আজ আপনাদের শোনাই এক অপেক্ষাকৃত নতুন পাহাড়ি গ্রামের গল্প।
গত শুক্রবার রাতে আমরা স্কুলের ৫ বন্ধু sealdah থেকে special train এ উঠে শনিবার সকালবেলা পৌঁছলাম NjP। সেখানে আগে থেকে গাড়ি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছিল। তাতে করে রওনা হলাম Sittong এর উদ্দেশ্যে। পথে প্রাতঃরাশ সেরে নিলাম সেবক পার হয়ে। এরপর গাড়ি দৌড়ালো birik পার করে sittong এর দিকে। পথে পরলো চুচেদুঙ্গা, নামথিং পখিরি (লেক টি শুকিয়ে গাছে যদিও)। প্রায় দুপুরবেলা গিয়ে পৌছালাম মেঘবিতান cottage। এটি upper sittong e অবস্থিত। দেখেই চোখ জুড়িয়ে গেলো। পাহাড়ের ঢালে চারদিকে চা বাগানের মধ্যে হঠাৎ দুটি ঘর। সামনে দিগন্তবিস্তৃত পাহাড়ের সম্ভার। অসাধারণ জায়গা। অপেক্ষা করছিলেন সমীর বাবু, যিনি এই cottage এর সবকিছু। আমাদের ৫ জনের একটি ঘরেই হয়ে গেলো। ২ টি খাট, dinning table, tea table সমেত সুন্দর একটি কাঠের ঘর। ঘরে পৌঁছে দুপুরের স্নানআহার সেরে বিকেলে সমীর বাবু নিয়ে গেলেন আশপাশের মন্দির, লেপচা গ্রাম, ৪০০ বছরের পুরনো মনাস্ট্রি দেখাতে। বিকেলের পরন্ত আলোতে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে হেঁটে যাওয়া, ঝিঁঝি পোকা আর নাম না জানা পাখির ডাক শোনা, চারপাশের পাহাড়ের ঢালে ঢালে গ্রামগুলোর জোনাকির মতো জ্বলে থাকা আলো, সে এক অসামান্য অভিজ্ঞতা। রাতে ফিরে ভাত, মুরগি সহযোগে আহার সেরে ঠান্ডায় এক ঘুমে রাত কাবার। পরদিন সকালে প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি নিয়ে বেরোনো হলো পারিপার্শ্বিক ভ্রমণের উদ্দেশ্যে। প্রথমে এলো কমলালেবু বাগান। দার্জিলিঙের এই গ্রামটি বিখ্যাত কমলালেবুর জন্যই। গাছে গাছে থোকা থোকা কমলালেবু হাতের নাগালে পাওয়া এক আশ্চর্যের বিষয়। যদিও এখন সবুজ অবস্থায়। তবুও ২-১ টি পাকা কমলালেবু দেখে খাওয়ার লোভ সামলানো গেলো না। এরপর রিয়াং নদীর পার করে পৌছালাম অর্কিড বাগান। পার্বত্য এই ফুলটির একটি আলাদাই সৌন্দর্য্য। পথে রিয়াঙ নদীর ধারে কিছু নিজস্বী তোলার বিরতি তো ছিলই। সেখান থেকে পৌছালাম কবিগুরুর স্মৃতিমুখর মংপু। এখানের এই বাগানবাড়িতে কবিগুরুর বেশ কিছুদিন কাটান। সেই বাগানবাড়ি অবস্থানগত এবং স্থাপত্যের দিক থেকে সত্যি দর্শনীয়। ঘুরে দেখলাম ভেতরের ঘরগুলি, বিভিন্ন পুরনো পুঁথি, কবির হাতে লেখা কবিতা, গদ্য। সেখান থেকে পৌছালাম লেপচা জলপ্রপাত। গাড়ি নিচে রেখে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে বেশ কিছুটা রাস্তা হেঁটে ওপরে উঠতে হয়। কিন্তু নয়নাভিরাম জলপ্রপাতটি রাস্তার সব কষ্ট ভুলিয়ে দেবে। এরপর শেষ গন্তব্য ছিল আহালদারি view point। পাহাড়ের মাথায় অসাধারণ একটি point, যার চারদিক ঘিরে আছে পাহাড়, নিচে দেখা যায় তিস্তা নদী। এই জায়গার সৌর্ন্দয্য ভাষায় বর্ণনা করতে আমি অপারগ। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হাওয়ায় দাড়িয়ে থাকা দায়। এখানে কিছু থাকার ব্যবস্থাও আছে।
ঘোরাঘুরি শেষ করে cottage এ ফিরে এসে সেদিন কাটিয়ে দিলাম জমে থাকা গল্পের ঝুলি খুলে, পুরনো স্মৃতিচারণ আর খাওয়াদাওয়া করে।
পরদিন সকালে ভারাক্রান্ত মনে প্রাতঃরাশ সেরে গাড়ি করে শিলিগুড়ির দিকে রওনা হলাম। তারপর... থাক সময়টা ওখানেই থমকে যাক। আসা করি আবার খুব তাড়াতড়ি ফিরে আসবো শিলিগুড়ি, আবার কোনো এরকম ছবির মত গ্রামে। ততদিন ’স্মৃতিটুকু থাক’। ??? আপনাদের বলি, যদি প্রকৃতির কোলে, নিরিবিলিতে ২ দিন কাটিয়ে আস্তে চান তাহলে অবশ্যই চলে যান sittong আর থাকুন মেঘবিতানে। এক বাঙালি কিভাবে সব স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে ওই নির্জন স্থানে নেপালিদের সাথে মিলে homestay চালাচ্ছেন না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। Caretaker সমীর (হ্যাঁ এই নেপালি ছেলেটির নামও সমীর), নেপালী driver বিধানের আন্তরিকতা আপনাকে মুগ্ধ করবে। শেষ দিন ওরা আমাদের বিদায় জানালো নেপালি খাদা গলায়ে পরিয়ে। পরিশেষে আপনাদের জন্য রইল টুকরো টুকরো কিছু স্থিরচিত্র। বি: দ্র: এই ২ দিনে ২ জন একদম ই আমাদের মুখ দেখালেন না। একজন হলেন salamander, যে বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীটি ওখানে সংখ্যায় প্রচুর। আর এক অহংকারী মেঘের ঢালে নিজেকে আড়াল করে রাখলেন (পরিষ্কার আকাশে ঘরের জানলা থেকেই ওনার দর্শন পাওয়া যায়)। আশা করি আপনাদের সাথে এমন হবে না। ???
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |