নীলাচল পর্বতের ওপর ভারতের ধর্মীয় ও পৌরাণিক স্হান ৫১ সতীপিঠের অন্যতম কামাখ্যা।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা অনুসারে দেবাদিদেব মহাদেবে যখন সতীর মৃতদেহ নিয়ে ভৈবর নৃত্য করছিলেন সেইসময় সেই নৃত্যের কারনে যে প্রলয়ের সৃষ্টি হয় তার থেকে জগৎ সংসারকে রক্ষা করার জন্য বিষ্নু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেন এবং স্তব্ধ করেন মহাদেবের প্রলয় নৃত্য। সেই ছিন্নভিন্ন দেহাংশের মধ্যে সতীর যোনি এখানে পতিত হয়। সেই থেকেই কামাখ্যা হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। আমার কামাখ্যা ভ্রমণ প্রথম বাবা মায়ের হাত ধরেইতখন আমি একপ্রকার পরিনত না হলেও বালকই বলা চলে। আমার এক মামা L.IC র কর্মচারী হওয়ার সুবাদে ছিলাম ব্রহ্মপুত্রের ধারে তার আবাসনে। ম্মৃতির পাতায় সেই সময়ের যেটুকু ধরা আছে তা হলো কামাখ্যা মন্দির যাওয়ার রাস্তাটি জঙ্গলাকীর্ণ। ব্রহ্মপুত্র অতি মনোরম নদ। পরবর্তী কালে আমি পুনরায় আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আসাম সহ মেঘালয় ভ্রমনের সময় আবার যাই কামাখ্যায়।সেই স্মৃতি আমার ডাইরী আর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আজকের এই লেখা। তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান এই কামাখ্যা।সম্ভবত এই মন্দিরের নির্মাণ কাল ১৫৬৩-১৫৬৪সাল। ঐ জায়গায় পুরাতন একটি মন্দির তার বহুকাল পূর্বেই ছিল।সম্ভবত ৩৫০-৬৫০খৃষ্টাব্দ পূর্বে এই জায়গাকে কামরূপ রাজ্য বলা হোতো এবং সেই রাজবংশ ছিলো বর্মন রাজবংশ।তখন এখানে দেবী পুজিত হতেন অব্রাহ্মন কিরাত বা ব্যাধ সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবী হিসাবে। কথিত আছে,কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই মন্দির পুনপ্রবর্তন করেন এবং তার পুত্র নরনারায়ন ১৫৬৫ খীষ্টাব্দেএই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।পরে আহোম রাজ্যের রাজা তাকে আরো সমৃদ্ধ করেন। জনশ্রুতি আছে সুলেমান কিরানির রাজত্বকালে (১৫৬৬-১৫৭২) তার সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দির ধ্বংস করেন। তবে ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায় আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ১৪৯৮ খৃষ্টাব্দে কামতা রাজ্য আক্রমণ করলে এই মন্দির ধ্বংস হয়। অহম রাজা জয়ধ্বজ সিংহ আসাম জয় করেন ১৬৫৮খিষ্টাব্দে এবং তারই উদ্দোগে মন্দিরের সংস্কার হয়। পরবর্তী রাজা রূদ্র সিংহ(১৬৯৬-১৭১৪) যখন বৃদ্ধ হন তখন তিনি দীক্ষা গ্রহণ করতে চান কিন্তু অসুবিধা তিনি ছোট হয়ে যাবেন এই ভাবনায় রাজ্যের কোনো ব্রাহ্মনের কাছে মাথা নত করতে পারবেন না। সেই কারনেইএই সময় আহ্বান জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের মালিপোতার বিশিষ্ট শাক্ত ব্রাহ্মন কৃষ্ণরাজের। কিন্তু কৃষ্ণরাজ শর্ত দেন বিনিময়ে তাকে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব দেওয়ার। এই হিসাবেই কৃষ্ণরাজের হাতে আসে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব।রাজা রূদ্র সিংহের মৃত্যুর পর তার পুত্র শিব সিংহ কৃষ্ণরাজকে কামাখ্যা ও তার সংলগ্ন ভূখন্ড দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে প্রদান করেন। কৃষ্ণরাজ ও তার বংশধরদের পার্বতীয়া গোঁসাই বলা হোতো। কামাখ্যাকে বলা হয় জাদুটোনার,তন্ত্র সাধনার দেশ। অরণ্যের নির্জন পাকদন্ডীর পথে এখানে নাকি দেখা মেলে ভুত পেত্নী,ডাকিনি যোগিনীর। না!আমার নজরে তন্ত্র সাধনার কিছু সাধু ছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। গুয়াহাটি থেকে কামাখ্যা মন্দির যাওয়া যায়। নিলাচল পর্বতের ৮০০মিটার উঁচুতে এই মন্দির। দশ মহাবিদ্যার মন্দির বলা হয় এই মন্দিরকে। এখানে আছে"ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা,তারা,মাতসী, ভৈরবী,বগলামূখী,ধূমবতী,কালী,কমলা, ত্রিপুরেশ্বরী"এই দশ দেবীর মন্দির। মূল মন্দিরের তিনটি প্রকোষ্ঠ আছে,গর্ভগৃহের শেষে সিঁড়ির শেষ ধাপের পর এক যোনির আকৃতির পাথরের ফাটল থেকে অবিরাম জলের ধারা প্রবাহিত হয়। এই মন্দিরকে ঘিরে নানারকমের জনশ্রুতি ও প্রবাদ রয়েছে।তবে হিন্দু ধর্মের অন্যতম একটা জায়গা হিসাবে এর পরিচিতি। অম্বুবাচী,দূর্গাপূজা ও কালীপূজার সময় এখানে বিশেষ মেলা বসে। এখানে বলিদান প্রথা চালু আছে। আমরা কামাখ্যা মন্দিরের আগেই একটা সমতল জায়গায় গাড়ি থেকে নেমে ঐ ঝোপঝাড় ও জঙ্গুলে চড়াই রাস্তা দিয়েই গেছিলাম। বহু ধরনের সাধূ সন্যাসীদেরও দেখেছিলাম। পাশেই আরেকটি পাহাড়ি চুড়া আছে ,তার নাম বশিষ্ট পাহাড় । সেই বশিষ্ট পাহাড়,আর সেই পাহাড়ের নিচে তার কোল দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রকে অনেক খানি উপর থেকে দেখা আর দেখা ঐ দুরের পাহাড়ের মাথায় ছবির মতো সাজানো ঘরবাড়ী দেখার অনুভূতিই আলাদা। ফেরার পথে ঐ ব্রহ্মপুত্রের ওপর এক ভাসমান রেষ্টুরেন্টে বসে চা টিফিন সহযোগে টলটলে জলের ঢেউ তোলা নদীকে দেখা আর তার বুকে ভেসে বেড়ানো নৌকাকে দেখার মধ্যেও ছিলো এক অন্য ধরনের সুখকর অনুভূতি।
Post By-Chandan Dutta Roy
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |