GANGASAGAR (7-8th July) ১ম পর্ব- ঘুরে এলাম গঙ্গাসাগর - একদিনের জন্য। ৭-৮ ই জুলাই। আমরা ক'জন মানে সব মিলিয়ে ১২ জনের একটি দল। ৭ জন চলে গেছিলাম এস্প্লেনেড-এ। SBSTC র বাসে চাপলাম কাকদ্বীপ যাবার জন্য। ৬ টা ৫০ মিনিটে বাস ছাড়ল। শুনলাম সাড়ে তিন ঘন্টা মতো নেবে কাকদ্বীপ যেতে। ভাড়া ৭০ টাকা। বাকি তিনজন ঠাকুরপুকুর ৩এ বাস স্ট্যান্ড থেকে আমাদের বাসটিতেই উঠল। আর দুজন গঙ্গাসাগরে আমাদের সাথে যোগ দেবে। ১০-৩০ মিনিটে আমরা বাস থেকে নেমে সাইকেল ভ্যানে চেপে lot no. 8, harwood point এ গেলাম। ১০ টাকা করে ভাড়া। সাড়ে ১২ টার আগে কোনো ভেসেল নেই, জোয়ার এলে ভেসেল যাবে আনুমানিক সাড়ে বারোটা নাগাদ। আমরা তাই দুপুরের খাওয়াটা সেরে ফেললাম। ইতিমধ্যে টিকিট কাউন্টারের সামনে লম্বা লাইন পড়ে গেছে। জোয়ার আসার পর ভেসেল এল। আমরা ভেসেলে উঠে পড়লাম । ৯ টাকা ভাড়া। ৪৫ মিনিট মতো লাগল ওপারে পৌঁছাতে । খুব ভিড় ছিল দিনের প্রথম ভেসেল ছিলো বলে। ওপারে কচুবেরিয়া পৌঁছে একটা ম্যাজিক গাড়ি ভাড়া করলাম, প্রত্যেকের ৩০ টাকা হিসাবে ভাড়া। সোজা ভারত সেবাশ্রম সঙঘ এ। এখন off-season, তাই ঘর পেতে কোনো অসুবিধে হলো না। আমাদের বাকি দুজনও এসে গেলো। ৬ বেডের রুম ২৫০ টাকা, দোতলায়। খাবার ব্যবস্হা একবেলার জন্য হতে পারে, তবে ৮-৮.৩০ মিনিটে সকালবেলায় জানিয়ে দিতে হবে । ১২ টা থেকে খাওয়া শুরু, ১২.৩০-১ টায় শেষ হয়ে যাবে। রাতের জন্য এদের ব্যবস্হা নেই। আমরা বাইরে খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। এখানে একটা কথা বলি। গেটের বাইরে বেড়িয়ে ডানদিকে একটা হোটেল আছে। সেখানে আমাদের খাওয়ার অভিগ্গতা একেবারেই ভালো নয়। তাই একটু দেখে নেবেন। আমরা খাবারের জন্য বলে চলে গেলাম সাগরে স্নান করতে। এখানে স্নানের আনন্দটা একেবারে ভিন্ন রকমের। দীঘা বা পুরীর মতো নয়। জলে বালির ভাগও বেশ কম। একসময় আশ্রমে ফিরে এলাম। এরপর বাইরের হোটেলে খাওয়া-দাওয়া সেরে নিয়ে কিছুটা সময় বিশ্রাম নিলাম। কপিলমুনির মন্দিরের আরতি হয় সন্ধে ৭-১০ মিনিট থেকে ৮টা। আমরা ৭টায় মন্দিরে পৌঁছে গেলাম । পুরো আরতিটা দেখলাম । বেশ ভালো কাটল সময়টা। এরপর সমুদ্রের ধারে গেলাম । রাতের সমুদ্রের সৌন্দর্য আলাদা রকমের। ঘুটঘুটে অন্ধকারে sea beach e গিয়ে দাড়ালাম। মাথার ওপর পরিস্কার আকাশে শত শত তারার মেলা পরিবেশটাকে কেমন একপ্রকার মায়াবী করে তুলেছে। আসার সময় ভেসেলে ওঠার পর ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি নেমেছিলো। কচুবেরিয়া পোঁছানোর আগেই বৃষ্টি থেমে গেছিলো। আকাশ এখন একেবারে পরিস্কার। তাই এখানে এসে এতো তারা দেখার সৌভাগ্য হলো। বীচে এখন লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে। দিনের বেলা স্নান করতে এসে প্রচুর সারমেয় দেখেছিলাম, যারা পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, খাবার সংগ্রহ করে তীর্থযাত্রীদের কাছ থেকে। ছোট ছোট স্টলও ছিলো যারা এদের খাবার মানে বিস্কুট বিক্রি করে তীর্থযাত্রীদের কাছে । এখন সেই দোকানও নেই, সারমেয়গুলোও নেই দু-একটা ছাড়া। একটা বিয়েবাড়ির দল টোটো ভর্তি লোক নিয়ে সামনে অনেকদূর চলে গেলো যাতে সমুদ্রের জল ছুতে পারে। আমরা মোবাইলের টর্চ জ্বেলে কিছুটা গেলাম, কিন্তু জল যে বহুদূরে, অগত্যা ফিরে এলাম। ফেরার পথে সাগর ফুড কোর্টে রাতের খাবারটা খেয়ে নিলাম। ভাত-রুটি, আমিষ-নিরামিষ সবই পাওয়া যায়। এদেরকে আগের দিন বলে গেলে ওরা আপনার পছন্দমতো খাবারও বানিয়ে দেবে। খাওয়া-দাওয়া সেরে আশ্রমে ঢোকার আগে মশা মারার কয়েল কিনে নিলাম। আশ্রম থেকে আপনি মশারী বা কয়েল কোনোটাই পাবেন না। মশা প্রচুর আছে। রাতে ঘরের বড় বড় তিনটি জানালা খুলে, কয়েল জ্বালিয়ে ও ফ্যান চালিয়ে শুয়ে পড়লাম। সারাদিনের ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়লাম। রাতে বৃষ্টিও হলো। তাই মশা বা গরম কোনোটাই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটাতে পাড়ল না। (পর্ব-১) চলবে। ২য় ও শেষ পর্ব এলার্মের আওয়াজে ৫টায় ঘুম ভেঙ্গে গেল। ঠিক ছিল ভোর বেলায় sea beach এ morning walk korbo। বাদ সাধল প্রকৃতি। সকলে তৈরি হয়ে যেই বেরোতে যাব ঠিক তখনি ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি নামল। গতকালের বৃষ্টির রেশ এখনও কাটেনি। আকাশ এখনও গোমরা মুখ করে আছে। সাথে আমাদের সকলকেও গোমরা মুখো করে দিল। একটু পরে বৃষ্টি কমলে বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু কিছুটা যাবার পর আবার বৃষ্টি নামল, আমরা একটা দোকানের সামনে আশ্রয় নিলাম। কিছুটা সময় পর বৃষ্টি কমে গেলে আমরা আবার sea beach মুখো হলাম। জল এখন অনেক কাছে, রাতের মতো অভিমান করে দূরে সরে নেই। এখন সাড়ে ছ'টা। আকাশে মেঘ আছে তবে বৃষ্টি আর হচ্ছে না। beach ধরে আমরা হাঁটতে লাগলান। বা দিকে সারি সারি ঝাওবন। পরিস্কার beach। হাঁটতে হাঁটতে অনেকদূর চলে এলাম, জেলেদের নৌকার সারি দেখা গেল। একেবারে ঝকঝকে বীচ। এখানে বীচে পা একটু ডেবে যাচ্ছে। একজন জেলেভাইকে জিগ্যেসাই করে ফেললাম, 'চোরাবালি আছে ?' সে বলল, 'না'। জল এখানে যেন আরো পরিস্কার। অনেকটা সময় ঘুরলাম। এরপর আশ্রমে ফিরে এলাম। ঠিক হলো যে ফেরা আমরা নামখানা দিয়ে করব। কারন ছিল দুটো। প্রথমতঃ আমরা একটু তাড়াতাড়ি বেরোবার plan করেছিলাম। অত তাড়াতাড়ি ভেসেল পাবো না। একটার আগে ভেসেল পাবার কোনো সম্ভাবনাই নেই, জোয়ারের উপর নির্ভরশীল পুরোপুরি । দ্বিতীয়তঃ নামখানা রাস্তাটাও জানা হয়ে যাবে। এখানে সারাদিন launch চলে। তবে একঘন্টা বা দেড় ঘন্টা পরে পরে। গতকালের ম্যাজিক গাড়ীর ড্রাইভারকে বলে দিয়েছিলাম। সে চলে এসেছিলো ১০টা নাগাত। ৩০ মিনিট মতো লাগে বেনুবন আসতে। বেনুবন যেতে ভাড়া ৩৫ টাকা এক একজনের। পুরো বুক করলে ৪০০ টাকা। টোটোও যায়। ওরাও ৩৫-৪০ টাকা করে নেয়, তবে একটু দরদাম করে নিতে হবে। বেনুবন থেকেই launch ছাড়ে নামখানার জন্য। ১১-৩০ মিনিটে পরের launch । ৩০-৪০ মিনিট বসতে হবে। তবে বসার ব্যবস্হা আছে । launch এ টিকিট কাটতে হবে। ভাড়া ২৫ টাকা। ১৫ মিনিট আগেই গেট খুলে দিলো। একঘন্টার জার্নি । দারুণ উওেজনাময় ও আনন্দদায়ক হলো। একসময়তো launch এতোটাই দুলছিলো যে কিছু মানুষের মুখ শুকিয়ে গেছিলো বলেই মনে হলো। তবে ভয়ের কোনো কারন নেই। স্হানীয় মানুষজন যারা আবার রেগুলার যাতায়াত করে তারাই এটা বলল। আমরা ১২-৩০ মিনিটে নামখানা পৌছালাম। দুপুরের খাওয়াটা ফেরিঘাটের কাছাকাছি একটা হোটেলে সেরেই নামখানা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। ১০ টাকা ভাড়া টোটো গাড়ির । ১-৩৩ মিনিটের মাঝেরহাট লোকালে উঠে বসলাম। ২৫ টাকা ভাড়া Tollygunge পর্যন্ত । ৪-১০ মিনিট নাগাদ Tollygunge স্টেশনে নামলাম। সব মিলিয়ে দারুণ আনন্দায়ক হলো। কারো কিছু জানার থাকলে জানাবেন, আমি যতোটা পারবো আপনাদের সাহায্য করব। (২য় ও শেষ পর্ব) Post By:- Samir Chakraborty
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |