প্রধানমন্ত্রী যখন অটল টানেল উদ্বোধন করলেন, সেই দিন থেকেই ওটা দেখার ইচ্ছা ৷ বিশেষত এর আগেও আমি লাহুল, স্পিতি কভার করে কাজা হয়ে কুনজুম পাস, রোটাং পাস পারকরে মানালি এসেছিলাম গাড়ি চালিয়ে ৷ ফলে রাস্তাটা চেনাই ছিল ৷ লোভ সম্বরণ করা সম্ভব হল না ৷ পূজাতে তো কোথাও ঠাকুর দেখা যাবে না. I চললাম তাই ৷ প্রথম দিন কাণপুরের আগে ফতেহপুর এ রাত্রি যাপন করলাম ৷ পরের দিন সোজা আগ্রা হয়ে যমুনা এক্সপ্রেস ওয়ে ধরলাম ৷ দিল্লি না ঢুকে এক্সটারনাল পেরিফেরিয়াল এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে সনিপথ হয়ে সোজা চন্ডিগড়ে রাত কাটান ৷ পরের দিন সকালেই সিমলা পৌছান গেল ৷ ঝকঝকে আকাশ, সোনালী সূর্য্যালোকে পাহাড়ের মনোরম পরিবেশ মনমুগ্ধ করে দিল ৷ যাই হোক কলকাতা থেকে এসেছি শুনে কি প্রকার অতিথেয়তা অপেক্ষা করে আছে তাই ভাবতে লাগলাম ৷ তবে বিরূপ কিছু ঘটল না ৷ হোটেলে কেবল আমরাই আছি। এখানে তেমন কোভিডের ভয় ও করছে না. সন্ধ্যাতে গেলাম সিমলা কালিবাড়িতে ৷ ম্যাল এ তো একদম বন্ধের চেহারা ৷ থমথমে পরিবেশ৷ কলিমন্দিরে কিছুক্ষন থাকা হল ৷ তারপর ফিরলাম হোটেলে ৷ এবার কিন্তু শান্ত পাহাড়ি পরিবেশটা বেশ লাগল ৷ মন মানিয়ে নিতে শুরু করল ৷ রাতে ঘরের জানালা দিয়ে কাঁচের মধ্যে দিয়ে দেখলাম বেশ ঝক্ঝকে চাঁদের আলোয় পাহড়ের ছবি ৷ আলোর বন্যা বইছে ৷ দূরে জোনাকি পোকার মত বিন্দু বিন্দু আলো জ্বলছে ঘরে ঘরে | হালকা ঠান্ডা ৷ মায়াবী পরিবেশের সাথে একাত্ম হতে ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিলাম ৷
দ্বিতীয় দিনে সকাল সকাল চললাম সারাহানে উদ্দেশ্যে ১৬৫ কিমি রাস্তা যেতে ৫ ঘন্টা মত লাগবে ৷ পাহাড়ি পাকদান্ডি বেয়ে মসৃন ভাবে আমরা এগিয়ে চললাম ৷ পথে নরকন্ডা তে খাবার খাওয়ার জন্য দাড়ালাম৷ বেশ জনবসতি আছে ৷ মনোমুগ্ধকর পাহাড়ি পারিবেশে প্রথম ধাক্কা খেলাম রেস্টুরেন্টে ঢুকতে গিয়ে ৷ হিমাচলের লোক ছাড়া কিছুতেই ঢুকতে দিতে চায় না ৷ শেষে রাজি হল ৷ এখান থেকে তুষার মোড়া পর্বত রাজি দেখাদিল ৷ খুবই উপভোগ করলাম ৷ রামপুর হয়ে জিওরি আসলাম ৷ এখান থেকে ডানদিকে আরো ১৭ কিমি পাহাড়ে চড়তে হবে সারাহান পৌছানোর জন্য ' | চললাম আবার ৷ বরফ আবৃত তুষারশৃঙ্গর সাথে লুকচুরি খেলতে খেলতে সারাহান পৌছে গেলাম ৷ সামনেই ভীমাকালিমন্দির ৷ ডানদিকে বাঁক নিয়ে হোটেল শ্রী খন্ড . | HPTDC র হোটেল ' 40% ছাড় দিচ্ছে এখন ৷ আমরা ছাড়া কোনো টুরিষ্ট নেই ' | এখানে করনার ভয়ও নেই ৷ হঠাৎ মুক্তির স্বাদ পেয়ে আমাদের বিহ্বল অবস্থা ৷ সম্মুখে শ্রীখন্ড চূড়া ৷ এই হোটেলর অবস্থান অনবদ্য 'সামনে বিস্তীর্ণ শৈলশিরা, চূড়াগুলি বরফাবৃত ৷ মন চায় শুধু তাকিয়ে থাকতে ৷ সূর্যাস্তের পরে ঠান্ডা পড়তে শুরু করল ৷ ভালোই ঠান্ডা এখানে৷ মন্দির দর্শন সেরে হোটেলে ফিরলাম ৷ অস্তাচলে সূর্যদেব ৷ লাল আকাশের রং পাহাড় চুঁইয়ে পড়ছে ৷ ধীরে ধীরে রাত নামছে পাহাড়ে ৷
পরের দিন যাওয়ার কথা কল্পা, সাংলা, ছিটকুলও যাব | এখন কল্পাতে আপেল পাড়া শুরু হয়েছে খবর পেলাম, কিন্তু বিধিবাম ৷ ওখানে থাকার অনুমতি পাওয়া গেল না ৷ লোকাল গাড়ির ড্রাইভার রা যেতে বারণ করছে ''৷ ফলে যাত্রা পথের অভিমুখ পরিবর্তিত হল এ যাত্রা।
ফিরে চললাম রামপুরের দিকে ৷ রামপুর পার করে সুতলেজ নদীর ধার বরাবর পাহড়ি রাস্তা বেয়ে এগিয়ে চলেছি ৷ জালোরি পাস অতিক্রম করে মানালি পৌছাব ৷ রাস্তা এখানে সংকীর্ণ ও খুবই খাড়া তবে পাথের সৌন্দর্য্য ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা নেই ', প্রকৃতির এই মনমুগ্ধকর রূপে আমরা বিমহিত ৷ কি অপূর্ব সুন্দর এই প্রকৃতি , মনে হয় সারাটা জীবন এখানেই কাটিয়ে দিই । কি অপূর্ব দৃশ্য ৷ বাদামী পাহাড়ের কোল আলো করে রয়েছে সবুজ বনানী ৷ দূরে নীল আকাশ ৷ এই রাস্তায় গাড়ি চালান বেশ সময সাপেক্ষ .কারন দূর্গম পাহাড়ি পথ এছাড়া পথের অবস্থাও ,তথৈবচ। ধীরে ধীরে গাড়ি এগোচ্ছে ৷ দৃশ্যাবলী খুবই সুন্দর জালোরী পাসে পৌছাতেই বিকেল হয়ে এলো ৷ খুব সুন্দর জায়গা ৷ পাহাড়ের উপর থেকে তিনদিকই দেখা যায়। যতদূর চোখযায় বিভিন্ন উচ্চতার শ্রেণীবদ্ধ পর্বত রাজি আর আকাশের মেঘের সমাহার ৷ কিযে ভালো লাগছে. | দুপুরের যাওয়া এখানেই সারা হল । এখানে একটা মন্দির রয়েছে ৷ বেশিক্ষন দেরি করতে পারলাম না ৷ কারন পাহাড়ে হঠাৎ সন্ধ্যা নামে আর গা বেয়ে নেমে আসে মেঘ ৷ অচেনা রাস্তায় অন্য গাড়ির দেখা পাওয়া দুষ্কর৷ কিন্তু সেই সন্ধা নামল রাস্তাতেই ৷ সংকীর্ণ রাস্তার ডানদিকে একটি গাড়ি উল্টে গেছে ৷ যেদিকে খাদ সেখান থেকে কোনো রকমে আমাদের গাড়ি টা বের করলাম আবার চলা ৷ মানালি পৌছাতে ৮ ঘন্টা লেগে গেল হোটোলে. রাত্রি বাস, পরদিন সকাল সকাল অটল টানেলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু ৷ সোলাং ভ্যালিতে প্যারাগ্লাইডিং দেখলাম কিছুক্ষন, এখানেই কিছু খেয়ে এগিয়ে চললাম অভিষ্টের পানে ৷ দুপাশের দৃশ্যাবলী বর্ণনাতীত . | বরফ চূড়া আমাদের অতি নিকটে চলে এসেছে ৷ নীচ দিয়ে বয়ে চলেছে সবুজ জল, পাশে পাশে সবুজ পাইন বনে ঝিরি ঝিরি বাতাস বইছে ৷ কী যে আনন্দ হচ্ছে ৷ একটু পরেই অটল টানেলে প্রবেশ করলাম ৷ প্রশস্ত রাস্তা , সুন্দর আলোক সজ্জা, এটা পার হতে প্রায় ১৫ মিনিট লাগল ৷ গাড়ি চালানোর সময় কখনোই মনে হয়নি ১০ হাজার ফুট উঁচুতে কোনো গহ্বরের মধ্যে গাড়ি চালচ্ছি ৷ বরং যেকোনো শহরের রাস্তাকে লজ্জাবনত করতে সক্ষম৷ ওপারে পৌঁছে রাস্তা দুভাগে ভাগ হয়েছে ৷ ডানদিকে চলে গেছে কাজা ' | বাদিকে রাস্তা সোজা লাদাখ ৷ ঐ দিকেই বেশ কিছুটা অগ্রসর হলাম ৷ একদিকে পথপাশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে সকলে উন্মুক্ত প্রান্তারে এসে দাঁড়ালাম ৷ মনে হল পৃথিবীতে যদি স্বর্গ খুঁজি ,তা এখানে ৷ দু পাশে বৃক্ষহীন ধূসর পাহাড়ের নীচে সশব্দে বয়ে চলেছে পান্না রং এর নদী উপরে গাড় নীল আকাশ ৷ গাছের সব পাতাই হলুদ হয়ে নীচে ঝরে পড়েছে ৷ জনমানবশূন্য ধূ ধূ প্রান্তর ৷ মনে হতে লাগল প্রকৃতির যে সুর সেটাই শুধু একলা বসে শুনি ৷জীবনে যদি কিছু পাওয়ার থাকে সেটাএই অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ৷
1 Comment
soumen chanda
11/8/2020 01:43:02 pm
excellent write up ..vivid description.great.
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |