সাল টা ২০১৬, ১৫ই আগস্ট এর দিন দুয়েক আগে। আমি, আমার বন্ধু সুভদীপ আর প্রসেঞ্জিত মিলে ঠিক করলাম বেড়াতে যাব। কিন্তু কথ্য যাব সেটা প্রথমে কেও ঠিক করতে পারলাম না। আমাদের তিন জনের মধ্যে আমি সব থেকে ঘুরতে ভালবাসি। তাই দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। ঠিক করলাম Ghatshila যাব। গোছগাছ করে নিয়ে দিন দু-একের মধ্যে বেড়িয়ে পড়লাম।
সকাল ৭ টায় হাওড়া থেকে ইস্পাত ধরার কথা। আমরা ভোর ৪ টের সময় কাকিনারা রেল প্লাটফর্ম এ চলে এসে টিকিট কেটে নিলাম। ৪ঃ১৫ টার ট্রেনে উঠে ৫ঃ৩০ নাগাদ শিয়ালদহে চলে এলাম। এরপর বাসে হাওড়া। ঠিক সময় মত প্লাটফর্মে চলে এলেও ট্রেন নির্ধারিত সময়ের থেকে ৫ মিনিট দেরিতে ছাড়ল। আমরা প্রায় ১০ঃ৩০ নাগাদ ঘাটশিলা পৌছালাম। আমাদের আগে থেকে কোন ঘর বুক করা ছিল না। কাজেই রেল লাইনের এ পার ওপার দেখে মোটামুটি ১ টা ঘর পেয়ে গেলাম ৫০০ টাকাতে। যা তিন জনের পক্ষে যথেষ্ট। ঘরে এসে তিন জন এক এক করে স্নান সেরে নিলাম। তারপর দুপুরের খাওয়া খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম অটো খুঁজতে। আসেপাসে কাছা কাছি কি আছে সেটা আজকে দেখে নিতে হবে। তারপর বাকী যা আছে তা কাল হবে। আজ আমরা একটা অটো ঠিক করে চলে গেলাম সব চেয়ে আগে Subarnarekha নদীতে। রাস্তাতে অটোআলা দেখাল এইচসিএল এর কারখানা। এরপর আমরা সোজা চলে গেলাম Subarnarekhaর ধারে। নদির স্রোত বেশ ভালই আছে দেখলাম । এর একধার থেকে ঝর্নার মতো কথা থেকে যেন জল এসে পড়ছে। এখানে প্রায় ৩০ মিনিট মাত কাটিয়ে সন্ধ্যে হতে হতে হোটেলের দিকে ফিরে চললাম। একটা জিনিস দেখলাম এখানে খুব রাত করে সব বন্ধ হয়ে যায়। তাই হোটেলের লোক জনের কাছ থেকে কোথায় খাওয়ার পাওয়া যায় জেনে নিয়ে চলে গেলাম রাতের খাওয়ার খেতে। যদিও সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ মুড়ি আর চপ সহযোগে টিফিন করেছিলাম। সবাই খেয়ে এসে প্ল্যান করতে বসে গেলাম আগামী কাল কোথায় যাব। হোটেলের লোকেরও সাহায্য নিলাম। কিন্তু ওনারা আমাদের যা লিস্ট দিলেন দেখলাম আমরা যদি সব দেখতে যাই তাহলে অনেক দিন লেগে যাবে। তাই আমরা ঠিক করলাম আমরা যাব নির্দিষ্ট কয়েকটি জায়গায়।
পরের দিন সকালে উঠে টিফিন করে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম অটো খুজে দরদাম করতে। দেখলাম সবাই যা দাম বলছে সবই প্রায় কাছা কাছি রেট। ঠিক করলাম আমরা যাব Burudi Lake, Dharagiri Waterfalls, মা Rankini Temple, Bibuhti Bhusan এর বাড়ি এইসব জায়গা গুলোতে। ভাড়া ঠিক হল প্রায় ১০০০ টাকা। পুরো অটো রিসার্ভ করে আমরা বেড়িয়ে পড়লাম মনের চিত্ত শুদ্ধির জন্য। লোকালয় ছেড়ে আমরা যত এগিয়ে চলেছি, সবুজ তত যেন আমাদের গ্রাস করে চলেছে। এই ভাবে চলতে চলতে আমরা সর্ব প্রথম পৌঁছে গেলাম Burudi Lake এ। চারপাশ পুরো নিস্তব্ধ, হাতে গোনা কয়েক জন টুরিস্ট মাত্র। বিশাল প্রান্তর জুড়ে অনেকটা বিস্তৃত এই লেকটা। চারপাশ শুধু সবুজ আর সবুজ, তবে একটা জিনিস দেখলাম মাটি কিন্তু এখানে লাল। তার মধ্যেই দেখলাম একপাশ থেকে নালার মধ্যে দিয়ে জল এসে লেক এ পড়ছে। লেকের জল পুরো সচ্ছ । এককথায় একবার এসে দেখলেই, আপনি একে ভালবেসে ফেলতে বাধ্য। এখানে প্রায় ৪৫ মিনিট মত কাটিয়ে আমরা চললাম এরই পাস দিয়ে Dharagiri Waterfalls দেখতে। প্রায় অনেকটা পথ পেড়িয়ে আমরা চলে এলাম একটি গ্রাম্য পথের মাঝে। এক জায়গায় এসে দেখলাম অনেক গুলো গাড়ী সারবদ্ধ ভাবে দাঁড়ান । বুঝলাম গন্তব্য চলে এসেছে।
আমরা প্রথমে যেখানে এসে দাঁড়ালাম, সেই জায়গাটা এক নজরে দেখলেই আপনি ভালো বাসতে বাধ্য। এখানে গাইড বলতে স্থানীয় লোকজন । তারাই আপনাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে। আমরা একটি বাচ্চা মেয়েকে গাইড হিসাবে নিয়ে নিলাম। চলতে লাগলাম তার পিছন পিছন। যত এগোচ্ছই তত জানো জঙ্গল আমাদের দিকে এগিয়ে আসছে, ঘন হচ্ছে। পাহাড়ও কাছে আসছে, আর আমরা তত পাহাড়ের ভিতর ঢুকতে যাচ্ছি। তবে এখানেও দেখলাম চারপাশ পুরো নিস্তব্ধ। বেশ কিছুটা এগিয়ে আসার পর দেখতে পেলাম একটা ছোট্ট ঝরনা। এটাই ছিল আমাদের এই বারের গন্তব্য। এখানে বেশ কিছুক্ষণ মজা করে, ছবি তুলে আমরা ফিরে চললাম পুরনো রাস্তা ধরে। ফিরে আসার সময় আকাশে মেঘের সমাগম দেখলাম, আর বুরুদি-র পাশ দিয়ে ফেরার সময় অটো থেকেই যাত্রা পথের সাথে লেকের চলমান চিত্র লেন্স বন্দি করতে করতে চললাম। Dharagiri Waterfalls দেখে ফেরার সময় কিছুক্ষণ চলার পরেই বৃষ্টি শুরু হল। এবার আমাদের যাত্রা পথ মা Rankini Temple এর দিকে। যাত্রা পথ ও বেশ অনেকটাই এবং রাস্তার দশা বেশ বেহাল, খানা খন্দে ভরা, শুকনো, খুব ধুলো উড়ছে। অটো দাদা যেতে যেতে একটা ব্রিজের উপর কিছুক্ষণ দাড় করিয়ে দিল। আমরা দেখতে পেলাম দূরে একটি পাহাড় আর তার কাছ থেকে আমাদের দিকে ছুটে আসছে একটি খালের মধ্য দিয়ে জলরাশি। ড্রাইভার দাদা বলল ঐ পাহাড়ে নাকি বেশ কিছু জন্তু-জানোয়ার থাকে। এরপর পাহাড় কে সঙ্গে নিয়ে সবুজে সবুজে ভরে আমরা এগিয়ে চললাম রাঙ্কিনি মন্দিরের দিকে। এই রাঙ্কিনি মন্দির যে জায়গায় অবস্থিত সেই জায়গাটার নাম জাদুগোরা । তাই এই মন্দির কে অনেকে জাদুগোরা রাঙ্কিনি মন্দির ও বলে। প্রায় অনেক্ষন চলার পর আমরা এসে পউছালাম মা Rankini -র মন্দিরে। মন্দিরের রাস্তায় গাড়ীর খুব ভিড়, একদম লাইন পড়ে গেছে। মন্দিরের বাইরে পুজ দেওয়ার কি ভিড়। গাড়ী থেকে নেবে আমরা সাইড দিয়ে চলে এলাম মন্দিরের কাছে। এখানে দৃশ্য কিছুটা আমাদের তারকনাথ বা তারাপীঠ এর মত, কারন অনেকেই দেখলাম গাছে মানত করার জন্য ইটের সাথে সুত বেধে ঝুলিয়ে দিচ্ছে। আমার বরাবরই ভিড়ে অ্যালার্জি । মন্দিরের কিছু ছবি তুলে নেবে এলাম পুরনো মন্দিরের স্থানে, একটা ছোট্ট ব্রিজের উপর থেকে দেখলাম নিচ দিয়ে ছোট্ট কিন্তু স্রোতস্বিনী একটি জলধারা বয়ে চলেছে। এখানে প্রায় ৩০ মিনিট মত কাটালাম। কাছাকাছি আরও একটি মন্দির আছে সেটিও দেখে নিলাম। চারপাশের সৌন্দর্য উপভগ করার পর আমরা এগিয়ে চললাম গাড়ীর দিকে। একটা কথা বলা উচিৎ, আপনারা যারা এখানে আসবেন তারা অবশ্যই ড্রাইভার এর ফোন নাম্বার নিয়ে রাখবেন, না হলে গাড়ী কোথায় আছে হাজার খুঁজলেও পাবেন না। আমরা ফোন করে অটো বার করে রাখতে বলে এগিয়ে চললাম। আপনাদেরকে একটা কথা বলে রাখা ভালো, জাদুগোরা রাঙ্কিনি মন্দিরে টাটা নগর থেকে যাওয়া সব থেকে ভালো, এই পথে ভাড়া বেশি পরে, যেটা আমরা জানতাম না। এবার আমরা এগিয়ে চললাম কবি BibuhtiBhusan বন্ধপাধ্যায় এর বাড়ীর দিকে। এবার সেই ধুলো উড়ানো টাল-মাটাল পথ দিয়ে ফিরে এলাম। আমরা গিয়ে জাখন পউছালাম তার কিছুক্ষণ আগেই দরজা খুলেছে। খুব একটা ভিড় ছিলনা। আমরা সবাই ধীরে সুস্থে পুরোটা দেখে নিয়ে সন্ধ্যে বেলাতে হোটেলের কাছে বড় রাস্তাতে নামিয়ে দিল। সন্ধ্যে বেলাতে আমরা চপ মুড়ি সহযোগে টিফিন করে নিলাম। মাঝ খানে বেশ কিছুটা সময় হাতে আছে। এখানে যা দেখার আছে, তার মধ্যে যত টা দেখার আমরা সেটা দেখে নিয়েছি, হাতে এখনও সময় আছে। হাতে কোন প্ল্যান নেই, কারন এখানে আসার আগে কোন প্ল্যান করা ছিলনা। প্ল্যান করতে ঠিক হল পরের দিন সবাই মিলে টাটানগর চলে যাব। ওখানে দেখার মত জায়গা হল ডিমনা লেক আর জুবিলি পার্ক। কিন্তু দুঃখের খবর হল আমাদের বন্ধু প্রসেঞ্জিত এর কাজে ডাক আসার জন্য ওকে পরের দিনই চলে যেতে হল। পরের দিন আমরা চললাম টাটানগরের উদ্দেশে। পরের পর্বে টাটা নগর ভ্রমনের কাহিনী বলব ।
0 Comments
নবজাগরণের পর উত্তমাশা অন্তরীপ পেরিয়ে ইউরোপীয় বণিকরা তখন দলে দলে ভিড় করত ভারতবর্ষে। জাহাজ বোঝাই করে নিয়ে যেত গরম মশলা, হাতির দাঁতের কাজ আর পরিধেয় বস্ত্র। ঢাকার মুসলিন কাপড়ের কথা তো সর্বজন বিদিত। দেশীয় নীল সেও অজানা নয়। কিন্তু জানেন কি বাংলার তাঁতের সাথে সিল্কের ঠেটি কাপড়ও ছিল পাশ্চাত্য দেশে বেশ জনপ্রিয়। আর বীরভূমের রেশম শিল্প ছিল উৎকর্ষতার প্রথম সারিতে। যে কয়টি স্থান থেকে এই শিল্প হয়ে উঠেছিল আন্তর্জাতিক, তার অগ্রগণ্য ছিল গুনুটিয়ার এক কুঠি বাড়ি। আজও তার ভগ্নাবশেষ পড়ে আছে সেখানে। চলুন একটু ঘুরে আসি।
সাঁইথিয়ার কাছে ময়ূরাক্ষী নদীর বুকে যত্রতত্র বালি তুলে বিশাল বিশাল খাদানের সৃষ্টি হয়েছে। বর্ষার পরে সেই খাদানগুলোয় জল জমে আজ মোহময়ী। আর তাতে খেয়া চলে। ঠিক করলাম নৌকো পার করে গিয়ে পড়ব বহরমপুর রোড হয়ে গুনুটিয়া। তাতে টাইম ট্রাভেল হয়ে গেল কিছুটা। আর যখন সেই কুঠি বাড়িতে গিয়ে পড়লাম, চোখের সামনে তখন এক্কেবারে অষ্টাদশ শতাব্দীর ইতিহাস। মনে হলো সেই জঙ্গল ফিরে এসেছে, যে জঙ্গল কেটে কিছুদিন পর মিস্টার ফ্রাসার্ড সাহেব তৈরি করতে চলেছেন তার স্বপ্নের কুঠিবাড়ি। প্রকৃতি এভাবেই ফিরে আসে বারবার। পলাশীর যুদ্ধ শেষ হয়েছে। তবে মুর্শিদাবাদ তখনও ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে। সেখান থেকে ময়ূরাক্ষী নদী বেয়ে অনায়াসেই বজরা পৌঁছে যায় গানোটিয়ায়। কর্ম চঞ্চল ফ্রাসার্ড সাহেবের হাত ধরে সেই শুরু বিরভূমী সিল্কের বিশ্বায়ন। তাঁর মৃত্যুর পর জন চীপ মহাশয়ের হাতে পড়ে কুঠি বাড়িটি তখন নব যৌবন প্রাপ্ত। একসময় এই কুঠি বাড়িতে নাকি ১৫০০০ জন লোক একসাথে কাজ করতো। সুরুল, ইলাম বাজার এলাকায় তাঁর প্রতিষ্ঠিত নীল কুঠির সাথে গুনুটিয়ার কুঠি বাড়ির যোগাযোগে তৈরি হলো সড়ক পথ। যেপথে ক্রমে চলতে শুরু করলো এক্কা গাড়ি, গরুর গাড়ি, বাস, মোটর বাইক প্রভৃতি। ফ্রাসার্ড সাহেব বা জন চীপ মহাশয় কেহই কিন্তু তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যেতে পারলেন না। নিথর হয়ে রয়ে গেলেন এই বাড়ির প্রাঙ্গণেই। তাদের সমাধি আজ নিতান্ত অবহেলায়। পুরনো একটা ভাঙা বাড়ির ইটগুলো ছড়িয়ে একটা অংশে রাস্তা করা হয়েছে। জোড়া টাওয়ারের একটিতে নাকি আছে গুপ্তধন, এই গুজবেই হাল আমলে শতাব্দী প্রাচীন সেই মিনার আজ ভূপতিত। আর দেখি ছাদ ভাঙা অট্টালিকার আনাচে কানাচে শেকড় বাকড় মাকড়শার জালের মত কব্জা করে রেখেছে। থমকে থাকা দেওয়ালগুলোর অন্দরে গুমোট অন্ধকার। শুকনো পাতার আর্তনাদে চমকে শিহরণ জাগে। আগাছায় গজে ওঠা রক্তবর্ণ মাকাল ফল যেন প্রলোভনের হাতছানি। ১৫০০০ প্রাণ যেনো আজ সবাই উদ্ভিদ হয়ে এক নিমেষে চেয়ে আছে এই আগন্তুকের দিকে। একা একা না যাওয়ায় ভালো। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে রাত্রে কি তাদের জটাজালের ভেতর থেকে দপ্ করে ওঠে কোনো হলুদ দুটি চোখ? পরবর্তীকালে কৃত্রিম নীল আবিষ্কার হল। আর ব্রিটেনের যাতাকলে পিষতে শুরু করলো দেশীয় রেশমগুটি। ধীরে ধীরে কুঠি বাড়ির অহংকার হলো ভূ-লুন্ঠিত। গণ্ডুষ করলাম আমরা। ফেরার সময় একটা বাঁশের ব্রীজ পেলাম। সেটা পেরিয়ে জন সাহেবের তৈরি করা রাস্তা দিয়ে হওয়া খেতে খেতে বাড়ি ফিরলাম। পুনশ্চ: কর্মসূত্রে বছর খানেক ডেনমার্কে ছিলাম। আদব কায়দায় অত্যাধুনিকতার ছাপ সর্বত্র সেখানে। কিন্তু প্রায় প্রতিটি শহরে একটি করে সংগ্রহশালা আছে, নেহাতই ফালতু। হাজার বছর আগের ভাইকিংদের জিবনপ্রবাহ কেমন ছিল সেটা সংরক্ষণ করার কি কোনো প্রাসঙ্গিকতা আছে! অথচ দেখুন ওরাই নাকি পৃথিবীর সবথেকে সুখী জাতি।
করোনা পরিস্থিতির মধ্যে প্রথম তিনদিনের জন্য ঝাড়গ্রাম ঘুরে এলাম ।কিছু তথ্য দেয়ার চেষ্টা করছি .....
১) নিজের গাড়ি নিজে ড্রাইভ করে আমরা চারজন গিয়েছিলাম। আমার বাড়ি বেহালা ( কলিকাতা ) থেকে আমাদের ভ্রমণ আবাস ১৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত একেবারে মসৃন অসাধারণ রাস্তা মাঝে শের-ই-পাঞ্জাব এ প্রাতরাশ ( ওদের পরিবেশ ও সবরকম সুরক্ষা ব্যবস্থা অসাধারণ ) করে সাড়ে ৪ ঘন্টায় আমার ঠিকানা বন দফতরের প্রকৃতি পর্যটন আবাস এ পৌঁছেছিলাম গত রবিবার মানে ০৮.১১.২০২০। ২) বড় রাস্তার ধারে বড় হরফে আবাসের নাম এবং দিকনির্দেশ করা আছে কিন্তু বিশাল বিশাল গাছের আড়ালে সুসজ্জিত আধুনিক কুটির প্রথমে ঠাহর হয়না , লাল কাঁকর বিছানো পথ আমাদের পৌঁছে দিল আস্তানার দোরগোড়ায়। প্রথম দর্শনেই প্রেম ,.. হ্যাঁ , আমি চিরকাল শূন্যের প্রেমে পড়েছি , আজও তাই , আসলে শূন্যেই সৃষ্টি শূন্যেই লিন , শূন্যেই পূর্ণ , শূন্যই অবিনশ্বর , বাকি সবই মায়া। তাই একটুকরো নিস্তব্ধতার বুকে নিস্তরঙ্গ তিনদিনের সুখানুভুতি বা প্রেমে পড়া .... ৩) সুমনের মিষ্টি অভ্যর্থনার আনন্দে কিঞ্চিৎ বাধা কেউ লাগেজ নিতে না আসা , বুঝিনি আমাদের সুরক্ষা বলয়ের ওটা ছিল প্রথম পাঠ , মানে কেউই অতিথির কোনো জিনিস স্পর্শ করবেনা।আধুনিক প্রয়োজনীয় সুখ সামগ্রী মানে এ সি ,গিজার , রুম হিটার ,ব্যাটারি লাইট ( বড় জেনারেটর আছে ) বেষ্টিত সুসজ্জিত পরিবেশের মানানসই একেবারে পরিষ্কার ঝকঝকে কুটির। সুমন ঘরের তালা খুলে বলেদিয়েগেলো সমস্তরকম দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে তিনটেদিন নিশ্চিতে কাটান , আপনাদের সম্পূর্ণ সুরক্ষা ও পরিবেশন আমাদের দায়িত্ব, আপনারা আসার ১ ঘন্টা আগে আমরা প্রতিটা জিনিস পরিষ্কার ও স্যানটাইজ করেছি , এই তালা চাবি পারলে একটু স্যানেটাইজ করে নেবেন আর অভ্যর্থনা ঘরে স্যানিটাইজার মেশিন আছে আপনাদের যেকোনোরকম ব্যবহারের জন্য। ৪) স্নান সেরে মধ্যাহ্ন ভোজ এ গেলাম , বলে রাখি থালি সিস্টেম এ পরিছন্ন সুস্বাদু হালকা বাঙালি ধরনের খাবার পাবেন , বিশাল বড় টেবিলে চারজন বেশ দূরত্ব বজায় রেখে বসা , প্রতিটা টেবিল খাবার পর প্রথমে স্প্রে করে তারপর বাসন তুলছে , পরিষ্কারের পর আবার স্প্রে করে তারপর পরের অতিথি বসার ব্যবস্থা। সামগ্রিক চিত্র - ৩ টি কটেজে মোট ১২ জন থাকার ব্যবস্থা , ফরেস্ট ডিপার্টমেন্ট এ অনলাইন বুক করতে পারেন , ব্যক্তিগত অভিমত আমাদের মতো ঘিঞ্জি এলাকার শহর নিবাসীদের এই ধরনের ফাঁকা এলাকায় সতর্কতা নিয়ে বেড়ানোয় কোনো সমস্যা হওয়ার কথা নয় ...
উৎসব শেষে শহর যখন ম্রীয়মাণ , তখনই আনন্দের উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠে সিংভূম , মানডূম অঞ্চল । শুরু হয় কুড়মি জাতির প্রাণের উৎসব 'বাঁদনা ' পরব ।
এই পরবের মূল আঙ্গিক হল ধামসা মাদলের বোলে ধানের শীষ, সিঁদুর আর দীপের আলোকে হাল , জোয়াল , গোয়াল সর্বোপরি গরুকে পুজো করা । বলা যেতে পারে নতুন করে আহ্বান জানানো । এই সময়েই মাটির ঘরগুলোর দেওয়ালে পড়ে নতুন মাটির প্রলেপ । আর সেই দেওয়ালেই অঙ্কিত থাকে অবিশ্বাস্য সুচারু শিল্পকর্ম । লাল নীল হরেক রঙের মেলায় , ঝকঝকে উঠোনে আলপনার বাহার দেখে স্বপ্নপুরী বলে ভুল হয় । ঘরে ঘরে ঢেঁকির শব্দে , ধামসা মাদলের দ্রিমিদ্রিমি বোলে এক মায়াবী পরিবেশের হাতছানি । হরেক রকম পিঠের উৎসব 'বাঁদনা'তে সুন্দরী পুরুলিয়ার সৌন্দর্য্যে বাড়তি পালক হল মানুষগুলোর আন্তরিকতা , মানবিকতা আর সহযোগীতা । আবার কবে তোমাদের সাথে দেখা হবে জানি না । ভালো থেকো সবাই
টাকিতে অনেকেই বেড়াতে গেছেন। বহুবার ছবি দেখেছি, লেখা পড়েছি অনেকের। অনেকদিনের ইচ্ছে ছিল কিন্তু সুযোগ হচ্ছিল না। করোনা সেই সুযোগটা করে দিলো। অবশেষে ঘুরেই এলাম একদিন বাড়ির সবাই মিলে। সকালে বেরিয়ে সারাদিন ঘুরে রাতে ফেরা। ধকল গিয়েছিল খুব। কিন্তু জায়গাটা একবার ঘুরে এলে সেই ধকলটা উপভোগ করা যায়। আর ওখানে 'টাকি ইকো টুরিজম পার্ক' আছে, সময়ের অভাবে সেটা দেখা হয়ে ওঠেনি।
আমার ক্ষেত্রে নতুন হলেও অনেকের ক্ষেত্রেই সেই পুরোনো জায়গা, অনেক পুরোনো স্মৃতি আরও একবার। যদিও বেড়াতে যাওয়ার জায়গা হয়ত পুরোনো হয়না কখনও। যারা ঘুরতে ভালোবাসে তাদের কাছে একই জায়গা নতুন নতুন রূপে ধরা দেয় প্রতিবার। যাওয়ার সময় আমরা গিয়েছিলাম বারাসাত-টাকি রোড ধরে, ফেরার পথে মালঞ্চ হয়ে বাসন্তী হাইওয়ে ধরে ফিরলাম। একটু ঘুরপথ, কিন্তু রাস্তার অবস্থা ভালো এবং তুলনামূলক কম জ্যাম। আমরা ফেরার পথে থুবার মোড়ে দয়াময়ী মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে মাখা সন্দেশ কিনে এনেছিলাম। খুব ভালো লেগেছে। আপনারাও খেয়ে থাকলে জানাবেন কেমন লেগেছে। বিঃ দ্রঃ - ১. লঞ্চে কিন্তু দশজনের বেশি লোক নেওয়া হচ্ছে না এবং লঞ্চ বুক করে ঘুরতে হচ্ছে। যদি দুজন যান তবে দুজনের জন্যই বুক করতে হবে হয়ত। তাই চেষ্টা করুন কম করে চার পাঁচজনের একটা দল যাওয়ার। ২. টাকিতে গেলে অবশ্যই নিজের যে কোনো একটি পরিচয়পত্র (আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, প্যান কার্ড ইত্যাদি) নিয়ে যাবেন। মিনি সুন্দরবন দেখার সময় দেখতে চাওয়া হয়। ৩. টাকিতে খুব ভালো ভালো গামছা পাওয়া যায়, বসিরহাটের গামছা। যদি দরকার লাগে কিনতে পারেন। ৪. ফুচকাপ্রেমীদের জন্য সুখবর হল একমাত্র টাকিতেই এখনও পর্যন্ত দশ টাকায় আটটা (ফাউ নিয়ে) ফুচকা দেওয়া হয়। এই ব্যাপারটা আমার বেশি ভালো লেগেছে। ৫. আশেপাশের ঘোরাঘুরিটা টোটোতেই করবেন, গাড়ি ঢুকবে না সব জায়গায়। তাছাড়া ওখানকার লোকেরা যত ভালোভাবে ঘোরাতে পারবে ড্রাইভার অত ভালোভাবে জায়গা নাও চিনতে পারে। গুগল ম্যাপের ভরসায় থাকবেন না, নেটওয়ার্কের খুব সমস্যা। ৬. Last but not the least, মিনি সুন্দরবন ব্রীজের পর থেকে ইছামতীর একদম সামনে যাওয়ার কিন্তু এখনও সেভাবে টানা রাস্তা নেই, নতুন করে সব তৈরি হচ্ছে। ওইটুকু রাস্তা খুব সাবধানে যেতে হবে। জানিনা এতদিনে তৈরি হয়ে গেছে কি না, হলে তো কোনো অসুবিধাই নেই।
অনেকেই একদিনের ছুটিতে কম খরচায় কোথায় ঘুরতে যাবে ভাবেন, তাদের জন্য আদর্শ টাকি। একদিনের ছুটিতে টুক করে টাকিতে ....
আমরাও এইরকমই একদিনের ছুটিতে বেড়িয়ে পড়েছিলাম টাকির উদ্দেশ্যে। শুনেছিলাম খুব সুন্দর নাকি জায়গাটা। যদিও সামনে থেকে দেখে সুন্দর কথাটাও কম মনে হয়েছিল। ইছামতি নদীর তীরে মাঝিদের নৌকা বাওয়া, নদীর জলের শব্দ, সে এক অন্য রকমের ভালোলাগা। এখানেই নদীর একদিকে ভারত ও ওপর দিকে বাংলাদেশ, নদীর মাঝেই আছে আন্তর্জাতিক সীমারেখা। এক দিনে টোটো করে ঘুরে দেখা যায় টাকির দ্রষ্টব্য স্থানগুলি। টাকির দ্রষ্টব্য স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম ইছামতি নদীর ধারে থাকা ছোটো ম্যানগ্রোভ জঙ্গল যা গোলপাতার জঙ্গল বা মিনি সুন্দরবন নামেই পরিচিত। এই স্থান প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য আদর্শ। এছাড়াও টাকিতে বেশ কয়েকটি জমিদার বাড়ি রয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম রায়চৌধুরীদের জমিদার বাড়ি। জেনারেল শংকর রায়চৌধুরী এদের উত্তরসূরি। বিশাল এই জমিদার বাড়ির সাথেই আছে তাদের দূর্গাদালান যেখানে প্রতি বছর দূর্গা পূজা হয়। এছাড়াও টাকি রাজবাড়ির ভগ্নাংশ এখনও রয়েছে টাকিতে, টাকি রাজবাড়ির খুব কাছেই আছে জমিদার হরিনারায়ণ ঘোষদের দূর্গা দালান। বিশাল এই দূর্গাদালান দেখলে বোঝা যায় টাকির অতিতের প্রভাব প্রতিপত্তির কথা। পাঁচ খিলানের এই দূর্গাদালানে প্রত্যেক বছর মা দূর্গার আরাধনা করা হয়। টাকি আরও দর্শনীয় হয়ে ওঠে দূর্গা দশমীর দিন। সেইদিন দুই দেশের মানুষেরা একত্রিত হয় নদী বক্ষে। এছাড়াও জয়া এহসান এবং আবির চট্টোপাধ্যায় অভিনীত এবং কৌশিক গাঙ্গুলী পরিচালিত 'বিসর্জন' সিনেমার শুটিং হয়েছিল এখানেই। টাকির আরও এক দ্রষ্টব্য স্থান টাকির জোড়া শিব মন্দির যার সামনেই আছে এক প্রকান্ড পুকুর। প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো এই মন্দির। আমার দেখা স্থানগুলো আপনাদের সাথে ভাগ করে নিলাম কেমন লাগলো এই প্রাকৃতিক সুন্দর জায়গাটি অবশ্যই জানাবেন? আপনারাও কি গেছিলেন এই স্থানে তবে আপনাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন আমাদের সাথে
বিভূতিভূষণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য (পূর্বনাম পারমাদান অভয়ারণ্য) ১৯৮০ সালে বিভূতিভূষণের নামে নামাঙ্কিত করা হয় এই অভয়ারণ্যকে। পশ্চিমবঙ্গের উত্তর চব্বিশ পরগনার বনগাঁ মহকুমায় অবস্থিত একটিভ অভয়ারণ্য। এটি একটি পিকনিক স্পট হিসাবে জনপ্রিয় ও এটিকে মজায় ভরা সপ্তাহান্তে ভ্রমণ ব্যয়ের জন্য একটি সুন্দর জায়গা হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ৯২ হেক্টর জুড়ে বিস্তৃত অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে সুন্দর ইছামতি নদী প্রবাহিত হয়েছে। আপনি স্থানীয় গ্রামগুলিতে যেতে পাড়েনএবং ইছামতী নদীতে একটি নৌকা যাত্রা উপভোগ করতে পারেন। নদীর গা ঘেঁষে শিমুল, অর্জুন, শিশু, শিরীষ এছাড়া অসংখ্য পাখি এবং প্রাচীন উদ্ভিদের বাসস্থান। এই জঙ্গলের শোভা বাড়াচ্ছে ৪০০-ও বেশি হরিণ, বেশ অনেক রকমের পাখি আর লেঙ্গুড় বা বাঁদর। জঙ্গলের মূল অংশ লোহার খাঁচা দিয়ে ঘেরা। হাঁটার পথটা খাঁচার চারিপাশ দিয়ে। হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝেই চোখে পরে যায় দু-একটা হরিণ এদিক সেদিক ছুটে বেড়াচ্ছে। তবে তাদের দেখার জন্য সবচেয়ে ভাল সময় হল যখন তাদের বন কর্মকর্তাদের দ্বারা খাওয়ানো হয়। তাদের খাওয়ানো সময় বিকাল ৪ টা এবং সকাল ৯ টা। ভিতরে চিলড্রেন্স পার্ক ছাড়াও রয়েছে ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানা আর বন দপ্তরের ট্যুরিস্ট লজ।
কলকাতা থেকে দূরত্ব মাত্র ৯৭ কিলোমিটার। কলকাতা (শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন) থেকে কলকাতা থেকে বনগাঁ যান এবং তারপর 92A বাসে নলডুগরি (নলডুগরি বাস স্ট্যান্ড) থেকে অটো ,টোটো । এছাড়া রানাঘাট অথবা চাকদহ রেল স্টেশন থেকে সিন্দ্রানী যাবার বাস , সিন্দ্রানী থেকে আটো , টোটো তে পৌঁছে যান বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য প্রবেশমূল্য ৬০ টাকা এবং যানবাহনের জন্য আলাদা । _____________ Nikon D3400 (18-55,70-300) Google Map Bibhutibhushan Wildlife Sanctuary Parmadan, West Bengal 741238 https://maps.app.goo.gl/LPbUUfbkb8dvsaYKA
আমাদের মৌসুনী দ্বীপ ভ্রমণের গল্প
আমার কলমে করোনার প্রকোপ বোঝার পূর্বে গত ১৪-১৫ই মার্চ,২০২০ আমরা ১০ জন বান্ধবী আর ৪ টে ক্ষুদে মিলে বেড়াতে গিয়েছিলাম মৌসুনী দ্বীপ ।। ১০ জন বান্ধবীর অনেকেই অনেককে আগে চিনতাম না, কিন্তু একসাথে এক রাত, দুদিন কাটিয়ে তৈরি হল বন্ধুত্ব ।। আমাদের এক সিনিয়র দিদিই ট্রিপটা অ্যারেঞ্জ করেছিল ।। মৌসুনী দ্বীপের ব্যাকপ্যাকারস্ ক্যাম্প আমরা যাবার দিন কুড়ি আগেই বুক করা হয়েছিল ।। আমরা ছিলাম মোট ১৪ জন, সেই মত ক্যাম্প থেকে দেওয়া হয়েছিল ৩ টে বড় টেণ্ট আর ২ টো ছোট টেন্ট ।। আর একটা wash room দিয়েছিল শুধু আমাদের ব্যবহারের জন্য ।। এছাড়াও একটা common wash room দিয়েছিল ।। ট্রিপটা যেমন ছিল adventurous, তেমনি খুব কম বাজেটের ।। Lodging and fooding এ আমাদের বড়দের লেগেছিল ১১০০ টাকা করে আর বাচ্চা দের ৮০০ টাকা করে ।। ট্রিপ টা শুরু থেকে শেষ আমরা ভরপুর আনন্দ করেছি ।। শিয়ালদহ স্টেশন থেকে নামখানা লোকালে আমাদের যাত্রা ।। ঘুরতে যাবার উত্তেজনায় সময়ের অনেক আগেই আমরা স্টেশনে পৌঁছে যাই ।। যথা সময়ে ট্রেনে ওঠা, এবং এতজন মিলে হৈ হুল্লোড় করতে করতে চা ও টায়ের মাধ্যমে এগিয়ে চলা ।। এরই মাঝে আমাদের সেই সিনিয়র দিদি ক্যাম্পে ফোন করে 3 kg chicken এর order করে দিলেন সন্ধ্যেবেলার chicken burbecue এর উদ্দেশ্যে (Rs 350/kg), সাথে আমাদের মজার দিদিভাই ভালো করে ম্যারিনেট করে রাখার recipe টাও বলে দিলেন ।। এ সমস্ত মজার মধ্যেই ১০.৩০ টা নাগাদ আমরা পৌঁছে গেলাম নামখানা স্টেশন ।। মৌসুনী দ্বীপে পৌঁছাতে নামখানা থেকে নদী পার হতে হয় ।। এই নদী পরপারের জন্য দুটি ঘাট আছে, একটি হল হুজ্জুতের ঘাট, আর একটি দুর্গাপুর ঘাট ।। আমরা নামখানা স্টেশন থেকে টোটো করে পৌঁছে গেলাম হুজ্জুতের ঘাট ।। সেখানে গিয়ে দেখলাম নৌকার জন্য লম্বা লাইন ।। নৌকার ভাড়া মাত্র ৩ টাকা ।। বেশ খানিকক্ষণ লাইন দিয়ে নৌকায় উঠলাম, তারপর অপরদিকে পৌঁছে আবারও টোটো করে পৌঁছে গেলাম ব্যাকপ্যাকারস্ ক্যাম্প ।। তখন প্রায় দুপুর ১ টা আর এত journey তে আমরাও বেশ ক্লান্ত, বিশেষ করে ক্ষুদে সদস্যরা, পেটে ছুঁচোর ডন ।। ক্যাম্পে যেতেই তারা ডাবের জল দিয়ে welcome জানালো ।। তারপর আমাদের টেণ্ট দিয়ে দিল ।। সমুদ্রের পাশেই টেণ্ট, এমন সুন্দর পরিবেশ, দেখেই তো আনন্দে ক্লান্তি উধাও ।। নিজেরা ফ্রেশ হয়ে লাঞ্চ টা করে নেবোই ঠিক হল, কারণ তখন ভালোই বেলা হয়ে গেছে, সাথে বয়স্ক দিদিরা আছে, বাচ্চারা আছে ।। লাঞ্চে ছিল ভাত, ডাল, বোঁটা সমেত বেগুন ভাজা, দুটো সব্জি, টাটকা মাছের ঝোল ।। লাঞ্চ সেরেই সমুদ্রে ।। একদমই রোদ ছিল না ।। মেঘলা আবহাওয়া ।। সমুদ্রে খানিকক্ষণ দাপাদাপি, সাথে ছিল বাচ্চা পার্টি ।। তবে জল টা বড্ড ঘোলাটে ।। তারপর আবার টেন্টে ঢুকে, change করে আবারও সবাই মিলে সমুদ্রের চর ধরে হেঁটে চলা ।। বাঁধা রয়েছে মাছ ধরার নৌকা ।। আশেপাশের ক্যাম্পগুলোও একটু ঘুরে নিলাম ।। যেটা বুঝলাম সবই একই রকম ।। আর তার সাথে তো আছেই মধ্যে মধ্যে দোলায় দোলা আর ফোটো সেশ্যান ।। এর মাঝেই সূর্য্য ডুবে সন্ধ্যা নেমেছে ।। সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে দেখা সূর্যাস্ত ।। তারপর আমরা ক্যাম্পে ঢুকে খাবারের টেবিলে গোল করে বসলাম ।। মুড়ি, পেঁয়াজি, চা ও হাজির ।। সাথে শুরু নিজেদের আড্ডা, সুখ দুঃখের গল্প ।। সবাই সবাইকে চেনা, জানা ।। ৭ টা নাগাদ শুরু হল ক্যাম্প ফায়ার ।। তারপর chicken burbecue ।। সাথে cold drinks, যা আমাদের মজার সিনিয়র দিদিই খেয়াল করে নিয়ে গিয়েছিল ।। বড় মধুর সে সন্ধ্যা ।। এরপর দিদি arrange করল housing game।। সবাই মিলে খেলতে দারুণ লাগল ।। দিদি আবার তিনটে prize নিয়ে গিয়েছিল 1st, 2nd, 3rd এর জন্য ।। বলার অপেক্ষা রাখে না অসাধারণ এক ভালোবাসার টানে ভরপুর একটি ট্রিপ ।। এরপর শুরু হল আমাদের আন্ত্যাক্ষরী।। Group A, Group B ভাগও হল ।। কিন্তু আমরা কোনও Group ই তো হারতে রাজী না ।। Excitement একদম তুঙ্গে ।। এমনি ভাবেই dinner time এসে গেল ।। তারই মাঝে পাশেই তো সমুদ্র, একটু বিচে হাওয়ায় ঘুরতে গেলাম ।। আমাদের ছোট টেন্ট গুলোতে light ছিল না ।। তাই mobile flush ও torch দিয়েই প্রয়োজন মিটিয়ে নেওয়া ।। Dinner এ ছিল রুটি, আলুভাজা, তরকারি, চিকেন, স্যালাড ।। এরপর গল্প গুজব করতে করতে আস্তে আস্তে পাশাপাশি টেণ্টে ঘুমিয়ে পড়া ।।
ভোর ৫.৩০ টার আগে উঠেই আবার বিচে, সূর্যদয় ।। একটু সমুদ্রে নামা ।। ফোটোসেশ্যান ।। তারপর তো ফেরার তোড়জোড় ।। সত্যি বলতে কিছুটা মনখারাপ ।। এর মাঝেই সবাইকে চা বিস্কুট দিয়ে দিয়েছে ক্যাম্পের দাদা।। বারবার আমাদের সবার মুখে একটাই কথা, ইশ্ আর একটা দিন থাকতে পারলে !! পরের প্ল্যান কিন্তু দুরাতের করব, ইত্যাদি ।। কিন্তু নিত্য রুটিনের চাপে বেশি দিন কাটানোর সুযোগ তো বড় একটা হয়ে ওঠে না ।। যাই হোক বেরোনোর জন্য তৈরি হয়েই breakfast টেবিলে ।। Breakfast এ ছিল লুচি, তরকারি আর ডিম সিদ্ধ ।। Breakfast সেরে টেন্টে একটু Group Photosuit করে ১০.৩০ টা নাগাদ আমরা বেরিয়ে পড়লাম ।। ক্যাম্পের পরামর্শ মতই আমরা টোটো ধরে পৌঁছে গেলাম বাগডাঙা খেয়া ঘাট ।। ওখানে লাইন ছিল না, কিন্তু আমরা যেতে যেতেই একটা নৌকা চলে গেল ।। তাই আধ ঘন্টা অপেক্ষা করে পরের নৌকাতেই উঠতে হল ।। তারপর খেয়া পেরিয়ে সবুজ প্রকৃতির মধ্য দিয়ে একটু হেঁটে এগিয়ে আমরা একটা গাড়ি ধরে পৌঁছে গেলাম নামখানা স্টেশন ।। তারপর স্টেশনে একটু খাওয়া দাওয়া সেরে আমরা উঠে পড়লাম ফেরার ট্রেনে ।। গল্পের মধ্যে দিয়ে এগিয়ে চললাম ফেরার পথে ।। প্ল্যান হচ্ছিল পরের কিছু ট্রিপের ।। ইতিমধ্যেই ক্ষুদেদের মায়েদের ফোনে মেসেজ আসতে লাগল ১৫ দিন স্কুল বন্ধের ।। আর একটু এগোনোর পর খবর এলো বেলুড় মঠ বন্ধ হয়ে গেল, আরও কিছু দর্শনীয় স্থান ।। আমরাও সাথে সাথে পরের সপ্তাহের ডে ট্রিপ cancel করে দিলাম ।। তারপর আর কি, সবার জানা ।। লক ডাউন, করোনার বিরুদ্ধে গৃহবন্দী থেকে সমবেত সংগ্রাম ।। মনটাও এতটা খারাপ হয়ে গিয়েছিল সব সময় আতঙ্কের খবরে, যে ট্রিপের গল্প টা আর লিখে ওঠাই হয় নি ।। জীবনে তো অনেক বাধা বিপত্তি এলো, অনেকেরই নানা দিকে এই মহামারীর প্রকোপে জীবন টালমাটাল ।। আমারও তাই ।। রুজিরোজগার বন্ধ, সংগ্রাম করে চলেছি সবাই আবার সব ঠিক হবে এই বিশ্বাসে ।। তবু এখন একটু আধটু এদিক ওদিক বান্ধবী রা মিলে বেরোচ্ছি মুক্ত অক্সিজেনে ।। আর সেই অক্সিজেনই আবার আমায় এনে দিল ট্রিপের গল্প লেখার Energy ।। খুব তাড়াতাড়ি সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে, আবার বেরিয়ে পড়ব এমনি কোনও ট্রিপে এই আশাতেই বাঁচি ।। স্মরণীয় ও প্রচন্ড ভাললাগার একটি ট্রিপ আমাদের মৌসুনী আইল্যান্ড ।।
ভ্রমণ মানে আমার কাছে জীবনে বাঁচার অঙ্গীকার। ভ্রমণ মানেই নতুন জায়গার বিশ্লেষণ, তাকে নিয়ে মূল্যায়ন, অভিযান করা আর অপ্রত্যাশিত ঘটনার সম্মুখীন হওয়া। এক কথায় বলা যেতে পারে এই বৃহৎ পৃথিবীর এক ক্ষুদ্র জায়গায় পদার্পণ
আজ আমি আপনাদের সাথে একটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে চলেছি.. কোরোনার মতো মহামারীর আগমনে জীবনটা যখন ঘরবন্দি ঠিক সেই সময়েই আমি, আমার এক দাদা, দিদি আর জামাইবাবু মিলে প্ল্যান করে ফেললাম একটা অজানার উদ্দেশে রওনা দেওয়ার.. " আজি দক্ষিণ দুয়ার খোলা, এসো হে এসো হে... দক্ষিণ সমীরণ সাথে।" দক্ষিণ বলতেই অনেকে ভ্রুকুটি উঠিয়ে নাক সিঁটকে ওঠেন কিন্তু যারা প্রকৃতিপ্রেমিক তাদের কাছে উত্তর হোক বা দক্ষিণ, প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যই আসল উপভোগের বিষয় তাই এবার যাত্রা পথ ও ছিল দক্ষিণমুখী..ভোর 4 টের সময় ঘুমের ধর্মঘট ভাঙালো এলার্মিং টেলিফোন, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে স্কুটি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম.. যাত্রা শুরু করেছিলাম দক্ষিণ 24 পরগনার সুভাষগ্রাম থেকে...সকালের সূর্যোদয় টা দেখতে দেখতে কখন যে পৌঁছে গেলাম নিশ্চিন্তপুরে একদমই টের পেলাম না..ওখানে একটু দাঁড়িয়ে চা খেয়ে আবার রওনা দিলাম.. একেবারে সোজা রাস্তা, গাড়িও ছুটলো 60-70 স্পীডে.. ঠিক তখনি সেই উত্তমকুমারের সিনেমার গান টা মনে পরে গেল "এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো তুমি বলোতো" এইভাবে কাকদ্বীপ পেরিয়ে উঠে পড়লাম সদ্য নির্মিত নামখানা ব্রিজে.. সাথে ঝলমলে হালকা রোদ শরতের আকাশের ছানা কাটা মেঘ..এইভাবেই আমরা পৌঁছে গেলাম হুজ্জুতের ঘাটে। তারপর নৌকা তে বাইক, স্কুটি তুলে নদীর স্রোতে ভাসতে ভাসতে 10 মিনিটে পৌঁছে গেলাম বিপরীত প্রান্তে.. তবে এই প্রথম বার গাড়ি নৌকাতে তুলে নদী পেরোনোর অভিজ্ঞতা হলো আর এটা আমার চিরস্মরণীয় হয়েথাকবে তারপর গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে 5 km যাওয়ার পর আমরা পৌঁছলাম মৌসুনি দ্বীপে, হ্যাঁ এটাই সেই মৌসুনি দ্বীপ যেখানে আসার জন্য মানুষ এখন অস্থির হয়ে উঠেছে.. পৌঁছানোর সাথে সাথে মিললো ডাবের জল.. তারপর আমরা টেন্ট এবং কটেজে ব্যাগ রেখে চলে যাই সমুদ্রে স্নানে করতে..দুপুর 1 টায় লাঞ্চ করলাম(ভাত, ডাল, আলুভাজা, মাছ ভাজা, বাঁধাকপি আলুর চচ্চড়ি, মাছের কালিয়া) । দুপুরের খাওয়া সেরে একটু রেস্ট নিয়ে নিলাম..আমার ওখানে যাওয়ার আসল উদেশ্য ছিল বিকেলে সূর্যাস্ত দেখার.. আর ইচ্ছা টা পূর্ণ হলো খুব ভালো ভাবেই.. এ যেন এক অপূর্ব দৃশ্য, নিচে নদী উপরে আকাশ আর মাঝে সেই দিগন্ত রাঙানো সূর্য..বেশ কিছু ছবি তোলার পর ফিরে আসলাম Camp এ। সন্ধ্যায় শুরু হলো Camp fire.. অসাধারণ একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো মনের ভিতর..শহরের কলরব থেকে বিচ্ছিন্ন থেকে দোলনায় বসে chicken barbecue খাওয়ার মধ্যে একটা আলাদা সুখও ছিল বটে। সাথে বাঙালির প্রিয় মুড়ি আর পিঁয়াজিও ছিল..রাত 10 টায় ডিনার(ভাত, আলুভাজা, চিকেন কষা) করে ঢুকে পড়লাম টেন্টে.. রাতে সমুদ্রের জোয়ারের ঢেউয়ের শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে গভীর নিদ্রায় গেলাম বুঝতেও পারিনি.. সকালের সূর্যোদয়ের সাথে সাথে ঘুম ভাঙলো.. টেন্টের চেইনটা খুলেই সমুদ্র দেখার সেই ফিলিংস টা কখনও শব্দ দিয়ে ব্যক্ত করা যাবেনা এভাবেই সময় কেটে গেল.. সকালের ব্রেকফাস্ট(লুচি,ডিম, ঘুগনি) করে রওনা দিলাম আবার সেই কর্মব্যাস্ত জীবনের উদ্দেশে..থেকে গেল একটা অপূর্ণ ইচ্ছা, যেন আরো একটা দিন ওখানে থাকতে ইচ্ছা করছিলো বারবার.. তবে উপায় ছিলোনা আর কি.." আবার আসিব ফিরে এই সমুদ্রের তীরে " এই বলেই মনকে শান্তনা দিলাম.. Backpackers' Camp এর সহযোগিতার জন্যই আমাদের এই ভ্রমণ টা সার্থক হলো.. অসংখ্য ধন্যবাদ ক্যাম্পের সমস্ত দাদা, দিদি, ভাই দের কে যারা আমাদের জন্য এতো ভালো রান্না করেছেন, এতো ভালো ব্যাবস্তা করেছেন..
কালী পুজোর প্রাক্কালে কিছু জাগ্রত প্রাচীন মন্দিরের দর্শন। আজকে মা সিদ্ধেশ্বরী কালী মন্দির উওর চব্বিশ পরগনার বারাসত মহকুমার হাবড়া থানার অন্তর্গত রাউতরা পঞ্চায়েতের মধ্যে দিয়ে মজে যাওয়া বিদ্যাধরী নদীর খালের ব্রিজ পেরিয়ে ডানদিকের রাস্তা ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলে শ্বেতপুরের মা সিদ্ধেশ্বরী কালী। কথা হচ্ছিল বর্তমান সেবাইত নিমাই গাঙ্গুলীর সাথে, ঐনি যা জানেন মা সিদ্ধেশ্বরী সম্পর্কে তাই জানালেন।
আজ থেকে প্রায় পৌনে চারশ বছর আগে বর্তমান মন্দির থেকে কিছুটা দূরে একটি পোড়ো বাড়িতে মায়ের শিলাখন্ড বা মূর্তি ছিল। তারপর কোন কারণে মা সিদ্ধেশ্বরী খালের পারে একটি ঘরে অনেকদিন ছিলেন। সেই ঘরটি এখন আছে কিন্তু বন্ধ থাকে, পূজা হয় না, বলে বন্ধ থাকে। ঘরটি আমার দর্শন করা হয়নি। মায়ের মৃন্ময়ী মূর্তির তলায় মায়ের প্রস্তর মূর্তিটি রয়েছে। বর্তমান মৃন্ময়ী মূর্তির বয়স প্রায় চল্লিশ বছর। জৈষ্ঠ্য মাসের শেষ শনিবার মায়ের প্রতিষ্ঠা দিবস। প্রতি বছর তার আগে মায়ের অঙ্গরাগ করা হয়। কার্তিক মাসের অমাবস্যায় ধুমধাম করে পূজা হয় ও বলি হয়। বর্তমান শ্বেতপাথরের মন্দির নির্মাণ করার আগে এই স্থানে ছোট টালির ঘরে মায়ের পূজা হত।গর্ভগৃহে রাজরাজেশ্বরী বেশে অবস্থান করছেন মা সিদ্ধেশ্বরী। মা চতুর্ভুজা, এলোকেশী, ললজিহ্বা, মাথায় স্বর্ণোজ্জ্বল মুকুট, লাল পেড়ে সাদা গরদের শাড়ি পরা এক জীবন্ত প্রশান্ত মূর্তিতে ভোলামহেশ্বেরর বুকের উপর দাঁড়িয়ে আছেন। মায়ের বামহাতের উপরের হাতে খড়্গ ও নীচের হাতে মুন্ডাংশ। দক্ষিণহস্তে উপরে বরাভয়দায়িনী ও নীচের হাতে রুধির হাতে। মায়ের রোজ দুপুরে অন্ন অন্ন ভোগ হয়। সন্ধ্যাবেলায় জল বাতাসা, কখনো কখনো ফল। মন্দির খোলা থাকে সকাল আটটা থেকে দুপুর দেড়টা। বিকেলে পাঁচটা থেকে সাতটা। পথ নির্দেশ : বারাসত চাঁপাডালি মোড় থেকে হাবড়া বা বনগাঁ গামী বিড়া চৌমাথা। বিড়া চৌমাথা থেকে টোটো করে সহজেই পৌঁছানো যায় এই মাতৃ মন্দিরে। এছাড়া বনগাঁ লাইনের বিড়া রেল স্টেশন নেমে টোটো বা অটো করেও পৌঁছানো যায় মন্দিরে। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |