দেবভূমি হিমাচল প্রদেশের সিমলা কুফরি ট্যুর গাইড
হিমাচল প্রদেশে তিনটে সার্কিট - সিমলা কুলু মানালী কিংবা সিমলা সারাহান কলপা কিন্নর অথবা চাম্বা খাজিয়ার ডালহৌসি যে রুটেই যাওয়া হোক না কেনো সিমলা আপনাকে আসতেই হবে । (তবে তৃতীয় সার্কিট চাম্বা খাজিয়ার ডালহৌসি পাঠানকোট দিয়েও যাওয়া যায়) । সিমলা সত্যিই দেবভূমি । দার্জিলিং, শিলং, গাংটকের মতো সিমলা বাঙালির এক প্রিয় রোমান্টিক শৈল শহর । সিমলা ম্যাল রোডে কালী বাড়ী দর্শন না করলে বাঙালীর হিমাচল দর্শনই অসম্পূর্ণই রয়ে যায় । আজ আলোচনা করি দেবভূমি সিমলা এবং তারসাথে কুফরী ফাগু নিয়ে । সিমলা কালী মন্দিরের ডানদিকে মঙ্গলচন্ডী, বামে শ্যামলা মা । এই শ্যামলা কালী মা থেকেই শহরের নাম সিমলা । কিভাবে যাবেন : ----------------------- কলকাতা বা দিল্লি বা যেকোনো জায়গা থেকে কালকা, চন্ডীগড়, আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে গাড়ীতে কমবেশী ঘন্টা তিনেকের জার্নিতে পৌঁছে যাবেন সিমলা । যারা কালকা স্টেশনে নেমে সিমলা যাবেন তারা কালকা সিমলা হেরিটেজ টয় ট্রেন চড়ে বিভিন্ন টানেল, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে দেখতে যেতে পারেন । শিবালিক টয় ট্রেন বিশেষ উল্লেখযোগ্য । এই ট্রেনের টিকেট পাওয়া বিশাল চাহিদার । এই ট্রেন ছাড়াও আরো অনেক টয় ট্রেন কালকা স্টেশন থেকে আছে । এছাড়া দিল্লি থেকে ভলভো এসি বাসে ঘন্টা দশেকের যাত্রাতেও সিমলা সরাসরি পৌঁছানো যায় । সিমলা তে কি কি দেখবেন : ----------------------------------- যেদিন ট্রেন থেকে নেমে গাড়ী বা টয় ট্রেনে সিমলা পৌঁছাবেন সেদিন বেলা গড়িয়ে দুপুর হয়ে যাবে । ওইদিন সিমলা ম্যাল রোড ঘুরে দেখার জন্য রেখে দিন । ওইদিন ছাড়াও মিনিমাম আরো দুদিন দরকার পুরো সিমলা এবং তারপাশের চেল, নালদেহরা, কুফরী, ফাগু ঘুরে দেখার জন্য । সিমলা শহরে যে গুলো প্রথমেই দেখবেন সেগুলো আলোচনা করা যাক : ১) সিমলা ম্যাল রোড, সিমলা কালী বাড়ী, ক্রাইস্ট চার্চ : সিমলা একমাত্র শৈল শহর যেখানে পাহাড়ের উপরে উঠতে লিফট সিস্টেম আছে । একদিকে সিমলা কালী বাড়ী আর অন্যদিকে ক্রাইস্ট চার্চ । চার্চের দিকেই লিফট । মাঝখানে পুরো এরিয়া তাই হলো সিমলা ম্যাল রোড । যেকোনো একদিক দিয়ে প্রবেশ করুন । এক এক করে পায়ে হেঁটে দেখে নিন সিমলা কালী বাড়ী, ম্যাল রোড, চার্চ । মার্কেটিং করতে পারেন । তবে সিমলায় দাম তুলনামূলক বেশী । মনে রাখবেন, সিমলা ম্যাল রোডে কোনো গাড়ী চলে না । ২) জাখু মন্দির : সিমলা ম্যাল থেকে রোপওয়ে (প্রতিজন ভাড়া আপ ডাউন ২৫০ টাকা) করে পৌঁছে যান সিমলা শহরের সবচেয়ে উঁচু জায়গা জাখু মন্দিরে । রোপওয়ে করে না গিয়ে নিজেদের গাড়ী ভাড়া থাকলে সেই গাড়িতেই জাখু মন্দির ঘুরে দেখতে পারেন । এটি একটি হনুমান মন্দির । বিশাল হনুমান মূর্তি আছে । জীবন্ত হনুমান থেকে সাবধান থাকবে । ওরা মানুষের চশমা সানগ্লাস দেখলেই আক্রমন করে চশমা সানগ্লাস খুলে নেয় । জাখু মন্দির ম্যাল থেকে ৩ কিমি দূরে, ৮০০০ ফুট উপরে অবস্থিত । এটাই সিমলার সবচেয়ে উঁচু স্থান । অপরূপ সিমলার ভিউ পাওয়া যায় । ৩) হেরিটেজ আর্মি মিউজিয়াম এবং সিমলা গল্ফ কোর্স : সিমলার অন্যতম সুন্দর সাইটসিন স্পট হলো আর্মি মিউজিয়াম । ভারত পাকিস্থান কিম্বা ভারত চিন যুদ্ধের অনেক তথ্য, সেনাবাহিনীর দ্রষ্টব্য জিনিস এই মিউজিয়ামে আছে । অনেক বড় এই মিউজিয়াম ভালো ভাবে দেখতে ঘন্টা দুয়েক সময় নেবেই । আর্মি মিউজিয়ামের পাশেই আছে সিমলা গল্ফ কোর্স । এটাও ঘুরে দেখা যায় । ৪) ভাইসরয় লজ বা সিমলা রাষ্ট্রপতি নিবাস: সিমলা ম্যাল থেকে ৪ কিমি দূরে অবজারভেটরি হিলে অবস্থিত ভাইসরয় লজ বা সিমলা রাষ্ট্রপতি নিবাস । ভাইসরয় লর্ড ডাফরিন গরমকালে থাকতে এটি নির্মাণ করে । ভারত ভাগের চুক্তি (সিমলা চুক্তি) এইখানেই হয়েছিলো । এখন এটি ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউশন অফ এডভান্স স্টাডিজ সেন্টার এবং সিমলায় রাষ্ট্রপতি নিবাস । বিশাল গার্ডেনের মাঝে এই বিল্ডিং টা । ভাইসরয় লজের পাশেই সিমলা হিমালয়ান বার্ড পার্ক । এটাও ঘুরে নেওয়া যায় ।
৫) চেল রাজপ্রাসাদ
আমরা যারা থ্রী ইডিয়টস সিনেমা দেখেছি তারা চেল রাজপ্রাসাদ দেখেনিয়েছি । এটি বর্তমানে হিমাচল ট্যুরিজমের হোটেল । পাঞ্জাবের রাজা ভূপিন্দর সিং এই রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করেন । সিমলা থেকে ৪৫ কিমি দূরে সাল, পাইন, দেবদারু, ওক গাছের মনোরম পরিবেশে এই চেল রাজপ্রাসাদ । সিমলা ভ্রমণে চেল রাজ প্রাসাদ অবশ্যই দর্শনীয় স্পট । প্রতিজনের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা । ৬) কুফরী ফাগু : চেল থেকে ২৬ কিমি এবং সিমলা থেকে ১৬ কিমি দূরে অপরূপ জায়গা কুফরী । এটি সিমলা থেকে অনেক উঁচু জায়গা । শীতকালে এখানে তুষারপাত হয় । স্কি খেলার আসর বসে । গরমের সময় একটু শিলাবৃষ্টি হলেই বরফের মতো জমে যায় কুফরী । কুফরী থেকে আরো ৬ কিমি হলো ফাগু । দুটো জায়গায় ভ্যালির ভিউ, আপেল বাগান ইত্যাদির জন্য বিখ্যাত । কুফরী তে ফান জোন বা ফান পার্ক ট্যুরিস্টদের কাছে খুব আকর্ষণীয় । এডভেঞ্চারস এবং আমাউসমেন্ট দুইরকম স্পোর্টস এই পার্ক গুলো তে আছে । টিকিট মূল্য ৭০০ টাকা করে । দুটোয় খেললে ১০০০ টাকা প্রতিজন । পার্কের প্রবেশ মূল্য ১০০ টাকা। এটি কুফরী ভ্রমণের অন্যতম জনপ্রিয় স্পট । কুফরী থেকে ঘোড়ায় চড়ে চার কিমি উপরে ভ্যালি এবং ফাগু যাওয়া যায় । ঘোড়ার ভাড়া প্রতিজন ৫০০ টাকা । এছাড়া কুফরী তে মিনি জু, গ্রীন ভ্যালি, নেচার পার্ক আছে । সেগুলো ঘুরে দেখা যায় । ৭) নালদেহরা : হাতে সময় থাকলে সিমলা থেকে গাড়িতে ঘুরে আসতে পারেন গল্ফ কোর্স, ভ্যালি, পাহাড়ী ভিউ এলাকা নালদেহরা । ২/৩ রাত সিমলায় কাটানোর পর এবার বেরিয়ে পড়ুন কুলু, মান্ডি হয়ে মানালী পথে অথবা নারকান্দা, সাহারান হয়ে কলপা, কিন্নর । হোটেল : --------- সিমলা শহরে থাকার হোটেলের অভাব নেই । তবে পিক সিজনে হোটেলের বিশাল ডিমান্ড । এপ্রিল মে মাস পিক টাইম । ওদিকে পূজার সময় অক্টোবর মাসেও ভালো ভিড় হয় । এইসময় হোটেল বুক করেই আসা ভালো । মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড হোটেল ভাড়া ১৫০০ টাকা । বাকি সময় অফ টাইমে অনেক কম ভাড়ায় স্পট বুকিংয়ে হোটেল পাওয়া যায় । গুগল ওয়েবসাইট সার্চ করলেই হোটেলের নিজস্ব ওয়েবসাইট এড্ড্রেস পাওয়া যাবে । এছাড়া অনেক হলিডে হোম ও আছে । উদাহরণ স্বরূপ এলাহাবাদ ব্যাংক কর্মচারী সংগঠনের হলিডে হোম হোটেল পঙ্কজ নাম করা যায় । হোটেল পঙ্কজ নিজেও হোটেল ভাড়া দিয়ে থাকে । (এটি শুধুমাত্র উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করলাম) আর একটি কথা উল্লেখ করা যায় গাড়ীর ব্যাপারে । হিমাচল প্রদেশ যে সার্কিটেই ট্রিপ করা হোক না কেনো ৭/১০ দিন পুরো ট্রিপের জন্য স্টেশন থেকে স্টেশন গাড়ী বুক করে নেওয়া ভালো । দিন প্রতি ৩০০০-৩৩০০ টাকা হিসাবে গাড়ি ভাড়া পাবেন বর্তমান রেটে ।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |