আজ আর বেশী কথা নয়, দু চোখ ভরে দেখবো ছিটকুলের সৌন্দর্য। ভোরবেলায় ঘুম থেকে উঠে ঘরের জানলা দিয়েই দেখা - রাতের আঁধার পেরিয়ে ছিটকুল জাগছে। পাহাড়ের চূড়ায় সোনালী রঙ, এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যেখানেই বরফ, সেখানেই গলানো সোনা। কিন্তু সেই দুর্লভ সোনালী মুহূর্ত কতক্ষনের ? কয়েক মিনিট মাত্র, তারপরেই ফুটে ওঠে তুষারের নিজস্ব শ্বেতশুভ্র রঙ। দিনের ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়, আমিও বেরিয়ে পড়ি একটু দূরে নদীর পাড়ে গিয়ে ছিটকুলের প্রকৃত রূপের কিছুটা অন্তত অনুভব করতে।
এখানকার হোটেল এলাকাটি খুব ছোট, কয়েকটি হোটেলের পরেই সম্পূর্ণ জনহীন প্রান্তর। সেই প্রান্তর দিয়ে পথ চলে গেছে নদীর দিকে। যেতে যেতে পাহাড়ের কোলেই নীচে একটি স্কুল। পাশ দিয়ে সমান্তরালে বয়ে চলেছে ঝর্ণা। এই ঝর্ণার জলই এখানে সব হোটেলে যায়। অফুরন্ত সেই জল, তাই জলের কষ্ট নেই এখানে। পথ চলতে চলতে এসে পড়ে নদীর পাড়, পাথর ডিঙিয়ে সেই নদীর পারে যাওয়া, পাথরের ওপর দিয়েই তার বয়ে যাওয়া। আর সামনেই হাতের কাছে তুষার মৌলি গিরিশৃঙ্গ, শ্বেতশুভ্র প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে এদিক থেকে ওদিকে।। পথ চলে গেছে তার দিকে, চীনের সীমানার অভিমুখে। বসপা নদী বয়ে আসছে সেই পাহাড়ের ঠিকানা থেকেই। নদীর ওপারে সবুজ গাছের প্রাচীর। গাছের সেই সবুজ, নদীর ধূসর রঙ, বরফের শুভ্র চমক, আকাশের নীল - সব মিলিয়ে এক দুরন্ত ক্যানভাস - স্রষ্টার তুলির ছোঁয়া সবখানে। আমি একাকী মানুষও সেই মুহূর্তে সেই ছবির মধ্যে মিশে - বিস্ময়ে নির্বাক। বাক্যহারাই হতে হয় এখানে - কোনো কথা মুখ দিয়ে সরে না, কথা বলতেও নেই এখানে। এখানে কথা বলবে শুধু নদী, গাছ, পাখী আর পাহাড়। নিস্তব্ধতার একটা ভাষা আছে, নদীর শব্দে আছে সঙ্গীত। সেই ভাষাকে বুঝতে হয়, সেই সংগীতকে বুকের মধ্যে ভরে নিতে হয়। আর আসতে হয় সকালের দিকে। বেশী বেলা হয়ে গেলে সাংলা থেকে আসা ট্যুরিস্টদের ভীড় সেই নিস্তব্ধতা হরণ করে। প্রকৃতি তখনো একই থাকে, শুধু তার ভাষা চাপা পড়ে যায় কোলাহলের শব্দে একটাই অনুরোধ - সব ছবি গুলো দেখবেন। পরতে পরতে বিস্ময়, পাহাড়ের আর উপত্যকার এক একরকম রূপ। আমি ফটোগ্রাফার নই, তবু চেষ্টা করেছি অপটু হাতেই কিছু ছবি তুলে ধরতে স্বর্গের কাছাকাছি সেই ভূস্বর্গের।
Post By:- Subrata Ghose
0 Comments
ছিটকুল ছেড়ে এবার কল্পা। আমি আমার ভ্রমণের ক্রম হিসেবেই লিখে যাচ্ছি পরপর, কিন্তু আজ মনে হচ্ছে, আমার ক্রম বা schedule যাই হোক না কেন, লেখার সময় ছিটকুলকে শেষে রাখলেই ভালো হতো। কারণ ওখানে যা দৃশ্য দেখে এসেছি, যার ছবি দিয়েছি আমার আগের পর্বে, তার পর আর কিছু সেভাবে ভালো লাগার কথা হয়তো নয়। তবু, ক্রম বজায় রেখেই যখন লিখছি, তখন উপায় নেই - স্বর্গ থেকে অবরোহণ করে এবার কল্পার দিকেই যেতে হচ্ছে। সেটিও সুন্দর জায়গা, তবু ছিটকুলের সৌন্দর্য বোধহয় আর কোথাওই মিলবে না।
ছিটকুল থেকে যাত্রা শুরুর পর পাশে সবসময়েই বরফের পাহাড়। তবু চোখে লেগে থাকে ছিটকুলের সৌন্দর্য। রাস্তা খারাপ নয়, তবু কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা বেশ বিপজ্জনক আর ভাঙাচোরা, সেখানে হাতের কাছের পাহাড়ও বেশ রুক্ষ। তবে সেটা রাস্তার কিছুটা অংশ, বাকি পথ ভালোই। কল্পাও ছোট জায়গা, তবু তার কিছু আগেই গাড়ী এসে দাঁড়ায় রেকনপিও বলে একটি জায়গায়। ছিটকুলের আগে সাংলা যেমন একটি বড় শহর, কল্পার আগেও তেমনই একটি বড় জায়গা এই রেকনপিও। দোকানপাট, বাজার, ব্যাঙ্ক, রেস্তোরাঁ সব আছে এখানে। আছে বাসস্ট্যান্ড, গাড়ী আর বাস রাখার বড় জায়গা। তাই এখানে সব গাড়িই দাঁড়ায় বেশ অনেকক্ষণ। সেই সময়টুকুর মধ্যে কেউ কিছু কেনাকাটাও করে নিতে পারেন প্রয়োজনে। কারণ এখান থেকে কল্পা মিনিট চল্লিশের পথ, কিন্তু সেটি ছিটকুলের চাইতে বড় জায়গা হলেও, সেখানেও কিন্তু দোকানপাট খুব বেশী নেই। তাই দরকারী কেনাকাটা সেরে নিতে হয় এই রেকনপিওতেই। রেকনপিও ছাড়িয়ে মিনিট চল্লিশের মধ্যেই কল্পা।এখানেও প্রকৃতি আর পাহাড় - দূর থেকে দেখা পাহাড়ের তুষারমন্ডিত রূপ। তবু এখানকার রূপ আলাদা ছিটকুলের চাইতে। ছিটকুলে আছে পাহাড়, নদী আর গাছে ঘেরা উপত্যকা, কল্পাতে কিন্তু দূর থেকে দেখা শুধুই পাহাড়। সেই কল্পার কথায় আসবো আমার আগামী পর্বে।
Post By:- Subrata Ghose
অনিন্দ্যসুন্দর চন্দ্রতালের পথে।। ( a journey towards heaven of the great HIMALAYA)
HOMAGNI GHOSH. ( হোমাগ্নি ঘোষ)। Heaven is Myth, but the HIMALAYA is real. যতদূর চোখ যায় শুধু আদি অনন্ত দিগন্ত জোড়া নীল আকাশ, তার মধ্যে ভেসে বেড়াচ্ছে ভারী কল্পনার রঙ্গে মোড়া সাদা দুধের মেঘের ভেলা। দুরে সারি সারি ধুম্র পাহাড়ের গিরিরেখা তাদের চূড়ায় মাখানো বরফের হাতছানি। পাশে চলতে থাকা বহু পাহাড়ি পথের অভিযাত্রী ইন্দ্রদা বলল- আর কতটা বলতো রাস্তা তো ফুরাচ্ছে না। বিস্তীর্ণ সবুজ উপত্যকার ঢাল বরাবর আমরা উঠে চলেছি। একদম শেষ প্রান্তে উঠে দেখতে পেলাম সারি সারি পাহাড়ের মাঝে সবুজ নীল জল, যেন কোন শিল্পী পান্নার সবুজ আর নীল প্রবালের সমস্ত নীল সেই জলে মিশিয়ে দিয়েছে, স্বচ্ছ বিস্তৃত প্রায় ১৪২০০ ফিট উচ্চতার হিমাচল প্রদেশের cold desert biosphere reserve এর অন্তর্গত সেই দারুন সুন্দরী হ্রদ যা চন্দ্রতাল অথবা lake of moon নামে পরিচিত। এখান থেকেই চন্দ্রভাগার চন্দ্র নদীর উৎপত্তি। পাশে দাঁড়ানো দুজন বিদেশী রোদ চশমা খুলে মাথা নত করে বলল- it is the heaven ,a real heaven. হিমাচল প্রদেশের স্পিতি ভ্যালীর অন্তর্গত হামতা পাস ট্রেক শেষ করে আমি আর ইন্দ্রদা ছাত্রু ক্যাম্প থেকে চলে এসেছি চন্দ্রতালের পথে। হিমাচল প্রদেশের এই অংশের রাস্তার সাথে লাদাখের অনেক মিল পাওয়া যায়, এত ভয়ংকর সুন্দর রাস্তার বর্ণনা শুরু করলে তা চলতেই থাকবে। তীব্র শীতল মরুভুমি, রুক্ষ পাহাড়ি এবড়ো খেবড়ো রাস্তা মাঝে মাঝে সেই রাস্তার গতি পরিবর্তন করছে কোথা থেকে চলে আসা এক পাহাড়ি ঝোড়া। রাস্তার কিছু কিছু অংশ তীব্র rockfall zone, এই সমস্ত অংশ পার করার সময় খুব সাবধানে এবং সতর্ক থাকতে হয়, কারন সামান্য কথার কম্পনেও ঝুরো পাথর ঝরে পরতে পারে। যদি কেউ শুধু এই অপূর্ব সুন্দর চন্দ্রতাল হ্রদের স্বাদ নিতে চান হিমালয়ের এই গভীর ঘন প্রাকৃতিক আদিমতায়, তারা প্রথম দিল্লি হয়ে বাসে মানালি পৌঁছান সেখান মাত্র ১৩০ কিলোমিটার পার হলেই স্বর্গ। নীল সবুজের চন্দ্রতাল সম্পর্কে আসুন জেনে নি দারুন কিছু তথ্য। হিমাচল প্রদেশের শীতল রহস্যে মোড়া স্পিতি উপত্যকায় প্রায় ৪৩০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই অনিন্দ্যসুন্দর হ্রদের আঁকার প্রায় কাস্তের চাঁদের মত তার থেকেই এই নামকরন। ভারতবর্ষের উচ্চতম wetland( ramsar site) হিসেবেও চন্দ্রতাল স্বীকৃত। এই অসাধারণ চন্দ্রতাল ট্রেকারদের কাছেও স্বর্গরাজ্য, কুনঝুন পাস বাতাল হয়ে চন্দ্রতালে ট্রেক করে আসা যায়। চন্দ্রতাল হ্রদে যখন পউছালাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। দেখলাম জলের রঙ সময়ের সাথে সাথে সবুজ নীল থেকে আরও সবুজে পরিনত হচ্ছে। দেখা হল এক ঝাঁক ইজরায়েলের অভিযাত্রীদের সাথে, তারা সরাসরি মানালি থেকে এসেছে ওরা দুদিন চন্দ্রতাল ক্যাম্প সাইটে ( হ্রদ থেকে ৩ কিমি দুরত্বে) থাকবে। ওদের দলের একজনের নাম চাভা , নামের মানে ওদের ভাষায় জীবন। উনি সন্তানসম্ভবা , তথাকথিত ঈশ্বর বিশ্বাসী নন, কিন্তু চাভা্র দৃঢ় বিশ্বাস তার গর্ভের সন্তান এই বিশাল ব্যাপ্তিময় গিরিরাজ হিমালয়ের প্রানের ছোঁয়া পেলে সেই সন্তানেরও একদিন এই হিমালয়ের মতনই বিশাল হৃদয় হবে। এই আশাতেই সুদূর ইজরায়েল নিবাসী সন্তানসম্ভবা চাভা সমস্ত কিছুকে জয় করে এসেছে এই রুপলাবন্যে মাতোয়ারা চন্দ্রতালের কোলে হিমালয়ের আশীর্বাদের আশায়। চন্দ্রতালের জলের সীমানার পাশেই প্রচুর প্রেয়ার ফ্ল্যাগস, কিছুক্ষণ সেখানে ছবি তোলার পর আমাদের গাইড সচিন ভাইয়া বলল- উপর মে চলও আচ্ছে সে ভিউ দেখেঙ্গে। পুরো হ্রদের পরিধি বরাবর ঘুরে তার গা ঘেঁসে সবুজ উপত্যকা বরাবর উপরে উঠতে লাগলাম এই রূপবতী হ্রদের নতুন রূপ দেখব বলে। শেষ বিকেলের আলোয় চারপাশের নীল কালো ধূসর পাহাড়, তাদের মাথায় পরা বরফের টোপর, মাথার উপর অনন্ত অন্তহীন নীল আকাশ, সবুজ গালিচার ঘাসের বিছানায় অজস্র পাথর, তার মাঝে পাহাড়ের গা থেকে ভেসে আসা ঠাণ্ডা কনকনে বাতাস, সত্যি না এলে বোঝা যায়না হিমালয়ের বুকে স্পিতি ভ্যালীর এই ম্যাজিক। প্রায় আধঘণ্টা চলার পর যখন এই ঢালু পাহাড়ি উপত্যকার শেষ সীমানা দেখতে পেলাম তখন হটাত সচিন এসে আমার আর ইন্দ্রদার চোখ বেঁধে দিল রুমালে, আর মুচকি হেঁসে বলল- আব সারপ্রাইস। অন্ধের মত কিছুটা পথ চলার পর সচিন খুলে দিল আমাদের চোখের বাঁধন। চোখের পাতা খুলে যা দেখলাম এককথায় অবিশ্বাস্য অবর্ণনীয়, আমি আবার ঈশ্বর কে দেখলাম। গোধূলির শেষ আলো মিশেছে চন্দ্রতালের নীল সবুজ স্বচ্ছ জলের আস্তরনে, সেই জল এখান থেকে আর নীল লাগছে, আর সেই নীল আকাশের বুকে আশ্রয় খোঁজা মেঘের ছায়া ডানা মেলেছে হ্রদের বুকের কুঠুরিতে। নীল রঙের আসমানি জল মিশেছে আকাশের ঘন নীলের সাথে আর সেই জল আকাশের সীমান্তে সূর্যের আলো তার প্রতিবিম্ব খুঁজতে ব্যাস্ত। প্রাচীন রূপকথা অনুযায়ী এই পবিত্র হ্রদেই অবগাহন করে পার্বতী শিবকে পুজা করেন। দূর দিগন্তবিস্তৃত নিস্তব্ধ সেই উপত্যকা যেন মিশে গেছে প্রকৃতির নীল রঙের তুলিতে। mind blowing,awesome শব্দগুলো যেন তুচ্ছ এই সময়ে, চোখ ভিজে যাচ্ছে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার্থিব ভালোবাসায়। আমিও চোখ বুজে মনে মনে বললাম- I am lucky , I am in heaven. আমার আর মৃত্যুভয় নেই আমি স্বর্গকে দেখে নিয়েছি । There was no one to whom he could explain that in order to survive he needed to be at altitude, a HIAMALAYAN altitude, so he might breathe. হোমাগ্নি ঘোষ।
Post By:- Homagni Ghosh
আগের দিন (৫ জুন) সকাল সাতটা নাগাদ সিমলা থেকে রওনা দিয়েছিলাম মানালির উদ্দেশ্যে। আসার পথে সুন্দর নগরের লেক, প্যান্ডো বাঁধ, অউট টানেল পেরিয়ে বিপাশা নদীকে সাথে নিয়ে মনীকরণ এর উষ্ণ প্রস্রবণ এবং গুরুদ্বারা দেখে মানালি যখন পৌঁছই, ঘড়ি তে তখন রাত সাড়ে নটা। পাহাড়ী রাস্তায় প্রায় ১২ ঘণ্টার ওপর গাড়িতে চড়ে জার্নি করে কোমরের বল বিয়ারিং সব খুলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল আর কি। কিন্তু পাহাড়ের অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য এবং মনের মধ্যে পুষে রাখা বহুদিনের সেই স্বপ্ন "মানালি ভ্রমণ" অবশেষে পূরণ হতে চলেছে এই আনন্দের কাছে শরীরের সমস্ত কষ্ট ই উপেক্ষণীয় ছিল।
গতকাল রাতের অন্ধকারে মানালি- র সাথে আলাপ টা ঠিক মতো জমাতে পারিনি, তাই পরদিন খুব ভোর ভোর ই ঘুম থেকে উঠে পরি। ঠান্ডা ঠান্ডা ভেজা ভেজা হাওয়া বইছিল, শরীর জুড়িয়ে যাচ্ছিল। রাতের দিকে বৃষ্টি হওয়াতে গাছ গুলোও সবুজ সতেজ হয়ে যেনো আমাকে সুপ্রভাত জানাচ্ছিল। মানালি ম্যাল রোড থেকে কিছু টা ওপরে হিরিম্বা রোড এর ওপর হিরিম্বা মন্দির থেকে আরও কিছুটা এগিয়ে গেলে ডান দিকে পাইন ও ইউক্যালিপটাস ঘেরা একটা ছোট্ট গ্রাম - ধুংরি গ্রাম। এর ই মাঝে আমাদের হোম স্টে - হোটেল স্প্রিং হাউস। এই হোটেল এর পেছনের জঙ্গলে শুটিং হয়েছিল রনবীর কাপুর ও দীপিকা পাডুকোন অভিনীত হিন্দি সিনেমাটি - Yeh Jawani Hai Deewani। ঘুম থেকে উঠে ঘরের জানলা দিয়ে আর বারান্দায় দাঁড়িয়ে প্রায় অনেকক্ষন ধরে মানালির বৃষ্টি ভেজা সকাল টাকে অনুভব করছিলাম। দূর থেকে দেখা যাচ্ছে মেঘে ঢাকা কালো কালো পাহাড়, তার পরই সারি সারি ইউক্যালিপটাস গাছ, যেনো তারা দাঁড়িয়ে থেকে মানালি কে পাহারা দিয়ে যাচ্ছে অবিরত। বেরিয়ে পড়লাম ক্যামেরা টা নিয়ে, একের পর এক লেন্সবন্দি করতে লাগলাম দৃশ্য গুলো। দূর থেকে গাছগাছালির কোলে হোটেল টা দেখতে ভালো ই লাগছিল বেশ। নিবিড় সবুজে ঘেরা গ্রাম, সেই সবুজের কত বাহার - গাঢ় সবুজ, ফিকে সবুজ, নীলচে সবুজ। ভালো করে ঘুরে ঘুরে দেখলাম হোটেল টার চারপাশ। সামনের মাঠ টাতে কিছু ইউনিফর্ম পরা স্কুল বা কলেজের ছাত্র এসে কিসব মাপঝোক করছিলো, হয়ত তাদের কোনো প্রজেক্ট এর কাজে এসছে। তিনটে কুকুর আপন মনে দৌড়ে বেড়াচ্ছে আবার বিশ্রাম নিচ্ছে, আবার খেলছে নিজেদের মধ্যে। চারপাশের এই স্নিগ্ধ মনোরম পরিবেশ থেকে চোখ সরাতে ইচ্ছা ই করছিলো না। কিন্তু না, রেডি হতে হবে তো। মানালি যে আরো অনেক সম্ভার নিয়ে বসে আছে, সেগুলো এক এক করে দেখতে হবে তো। হোটেল ফিরে চা, বিস্কুট খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম মানালির বুকে। আজ যাবো সোলাং ভ্যালি। সিমলা ভ্রমণের সম্পূর্ণ ভিডিও :https://youtu.be/Ma9yU_3k4OY মানালি ভ্রমণ এর সম্পূর্ণ ভিডিও: https://youtu.be/NOgLSbtALlw আগের পর্ব (মনিকরণ) : https://m.facebook.com/groups/1922977934681348?view=permalink&id=1987304521582022
Post By:-Mily Ghosh
"যাঃ এ তো দেখছি বন্ধ! " ক্যাফে 1947 এর সামনে গিয়ে দরজা বন্ধ দেখে একটু নিরাশ হলাম। গুগল থেকে আগে থেকেই দেখে রেখেছিলাম এই ক্যাফে টিকে। কলকাতায় থেকে উইকএন্ড গুলোতে চারদিকে এত রেসটুরেন্ট, ক্যাফে যাই আর মানালি তে এসে এখানকার একটা দুটো ক্যাফে তে পায়ের ধুলো দেবো না? পাহাড়ে কোনো ক্যাফে তে বসে গরম গরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে সেই মুহূর্ত টাকে উপভোগ করার স্বাদ কি আর কলকাতা শহরে পাবো? যদিও এই ইচ্ছার খানিক টা পূরণ করেছিলাম সিমলা তে জাখু মন্দিরের "cafe Under Tree" তে যেটা সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে অবস্থিত ক্যাফে। সেখানে সঙ্গী ছিল হট চকোলেট, কিন্তু আজ কফি চাই ই চাই। অগত্যা ক্যাফে 1947 বন্ধ দেখে খোঁজ লাগলাম আর কোথায় ভালো ক্যাফে আছে। খুঁজে পেলাম জনসন ক্যাফে।সেখানে প্রাতঃরাশ সেরে এবার গাড়ি এগোলো সোলাং ভ্যালি-র পথে। মানালি থেকে মাত্র ১১ কিমি ওপরে অবস্থিত সোলাং ভ্যালি। গাড়ি তে গেলে ৪৫ মিনিট এর মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায়। কিন্তু ওই ৪৫ মিনিট এর জার্নি তে গাড়ি তে যেতে যেতে দুই ধারে যা অপরূপ দৃশ্য, তা সত্যি অবর্ণনীয়। যত ওপরে উঠছি, মানালি শহর টা তত আরও বিস্তৃত হচ্ছে, সামনে ঘন সবুজ গাছের ঝার, দূরে মানালি শহর টা, তারও দূরে সবুজে মোড়া পাহাড়, তার ওপরে পুঞ্জীভূত মেঘ, এক কথায় এ যেনো স্বপ্নের দেশ। এঁকে বেঁকে রাস্তা টা ওপরে উঠে গেছে, তাই ক্যামেরা টাও রাস্তার সাথে তাল মিলিয়ে কখনো বাঁ দিকে ঘুরছে, কখনো ডান দিকে। যেতে যেতে হঠাৎ পবন বলে উঠলো "ও দেখিয়ে, ও হ্যায় কৃষ্ কা দাদি কা ঘর"। সামনে তাকিয়ে দেখি একটি কাঠ এর বাংলো, খুব চেনা চেনা। সত্যি তো, এখানেই তো কৃষ সিনেমা তে কৃষ এবং ওর দিদা থাকতো।বাঁ দিকে যে গাছের ঝাড় দেখা যাচ্ছিল, ওখানেই নাকি কৃষ সিনেমা তে প্রিয়াঙ্কা চোপরার প্যারাসুট ছিঁড়ে পড়ে যাওয়ার শুটিং টা হয়েছিলো।ঘরে বসে সিনেমায় দেখা যায়গা গুলো যখন বাস্তবে চোখের সামনে আসে, তখন সে এক আলাদাই নস্টালজিক অনুভূতির সৃষ্টি করে। মানালি ভ্রমণের ভিডিও: https://youtu.be/NOgLSbtALlw আগের পর্ব (মানালির প্রথম সকাল) : https://m.facebook.com/groups/1922977934681348?view=permalink&id=1995198467459294 Post By:- Mily Ghosh
সিমলার কাছে পিঠে ভ্রমণ আমার সমাপ্ত হলো। এবার পাড়ি একটু দূরের পথে। প্রথম গন্তব্য সারাহান। তবে, মুস্কিল হলো - এখন থেকে বাকী জায়গাগুলি - অর্থাৎ সারাহান, ছিটকুল হয়ে কল্পা – সবই কিন্তু ট্যুর কোম্পানীর সঙ্গে। তাই আগের মত স্বাধীনতা আমার আর থাকবে না । এখন থেকে বাঁধাধরা সময়ে বাঁধাধরা জায়গা দেখা। তবু , তার মধ্যেই চেষ্টা থাকবে আমার নিজের মতো করেই যতটা পারা যায় দেখে নেওয়ার। সিমলা থেকে সারাহানের দূরত্ব প্রায় ১৭০ কিলোমিটার - গাড়িতে সময় লাগে প্রায় আট ঘণ্টা। এর মধ্যে অবশ্য মাঝখানে দুপুরে খাওয়ার সময়ের বিরতিও ধরা আছে। পাহাড়ী পথে প্রতি বাঁকেই সৌন্দর্য, এক এক জায়গায় পাহাড়ের এক এক রকম রূপ। তাই ক্লান্তি লাগলেও একঘেঁয়ে লাগে না। পথের দুপাশে পাহাড়, অনেক জায়গায় ঘন সবুজ গাছের জঙ্গলে ভর্তি। আবার কিছু জায়গায় পাহাড়ের গায়ে আপেলের চাষ - গরম কালে কচি আপেল যাতে পাখিরা না খেয়ে যায় , তাই ঢেউ খেলানো সাদা চাদর দিয়ে ঢাকা দেওয়া। দূর থেকে দেখলে হঠাৎ মনে হয় যেন পাহাড়ের গায়ে বরফের আস্তরণ। অনভ্যস্ত চোখে চমক লাগে প্রথমে, কাছে গিয়ে ভুল ভাঙে। সকাল এগারোটা নাগাদ সিমলা থেকে যাত্রা শুরু করে দুপুরে খাওয়ার পর বিকেলে একটু ক্ষণিক বিরতি পথের পাশেই একটি সুন্দর মন্দিরে। সিমলা থেকে প্রায় ১৩০ কিলোমিটার দূরে, খোপরি বলে একটি জায়গায়, হাইওয়ের ওপরেই একটি আধুনিক দুর্গা মন্দির, সঙ্গে একটি ছোট্ট বাগান। সেখানে একটি ছোট শিব মন্দির, আর পাশে বীরাসনে বসা একটি বিশাল হনুমান মূর্তি। এই মন্দিরের ভেতরেও অনেকখানি কাঁচের কাজ, ওপরে ছাতের নীচে কাঁচের প্যানেলে বিভিন্ন দেবী মূর্তি। দেবী এখানে আমাদের পরিচিত সিংহবাহনা মহিষাসুরমর্দিনী। তবে দশভূজা নন, ষোড়শভূজা। মন্দিরটি বেশ নতুন - মাত্র ২০০০ সালে তৈরি। তবু দেখলাম, যাতায়াতের পথে প্রায় সব গাড়িই এখানে একটু দাঁড়িয়ে, কিছু প্রণামী দিয়ে তবে এগোয়। পাহাড়ের পটভূমিতে, দুর্গা আর শিব দুটি মন্দির, সঙ্গে ছোট্ট সুন্দর বাগানে উজ্জ্বল রঙের হনুমানজি - সব মিলিয়ে পড়ন্ত বিকেলে মনে বেশ একটা শান্তি আর ভালো লাগার সঞ্চার করে। Post By:- Subrata Ghose
আগেই জানানো হয়েছে ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে সিমলা ধীরে ধীরে পরিণত হয় ব্রিটিশদের একটি অত্যন্ত প্রিয় শহরে আর সেই সঙ্গে একসময় ভারতের শীতকালীন রাজধানী হিসেবে। স্বাভাবিকভাবেই প্রচুর ঐতিহাসিক বা Heritage Building আছে এখানে । সেই গুলিকে ঘুরিয়ে দেখানোর জন্য এখানে ব্যবস্থা আছে Heritage Walk এর। রিজে, ম্যাল রোডে, বা শহরের অন্যত্র পর্যটন বিভাগ থেকে বিভিন্ন বোর্ডে এই সব Heritage Walk এর বিজ্ঞপ্তি দেওয়া আছে। অন্তত, তিনটি আলাদা আলাদা রুট ধরে, হাঁটার মাধ্যমে, এখানকার বহু পুরনো বাড়ী আর তাদের ইতিহাস সম্পর্কে সবাইকে পরিচয় করানো হয়। উৎসাহী মানুষরা পর্যটন বিভাগে যোগাযোগ করলে তাঁরা যোগাযোগ করিয়ে দেন কিছু এজেন্সির সঙ্গে, যাঁরা উৎসাহীদের এই সব বাড়ীগুলি ঘুরিয়ে দেখান, সরকারের পর্যটন বিভাগ থেকেও তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা হয়। কোন শহরের ইতিহাস আর ঐতিহ্যকে জানতে ও বুঝতে এইসব Walkএর মুল্য অপরিসীম। আমার নিজের ইচ্ছে ছিল, এই ধরণের কিছু Walkএ অংশ নেবার, কিন্তু সময়ের সংক্ষিপ্ততায় তা সম্ভব হয়নি। তবু, নিজের আগ্রহে, ম্যাল রোডের কাছে, এই ধরনের কিছু বাড়ী আমি বাইরে থেকে দেখার চেষ্টা করেছি। আজ সিমলা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে এইরকমই কয়েকটি বাড়ী দেখে নেব আমরা। তবে মনে রাখতে হবে আমাদের আগে দেখা সিমলা কালীবাড়ি, ক্রাইস্ট চার্চ, সিমলা নিউজিয়ামের বাড়ী Inverarm, IIAS, Gaiety Theatre, আশিয়ানা রেস্তোরাঁ – এগুলো সবই কিন্তু এক একটি হেরিটেজ স্থাপত্য। 𝐒𝐢𝐦𝐥𝐚 𝐒𝐭𝐚𝐭𝐞 𝐋𝐢𝐛𝐫𝐚𝐫𝐲 - রিজের ঠিক ওপরেই ক্রাইস্ট চার্চের পাশেই পাথর আর কাঠের মিশেলে তৈরি এই লাইব্রেরী। ১৮৬০ সালে তৈরি এই লাইব্রেরী দেড়শো বছর পেরিয়েও আজও জীবন্ত। 𝐒𝐢𝐦𝐥𝐚 𝐆 𝐏 𝐎 - রিজ থেকে কালী বাড়ির দিকে যেতে একেবার সামনেই পড়ে সিমলা G P O । Conny Cottage নামের এই বাড়িতে ১৮৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ভারতের অন্যতম প্রাচীন পোস্ট অফিস। মূলতঃ কাঠের তৈরি এই চারতলা বাড়ীটি ইংল্যান্ডের পাহাড়ী স্থাপত্যের একটি সুন্দর নিদর্শন। ১৯৯২ সালে এটি দেশের একটি হেরিটেজ পোস্ট অফিস হিসেবে ঘোষিত হয়। 𝐁𝐚𝐧𝐭𝐨𝐧𝐲 𝐂𝐚𝐬𝐭𝐥𝐞 - সিমলার রিজ থেকে কালীবাড়ির দিকে যেতে গেলে ডানদিকে পড়ে দুটি দুর্গ আকৃতির বাড়ী, খুবই ভাঙাচোরা অবস্থায়। ১৮৮০ সালে তৈরি এই Bantony Castle ছিলো সিরমৌরের মহারাজার প্রাসাদ, পরে সেখানে তৈরি হয় ব্রিটিশ সরকারের মিলিটারি অফিস। রাস্তার পাশেই, নির্জনে পড়ে থাকা অদ্ভুত স্থাপত্যের এই বাড়ী দুটি, রাত্রিবেলার অন্ধকারে কেমন যেন এক ভৌতিক রূপ নেয়। বর্তমানে এই প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত ক্যাসেলটি হিমাচল সরকার অধিগ্রহণ করেছেন এবং সরকারের তরফে এখানে একটি মিউজিয়াম আর পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই ভবিষ্যতে এখানকার চেহারা সম্পূর্ণ বদলে যেতে পারে। 𝐔𝐂𝐎 𝐁𝐚𝐧𝐤 - 𝐒𝐢𝐦𝐥𝐚 - ওই একই রাস্তায় ডানদিকে পড়ে ইউকো ব্যাঙ্ক। বাড়ীটি হয়তো ঐতিহাসিক নয়, তবু নজর কাড়লো এর প্রবেশ দ্বারটি। পাহাড়ের গায়ে একটা গুহার মতো করে তার মধ্যে দিয়ে প্রবেশের সিড়ি। বেশ নতুনত্ব । 𝐆𝐫𝐚𝐧𝐝 𝐇𝐨𝐭𝐞𝐥 - 𝐒𝐢𝐦𝐥𝐚 - রিজ থেকে কালীবাড়ি যেতে ডানদিকে পড়ে সিমলার এই পুরোনো হোটেল। ১৯২৯ সালে এখানেই ছিল ' Bentinck Castle ', যেটি ছিল গভর্নর জেনারেল William Bentinck এর বাসস্থান। পরে নানা হাত ঘুরে এটি ১৮৯২ সালে পেলিটি সাহেবের হাতে এসে নতুন ভাবে একটি হোটেলে রূপান্তরিত হয়। পরে এটি সরকারের নগরোন্নয়ন দফতরের হাতে আসে, এবং এখন এই ঐতিহাসিক হোটেলটি সরকারী কর্মচারীদের হলিডে হোম হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। 𝐂𝐨𝐟𝐟𝐞𝐞 𝐇𝐨𝐮𝐬𝐞 - 𝐒𝐢𝐦𝐥𝐚 - কলকাতার মতোই সিমলাতেও আছে কফি হাউস, রিজ থেকে নেমে ম্যাল রোড দিয়ে একটু হাঁটলেই। রিজ থেকে কালীবাড়ি যাওয়ার রাস্তায় ওপর থেকেই দেখা যায় । পুরোনো দিনের পাহাড়ী বাড়িতে এই কফিহাউসের স্থাপনা হয় ১৯৫৭ সালে। সন তারিখের হিসেবে খুব পুরনো না হলেও তার ষাট বছরের জীবনে এই কফি হাউস অতিথি হিসেবে পেয়েছে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিত্বকে – যেমন ইন্দিরা গান্ধী, লালকৃষ্ণ আদবানী,, নরেন্দ্র মোদী (প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগে তো বটেই, এমনকি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও কিছুদিন আগে এখানে এসে তিনি তাঁর এখানে আসার সময়ের পুরনো দিনেগুলির স্মৃতিচারণা করেছেন ), প্রাক্তন আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাই - প্রমুখ। রিজের কাছাকাছি মাত্র কয়েকটি বাড়ী নিয়েই বললাম। সারা সিমলায় এরকম অসংখ্য ঐতিহাসিক আর অসাধারণ স্থাপত্যের বাড়ী ছড়িয়ে আছে। তার কিছুই প্রায় বলা হল না। আগেই বলেছি, ইচ্ছে থাকলে ওইগুলি সব দেখা সম্ভব হয়নি। সিমলা শহর দর্শন আমার এখানেই শেষ।যদিও অনেক কিছু বাকি রয়ে গেল, তবুও এবারে বেরিয়ে পড়বো বাইরে। প্রথমে বলবো সিমলার কাছাকাছি কয়েকটি ছোট শহর আর দ্রষ্টব্যের কথা, যেগুলো সারাদিনের মধ্যে দেখে নিয়ে সেদিনই আবার ফিরে আসা যায় সিমলায়। সেগুলি শেষ করে পাড়ি জমাবো আরো দূরে - সারাহান হয়ে কল্পার দিকে। পরের পর্ব - কুফরির পথে। Post By:- Subrata Ghose
মনিকরণ, কুল্লু জেলা, হিমাচল প্রদেশ। সমুদ্র পৃষ্ঠ থেকে ১,৭৬০ মিটার উচ্চতায় পার্বতী নদীর উপত্যকায় অবস্থিত মনিকরণ হিন্দু ও শিখ উভয় ধর্মের মানুষের কাছে একটি পবিত্র তীর্থস্থান। শিমলা থেকে মানালি আসার পথে আগে bhuntar পরবে, পরে কুল্লু। Bhuntar থেকেই একটি রাস্তা চলে গেছে কুল্লু হয়ে মানালির দিকে এবং আরেকটি রাস্তা চলে গেছে কাসল হয়ে মনিকরণ এর দিকে। দুর্গম পাহাড়ি পথে কুল্লু থেকে স্থানটির দূরত্ব প্রায় ৪৩ কিমি এবং bhuntar থেকে প্রায় ৩৬ কিমি, গাড়ি তে যেতে সময় নয় প্রায় ২ ঘণ্টার কাছাকাছি। এটি ভারতের অন্যতম প্রাচীন একটি তীর্থস্থান। ঐতিহাসিক এই তীর্থস্থানে একই সঙ্গে অবস্থান করছে প্রাচীন গুরুদ্বারা ও শিবমন্দির। পার্বতী নদীর জল এখানে ফুটন্ত। হিন্দু পৌরাণিক মত অনুসারে, একবার শ্রী মহাদেব ও মা পার্বতী এই স্থানে ভ্রমণ করতে আসেন। এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে মোহিত হয়ে তাঁরা এখানে বেশ কিছু সময় কাটিয়েছিলেন। সময়টা পৃথিবীর হিসাবে প্রায় এগারোশো বছর। কথিত আছে যে এখানে মা পার্বতী তাঁর অলংকারের একটি দামি মনি হারিয়ে ফেলেন। মনিটি নদীতে তলিয়ে পাতালে শেষনাগের কাছে চলে যায় ও তিনি সেটি কুক্ষিগত করেন। মা পার্বতী শ্রী মহাদেবের কাছে তাঁর মনিটি উদ্ধারের প্রার্থণা করেন। মহাদেব তাঁর সঙ্গীদের প্রেরণ করেন মনি উদ্ধারের জন্য। কিন্তু তাঁরা ব্যর্থ হন। প্রচন্ড রাগে মহাদেবের তৃতীয় চক্ষু উন্মোচিত হয়। সারা জগৎ সংসার ছারখার হবার উপক্রম হয়। ফুটতে শুরু করে পার্বতী নদীর জল। শেষে কুপিত মহাদেবের সামনে উপস্থিত হন শেষনাগ। মা পার্বতীর মনি ফিরিয়ে দেন। কিন্তু মহাদেবের রাগ কমলেও, নদীর জল আজও ফুটন্ত। মানুষের বিশ্বাস মনিকরণ এর এই উষ্ণ প্রস্রবণ- এ স্নান করলে সমস্ত পাপ ধুয়ে যায়, শুধু তাই নয়, শরীরের কোথাও কোনো ব্যথা বেদনা থাকলে সেটারও উপশম হয়। Post By:- Mily Ghosh
সিমলা শহর এলাকার মধ্যে মোটামুটি বেশ কিছু জায়গা আমরা দেখলাম। হয়তো, এখনো কিছু বাকী রয়ে গেল, তবু সেগুলি বাদ রেখেই, এবার আমরা পা বাড়াবো সিমলার বাইরে, কাছাকাছি কয়েকটি ছোট শহর বা দ্রষ্টব্য দেখতে। এগুলি, সিমলা থেকে অল্প দূরত্বের মধ্যে, গাড়ী নিয়ে বেরিয়ে, জায়গাগুলি দেখে নিয়ে আবার বিকেলের মধ্যে সিমলাতে ফিরে আসা যায়। এইরকমই একটি জায়গা - কুফরি। কুফরী সিমলা থেকে বড়জোর ১৮-২০ কিলোমিটারের মধ্যে একটা ছোট সুন্দর জায়গা। শীতকালে এখানে যখন বরফ পড়ে, তখন এর দৃশ্য অসাধারণ সুন্দর। গরমের সময় এই ছোট জায়গাটির একটা শান্ত সৌন্দর্য আছে, সিমলার জমজমাট নগরকেন্দ্রিক জীবন থেকে একটু দূরে, সেই সৌন্দর্য অনুভব করতে হয়তো ভালোই লাগে।আবার শুধু তাই নয়, সিমলা থেকে কুফরী যাওয়ার রাস্তাটিও খুব সুন্দর, লম্বা পাহাড়ী গাছের জঙ্গলের পাশ দিয়ে টানা বাঁধানো রাস্তা। কুফরী পৌঁছনোর আগে আজ আমরা এই রাস্তার ওপরে দুটি দ্রষ্টব্য নিয়ে আলোচনা করবো। ১) চমরী গাই বা Yak - কুফরীর পথে মাঝে মাঝেই দেখা যায় স্থানীয় লোকেরা তাদের পালিত চমরী গাইকে সাজিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে আছে। বিভিন্ন রঙের বিভিন্ন আকৃতির ঘন লোমে ভরা পাহাড়ী এই প্রাণীগুলি অপেক্ষায় থাকে ট্যুরিস্টদের তাদের পিঠে নেওয়ার জন্য। পিঠের ওপর তাদের সিট বাঁধা থাকে, পাশে থাকে একটি লোহার টুল। সেই টুলের ওপর দিয়ে তাদের পিঠের ওপর চেপে বসা যায়, ছবি তোলা যায় পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে। তাদের মালিকরা ট্যুরিস্টদের সাহায্য করে ওদের পিঠে চাপতে। কেউ যদি পাহাড়ী দেশের পোশাক পরে ছবি তুলতে চান, তাহলে তার ব্যবস্থাও আছে, পুরুষ মহিলা বাচ্চা সবার জন্য। তবে সেক্ষেত্রে চার্জ লাগে একশ টাকা করে। অত কাছ থেকে চমরী গাই দেখা, তাদের পিঠে চাপতে পারা, ইচ্ছে হলে পাহাড়ী পোশাকে কিছুক্ষনের জন্য নিজেকে একটু সাজিয়ে তোলা – এ সবের মধ্যেই একটা আনন্দ আর উত্তেজনা অনেকের কাছেই আছে বই কি। ২) ভীমাকালী মন্দির - হিমাচলে সারাহানের ভীমাকালী মন্দির সবচাইতে বিখ্যাত, তবে এখানে, এই কুফরীতে পৌঁছনোর একটু আগেই, রাস্তার পাশেই একটি ছোট্ট পাহাড়ের ওপর আছে একটি ছোট ভীমাকালী মন্দির। গাড়ীর রাস্তা থেকেই পাহাড়ের ওপর উঠে গেছে পাশে রেলিং দেওয়া একটা বাঁধানো রাস্তা - সেটা দিয়ে মিনিট সাতেক ওপরে উঠলেই লাল রঙের একটা সুন্দর মন্দিরগুচ্ছ - শিব, গণেশ, ভীমাকালীর মন্দির আর তার সঙ্গে যজ্ঞস্থল নিয়ে একটা শান্ত মন্দির চত্বর। ভিমাকালী মন্দিরের ভেতরে দুটি ছোট মূর্তি কালী ও ব্যাঘ্র বাহিনী দুর্গার, আর পিছনে একটি কিছুটা বিচিত্রদর্শন ধূসর রঙের দেবী কালীর মুখ। পাশেই একটি সশস্ত্র পুলিশের ব্যারাক, সেখানকার জওয়ানরাই মন্দিরের অনেকটা যত্ন নেন। ওপর থেকে নীচে দেখা যায় গাড়ীর রাস্তা, আর তার ওপারেই পাহাড়ের ওপর বিশাল বিশাল গাছের গভীর জঙ্গল। একদিকে এই তিনটি মন্দিরের শান্ত পরিবেশ, আর অন্যদিকে একটু ওপর থেকে কুফরীর ঘন সবুজ গাছের জঙ্গলকে ভালো করে চোখ ভরে দেখা - এই দুইয়ের সমন্বয়ে কুফরীর ঠিক উপকণ্ঠে এই মন্দির আর পাহাড় এখানকার অন্যতম আকর্ষণ। পরের পর্বে - কুফরী। Post By:- Subrata Ghose
ভীমাকালী মন্দির দেখে একটু পরেই পৌঁছলাম কুফরী। আমি গেছি গরমকালে, মে মাসে - এই সময়ে এখানকার সৌন্দর্য হয়তো সেভাবে বোঝা যায় না। এখানে আসতে হয় শীতকালে, যখন সারা কুফরী চলে যায় বরফের চাদরের তলায়। সেই সময়, একদিকে রাস্তার ওপর জমে থাকা পেঁজা তুলোর মত বরফের চোখ জোড়ানো রূপ, আর অন্যদিকে জমাট বাঁধা বরফের মসৃন কার্পেটের ওপর জমে ওঠে স্কি খেলা, দুয়ে মিলিয়ে শীতকে উপভোগ করা হৈ হৈ করে। কুফরীর এই রূপের হাতছানিতেই শীতের সময় এখানে পর্যটকরা ভিড় করেন দলে দলে। কিন্তু আমি তো গেছি গ্রীষ্মকালে, শীতকালের কুফরীর সেই শ্বেতশুভ্র রূপ তাই আমার দৃষ্টির বাইরেই রয়ে গেল। আবার অন্যভাবে কুফরীকে দেখতে হলে, এখানে গাড়ী থেকে নেমে ঘোড়ার পিঠে সওয়ারী হওয়া যায়, তার পিঠে চেপেই উঠে যাওয়া যায় অনেক উঁচুতে। সেখান থেকে দেখা যায় দূরের উপত্যকা, বরফের মুকুট পরা পাহাড়, সামনে সবুজ গাছের জঙ্গল। তবে আমি যাইনি ঐভাবে ওপরে, তাই কুফরী পাহাড়ের ওপরের সেই রূপও আমার দেখা হয়নি। তাই গাড়ী করে গিয়েই যে দুটো জায়গা দেখেছি কুফরীর, তাই নিয়েই এখন বলছি। ১) ইন্দিরা ট্যুরিস্ট পার্ক - একটি ছোট পার্ক, আর তার মাঝখানে হিমাচল ট্যুরিজমের একটি রেস্তোরাঁ - ক্যাফে ললিত। আগে এখানে চিনি বাংলো বলে একটি ছোট বাংলো ছিলো, তাই এটিকে চিনি বাংলোও বলা হয়। এমনিতে কিছুই নেই এখানে। অল্প কিছু গাছ, বাগান আর ওই রেস্তোরাঁ। সেই সঙ্গে গাছের তলায় বা বাগানে হিমাচলি পোশাক পরে ছবি তোলার ব্যবস্থা। তবু, এর মধ্যেও কিন্তু আছে দুটি গাছ, যা দেখতেই আমার ওই বাগানে যাওয়া। ভূর্জপত্র গাছ বা হিমালয়ান বার্চ - যে গাছের বাকলে প্রাচীন দিনে পুঁথিপত্র এবং জ্যোতিষকুণ্ডলী লেখা হত। সেই গাছ দুটি আছে এখানে, দড়ি দিয়ে ঘেরা জায়গায়।বেশ সাদা রঙের গুঁড়ি বা কান্ড, অন্য গাছের মত ধূসর নয়। তাই আলাদা করে চেনা যায় অন্য গাছেদের থেকে। এই দুটিকে দেখতেই পাঁচ টাকার টিকিট কেটে এই বাগানে আসা ২) Himalayan Nature Park - কুফরীর আরেকটি দ্রষ্টব্য, - একটি ছোট পাহাড়ী চিড়িয়াখানা। ৩৫ টাকার টিকিট কেটে ঢুকে প্রথমেই একটি বড় হল, যেখানে পশুপাখীদের ছবি, পিকচার পোস্টকার্ড, বিভিন্ন প্রাণীর ছবি দেওয়া কাপ বা টি সার্ট – এই ধরণের কিছু জিনিষ কিনতে পাওয়া যায়। আছে এই অঞ্চলের কিছু পশু, পাখী, প্রজাপতির ছবি দেওয়া বোর্ড। এই হলের বাইরেই চিড়িয়াখানার ভেতরে যাওয়ার রাস্তা। তার মুখেই একটি বোর্ডে দেওয়া আছে এই মিনি চিড়িয়াখানায় রাখা পশুপাখীদের তালিকা। পাহাড়ী উঁচু নীচু পথে, গাছ গাছালির মধ্যে দিয়ে পথ, তার দুপাশে টানা জালের খাঁচার ওদিকে পশুগুলির বাস। চলার পরিবেশ খুব সুন্দর হলেও পরিশ্রম কিন্তু আছে। চিড়িয়াখানাটি পুরো ঘুরে দেখা তাই হয়তো একটু কষ্টকর। আর অতখানি পরিশ্রমের পরও কোনো প্রাণীর দেখা যে মিলবেই, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। কারণ তারা থাকে পাহাড়ের গায়ের ওইসব খাঁচার মধ্যে, বড় বড় গাছের জঙ্গলের আড়ালে। তবে হরিনগুলি সামনে থাকে, তাই দেখা যায়। লেপার্ড বা নেকড়ের দেখা পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। অবশ্য এখানেই দেখা মিললো হিমাচলের রাজ্য পাখী বা State Bird - Western Tragopan এর।ধুসর রঙের পালকের ওপর সারা গায়ে সাদা ছিট ছিট, বুকের কাছে অনেকখানি জায়গা লাল, গলার কাছে নীল আর ময়ূরকণ্ঠী রঙের ঝালর, চোখের চারপাশে গেরুয়া। নানা রঙের মিশেলে বর্ণময় এই পাখী সত্যিই আশ্চর্য হয়ে দেখবার। মিনি চিড়িয়াখানায় এক গেট দিয়ে ঢুকে অন্য গেট দিয়ে বেরোনো। এবার আবার যাত্রা কুফরী ছাড়িয়ে অন্য এক ছোট শহরের দিকে। পরের পর্বে - চেইল। Post By:- Subrata Ghose
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |