সব তীর্থ বার বার গঙ্গাসাগর এই নিয়ে তিন বার।(১৭.০৬.২০১৮) এক কাক ভোরে বন্ধুরা মিলে বেরিয়ে পরের সন্ধ্যায় ফিরে আসা এক নেশায় পরিনত হয়ে গেছে যেন।এবারো ঈদের দিন বন্ধুরা ছুটালাম পংখিরাজ।এক টানে কাকদ্বীপ। গাড়ি পার্কিং করে, প্রয়োজনীয় কিছু কেনাকাটা সেরে ভেসেলে উঠেই কচুবেড়িয়া।।এর আগে দুবার এসছি তবে মেলার সময়।।মেলার সময়ে জনতান্ডব দেখা আছে, সারারাত পায়ে হেটে ছোট্ট ভারতবর্ষ দেখা আছে।তখন গঙ্গাসাগর মেলা যেন এক টুকরো ছোট্ট ভারতবর্ষ।। অনেক দিন ধরেই মনের মধ্যে একটা ভাবনা পাক খাচ্ছিল।।যখন মেলা নেই, জন অরন্য নেই,যেদিকেই চোখ যায় শুধু মানুষ আর মানুষ... এই ব্যাপার গুলো যখন নেই তখন গঙ্গাসাগর দেখার ইচ্ছে দলা পাকাচ্ছিল মনের মধ্যে।আর সেই ভাবনা থেকেই আবার আসা কপিল দেভের রাজত্বে।কিন্তু কচুবেড়িয়া কে তো বড্ড অচেনা লাগছে।জনমানবশূন্য।। অল্প কিছু ট্রেকার,ম্যাজিক, টোটো ইঞ্জিন ভ্যান এসব।।মেলার সময় ছিটকে পড়তে পড়তে বেচে যাওয়ার রিস্ক নেই এই সময়।।দুলকি চালে পৌছালাম কপিল মুনির আশ্রম।। এত রোদ বাপের জম্মে দেখিনি।।নিজের গা দিয়েই পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছিলাম যেন।দূর থেকে আশ্রম চত্তর দেখলাম শুনশান।।মন্দিরের দিকে রোদ্দুরের চোটে যেতেই পারলাম না।।সটান ঢুকে গেলাম গঙ্গাসাগর টুরিস্ট লজের বাতানুকূল আরামে।। মন কিন্তু ছটফট করছিল কখন সমুদ্রতট এ যাব।।যাই হোক কিছু টা সময় রেস্ট নিয়ে সাড়ে তিন টে নাগাদ বীচে।।লোকজন খুব বেশী নেই।। তার মধ্যেই চান করতে করতে ভাবছিলাম মানুষ কেন দীঘা বা পুরী যায়? মাস খানেক আগেই দীঘা ঘুরে এলাম।। গা ঘিন ঘিনে ভীড়, বীচে নেমেই দেখি কম করে দেড়লাখ লোক। উফ দায়ে না পড়লে আর কোন দিন দীঘা যাব না। যাই হোক চান সেরে খেয়ে দেয়ে সন্ধ্যায় কপিলমুনির আশ্রমে সন্ধ্যারতি দেখলাম। তারপর পেলাম শ্যামল কে।। শ্যামল স্মার্ট ইয়ং এক্কেবারে জেন নেক্সট।। সাগরে টোটো চালায়।। ভদ্র এবং বিনয়ী। রাতেই ঘুরে ঘুরে দেখাল নির্মীয়মাণ ইস্কন মন্দির,ওনকার নাথের মন্দির, ভারত সেবাশ্রম, মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ইচ্ছায় নির্মিত কাঠের বাড়ি, আদতে সরকারি গেস্ট হাউজ।। আগেও যতবার এসেছি দেখেছি এটা।। কিন্ত এবার ভুত বাংলো মনে হচ্ছিল।। রাতের গা ছম ছমে পরিবেশ,আলো আধারিতে গেস্ট হাউজ টা চেনাই যাচ্ছিল না।আশ পাশে একটাও মানুষ নেই।।একা একা দাঁড়িয়ে বিরাট অর্থব্যয়ে নির্মিত সুন্দর মনোরম এই বাংলো। এত্ত গরমে শ্যামল কে নিয়ে কোল্ড ড্রিংক্স খেয়ে ঘরে ফিরে ঘুম। শ্যামল কে বলে রাখলাম সকালে আসার জন্য।ও বলেছে সকালে লাইট হাউজ আর কালিবাজার দেখাতে নিয়ে যাবে। ভোর পাচটায় উঠে হাটতে হাটতে সমুদ্র। নিরালায় নিঃশব্দ সমুদ্রের গর্জন।।মানে মানুষের শব্দ নেই কিন্তু সমুদ্রের গর্জন আছে।। গ্রামের গরীব মহিলারা দেখলাম আকশি টাইপের জিনিস দিয়ে বালি হাচড়ে একটা শিল্পের মত করে ফেলেছে। পরে জানলাম পুর্নাথীদের ফেলে দেওয়া পয়সা নাকি ওরা রোজ এভাবেই কুড়ায়। জলে হাটু ডুবিয়ে অনেক ক্ষন দাঁড়িয়ে শেষে উঠলাম চা খেতে। এর মধ্যেই শ্যামল হাজির। এত মিশুকে আর হাসিখুশি ছেলে খুব কম ই দেখেছি আমি।প্রথমে গ্রামের মেঠো কিন্তু পাকা রাস্তা ধরে বহু সময় চলার পরে লাইট হাউজের পাশের বীচে নিয়ে গেল আমাদের।। এখানেই সবচে বেশী তৃপ্তি পেলাম আমরা।।কোন পর্যটক নেই, শুধু আমরা।।মুখোমুখি আমরা আর সমুদ্র।গ্রামের মানুষের জীবন জীবিকা সবই এই সমুদ্র কেন্দ্রিক।বোল্ডার দিয়ে সমুদ্রের পাড় বাধিয়েও আটকানো যায়না ভাঙন এখানে।।প্রকৃতির কাছে মানুষ বড় আসহায়।।তবুও সহজ সরল মানুষ গুলো কেউ বাগদার পিন ধরে, কাকড়া ধরে জীবন নির্বাহ করে।।সমুদ্রেই জীবন, আর সমুদ্রেই হয়ত মরন এদের।আমাদের দেখে এখান কার মানুষ জন অবাক হয়ে গেল কারন পর্যটক বড় একটা আসেনা এদিকে।ভার্জিন বীচ যাকে বলে আর কি।এখানেই নেমে পড়লাম, হাটলাম অনেক খানি।।কি যে অনুভুতি এরকম একটা বীচে হেটে বেড়ানোর যেখানে আর কেউ নেই... শুধু আপনি আর আপনার সামনে সমুদ্র। যাই হোক এখানেই অনেক টা সময় কাটিয়ে ফিরছি কালি বাজারের দিকে।।কালিবাজারে নাকি প্রচুর মাছ ওঠে।।যাই হোক কোন মাছ নেই।।এখনো ইলিশ ধরা শুরই হয়নি।।তবে ধরতে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে।।তবে অনেক দিন পর আবার গঙ্গাসাগরে যেয়ে দেখলাম গঙ্গাসাগর অনেক পরিনত হয়েছে।। উন্নত হয়েছে অনেক তবে আরো বেশী পরিনত হয়েছে।। কি করে বুঝলাম? টোটোতে যেতে যেতেই শ্যামল কে জিজ্ঞেস করলাম ফেরার ভেসেল কটায় রে? ওর ছোট্ট উত্তর।।" দেখে নাও" আবার জিজ্ঞেস করতেও একই উত্তর।শেষে ও বল্ল গুগুলে gangasagar vessel time লিখে সার্চ মারো, তাহলেই সব টাইম পেয়ে যাবে। অবাক হয়ে গেলাম।।বুঝলাম গঙ্গাসাগর উন্নত তো হয়েইছে, তবে পরিনত হয়েছে অনেক বেশী। ( নিজের মনে যা আসে লিখি।। কারন অনাগত একাকী ভবিষ্যতে হয়ত এগুলো নিয়েই স্মৃতিচারন করতে হবে।। তখন এই মরচে ধরা ফেবুর পাতা উল্টিয়েই হয়ত আবার পেয়ে যাব সেই শ্যামল কে। হয়ত তখন আর চিনতে পারব না কারন তখন মিলিমিটার সেন্টিমিটার হয়ে যাবে যে) (পুনশ্চ) :আর আমার এইসব হাবি জাবি জাবর কাটা একান্তই আমার নিজের ভবিষ্যতের জন্য, পাঠকের মনে বিরক্তির উদ্রেক হলে তার দায় একান্তই পাঠকের Post By:- Sajal Mondal
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |