রাজগির-নালন্দা-পাওয়াপুরী ইতিহাসের এক অমূল্য দলিল বুদ্ধগয়া থেকে ফেরার পর থেকেই রাজগির যাওয়ার ইচ্ছা অনেকদিনের। সেইমতো এক শুক্রবার রাতে আমি (সুমন) ও সৌরভ শালিমার থেকে রাত 10 টার সময়ে পাটনা দুরন্ত এক্সপ্রেসে চেপে পরেরদিন সকাল 6.30 টার সময়ে পাটনা পৌছালাম। সিঙ্গারা ও কচুরি দিয়ে স্বল্প জলযোগ করে 7.15 তে লোকাল ট্রেনে চেপে রাজগির পৌছালাম 10 টা নাগাদ। স্টেশনে নেমে টাঙ্গা নিয়ে হোটেল রাজগির পৌঁছে স্নান সেরে টাঙ্গা করেই বেরিয়ে পড়লাম Sight-seeing এর উদ্দেশ্যে। প্রথমে গেলাম জাপানি মন্দির হয়ে জৈন মিউজিয়ামে। মহাবীর জৈন এর জীবনী খুব সুন্দর ছবি ও পুতুলের মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা আছে। এরপর গেলাম উষ্ণ প্রস্রবণ ব্রহ্মকুন্ড দেখতে। সেখান থেকে পরপর গেলাম জরাসন্ধের কুস্তির আখড়া, বিম্বিসারের স্বর্ণভান্ডার গুহা, জৈন তীর্থক্ষেত্র মানিয়ার মঠ, রাজা বিম্বিসারের তৈরি বুদ্ধের আবাসস্থল বেনুবন বিহার ও বিম্বিসারের জেলের ধ্বংসাবশেষ যেখানে তিনি পুত্র অজাতশত্রুর দ্বারা বন্দি ছিলেন। পথিমধ্যে দই চিড়ে ও ফলাহার করে গেলাম জরাসন্ধের রথের চাকার দাগ ও জীবকের আমবাগান দেখতে যেখানে ভগবান বুদ্ধ জীবকের কাছে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এরপর গেলাম জাপানের বৌদ্ধসংহ নির্মিত বিশ্ব শান্তি স্তুপ দেখতে যা মোট 80 টি বৌদ্ধ শান্তিস্তুপের মধ্যে অন্যতম। রত্নগিরি পাহাড়ের উপর অপূর্ব গঠনশৈলীর এই স্তুপ 400 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। স্তুপের 4 দিকের 4 টি শিল্পকলা বুদ্ধের জীবনের 4 টি অধ্যায় জন্ম, বোধিলাভ, ধর্মপ্রচার ও মৃত্যুকে নির্দেশ করে। এখানে একটা ঘন্টাঘর ও সুন্দর মঠ রয়েছে। রোপওয়ে তে করে গেলে 60 টাকা করে টিকিট লাগে। তবে হেঁটে গেলে পাহাড়ের অপূর্ব সৌন্দর্য্য দেখা যায় যা আমরা উপলব্ধি করেছিলাম। এখান থেকে বেরিয়ে দিগম্বর জৈন মন্দির দেখে একটা ধাবাতে রুটি তড়কা খেয়ে ক্লান্ত শরীরে হোটেলে ফিরে ঘুমিয়ে পড়লাম। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো যে রাজগিরে ঘুরতে টাঙ্গাই সবথেকে ভালো বাহন। আমাদের সারাদিন ঘুরতে 1000 টাকা নিয়েছিল। পরেরদিন সকালে উঠে একটা ট্রেকার গাড়ি (যাওয়া আসা নিয়ে ভাড়া 1500 টাকা) নিয়ে গেলাম নালন্দা ইউনিভার্সিটির ধ্বংসাবশেষ দেখতে। 427 খ্রিস্টাব্দে কুমারগুপ্ত নালন্দা প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০০ শিক্ষক ও ১০,০০০ এর মত ছাত্র ছিল। সারাবিশ্ব থেকেই ছাত্ররা এখানে পড়তে আসত, তার মধ্যে ছিল কোরিয়া, জাপান, চীন, তিব্বত, ইন্দোনেশিয়া, পার্শিয়া এবং তুরস্ক। নালন্দা মূলত বৌদ্ধ ধর্মের গবেষণা ও ধর্মচর্চার জন্য নির্মিত হলেও ওখানে পড়ানো হতো হিন্দু দর্শন, বেদ, ধর্মতত্ত্ব, যুক্তিবিদ্যা, ব্যকরণ, ভাষাতত্ত্ব, চিকিৎসাবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানের আরো অনেক বিষয়। প্রাচীন ভারতের আর্কিটেকচার জানতে হলে নালন্দাকে দেখতেই হবে। সেইসময়ের পুরুষ ও মহিলা একক কক্ষ হোস্টেল, পয়প্রণালী, রান্নার ঘর, প্রার্থনার ঘর, মন্দির, বাগান, ছাদ ও লাইব্রেরির গঠন স্তম্ভিত করে। পাশেই মিউজিয়ামে রাখা আছে সেই সময়ে ব্যাবহার করা বিভিন্ন জিনিস ও খনন করে পাওয়া মূর্তি। এরপর কুণ্ডলেস্বর মন্দির ও দিগম্বর জৈন বিহার দেখে সরকারি ক্যান্টিনে লাঞ্চ করে চলে গেলাম পাওয়াপুরী জৈন জলমন্দিরে। মহাবীর জৈন এর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছিল এই স্থানে। জলের মধ্যে দ্বীপের মতো ছোট সুন্দর মন্দির। ভিতরের ছোট কক্ষে উনার চিতাভস্ম রাখা আছে তবে তা দেখা যায়না। মহাবীরের পদচিহ্ন ও ওখানেই আছে। সেখান থেকে হোটেলে ফিরে একটু বিশ্রাম নিয়ে চলে গেলাম বাস স্ট্যান্ডে । বখতিয়ারপুরের বাসে চেপে ঘন্টা দুয়েক বাদে পৌছালাম স্টেশনে। সেখানে অল্প ঘুরে ডিনার করে রাত 9 টার সময়ে গরিব রথে চেপে পরদিন সকালে 5.30 এ কলকাতা স্টেশন পৌছালাম। সাথে নিয়ে এলাম অসাধারণ কিছু স্মৃতি। হোটেল রাজগিরে কোনো অনলাইনে বুকিং হয়না। যে কোনো টাঙ্গাওয়ালা কে বললেই নিয়ে যাবে। রুম ভাড়া ডবল বেড 500 টাকা । ডরমিটরি সিস্টেম ও রয়েছে।বেশ সুন্দর ছিমছাম ঘরোয়া। রেস্টুরেন্ট আছে সাথেই। Post By:-Suman Datta
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |