গত ১৯শে অক্টোবর দুপুরে শিমলায় যখন পৌঁছলাম, তখন বেশ মনোরম পরিবেশ, করোনার আতংক নেই, তবে সবাই সদা সতর্ক, মুখে মাস্ক ঠিক করে পরা, হাতে স্যানিটাইজার দিচ্ছে যেখানে ঢুকতে হচ্ছে। সন্ধেবেলা মল-এ গিয়ে ঘুরছি, ফটো তুলছি, হঠাৎই একটু ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করল, সূর্যাস্তের ছবি তুলতে তুলতেই ঠাণ্ডায় হাত-পায়ে অস্বস্তি! গুগলে দেখলাম ১২ ডিগ্রি, সময় সাড়ে ছটা! খোলা জায়গায় থাকতে না পেরে আলফা রেস্তোরাঁয় মোমো খেতে ঢুকলাম, বেরোলাম যখন তখন ১১ ডিগ্রি। হোটেল ফিরে রাতে দেখি ৯ ডিগ্রিতে নেমে গেছে! কম্বলের তলায় ঢুকে পড়লাম রাত ৯টায়। ভোরে কলকাতা, সকাল সাতটায় চণ্ডিগড়, আর দুপুর বারোটায় শিমলা! যদিও ট্রেন চলছে না বলে বাঙালি ট্যুরিস্ট কম, পাঞ্জাবি কিছু ট্যুরিস্ট চোখে পড়ল মল এ। আগামী ২১ তারিখ থেকে কালকা শিমলা টয় ট্রেন চালু হচ্ছে। এটাই ভালো খবর!
অনেক ছোটবেলায় শিমলা এসেছিলাম, ততটা মনে নেই। গতকাল এসে যা দেখে শুনে বুঝলাম, কলকাতায় অনেকেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লুকিয়ে যান যখন আমরা শিমলায় থাকার জন্য অপশন খুঁজি! ১) শিমলা পুরোটাই চড়াই উতরাই। শুধুমাত্র মল রোডে চার্চ থেকে মেয়র অফিস অবধি সমতল। এবার যারা কলকাতা থেকে ট্রেনে কালকা এসে টয় ট্রেনে শিমলা আসবেন এবং সস্তায় কালীবাড়ি থাকার কথা ভাবেন, তাদের সবিনয়ে জানাই মালপত্র নিয়ে ও বয়স্ক আত্মীয় স্বজন নিয়ে কালীবাড়ি অবধি যাওয়া খুবই কষ্টকর! এই ৪৫ ডিগ্রি চড়াই ওঠার অভ্যেস আমাদের নেই, আর গুগল ম্যাপে যা দেখছেন সেখানে উচ্চতার তারতম্যের কথা লেখা নেই, এটাই বাঁশের! শিমলা মলের বহু আগে থেকেই গাড়ি প্রবেশ নিষেধ, তাই বাড়িতে প্রতিদিন ৫০০টা সিঁড়ি ওঠানামা করার অভ্যেস থাকলে তবেই পারবেন। আমার স্ত্রীকে তো হুইল চেয়ারে করে তুলতে হল মল ঘোরাতে, কেননা সাম্প্রতিক অসুস্থতা ও পায়ের সমস্যায় ওর পক্ষে এত চড়াই অসম্ভব! ২) অনেক হোটেলই বেসমেন্টে ঘর দেয় সস্তায় যা আসলে জেলখানার মতো, কোনো রুম ভিউ নেই, তাই কিছুটা সস্তা। শিমলায় এসে খাটে শুয়ে পাহাড় দেখতে যদি না পান তো কলকাতায় নিজের খাটে শোয়ার থেকে তফায় কী হল! ৩) চণ্ডীগড় থেকে পরওয়ানু অবধি রাস্তা ভালো, তারপর NHAI রাস্তা বানাচ্ছে, ধুলো, গর্ত, জিগজ্যাগ আঁকাবাঁকা পথে ঝাঁকুনি প্রচুর। অনেকেই গাড়িতে আসতে চান, টয় ট্রেন বেশি সময় নেয় বলে, অন্তত আগামী ৩ মাস রাস্তা এরকমই থাকবে। ৪) শিমলা হোটেলে জল, গরম জল সবসময় নাও পেতে পারেন, এখানে জলের সমস্যা হতে পারে। আসার আগে যে হোটেলেই বুকিং করুন এই কথাগুলো মনে রাখলে ভালো!
২০ শে অক্টোবর ভোর তিনটেয় ঠাণ্ডায় ঘুম ভেঙে গেল, গুগল বলছে ৭ ডিগ্রি, কিছুক্ষণ পর ৬ ডিগ্রি। বাপরে, ঐ ঠাণ্ডায় শুয়ে থাকাই দায়। সকালে ৮টা নাগাদ বেরোলাম কুফরির উদ্দেশে। পথে গ্রীন ভ্যালিতে রাস্তায় থামা। দেবদারু গাছের ঘন জঙ্গল! ভালুক, চিতাবাঘের আগাগোনা জঙ্গলের ভেতরে! সাধারণত কেউ যায়না এই জঙ্গলের ভেতরে। দিনের বেলাতেও নাকি অন্ধকার এত ঘন গাছ। কুফরি পৌঁছে ঘোড়ায় চড়ার ইচ্ছে ছিল না, তাই আরেকটু এগিয়ে নিউ কুফরি অ্যামিউজমেন্ট পার্কে ঢুকলাম কিছু ইন্ডোর গেমস যা আমাদের বয়সে করতে পারি।
প্রথমে ঢুকলাম মিরর মেজ-এ। ছোটোবেলায় দেখা এন্টার দ্য ড্রাগন সিনেমার কথা মনে পড়ল! সেই চারিদিকে আয়না আর ব্রুস লী ঘুরে ঘুরে খুঁজছে! আমিও নিজেকে ব্রুস লী ভেবে আয়না হাতড়ে বেরোবার রাস্তা খুঁজতে গিয়ে ঘেঁটে ঘ!! অবশেষে বেরোতে পারলাম, যাক এবার গিয়ে ঢুকলাম ইনফিনিটি রুমে। দেখে মনে হচ্ছে কোথায় এলাম এর শেষ কোথায়? শুধু আলো আর আয়নার ভ্রম সৃষ্টি! তারপরে গ্যালাক্সি টানেল। ওরে বাবা, সব গ্রহ তারা নক্ষত্রের দল আমার দিকে ছুটে আসছে আর আমাকে একটা ব্রিজ পেরিয়ে যেতে হবে। ১০ সেকেন্ডেই কুপোকাত! মাথা ঝিমঝিম করায় পাশ দিয়ে বেরিয়ে হাঁপ ছাড়লাম! দুজনের জন্য ৬০০ টাকা লাগল। ওখান থেকে জাখু মন্দিরে এলাম। রাস্তা খুব সরু আর চড়াই? সে তো ৬০ ডিগ্রি উঁচু খাড়াই! বাপরে, কী রাস্তা! মন্দিরের সিঁড়ির সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বোঝালাম যতই হাঁপাও, ওপরে যেতেই হবে। ১০৮ ফুটের হনুমান মূর্তি পৃথিবীতে আর কোথাও নেই! অবশেষে উপরে উঠে মহিলা পুলিশ IR thermometer দিয়ে চেক করে নাম, মোবাইল নং লিখে ঢুকতে দিল। ইস, হনুমানের সাইড ভিউ! তাও একটা ছেলেকে পাকড়াও করে আমার ফটো তুললাম। চশমা গাড়িতেই রাখা, বাঁদরের ভয়ে। তবে আমায় বিশেষ ঝামেলায় পড়তে হয়নি! স্ত্রী অসুস্থতার কারণে গাড়িতেই অপেক্ষায় ছিল। এরপর গেলাম ভাইস রিগ্যাল হাউস! পুলিশ ঢুকতে দিল না। এখনো বন্ধ! অগত্যা গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে ফটো তোলা হল। দুপুরে হোটেলে ফিরে বিশ্রাম নিয়ে আবার শিমলা মল-এ লক্কর বাজারের দিকে গেলাম। একটা নতুন জিনিস কেনা হল। অমৃতসরের ফুলকারি ডিজাইনে হিমাচলি শাল। বেশ বড়ো সাইজ, গরম হবে। দাম মাত্র ৪০০ টাকা। বেরিয়ে চিকেন মোমো, স্যুপ খাওয়া হল। তারপর সন্ধে নামতেই হোটেলে ফিরলাম। ঠাণ্ডা ঝপ ঝপ করে পড়ছে। ২১.১০.২০২০ সকাল আটটায় শিমলাকে টাটা করে বেরিয়ে পড়লাম মণিকরণের দিকে। পথে সুন্দর নগর লেক, মাণ্ডি, পান্ডোহ ড্যাম, অট টানেল, হানোগি মাতা মন্দির, ভুনতার হয়ে মণিকরণ পৌঁছাতে সাড়ে আট ঘণ্টা লাগল! দূরত্ব কিন্তু ২২৫ কিমি। আসলে রাস্তা এতই খারাপ যে অনেক সময় ২০ কিমি স্পীডেই নাচতে নাচতে গাড়ি যাচ্ছিল। হোটেল একেবারে পার্বতী নদীর পাশেই! পরের পোস্টে আরো ভ্রমণ বৃত্তান্ত থাকবে, সঙ্গে থাকবেন!
২২.১০.২০২০
গত সন্ধেতে শিমলা থেকে মণিকরণ এসে পৌঁছেচি। হোটেল একেবারেই পার্বতী নদীর পাশেই। ঘরের মধ্যে থেকে নদীর গর্জন শোনা যাচ্ছে। সাড়ে আট ঘণ্টা জার্নি করার পর তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ি। আজ ২২ তারিখ সকালে মণিকরণ মন্দির ও গুরুদ্বারা দেখতে গেলাম। ফুট ব্রিজ পেরিয়ে প্রথমে পড়ল রাম মন্দির, তারপর ভগবতী নয়না দেবী মন্দির, রাধাকৃষ্ণ মন্দির। উষ্ণ প্রস্রবণের মধ্যে আলুর বস্তা রাখা, টগবগে ফুটন্ত জলের মধ্যে। শিব মন্দির ও গুরুদ্বারা যেতে এত সরু গলি দিয়ে যেতে হয় কী বলব। কোনোদিন কেউ ইউটিউবে বা ফেসবুকে বলেইনি যে কী নোংরা এই গলিপথ। বেশি নোংরা, গোবর থাকায় দূর থেকেই প্রণাম করে চলে এলাম। দুপুর ১১ টায় ঘর ছাড়ার কথা হোটেলে। ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে পড়লাম কুল্লুর উদ্দেশে। ইচ্ছে কুল্লুর শাল, সোয়েটার, জ্যাকেট কেনার। কেনাকাটা শেষে নাগগর ক্যাসেলে এসে পৌঁছাই দুপুর তিনটেয়। hptdc র হেরিটেজ হোটেল হিসেবে এই নাগগর ক্যাসেলের ঘর হোটেল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এখানের বিখ্যাত ট্রাউট মাছ খেলাম। বেশ ভালো! ক্যাসেলটা পুরো পাহাড়ের চুড়োয়, তাই দূরের গ্রাম, রাস্তা সব ছোট্টো ছোট্টো দেখাচ্ছে। রাজা না হতে পারি, কিন্তু একদিনের জন্যও তো বৌকে কেল্লায় রাখতে পারলাম, এটাই বড়ো কথা! দুর্গাপূজার উপহার!
২৩.১০.২০২০
সকালে নাগগর ক্যাসেল থেকে বেরিয়ে প্রথমে গেলাম ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দিরে। কাঠ আর পাথরের স্ট্রাকচারে মন্দির বানানো। মন্দিরের খুব কাছেই রোয়েরিখ আর্ট গ্যালারি ও মিউজিয়াম। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন রাশিয়ান চিত্রশিল্পী রোয়েরিখের স্মৃতির উদ্দেশ্যে ওনার পুত্রবধূ, বলিউডের প্রথম সুপারস্টার নায়িকা দেবিকা রাণী ও তার স্বামী (রোয়েরিখের পুত্র) এই সংগ্রহশালা তৈরি করেন। এরপর আমরা রওনা দিই মানালির উদ্দেশে। মানালি দুপুরে পৌঁছে লাঞ্চ সেরে হিড়িম্বা মন্দির, দুর্গা মন্দির, মল, বনবিহার, ক্লাবহাউস দেখলাম।
হিমাচল ভ্রমণ -- পর্ব ৫
২৪.১০.২০২০ অটল টানেল ভ্রমণ সকালে মানালি থেকে সোলাং, বুর্ব, ধুন্দি হয়ে অটল টানেলের সাউথ পোর্টালে ঢুকে সোজা গিয়ে বেরোলাম লাহুলের সিসসুতে। ৯.০২ কিমি এই টানেল ১০০০০ ফুট উচ্চতায় পৃথিবীর দীর্ঘতম টানেল। এটি ডবল ডেকার টানেল, মানে নীচে এক লেনের এমারজেন্সি টানেল, ওপরে ২ লেনের মেইন টানেল। সুরক্ষা ব্যবস্থা অনন্য! ১২ মিনিটের আনকাট ভিডিও এত বড়ো যে এখানে আপলোড হচ্ছে না, তাই এডিট করে ছোট করে দিলাম। আজ আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় দিন! ফেরার পথে নেহরু কুণ্ড ও বশিষ্ঠ মন্দির গেলাম। করোনার কারণে বশিষ্ঠ মন্দিরের উষ্ণ প্রস্রবণে স্নান করার লোক নেই বললেই চলে! আমরা বেশ শান্তিতেই ঘুরে বেড়াচ্ছি, ভীড় একেবারেই নেই!
২৫.১০.২০২০
সকাল আটটায় মানালি থেকে বেরিয়ে পড়লাম, এবার যাবো ম্যাকলয়েড গঞ্জ! ধরমশালা নীচে, ম্যাক পাহাড়ের ওপরে। পথে বৈজনাথ শিব মন্দির পড়ল একেবারে রাস্তার ধারেই। পুলিশ মাস্ক পরে নাম, ঠিকানা, ফোন নং, IR thermometer চেকিং করছে। বৈজনাথ শিব মন্দির অনেক পুরোনো, তবে গুটিকয়েক স্থানীয় লোক ছাড়া কোনো ভীড় নেই! এরপর পালামপুর টী গার্ডেন, রাস্তার ধারেই সব চায়ের বাগান। মাঝে রাস্তার ধারে একটা নিরামিষ ভোজনালয়ে হিমাচলি থালি নিয়ে দুজনে ভাগ করে খেলাম। দীর্ঘ যাত্রায় দুজনেই শ্রান্ত, ক্লান্ত! কতক্ষণে পৌঁছবো! ম্যাকলয়েড গঞ্জ এলাম প্রায় সাড়ে চারটে নাগাদ। গাড়ি ধীরে সুস্থে ৪০-৫০ কিমি স্পীডে এসেছে। ম্যাক এ গাড়ি পার্কিং একটা সমস্যা, আর বেশির ভাগ রাস্তা একমুখী, নয়ত ঘুরে যেতে হবে। কোথায় আর যাবার মতো শরীরের অবস্থা নেই। হোটেলেই ডিনার সেরে বিশ্রাম নিলাম।
২৬.১০.২০২০
সকালে ঘুম ভাঙল ১০° ঠাণ্ডায়! খাটের পাশেই জানলার পর্দা সরিয়ে শুয়ে শুয়ে পাহাড় দেখছি। এটাই কলকাতার সঙ্গে তফাৎ! চিরকাল পাশের বাড়ির দেয়াল দেখে ঘুম ভাঙে! সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম ডাল লেক যাবো বলে। কিছুটা গিয়ে দেখি রাস্তা সারানো হচ্ছে, খুবই খারাপ চড়াই, তাই রিস্ক নিলাম না, গেলাম না। ওদিকে নড্ডি পয়েন্ট থেকে ধৌলাধার পাহাড়ের দৃশ্য আরো মনোরম দেখা যায়, হল না আজ! এবার গেলাম ১৮৬২ সালে বানানো উত্তর ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন চার্চ সেন্ট জন্স ইন দ্য ওয়াইল্ডারনেস-এ। এখানে লর্ড এলগিনের কবর আছে, উনি ১৮৬৩ তে মারা যান। এছাড়াও অনেক ব্রিটিশদের কবর রয়েছে। এরপর গেলাম ম্যাক এর মেইন স্কোয়ারে। সামনেই কালচক্র মন্দির। এখানে নন-টিবেটানদের এখন ঢুকতে অনুমতি দিচ্ছে না। বাইরে থেকেই ছবি/ভিডিও নিলাম। এখান থেকে প্রায় এক কিমি হেঁটে দলাই লামার মনেস্ট্রি গিয়ে দেখি ঐ একই অবস্থা! নন-টিবেটানদের ঢুকতে দিচ্ছে না! মনটা খারাপ হয়ে গেল। এরপর গেলাম ধরমশালা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। পুরো বন্ধ কোভিডের কারণে। ধুর, আসাটাই মাটি হল! ফেরার পথে ধরমশালা ওয়ার মেমোরিয়ালে গেলাম। যদিও খোলা ছিল তবুও বেশি ভেতরে যাইনি, প্রচুর রোদ উঠে গেছে। ম্যাক মেইন স্কোয়ারে লাঞ্চ খেলাম, সেটার আলাদা পোস্ট দেবো। এরপর ভাগসু নাগ মন্দির দর্শনে অনেকটা হেঁটে উঠলাম মন্দিরে। পাশে স্নানের কুণ্ড আছে কিন্তু স্নান করার অনুমতি নেই কোভিডের কারণে! শুনলাম বাকি সব টিবেটান মনেস্ট্রিতেও ট্যুরিস্ট ঢুকতে দিচ্ছে না। এখানে যে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না --- সে খবর কিন্তু কোনো লোকাল ইউটিউব চ্যানেলে বলছে না! আগে থেকে জানলে আসতামই না! কাল যাবো ডালহৌসি-খাজ্জিয়ার।
২৭.১০.২০২০
সকালে ম্যাকলয়েড গঞ্জ থেকে ৯টা নাগাদ রওনা দিই ডালহৌসির উদ্দেশে। রাস্তা বেশ ভালো, এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে উঠছি-নামছি। ম্যাকের ধৌলাধার পর্বতশ্রেণী থেকে পীরপাঞ্জাল রেঞ্জ ডালহৌসিতে, তবে কুয়াশা থাকায় দূরের ভিউ স্পষ্ট নয়! আমরা সুভাষ চকে হোটেলে উঠলাম। সামনেই দেবদারু গাছের সারি, প্রখর রোদ্দুরে আমরা খাজ্জিয়ারের দিকে রওনা দিলাম লাঞ্চের পর। রাস্তা ভালো নয়, ঘন জংগল! কালাটপ, বাখরাকোটার জংগল পেরিয়ে এক ঘণ্টা বাদে পৌঁছাই খাজ্জিয়ারে। মিনি সুইজারল্যান্ড নামে বিখ্যাত এই খাজ্জিয়ারের চারপাশে বড়ো বড়ো গাছ, আর মাঝে ছোট্ট জলাশয় ও উপত্যকা। ফেরার পথে গান্ধী চক ও চার্চ দেখে হোটেলে ফিরলাম।
হিমাচল ভ্রমণ --- পর্ব ৮
২৮.১০.২০২০ সকাল সাড়ে নটা নাগাদ ডালহৌসি ছেড়ে রওনা হলাম অমৃতসরের দিকে। ডালহৌসি থেকে চাক্কি মোড় অবধি ২ লেন পাহাড়ি রাস্তাকে বিদায় জানিয়ে পাঠানকোটের আগে ৪ লেন হাইওয়ে ধরে অমৃতসরে দুপুরে পৌঁছালাম। পথে লাঞ্চ ব্রেক আধঘন্টা। অমৃতসরে হোটেলে ঢোকার আগে আমরা ১৪ কিমি দূরে অবস্থিত বাল্মিকী রামতীর্থ মন্দিরে গেলাম। মহর্ষি বাল্মিকীর আশ্রমে সীতাকে রেখে যাওয়া হয়েছিল, এখানেই লব কুশের জন্ম হয়। বিরাট ক্ষেত্র জুড়ে এই মন্দির। সাথে সরোবর তো আছেই। মন্দিরের ভেতরে বাল্মিকী রামায়ণ লিখছেন এই ভঙ্গিমায় মূর্তি রয়েছে। নামকীর্তন চলছে। বেশ ভক্তিপূর্ণ পরিবেশ। পাশেই লাল দেবী মন্দিরে বিভিন্ন মূর্তি রয়েছে। ওখান থেকে অমৃতসর শহরে ফিরে হোটেলে উঠি। আমাদের কিছু শর্ত ছিল হোটেল বুক করার। স্ত্রী অসুস্থ থাকায় কোনো সিঁড়ি উঠবে না, হোটেলে ড্রাইভারকে ফ্রিতে গদি দিতে হবে রাতে শোয়ার জন্য, বাথরুম ব্যবহার করতে দিতে হবে এবং হোটেলের দায়িত্বে গাড়ি পার্কিং রাখতে হবে। এইসব শর্ত মেনে ১০০০ -- ১২০০ টাকায় আমরা হোটেল পেয়েছি অনলাইন বা স্পট বুকিং। সাথে সাথে হোটেল থেকে হুইল চেয়ারেরও ব্যবস্থা করে দিয়েছে আমার স্ত্রীকে নিয়ে ঘোরার জন্য। তাই কোনো ট্যুর অপারেটরের ভরসা করিনি। নিজে হোটেল বুক করেছি, গাড়ি বুক করেছি। এ ব্যাপারে শিমলার মেয়ে Pratiksha Sharma আমাকে প্রচুর সাহায্য করেছে ও সঠিক উপদেশ, টিপ্স দিয়েছে। গুগল ম্যাপ অনেক সময়েই পাহাড়ে ভুল তথ্য দেয়, যা শিমলায় গিয়েই টের পেয়েছি। তাই ড্রাইভার শুভম ও প্রতীক্ষা দুই শিমলাবাসীর কথামতো চলেছি। একটা কথা বলা প্রয়োজন ফোনে হোটেল বুক করার সময় কাউকেই কোনো টাকা দিইনি, একমাত্র নাগগর ক্যাসেল hptdc কে ছাড়া। গাড়ি বুকিং মাত্র ৫০০ টাকা প্রতীক্ষাকে গুগল পে করে অগ্রিম করা, তারপর দিন প্রতি ২২৫০ টাকা (ডিজেল ৭০.৩৫ / লিটার) এই রেটে। ডিজেল কার্ডে নিয়েছি, ডাইভারকে অল্প টাকা দিয়েছি, খাবার জন্য। অন্য একটি গ্রুপে পরিচিত মুখ একজন ট্যুরের আগে থেকে অগ্রিম টাকা চেয়ে শর্ত দেন যে না গেলে সে টাকা আর ফেরৎ দেবেন না। এমন শর্তে সতর্ক হয়ে সরে গেছি তার সংস্পর্শ থেকে! এর সমস্ত whatsapp প্রমাণ আমার কাছে আছে, তাই যে কোনো সময়ে তা ফেসবুকে দিতে পারি ও মুখোশ খুলে দিতে পারি! অতএব সাধু সাবধান!
২৯.১০.২০২০
সকালে উঠে আমরা প্রথমে যাই দুর্গিয়ানা মন্দিরে। হুইল চেয়ার জোগাড় করতে ১০-১৫ মিনিট লাগল। গাড়ি পার্কিং বেসমেন্টে, সেই জায়গা থেকে মন্দির অনেকটা হাঁটাপথ, অসুস্থ স্ত্রীকে হুইল চেয়ারে নিয়ে চলা শুরু হল। স্বর্ণ মন্দিরের আদলে তৈরি দুর্গিয়ানা মন্দিরের ভেতরে ছবি/ভিডিও তোলা নিষেধ। তাই বাইরের ছবি/ভিডিও তুললাম। বেশ খিদে পেয়েছে কিন্তু কোথাও খাবারের দোকান খোলা পাইনি, তখন হুইল চেয়ার যে ছেলেটি এনেছিল সে বলল, পাশেই গরম গরম কচুরি, ছোলার তরকারি পাওয়া যায়। আমরা এতটাই ক্ষুধার্ত ছিলাম যে আর না করিনি। এরপরের টার্গেট স্বর্ণ মন্দির। হেরিটেজ ওয়াকের ওপারে গাড়ি যেতে দেয় না। স্বর্ণ মন্দিরের কার পার্কিঙে একটা ই-রিক্সা ভাড়া করে স্বর্ণ মন্দিরের কাছ অবধি যাওয়া গেল। একটা দোকানের ভেতরে চেয়ারে স্ত্রীকে বসিয়ে আধার কার্ড ও নিজের মোবাইল বন্ধ করে, দুটো জিনিস ডিপোজিট করে হুইল চেয়ার পাওয়া গেল শনি মন্দিরের পাশ থেকে। কোনো টাকাপয়সা নেয় না, নিতেও চায় না, কিন্তু মোবাইল / ড্রাইভিং লাইসেন্স / গাড়ির চাবি ও আধার কার্ড জমা রাখতেই হবে। এক সর্দারজি উপস্থিত হুইল চেয়ার ঠেলে সাহায্য করতে। আমি কিছুটা নিশ্চিন্ত হলাম। জুতো জমা রাখা হল। রোদ্দুর প্রচুর, লোকের ভিড়ও অনেক। আমরা ধীরে সুস্থে লোকজনের ভিড় এড়িয়ে চলা শুরু করলাম। জলে পা ধুয়ে গেট পেরিয়ে সরোবরের চারদিকে প্রদক্ষিণ করা শুরু করলাম। এখানে দুখভঞ্জন বেরি গাছ রয়েছে। সরোবরে নারী পুরুষ বাচ্চা সবাই স্নান করছে। জামাকাপড় বদলানোর সুব্যবস্থা রয়েছে। সরোবরের চারদিক প্রদক্ষিণ করতেই প্রায় ৫০ মিনিট লেগে গেল। মূল মন্দিরের প্রবেশপথে যা লাইন, প্রায় তিন ঘণ্টা লাগবে, আর সেখানে হুইল চেয়ারের অনুমতি নেই, তাই দূর থেকে প্রণাম করেই বেরিয়ে এলাম। জালিয়ানওয়ালাবাগ বন্ধ, সারানোর কাজ চলছে। শুনলাম প্রায় এক বছর বন্ধ রয়েছে। হেরিটেজ ওয়াকের মহাজন স্টোর থেকে অমৃতসরের বিখ্যাত আম পাপড়, মশালা পাপড়, রান্নার মশলা, বড়ি কেনা হল। প্যাকেটের ওজন দেখে চিন্তায় পড়ে গেলাম! ফ্লাইটে হ্যান্ডব্যাগ ৭ কেজির বেশি নিতে দিচ্ছে না! আর কত কিছু যে এই ১১ দিনে কেনা হয়েছে!! হোটেলে দুপুরে বিশ্রাম নিয়ে সন্ধেবেলা আমি নিজে একা হাঁটতে হাঁটতে গেলাম হেরিটেজ ওয়াকের আলোকসজ্জা দেখতে! সত্যি অপূর্ব লাগছে রাতের আলোয়। অমৃতসরী কুলচার খোঁজে ব্রাদার্স ধাবায় গেলাম। পার্সেল করে হোটেলে এসে ডিনার সারলাম। আগামীকাল কলকাতা ফেরার ফ্লাইট! এরপরে অন্তিম পর্ব লিখব বিভিন্ন তথ্যসমেত, সাথে থাকবেন।
৩০.১০.২০২০
আজ অমৃতসর থেকে ফেরার পালা। ইন্ডিগোর ফ্লাইট সকাল ৯.৪০এ। সকাল ৭টায় এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। তাই ওলা ডাইভারকে প্রি-বুকিং করা ছিল। অমৃতসর এয়ারপোর্টের দূরত্ব হোটেল থেকে ১৮ কিমি। তাই ভোর ৬টায় ট্যাক্সি এল। ড্রাইভার খুবই সজ্জন ব্যক্তি। আমার স্ত্রী বেশি চলাফেরা করতে পারছে না দেখে নিজেই ট্রলি এনে সব মালপত্র নিয়ে সিকিউরিটি পর্যন্ত পৌঁছে দিল। গেট থেকে ঢুকেই ইন্ডিগো কাউন্টারে বলতে ২ মিনিটে হুইলচেয়ার চলে এল। ১৫ কেজি করে দুজনের ৩০ কেজি মালপত্র বরাদ্দ, ওজন হল ২৯.৩ কেজি। সিকিউরিটি চেকিং করে গেট ২বি থেকে বাসে উঠে প্লেন পর্যন্ত হুইলচেয়ার এল। ইন্ডিগোর যে গ্রাউন্ড স্টাফ আমাদের সাথে সাথে ছিল তার সাহায্য ভোলার নয়! প্লেনে যেহেতু পাশাপাশি বসব তাই আমাকে PPE kit পরতে হল। যদিও শেষ পর্যন্ত তিনটে সীটের একটা খালিই ছিল। আমার স্ত্রীর বোর্ডিং পাস-এ স্পেশাল স্টিকার দেওয়া ছিল তাই দমদমেও ইন্ডিগো স্টাফ আমাদের হুইলচেয়ার সেবা প্লেন থেকে উবের ট্যাক্সি স্ট্যান্ড পর্যন্ত দিয়েছে। এবার আসি খরচের হিসাবে। আমি ফোন, ইমেইলে যোগাযোগ করে শিমলার গাড়ি বুকিং করি অগ্রিম ৫০০ টাকা গুগল পে করে। এ ব্যাপারে শিমলার মেয়ে প্রতীক্ষা শর্মা আমাদের অনেক সাহায্য করেছে! কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়, এত আন্তরিকতা পেয়েছি। শিমলা হোটেলে এসে আমার স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে বার বার আশ্বস্ত করেছে হুইলচেয়ার ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে। আমিও কিছুটা নিশ্চিন্ত ছিলাম স্থানীয় সাহায্য পেয়ে। শিমলায় ছিলাম হোটেল ডালঝিলে। এ জি চক পর্যন্ত গাড়ি যায়, বাকি ১০০ মিটার আমি হেঁটে গেছি, স্ত্রী প্রথমে চেয়ারে বিশ্রাম নিয়ে হেঁটেছে, পরে হুইলচেয়ার ওয়ালা লখীরাম সারাক্ষণের সঙ্গী ছিল। মণিকরণে হোটেল শিবালিকে ছিলাম। সেখানেও হুইলচেয়ার ব্যবস্থা আছে। নাগগর ক্যাসেলে hptdc প্রি বুকিং শুধু করেছিলাম। পরে 40% discount + free breakfast পেয়েছি! মানালিতে হোটেল রয়াল ভিউ কটেজ, হিড়িম্বা দেবী টেম্পল রোডে, দুর্গা মন্দিরের পাশে। ম্যাকলয়েড গঞ্জে হোটেল আকাশদীপ ওয়ো হোটেলে ছিলাম ভাগসু নাগ মন্দির রোডে। ডালহৌসিতে হোটেল নিউ মেট্রোতে। অমৃতসরে হোটেল মোমেন্টস ইন। সর্বত্র আমাদের যে শর্ত ছিল --- মিনিমাম ২-৩ টে সিঁড়ি, রিসেপশনের পাশেই ঘর, কমোড, গিজার, ড্রাইভারকে গদি ফ্রি দিতে হবে ও বাথরুম ব্যবহার করতে দিতে হবে, হোটেল হুইলচেয়ার ব্যবস্থা করে দেবে। শুধু নাগগর ক্যাসেলে ঘরটা রিসেপশন থেকে ১ মিনিটের হাঁটা ও গোটা ছয়েক সিঁড়ি ছিল। হোটেলে থাকা বাবদ ১৫০০০ টাকার অল্প কম খরচ হয়েছে। হুইলচেয়ার ভাড়া ঘণ্টা প্রতি ২৫০/-. আমরা কী খাবো সেটা কোথায় ছিলাম, সারাদিন ঘোরাঘুরির পর শরীরের অবস্থার ওপর নির্ভর ছিল। পাহাড়ে লং জার্নিতে (শিমলা -- মণিকরণ, মানালি -- ম্যাকলয়েড গঞ্জ) ডার্ক চকোলেট, ড্রাই ফ্রুটস অল্প অল্প খেয়েছি। নো লাঞ্চ। সকালে বমি নিরোধক ondem md 4 mg ডাক্তারের পরামর্শে খেয়েছি। অটল টানেল, সিসসু ১০০০০ ফুট উচ্চতায় বলে বমি নিরোধক ওষুধ খেতে ভুলিনি, যদিও মাত্র দেড় ঘণ্টায় ঘুরে এসেছি। ভীড় ছিল না। হিমাচলের স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা আমাদের মুগ্ধ করেছে। তাদের অন্তরিকতা মন ছুঁয়ে গেছে। হোটেল + গাড়ির প্যাকেজ চাইলে শিমলার মেয়ে প্রতীক্ষা শর্মার সাহায্য নিতে পারেন, ইমেইল আইডি পরে জানিয়ে দেবো। আর শুধু গাড়ি চাইলে টয়োটা ইটিয়সের ড্রাইভারের ফোন নং দিতে পারি। এখন ডিজেল লিটার প্রতি ৭০.৩৫, তাই গাড়ি দিন প্রতি ২২৫০/-। এতে সমস্ত ট্যাক্স, টোল, পার্কিং, ড্রাইভারের খাওয়া ধরা আছে। গুগল পে, ক্রেডিট কার্ড চলে। ফোন পে, পেটিএম পাওয়া যায় সর্বত্র। কেউ ৬ মাস বাদে গেলে রেট তফাৎ হতে পারে। হোটেলের সীজন / অফ সীজন রেট আলাদা। ট্যুর অপারেটর অনেক বড়ো বড়ো কথা, মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে শেষে শর্ত দেয় যে অগ্রিম টাকা না গেলে কোনোভাবেই ফেরত পাবো না। তাই ওইসব জোচ্চোরদের এড়িয়ে নিজে ফোনে হোটেল বুকিং করেছি কোনো টাকা না দিয়ে বা স্পট বুকিং। শুধুমাত্র নাগগর ক্যাসেলের রুম hptdc কে অনলাইন পে করেছি। সরকারি হোটেল, তাই নিশ্চিন্ত ছিলাম। আপাতত এখানেই বিদায় নিচ্ছি। হিমাচলে আবার যাবো। কিন্নর কল্পা, স্পিতি চন্দ্রতাল লেক বাকি আছে যে! দেবভূমি হিমাচল ও স্থানীয় মানুষের সহযোগিতা, আন্তরিকতা মনে থাকবে চিরদিন!
বেড়াতে এসে ভুরিভোজ (১)
হিমাচল ঘুরতে এসে স্পেশাল যা যা খাওয়া হয়েছে, ছবিসহ শেয়ার করছি। ১) হিমালয়ান ট্রাউট মাছ -- দুবার খাবার সৌভাগ্য হয়েছে। নাগগর ক্যাসেলে ও মানালিতে চপস্টিক রেস্তোরাঁয়। দুটোই অনবদ্য! গ্রীল্ড ট্রাউট মাছ, স্যালাড সহ, সাথে টারটার স্যস বা মেয়নিজ! আহা, জিভে স্বর্গের অনুভূতি! লোভ দেবেন না, আপনারাও সময় সুযোগ করে চলে আসুন! ২) হিমাচলি পোলাও --- বাসমতি চালের পোলাও তাতে কাজু, আখরোট, মাখনা স্পেশালি দেওয়া! চুপচাপ কথা না বাড়িয়ে স্যাটাস্যাট সাঁটিয়ে খান নাগগর ক্যাসেলে! ৩) আনারদানা মুর্গ --- বেদানা বেটে নরম মুরগির মাংসের সঙ্গে মাখোমাখো স্পেশাল আইটেম! আহা, চুপচাপ পাহাড় দেখতে দেখতে প্লেট খালি হয়ে গেল! বড্ডো ভালো আইটেম, পরের দিন বিল মেটানোর সময় নাগগর ক্যাসেলের শেফকে ডেকে পাঠিয়ে নমস্কার করে এলাম। করোনার কারণে হ্যান্ডশেক করা বারণ, তাই! ৪) কোথে --- মানালি মল-এ চপস্টিক রেস্তোরাঁয় খেলাম। চিকেন বা মটন মোমো একদিকে স্টিম করা, অন্যদিকে লালচে ব্রাউন টোস্ট করা! ১০ টায় এক প্লেট, দুপ্লেট খেলেও মন ভরবে না। বৌ বকবে তাই মাত্র হাফ প্লেট মানে পাঁচটা বরাদ্দ! ইস, ভালো জিনিস বোধহয় ভাগ্যে কম পাওয়া যায়! ৫) চিকেন থেন্তুক --- মানালি চপস্টিকে আরেক তিব্বতি রান্না, অনেকটা স্যুপি, ওয়ান্টন স্যুপের খুড়তুতো ভাই, সঙ্গে চিকেন তো আছেই! বৌয়ের ভয়ে ওয়ান বাই টু অর্ডার! ইস, পুরো এক বাটিও পেলাম না! ৬) টুনা সুশি --- মানালি চপস্টিকে এক প্লেটে আট পিস টুনা মাছ, গাজর, আদা কুচি দিয়ে সুশি বানানো, সাথে কালো স্যস, আদা কুচি! এটা মনের আনন্দে আহ্লাদে আটখানা হয়ে আটটাই খেয়েছি! ৭) ফিন ট্রান্সপারেন্ট ন্যুডলস -- রাইস ন্যুডলস, কিন্তু স্বচ্ছ। কলকাতায় কখনও দেখিনি, খাইনি! এক প্লেটে এত দেয় যে ৮টা সুশি খাবার পর ওপরের কাঠের সিলিং দেখতে দেখতে খেয়েছি! চপস্টিক জিন্দাবাদ! ৮) হট জিঞ্জার লেমন হানি --- গরম জলে আদা সরু লম্বা কুচি কুচি করে সেদ্ধ করে পাতিলেবুর রস, মধু দিয়ে বড়ো এক গ্লাস পানীয়। এই ৯° ঠাণ্ডায় খুব দরকারি পানীয়! মানালিতে দেখছি সবাই খাচ্ছে। ৯) মিনি হট গুলাব জামুন --- মানালি মলে ৩০ টাকায় ১০টা গরমাগরম গুলির সাইজের মিনি গুলাব জামুন। আমি একা খাবো বলে কিনলাম, বৌ প্রায় সব খেয়ে ফেলল! অগত্যা আবার আরেক প্লেট অর্ডার দিয়ে দূরে গিয়ে পুরোটা সাঁটিয়ে খেলাম, পাছে আরো চায়! না দিলে তো আমায় খেয়ে ফেলবে, কী জ্বালা!
বেড়াতে গিয়ে ভুরিভোজ ২
এবার যে যে খাবারগুলো মনে ধরেছে, পেটে হজম হয়েছে চটপট জানিয়ে দিই --- ১) ড্রাই থুকা --- দেখতে চাউমিন বা নুডলসের মতনই। কিন্তু এটা থুকপার শুষ্ক সংস্করণ! নামটাও থুকপা নয়, থুকা! খেলাম ম্যাকলয়েড গঞ্জে মেইন স্কোয়ারে টিবেট কিচেনে! ২) শা ভাকলাব --- মটন কিমার রসালো পুর করে বেশ বড়ো সাইজের ডাম্পলিংকে ফ্রাই করা। কামড়ালে ঠোঁটের পাশ দিয়ে মটন কিমার রসালো জ্যুস গায়ে পড়বেই! আহা, আবার কবে খাবো?! ৩) টিং মো --- তিব্বতি পাউরুটি, কিন্তু গোল বলের মতো, আর লাচ্চা পরোটার মতো থাকে থাকে মোড়া। সবচেয়ে বড়ো কথা হল, আমরা কলকাতায় যে পাউরুটি খাই, তার চারদিক ব্রাউন করে বেক করা। কিন্তু টিংমোতে এই ব্রাউন বেকড লেয়ার নেই। পুরোটাই নরম তুলতুলে খরগোসের মতো নরম। শুনলাম হাতে তৈরি পাউরুটি টিংমো! আমরা কি তাহলে পা দিয়ে ঠেসা পাউরুটি রোজ খাই কলকাতায়!! ৪) কুংপো চিকেন --- চীনেবাদাম, কাজুবাদাম, সয়া স্যসে বোনলেস চিকেন দিয়ে লা জবাব স্বাদ! আহা, চুমেশ্বরী পার্ফরমেন্স টিবেট কিচেনের শেফের! উপরের সব খাবার টিবেট কিচেন, ম্যাকলয়েড গঞ্জে। ৫) অমৃতসরী ফিস কাবাব, মাখখন ফিস, মাজিতা রোড --- এই রেস্তোরাঁ পৃথিবী বিখ্যাত অমৃতসরী ফিস কাবাবের জন্য। স্থানীয় মাছ সাঙ্গারা ও শোল মাছ এই দুটোর ফ্রাই, কাবাব পাওয়া যায়। আমরা শোল মাছের কাবাব অমৃতসরী স্টাইলে খেলাম। এই প্রথম দেখলাম বৌ নির্দ্বিধায় মেনে নিল যে এরকম রান্না আগে কখনও খায়নি! যাক বাবা, বৌয়ের রান্নার থেকেও ভালো কিছু হয়, এটা জানা গেল! আমি তো চুপচাপ টুপটাপ কাবাব খাচ্ছি! আর দেখছি বৌকে, এই আইটেমের দরাজ প্রশংসা করতে! ইস, আমার প্রশংসাও যদি কখনো করত!! ৬) মটন কিমা নান উইথ গ্রেভি --- নানের ভেতর মটন কিমার পুর, সাথে কিমার গ্রেভি, মানে সাদা বাংলায় কিমার থকথকে ঝোল! কিন্তু মশলার গুণে ঐ কিমার ঝোলও হাপুস হুপুস করে খেয়ে ফেল্লাম! বড্ডো ভালো খেতে! কলকাতায় পাওয়া যায় কিনা খুঁজে দেখতে হবে। www.makhanfish.com এদের ওয়েবসাইট। দেখলে হবে? খরচা আছে বস, ফ্যামিলি নিয়ে চেটেপুটে খেয়ে আসতে হবে, তবেই না ভোজনরসিক বাঙালি!!
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |