2017 সালের নভেম্বর মাসের শুরুতে, কোলকাতায় যখন সবে ঠান্ডা পরছে তখন বাঙালির পূজোর রেশটা সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে।আর মনটাও খুঁজছে এক নিরিবিলি নির্জনের আনন্দ।ঠিক এই সময় আমার ভাই ওরফে শালা একদিন চা-সিগারেট সহযোগে গল্প করতে করতে বললো "বরন্তি"।"বরন্তি"? আমিও উচ্ছাসের সঙ্গে বললাম হ্যাঁ এবার আমরা "বরন্তি"। ঠিক এই ঘটনার দশ দিন পর আমরা যাত্রা শুরু করলাম।অর্থাৎ তেরোই নভেম্বর। ছয় জন মানুষের ছ'টা আলাদা আলাদা অনুভুতি,উতফুল্লতা নিয়ে।হাওড়া স্টেশান থেকে নির্দিষ্ট সময়ে ট্রেন নিদিষ্ট গন্তব্যস্থলে পৌঁছনোর ফাইনাল হুইসেল দেয়ার সাথে সাথে শীতের প্রথম ঠান্ডা হিমেল হাওয়া শূণ্য শরীর আর মনকে ছূঁয়ে গেল। শুরু হলো নিত্য জীবন যাপনের বাইরে একটা নতুন তিন দিনের জীবন যাত্রা। ন'টা চল্লিশ...অনেক নাম না জানা গ্রাম অনেক শহর পেরিয়ে আসানশোল।সঠিক সময়ে ট্রেনের সাথে আমরাও।স্টেশানের লোককোলাহল থেকে বেরিয়ে এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে প্রকৃতির রুপে বিলিন হওয়ার ইচ্ছা সকলের চোখে মুখে তখন পরিষ্কার একটা রঙ নিয়েছে। দশটা কুড়ি নাগাদ পূর্ব নির্ধারিত গাড়ি আমাদের নিয়ে রওনা হলো প্রকৃতি সুন্দরী "বরন্তির" উদ্দেশ্যে।চারিদিক তখন সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করেছে আমাদের মনে।এরপর ঘন্টা দেরেকের যাত্রা পথের বর্ণনা নিজের চোখে না দেখলে,বর্ণনা দেওয়ার বাক্য আমার নেই। এগারোটা চল্লিশ...."মহুলবন রিসর্ট বরন্তি"একটু নিজেদের মত সময় কাটিয়ে সটান দুপুরের খাবারের টেবিলে।অসাধারন আতিথেয়তা এবং খাবার।প্রথম মুগ্ধ হলাম বরন্তিতে।আশা বারলো আরো মুগ্ধ হওয়ার ইচ্ছায়। এবার পালা "বিহারিনাথ","শুসুনিয়ার" ডাকে সারা দেওয়া।বরন্তি লেকের গা ঘেঁষে আমাদের গাড়ি উঁচু -নিচু পথ দিয়ে বরন্তি লেক টাকে ডানদিকে রেখে আপন গতিতে হেলতে দুলতে হাতির মত এগিয়ে চলছে বিহারিনাথ এর দিকে।হটাৎ গাড়ি ব্রেক মারল,ছ'জোরা চোখ গাড়ির সামনে এক সাথে দেখলাম সর্পরাজ রোদ পোহাতে ব্যাস্ত।সর্পরাজ নিজেও ইতিমধ্যে ব্যাপারটা বুঝতে পেরে নিজের গতিতে লেকের জলে গা ডুবিয়ে লুকিয়ে পরলেন।অবশেষে আমরাও মজা করতে করতে,গান শুনতে শুনতে,গল্প করতে করতে গ্রামিন জঙলি পথ অতিক্রম করে বিহারিনাথ পৌছেছি। বিহারিনাথ কে বিদায় জানিয়ে এখন শুসুনিয়ার পথে ছবি তুলতে ব্যাস্ত এমন সময় আমাদের চালক সাহেব জোরে আমার হাত চেপে ইঙ্গিত করলো হাত দশেক দূরের লতা-পাতা গাছ গুলোকে,আমিও সে দিকে তাকিয়ে চোখ রাখলাম ক্যামেরায়,দূরের দৃশ্য ফ্রেম বন্দির ধান্দায়।চালক সাহেব আরো একবার আমায় সেদিকে দৃষ্টি দিতে বলায় ব্যাপারটা আমি বুঝলাম।লতা-পাতা গাছ গুলোর মাথায় লতা-পাতার মতো করেই এক জোরা লাউডগা মাথা উঁচিয়ে বসে।বোধায় আমাদেরই দেখছিল আর ভাবছিল "শহুরে বাবু এই প্রকৃতি আমাদের,আর আমরাই এর যোগ্য "।তাকেও বিদায় বলে আমাদের গন্তব্য শুসুনিয়া পৌছলাম।পরন্ত বিকেলে ঠাণ্ডাটা বেশ লাগছে।এক ভাঁড় করে চা নিয়ে ধীর গতিতে হাঁটা শুরু করলাম,যেখানে ভাঁড় ফেললাম নিচের দিকে সেখান থেকেই উঠতে হবে আমাদের উপরে।শুসুনিয়ার পাথর খচিত পথ হাতছানি দিয়ে ডাকছে।শুরু হলো পথ চলা।মোটামুটি হেঁটে,বিশ্রাম না নিয়ে পয়তাল্লিশ মিনিটে যতটা উঠলাম সেখান থেকে বহুদূর বিস্তৃত নিচের গ্রাম গুলো অসাধারন এক মায়া সৃষ্টি করেছে। গাড়ি চলতে শুরু করলো অন্ধকার নিকশ কালো রাস্তা ভেদ করে মহুলবন রিসর্টের আঙ্গিনায়। হাত -মুখ ধুতে গিয়ে হাঁক পরলো অর্ধাঙ্গীনির,জলখাবার।তরিঘরি বেড়িয়ে দেখি বাঙালি শ্রেষ্ট মুরি,গরম পেঁয়াজি,চা আমাদের অপেক্ষায়। অনেকটা গাড়ি চরার পর মনে হচ্ছিল পায়ে হেঁটে বিশ-তিরিশ হাত দূরের ঔ বরন্তি পাহারটা ছূঁয়ে আসি,ভাবনা যখন ভালো,নির্ভেজাল তখন আর দেরি কেনো!!ঘড়ি,মোবাইল না থাকায় রাতের খাবারের ডাক পরতে বুঝলাম রাত হলো,তবে চলো। ও মা ঠিক দেখছিতো??নিজেকেই বিশ্বাস হচ্ছে না,ঘড়ি/মোবাইল দু'জনই বলছে রাত সারে ন'টা। কিন্তু খিদে যে পাইনি তাওতো নয়,বুঝলাম নির্ভেজাল প্রকৃতিতে শরীর মন দুই নির্ভেজাল হয়ে উঠেছে। আর এর সঙ্গে আরো নির্ভেজাল রিসর্টের গরম রুটি,কষা দেশি মুরগির কারি,পেঁয়াজ,কাঁচা লঙ্কা। আমি আজও বিশ্বাস করি সেই শ্বাদ অনবদ্য। পাখিদের ডাক...দরজা খুলে দেখি সূর্য চোখ মেলে তাকাছে,বরন্তি পাহার কে মা এর মত জরিয়ে রেখেছে ঘন সাদা একরাশ কুয়াশা। এ দৃশ্য আমার মনে চিরকালের মত এক অন্য অনুভুতি। সকালের চা,জলখাবারের পর্ব শেষ। নতুন পর্বে গাড়ি এসে দাঁড়ালো "গড়পঞ্চো কোট"কাশিপুর রাজাদের এসস্টেট।পাহাড়ে লুকিয়ে রাখা তাদের রাধা-গোবিন্দ মন্দির দর্শন আর পাঁচটা মন্দিরের থেকে রোমহর্ষক কাহিনি কে হার মানাবে। শান্ত শীতল পরিবেশ,গাছের সমারহ মনকে শীতল আর নিস্বার্থ করে তুললো।আর ঠিক পরমূহুর্তে লোভ এলো মনে,হীরের লোভ। রাশি রাশি হীরে। একটু গেলেই সেই দেশ,যে দেশের রাজা হীরক দেশের রাজা বলে পরিচিত,আর রাজ্যটি হীরক রাজ্য বলে। পাথরের উপরে পাথর রেখে কেউ যেন সাজিয়েজে "হীরক রাজার দেশ জয়চন্ডি পাহাড় "গোটা পাহাড় টাতে এক সুন্দর শিল্প এক কাল্পনিক রেখায় একেঁ দিয়েছে কোনো এক শিল্পী,আর কোল বেয়ে উঠে যাওয়া সিঁড়ি সেই শিল্পীর দেখানো রাস্তা। পানঞ্চেত এসে বুঝলাম খিদে পেয়েছে।খানিকখন থেকে আইসক্রীম খেতে খেতে নৌকা বিহার শূরু করলাম মাইথনের জলে। এবার বাকি মা কল্যাণেশ্বরির আর্শিবাদ "জয় মা"। পরদিন সকাল দশটা পয়তাল্লিশ আসানশোল স্টেশান থেকে ফাইনাল হুইসেল,ট্রেন চলতে শুরু করলো হাওড়ার দিকে। হাতে বরন্তির গ্রামবাসীর হাতে তৈরী টাটকা খেঁজুর গুর। Post By:- Suranjit Ghosh
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |