॥ গঙ্গাসাগর ॥ ( Gangasagar )- - পূর্ণেন্দু ফাদিকার আমাদের গ্রামের বাড়ীটা ভারী অদ্ভুদ সুন্দর জায়গায়। তিন জেলার সঙ্গমস্থলে। একদিকে বয়ে চলেছে রূপনারায়ণ নদ তার সাথে এসে মিশেছে দামোদরের শাখা নদী মুন্ডেশ্বরী। এই নদীগুলিই তিন জেলার সীমানা তৈরি করেছে। রূপনারায়ণের এক পাড়ে মেদিনীপুর (বর্তমানে পশ্চিম মেদিনীপুর)। এখানেই কৈজুড়ী গ্রামে আমার বাপ ঠাকুরদার আদি বাড়ী। মুন্ডেশ্বরী যেখানে রূপনারায়ণের সাথে মিশেছে তার উত্তর দিকটা হুগলি জেলার মাড়োখানা ও দক্ষিণ দিকটা হাওড়া জেলার উত্তর ভাটোরা গ্রাম। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা কলকাতায় হলেও মাঝে মাঝেই গ্রামের বাড়ী বেড়াতে যাই। অনেক ছোট বেলায় – কোনও এক শীত কালের ঘটনা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। তখন গঙ্গসাগর মেলা উপলক্ষে হুগলী জেলার তীরে মাড়োখানা থেকে বড় বড় কাঠের পাল তোলা নৌকা সারা মাসের সব রসদ নিয়ে পাড়ি জমাতো গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির মন্দিরে তীর্থ করতে। তখন দেখছিলাম যারা যাচ্ছে তাদের বাড়ির লোকজন অঝোরে কাঁদছে। আমার ছয় বছরের মনটা তখনও সবটা বুঝতে পারতো না। কেন সবাই কাঁদছ? কোথাও বেড়াতে গেলে তো খুব মজার ব্যাপার, তাও এরা কাঁদছে কেন? মাকে জিজ্ঞাসা করতে জানতে পারলাম যে গঙ্গাসাগরের পথ খুবই দুর্গম এবং বিপদসঙ্কুল। অনেক নৌকাই নাকি যাবার পথে বা ফেরার পথে ডুবে যায়। তাই ওরা সব পুণ্য অর্জন করে বাড়ী ফিরবে কিনা তার কোনও নিশ্চয়তা নেই। ছোট্ট মনটা তখনই ছ্যঁক করে উঠেছিল! আরে ঐ নৌকায় তো আমার বড় পিসিই পাড়ী দিচ্ছে। মাকে বলেছিলাম – ‘মা বড় পিসি ফিরবে তো?’ মা বলেছিলো ভগবানকে ডাক। তখনই জেনেছিলাম – ‘সব তীর্থ বারবার .... গঙ্গাসাগর একবার।’ না, কোনও রকম দুর্ঘটনা ঘটে নি। পিসি ভালো ভাবেই ফিরে এসেছিল। পরে পিসি কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম– কেমন বেড়িয়ে এলে? (তখনও আমি তীর্থযাত্রা মানে বেড়ানোই বুঝতাম!) পিসি সস্নেহে মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিল – বড় হয়ে তুইও যাবি। মাঝে ৩৫ বছর পেরিয়ে গেছে কিন্তু এখনও আমার গঙ্গাসাগর যাওয়া হয়ে ওঠেনি! এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়তো আগের মত দুর্গম নেই। তাই আপনার মন চাইলে গঙ্গাসাগর বার বার পাড়ি দিতেই পারেন। তবে সদ্য গঙ্গাসাগর ফিরে এসে আমার উপলব্ধি – আগের মত হয় তো এত বিপদ নেই। কিন্তু যাওয়াটা খুব সহজও নয়! অনেকগুলো যানবাহন পাল্টে পাল্টে আপনাকে ওখানে যেতে হবে। তার উপর আছে বেশ কিছু ঝক্কি! কারণ জোয়ার বা ভাটার উপর আপনাকে ভেসেল পারাপার নির্ভর করতে হবে। ছেলের গরমের ছুটি চলছে কিন্তু এদিকে আমারও বেশ কাজের চাপ। বেড়াতে যে যাবো, সে সময় নেই। গিন্নি আর ছেলে রোজই ঘ্যানর ঘ্যানর করেই চলেছে। ফেসবুকে কয়েকটা ট্রাভেল গ্রুপের মেম্বার হয়েও আমারও মনটা যেন কেমন কেমন করছে – সব সময়ই মনে হয় বেড়িয়ে পড়ি বেড়াতে। তাই সব মিলিয়ে শেষ পর্যন্ত ঠিক হল এক রাত্রি ও দুদিনের জন্য কোথাও ঘুরে আসি। প্রথমেই মাথায় এলো – দীঘা। কিন্তু কয়েকটা গ্রুপ মেম্বারদের পোস্ট দেখে সে আশা ছেড়ে দিলাম। ওখানে এখন প্রচুর ভীড় আর তাই লাগাম ছাড়া হোটেল ভাড়া। শুনলাম ওন্ড দীঘা থেকে নিউ দীঘাতে নাকি কলকাতার থেকেও বেশী ট্র্যাফিক জ্যাম হচ্ছে। এই সব ভেবে শেষ পর্যন্ত ঠিক হল ফাঁকায় ফাঁকায় ঘুরে আসি – গঙ্গাসাগর। মনে পড়ে গেল বড় পিসির কথা। ভাবলাম একটা নতুন জায়গা ঘোরাও হবে এবং সাথে সাথে কপিল মুনির আর্শিবাদ পাওয়া যাবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ 11-06-2018 তারিখে বেড়িয়ে পড়লাম গঙ্গাসাগরের উদ্দশ্যে। প্রথমে শিয়ালদহ থেকে লোকাল ট্রেনে প্রায় 3 ঘন্টা জার্নি করে কাকদ্বীপ স্টেশন। ট্রেন ভাড়া – 25 টাকা। ওখান থেকে 20 মিনিট টোটো চেপে লট নং আট এর ভেসেল ফেরী ঘাট। ভাড়া 20 টাকা। (আসল ভাড়া 10 টাকা, যেটা লোকাল লোকেদের জন্য! যেই বুঝবে আপনি পুণ্যার্থী বা গঙ্গাসাগর যাত্রী তাহলেই ভাড়া 20। আপনি দরদাম করে উঠতে পারেন)। পোঁছে তাড়াতাড়ি টিকিট কেটে উঠতে যাবো, জেটির গেট বন্ধ হয়ে গেলো। পরের ভেসেল এক ঘন্টা পর। লট নং আট থেকে কচুবেড়িয়া পর্যন্ত ভেসেলের ভাড়া ছিল 8টাকা। আজই (11-06-2018) ভাড়া বেড়ে হয়েছে 9 টাকা। গিন্নি ও ছেলেকে জেটির লাইনে দাঁড় করিয়ে আমি একটু এদিক ওদিকে ঘুরে এলাম এবং তথ্য সংগ্রহ করে এলাম। এটা নতুন জেটি। আগেরটা চড়া পড়ার জন্য আর ব্যবহার করা হয় না। দূরে একটা 1 নং জেটি আছে গাড়ী পারাপার করার জন্য। কেউ যদি কলকাতা থেকে নিজস্ব গাড়ী করে আসেন, তাহলে সেই গাড়ী করেই 1 নং জেটি দিয়েই গাড়ী পার করে সরাসরি গঙ্গাসাগর যেতে পারেন। আগে এলে আগে এই হিসেবে গাড়ি পার হয়। কেউ বাইক নিয়েও সাধারণ যাত্রী বাহী ভেসেলই বাইক পারাপার করতে পারেন। বাইকের জন্য মোট 8টি (আটটি) টিকিট কাটতে হবে। একটু ছবি তুলে ফিরে লাইনে জেটির লাইনে। প্রচুর লোকের লাইন। ভারতের দূর দুরান্ত থেকে অনেকেই এসেছে! উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র ও পাঞ্জাব এই সব লোকজনদের সাথে আমার আলাপ হলো। কিন্তু বাঙালী খুবই কম চোখে পড়লো। প্রায় নেই! যারা আছে লোকাল বাঙালী লোক! সময় হতেই জেটির গেট খুললো। ছোট্ট একটা দৌড় প্রতিযোগিতা হলো ভেসেলের বসার যায়গা পাওয়ার জন্য। সৌভাগ্যক্রমে আমরা তিনজনেই বসার জায়গা পেলাম। প্রায় 45 মিনিট ভেসেলে চেপে মুড়ি গঙ্গা পার পৌঁছে গেলাম সাগর দ্বীপের উত্তর প্রান্ত কুচবেড়িয়া ফেরীঘাট। ওখান একটু হেঁটে এগিয়ে গেলে পড়বে গঙ্গাসাগর যাবার বাসস্ট্যান্ড। ঘাট থেকে বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত হেঁটে যাবার পথে দুইধারে সারি সারি প্রাইভেট গাড়ী দাঁড়িয়ে আছে দেখলাম। গাড়ীগুলি এখান (কচুবেড়িয়া) থেকে 30 কিমি দূরে গঙ্গাসাগরে নিয়ে গিয়ে কপিল মুনির মন্দির দর্শন করিয়ে আবার এখানেই ফিরিয়ে আনবে। বেশীরভাগ লোকই তাই করে। ভাড়া মোটামুটি 800 থেকে 1400 টাকা। গাড়ীর প্রকারভেদ অনুযায়ী। আমরা গঙ্গাসাগরে এক রাত্রি থাকবো তাই এইসব গাড়ী ভাড়া না করে বাসে যাবো বলে ঠিক করেছি। ভাড়া 20টাকা। সময় লাগে প্রায় এক ঘন্টা। স্ট্যান্ডে পোঁছে বাসে উঠতে যাবো, ঠিক সেই সময় এক ম্যাজিক ভ্যান এর ড্রাইভার বললো দাদা তিনজনে 300 টাকা দিন, আপনাকে কপিল মুনির মন্দিরে পৌঁছে দেবো। আমি বললাম – ‘না ভাই, আমি বাসে যাবো।’ ম্যাজিক ভ্যান এর ড্রাইভার – ‘দাদা 50 টাকা করে দিন।’ এইবারেও আমি তেমন একটা রাজি না হলেও ছেলে ও গিন্নি একবারে দৌড়ে দিয়ে ম্যাজিক ভ্যানে বসেই পড়লো। আমাদের তিন জনকে বসিয়ে এক্ষুনি আসছি বলে ড্রাইভার চলে গেলো। প্রায় মিনিট দশেক পর 6 জনের একটা পরিবারকে নিয়ে হাজির। সেই পাঞ্জাবী পরিবার যাদের সাথে জেটিতে আলাপ হয়েছিল। জানি না ড্রাইভার ওদের সাথে কত টাকার রফা করেছে। সাবাই মিলে চললাম গঙ্গাসাগরে কপিল মুনির মন্দিরের কাছএ। উঠলাম মন্দিরের কাছেই সাগর কটেজে। এটা পঞ্চায়েত পরিচালিত একটা বিশ্রামাগার। অবস্থানটি খুবই মনোরম। কপিল মুনির মন্দির ও সাগর সী বিচের ঠিক মাঝে। থাকা একদম সাধারণ মানের – দুই ধরনের ঘর আছে – সাধারণ (Rs.400/-) এবং VIP (Rs600./-). নামেই VIP শুধু ঘরগুলি নতুন, 2015 সালে তৈরি। আমরা VIP রুমে উঠলাম। সবকটা ঘরই বাথরুম সংলগ্ন। সহযাত্রী পাঞ্জাবী ফ্যামেলিটিও এখানে দুটো ঘর বুকিং করলো। VIP ঘরগুলি সমুদ্রমুখী হবার জন্য প্রচুর হাওয়া। বারান্দাতে বসে থাকতেই ভালো লাগবে। তবে একটা অসুবিধা – খাটটি বড্ডই ছোট্ট। যাই হোক থাকবো তো এক রাত্রি তাই কোনও অসুবিধা হবে না এই ভেবেই থেকে গেলাম। তাড়াতাড়ি সমুদ্র স্নান করে গেলাম খেতে – কপিল মুনির মন্দিরের পাশেই সরকারী ফুড কোর্টে। দাম অনুযায়ী খবার মান বেশ ভালো। মিল সিস্টমে – ভাত, ডাল, আলু ভাজা, দুই ধরনের তরকারী, পাঁপড় ভাজা এবং চাটনি। এর আগে আমি বিভিন্ন পোস্টে দেখেছি দাম 40 টাকা বা 70 টাকা। কিন্তু আমাদের থেকে ভেজ থালি দাম নিল 50 টাকা ছেলের জন্য চিকেন থালির দাম 100 টাকা। AC রেস্তারায় জমিয়ে খাওয়া দাওয়া করে বেশ কিছুক্ষণ বসে গল্পগুজব করলাম। বাইরে বেশ গুমট এবং ভ্যাবসা গরম। একটু পরে হোটেলে ফিরে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। সন্ধ্যার দিকে গেলাম সী বিচে। কিছুটা পা ভিজিয়ে চা সঙ্গে টা খেয়ে বীচ থেকে ভ্যানে চেপে একদম মন্দিরের সামনে। মাথা পিছু 10 টাকা ভাড়া। বীচ থেকে কপিল মুনির মন্দিরের দূরত্ব ভ্যান চালেকর তথ্য অনুসারে 1কিমি। গুগলের তথ্য অনুসারে 650 মিটার। আর আমার মতে দুটোর মাঝামাঝি। সন্ধ্যা 7টে 15 মিনিটে শুরু হল সন্ধ্যা আরতি। দারুণ ভালো লাগলো। মাঝে মাঝে বাজছিল অদ্ভুদ শঙ্খ ধ্বনি। শুনলে গায়ে কাঁটা দেয়ল আর মনটা যেন কেমন হয়ে যায়। প্রায় 30 মিনিট ধরে চললো আরতি। পোস্টের সাথে আরতির ছোট্ট ভিডিও ক্লিপিং দিলাম। অবশ্যই দেখবেন। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি এই কপিল মুনির মন্দিরে ছবি তোলাতে এখনও পর্যন্ত কোনও নিষেধ নেই। এই মন্দিরের পুজারীরা কেউই বাঙালি পুরোহিত নয়! উত্তর ভারতের অযোধ্যার শ্রীরামানন্দী আখড়ার পন্ডিতজী মোহন্ত শ্রী জগন দাস জীব এবং অন্যান সব শিষ্যের দল। পূজোর প্রসাদ হিসেবে পাবেন নকুল দানা। পূজা সামগ্রী বিক্রি করার জন্য সামনেই অনেক গুলি স্টল সরকার থেকেই নতুন করে দেওয়া হয়েছে। আপনি চাইলে পূজো দিন না চাইলে শুধু প্রাণভরে দর্শন করুন। এখানে প্রণামীর জন্য কোনও জোরজুলুম নেই। ঐ দিন রাত্রে মন্দিরের সামনে বসে অন্যান অনেক যাত্রীদের সাথে কথা বলে কেটে গেলে কিছুটা সময়। এখানেও একদম বাঙালী চোখে পড়ল না। তারপর ফুড কোর্টে রাত্রের খাবার খেয়ে সাগর কটেজে। কটেজে একটা জিনিস ভালো প্রত্যেক ঘরে গুড নাইট মশা তাড়ানোর মিশিন এবং তেল দেওয়া আছে। বারান্দতে বসে কিছুক্ষণ গল্প করলাম পাঞ্জাবী ফ্যামিলীর সাথে। ভদ্রলোর গুড়গাঁও তে হোন্ডা কোম্পনি তে চাকরি করেন। দুই ছেলে, বউ এবং মা ও শ্বাশুড়ীকে নিয়ে গঙ্গাসাগরে তীর্থ করতে এসেছেন। কিছুক্ষণ গল্প করার পর গেলাম ঘুমতে। ঘুম খুব একটা হল না। ছোট্ট খাটে তিনজনে গুতোগুতি করে কোনও রকমে কাটিয়ে দিলাম রাত্রিটা। পরদিন ফেরার কথা। ইচ্ছে ছিল দুপুরের লাঞ্চ করে তারপর কলকাতার দিকে ফেরার যাত্রা করবো – বেনুবন দিয়ে। প্রথমে টোটো বা অন্য গাড়ী করে বেনুবন লঞ্চ ঘাট (13 কিমি, টোটোতে ভাড়া মাথা পিছু 40টাকা। টোটোতে যেতে সময় লাগে প্রায় 35-40 মিনিট)। ওখান থেকে লঞ্চে এক ঘন্টা যাত্রা করে নামখানা এবং সেখান থেকে ট্রেনে শিয়ালদহ। কিন্তু গতকাল রাত্রে বেশ ঝড় বৃষ্টি হয়েছিল এবং সকাল থেকেই আকাশের মুখ ভার। বেনুবন থেকে যে লঞ্চগুলি (ভাড়া মাথা পিছু 25টাকা) চলে সেগুলি কাঠের লঞ্চ এবং ভেসেলের তুলনায় অনেক ছোট। একটু হাওয়া দিলেই লঞ্চ বেশ দোল খায় ফলে যাত্রাটা মোটেই সুখকর নয়। একদলের সাথে গতকাল আলোচনা হয়েছিল যারা নামখানা থেকে বেনুবন হয়ে এসেছে। তারাও তাদের আতঙ্কের কথা জানিয়েছিল। সেদিক থেকে কচুবেড়িয়া থেকে ভেসেল দিয়ে যাতায়াত অনেক সুবিধাজনক। সব কিছু ভেবে বেনুবন দিয়ে ফেরা বাতিল করলাম। কিন্তু ভেসেল জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে কচুবেড়িয়া থেকে লট নং আট যাতায়াত করে। আজ দুপুরে ভেসেল বন্ধ থাকবে। যাত্রা শুরু হবে বিকেল পাঁচটা পনেরো নাগাদ। তখন রওহনা হয়ে কলকাতা ফিরতে অনেক রাত্রি হয়ে যাবে, তাই ঠিক করলাম তাড়াতাড়ি ফেরার যাত্রা শুরু করবো। সকালে উঠে আর একপ্রস্ত সমুদ্র স্নান করে চললাম আবার মন্দির দর্শন করতে এবং পূজো দিতে। পূজো দিয়ে সামনের একটা হোটেল থেকে পেটাই পরোটা ও ঘুঘনি দিয়ে জলখাবার খেয়ে একটা ম্যাজিক ভ্যানে করেই কচুবেড়িয়া এগিয়ে চললাম। ফেরার সময় ড্রাইভার কিন্তু মাথা পিছু 100 টাকা নিলো। সাথে বলে নিলো রাস্তায় লোক পেলে সে কিন্তু তুলবে। না হলে পুরো রিজার্ভ করতে হবে। এখানে ম্যাজিক ভ্যান গুলি বাসের সাথে সাথেই চলে। গঙ্গাসাগর থেকে কচুবেড়িয়া লোকালদের ভাড়া 30 টাকা। মোট যাত্রী নেবে ড্রাইভার বাদে আরো 14 জন! আপনি রিজার্ভ করে পুরোটা যেতে পারেন। তখন মাঝে লোক তুলবে না। ভাড়া নেবে মোটামুটি 400 থেকে 450 টাকা। আমি ড্রাইভার কে বললাম। যে মাঝের সিটে আমরা তিনজনে বসবো, সেখানে যেন কেউ না ওঠে। সেটা ছেড়ে যে কোনও জায়গায় তুমি লোক তোলো আমার আপত্তি নেই। ড্রাইভার খুব খুশী। সাড়ে নয়টা গঙ্গাসাগর থেকে যাত্রা শুরু করে 10টা 15 নাগাদ কচুবেড়িয়া পৌঁছে গেলাম। তাড়াতাড়ি ভেসেলের টিকিট কেটে চড়ে বসলাম। ভেসেল ছাড়তে তখনও 10 মিনিট দেরী। এই ভেলেসের পর আজ সকালে আর একটাই ভেসেল আছে। যেতে যেতে দেখলাম একটা ভেসেলে করে অনেকগুলো গাড়ী পাড় হচ্ছে। নদীর উপর বিশাল বিশাল পোস্ট তৈরী করে মূল ভূখন্ড থেকে সাগরদ্বীপ পর্যন্ত বিদ্যুতের তার গেছে। এই সব দেখতে দেখতে সময় মত পৌঁছে গেলাম লট নাম্বার আট। আজ আমাদের ফেরার খুব একটা তাড়া নেই। সবে এগারোটা পনেরো। এখনই লাঞ্চ খাবার ইচ্ছে খুব একটা নেই। একটা দোকানে টুকটাক কিছু খেয়ে নিলাম। এরপর একটা টোটো ধরে কাকদ্বীপ বাজার বাসস্ট্যান্ড গেলাম। ফেরার সময় লোকাল ট্রেনে না ফিরে কাকদ্বীপ থেকে বাসে ধর্মতলা ফিরলাম। ভাড়া 60 টাকা। সময় লাগলো প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা। মাঝে বাসে বসেই দেখলাম ডায়মন্ডহারবারের গঙ্গার তীর, পৈলানের কাছে স্বামী নারায়ণ মন্দির। উপরি পাওনা আমতলার কাছে বিশাল ট্রাফিক জ্যাম! ধর্মতলা পৌঁছে যাবার পর ছেলে ও গিন্নি দুজনেই বললো একবার নিউ মার্কেট আশেপাশে ঘুরে এলে হয় না! তখন বেশ জোরে বৃষ্টি পড়ছে। অন্য একদিন আসবো বলে ওদের আটকালাম। তারপর গাড়ী ধরে সোজা বাড়ী। আমার এই ভ্রমণ হঠাৎ করে করা তাই বেশী কিছু সন্ধান করে উঠতে পারি নি। মন্দিরের ইতিহাস, পৌরাণিক গল্প এবং ওখানকার ভৌগোলিক অবস্থান জানার জন্য উৎসাহীরা Google করতে পারেন। আমি সেই সব লিখে পোস্টটিকে বড় করতে চাইলাম না। শুধুমাত্র যাবার জন্য কিছু বেসিক ধারনা এবং তথ্য দিলাম। কেমন লাগলো অবশ্যই জানাবেন। শেষে কয়েকটি কথা – 1. যারা আরাম এবং স্বাচ্ছন্দ্যের জন্য ভ্রমণ করেন তাদের জন্য গঙ্গাসাগর উপযুক্ত জায়গা নয়। এখানে বিলাসবহুল কোনও হোটেল নেই। বেশীর ভাগই আশ্রম বা মঠ পরিচালিত থাকার জায়গা আছে। 2. আমি নিজে খোঁজ করে AC রুমসহ কোনও হোটেলই পাইনি। সরকারী সাগর কটেজ ছাড়াও ইয়ূথ হোস্টেল আছে থাকার জন্য। এছাড়া আছে কিছু বেসরকারী সাধারণ মানের হোটেল। হোটেল ছাড়াও বিভিন্ন সংস্থার আশ্রম আছে। কপিল মুনির মন্দির লাগোয়া মন্দিরের নিজস্ব আশ্রমে থাকার সুব্যবস্থা আছে। কলকাতায় ফিরে জানলাম ইয়ূথ হোস্টলের তিনটি কটেজ আছে যেগুলিতে AC আছে, কিন্তু অন্য ঘরগুলি online booking হলেও ওদের website-এ লিস্টে দেখতে পাইনি। আগ্রহীরা State Youth Centre,Moulali তে যোগাযোগ করতে পারেন। বর্তমানে কটেজগুলির ভাড়া 1950/- প্রতিদিন। 3. আশে পাশে যাবার জন্য টোটো বা ভ্যান পাবেন। ওঠার আগে দরদাম করে নেবেন। এখানে এগুলির একটু ভাড়া বেশী। 4. খাবার জন্য সরকারী ফুড কোর্টটি বেশ ভালো। দাম জেনে খাবার ওর্ডার করবেন। এখানে AC এবং Non AC দুইট জায়গা আছে। মনে হয় দামের তফাৎ আছে। আমি AC তে খেয়েছিলাম, সেই দামের কথা উপরে উল্লেখ করেছি। 5. গঙ্গাসাগরে গেলে সাথে অবশ্যই রাখবেন নিজস্ব বিছানার চাদর এবং বালিশের ওয়্যার (আমাদের খুব কাজে লেগেছিল!) এবং মশা তাড়ানোর উপযুক্ত ব্যবস্থা। 6. আপনার যদি একটু কষ্ট সহ্য করে নেবের মানসিকতা থাবে অথবা তীর্থস্থানে ভ্রমণ করতে ভালো লাগে তাহলে একদিন বা দুইদিনের জন্য গঙ্গাসাগর আদর্শ জায়গা। 7. এখানে Arirtel 4G এবং Vodafone 4G চললেও কাকদ্বীপের পর জিয়ো মোবাইল নেটওয়ার্ক কাজ করে না। তবে অনেক সময়ই Arirtel বা Vodafone এর ডেটা সার্ভিস কাজ করে না। শুধু মোবাইল ভয়েস কাজ করে। 8. ভেসেলের টাইম জোয়ার ভাটার উপর নির্ভর করে। ফেরী সার্ভিসের ঘাটে ওই দিনের এবং একদিন আগের টাইম এর নোটিশ টাঙানো থাকে। স্থানীয় এক ছাত্র ভেসেল এর টাইম জানার জন্য একটা সুন্দর অ্যাপ বানিয়েছে – যা Google Play Store –এ পেয়ে যাবেন। আমি ব্যবহার করেছি। খুবই কাজের জিনিস। একটা কথা মনে রাখবেন এই অ্যাপটি Internet ছাড়া কাজ করে না। চাই যখন টাইম দেখবেন তখনই রেফারেন্স এর জন্য স্ক্রিন শট নিয়ে রাখবেন। 9. যত্রতত্র নোংরা করবেন না। সাগরে বা গঙ্গায় পলিথিন প্যাকেট ফেলবেন না। 10. আপনার গঙ্গসাগর যাত্রা শুভ হোক। Post By:- Purnendu Fadikar
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |