বিশ্বজুড়ে আজ এক মহামারী ভাইরাস সমস্ত জীবনে এক ভয়ানক থাবা বসিয়েছে, সমস্ত ভ্রমণপ্রেমীরা আজ প্রচন্ড হতাশায়, কিন্তু আজ আমরা যদি সবাই সচেতন হই তাহলে এই মারণযজ্ঞ থেকে নিজেদের মুক্ত করতে পারবো কারন আমাদের বুকের মধ্যে হিমালয়ের আশীর্বাদ আছে....
আসুন চারপাশের মৃত্যু, কলহ, রোগের তীব্র আতঙ্কের পরিবেশ, গুজবের মিথ্যা প্রশ্রয় ছেড়ে চোখ বুজুন, আসুন আমার সাথে, হারিয়ে যান পাহাড়ের অপার স্নিগ্ধতায়....... চোখ খুলুন, দেখুন সাদা কুয়াশার পাকদন্ডী সামনের রাস্তায় তৈরী করেছে, সেই কুয়াশার রাস্তার দুধারে ধ্যানগ্রস্থ ঋষিদের মতো দাঁড়িয়ে আছে সবুজ পাইন গাছের সারি, সেই গাছের গা বেয়ে মেঘবালিকার অশ্রু ঝরে পড়ছে অঝোরধারায়, ভিজে পাইনের মাথায় মেঘেদের নির্লিপ্ত চাহনি যেন ভাসিয়ে দেবে কোন এক স্বপ্নের দুনিয়ায়.....আস্তে আস্তে এগিয়ে যাই পাইন বনের গভীরে, দূরে ফার্ন গাছের ভিজে জঙ্গলের মাঝে রাখা একটা শেওলা ধরা পুরানো বেঞ্চি তাতে বসে আছে কোটপ্যান্ট পরিহিত এক নেপালি বুড়ো, তার মুখের অজস্র বলিরেখা মিশে আছে তার সমস্ত শরীরে, গিয়ে বসলাম তার পাশে, সময় যেন থমকে আছে পাহাড়ের কোলে, সামনের দিগন্তবিস্তৃত সবুজ উপত্যকায় মেঘের দলের নৃত্য শুরু হয়েছে আমি আর আমার নেপালি বুড়ো দাজু মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখতে লাগলাম তার অভাবনীয় সৌন্দর্য্য.......
কিংবা ধরুন, হঠাৎ প্রচন্ড ঠান্ডা, এতো প্রবল শীত যেন সেই রাজপথের উপর উন্মত্ত প্রতিবাদের চিৎকার যেন বধিররাও শুনতে পায়, এতো স্পষ্ট যেন দৃষ্টিহীনরাও দেখতে পায়...... হিমাঙ্কের অনেক নিচের তাপমাত্রা আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরেছে সমস্ত শরীর, আমার নিজের উপস্থিতির প্রমান দিচ্ছে পায়ের নিচের জমাট নদীর নীল বরফের স্তর, চারপাশে অসংখ্য ধূসর পাহাড়ের সারি তার মাঝে বয়ে গেছে জান্সকারের শীতল রূপ যা মাঝে মাঝে চ্যালেন্জ ছুড়ে দেয় আন্টার্টিকার প্রবল প্রতিকূল পরিবেশকে.... আমি সব ভুলে চারপাশের জমাট জলপ্রপাত, জমাট নদীর ঢেউ পেরিয়ে বরফের সমুদ্র ভাঙতে ভাঙতে এগিয়ে চলি দিগন্তরেখার দিকে.......
কখনও চলে আসি এক পাহাড়ি ছেলের সাথে তার গরিব কুঁড়েঘরে সে বলে আজ মোমো খাবো একসাথে সাথে তার গিটারে বাজবে প্রেমের গান, আজ সে তার প্রেমিকাকে শুনাবে তার লেখা প্রথম গান, পায়ে পায়ে স্মৃতি, পাহাড়ি শৈশব ফেলে আমি তার সাথে চলে আসি পাহাড়ের খাদের ধারে যেখানে মেঘের দল অপেক্ষা করছে আমার জন্যে ভালোবাসায়, সেই ভালোবাসা খুব পবিত্র, সেই পবিত্রতার দাম না দিলে আত্মহত্যা ছাড়া আর কোন পথ নেই...... সকালবেলা তখনও কুয়াশার রেশ কাটেনি সমস্ত জঙ্গল যেন স্বাগত জানাচ্ছে নতুন ভোরকে, কান পাতলে শোনা যাচ্ছে পাহাড়ি নদী জয়ন্তীর জলোচ্ছাস, ভিজে ভিজে জঙ্গলে মাতাল করা বুনো ফুলের গন্ধ, সিক্ত পাতায় রোদের অলংকার, হটাৎ ঝোপের আড়াল থেকে একটা হরিণশিশু তার সরল চোখে তাকায় আমার দিকে, তার মায়াবী চোখের রুপোর জোস্নার মতন দৃষ্টি বলে পৃথিবীটা আজ কত সুন্দর, ভালোবাসা প্রেমে এসো আমরা নতুন করে জীবনের গল্প লিখি......
সন্ধ্যা নামছে আমার ভালোবাসার দার্জিলিংএ, আজ বেশ মেঘলা, রাস্তার আলোগুলোর তলায় মেঘের দল ভীড় করেছে, শেওলা ভেজা গলির ভিতরের জয়িস পাব থেকে বিয়ার পান করে আজ আমি ঈষৎ এলোমেলো, অদ্ভুত সুন্দর সন্ধ্যার ফ্লেবার বুকে নিয়ে মেঘের চাদর কেটে এগোতে লাগলাম ম্যাল রোডের দিকে, একটু এগিয়ে চোখে পড়লো রাস্তার কোনে বসা এক নেপালি আন্টি পিঠে তার ছোট বাচ্চা, সেই আন্টি আপনমনে ভুট্টা বিক্রি করছে, গিয়ে বসে পড়লাম তার পাশে, ভুট্টা খাবো আজ, কথায় কথায় জানলাম সেই আন্টির স্বামী অসুস্থ পঙ্গু, ঘরে তার এক ছেলে ছোট্ট, তার পিঠে এই 9মাসের পুচকি মেয়ে, তার উপরে পুরো সংসার, সকালে সে বাড়ি বাড়ি সিলিন্ডার পৌঁছে দিয়ে সামান্য রোজগার করে আর সন্ধ্যায় ভুট্টা বিক্রি করে সংসার চালায়.... এক চা ওলার কাছ থেকে আমাকে বললো - আজ বহৎ ঠান্ডি হায়, থোরা চায় পিও ভাইয়া, ইয়ে চায় মেরা তরফ সে...... না সেদিন দুঃখে চোখে জল আসেনি বরং গর্বে আমার মাথা উঁচু হয়ে গেছিলো কারন আমি দশভুজা দুর্গাকে দেখিনি কিন্তু সেই আন্টিকে দেখেছিলাম যে এতো সমস্যা এতো দারিদ্রের মধ্যেও বলতে পারে i am ready, challange accepted....... এরা সবাই আমার অনুপ্রেরণা, আমাদের অনুপ্রেরণা... আজ দিন এসেছে আসুন সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়ি এই ভাইরাসের সাথে, দারিদ্রের সাথে, হতাশার সাথে, আমি জানি আমরা হারবো না কারন আমাদের মাথার উপর হিমালয়ের আশীর্বাদ আছে.........
(হোমাগ্নি ঘোষ ).....
0 Comments
খাদের ধারের রেলিংটা ☺️☺️☺️দার্জিলিং (The Queen of Hills)❤️❤️❤️……।। (হোমাগ্নি ঘোষ)
প্রেসিডেন্সী কলেজে পড়ার সময় আমাদের দ্বিতীয় বাড়ি ছিল কফিহাউস ,কলকাতায় মানুষ হলেও আমার শৈশবের দীর্ঘ সময় কেটেছে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন চা বাগানে ,তিস্তা নদীর পাশে হটাত করে নাম না জানা প্রজাপতির সাথে। পাহাড় জঙ্গলে অনেক সময় কাটালেও একটা যায়গা ছোটবেলা থেকে ভীষণ প্রিয় আর কাছের হয়ে গেল আমার কাছে ,মন খারাপ হলেই আমি যার কাছে এখনও ছুটে ছুটে যাই ,যার খাদের ধারের রেলিং বেয়ে আমি আজো আমার শৈশব খুঁজি ,যেখানে গেলে আমার মনে হয় আমার বাবা আমাকে বলছে – জানিস বাবি এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় । এসো আজ তোমাদের বলি আমার সেই প্রেমিকার কথা আমার দার্জিলিঙের কথা । দার্জিলিঙে পৌঁছেই প্রথমেই চল যাই ম্যাল এ, ভারতবর্ষের বহু শৈল শহরে গেছি কিন্তু মেঘ রোদ বৃষ্টির খুনসুটিতে মেতে থাকা দার্জিলিঙের ম্যাল তাকে সবার থেকে স্বতন্ত্র আর অনন্যা করেছে। আপনি আনমনে হাটছেন এক রোদেলা দুপুরে হটাৎ করে এক দলা নীল কুয়াশা এসে ভিজিয়ে দিল আপনার সারা শরীর ,অনেকে বলে আমার প্রিয় দার্জিলিং নাকি ঘিঞ্জি নোংরা , আমি বলি তুমি দেখার দৃষ্টি অনুভূতির মাত্রা বাড়াও, রঙ বেরঙ্গের পোশাক পরা মিষ্টি নেপালি বাচ্চার হাসি, গরীব ঘোড়াঅলাদের হটাত একটানা কাজের ফাকে বিড়ি ধরানো , দুরে ভুট্টা বিক্রি করা সেই দরিদ্র মেয়েটার একরোখা জেদ আমাকে ভালবাসতে শিখিয়েছে ,জীবনের মানে একটু হলেও উপলব্ধি করেছি। মোদ্দা কথা দার্জিলিঙের সেই হটাত করে বৃষ্টি, শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া,নেপালি কিশোরীর হাসি, পথচলতি সেই মাতালের এলোমেলো পায়ে পথ চলা ,সেই প্রচণ্ড দরিদ্র মানুষগুলোর হেরে যেতে যেতেও জীবনের কাছে হার না মানার চ্যালেঞ্জ আমাকে দার্জিলিঙের প্রেমে ফেলেছিল। প্রথমেই চল যাই দার্জিলিং জু তে আর তার সাথে HMI(HIMALAYAN MOUNTAINING INSTITUTE) পথে যেতে পড়বে দারুন সুন্দর St.Andrews church অদ্ভুত তার স্থাপত্য, ১৮৪৩ সালের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এইটা তৈরি হয়েছিল ভুমিকম্পে প্রচণ্ড ক্ষতি হওয়ার পর পুনরাই ১৮৭৩ সালে এটা ঠিক করা হয়। মুলত স্কটিশ সৈন্য আর ইংলিশ টি প্লান্টের রা এখানে উপাসনা করত। আকা বাকা উঁচু নিচু চড়াই উতরাই পথ ধরে চলতে থাকি চলুন, তেষ্টা পেয়ে গেল যে কোন চিন্তা নেই, রাস্তায় পড়বে hot stimulating caffe বলে ছোট্ট দোকান, ভেজ মোমও আর তার সাথে কফি ,দোকানের উলটোদিকেই nightingale park তাতে ফুটে আছে অজস্র রঙ বেরঙের ফুল।
১৯৫৮ সালে প্রায় ৭০০০ ফিট উচ্চতায় অবস্থিত পদ্মাজা নাইদু হিমালয়ান জুলজিকাল পার্ক যার অন্যতম আকর্ষণ রেড পাণ্ডা,তুষার চিতা,হিমালয়ান নেকড়ে। এছাড়াও আছে অর্কিড ,নানান স্তন্যপায়ী, পাখি, সরিস্রিপ। এখানে তুষার চিতার ক্যাপটিভ জনন বেশ সাফল্য পেয়েছিল। এর পর চল যাই hmi মিউজিয়াম দেখতে সেখানে দেখব বিখ্যাত তেঞ্জিং নোরগের সমাধি এবং EVEREST EXPEDITION ইতিহাসের অমুল্য সব তথ্য।
হালফিলের টুরিস্টরা তো এরপর চেনা জায়গা গুলোতে যায় ,তুমি চল আমার সাথে একটু অজানা দার্জিলিং কে দেখতে। সন্ধ্যা নামছে আমার পাহাড়ে সারা আকাশ জুড়ে কমলা রঙের সামিয়ানা, বাতাসে ভেসে আসছে গ্লেনারির কেক র পেস্ট্রির গন্ধ ,আমরা চললাম দার্জিলিং বিগ বাজারের দিকে,ঠিক রিঙ্ক মলের বিপরীতেই joeys pub…অঞ্জন দত্তের গানের লাইন টা মনে পরে যাবে – দার্জিলিঙের শ্যাওলা ভেজা গলির ভিতর জয়িস পাব… ছোট জায়গা, নিভু নিভু আলো আধারি, সারা বিশ্বের অনেক বিদেশী পর্যটক, সবাই বুদ পুরান দাজুর গীটারের সুরে,আমিও মাতলাম সেই সুরে হাল্কা বিয়ারের নেশায়, মিশিয়ে দিলাম নিজেকে সারা দুনিয়ার সাথে, সারা পৃথিবী হল আমার ঘর সেই ঘরের কাঠামো তৈরি ভালোবাসা আর বন্ধুত্তে। মনে পড়ছিল জন লেননের সেই কথাটা everything and everyone is connected by a chain of love my brother….আজ এতোটাই থাক আরেকদিন নিয়ে যাব আমার প্রিয় দার্জিলিঙের অন্য প্রান্তে, যাবার আগে চল একসাথে গলা মিলাই কয়েকটা লাইন এর সাথে, আজকের হিংসা মাখানো পৃথিবীতে কথাগুলো খুব জরুরী Imagine there is no heaven its easy if you try, no hell below us above us only sky. Imagine all the people living for today….Imagine there is no countries, it is not hard to do. Nothing to kill or die for and no religion too. Imagine all the people living life in peace…YOU MAY SAY I AM A DREAMER BUT I AM NOT THE ONLY ONE,I HOPE SOMEDAY YOU WILL JOIN US AND THE WORLD WILL BE AS ONE. ............ দার্জিলিং গেলে আপনি অবশ্যই যাবেন - HMI and Zoo, দার্জিলিং রোপওয়ে, টাইগার হিলের সূর্যোদয়, বাতাসিয়া লুপ, দার্জিলিং মল চৌরাস্তা, রক গার্ডেন আর গঙ্গা মাইয়া পার্ক, জাপানিজ টেম্পল আর প্যাগোডা, হ্যাপি ভ্যালি টি এস্টেট, মহাকাল মন্দির, টিবেটিয়ান রিফিউজি সেন্টার, ঘুম মনেস্ট্রি আর দার্জিলিং সেন্ট পলস স্কুল ❤️❤️❤️❤️ অবশ্যই খাবেন কেভেন্টার্সের সসেজ, গ্লেনারির কফি আর পেস্ট্রি সন্ধ্যায়, পেনাম, ওয়াশিংটন, কুঙ্গু রেস্টুরেন্টের দুর্দান্ত মোমো ❤️❤️❤️❤️❤️অনেকের প্রশ্ন কোথায় থাকবো ভালো ভিউ দেখবো তাদের জন্যে mayfair darjeeling, darjeeling himalayan gateway residency, hotel ivy castle, Little tibet, pahari soul homestay খুব ভালো এখান থেকে প্রাণ ভরে দার্জিলিং কে উপভোগ করুন..... হোমাগ্নি ঘোষ ।
অনেক দিনের ইচ্ছে পূরণে চললাম পাহাড়ি জগতে, ছেলেবেলা থেকেই তার ডাক উপেক্ষা করার সাধ্য আমার কোনোদিন ছিল না! রওনা দিলাম দার্জিলিং... যতই দেখি নতুন লাগে ততই, সময় মতন দিন ক্ষণ স্থির ছিল তাই কিছুই সমস্যা হইনি পৌঁছাতে, হোমস্টে র আপন পরিবেশে আমার 5 বছরের কন্যা কে নিয়ে কোনো চিন্তা হইনি, মেঘের দেশ দুহাত বাড়িয়ে আপন করে নিল আরো একবার...
নিজের মতন করে একটু সময় নিয়ে চা বাগান, তিস্তা, ঘুম স্টেশন সবই আমার পরম পাওয়া... সত্যজিত রায় থেকে ঋত্বিক ঘটক ! বরফি থেকে মেঘে ঢাকা তারার নীতা সবাই দার্জিলিং এর আনাচে কানাচে আজও হাতছানি দিয়ে চলে যায়, চাই শুধু খুঁজে নেওয়ার চোখ..... ম্যাল এর উপরে " Kaventer's" র "Glenaryes" র সাথে কাটানো সময় টুকু যে আমার মতন মানুষের কাছে শুধুই কিছু মুহূর্ত নয় বরং বাঙ্গালী হিসাবে গর্বিত হাওয়ার বিষয় তা নতুন করে বলার নেই..... ভালো লাগার মতন অনেক কিছুই আছে! সেটা রও একবার ঘুরে না আসলে হইতো বোঝা যায় না....চাই শুধু সময় কে পকেটে পুরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ কিছু ছবির সম্ভার রইলো আশা করি ভালো লাগতে পারে.....
আজ আপনাদের শোনাই এক অপেক্ষাকৃত নতুন পাহাড়ি গ্রামের গল্প।
গত শুক্রবার রাতে আমরা স্কুলের ৫ বন্ধু sealdah থেকে special train এ উঠে শনিবার সকালবেলা পৌঁছলাম NjP। সেখানে আগে থেকে গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তাতে করে রওনা হলাম Sittong এর উদ্দেশ্যে। পথে প্রাতঃরাশ সেরে নিলাম সেবক পার হয়ে। এরপর গাড়ি দৌড়ালো birik পার করে sittong এর দিকে। পথে পরলো চুচেদুঙ্গা, নামথিং পখিরি (লেক টি শুকিয়ে গাছে যদিও)। প্রায় দুপুরবেলা গিয়ে পৌছালাম মেঘবিতান cottage। এটি upper sittong e অবস্থিত। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। পাহাড়ের ঢালে চারদিকে চা বাগানের মধ্যে হঠাৎ দুটি ঘর। সামনে দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের সম্ভার। অসাধারণ জায়গা। অপেক্ষা করছিলেন সমীর বাবু, যিনি এই cottage এর সবকিছু। আমাদের ৫ জনের একটি ঘরেই হয়ে গেলো। ২ টি খাট, dinning table, tea table সমেত সুন্দর একটি কাঠের ঘর। ঘরে পৌঁছে দুপুরের স্নানআহার সেরে বিকেলে সমীর বাবু নিয়ে গেলেন আশপাশের মন্দির, লেপচা গ্রাম, ৪০০ বছরের পুরনো মনাস্ট্রি দেখাতে। বিকেলের পরন্ত আলোতে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ঝিঁঝি পোকা আর নাম না জানা পাখির ডাক শোনা, চারপাশের পাহাড়ের ঢালে ঢালে গ্রামগুলোর জোনাকির মতো জ্বলে থাকা আলো, সে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা। রাতে ফিরে ভাত, মুরগি সহযোগে আহার সেরে ঠান্ডায় এক ঘুমে রাত কাবার। পরদিন সকালে প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরোনো হলো পারিপার্শ্বিক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। প্রথমে এলো কমলালেবু বাগান। দার্জিলিঙের এই গ্রামটি বিখ্যাত কমলালেবুর জন্যই। গাছে গাছে থোকা থোকা কমলালেবু হাতের নাগালে পাওয়া এক আশ্চর্যের বিষয়। যদিও এখন সবুজ অবস্থায়। তবুও ২-১ টি পাকা কমলালেবু দেখে খাওয়ার লোভ সামলানো গেলো না। এরপর রিয়াং নদীর পার করে পৌছালাম অর্কিড বাগান। পার্বত্য এই ফুলটির একটি আলাদাই সৌন্দর্য্য। পথে রিয়াঙ নদীর ধারে কিছু নিজস্বী তোলার বিরতি তো ছিলই। সেখান থেকে পৌছালাম কবিগুরুর স্মৃতিমুখর মংপু। এখানের এই বাগানবাড়িতে কবিগুরুর বেশ কিছুদিন কাটান। সেই বাগানবাড়ি অবস্থানগত এবং স্থাপত্যের দিক থেকে সত্যি দর্শনীয়। ঘুরে দেখলাম ভেতরের ঘরগুলি, বিভিন্ন পুরনো পুঁথি, কবির হাতে লেখা কবিতা, গদ্য। সেখান থেকে পৌছালাম লেপচা জলপ্রপাত। গাড়ি নিচে রেখে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা রাস্তা হেঁটে ওপরে উঠতে হয়। কিন্তু নয়নাভিরাম জলপ্রপাতটি রাস্তার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। এরপর শেষ গন্তব্য ছিল আহালদারি view point। পাহাড়ের মাথায় অসাধারণ একটি point, যার চারদিক ঘিরে আছে পাহাড়, নিচে দেখা যায় তিস্তা নদী। এই জায়গার সৌর্ন্দয্য ভাষায় বর্ণনা করতে আমি অপারগ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়ায় দাড়িয়ে থাকা দায়। এখানে কিছু থাকার ব্যবস্থাও আছে।
ঘোরাঘুরি শেষ করে cottage এ ফিরে এসে সেদিন কাটিয়ে দিলাম জমে থাকা গল্পের ঝুলি খুলে, পুরনো স্মৃতিচারণ আর খাওয়াদাওয়া করে।
পরদিন সকালে ভারাক্রান্ত মনে প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি করে শিলিগুড়ির দিকে রওনা হলাম। তারপর... থাক সময়টা ওখানেই থমকে যাক। আসা করি আবার খুব তাড়াতড়ি ফিরে আসবো শিলিগুড়ি, আবার কোনো এরকম ছবির মত গ্রামে। ততদিন ’স্মৃতিটুকু থাক’। ??? আপনাদের বলি, যদি প্রকৃতির কোলে, নিরিবিলিতে ২ দিন কাটিয়ে আস্তে চান তাহলে অবশ্যই চলে যান sittong আর থাকুন মেঘবিতানে। এক বাঙালি কিভাবে সব স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে ওই নির্জন স্থানে নেপালিদের সাথে মিলে homestay চালাচ্ছেন না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। Caretaker সমীর (হ্যাঁ এই নেপালি ছেলেটির নামও সমীর), নেপালী driver বিধানের আন্তরিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। শেষ দিন ওরা আমাদের বিদায় জানালো নেপালি খাদা গলায়ে পরিয়ে। পরিশেষে আপনাদের জন্য রইল টুকরো টুকরো কিছু স্থিরচিত্র। বি: দ্র: এই ২ দিনে ২ জন একদম ই আমাদের মুখ দেখালেন না। একজন হলেন salamander, যে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটি ওখানে সংখ্যায় প্রচুর। আর এক অহংকারী মেঘের ঢালে নিজেকে আড়াল করে রাখলেন (পরিষ্কার আকাশে ঘরের জানলা থেকেই ওনার দর্শন পাওয়া যায়)। আশা করি আপনাদের সাথে এমন হবে না। ???
হঠাতই বেরিয়ে পড়েছিলাম, কোনও ঠিক ছিলনা আগে থেকে। বৃ্হস্পতিবার সকালে ততকাল এ দার্জিলিং মেল এর তিনটে টিকিট হাতে আসার পর মনে হল ভ্রমন দেবতা এবার মুখ তুলে চেয়েছেন। অফিস সেরে শুক্রবার রাত দশটায় আমি আর পিকু শিয়ালদা স্টেশনে পৌছে দেখি বাবুই তখনো পৌঁছাতে পারেনি, ফোন ও তুলছেনা। এদিকে ট্রেন ছারার সময় দশটা পাঁচ, আমি আর পিকু ট্রেনে উঠব কিনা ভাবছি এমন সময় দেখি বাবুই দৌড়ে দৌড়ে আসছে। আমি আর পিকু দুজনে হাত নারিয়ে ডাকছি বাবুই কে, শেষ পর্যন্ত হাপাতে হাপাতে তিনজন ট্রেনে উঠলাম আর ঠিক তখনই ট্রেনটা হর্ন দিল। আর একবার ভ্রমণ দেবতার আশির্বাদ ধন্য হয়ে যাত্রা শুরু করলাম। ট্রেনের সবাই বেশ উৎকনঠা সহকারে আমাদের নিরিক্ষন করছিলেন, অবশেসে তারাও শান্ত হলেন। এখন ট্রেনের গতিতে যন্ত্রের বড়াই বেশ বুঝতে পারছি , সবাই দেখছি এরমধ্যে খাওয়া দাওয়া শেষ করে শোবার বন্দবস্ত করছেন। আমাদের সিট গুলো বেশ পেয়েছি, একটা আপার বার্থ আর বাকি দুটোর একটা সাইড লোয়ার আরেকটা সাইড আপার। শুরু হল আমাদের গল্প। কত কথা, কত আলচনা যেন অপেক্ষা করে ছিল এই সময় এর জন্য। গল্প করতে করতে বুঝতে পারিনি কত রাত হয়ে গেছে। হঠাৎ ঘড়িতে দেখি রাত একটা। আমি পিকু বাড়ি থেকে ডিনার করেই এসেছিলাম, বাবুই টিফিনবক্স বের করে লুচি আর মাংস খেতে লাগল, আমাদের পেট ভরা তাই ওকে আর বিরক্ত করলাম না। বাবুই এর খাওয়া শেষ, একটা বড় ঢেকুর তুলে বলল এই দেখ তোদের একবারও জিজ্ঞেস করলাম না। আমরা হাসতে হাসতে বললাম নে, অনেক হয়েছে, আমরা ডিনার করেই এসেছি, আমরা তিনজন জল খেয়ে শুয়ে পরলাম। নিকশ কাল অন্ধকার ভেদ করে দুরন্ত গতিতে ছুটে চলল আমাদের ট্রেন। কখন আলো ফুটেছে জানিনা, চোখের পাতা যখন খুলল হাত ঘড়িতে দেখলাম সকাল সাতটা। ট্রেনের গতি একটু কমেছে, পিকু আর বাবুই দেখলাম উঠে সাইড লোয়ার এ বসে আড্ডা জমিয়েছে, আমিও উঠে ফ্রেস হয়ে যোগ দিলাম। এর মধ্যে এক চাওয়ালা এসে হাজির, ঠিক যেমনটা চাইছিলাম। মাটির ভারে গরম ধোঁয়া ওঠা চা, আহঃ প্রানটা যেন জুরিয়ে গেল। চা খেতে খেতে আমি বুবাই কে জিজ্ঞেস করলাম - আচ্ছা আমরা ঠিক কোথায় যাচ্ছি? পিকুও জানেনা আমাদের ডেস্টিনেশন, বাবুই ই প্রথম থেকে বলে আসছে চল দেখবি, এখনও তাই বলছে, চলনা দেখবি। আমি আর পিকু যেন এক মায়াবি স্বপ্নপুরীর উদ্দেশ্যে ধাবমান আর বাবুই আমাদের সারথী। দার্জিলিং মেল যখন নিউ জল্পাইগুড়ি স্টেশনে থামল তখন ঘড়িতে সকাল আটটা পনের। আমরা ট্রেন থেকে নেমে ওভার ব্রীজ দিয়ে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড এ পৌছানোর সঙ্গে সঙ্গে জনা দশেক ট্যাক্সি চালক আমাদের বিভিন্ন জায়গার ভাড়া বলতে লাগল, কারোর আবার জিজ্ঞাসা আমরা কোথায় যাব, আমি আর পিকু তো জানিনা আমাদের গন্তব্য। চালক-জট কাটিয়ে আমরা স্টেশনের বাইরে তিনজন একটু ফাকা জায়গা পেয়ে দাড়ালাম। আমি বুবাই কে বললাম - কিরে, গাড়ির ব্যাপার টা কি হবে? বাবুই বলল দাড়া, আমার একটা পুরনো ড্রাইভার এর নাম্বার আছে, এই বলে ওই নাম্বারে কল করে কথা বলে একটু সস্তির নিশাস নিয়ে বলল মধুদা আসছে। গাড়ী ছাড়ল ঠিক সকাল নটা তিরিশে। আমাদের লাগেজ তেমন কিছুই নেই, তিনজনের তিনটে ব্যাগপ্যাক, সোমবার সকালে ফিরে আসার প্ল্যান তাই অহেতুক লাগেজ বারানোর কোনো মানেই হয়না যোদিও ফেরার টিকিট হয়নি এখনো। আজ শনিবার, সকাল দশটায় ততকাল এ টিকিট কাটার কথা। মধুদা কে বলে একটা খাবার দোকানে দাড়ালাম, আমাদের ব্রেকফাস্ট করতে হবে আর টিকিট টাও অনলাইনে কেটে নেওয়া যাবে। আমি আর পিকু টিকিট এর জন্য ট্রাই করছি আর বাবুই খাবার অরডার করতে ব্যাস্ত। নাহঃ কপালে ফেরার ট্রেনের টিকিট ছিল না আগত্যা আমরা রবিবার সন্ধ্যে বেলার তিনটে ভলভো র টিকিট (শিলিগুড়ি টু কলকাতা) কেটে নিলাম কারন অফিস। মোমো, নুডুলস, আর কোল্ডড্রিংস খেয়ে শুরু হল আমাদের যাত্রা। গাড়ী চলছে, আস্তে আস্তে শহরের রাস্তা ছারিয়ে ফাকা হয়ে আসছে চারপাশ, রাস্তার রং এর কালো ভাবটা আরো প্রকট হয়ে উঠেছে, মাঝখানের সাদা রং এর ডিভাইডার গুলো ঝড়ের গতিতে মিশে যাচ্ছে গাড়ীর চাকার সাথে আর চারপাশে সবুজের উপস্থিতি ক্রমশ ঘন হয়ে আসছে। আকাশটা মাঝে মাঝে মেঘলা হচ্ছে আবার রোদ এসে মুছে দিছে মেঘের প্রলেপ। রাস্তা এখন অনেক চড়াই, গাড়ীটা বাঁক নিয়ে অনেকটা ওপরে উঠে এসেছে, ডানদিক টায় এখন গভীর খাদ আর বাঁ দিকে পাহাড়। দূরে একটা ছোটো নদীর মত জলের রেখা দেখা যাছে। আমি আর পিকু বুবাই কে জিজ্ঞাসা করলাম - হ্যা রে এবার তো বল কোথায় যাছছি, এতক্ষণে বাবুই বলল আমরা কালিংপং হয়ে রামধুরা চলেছি। রামধুরা.. নামটা খুব সুন্দর, নিউ জলপাইগুরি থেকে পঁচাশি কিমি, তিন ঘন্টা পনেরো মিনিটের পথ, নিউ জলপাইগুরি থেকে গাড়ী ভারা করে পৌছে যাওয়া যায় সেই সপ্নের জায়গাটিতে। আমরা গাড়ীটা আমাদের সাথেই রেখেছিলাম আর আমাদের উপরি পাওনা ছিল মধুদা। মানুষটি খুব ভাল, সদা হাস্যোজ্জ্বল, সুভব্য, অমায়ীক, উপকারী। অল্প সময় এর মধ্যেই আমরা তিন থেকে চারজন হয়ে উঠেছিলাম। চোখটা একটু লেগে গেছিল, গাড়ীর হর্ন এ উঠে বসলাম, আমরা কালিংপং এ, ঘড়ি তে দুপুর একটা। এখান থেকে আরও পনের কিমি পথ। কালিংপং ছেরে আমাদের গাড়ী আরও চড়াই রাস্তা ধরল। দুদিকে অনাবিল প্রাকিতিক সৌন্দর্যে ভরা। আমি বাকরুধ্য, মধুদা একটা বাঁক নিতেই সব কিছু যেন সৌন্দর্যে ভরে গেল। রাস্তার দুদিকে ফুল এ ভরে আছে আর হিমালয়ের কত চুড়া আমাদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, চারদিক সবুজে ভরা আর আমরা চলেছি তার ঠিক মাঝখান দিয়ে। রাস্তাটা আরেকটু এসে দুভাগ হয়ে গেছে, মধুদা বাঁ দিকের রাস্তা ধরে আরেকটা বাঁক নিতেই যেন আরেকটা সুন্দর পর্দা অনাবৃত হল, সুন্দর একটি রাস্তা একটা সুন্দরী পার্ক এর দিকে চলে গেছে। মধুদা বলল ওটা ডেলো পার্ক। আমাদের রাস্তা আরও সুন্দর হয়ে যাছে, হিমালয়ের অপরুপ সৌন্দর্য আমাদের মনকে পবিত্র করছে প্রতি মুহুর্তে। অবশেষে মধুদা থামল তখন দুপুর দেড়টা। যায়গাটা পাহার দিয়ে মোরা, তখনও ঝিঝির ডাক শোনা যাছে, দূর থেকে একটা জল পরার শব্দ ভেসে আসছে আর বাঁদিকে একটা ছোট বাড়ি। আমরা তিনজন বাড়িটার দিকে এগতেই বাড়ির মধ্যে থেকে হাসি মুখে বেরিয়ে এলেন বাড়ির কতৃ। যেন আমাদেরই অপেক্ষায় ছিলেন। দশটা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করার পর এতবড় চমক অপেক্ষা করেছিল ভাবতে পারিনি। আমি থমকে গেলাম, যে বাড়িটা রাস্তার ওপর থেকে দেখেছিলাম কোথায় সেই বাড়ি? আমি ম্নত্র মুগ্ধতায় ডুবে গেলাম। দেখলাম পাহারের কোলে তিনটি ছোট ছোট বাড়ি আর তাদের বারান্দা গুলো ঠিক যেন ঝুলে রয়েছে হিমালয়ের গায়ে আর সেখান থেকে ঠিক উল্টো দিকে অসীম হিমালয়ের অন্তত রুপ। দেখা যাছে অনাবিল সুন্দর কাঞ্চনজঙহা। আরও কত শৃঙ্গ মাথা উচু করে আছে, সাদা মেঘ ভেসে বেরাছে আমাদের সামনে দিয়ে, ঠান্ডা শীতল হাওয়া ছুয়ে যাচ্ছে আমাদের শরীর আর মন। এটাই রামধুরা। আমরা এসেছি রাজালিম হোমস্টেতে, আমার খুব ভাল লাগার হোমস্টে এইটা। দিদির (বাড়ির কতৃ) ডাকে ঘোর কাটল, আমাদের লাঞ্চ রেডি, আমরা চারজন লাঞ্চ সেরে নিলাম। আমরা সবাই বারান্দায় বসে হিমালয় এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করছি এমন সময় দিদি বললেন এখান থেকে ইছছেগাঁও খুব কাছে, ব্যাস, মধুদা কে নিয়ে বেরিয়ে পরলাম আমরা। রামধুরা থেকে ইছছেগাঁও যাবার রাস্তাটা একটু চড়াই আর খুব একেবেকে উঠে যাছে ওপর দিকে, দুদিকে হিয়ালয়ের সৌন্দর্য্য যেন আমাদের সম্মোহিত করে রেখেছে। আমি অনেক দেশে গেছি অনেক পর্বত দেখেছি কিন্তু হিমালয় যেন সবার থেকে আলাদা, যেন সয়ং শিবের অংশ, এর প্রজ্ঞা, গাম্ভীর্য যেন পরম পুরুষের প্রতিভূ, ঈশ্বরের স্থান বোধহয় এখানেই। গাড়ী থামল, ইছছেগাঁওটা খুব সুন্দর, ঠিক যেন পাহারের টিলায় বাড়ি গুলো সাজান। খুব রঙীন সব বাড়ি গুলো, আমরা একটা দোকানে চা খেতে খেতে ইছছেগাঁও এর সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে লাগলাম। ধীরে ধীরে আলো কম হয়ে আসছে৷ আমরা রামধুরায় ফেরার জন্য প্রস্তুত হলাম। রাজালিম হোমস্টের বারান্দায় আমরা তিনজন বসে, আর আরেক প্রান্তে অপরুপ হিমালয়, সন্ধ্যায় যেন আরও গম্ভীর, আমরাও যেন মোহীত হয়ে অপেক্ষায় বসে আছি তার কথা শোনার জন্য। কতক্ষন গল্প করেছি জানিনা, দিদি এসে ডিনার এর জন্য ডাকলেন ঘড়িতে তখন নটা, আমরা ডিনার সেরে নিয়ে আরো কিছুটা আড্ডা দিয়ে শুয়ে পরলাম। ঘর গুলো বেশ ভাল, বিছানায় ক্লান্ত শরীরটা ফেলার সাথে সাথেই তলিয়ে গেলাম অতল ঘুমের দেশে। যখন ঘুম ভাংলো তখন আটটা। পিকু, বাবুই তখনো ঘুমছে। আমি ফ্রেশ হয়ে নিয়ে ওদের ডাকলাম, ওরাও উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল। দিদি চা আর ব্রেকফাস্ট দিয়ে গেলেন। আমরা আজ ফিরে যাব, আবার ফিরে গিয়ে অফিস, আবার সেই নকল জীবন এ ফিরে যাওয়া। মনটা খারাপ হয়ে গেল। Post By-Supriyo Goswami
ট্রেন এর টিকিট তো অনেকদিন আগেই কাটা ছিল লেপচাখা যাবার জন্য, কিন্তু যেখানে বুকিং ছিল সে হটাত করে বুকিং বাতিল করে দেওয়াতে আমাদের যাওয়া অনিশ্চত হয়ে পরেছিল। জায়গাটা সম্মন্ধে বেশি ইনফরমেশন ও পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে উইকএন্ড হওয়ায় ভীড় ও প্রচুর। যাই হোক, অনেক খোজাখুজির পর একটা হোমস্টেতে একটা বড় ঘর পাওয়া গেল। ব্যাস, আমরা আনন্দে লাফাতে শুরু করলাম। যেহেতু এটা পুরোপুরি ব্যাচেলর ( ফোর্সড) ট্রিপ ছিল তাই ঘর নিয়ে কোন চিন্তাই ছিল না আমাদের। নির্দিষ্ট দিনে আমরা কলকাতা স্টেশন থেকে ট্রেন ধরলাম। পরদিন দুপুর 12:30 এ নিউ আলিপুরদুয়ার পৌছলাম। ওখান থেকে একটা বড় অটো করে আমরা গেলাম রাজাভাতখাওয়া। লান্চ আর ফরেস্ট পারমিট করে সোজা সান্তালবাড়ি, তারপর 7 কিমি ট্রেক। খুব চড়াই রাস্তা। আড়াই ঘন্টা চলার পর আমরা লেপচাখা পৌছলাম। জায়গাটা একটা হিলটপ। পেছন দিকটা পাহাড় ঘেরা। সামনের দিকে জয়ন্তি ফরেস্ট এর ভিউ বহু নিচে। চারদিকে জংগল। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য অসাধারন। দুটো দিন আমাদের সৌন্দর্য্য উপভোগ করে আর ছবি তুলে কেটে গেল। তার সাথে ক্যাম্পফায়ার আর মুরগির রোস্ট তো ছিলই। ফেরার দিন আমরা খবর পেলাম ট্রেন লেট। তো আমরা সান্তালবাড়ি থেকে চলে গেলাম জয়ন্তি। ওখানে কিছু সময় কাটিয়ে আবার ফেরার পথ ধরলাম। কাল থেকে রুকস্যাক টা পাল্টে হয়ে যাবে অফিস ব্যাগ আর ট্রেক শু টা হয়ে যাবে ফর্মাল শু। কিছু ছবি রইলঃ Post By- Soumik Sett
আমার ভালোলাগা একটি ছোট্ট সফর ---- মংপং - ইট,কাঠ, পাথরের কৃত্রিম জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এক/দুদিনের জন্য প্রকৃতির মাঝে নিজেকে খুঁজে পেতে এক আইডিয়াল ডেষ্টিনেশন -- মংপং। অবশ্যই যারা নৈঃশব্দ্য পছন্দ করে। এখানে নেই কোনো মানুষের কোলাহল, নেই কোনো যানবাহনের আওয়াজ ,শুধু উপভোগ করতে পারা যায় শালপাতার শিরশিরানি আর তিস্তা নদীর কুলকুল বয়ে চলা। এইভাবে প্রকৃতির মাঝে কাটিয়ে দেওয়া যায় এক/দুদিন। এখানে আসাটা খুব সহজ শিলিগুড়ি থেকে মাত্র 30 কিলোমিটার, সেবক করোনেশন ব্রিজ পেরিয়ে কিছুটা রাস্তা অতিক্রম করলেই মংপং পৌঁছে যাওয়া যায়।এখানে থাকার জন্য ফরেষ্ট নেচার কটেজ আছে, যেখানে প্রকৃতিকে একান্তে উপলব্ধি করা আর জঙ্গলের বুনো, সো়ঁদা গন্ধের অনুভবে শিহরিত হওয়ার জন্য এক কথায় অনবদ্য,যার রেশ মনের কোঠায় রয়ে যায় অনেক দিন পর্যন্ত ----------- Post By:- Subrata Bapi Biswas
পায়ে পায়ে সান্দাকফু ডায়রির পাতা থেকে... সময় রাত্রি 8 টা। পৌঁছে গেছি শিয়ালদা স্টেশনে। ধরবো রাত্রি 10.05 এর দার্জিলিং মেল। একে একে আমাদের টিমের সবাই উপস্থিত।সবার উত্তেজনার পারদ ক্রমশ বাড়ছে। ট্রেন আসতেই টিম leader কিশোরদা জায়গাটা দেখিয়ে দিলো। ট্রেন ছাড়ার পর ডিনার করে নিলাম আর চললো মোবাইলে খুটখাট। উত্তেজনায় ঘুম আসছিল না। পাহাড় আমার খুব প্রিয় তবে ট্রেকিং এর বেপারে এখনো মুখে ভাত হয়নি। তাই কিছুটা টেনশানেও ছিলাম যে আদৌ পুরোটা পারবো তো শেষ করতে!!!! এই সব ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে যাই....... সকাল 8 টায় ট্রেন পৌঁছে যায় নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনে। আমরা ( অরুণাভ দা, মিলি দি, আয়ুশ, কৌশিক দা, দীপান্বিতা দি, অর্পিতা, কিশোর দা আর আমি) স্টেশন থেকে বেরিয়ে গাড়ি বুক করে চললাম মানেভঞ্জন এর উদ্যেশ্যে। পাহাড়ি রাস্তায় গাড়িতে বসে বসেই বাইরের অপরূপ সৌন্দর্য্য উপভোগ করছিলাম। পথে breakfast হল চিকেন মোমো, চা, রুটি তরকারি, কোল্ড ড্রিঙ্কস সহ। প্রায় সাড়ে 4 ঘন্টায় পৌঁছে গেলাম মানেভঞ্জন এ। এখান থেকেই আমাদের ট্রেকিং শুরু হওয়ার কথা....... প্রথম দিন.... মানেভঞ্জন এ গাড়ি থেকে Rucksack গুলো নামিয়ে সিকিউরিটি অফিস থেকে ট্রেকিং এর পারমিশন নিতে হল। তার পর কাঁধে ব্যাকপ্যাক গুলো নিয়ে পায়ের কাজ শুরু। গন্তব্য চিত্রে। মাত্র 3 কিমি রাস্তা। তাই প্রথমে ভেবেছিলাম দৌড়ে চলে যাবো। কয়েক পা এগোতেই বুঝলাম আমি নেতান্তই নাবালক এই বেপারে। পুরোটাই চড়াই রাস্তা। সমতল রাস্তার নামগন্ধ নেই। প্রথমেই এত চড়াই হবে ভাবতেই পারিনি। কষ্ট বেশ হয়েছে তবে জোশ ছিল অফুরন্ত। তাই মাঝে মাঝে বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে এগোতে লাগলাম সামনের দিকে। প্রায় 1.45 ঘন্টা পর আমরা চিত্রে তে পৌছালাম সবাই 3.30 টার সময়। আজ এখানেই রাত্রিবাস। Hawk Nest হোম স্টে তে। বাড়ির মালিকের নাম Phunsuk ...(কেন নামটা বললাম সবাই বুঝতে পেরেছেন নিশ্চই। যদিও এটা কাকতলীয়)। ওখানে lunch করলাম চাউমিন দিয়ে। বিকালে পড়ন্ত সূর্যের লাল আভায় রাঙা উপত্যকার রূপের ছটা টেনে নিয়ে গেলো আমাদের। চললো ক্যামেরার কারসাজি আর মুঠো ফোনে মুহূর্ত বন্দির পালা। তার পর শীতল বাতাসের হিমেল ছোঁয়ায় দাঁতকপাটি লেগে যাওয়ার জোগাড়। অগত্যা ফিরলাম ঘরে। সন্ধ্যায় হাসি মজা চলল আর সাথে চা পানের আসর। রাত্রি আটটায় ডিনার। সাথে ভাত চিকেন আর সবজি। রাত্রি তে ঘুমোনোর আগে রৌপ থালির মতো পূর্ণিমার চাঁদের আভা মন ছুঁয়ে গেল। দ্বিতীয় দিন... সকাল হতেই ঘরের ব্যালকনিতে বেরোলাম। কনকনে হওয়া ঝাঁকুনি নিয়ে এলো সারা শরীরে। বাবা গো বলে যেই না আবার ঘরে ঢুকতে যাচ্ছি অমনি চোখে পড়লো দুই পাহাড়ের ফাঁকে রবিমামা উকি দিচ্ছেন। ওহ! কি দারুন দৃশ্য। এ যেন কল্পনার অতীত। থেকে তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করলাম সূর্যের মিঠে উষ্ণতা। সকাল সকাল breakfast করলাম ব্রেড অমলেট দিয়ে তার পর শুরু আজকের ট্রেকিং। গন্তব্য টংলু। রাস্তা প্রায় 9 কিমি। আমাদের গাইড Jigmee শেরপা। বেশ মজাদার, হাসিখুশি, হ্যান্ডসাম ছেলে। সবার সাথে আলাপ পরিচয়ের অন্তে তার অন্তিম কথা অন্তর নাড়ালো। Jigmee র কথা অনুযায়ী আজকের রাস্তা বেশ চড়াই তবে মনের জোর থাকলে সব সম্ভব। প্রথমেই যে যার হাতের অবলম্বন (লাঠি) খুঁজে নিলাম। গ্রুপ ফটো জায়গা করে নিলো ক্যামেরায়। কাঁধে ব্যাকপ্যাক আর জলের বোতল নিয়ে জয় শিবশম্ভু বলে বেরিয়ে পড়লাম। প্রথমে ভালো রাস্তা ধরেই এগোচ্ছিলাম। কিন্তু কোথাও যেন সেই যাত্রা যৌবনের উন্মাদনা খোরাক হতে পারছিল না। তাই এবার চললাম কঠিন পথ ধরে। বেশি খাড়াই, বেশি পেছল পথ। এই না হলো ট্রেকিং। অব আয়া মজা। ভয় ও করছিলো খুব। একবার পা ফসকালে হারিয়ে যাবো কয়েক হাজার ফুট অতলে। তাই মেপে মেপে পা ফেলতে ফেলতে এগোতে লাগলাম। প্রায় 3 টে রেঞ্জ ক্রস করলাম। 5 কিমি একটানা চড়াই পথ। মাঝে মাঝে দম ফুরিয়ে যাওয়া ক্লান্তি। তাই আতু (নেপালি ভাষায় অর্থ "ক্লান্তি") হলেই বসে জলপান আর বাবা রামদেব স্টাইলে deep breathe... প্রায় 1 টার সময় পৌঁছে গেলাম Lameh Durah তে। এসেই এখানকার স্পেশালটি "বাটার টি"... দিব্বি লাগলো। সাথে সেদ্ধ ডিম। বোতলে ভোরে নিলাম ঝর্ণার জল। আবার শুরু হাঁটা। টানা 2 কিমি খাড়াই পথ। পৌঁছে গেলাম Meghma তে। এখানে SSB (সশস্ত্র সীমা বল) তে সিকিউরিটি চেকিং হলো। সামনে এক দোকানে চা পানের বিরতি। আবার শুরু এক পা দু পা করে এগোনো। পথের মাঝে এদিকে দাঁড়িয়ে ওদিকে দাঁড়িয়ে পোজ দিয়ে ছবি তোলা তো চলছেই। Jigmee গাইড কাম ফটোগ্রাফারের কাজ করছে। আরও 2 কিমি পথ উঠে পৌঁছে গেলাম আজকের গন্তব্য টংলু তে। ওখানে মজার ব্যাপার হলো যে আমাদের থাকার ব্যবস্থা হলো নেপালে আর খাওয়ার ব্যবস্থা হলো ভারতে। গিয়েই চাউমিন খেতে হলো (এগুলোই পাওয়া যায়)। রাত্রিতে খিচুড়ি আর ডিম ভাজা খেলাম সাথে নতুন জিনিস বাঁশের আঁচার (কেমন লাগলো জিজ্ঞাসা করবেন না, কোনো স্বাদ পাইনি)। রাত্রিতে ঠান্ডার প্রকোপ বাড়তেই লাগলো।তাই আর নিজেকে কষ্ট না দিয়ে লেপের তলায় ঢুকে পড়লাম। তৃতীয় দিন...... আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার কথা। কারণ আজ সকালে দেখব সূর্যোদয় আর কাঞ্চনজঙ্ঘা। রাত্রি তে সেই উত্তেজনায় অনেকেরই ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল। চোখ যাচ্ছিল ঘড়ির কাঁটায়। ভোরের বেলা হঠাৎ দরজার বাইরে Jigmee র ডাক শুনে ধড়পড় করে উঠলাম সবাই। উঠেই দৌড় view point এর দিকে। কারো হাতে ক্যামেরা, কারো DSLR, কারো মুঠো ফোন। যথা সময়ে পুব দিগন্ত লাল হয়ে উঠলো আর শুভ্র কাঞ্চনজঙ্ঘা ধীরে ধীরে রক্তিম বর্ণ ধারণ করতে লাগলো। ক্রমশ প্রকাশ হচ্ছিল কুম্ভকর্ণ রেঞ্জ (কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর নাম, অনেকে আবার স্লীপিং বুদ্ধা রেঞ্জও বলে থাকেন)। হঠাৎ করে কাবাব মে হাড্ডি হল কুয়াশা। পুরোটা দেখার আগেই পর্দা টেনে দিলো। মন টা কিছুটা খারাপ হয়ে গেল। তবে পুরোটা হতাশ করেনি। view point থেকে নিচে নেমে breakfast করার পালা। আজ home stay এর মালিক আমাদের খাওয়ালো রুটি আর তরকারি সাথে আধা সেদ্ধ ডিম। আজ আর বাঁশের আঁচার খাওয়ার সাহস দেখাইনি। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে বেরিয়ে পড়লাম। আজকের গন্তব্য Kalapokhri... রাস্তা প্রায় 15 কিমি। বুঝেই গেছি যে আজ চরম পরীক্ষা হতে চলেছে। কিন্তু উপায় তো নেই। যত কষ্টই হোক Kalapokhri পৌঁছাতে হবেই। প্রথমের 2 কিমি পথ নিচের দিকে নামতে হলো। পৌঁছে গেলাম Tumling এ। পথের দুই দিকে লাল রোডোডেনড্রোন ফুলের সৌন্দর্য্য মন ভরিয়ে দিচ্ছিল। থেকে থেকে ছবি তোলা, দু চোখ ভরে দৃশ্য গুলো দেখার কাজ চলছিল। Tumling থেকে 2 কিমি রাস্তা আরও নামলাম। পৌছালাম Jaubari তে। এটা নেপালে পড়ে। অনেক দিন পর ছোট্ট একটা বাজার দেখলাম। এখানে চা পানের বিরতির পর আবার শুরু। এবার একটানা যেতে হবে প্রায় 4 কিমি। পৌঁছে গেলাম Gairibas এ। এখানেই lunch করতে হবে। মেনু হিসাবে পেলাম ভেজ মোমো, থুকপা, সুপ নুডলস এই সব। যে যার পছন্দ মতো খেয়ে নিলাম। এত সময় খাড়াই রাস্তা ধরে নেমেছিলাম, এবার শুরু হলো আবার চড়াই। পায়ের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে আসছিল। জীবন বেরিয়ে যাওয়ার জোগাড়। বিশ্রাম নিচ্ছিলাম ঘন ঘন। কিন্তু গোদের উপর বিষফোঁড়া হয়ে নেমে এলো বৃষ্টি। এই জঙ্গলে ভরা রাস্তায় অপেক্ষা করার জায়গার সংকট। অগত্যা ছাতা মাথায় এগোতে লাগলাম। একহাতে ছাতা আর একহাতে লাঠি আর উঠছি খাড়াই রাস্তা ধরে। সে কি যে কষ্ট! 2 কিমি যাওয়ার পর পৌছালাম Kaiyakata তে। ছোট্ট চায়ের একটা দোকান পেলাম। ওখানেই একটু চা পান আর বৃষ্টি কমার অপেক্ষা চলল। ইন্দ্র দেব একটু সুপ্রসন্ন হতেই আবার বেরিয়ে পড়লাম। এখনও 4 কিমি রাস্তা বাকি। আর এই 4 কিমি সবচেয়ে খাড়াই আর চড়াই। এদিকে পা যেন খুলে পড়ার জোগাড়। প্রত্যেকের একটাই প্রশ্ন Jigmee কে " দাজু,ঔর কিতনি দূর ?" (নেপালি ভাষায় দাজু মানে ভাই).. Jigmee ও কৌশলে আমাদের মনোবল বাড়াচ্ছিল হাসি ঠাট্টায়। অবশেষে সেই সকাল 8 টা থেকে বেরিয়ে Kalpokhari পৌছালাম সন্ধ্যা 5 টায়। এসেই রুমের ব্যবস্থা করে সোজা বিছানায়। শরীরের কলকব্জা আজ পুরো নড়বড়ে হয়ে গেছে। রাত্রি তে ডিনার সেরে একটু জোর পেলাম। আজ সবাই একটা রুমেই ছিলাম তাই রাত্রিতে চলল হাসি মজা, গানের আসর। কাল আমাদের অন্তিম চড়াই তাই তার আগে মন চাঙ্গা করে নেওয়ার পালা। চতুর্থ দিন...... আজ ভোরের বেলা নিদ্রা ভঙ্গ করল বাইরের ঝমঝম বৃষ্টির শব্দ। এমনিতেই কাল অনেক রাত্রি জাগার ক্লান্তি তার উপর তাড়াতাড়ি ঘুম বাবাজির পলায়ন দিলো মেজাজটা বিগড়ে। চুপ করে পড়ে রইলাম তিনটে লেপের তলায়। একটাই ভাবনা মনের মধ্যে যে আজ পৌঁছাবো আমাদের লক্ষ্যে। 7.30 টার দিকে উঠে breakfast সেরে বাইরে বেরিয়ে এলাম। সামনে 2 টো রেঞ্জের পরই সবার উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে সান্দাকফু। Jigmee বলল আজ রাস্তা অনেক কম। মাত্র 6 কিমি। তবে খাড়াই টা প্রথম দিনের মত। একটা আশ্চর্য জিনিস খেয়াল করলাম যে আজ এটা শুনে আর ভয় করছে না কারো। বরং চরম উৎসাহে সবাই প্রস্তুত কয়েকদিনের পরিশ্রমকে চূড়ান্ত রূপ দিতে। সবার মনের মধ্যে উত্তেজনার পারদ চরচরিয়ে বাড়ছে। আর তার প্রতিফলন পড়ছে প্রতিটি পদক্ষেপে। এত খাড়াই সত্বেও সবাই দ্রুত হাঁটছে। বুঝতেই পারছিলাম সফলতা নামক চৌম্বকত্ব ক্রমশ তার আকর্ষণের গতি বাড়াচ্ছে। সারা রাস্তা কুয়াশায় ঢাকা। মাঝে মাঝে তা এত ঘন হচ্ছে যে নিজেরাই নিজেদের দেখতে পাচ্ছি না ভালো করে রাস্তা দেখা তো অনেক দূর। আজকের ক্লান্তি নিমেষে নিমেষে শেষ হয়ে নতুন উদ্দীপনা চলে আসছে আপনা হতেই। লাঠির উপর দৃঢ়তা উত্তরোত্তর বাড়ছে যতই উপরের চূড়া কাছে এগিয়ে আসছে। শেষ ধাপে পৌঁছে যেন ছুটে চললাম। দৌড়েই শেষ করবো এই ধাপ। দৌড় দৌড় দৌড়.... ব্যাস একছুটে পৌঁছে গেলাম পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ সীমায়। আপাত দৃষ্টিতে এটা তেমন কিছু মনে না হলেও ওই মুহূর্তে এটা আমার মতো আরামপ্রিয় ঘুমকাতুরে কুঁড়ে একজনের কাছে বিশাল প্রাপ্তি ছিল। শেষ অংশটা এত জোরে ছুটেছিলাম যে পৌঁছেই সারমেয় স্টাইলে জীব বের হয়ে গিয়েছিল। heartbeat তখন জাকির হোসেনের তবলা বাজানোর গতির থেকেও জোরে। আস্তে আস্তে উঠে দাঁড়ালাম। দু হাত মেলে দিলাম দু দিকে। সামনে ধু ধু আকাশ। পায়ের নিচের মাটি সোজা নেমে গেছে কয়েক হাজার ফুট নিচে। কনকনে ঠান্ডা হাওয়া হাড় ভেদ করে অস্থিমজ্জাকেও তার উপস্থিতি জানান দিচ্ছে। একমুহূর্ত পরেই শুরু হলো বরফের বৃষ্টি। কয়েকটা মাথার উপরে এসে সজোরে পড়ল ঢুকে গেলো পোশাকের ভেতর। ওফ! কি ঠান্ডা। দৌড়ে গিয়ে Home Stay তে ঢুকলাম। বাইরে বরফের বৃষ্টি চলছে। দু চোখ ভোরে দেখে নিচ্ছি সেই স্বর্গীয় দৃশ্য। যখন বৃষ্টি থামলো তখন মধ্যপ্রদেশ জানান দিলো তার খোরাক চাই। পেয়েও গেলাম গরম গরম খিচুড়ি। ওই মুহূর্তে এটা আমাদের কাছে অমৃত সমান। খাওয়ার পর একটা ঘরে সবাই বসে আড্ডা শুরু। উঠে এলো ভুতের গল্প। এই হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় হাড় হিম করা ভুতের গল্প একদম জমে রাম ঘোষের দই যাকে বলে আর কি। গল্প চলছে হঠাৎ দীপান্বিতা দির চিৎকার। তাকে কামড়ে ধরেছে এক নাম না জানা পোকা। হাজার চেষ্টা করেও বের করা যাচ্ছে না। সবার মুখ ভয়ে ফ্যাকাসে হতে শুরু করেছে। চিৎকারে দৌড়ে আসে Jigmee.. বেশ জোর লাগিয়ে টেনে বের করে আনে। সেকি হুলুস্থুল ব্যাপার। তার পর আর অপেক্ষা না করে রাতের খাওয়ার পালা। যখন বাইরে বেরোলাম তাপমাত্রা 2 ডিগ্রি। রাত্রিতে হয়তো আরও কমবে। এবার ঘুমোনোর পালা। কাল আমাদের গন্তব্য শ্রীখোলা। এখন থেকে 15 কিমি রাস্তা নিচের দিকে নামতে হবে। লেখা সৌজন্যে- আকাশ গুছাইত ছবি- কিশোর মণ্ডল Post By:- Kishor Mandal
সিলারি গাঁও দুই দিনের অফিসের ছুটি নিয়ে, অফিসের সব tension অফিসেই রেখে দিয়ে, বলা বাহুল্ল একটু উন্মুক্ত আবহাওয়ায় Refreshing হওয়ার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরলাম হিমালয়ের বুকে,গন্তব্য SilleyGaon। হিমালয়ের বিস্তির্ন বিস্তৃতির সথে সবুজে মোরা স্বপ্ন দিয়ে সাজানো এই সুন্দর গ্রাম। Dilip Tamang Jeer দূরলভ আপ্যায়ন এ ভরা এই গ্রামে পৌছাতে হলে NJP station থেকে কালিম্পং হয়ে ২৩ কিলোমিটার দূরত্বে পৌছে যেতে হবে সিলারি গাঁও এ। কালিম্পং সাব-ডিভিশনের প্রায় 6 হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। পেডং যাওয়ার ঠিক ৩ কিমি আগে একটি সংকীর্ণ রাস্তা Left side এ উপরের দিকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। রাশি রাশি পাইন গাছের ধার দিয়ে ওই রাস্তায় ৪.৭ কিমি পথ অতিক্রম করে অবশেষে পৌছে যাবেন 45 টি পরিবার নিয়ে গরা এই স্বপ্নময় গ্রামে। গ্রামের উত্তরের দিকে সুবিশাল কাঞ্চনজঙ্গা ও হিমালয় রেঞ্জ গুলি প্রাচীরের মত সম্মুখে বিরাজমান। এখানে বেশ কয়েকটি সুবিধাজনক পয়েন্ট রয়েছে যেখানে আপনি কাঞ্চনজঙ্গা তুষারপাহাড়ের সম্মুখে বিকালের চায়ে চুমুক দিতে দিতে সূর্যাস্তটা উপভোগ করতে পারবেন। মুখ ভারকরা মেঘগুলি☁ বার বার করে আপনাকে ছুঁয়ে ছুঁয়ে তার উপস্থিতির জানান দিয়ে যাবে। এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পাখির জন্যও Sillery Gaon সুপরিচিত। শীতল বাতাসের আমেজ, কখন যে আপনার থাকে ছুটির দুটো দিন কেড়ে নেবে সেটা বুঝতেই পারবেন না। কাছাকাছি ভ্রমণের সেরা জায়গাগুলির মধ্যে একটি রামাইটি ভিউ পয়েন্ট,এটি সিলারি গ্রাম থেকে প্রায় 2 কিলোমিটার পথ। ট্রেকারস দের জন্য এটি একটি আদর্শ ছোট্ট ট্রেকিং রুট , কিন্তু যানবাহন চাইলে যতে পারে। এখান থেকে একই সথে তিস্তা এবং বিস্তর সিকিম উপভোগ করতে পারবেন। শহরের কোলাহল থেকে কিছুটা সময় বার করে একবার বেরিয়ে আসতেই পারেন এই স্বপ্নপুরীতে।। Post By:- Avijit Maity
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |