সুন্দরী অযোধ্যা - - - অযোধ্যার নদী - পাহাড় - ঝর্ণা - দু বাহু বাড়িয়ে তার সবুজ আঙিনায় পর্যটকদের জন্য অপেক্ষা করে আছে। প্রাকৃতিক সম্পদের সাথে চোখ টানে বৈচিত্র্যময় জনজীবন, লোক শিল্প - - - তাদের সংস্কৃতি, উৎসব। অযোধ্যার বিস্তৃতি এক বিশাল অঞ্চল জুড়ে। প্রকৃতির অকৃত্রিম দানে সৌন্দর্যের ছড়াছড়ি। প্রতিটি ঋতু তে রূপ বদলাতে থাকে বর্ষায় সবুজের জয়গান, জলাধারের উপচে পড়া জলরাশি, শরৎ এ কাশ ফুলে আগমনী বার্তা, কনকনে শীতে বনভোজন, খেজুর রস ও গুড় এর সম্ভার, আর বসন্তে রাঙা হাসিতে পলাশ ফুলে জানানো হয় স্বাগত হে হেথা শুভ অতিথি । গাড়ির তুলনায় হেঁটে বেড়ানো তে আনন্দ অনেক বেশি। প্রকৃতির রূপ - রস - গন্ধ - বর্ন যেনো শরীর ও মনে সম্পৃক্ত হয়ে যায়। তবে সময়ের অভাবে সম্ভব হয়ে ওঠে না। জনপ্রিয় কিছু স্পট কিছুতেই মিস করা চলে না। তাদের নিয়ে দু এক কথা লেখার চেষ্টা করলাম। বামনী ঝরনা - - সমগ্র অযোধ্যার হৃদ পিন্ড বলা হয়। প্রায় ১০০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফিয়ে পড়ছে অবারিত জল রাশি। ধাপে ধাপে নীচে নেমে গেছে। পড়ি মরি করে ছুটে চলেছে অজানা গন্তব্যে। পাথর খণ্ডে আহত জল কণা মিশছে বাতাসে। তার শীতল স্পর্শে শরীরে চলে আসে এক অদ্ভুত সজীবতা। টাইগার হিল এর মত দূর থেকে দেখা রূপকথা নয়, দু হাত বাড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সমস্ত ইন্দ্রিয় দিয়ে হৃদয়ঙ্গম করা যায়। সবুজের লালিত্যে পাখির কলতানে যেন এক খন্ড স্বর্গ রাজ্য। ঝর্ণা র জলে স্নান করার লোভ সামলাতে না পারলে নেমে পড়া যায়। নিমেষে মুছে যাবে সমস্ত ক্লান্তি ও মনের গ্লানি। টুরগা ফলস - - - বর্ষাকালে সৌন্দর্য কোনো অংশে কম নয়। প্রকৃত আস্বাদন পেতে গেলে নীচে নামতে হবে। পথ বিপদসঙ্কূল হলেও প্রাপ্তির ঝুলি টা অনেক বেশি। জলরাশিকে মনে হয় যেন আকাশ থেকে লাফিয়ে পড়েছে। পাথরের গায়ে প্রাকৃতিক খাদ সৃষ্টি হয়েছে। স্নান করার সুপ্ত ইচ্ছা টাও এখানে সেরে নেওয়া যায়। জল পথ ধরে নীচে অনুসরণ করে চললে আরও মনোরম দৃশ্য পাওয়া যায়। টুরগা ড্যাম এর সাথে মিলন স্থল আরও অপরূপ। বিস্তীর্ণ পাথরের গায়ে ছড়িয়ে ঝর্ণা র রূপ যেনো এক বিস্তীর্ণ ক্যানভাস। মার্বেল লেক - - - - বামনী ঝরনা থেকে কিছুটা উপরে রাঙা মোড়, সেখান থেকে বাঁ দিকে কিছুটা গেলেই পৌঁছে যাওয়া যায়। পাহাড় কেটে সেই পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে আপার ড্যাম এর পাড়।সেই খাদে জল জমে তৈরী হয়েছে মার্বেল লেক বা ব্লু ড্যাম। গভীর খাদে র জল নীল দেখায় বলেই এরকম নামে অনেকে ডাকেন। আকাশে ভেসে যাওয়া মেঘেদের ভেলার প্রতিচ্ছবি দেখতে দেখতে মন হারিয়ে যায় সুগভীর নীল সলিল রাশি তে। সূর্যাস্তের পড়ন্ত অলোকরশ্মি শ্বেতপ্রস্তরে প্রতিফলিত হয়ে সোনালী আলোকমালায় সেজে উঠে। মায়াবী আলোকে সে এক স্বর্গীয় অনুভূতি। মুরগুমা জলাধার - - - - মোহিনী মুরগুমা ।অযোধ্যা হিলটপ থেকে উত্তর দিকে ময়ূর পাহাড় দিয়ে মাত্র ১৬ কিমি দূরে। পাহাড় থেকে নামার পথে প্রতিটি বাঁকে দাঁড়াতে হয়। দৃশ্যপট বদলে যেতে থাকে। পাহাড়ের খাঁজে জলরাশি ঢুকে সৌন্দর্যের মাত্রায় নতুন পালক যোগ করেছে। মাঝে পাহাড় কে ঘিরে জল রাশি কলকল করছে। পাড় দিয়ে হাঁটতে মনে হয় অন্য জগতে এসে হাজির হয়েছি। তাজা হাওয়া মন ভালো করে দেয়। ফুরফুরে মেজাজে দেখা যায় পরিযায়ী পাখিদের খেলা। যে দিকে চোখ ফেরাবেন শুধু পাহাড়। মাঝের এই জলাধার যেনো তারই স্নেহ ধারা। সূর্যাস্তের নরম আলোকে কি যে মায়া জড়িয়ে আছে কে জানে! - - এটাই হয়তো মায়ার বাঁধন। তবে ভরা বসন্তে মুরগুমা সত্যি অপরূপা।জলাধার এ যেদিকে সাহারজোড় স্রোত মিশেছে সেদিকে কিছুটা গিয়ে একটা পাথরের উপরে উঠে যে দৃশ্য রূপ দেখেছি - - ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। সারি সারি পলাশ ফুটে আছে। দূর থেকে মনে হয় কেও যেনো মুঠো মুঠো লাল আবীর ছড়িয়ে দিয়েছে। আর একটু এগিয়ে দ্বীপের মতো জায়গাটা তে পৌঁছানো যায়। সেখানে প্রকৃতির বিশাল সমারোহ। নিভৃতে, নিরিবিলি তে বসে এই সুন্দরতার যজ্ঞে সামিল হওয়া এক অনন্য অভিজ্ঞতা। যতদূর চোখ যায় শুধু জল আর জল। পাশেই এক ঘাটে দেখলাম এক মা তার ছেলেকে পরম স্নেহে স্নান করিয়ে দিচ্ছেন। সময় কখন কেটে যায় বুঝতেই পারা যায় না। এই আনন্দ মনের গহনে উৎসব এর সূচনা করে। হৃদয় জুড়ে বিরাজ করে শুধু প্রশান্তি। বন দেবতার কাছে বিনম্র চিত্তে জানালাম - - - এই অপার সৃষ্টির কাছে, সৌন্দর্য এর কাছে পৃথিবীর সমস্ত সুখ নতজানু হয়ে থাকবে। আজ প্রথম পর্ব লিখলাম। আপনাদের ভালোবাসা পেলে উৎসাহ পাব আগামী লেখা তে। কমেন্ট বক্স এ মতামত দেবেন। চাইলে শেয়ার করতে পারেন। অহল্যা ভূমি পুরুলিয়া কে সকলের সামনে তুলে ধরার আমার ক্ষুদ্র প্রয়াস।অগ্রিম ধন্যবাদ রইলো। ছবি ও লেখা - জনার্দন মাহাত। Post By:- Janardan Mahato
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |