পাহাড়ী ঝর্ণা,পাহাড়ী রাস্তা আমায় ডাকে বারেবার।এক অমোঘ আকর্ষণে ছুটে যাই হারিদ্বারে,সাথে থাকে মা।হারিদ্বারের নাম শুনলেই মার চোখে-মুখে এক উজ্জ্বল দীপ্তি খেলে যায়।"যাবে নাকি এবার আবার হরিদ্বারে?-প্রশ্নটা শুনেই মা বলে ওঠে-"তোর ইচ্ছা।আমার তো ভয় ভয় করে যেতে।তবে শুধু ওখানেই থাকবো।" আমার মন তো চলে যায় দূরে--আরো দূরে। মা,যাবে বদ্রিতে?আমি তো আছি,কোনো অসুবিধা হবে না। - দেখ,ওখানে আমায় নিয়ে কোনো অসুবিধায় পরে যাবি না তো? - অসুবিধা!!আমার!কি যে বলো!! ওগো মা,তোমায় দেখে দেখে আঁখি না ফিরে তোমার দুয়ার আজি খুলে গেছে সোনার মন্দিরে তৈরি হয়ে গেল যাওয়ার প্রস্তুতি।গাড়ি ভাড়া করে চললাম বদ্রিনারায়ণের পথে।আগের বছরও গিয়েছিলাম কিন্তু মার দর্শন হয়নি ভগবানকে।তাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য ডুলি পাইনি।পায়ের ব্যাথার জন্য উঁচুনিচু পথ ভাঙতে অসুবিধা হচ্ছিল।যাইহোক,প্রথমে একদিন রাত্রিযাপন করলাম কর্ণপ্রয়াগে আর পরের দিন বিকালে পৌঁছালাম বদ্রিনারায়ণে।পৌঁছে শুনি এক মন্ত্রীর(VIP)জন্য অনেক আগে থেকে পথ বন্ধ করা হয়েছে-হেঁটে পৌঁছাতে হবে নইলে অপেক্ষা করতে হবে তার চলে যাওয়ার জন্য।তখনও সেই মন্ত্রী আসেননি।বুঝুন অবস্থাটা!!😢পুলিশ রক্ষকেরা কোনোমতেই যেতে দেবেন না।বয়স্কা মা আছেন বলতেও একটিই উত্তর--"না"।ভারত সেবাশ্রম যেটি মন্দিরের কাছে সেখানে গেলাম,ঘরও পেলাম।সুন্দর ব্যবস্থা।মহারাজ একজনকে ঠিক করলেন ডুলি বাহক হিসাবে।পরে জেনেছিলাম তিনি ছিলেন ওই আশ্রমের রাজমিস্ত্রির হেলপার।মাকে ঝুড়ি করে নিয়ে আসা হলো উঁচুনিচু পথ ধরে।মাথার উপর দড়ি দিয়ে মানুষকে পিঠে বসিয়ে পাহাড়ি পথ অতিক্রম করা চাট্টিখানি কথা নয়।আমি লোকটির অসীম মনোবল আর শারীরিক দক্ষতা দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।এত কষ্ট-এত যন্ত্রনা নিয়ে খেটে চলে এরা।মা প্রথমদিকে ভয়ে চোখ বন্ধ করে দিয়েছিল।--"ও মা,ভয় পাচ্ছ নাকি?দূর--ভয়ের কি আছে?"লোকটি বললেন"মাতাজি,ডরনে কা কোয়েই বাত নেহি,হাম হ্যায় না."--মনটা আনন্দে ভরে গেল ওনার ব্যাবহারে।আমার মাকে সেও মা বলে।পৌঁছে গেলাম ভারত সেবাশ্রমে।দক্ষিনা কত বলতে গিয়ে তিনি বললেন--"আপ পচাশু রুপিয়া দেনগে দাদা।"--পঞ্চাশ টাকা!!! আমি হতবাক।--"কাল মাতারানিকো হাম মন্দির দর্শন করায়েঙ্গে,আপ পানশো রূপয়ে দেনগে,জানে আউর আনেকে লিয়ে।"-আমার চোখের কোনে জলের আভাস পেলাম।..."আপকো মাতাকো হাম মাতাজি বোলা-আপকো মাতা মেরি মাতা জায়সা হ্যায়,ইসেলিয়ে... মারওয়ারী আদমি সে হাজার রুপিয়া লেতে হ্যায়।"::ভগবান, তুমি এদের মধ্যে এত সহিষ্ণুতা, দয়া, শ্রদ্ধা দিয়ে পাঠালে তবু কেন এদের এত পরিশ্রম করতে হয় দিনরাত? তুমি সুখ,তুমি শান্ত।তুমি হে অমৃতপাথার প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি,পরের দিন মার বদ্রি দর্শন ঘটেছিল আর প্রাপ্য স্বরূপ ওর থেকে বেশি অর্থ আমি দিয়েছিলাম।যদি আবারও আমি যাই তবে তার দেখা যেন পাই।মায়ের এই বদ্রি দর্শনে আমার মন ভরে গিয়েছিলো এক অপার্থিব আনন্দে।উপরি পাওনা ছিল এমন এক ব্যক্তির সান্নিধ্যে আসা।এখন আশ্রমের কাজ শেষ আর তারও স্ত্রী সহ সেখান থেকে চলে যাওয়া হয়েছে।সবই প্রভুর ইচ্ছা,মার দর্শন হলো বদ্রিনারায়ণ। মন রে ওরে মন,তুমি কেন সাধনার ধন পাইনে তোমায় পাইনে,শুধু খুঁজি সারাক্ষণ Post By:- Subrata Chakraborty
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |