"প্রকৃতির টানে ডুয়ার্সের প্রানে"
*************************** চলুন আজ আমি আপনাদের নিয়ে যাব এমন এক জায়গায় যেখানে উন্মুক্ত প্রকৃতি সর্বদা পাহাড়, নদী, জঙ্গল ও বিশুদ্ধ অক্সিজেনের উষ্ণ স্পর্শে আপনাদের আলিঙ্গনের মাধ্যমে প্রতিটি মূহুর্ত জানিয়ে দেবে তার অস্তিত্বের অনুভূতি। আপনাদের হৃদয় কখন যে তার অনুভূতির ছোঁয়ায় বিহ্বল হয়ে যাবে তা আপনারা বুঝতেই পারবেন না। চলুন তাহলে যাওয়া যাক ? না কি? কলকাতর শিয়ালদহ স্টেশন থেকে ২০-৩০মি.এ ১৩১৪৯ কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস ধরে চলে আসুন নিউ ম্যাল জ্্শান। সকাল ৯-৩৩মি. এ পৌঁছে যাবেন আপনাদের গন্তব্য স্থল নিউ ম্যাল স্টেশনে। এখান থেকে ৮০০- ১০০০ টাকায় একটি গাড়ি ভাড়া নিয়ে চলে আসুন গরুমারা অভয় অরণ্যের টিকিট কাউন্টারের সামনে। এখানেই নেমে ID Proof দেখিয়ে বিকালের শেষ ট্রিপের "যাত্রাপ্রসাদ" ওয়াজ টাওয়ারের টিকিট কেটে নিন। এরপর কাউন্টারের ঠিক উল্টো দিকে "টাস্কের ডেন" রিসোর্টে সোজা গাড়ি নিয়ে ঢুকে পড়ুন। প্রসঙ্গত বলে রাখি আগে থেকে বুকিং করে রাখাটা ভালো। তাহলে পিক আপ কার ও দুপুরের খাবার বলে রাখলে অনেকটা সময় বাঁচাতে পারবেন। নিউ জলপাইগুড়ি ষ্টেশন থেকেও এখানে সরাসরি আসতে পারেন তবে, সেক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি হবে। চলুন এবার বাঙালি জাতির মধ্যাহ্নে কব্জি ডুবিয়ে ডান হাতের কাজটি সেরে বেলা ৩টে নাগাদ চলে আসুন কাউন্টারের সামনে জঙ্গল সাফারি করার জন্য। সঙ্গে পানীয় জল ও গরমের পোশাক অবশ্যই রাখবেন কারন হুটখোলা গাড়িতে ঠাণ্ডা লাগবে। এবার আপনাদের চালক কাম গাইড পারমিশন করিয়ে জঙ্গলের ভেতর ঢুকবে। কাঁচা রাস্তা ধরে পড়ে থাকা শুকনো পাতার উপর দিয়ে মজ্ মজ্ শব্দ করে গাড়ির চাকা গড়াতে থাকবে। চারিদিকে দাঁড়িয়ে থাকা উঁচু উঁচু খাড়া ঘন গাছের নিচ দিয়ে গাড়ি এগিয়ে চলবে। কখনো কখনো পড়ন্ত বিকেলের সূর্যের আলো ঘন গাছের ভিতর দিয়ে উঁকি মারবে আবার কখনো ভেদ না করতে পেরে প্রতিফলিত হয়ে পুনরায় আগের পথে ফিরে যাবে। এই রোমাঞ্চকর অনুভূতির স্বাদ উপভোগ করতেই লোকেরা জঙ্গল সাফারিতে আসে। তবে ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে এরই মধ্যে দর্শন মিলতে পারে ময়ূর,বানর,বনমুরগি, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও বাইসনের। গাড়ি যখন "যাত্রাপ্রসাদ" ওয়াজ টাওয়ারের সামনে গিয়ে দাঁড়াবে তখনই দেখা মিলতে পারে গন্ডার,হরিন,হাতি অথবা বুনো সুয়োরের। এখানে আধঘন্টা সময় দেওয়া হবে ভালো করে পর্যবেক্ষণ ও ফটো সেশন করার জন্য। এভাবে সূর্যাস্তের সাথে সাথেই সমাপ্ত হবে জঙ্গল সাফারি। এবার দেখবেন প্রতিটি গাড়ি একটা ছোট্ট অডিটোরিয়ামের সামনে নামিয়ে দেবে। এখানে আপনাদের জন্য আয়োজন করা হয়েছে আদিবাসী নৃত্য পরিবেশনের। শীতের রাতে মাদলের তালে তালে আদিবাসী নারীদের নৃত্য আশাকরি সবাইকে জঙলি মাদকতার মায়া জালে আবদ্ধ করবে। মন চাইলে আপনাদের সঙ্গে থাকা মহিলারাও নাচে অংশ গ্রহণ করে মনের আশা পূরণ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন এই অনুষ্ঠানের আয়োজন কেবল শেষ ট্রিপের জন্য রাখা হয়। এর পর রিসোর্টে ফিরে একটু গল্প ও খুনসুটি করে আজকের দিনটা এ ভাবেই সমাপ্ত করুন। পরদিন একটি গাড়ি ভাড়া করে (২৫০০-৩০০০ টাকা) সকাল সকাল বেড়িয়ে পড়ুন সুন্দরী ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। প্রথমে চলে আসুন জন প্রসিদ্ধ মূর্তি নদীর তীরে। এখানে নদীটি হীম শীতল স্বচ্ছ জল ধারা নিয়ে প্রতিটি মূহুর্তে কুলু কুলু শব্দ উৎপন্ন করে ছোট বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীটির অপর তীরে অবস্থান করছে সুদূর প্রসারীত ঘন সবুজে ঘেরা অরণ্যের সীমারেখা। এরই অন্তস্থলে সূর্যের কিরণে ঝিকিমিকি করছে সোনালী রঙের বালুকাময় তটরাশি যেখানে সর্বদা চরে বেড়ায় বক বা পরিযায়ী পাখির ঝাঁক। এক কথায় এই রোমান্টিক দৃশ্য আপনাদের হৃদয়কে সিক্ত করবেই। এরপর ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে আঁকা বাঁকা পথে কিছুক্ষণ চলার পর পাহাড়ি রাস্তা ধরে চলে আসুন ঝালঙ পয়েন্ট। চলার পথে অবশ্যই দেখে নেবেন চা বাগান,কফি বাগান ও রবার plantation Garden. ঝালঙ জায়গাটি মূলত একটি ভূটিয়া জনপদ। জলঢাকা নদীর অববাহিকায় অবস্থিত। নদীর অপর প্রান্তে অবস্থান করছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভূটানের সীমান্তরেখা। এখান থেকেই চরিতার্থ করতে পারেন বিদেশ সফরের হালকা অনুভূতি। এখানের পারিপার্শ্বিক সৌন্দর্য ও অতি মনোরম। পরবর্তী দ্রষ্টব্য স্থান পারেন ও বিন্দু। এগুলি মূলত জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কেন্দ্রস্থল। এখানে নদীর জল অপেক্ষাকৃত বড় বড় পাথরের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে এখান থেকে চারিদিকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অসাধারণ। এগুলি ওখানকার উল্লেখযোগ্য পিকনিক স্পট হিসেবে পরিচিত। এবার আপনাদের যাত্রা পথ বহু আকাঙ্খিত সেই সানথালেখোলার উদ্দেশ্যে। প্রকৃতি এখানে নিজেকে এক অদ্ভুত মায়াবী রুপে আবির্ভূত হয়েছে। চারিদিকে ঘিরে থাকা বিশাল বিশাল গাছের সমাবেশে সূর্যের আলোর প্রবেশ পথ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। সমস্ত অঞ্চলটা এক অদ্ভুত আলো আঁধারের মধ্যে দিয়ে নিস্তব্ধতার মায়াজাল বুনে চলেছে। এরই মধ্যে দিয়ে বয়ে চলা এক পাহাড়ি ঝর্ণার জলের শব্দ এবং ঝিঁঝিঁ পোকার ডাক নিস্তব্ধতার মায়াজালকে বারে বারে ছিন্ন করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃতির এই মায়াবী রূপ আপনাদের মতো কোলাহলমূখর জীবন যাত্রার মানুষদের একটু স্তম্ভিত করে দিতে পারে। এখানে আপনারা কিছু খাবার খেয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে এগিয়ে চলুন রকি আইল্যান্ডের অভিমুখে। বিশাল বিশাল পাথরের ভিতর দিয়ে প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত হওয়া নদীর জল শব্দ ও ফেনা উৎপন্ন করে ঝর্নার ন্যায় বয়ে চলেছে ক্রমশঃ নীচের দিকে। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে ও ফটো সেশন করে রহনা হয়ে যান সামসিঙ-এর পথে। সামসিঙ সাধারণত বিশেষ ভাবে পরিচিত চা বাগানের জন্য। একর কে একর জুড়ে বিরাজ করছে চোখ ধাঁধানো মন জুড়ানো চায়ের বাগান। এরই ভিতর পাহাড়ি রমনীদের গান গেয়ে চা পাতা তোলার বিরল দৃশ্য আপনাদের শহুরে মানুষদের মন মুগ্ধ করবেই। আপনারাও চাইলে কয়েকটি মূহুর্ত ওনাদের সাথে যুক্ত হয়ে চা পাতা তোলার আনন্দ উপভোগ করতে পারেন যা সারা জীবন স্মৃতিতে থেকে যাবে। দেখতে দেখতে সূর্য পশ্চিম আকাশের গায়ে কমলা রঙের আলোয় আলোকিত করে দিনের বিদায় জানিয়ে প্রস্থানের জন্য প্রস্তুত হবে। গোধূলির এই রাঙা আলোয় চা বাগানের বুক চীরে আঁকা বাঁকা পথে ধূলো উড়িয়ে আপনারাও চলে আসুন আজকের সফর শেষ করে আপনার রিসোর্টের আঙিনায়। এরপর বিছানায় শুয়ে স্মৃতি চালনার মধ্যে দিয়ে উপভোগ করতে থাকুন সুন্দরী ডুয়ার্সের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রূপ রস। আশাকরি আপনাদের সকলের কাছে এটা একটি অন্যতম রোমাঞ্চকর সফর হিসেবে জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। প্রকৃতির মাঝে নিবিড়ভাবে দুটো দিন কাটিয়ে তৃতীয় দিন নিউ ম্যাল স্টেশন বা নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে কলকাতায় ফিরে আসতে পারেন। প্রসঙ্গত বলে রাখি হাতে সময় থাকলে এখান থেকে লাভা ও রিশপ ঘুরে আসা যায়। তাহলে জঙ্গল, নদী ও পাহাড় এক যাত্রায় দর্শন হয়ে যায়। সময় ও পরিস্থিতি অনুযায়ী ভ্রমণ সূচী কিঞ্চিৎ পরিবর্তন করতে পারেন। কি বন্ধুরা ভালো লাগলো? তবে আর দেরি কেন? টিকিট কেটে বেরিয়ে পড়ুন বসন্তের আগে। সকল বন্ধুদের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে আজ এখানেই লেখা শেষ করছি। ভালো লাগলে লাইক ও শেয়ার করে মতামত জানান। ধন্যবাদ। ****** সমাপ্ত ******
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |