আর সেই থেকেই নাকি ওই জায়গাটির নামকরণ | ফিরে এলাম হোটেলে | লাঞ্চ সেরে ঘুম, ঘুম থেকে উঠে বীভৎস ঠান্ডা | একেবারে হাড় কাঁপিয়েছে | সাতাশ তারিখ রাত থেকেই ঠান্ডা বাড়ছিল আর আঠাশ তারিখ সেটা পূর্ণতা পায় | ব্যাপক সেই ঠান্ডার মধ্যে মটন বার্বিকিউ বানানো হলো হোটেলের ছাদে | দারুন হয়েছিল | সারা সন্ধ্যে আড্ডা মেরে কাটিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়া হলো | পরদিন ফেরা | ঊনত্রিশে ডিসেম্বর ছিল আমাদের ফেরা |ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠে হোটেলের ব্যালকনি তে এসে চোখ ধাঁধিয়ে গেল, দৌড়ে গিয়ে বাকিদের বললাম ''এমন দৃশ্য আর জীবনে পাবেনা...'' বলেই ছুট্টে ছাদের উপরে জলের ট্যাংক এর উপর গিয়ে দাঁড়ালাম, যা দেখলাম টা ভাষায় প্রকাশে অপারগ আমি, মনে পড়লো সেই বিখ্যাত উক্তি '' আহা ! কি দেখিলাম, জন্ম-জন্মান্তরেও ভুলিব না...'' | আগেরদিন রাত এ বৃষ্টি হওয়ার জন্য আকাশ পরিষ্কার, তাতে মাউন্ট মাকালু, মাউন্ট কুম্ভকর্ণ, মাউন্ট এভারেস্ট আরও অন্যান্য পর্বত শৃঙ্গ এক ফ্রেম এ চমৎকার ভাবে দেখা যাচ্ছে | সূর্যের প্রথম আলোয় আরও মায়াবী লাগছিলো | ঠান্ডায় হাত পা কাঁপছিলো তাও ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না | অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলাম ওই ট্যাংক এর উপর, তারপর বাধ্য হয়ে নেমে এলাম ফেরার ট্রেন এর তারা ছিল বলে | তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম, পথেই প্রাতরাশ সারা হলো ধরনে | পৌঁছে গেলাম যোগবাণী | স্টেশন এ পৌঁছে লাঞ্চ করে ট্রেন এ উঠলাম, একরাশ মন খারাপ নিয়ে | দুপুর দুটো পঁয়ত্রিশ এ যোগবাণী এক্সপ্রেস যোগবাণী ছেড়ে আসলো | রাত তিনটে কুড়ি তে নেমে গেলাম কলকাতা স্টেশন | বিঃ দ্রঃ নেপাল এ ভারতীয় সিম কার্ড চলে না, ওখানকার সিম কিনতে পারেন, সম্পূর্নই নিজস্ব দায়িত্বে | যোগাযোগের ভরসা হোটেলের wi-fi | ভেরেটার এ কেনাকাটা করার মতো তেমন কিছু নেই, মোটামুটি সবকিছুই শিলিগুড়ি বা ভারতের থেকে যায় | শুধু সিগারেট টা ওখানকার, আর কেনার জন্য রইলো নেপালি টুপি আর একধরণের বিস্কুট, যার নাম ধানকুটা বিস্কুট, এই বিস্কুট ভেরেটার চক এই একমাত্র পাওয়া যায় (শোনা কথা) | সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাকাপয়সার বেপার | নেপাল এ ভারতীয় মুদ্রায় সর্বোচ্চ একশো টাকার নোট ই বৈধ | এছাড়া Nepal Currency আর Indian Currency এর মধ্যে একটা পার্থক্য আছে... I.C তে 100 টাকা হলো N.C তে 160 টাকার সমান | নেপাল এ কোনো জিনিস কেনার সময় বা বিল দেওয়ার সময় এই NC আর IC বেপার টা খেয়াল রাখতে হবে | ভারতীয় মুদ্রা তে পেমেন্ট করার সময় মনে রাখবেন নেপালি মুদ্রায় যে মূল্য হবে সেই সংখ্যা কে 1.6 দিয়ে ভাগ করলে যে উত্তর আসবে সেটি আপনাকে দিতে হবে... যেমন- একটি নেপালি টুপির দাম NC তে 300 টাকা, তাহলে আপনি IC তে দেবেন (300/1.6)=187.5 টাকা | আবার যদি আপনি NC তে 40 টাকা ফেরত পান তাহলে আপনি IC তে পাবেন (40/1.6)=25 টাকা |
গঢ়পঞ্চকোট
আসানসোল থেকে দিসেরগড় ব্রীজ দিয়ে মাত্র ৩৫ কিমি দুরে পুরুলিয়া জেলায় অবস্থিত পর্যটন কেন্দ্র গড়পঞ্চকুট।ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্বিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থান এক দিনের ও রাত্রের পক্ষে আদর্শ। সরফরাজ খাঁকে পরাজিত করে আলিবর্দী খাঁ ১৭৪০ সালে বাংলার নবাব হয়। পরবর্তী কালে সরফরাজ খাঁয়ের আত্মীয় রুস্তম জং মারাঠা রাজা রাঘোজী ভোসলের সহায়তায় আলিবর্দী খাঁয়ের উপর আক্রমন করে। ঐতিহাসিক তাৎপর্য্য অনুসারে সন ১৭৪০ থেকে ১৭৫১,প্রায় দশবছর ধরে নাগপুরের শাষনকর্তা রাঘোজী ভোঁসলের নেতৃত্বে বাংলায় বর্গীহানার মাধ্যমে লুঠতরাজ চালিয়ে যায়। রাজা সিংদেও এর রাজত্বকালে গঢ়পঞ্চকুট দূর্গ তৈরী হয়। এইসময় গড়পঞ্চকুট আক্রমন হয় ও লুঠতরাজের পর ধংসপ্রাপ্ত হয়। বিভিন্ন প্রত্নতাত্ত্বিক ধারণা অনুযায়ী তিলকাম্পা রাজত্বের সাথে পঞ্চকুট রাজত্বের সম্পর্কের অনেক নিদর্শন পাওয়া যায়। পান্চেৎ ড্যাম তৈরীর সময় ঐ তেলকম্পা রাজত্বের ধংসাবশেষ নষ্ট হয়ে যায়। গড় পঞ্চকোট ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় পঞ্চকোট পাহাড়ের কোলে অবস্থিত একটি প্রত্নস্থল। এই স্থানটি ঐ অঞ্চল শাসনকারী শিখর রাজবংশের রাজধানী ছিল ও প্রায় পাঁচ মাইল বিস্তিৃত একটি দুর্গ ছিল। গড় পঞ্চকোটের অধিকাংশ স্থাপত্য বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত বা অবলুপ্তির পথে। এই স্থানে বেশ কয়েকটি মন্দির রয়েছে, যেগুলি উপযুক্ত সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গড় পঞ্চকোটের সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য মন্দির হল একটি পঞ্চরত্ন টেরাকোটা নির্মিত দক্ষিণ ও পূর্বদুয়ারী রাস মন্দির। মন্দিরের গায়ে ফুল ও আলপনার নকশা ছাড়াও খোল, করতাল বাদনরত ও নৃত্যরত মানব-মানবীর মূর্তি পরিলক্ষিত হয়। ষাট ফুট উচ্চ কেন্দ্রীয় চূড়া বিশিষ্ট ভগ্নপ্রায় এই মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। উত্তরপশ্চিম দিকে অপর একটি পঞ্চরত্ন টেরাকোটা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, বর্তমানে যার চারটি চূড়া নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ও মধ্যের ৪০ ফুট উচ্চ চূড়াটি অবশিষ্ট রয়েছে। গড়ের পশ্চিমদিকে প্রস্তর নির্মিত কঙ্কালী মাতার ভগ্নপ্রায় মন্দিরের অস্তিত্ব বর্তমান। মন্দিরের সামনের অংশ অক্ষত হলেও পেছনের অংশ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত। কঙ্কালী মাতা পঞ্চকোট রাজ্যের কুলদেবী হলেও বর্তমানে এই মন্দিরে কোন বিগ্রহ নেই। মন্দিরের প্রবেশপথের ওপরে কোন লিপি বা মূর্তি খোদিত ছিল, যা বর্তমানে বিনষ্ট হয়েছেI গড়ের বাম দিকে প্রস্তর নির্মিত কল্যাণীশ্বরী দেবী মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ বর্তমান। এছাড়াও দুইটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত জোড়বাংলা মন্দির এই স্থানে অবস্থিত। এছাড়া পঞ্চকোট পাহাড়ের পাদদেশে রাজপ্রাসাদের ধ্বংসাবশেষ ও কর্মচারীদের বাসস্থান অবস্থিত। গড় পঞ্চকোট কেন্দ্র করে পানচেৎ ও মাইথন ড্যাম ও তার প্রাকৃতিক দৃশ্যও দর্শকের আকর্শিত করে। মাইথনের বোটিং খুবই আনন্দদায়ক। শীতের সময় মাইথন ড্যাম সংলগ্ন এলাকায় পিকনিক করার জন্য প্রচুর ভীড় হয়। এছাড়াও নিকটবর্তী কল্যানেশ্বরী মন্দিরের খ্যাতি সর্বজনবিদিত।
ভ্রমণ এর নাম: ? উঠল বাই তো অযোধ্যা যায়?
??নিজেও জানতাম না যাবো!!?? গত 21/12/18 সকাল ১০:৩০ মর্নিং ডিউটি টাইম এ বন্ধুর ফোন এলো অযোধ্যা যাবে? ?জানতে চাইলাম কবে? বললো আজ রাতে ১০:৩০ বাস ছাড়বে। আমি বললাম না কাল ইভনিং ডিউটি। সে তো অনেক কথাবার্তা চলল, শেষমেষ বললো দেখো যদি কোনো ভাবে ছুটি ব্যবস্থা করা যায়..! একা এই ভাবে কোনো দিনই বাইরে যাইনি, ?? ভাবতে ভাবতে মন অযোধ্যা পৌঁছে গিয়ে ২ হাত তুলে উড়ছি হসপিটালেই ? শেষমেষ অন ডিউটি ডক্টর স্বাথী দি বললেন সুযোগে এসছে ঘুরে এসো....এটা শোনার পর আর ও উড়ছি ? ৩০ মিনিট ধরে ৩ জন স্টাফ দিদি কে এবং আমার সহকর্মী কে ফোন করে 22/12/18 ছুটি টা হয়ে গেল ?? ফোনে মাকে আর ছোটো বুনি কে বললাম অযোধ্যা যাচ্ছি... যাইহোক রাজী হলো একদিন এর ব্যাপার ?? সন্ধ্যা ৮ বন্ধুর বাড়ি পৌঁছলাম। একটু রেস্ট নিয়ে রাত ৯ টা বন্ধু আর বন্ধুগিন্নী সাথে আমি হালকা ডিনার সেরে রাত ১০:৩০ বাস পৌঁছলাম। (বাস উঠার আগে পর্যন্ত ভাবনা ছিল কাবাব মে হাড্ডি হচ্ছি নাতো)? ওদের ২ কে জন একসাথে বসিয়ে, আমি ৩ জন সিট একা নিয়ে বেশ ভালো করেই বসে গেলাম ?(মোটা বলে না,?দেদার জায়গা বলে)??। রাতে কিছুক্ষণ মজা করতে করতে শেষমেস ২২/১২/১৮ সকাল ৬:৪৫ বাস অযোধ্যা নিচে পৌঁছালো ?। নেমেই লিকার চা ? ফ্রেশ হয়ে সাজুগুজু ? তারপর সকাল ৮:৩০ মধ্যেই লুচি, দারুন ঘুগনি সাথে চকোলেটমিষ্টি? সকালের ব্রেকফাস্ট ভালই হোলো। সকাল ১০ টা ৯জন মিলে একটা সুমো ভাড়া করে ৩:২০ মধ্যে অযোধ্যার কিছু কিছু জায়গায় কভার হলো?(৩ ঘন্টা ২৫% বেশি সম্ভব না) সে যাই হোক দারুন হল্লোর, এক্সাইটমেন্ট ফটো সেশন # সাথে প্রকৃতির মনমুগ্ধকর অপূর্ব দৃশ্য দেখে দুপুর ১:২০ পিকনিক স্পট এসে একটু রেস্ট নিয়ে দুপুরের অসাধারণ রান্নার খাওয়া দাওয়া এবং স্নান সেরে.... রেডি হয়ে বাড়ির সবার জন্য এবং হসপিটাল কিছু স্টাফ দের জন্য টুকটাক কেনাকাটা করে বিকাল ৫ টাই বাস ছারলো.... সাথে পুরুলিয়ার মন ভরা আনন্দ নিয়ে গান শুনতে শুনতে বাস চললো তাঁর গন্তব্যে.... রাতের ডিনারটা প্যাকেট করেছিলেন ৮:৩০ মধ্যে দিয়ে দিলেন। তবে আমি রাতটা ব্রিটানিয়া দিয়ে কাটালাম। এই ভাবেই বাস রাত ১২:৪৪ এ শক্তিগড়ে এসে পৌঁছালো। শক্তিগড় এসে শক্তিগড়ের ল্যাংচা, মিহিদানা, সীতাভোগ না নিয়ে কি ফেরা যাই। ?? রাত ১:৩০ বাস বন্ধুর বাড়ির সামনে নামালেন। তার সকাল ৮ ঘুম থেকে উঠে সকালে খাবার বন্ধুর বাড়ী সেরে হসপিটাল ১০-৪ ডিউটি সেরে পরে কবিগান খ্যাত শ্রদ্ধেয় অসীম সরকার মহাশয় এর কবিগান শুনে রাত ১১ বাড়ি ফিরলাম মা, কাকিমা, মামার সাথে(সাথে ২৪/১২ - ২৫/১২ ছুটি নিয়ে) ?? কী আমার ভ্রমণের গল্পের নাম সার্থক তো বন্ধুগন ?
নিজের পছন্দের কোনও সুস্বাদু খাবারের স্বাদ নেওয়ার পর সেটি যেমন জিভে লেগে থাকে, ভাবলেই জিভে জল এসে যায়। তেমনি অনেকদিন পর গত সপ্তাহে দুর্দান্ত এক ট্রিপ করে আসার পর এরকমই এক আবেশ আমার চোখে মুখে লেগে আছে। সেই আবেশেই আজ সকালে আবার বেরিয়ে পড়লাম। গতকাল রাতে কৃশানু ও টিনা এসেছিল, তাই স্যাটারডে নাইট বেশ ভালোই কেটেছে। সকালে উঠে টয়লেটে বসে ভাবছি রবিবারটাও একটু ইউনিক ভাবে কাটালে কেমন হয়।টয়লেট থেকে বেরিয়েই বললাম সবাই রেডি হয়ে নাও, আজ বাইরে লাঞ্চ করব। কোথায় যাবো ঠিক করিনি, এটা ওটা ভাবতে ভাবতে মাথায় এলো গড়চুমুক।ব্রেকফাস্টের পর স্নান করে ১১ টায় চারজনে বেরোলাম। বাগনান অথবা উলুবেড়িয়ার কোন রাস্তাটা কম হবে সেটা দেখতে গিয়ে গুগলে বাড়ি থেকে গড়চুমুক সেট করতেই তিনটি রুট দেখালো। তৃতীয় রুটটি মহিষরেখা ব্রিজের তলা দিয়ে দামোদরের পূর্ব পাড় ধরে। এরকম রুট আছে জানতাম না, আবার অযোধ্যা পাহাড়ের অভিজ্ঞতা থেকে গুগলের ওপরে খুব একটা বিশ্বাসও হচ্ছে না। যেহেতু এটা বাড়ির কাছেই আর পু্রো রাস্তাটা দামোদরের পাড় বরাবর তাই লোভ সামলাতে পারলাম না (যারা দামোদরের পাড়ে গেছে একমাত্র তারাই এর সৌন্দর্য জানে)।ঠিক করলাম এই রুটেই যাবো, যেখানে আটকাবো সেখান থেকে ফিরে আসব। কৃশানু বাগনান হাইরোডের ধারে বাইক রেখে গাড়িতে উঠল। কিছুটা এগিয়ে মহিষরেখা ব্রিজ পেরিয়ে বামদিকে ঘুরে ব্রিজের তলা দিয়ে দামোদরের পূর্ব পাড় ধরে দক্ষিণ দিকে এগিয়ে চললাম। পাড় বরাবর ভিড় গিজগিজ করছে, দলে দলে চট পেতে বসে রান্নার আয়োজন চলছে সাথে পেল্লায় সাউন্ড বক্স। চারিদিকে ছড়িয়ে থাকা থার্মোকলের প্লেটে ঘাসের মুখ ঢাকা পড়ে গেছে। গতবছর টিভি ও খবরের কাগজে দেখেছিলাম স্থানীয় মানুষ ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এই এলাকাটিকে পরিস্কার রাখতে সচেষ্ট এবং এই এলাকায় থার্মোকল ও প্লাস্টিক নিষিদ্ধ। আজ দেখে সেরকম কিছু মনে হল না। হয় যারা সচেষ্ট তারা এতটাই নগন্য যে পাহাড়প্রমাণ আবর্জনার নিচে চাপা পড়ে গেছেন অথবা প্রয়োজনীয় ফুটেজ পেয়ে যাওয়ার পর ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ানোর চাকরি ছেড়েছে। যাইহোক আমরা এগিয়ে চললাম, আর ভিড় পাতলা হতে হতে মিলিয়ে গেল। এদিকে দামোদরও নিজের খেয়ালে আমাদের সাথে চলছে। আমরা বার বার দাঁড়িয়ে নিজদের মত দামোদরকে এক্সপ্লোর করতে থাকলাম। বাধাহীন ভাবে কিছু ছবি ক্যামেরাবন্দি করলাম আর হাজারো ছবি মনে।
বাধা পেলাম মাধবপুরে এসে। এক সিভিক ভলান্টিয়ার পথ আটকাল। বলল দাদা, এই রাস্তাটায় নো এন্ট্রি, আপনাকে বামদিকে বেঁকে উলুবেড়িয়া- গড়চুমুক মেন রোড ধরে যেতে হবে। ফাঁকা রাস্তায় যেতে না দেওয়ার কারনটা কি বুঝতে পারছিলাম না। আমার মুখের জ্যামিতি পড়ে নিয়ে সিভিক ভলান্টিয়ার ভাই নিজেই বলল এই রাস্তায় আপনি গড়চুমুক আটান্ন গেট ব্রিজের মুখ পর্যন্ত যেতে পারবেন, ওখানে প্রচুর ভিড় তাই একমাত্র মেন রাস্তাটাই খোলা, বাকি সব রাস্তা বন্ধ। বামদিকে বাঁক নিতে গুগল বলল ২ কিমি গেলে মেন রোড, আমরা একটু এগিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরলাম। গুগল বলছে আমরা ধানক্ষেতের ওপর দিয়ে যাচ্ছি, কিন্তু কি সুন্দর চকচকে সরু পিচের রাস্তাটা। গুগলকে অগ্রাহ্য করে কিছুটা যাওয়ার পর বেলাড়ি মোড়ে মেন রোড পেলাম। মেন রোড ধরে কিছুটা যাওয়ার পর মাথায় হাত, সামনে বিশাল লাইন। মূহুর্তে ইউ টার্ন নিয়ে দৌড় লাগালাম। হঠাৎ মাথায় এলো বেলাড়ি রামকৃষ্ণ মিশন। গাড়ি থামিয়ে গুগলে সেট করলাম বেলাড়ি রামকৃষ্ণ মিশন, ও বাবা এ তো সেই গড়চুমুক আটান্ন গেটের আগে থেকে বামদিকের রাস্তা দেখাচ্ছে।ফোন করলাম শুভব্রতকে, ডঃ শুভব্রত মন্ডল উলুবেড়িয়া মিউনিসিপ্যালিটির মেডিকেল অফিসার, আমার ভালো বন্ধু। ওর বাড়ি এদিকেই, শুভব্রত বলল ফিরে আসার পথে বেলাড়ি মোড় থেকে ডানদিকের রাস্তা ধরলেই রামকৃষ্ণ আশ্রমে যাওয়া যাবে। আশ্রমের সামনে এসে দেখি গেট বন্ধ, মহারাজ বললেন গেট খুলবে তিনটের সময়। ভেবেছিলাম গড়চুমুকে লাঞ্চ করব এদিকে দেড়টা বেজে গেছে। পেটে আগুন জ্বলছে আর আশপাশে কোনো দোকান নেই। অগত্যা গাড়িতে রাখা অর্ধেক কেক ও সকালে মস্করা করা টিনার ডায়েট দালিয়া আর একটা আপেলের ওপর চারজনে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। মূহুর্তে সবকিছু সাবাড় করে পেটের খালি অংশটায় জল ভরলাম। আশ্রমের বাইরে প্রাগৈতিহাসিক বটগাছের নিচে গাড়ি রেখে আমরা গঙ্গার দিকে এগোচ্ছি, কিন্তু এই সুন্দর পরিবেশ আর আশ্রমের নিস্তব্ধতাকে উলঙ্গ করে নদীর পাড় থেকে উত্থিত ডিজে বক্সের ঔদ্ধত্যে যেন নিজেকেও রেপড মনে হচ্ছে। পিকনিক স্পটে না গিয়ে আমরা সোজা শ্মশান পেরিয়ে নদীর ধারে পৌঁছলাম। কিছুটা সময় কাটিয়ে বক্সের আওয়াজে অতিষ্ঠ হয়ে উঠার কথা ভাবছি, হঠাৎ পেছনে হরিধ্বনি শুনে ঘুরে দেখি একদল শ্মশান যাত্রী ম্যাটাডোর থেকে নামছে। ওদিকে দেখি সাউন্ড বক্সও বন্ধ হয়ে গেছে। নদীর পাড় দিয়ে শ্মশান টপকে পিকনিক স্পটে একটু ঘুরে বিভিন্ন রকম রান্নার ঘ্রান নিয়ে আশ্রমের কাছে এলাম। কিছুক্ষণ পরেই আশ্রমের গেট খুলে গেল। জুতো খুলে মন্দিরে উড়লাম। পুরো মন্দিরটা একপাক চক্কর মেরে বাইরে এলাম। মহারাজের (নাম জানি না, গেরুয়া বসন) সাথে কথা বলে ফেরার রাস্তা ধরলাম।ফিরলাম একই রুটে, আরো কয়েক যায়গায় ঠেক মেরে। বাগনানে কৃশানুদের নামিয়ে সন্ধ্যায় বাড়ি ঢুকলাম। আজকের স্কিপড লাঞ্চটা আবারও রিপিট হলে আমার কোনো আপত্তি নেই যদি এভাবেই রোজ বেরোতে পারি। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |