কামাখ্যা, বিভিন্ন সতীপীঠের মধ্যে একটি। অসমের রাজধানী গুয়াহাটি শহর থেকে মাত্র দশ কিমি দূরে নীলাচল পাহাড়ের উপর অবস্থিত এই বিশ্ব বিখ্যাত ও সিদ্ধ মন্দির 'কামাখ্যা'।
মূল মন্দিরটি ষোড়শ শতকে মুসলিম আক্রমনে বিনষ্ট হয়ে গেলেও , বর্তমানে মন্দির টি 1665 সালে কোচবিহারের রাজা নরনারায়ন তৈরি করেন।মৌচাকের ঢঙে শিখর- প্রাচীন অহোম স্থাপত্যের নিদর্শন এই মন্দির। গর্বগৃহে দেবী এখানে 'কামাখ্যা' অর্থাৎ কালী রূপে পূজিতা। 51 সতীপীঠের একপীঠ এই মন্দির।অম্বুবাচীতে এর বাৎসরিক উৎসব। তবে তখন তিন দিন বন্ধ থাকে মন্দিরের দরজা। বর্তমানে প্রাচীন গর্বগৃহ টিকে তেমন রেখেই মন্দিরটিকে নতুন ভাবে সাজানো হচ্ছে। মন্দিরের আর একটি বিশেষ আর্কষন এর ভোগ। প্রতিদিন দুপুরে এখানে সকল কেই ভোগ খাওয়ানো হয়ে থাকে, এর জন্য কোনোই মূল্য নেওয়া হয় না। তবে দানপাত্রে যে যা পারে দিয়ে সাহায্য করে থাকে। আমি ব্যক্তিগত ভাবে বলতে পারি আমি আজ পর্যন্ত যতো স্থানে ভোগ প্রসাদ গ্রহন করেছি সব থেকে আলাদা এখানের ভোগ। অবশ্যই এখানে গিয়ে একদিন ভোগ গ্রহনের চেষ্টা করবেন। কামাখ্যা মন্দির থেকে কিছু দূরেই পাহাড়ের শৃঙ্গে অবস্থিত ' ভুবনেশ্বরী মাতা'। রাতের দিকে এখান থেকে কামাখ্যা শহর টিকে দেখা এক অতিরিক্ত আকর্ষন। মনে হয় যেন হাজার তারার মালায় সাজানো কোনো শহর। এই দৃশ্য সত্যিই অপূর্ব ও চিরস্থায়ী। যাত্রাপথ: আমরা 35 জনের একটি ছোটো দল লক্ষ্মীপূজার দিন ' সরাইঘাট এক্সপ্রেস ' যেটি হাওড়া থেকে 3:50 ছেড়ে পরের দিন সকাল দশটার মধ্যেই পৌছে দিয়েছিল গুয়াহাটি। সেখান থেকে লোকাল বাসেই আমরা পৌছাই 'কাছারী' নামক একটি স্থানে। গুয়াহাটির কোর্ট অবস্থিত বলেই হয়তো স্থানটির নাম কাছারী। সেখান থেকে আবার একটি লোকাল বাস ধরেই পৌছে যাই কামাখ্যা মন্দির।
গুয়াহাটি শহরের প্রানকেন্দ্র নেহেরু পার্কের বিপরীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে অবস্থিত কাছারী প্রাঙ্গন। আর এই কাছারী অর্থাৎ আদালতের বিপরীতেই ব্রহ্মপুত্রের মাঝে গড়ে উঠেছে 'উমানন্দ পাহাড়' বা ' পীকক আইল্যান্ড'।
1664 সালে তৈরি হওয়া এই মন্দিরের উপাস্য দেবতা হলেন 'মহাদেব শিব' যিনি এখানে 'উমানন্দ' নামে অধিষ্ঠিত। প্রতি শিবরাত্রি তে এখানে খুব ধূমধাম করে পূজা ও উৎসব পালিত হয়ে থাকে। উমানন্দ ছাড়াও বর্তমানে এখানে আরো কিছু দেবতা স্থান পেয়েছেন , যেমন - সিদ্ধিদাতা গনেশ, হনুমান ও মাতা অন্নপূর্না। কাছারী ঘাট থেকে নৌকা দ্বারা যেতে হয় উমানন্দ পাহাড়ে। যাত্রী প্রতি ভাড়া 20 /-। ব্রহ্মপুত্র এখানে বিশাল ভাবে বিস্তার লাভ করেছে আর তার গর্ব থেকে ছোটো বড়ো নানান দ্বীপ জাগ্রত। তবে এর প্রাকৃতিক দৃশ্য অতীব সুন্দর। এখান থেকে আমাদের গন্তব্য ছিল 'নবগ্রহ মন্দির'। চিত্রাচল পাহাড়ের উপর এই মন্দিরে অতীতে নাকি জ্যোতিষশাস্ত্রের চর্চা হতো। আর এই জ্যোতিষ্যশাষ্ত্র থেকেই অতীতে এর নাম হয়েছিল প্রাগ্ জ্যোতিষপুর। তবে বর্তমানে এখানে শ'য়ে শ'য়ে হনুমান আর বাঁদরের বাস। এদের অতীষ্টে মন্দির কর্তৃপক্ষ ও বিরক্ত। আমরা যখন পৌছাই দেখে কিছু পুরোহিত ডান্ডা হাতে এদের তারাতেই ব্যস্ত। মন্দিরের নীচে থাকা দোকানদার দের সঙ্গে কথা বলেও জানতে পারি এখানে এদের ই দাদাগিরি চলছে। তবে বস দোকানদার ই এদের জন্য একটা করে শক্ত ডান্ডা মজুত রেখেছেন দোকানের সামনেই। এরপরেই আমাদের দ্রষ্টব্য স্থান ' বশিষ্ঠ মুনীর আশ্রম'। শহর থেকে মাতূর 12 কিমি দক্ষিনে অবস্থিত । লোকশ্রুতি মতে মহর্ষি বশিষ্ঠ দেবের তপোবন ছিল এখানে। আশ্রমের পাশ থেকেই বয়ে চলেছে সন্ধ্যা, ললিতা আর কান্তা এই তিন পাহাড়ী নদী।আর এই তিন নদী মিলিত হয়েছে এই আশ্রমে আর সুন্ধর এক প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। বর্তমানে এই আশ্রম টিকেও আরো সুন্দর করে গড়ে তোলার কাজ চলছে। সূর্য প্রায় অস্তাগামী, শরীর চাইছে বিশ্রাম আর পেট চাইছে গরম ভাত। কিন্তু আমাদের গাড়ির চালকের অনুরোধে আমরা এসে পৌচ্ছালাম গুয়াহাটির 'বালাজী মন্দির'। সত্যিই মন্দির আমাদের ক্লান্তি, ক্ষিধে কোথায় দূর করে দিল জানি না। অপূর্ব মন্দির, সুন্দর ভাবে গড়ে তোলা একটি মন্দির ও তাকে কেন্দ্র করে একটি সুন্দর পার্ক। তবে সব থেকে আকর্ষিত যদি কিছু থাকে তবে এখানে গর্বগৃহে সাজিয় রাখা 'বালাজী' দেবের মূর্তি। আহা মনে হয় যেন ঘন্টার পর ঘন্টা তার দিকেই তাকিয়ে থাকি। কী অপূর্ব তার শোভা, আর তার থেকে বেড়িয়ে আসা এক দ্রুতি। selfi এর জামানায় এমন একটি জায়গায় 'নিজস্ব চিত্র' না নিলে বালাজী প্রভুও হয়তো পাপ দেবেন। তাই আমরা সকলেই পথের ক্লান্তি ভুলে আবার নতুন উদ্যোমে লেগে গেলাম 'নিজস্ব' খিঁচনে। এরপর আবার গাড়ি, আর আজকের মতো শেষ, এবার হোটেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা। কাল আবার লক্ষ্য ' মেঘালয়'।
অসম - মেঘালয়।
তৃতীয় পর্ব........ শিলং:- মেঘেদের আলয়= মেঘালয়। মেঘেদের স্বর্গরাজ্য ও এই মেঘালয়। সত্যিই অতীব সুন্দর একটি দেশ এই মেঘালয়। আমাদের 35 জনের একটি ছোট দলের ভ্রমনের তৃতীয় দিনের যাত্রা ছিল 'শিলং' এর উদ্দেশ্যে। অসম ছেড়ে মেঘালয়ের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এর প্রাকৃত শোভা আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে। তবে চতুর্থ দিনে আমাদের যাত্রা ছিল শিলং এর বিভিন্ন আঞ্চলিক সৌন্দর্য কে উপভোগ করার দিন। তাই চতুর্থ দিনে আমরা খুব ভোর ভোর থাকতেই বেড়িয়ে পরেছিলাম শিলং এর সৌন্দর্য কে উপভোগ করতে। সত্যি বলতে ' পাহাড় আর তার কখনো মাথায় কখনো বা তার গায়ের থেকে ভেসে বেড়ানো সৌন্দর্য আমাদের সকলকেই মুগ্ধ করে তোলে। সবুজ সবুজ পাহাড়, পাহাড়ের কোলে ব্যাসল্ট বা গ্রানাইটের ধাপ আর আকাশে ভেসে বেড়াছে শ্বেত শুভ্র তুলোর মতো মেঘ। গৃহদেবতা সাইলং থেকে সাইলং পীক কালে কালে নাম নিয়েছে শিলং। ভারতের শৈল শহর গুলির মধ্যে শিলং পাহাড়ের আকর্ষন আজ অন্যতম। 1496 মিটার উচুঁতে অবস্থিত এই পার্বত্য শহর। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মতোই মনোরম এর জলবায়ু। বরফ না পরলেও গ্রীষ্মেও গরমের তেমন আধিক্য থাকে না। তবে বেড়াবার শ্রেষ্ট সময় মার্চ থেকে অক্টোবর। আমরা তো বাঙালী, যার পায়ের তলায় সর্ষে। তাই ইচ্ছা করলেই বেড়িয়ে পরতেন পারেন। শিলং এ আমাদের তৃতীয় দিনের প্রথম দর্শনীয় স্থান ছিল 1. ' living root brige'. গ্রামবাসীদের দ্বারাই তৈরি এই ব্রীজটি। গ্রামবাসীরাই এর রক্ষনাবেক্ষন করছে, তাই এরজন্য জন প্রতি 10 টাকা দর্শনীয় দিতে হয়। বেশি বয়স্ক ব্যক্তিদের নীচে না নামাটাই শ্রেয়। কারন এবড়ো খেবড়ো অনেকখানি পাথর দ্বারা নির্মিত পথ দ্বারা অনেকখানি নীচে নামতে হয়। তার উপরে পথটি বেশ পিচ্ছিল। নামা টা সহজ হলেও ব্রীজ দেখে আবার ফিরে আসতে যুবকদের ও বেশ কষ্ট হয়ে যায়। ব্রীজের নীচ থেকে পাথরের উপর থেকে বয়ে গেছে একটি ক্ষীনস্রোতা নদী। বেশ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য। 2. Mawphlong Village. গ্রাম বলতে আমাদের হয়তো চোখের সামনে ভেসে উঠবে 'মাটির বাড়ি, চাষের ক্ষেত, কাঁচা রাস্তা আর হয়তো গরুর গাড়ি , গোয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা গরু। কিন্তু এই গ্রাম সব থেকে ব্যতিক্রম। সুন্দর, সুন্দর অতীব সুন্দর। কী ভাবে বর্ননা করব এই গ্রেমের সৌন্দর্য কে সেটা আমি ভাষায় বর্নন করতে পারছি না। এক কথায় অনবদ্য। যেমন সুন্দর প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি বাড়ির সঙ্গে একটি করে সুন্দর বাগান, আহা আর সেই সব বাগানে কতো যে নাম না জানা বা জীবনে আমার না দেখা কতোই না ফুলের গাছ। উফস, স্বপ্ন যেন । নাম না জানা এতো সুন্দর সুন্দর ফুল ফলের গাছ দ্বারা সাজানো এই গ্রামখানি যে গ্রাম ভেবে যারা একবার শিলং এসেও এখানে আসে না তারা কেমন মূর্খামি করে ( যেমন হয়তো আমিও প্রথমটা ভেবেছিলাম)। সব থেকে আশ্চর্য হবেন এখানের পথঘাট দেখে। এতো পরিস্কার, আর এতো ভদ্র এখানকার মানুষজন। এখানে এসে আমরা বন্ধুরা বারবার বলছিলাম কলকাতা বাসী এক সপ্তাহ থাকলে কি বানিয়ে চলে যাবে এইগ্রামটিকে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য যারা সত্যিই মন ভরে উপভোগ করতে চান, শিলং গেলে একবার এখান থেকে নিশ্চয়ই ঘুরে আসবেন। 3. Nohkalikai Falls... শিলং এ ঘোরার পথে অনেকই প্রস্রবন পরবে। তাই আলাদা করে বলার কিছুই নেই। মন ভরে উপভোগ করুন। পাহাড়ের কোল থেকে লাফিয়ে পরা প্রস্রবন, চারিদিকে নিরক্ষীয় অরন্য আর আকাশে মেঘের ঘনঘটা। একবার চোখ বন্ধ করে ভাবুন তো দৃশ্যটি কেমন? অপূর্ব। সুন্দর। যেন শিল্পীর আঁকা কোন চিত্রের মতো। 4.Umiam Lake. শিলং এর আর একটি বিশেষ দর্শনীয় স্থান হলো এই লেক। সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য, জলে মাছেদের জলকেলি আর বিশেষ আর্কষন বোটিং এর ব্যবস্থা। লেকের চারপাশ থেকে ঘন জঙ্গল। আর আকাশে সাদা মেঘের আনাগোনা।
অসম- মেঘালয়
অন্তিম পর্ব..... আজ 30 অক্টোবর। আমাদের অসম- মেঘালয় ভ্রমনের আজ অন্তিম পর্ব। শিলং ছেড়ে আজ আমরা চলেছি চেরাপুঞ্জীর পথে। চেরাপুঞ্জী তে থাকা আর কিছু দর্শনীয় স্থান দেখে আমরা এবারের মতো পাহাড় কে 'good bye' জানিয়ে সমতলের উদ্দেশ্যে নিচে নেমে আসব। শিলং থেকে 54 কিমি দূরে 1300 মিটার উচুঁতে চেরাপুঞ্জী ---- শিলং ভ্রমনার্থীদের এক দিনের ভ্রমন তালিকায় উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে। চেরা বাজারকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে বসতি। শিলং থেকে আধাআধি পথ পেরুতেই সবুজের গালচে মোড়া পাহাড় চুড়ো মরালের ন্যায় মাথা তুলে দাঁড়িয়ে।বাস চলবে এই পাহাড়ের কাধেঁই ভর দিয়ে। চলার পথের নয়নাভিরাম নৈসর্গিক দৃশ্যের তুলনা হয় না। আকাশ ও আপনাকে নিরাস করবে না তার অপরূপ সৌন্দর্য কে উপভোগ করা থেকে। সূর্যের আলো আর মেঘ সর্বদাই যেন এখানে লুকোচুরি খেলে চলেছে। পৃথিবীর সবথেকে বেশি বৃষ্টি হয় এই চেরাপুঞ্জীতেই। ঐতিহাসিক রেকর্ড রয়েছে এর। কমলালেবু যেমন প্রচুর ফলে তেমনই পর্যাপ্ত পরিমানে রয়েছে কয়লা ও চুনাপাথর। চেরাপুঞ্জীর প্রধান কেন্দ্র চেরা বাজারের এক কিমি আগেই রয়েছে রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম। ভ্রমনার্থীরা একবার ঘুরে আসতেই পারেন এখান থেকে। 1924 সালে সেলাতে এটি প্রতিষ্ঠিত হলেও 1931 সালে এটি চেরাপুঞ্জীতে স্থানান্তরিত করা হয়। পাঁচ শতাধিকের ও অধিক পড়ুয়া পাঠ নিচ্ছে এই আশ্রমের বিদ্যালয়ে। এছাড়া রয়েছে পল কালিকাই ফলস ( এর ছবি আমি আগের পর্বেই পোষ্ট করেছিলাম)। চেরাপুঞ্জী কে আরো আকর্ষনীয় করতে বর্তমানে একটি Eco park তৈরি করা হচ্ছে। অনেকখানি বিস্তার এই পার্কের। মাথাপিছু কুড়ি টাকা দর্শনী দিয়ে এর মধ্যে প্রবেশ করলে আপনি আপনার ছোটোবেলা কিছুক্ষনের জন্য হলেও খুঁজে পাবেন। এছাড়া এখান থেকে প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। পথেই পরবে 'seven sister falls'. সাতটি প্রস্রবন এক সঙ্গে ঝড়ে পরছে, সাত বোনের মতোই। এর থেকেই এরূপ নাম দেওয়া হয়েছে । তবে এই সময় আমরা কেবল দুই বোনের ই দর্শন পেয়েছিলাম। শুনলাম সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে বর্ষাকালে সাতটি ধারাই বইতে দেখা যায় পাহাড়ের চুড়া থেকে উপত্যকার উপর। এর পরেই ছিলো আমাদের আর এক অপূর্ব দর্শনীয় স্থান। 'Elephanta Falls'. পাহাড়ের উপর থেকে তিনটি ধাপে নেমে এসেছে এই বিশাল প্রস্রবন। বর্তমান প্রধান মন্ত্রী মহাশয় ও এখানে এসে দর্শন করে গেছেন এই প্রশিদ্ধ প্রস্রবনটিকে। হাতির শুড়ের মতো দেখতে ছিলো বলে এই ঝরনার নাম ইংরেজ রা দিয়েছিলো ' elephanta falls'.।তবে আপনি এখন আর একে হাতির শুড়ের সঙ্গে মেলাতে যাবেন না। বারংবার ভূমিকম্পের ফলে এর ভূ-প্রকৃতির ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |