সমুদ্র সৈকত " ভারকালা"
শুনেছিলাম আমার আপনার আমাদের দেশ ভারতবর্ষের রং রূপ বর্ণ নাকি অসাধারণ। এক কথায় তার বর্ণনা করা যাইনা। একেবারেই ঠিক কথা। ভার্কালা বা ভারকালা না গেলে আমি এই কথার সত্যতা সত্যিই অনুধাবন করতে পারতাম না। Switzerland er থেকে কোনো অংশে কম যাইনা। আপনারাই না হয় বলুন। আমরা back water সারাদিন ধরে পেরিয়ে গিয়ে Quilon থেকে গাড়িতে ভারকলা পৌঁছেছিলাম রাত্রে। রাত্রেই সমুদ্রকে দেখতে চলে যাই। তার টান কে উপেক্ষা করার সাধ্য আমাদের ছিল না। সকালের ছবি, বেলার ছবি, বেলা শেষের ছবি সব গুলোই আপনাদের দেখতে দিলাম।
0 Comments
মেঘালয় ভ্রমণ।। দর্শনীয় স্থান- লিভিং রুট ব্রিজ,মেলিয়ালং গ্রাম ( এশিয়ার সবথেকে পরিষ্কার গ্রাম), ডাউকি লেক(বাংলাদেশ বর্ডার), নোহকালিকায়- সেভেন সিস্টার জলপ্রপাত, মাওসমাই গুহা ( চুনাপাথর র তৈরি- গুহার ভিতর স্টেলাগটাইট- স্টেলাগমাইট দ্রষ্টব্যঃ) আর তার সাথে রয়েছে অসাধারণ সুন্দর পারিপার্শিক দৃশ্যপট এককথা তে সত্যি মেঘালয়- মেঘের আলোয়। যাকে উত্তর পূর্বের স্কটল্যান্ড ও বলা হয়ে থাকে।
ঘুরে এলাম বিহারী নাথ।
জেলা - বাঁকুড়া। খোঁজ করছিলাম কোথায় যাই। হঠাৎই তাপস বাবুর নম্বর টা পেয়ে গেলাম। উনিই বললেন আসুন বিহারী নাথ। ভাল না লাগলে বলবেন। আমরা গিয়েছিলাম মোট ৬ জন। সাথে আমাদের প্রিয় Blacky আমাদের প্রথম জিজ্ঞাস্য ওটাই থাকে যে pet নিয়ে যাওয়া যাবে কি না!! যাই হোক গত ২৩ শে নভেম্বর আমরা যাত্রা শুরু করি। সোজা প্রথম যাই বিহারী নাথ। যাওয়ার পথে ব্রেকফাস্ট করে নিই। পৌঁছাই বেলা প্রায় ১২ .৩০ এ। Manager বাবুকে দুপুরের খাবারের কথা বলে দিয়েছিলাম। হোটেলে এ পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলাম। সব খাবার ই গরম।ভাত, ডাল, বেগুন ভাজা, ফুলকপির ডালনা, আলু পোষ্ট, আর রুই মাছের ঝোল, শেষ পাতে টমেটোর চাটনি। পুরো অমৃতের স্বাদ। খেতে খেতে বিকেল। Manager মহাশয়ের পরামর্শে চলে গেলাম মন্দিরে। পাশেই মন্দির। বাবাকে দর্শন করলাম। তারপর চারিদিক একটু ঘুরে ফিরে এলাম হোটেল এ। নির্জন নিস্তব্ধ পরিবেশ। একেবারে পাহাড়ের মধ্যে । পরদিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম।প্রথমে গেলাম জয় চণ্ডী পাহাড় তারপর একে একে গরপঞ্চ কোট, panchet ডাম একেবারে শেষে বরন্টি জলাধার। পুরো রাস্তা পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলেছে। রাস্তায় মাঝে মাঝে স্থানীয় মানুষের দ্যাখা পাওয়া যাচ্ছিল। ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে। আবার গেলাম বিহারী নাথ বাবার মন্দিরে। পাশেই মিষ্টির দোকান। সেখানে আলুর চপ ও ভাজে। ফিরে এলাম হোটেল এ।সন্ধ্যেবেলা চিকেন আর veg পাকোড়া দিয়ে সান্ধ্যকালীন জলযোগ সারলাম। সারাদিন শুধু চা আর সাথে থাকা স্ন্যাকস দিয়ে পেট ভরানো হয়েছে। প্রচুর আড্ডা দিলাম সকলে মিলে। রাতে রুটি মাংস দিয়ে ডিনার হলো। পরদিন ফেরা। ফেরার পথে মেজিয়া দিয়ে ফিরলাম।Lunch করেই বেরিয়ে ছিলাম। সুন্দর ব্যবস্থাপনা। সুন্দর ব্যবহার। আমরা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলাম। নিজেদের মতন ঘুরে বেড়াতে চাইলে গাড়ি অবশ্যই লাগবে। অবশ্যই রানীগঞ্জ থেকে বাম দিকে ঢুকবেন।
এই আরতি দেখা একটি অপূর্ব অভিজ্ঞতা । আশাকরি সকলের এটা ভালো লাগবে ।
আরতি শেষ হয়ে যাবার পর আমরা ঘাটে অনেকক্ষণ বসে রইলাম । ছট পূজোর জন্য আসা ভক্তের দল আজ রাতটা এই ঘাটেই থাকবে । আগামীকাল পূজো দিয়ে তারপর বাড়ি ফিরবে । প্রশাসনকে বেশ সজাগ ও সতর্ক মনে হলো । ঘন ঘন মাইকে নানা ধরনের প্রয়োজনীয় ঘোষণা করেই চলেছে । এরইমধ্যে এমন একটা ঘোষণা শুনলাম যাতে মন একেবারে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল । একটি আনুমানিক একমাসের বাচ্চাকে কে বা কারা ওখানে রেখে চলে গেছে । ব্যাপারটা ইচ্ছাকৃত বলেই বোধ হলো । জানি না তারপর সেই বাচ্চাটির কি হলো । আরও কিছুক্ষণ কাটিয়ে গোধূলিয়া মোড়ে গিয়ে জলখাবার রেস্টুরেন্ট থেকে রাতের খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে এলাম । পরেরদিন ঘোরার প্রোগ্রামও ঠিক করে নিলাম । বারাণসীর প্রথম দিনের ঘোরা শেষ হলো । আগামীকাল আমরা যাবো, দূর্গা মন্দির, বিড়লা মন্দির, সঙ্কট মোচন মন্দির, তুলসী মানস মন্দির, রামগড় ফোর্ট, সারনাথ, চোখুন্ডী স্তুপ, ধামেকা স্তুপ, আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম ।
সে বলল বাকিটা আপনারা নিজেরাই দেখে নিতে পারবেন । তাছাড়া সে আমাদের ড্রাইভারকেও বলে দিয়েছে সব । কড়কড়ে ১০০ টাকা নিয়ে সে চলে গেল । যদিও এখানে গাইড নেবার কোনো দরকারই ছিল না । যদিও নেন তবে ঘোরা শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাকে থাকতে বলবেন ।
এরপর আমরা শ্রী দিগম্বর জৈন টেম্পল দেখলাম । তারপর গেলাম মিউজিয়াম ও ধামেক স্তুপ দেখতে । মিউজিয়াম দেখার দক্ষিণা পাঁচ টাকা আর ধামেক স্তুপের পুরো জায়গাটা দেখার দক্ষিণা পঁচিশ টাকা । এবার শুরু হলো আরেক খেলা । আমাদের টোটোর ড্রাইভার বেঁকে বসল । বলল যে আমরা নাকি অনেক ঘোরাঘুরি করছি । এই টাকা মানে ৬০০ টাকাতে তা হবে না । কমপক্ষে ১০০০ টাকা লাগবে । তখন সময় আড়াইটা আর ওর সাথে আমাদের কথা হয়েছিল পাঁচটা পর্যন্ত । সে তখন এসব কিছুই শুনবে না । বলল, 'আপনারা যতক্ষণ খুশি থাকুন, দেখুন । আমাকে ছেড়ে দিন । আমি চলে যাব ।' হোটেলের মাধ্যমে এই বুকিং হয়েছিল বলে হোটেলকে জানালাম আর আমরা টিকিট কেটে ধামেক স্তুপ দেখতে চলে এলাম । ধামেক স্তুপ ও তাকে কেন্দ্র করে এক বিরাট অঞ্চলে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন এক কথায় অতুলনীয় ও চমকপ্রদ । সারনাথের এই অত্যাশ্চর্য স্হাপত্য ও ভাষ্কর্য মুলত ইঁট ও বেলেপাথর দিয়ে তৈরি । এজন্যই আমি আগে বলেছিলাম এখানে না এলে একটা আপশোষ থেকে যেত । মিনিট পঁয়তাল্লিশ ঘোরাঘুরির পর এখান থেকে যখন বের হলাম তখনো মনে হচ্ছে অনেক কিছুই যেন দেখা হলো না । আরও অনেকটা সময় থাকতে পারলে যেন ভালো হতো । এবার আমরা এলাম মিউজিয়ামে । এখানে মোবাইল, ক্যামেরা সব জমা দিতে হলো । ছবি তোলা যাবে না । এই মিউজিয়ামটাও দারুণ । এদের সংগৃহীত সামগ্রী এক কথায় অতুলনীয় । এখান থেকে বেরিয়ে আমাদের ড্রাইভারকে ডেকে গাড়িতে উঠে পড়লাম । আরো একশত টাকা বেশি দিতে হবে । অর্থাৎ সাতশো পড়বে । ফেরার পথে চৌখন্ডী স্তুপ পড়ল । সকলেই তখন পরিশ্রান্ত । কেউ আর গাড়ি থেকে নামতে চাইল না । অগত্যা আমি একা নেমে গেটে দাঁড়িয়ে গোটা কয়েক ছবি তুলে ফিরে এলাম । সারনাথ দেখা শেষ করে ফিরে এলাম । ফেরার সময় একটু বেশি সময় লাগল রাস্তায় জ্যাম থাকার ফলে । ড্রাইভারকে ছেড়ে দিয়ে প্রথমে রেস্টুরেন্টে ঢুকে খেলাম । এরপর গেস্টহাউসে ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম । সন্ধ্যেবেলায় আবার আরতি দেখতে যাব । এদিকে আমাদের ফ্লোরে খালি দুটো ঘরে দেখলাম লোক এসে গেছে । অনেক লোক । পরে জেনেছিলাম যে সব মিলিয়ে ওরা সাতজন, দুটো ঘরে থাকবে । ছ'টার কিছু পরে দশাশ্বমেধ ঘাটে পৌঁছে গেলাম আরতি দেখব বলে । আজ ছট পূজোর লোকজনের ভিড় নেই । তবুও তিলধারণের জায়গা নেই । আজ আর নৌকো থেকে নয়, পাড়ে বসে আরতি দেখব ঠিক করেছিলাম। অনেক চৌকি পাতা আছে যাতে সতরঞ্জি বা চাদর বিছানো । এছাড়া নিচে ফ্লোরের ওপরেও সতরঞ্জি-চাদর পাতা । তাতেও অনেকে বসে আছে । আমরা চৌকির ওপরে বসে পড়লাম । আরতি শুরু হয়ে গেল । একজনকে দেখা গেল ইচ্ছুক তীর্থ যাত্রীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছেন । আসলে যারা দান করতে চান তাদের থেকে উনি সংগ্রহ করছেন । আরতি একসময় শেষ হলো । আমরা আজ আর বসলাম না । সারাদিনের ঘোরাঘুরিতে শরীর ক্লান্ত । তাছাড়া আগামীকাল আবার সকালে বের হতে হবে । রাতের খাবার প্যাক করে নিয়ে গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । আগামীকাল আমরা চুনার ও বিন্ধ্যাচল যাব। গাড়ি ঠিক করা হয়েছে । সুইফট গাড়ি । দু হাজার টাকা নেবে । সাড়ে আটটায় বের হতে হবে । (ক্রমশঃ) ------------------------------------------------- হোটেলের বিষয়ে অনেকেই জানতে চেয়েছেন । এখানে বলে রাখি যে এটা একটি পেয়িং গেস্টহাউস । মন্দিরের পাশেই প্রায় এটা অবস্হিত । ৪০০-৫০০ মিটারের মধ্যে গোধূলিয়া মোড় ও দশাশ্বমেধ ঘাট । কিন্তু এটাকে ঠিক আদর্শ থাকার জায়গা বলব না । কারণগুলো হলো, ক) কমোড নেই, ইন্ডিয়ান স্টাইল খ) অ্যাটচড বাথরুম নেই, কমন বাথরুম । দোতলায় চারটি রুমের জন্য একটি আর নিচে তিনটি গেস্টরুমের জন্য একটি বাথরুম । গ) দোতলার বাথরুমে গিজার আছে কিন্তু নিচেরটিতে নেই । ঘ) রুমও ছোট বড় । যেমন ওপরের রুম যেটিতে আমি ছিলাম সেটা বেশ বড়, কিন্তু একই ভাড়ার নিচের রুম ছোট । ঙ) ঘরের বাইরে কমন এরিয়ায় আপনাকে ভেজা কাপড় জামা শুকোতে দিতে হবে, কারণ ঘরে সম্ভব নয় । শুকোতে দেবার পর আমার নতুন গামছাটা চুরি হয়ে গেল । চ) হোটেলে ঢোকার এন্ট্রান্সটা যেমন সরু তেমনি নোংরা । সেই নোংরা ডিঙিয়ে আপনাকে যাতায়াত করতে হবে ছ) খাবারের কোনো ব্যবস্থা নেই । চা পর্যন্ত আপনি এখানে পাবেন না । জ) ঘরে কোনো আলমারি বা হ্যাঙ্গার নেই যাতে আপনি জামা-কাপড় রাখতে বা ঝোলাতে পারবেন । ঝ) ভাড়াও কম নয় । ট্যাক্স নিয়ে এই অফ সিজনে প্রতিদিনের জন্য ৯০০ টাকা করে পড়েছে । এছাড়াও আরও অনেক কিছু আছে যা মোটেই আশাব্যাঞ্জক নয় । তাই বলছি, ভালো করে খোঁজ খবর নিয়ে যাওয়া ভালো । গেস্টহাউসের নাম উমা গঙ্গা পেয়িং গেস্ট হাউস । --------------------------------------------------
বেনারস ও প্রয়াগরাজ ঘোরার ডায়েরি (৩য় পর্ব)
৩য় দিন(১৫/১১/১৮) সকাল সাড়ে আটটায় গাড়ি আসার টাইম - গোধূলিয়া মোড় । যথাসময়ে নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছে গাড়ির ড্রাইভার পন্ডিতজিকে ফোন করে জানলাম সে দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে যাবে । পনেরো মিনিট পরে ফোন করে বলল যে রাস্তা বন্ধ তাই গোধূলিয়া মোড়ে সে আসতে পারছে না । কোনো মিনিস্টার আসার কথা, তাই রাস্তা বন্ধ । আমাদেরকে আগের মোড়ে গিয়ে গাড়িতে উঠতে হবে । আগের মোড় মানে গির্জা ঘর চৌরাহা ৫০০ মিটার দূরে । হেঁটে এসে গাড়িতে বসলাম । গাড়ি ছুটে চলেছে চুনার দুর্গের উদ্দেশ্যে । বেনারস শহরের রাস্তার করুণদশা দেখে একটু অবাক হলাম । পন্ডিতজিকে দেখলাম রাস্তা নিয়ে গজগজ করছে । এখানকার প্রশাসন যে শহরের উন্নতির জন্য কিছুই করছে না তা এই দুদিনে বেশ বুঝে গেছিলাম । শহর ছাড়ানোর পর রাস্তা খুব সুন্দর । ঠান্ডা ঠান্ডা আবহাওয়া । বেশ লাগছে । আজ প্রথমে চুনার দুর্গ দেখব । এরপর যাবো বিন্ধ্যাচল । গোধূলিয়া মোড় থেকে চুনার দুর্গের দূরত্ব ২৯ কিলোমিটার । সকালের জলখাবার খেয়েই বেরিয়েছি তাই মাঝে কোথাও দাঁড়ানোর নেই । বেলে পাথরের চুনার দুর্গ একটা ছোট পাহাড়ের ওপর । উচ্চতা প্রায় ২৮০ ফুট । গাড়ি পাহাড়কে পাক খেতে খেতে উঠে এল, দুর্গের গেটের কাছে । গেটের বাইরে রাস্তার ডান দিকে গাড়ি পার্ক করিয়ে আমরা ভেতরে ঢুকলাম । সময় তখন দশটা । এক ঘন্টার কিছু বেশি সময় লাগল আসতে । এ স্হানটা একটু বেশি ঠাণ্ডা । সকালের শীতল ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে । শোনা যায় উজ্জয়িনীরাজ বিক্রমাদিত্যের ভাই ভতৃহরি এখানে কঠিন তপস্যা করেন ও জীবন্ত সমাধি নেন । এই দুর্গটি রাজা বিক্রমাদিত্যই প্রথম নির্মাণ করেছিলেন। এই দুর্গকে কেন্দ্র করে মুঘল ও পাঠানদের মধ্যে অনেক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। প্রায় ২০০ বছর মুঘলদের অধীনে থাকার পর একটা সময় এটি ইংরেজদের হাতে চলে আসে । প্রথমেই আমাদেরকে খাতায় এন্ট্রি করতে হলো । কোনো টিকিট লাগে না । এরপর সিঁড়ি দিয়ে উঠে দুর্গের কাছে আসতেই একটি অল্পবয়সী ছেলে এল । সে নিজেকে গাইড বলে পরিচয় দিল । ১০০ টাকায় তাকে ঠিক করা হলো । প্রথমেই আমরা একটা বিশাল পাথরের কুয়ো দেখলাম । জল আছে কিন্তু অনেক নীচে । পাশ দিয়ে একট রাস্তা নেমে গেছে, কিছুটা অংশে সিঁড়ি আছে । যেটা দিয়ে কুয়োর জলের কাছে চলে যাওয়া যাবে । আমরা কিছুটা নেমে ফিরে এলাম । দুর্গের অনেকটা অংশই এখন সামরিক বাহিনী ও পুলিশের হাতে । বাকি অংশ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত । একটু এগিয়ে কয়েদখানা দেখলাম । রয়েছে ফাঁসীর মঞ্চ, রয়েছে পাতাল ঘর, যেখানে অপরাধীদের আটকে রাখা হতো । ভতৃহরির সমাধি, মন্ডপ ইত্যাদি দেখা হলো । মন্দিরের ঠাকুরমশাই এ স্হানের ইতিহাস বললেন । এখানে থেকে একটি গোপন সুরঙ্গপথ ছিল যা গঙ্গা পর্যন্ত চলে গেছে । পরবর্তী কালে সেই সুরঙ্গটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । দুর্গের পাশ দিয়ে গঙ্গা বয়ে গেছে । নদীর বেশিরভাগ অংশেই চরা পরে গেছে । দুর্গের থেকে নদী ও আশপাশের দৃশ্য অপূর্ব । গঙ্গার গতিপথ এখানে অনেকটা ইংরাজি S অক্ষরের মতো । এখানে তেমনভাবে লোকজন আসে না । আগে বিশেষ কেউ জানত না বলে আসতও না । অনেক সিনেমা ও টিভি সিরিয়ালের শুটিং হওয়ার জন্য এটির প্রতি সাধারণ পর্যটকের আগ্রহ ধীরে ধীরে বাড়ছে । এর নির্জনতা অনেকেরই ভালো লাগবে । আবার অনেকে হতাশও হতে পারেন তেমন কিছু নেই বলে । দশটা পঞ্চাশে এখান থেকে বেরিয়ে এবার আমরা চললাম বিন্ধ্যাচল । প্রথমে অষ্টভূজার মন্দির । বারোটার সময়ে পৌঁছে গেলাম । কিন্তু মন্দিরে ঢোকা গেল না । মন্দির তখন বন্ধ । খুলবে আবার একটার সময় । তাই আমরা সীতাকুণ্ড দেখবো ঠিক করে নীচের দিকে নামতে লাগলাম । পাহাড়ের গা বেয়ে সিঁড়ি নেমে গেছে । অনেকটাই যেতে হলো । মাঝে একটা চায়ের দোকান পেয়ে চা খেলাম । চা'টা দারুণ বানিয়ে ছিল । সীতাকুণ্ডে পূজো দিয়ে আমরা ফিরে এলাম অষ্টভূজার মন্দিরে । কিন্তু বিরাট লম্বা লাইন দেখে মাথা ঘুরে যাবার মতো অবস্থা । লাইনে দাঁড়িয়ে পূজো দিতে কেউ রাজি হলো না । উপায় একটা বের হলো । ভারতবর্ষের অধিকাংশ ধর্মীয় স্হানে যা হয় এখানেও সেটাই চলছে । যারা লাইন সামলাছিল গেটে দাঁড়িয়ে তাদেরই একজন স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে জেনে নিল যে আমরা ভগবান দর্শন করতে ইচ্ছুক কিনা । জানাল যে সে ব্যবস্থা করে দিতে পারে । লাইন দিতে হবে না । এক একজনের ১৫০ টাকা করে চার জনের ৬০০ টাকা লাগবে । টাকার অঙ্ক শুনে আমরা পিছিয়ে যাচ্ছি দেখে বলল অন্তত ১০০ টাকা করে ৪০০ টাকা দিলে সে একবার চেষ্টা করে দেখতে পারে । আমরা তাও রাজি না হওয়ায় সে এবার আরো নামতে লাগল । একটু দূরে একজন পান্ডা বসে ছিল । সুন্দর দেখতে ঐ যুবক পান্ডার সাথে আলোচনা করে ১৫০ টাকাতে চারজনকে ঢোকাতে রাজি হলো । আরও অনেকে এই ভাবে টাকা দিয়েই ঢুকে যাচ্ছে । দরদামও কিছু করছে না । যা চাইছে তাই দিচ্ছে । এবার বুঝলাম লাইনটা কেন এগোচ্ছে না । যাইহোক মাথা নিচু করে প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে ঢুকতে হলো । সেখানেও পান্ডারা রয়েছে যারা আপনার মাথা জোর করে ভগবানের পায়ে ঠুকে দিয়ে ইচ্ছে মতো অর্থ নিতে ব্যস্ত । অতএব এ ব্যাপারে আপনাকে সতর্ক ও সাবধান থাকতে হবে । এখানে পাতাল ভৈরবী ও আরও দু একটা দেবতার স্হান দর্শন করে চললাম বিন্ধ্যবাসিনীর মন্দিরের উদ্দেশ্য । এখান থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত । এখন সময় দেড়টা । বেলা অনেক হয়ে যাবার জন্য প্রথমে লাঞ্চ করে নিলাম বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের কাছেই । । তারপর বিন্ধ্যবাসিনী মন্দিরের উদ্দেশ্য হেঁটেই রওনা দিলাম । সরু ঘিঞ্জি গলি । দুপাশে দোকান, মাঝখান দিয়ে রাস্তা । মন্দিরের সামনে আসতেই একজন সুন্দর সুঠামদেহী যুবক এগিয়ে এসে বলল যে সে দেবতার দর্শন একদম সামনে থেকে করিয়ে দেবে । ৪০০ টাকা লাগবে । আমরা নিজেরাই লাইন দিয়ে ভগবান দর্শন করবো শুনে সে চলে গেল । যাইহোক আমরা লাইনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে তবেই দর্শন পেলাম । এটা সতীর একান্নপীঠের অন্যতম এক সতীপীঠ । পুরাণমতে দেবী সতীর বাম পায়ের আঙ্গুল এখানে পড়েছে। এবার ফেরার পালা । ফেরার সময়েও আমাদেরকে গির্জা ঘরের ওখানেই নামতে হলো রাস্তা বন্ধ থাকার জন্য । এখন রাস্তা বন্ধ গঙ্গা আরতির জন্য । রাতের বেলায় আমরা বাবা বিশ্বনাথের দর্শন পাবার জন্য বের হলাম । মোবাইল, ক্যামেরা কিছুই নিয়ে যেতে দেবে না তাই ওগুলো গেস্টহাউসে রেখে পাজামা-পাঞ্জাবী ও প্রয়োজনীয় টাকা নিয়ে মন্দিরের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । এখন কোনো লাইন নেই । আঁটসাঁট নিরাপত্তার বেষ্টনী পেরিয়ে মন্দিরের ভেতরে প্রবেশ করলাম । এখানে একটা কথা বলা দরকার । মন্দিরের বাইরে দোকানগুলোতে পূজো দেবার জন্য যা কিছুই কিনুন না কেন ওরা ইচ্ছে মতো দাম নেয় । আমরাও এর শিকার হয়েছি যা পরের দিন অন্য দোকানে কিনতে গিয়ে বুঝতে পারি । দারুণ সুন্দর মন্দির । মন্দিরের ওপরের চূড়া সোনার তৈরি । একেবারে সামনে দাঁড়িয়ে দর্শন করলাম । আরতি দেখলাম । বাবার পায়েস ভোগ খেলাম । পৌনে এগারটা পর্যন্ত মন্দির প্রাঙ্গণে থেকে বেরিয়ে অন্নপূর্ণার মন্দিরে গেলাম । এটাও দারুণ সুন্দর । যেমন মন্দির তেমনি মা অন্নপূর্ণার বিগ্রহ । একেবারে ভিড় না থাকায় দুটি মন্দিরে খুব ভালো করে দেবতাকে দর্শন করতে পেলাম । এগারোটায় গেস্টহাউসে ফিরে এলাম । রাতের খাবার আগেই এনে রেখে ছিলাম । অতএব খেয়ে এবার শুতে হবে । কাল সাড়ে সাতটায় বের হতে হবে । যাব প্রয়াগরাজ বা এলাহাবাদ । আজকের গাড়িটাই যাবে । ভাড়া নেবে ২৪০০ টাকা ।
লেট লতিফ
!! শান্তিনিকেতন ট্যুর!! !! Shantiniketan Tour!! আমরা বাঙালিরা একটু late এ চলি সব বিষয়ে সঙ্গে আমাদের সরকারী যাতায়াত ব্যবস্থাও। একে অন্যের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ঠিক হয়েছিল আমরা দুই বন্ধু দু দিনের জন্য শান্তিনিকেতন ঘুরতে যাবো 10 ই নভেম্বর শনিবার। আমার বন্ধু আসবে উলুবেরিয়া থেকে আর আমি একটি বিশেষ কারণে চন্দননগর এসেছি সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু হবে। কথা ছিল যে আমরা দুই বন্ধু ব্যান্ডেল এই মিট করব। আমার বন্ধু উলুবেরিয়া থেকে হাওড়ায় এসে হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল গামী লোকাল এ উঠবে আর আমি চন্দননগর থেকে ব্যান্ডেল তিনটে স্টপেজ চলে যাব. রিজার্ভেশন এর কোন গল্প নেই তাই প্ল্যান ছিল 8:40 a.m. এর মাতারা এক্সপ্রেস ধরবো ব্যান্ডেল থেকে। কিন্তু ওই যে আমরা লেট লতিফ। উলুবেরিয়া থেকে যে লোকাল ট্রেনটি আমার বন্ধুর ধরার কথা ছিল সেটা যথারীতি ও মিস করেছে অগত্যা পরে ট্রেনে আসছে, কিন্তু সাউথ ইস্টার্ন এর বিখ্যাত অলিখিত হল্ট স্টেশন টিকিয়াপাড়ার হাওড়ার মাঝখানে, সেখানে ট্রেনটি ঝুলিয়ে দেয় এবং প্রায় আধঘন্টা পরে হাওড়া স্টেশন পৌঁছায় এবং হাওড়া থেকে ব্যান্ডেল এ আসার যে ট্রেনটা ধরার কথা ছিল সেটাও মিস হয় তারপরে কাটোয়া লোকাল ধরে সে ব্যান্ডেলে এসে পৌছালো। ততক্ষণে মাতারা এক্সপ্রেস ব্যান্ডেল ছেড়ে চলে গেছে আমরা দুই বন্ধু ব্যান্ডেল এসে বসলাম। শুরু হলো Plan B - ব্যান্ডেল থেকে বর্ধমান লোকাল এ করে বর্ধমান স্টেশনে পৌঁছে বর্ধমান থেকে কলকাতা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস ধরবো ঠিক করলাম। ব্যান্ডেল থেকে নটা পাচের বর্ধমান লোকাল এ যাত্রা শুরু হলো পথে যেতে যেতে ট্রেন লেট করা শুরু করলো একটা সময় দাড়িয়েই গেল। এইদিকে আমরা App এ লাইভ ট্রেন স্ট্যাটাস চেক করে চলেছি। এই করে প্রায় সময়ের 20 মিনিট পরে বর্ধমান পৌছালাম। ততক্ষণে কলকাতা হলদিবাড়ি এক্সপ্রেস এর ছেড়ে চলে গেছে বর্ধমান স্টেশন থেকে। অগত্যা Plan C - পিছনেই ছিল হাওড়া সিউড়ি ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। স্টেশনে ট্রেন ঢুকতেই আমরা উঠে পড়লাম দেখলাম যে মোটামুটি বসার জায়গা আছে. ট্রেন ছাড়লো... এক ঘণ্টার মধ্যে বোলপুর শান্তিনিকেতন পৌছে দিল। স্টেশন থেকে শেয়ার টোটো করে লজের মোড় গেলাম যেহেতু আমাদের কোন হোটেল বা লজ বুক করা ছিল না সেই কারণে শুরু হলো হোটেল বা লজ খোঁজা। কম দামে লজ খুঁজতে খুঁজতে বেশ বেগ পেতে হলো অবশেষে একটা ভালোই লজ খুঁজে পেলাম - শান্তিনিকেতন লজিং সেন্টার এটা ভুবনডাঙ্গা তে ₹600/- বিনিময়ে। এদিকে হোটেল খুঁজতে খুঁজতে পথেই আমরা একটা করে রাবড়ি খেয়েছিলাম খুব সুস্বাদু কর আমাদের দু দিনের ট্যুরে আমরা গোটা ছয়েক রাবরি খেয়েছি। Hotel এ CheckIn করে স্নান করে ফ্রেশ হয়ে shared toto করে বেরিয়ে পড়লাম। সোনাঝুরির হাটে পৌছেই আগে সোজা চলে গেলাম রাম শ্যাম ভিলেজ রিসোর্ট এ। এই গ্রুপে রিসোর্টের প্রচুর নাম শুনেছি তাই লোভ সামলাতে পারলাম না। খাবারের অর্ডার দিলাম। আহা! কি স্বাদ! মনে রাখার মতো বিশেষ করে গাওয়া ঘি. মিল সিস্টেম বা আমরা যাকে থালি বলি। পেটে ছুঁচো ডন মারছিল, পেট পুরে খাওয়া দাওয়া হল, তারপরে শুরু হলো আমাদের সোনাঝুরি হাট পরিক্রমা। জঙ্গলের মধ্যে লাল মাটির ওপর এই হাটের বেচা কিনি সঙ্গে মাদলের তালে ধামসা নাচ খুব এনজয় করলাম সঙ্গে বাড়ির মহিলা আর ঘর সজ্জার জন্য কিছু কেনাকাটি। সঙ্গে অবশ্যই রাবড়ি আবার। সন্ধ্যে হয়ে আসছে এই সময় দেখতে চললাম প্রকৃতি ভবন। মাত্র পাঁচ মিনিটের হাঁটা পথ। মধ্যে ফসিলস গুলো দেখতে দেখতে কানে এলো সাঁওতালি ভাষায় কবিগুরুর গান। দেখলাম একজন শিক্ষক কে ঘিরে ধরে কিছু গ্রামের ছেলেমেয়েরা গান করছে। প্রকৃতি ভবন খোলা থাকে পাঁচটা পর্যন্ত আমরা যখন গিয়েছি তখন পাঁচটা বেজে পাঁচ মিনিট হয়ে গেছে তাই ওই ভদ্রলোককে যিনি গান শেখাচ্ছিলেন ওনাকে রিকোয়েষ্ট করতে উনি আমাদের প্রকৃতি ভবনের তিনটে গ্যালারি দেখার সুযোগ করে দিলেন টিকিটের বিনিময়ে। টিকিটের ডিটেলস আমি নিচে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দিয়ে দেব। ফেরার তাড়া আছে, চারিদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে, তাই বেশি সময় নষ্ট না করে ওখান থেকে আমরা বেরিয়ে এলাম আবার সোনাঝুরি হাট এর কাছে। ওখান থেকে এক টোটো ওলা কে পেলাম যার টোটো করে চলে এলাম লজের মোর আমাদের লজে. এই টোটো ওলা নাম হলো সঞ্জয়, কম বয়সী অবাঙালি ছেলে একে আমরা ঠিক করলাম পরের দিনের শান্তিনিকেতন ট্যুরের জন্য ₹650/- বিনিময়। অসম্ভব পায়ের যন্ত্রণা হচ্ছিল আসলে এতটা হাঁটার অভ্যাস নেই তাই একটু ফ্রেশ হয়ে pain blam লাগিয়ে নিলাম। হোটেল একটু রেস্ট নিয়ে বেরোলাম ডিনার করতে। ইচ্ছা ছিল বিশ্বভারতীর উল্টোদিকে এস বি আই ব্যাঙ্ক এর সামনে প্রচুর মোমোর দোকান বসে ওখানে মোমো, ফুচকা খাব তারপর ডিনার করে লজে ফিরব। একটু রাত হয়ে যাওয়াতে মোমো পেলাম না তাই রাস্তা দিয়ে হাটাহাটি করতে করতে চলে গেলাম আপনজন হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এ সেখানে রুটি তরকা সহযোগে ডিনার করে লজে ফিরে এলাম। একটু টিভি দেখে তারপর লম্বা ঘুম।
11 ই নভেম্বর অর্থাৎ রবিবার। সকালে ওঠার কোন তাড়া ছিল না কারণ এবারের ট্রিপ এ আমরা কঙ্কালীতলা বাদে রেখেছিলাম। ধীরে সুস্থে উঠে বাইরে এ ব্রেকফাস্ট করতে গেলাম হোটেল এর উল্টো দিকেই গরম গরম লুচি আর ঘুগনি পাওয়া যাচ্ছিল। তারপর একটু ঘোরাঘুরি করলাম রাস্তার উপরে দেখলাম বেশ মাছের বাজার সবজির বাজার বসেছে ঘুরে নিলাম কারণ সন্ধ্যেবেলা আর ঘোরার সুযোগ থাকবে না, ফেরার তারা থাকবে সন্ধ্যায় ট্রেন। কিন্তু একটি মিষ্টির দোকানে দই খেতে ভুললাম না, তারপর সোজা হোটেলের দিকে যেতেই দেখি সঞ্জয় মানে আমাদের টোটো ওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে। 9 a.m. টাইম দিয়েছিল কিন্তু সে পৌনে নটার সময় হাজির। একটু wait করতে বলে আমরা হোটেলে এ ঢুকে গেলাম। আধ ঘন্টায় ready হয়ে হোটেল থেকে Checkout করলাম আর রিসেপশনে আমাদের লাগেজ গুলো রেখে দিলাম বললাম চারটার সময় এসে লাগেজগুলো কালেক্ট করে নেব।
সকাল 9.30 তে বেরিয়ে বিশ্বভারতী বাইরের রাস্তা ধরে সঞ্জয় এর সাথে গল্প করতে করতে এলাম সৃজনি গ্রাম এ। সঞ্জয় খুব লাজুক ছেলে যেহেতু ও হিন্দি ভাষী তাই আমাদের যাত্রার পরবর্তী পর্যায়ে ওর লাজুকপনা দেখে ওর নামই আমরা শর্মাজি দিয়ে দিলাম। সৃজনি গ্রাম এ অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ একতারা সুরে সকালের শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ দারুণ লাগলো ঘুরতে। দেশের বিভিন্ন রাজ্য গুলোর সংস্কৃতি তুলে ধরেছে। সঙ্গে শিল্পীরা তাদের কাজ করে চলেছে। তারপর এগিয়ে চললাম আমার কুটির এর দিকে। কিছুটা গিয়ে লাল মাটির রাস্তায় উঠলাম, চারিদিকে জঙ্গলে ঘেরা। অদ্ভূত অনুভূতি। আমার কুটির হলো showroom. শান্তিনিকেতন শিল্পকলার সুন্দর collection. আমরা দুই বন্ধু কিছু কেনাকাটা করলাম। সাথে ছোট্ট Exhibition hall দেখে চললাম কোপাই নদীর পাড়। ইচ্ছা হয়েছিলো আমার কুটির হসেল ঘর এ lunch করার। কিন্তু আগেই প্ল্যান করে ছিলাম Kasahara তে আজকের lunch করব আর সবে 11.30p.m. তাই হেসেল ঘর, eco Park ফেলে চললাম কোপাই নদীর পাড়। পথে প্রকৃতি ভবন, সোনাঝুরি হাট এ আর ঢুকলাম না। রবিবার এ এর হাট সবে সাজছে, মাদলের তালে ধামসা নাচ চলছে। পৌঁছলাম গ্রাম্য কোপাই নদী। আমাদের কেনাকাটা জিনিস গুলো সঞ্জয় এর toto র cabin এ রেখে দিতে বলে আমরা হেঁটে ঘুরতে গেলাম। নদীর ওপর ব্রিজ টা নতুন করেছে মনে হলো.. মিনিট দশেক time কাটিয়ে চললাম বিশ্ববাংলা হাট। আমার মতে কোপাই নদী দেখতে হলে পরন্ত বিকালে আসুন। আরো ভালো লাগবে তারপর সন্ধের সময়ে বিশ্ববাংলা হাট। আমরা পৌঁছলাম 12.30 p.m. Security guard বললো 1p.m. খুলবে। একটু request করে ভিতরে ঢুকলাম.. কয়েক জন দোকানি পসরা নিয়ে বসেছেন, কেউ কেউ Batik এর কাজ করছেন, পট চিত্রের সুন্দর collection. এরপর চললাম বিশ্বভারতী. সঞ্জয় museum এর সামনে ছেড়ে দিলো আর বললো আমাদের দেখা হয়ে গেলে Call করতে, lunch করাতে নিয়ে যাবে। কারণ বিশ্বভারতীর ভিতর toto চলে না, হেঁটে ঘুরতে হয়। আমরা আশ্রম এর ভিতরে গিয়ে শান্তিনিকেতন গৃহ, এবং আসে পাশের চারিদিকে টা ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগলো। বাকি স্পট গুলো দেখে চলে গেলাম পেট পূজা করতে kasahara the cafe তে। সার্ভিস খুব slow. Thali system হলেও extra charge করে second service এর জন্য। তিনটে নাগাদ চললাম রবীন্দ্র ভবন meuseum. বেশ ভালো লাগলো, এক ঘন্টা থেকে বেরিয়ে পড়লাম কলা ভবন এর উদ্দেশ্য, সাথে একটা করে রাবড়ি খেলাম। চললাম কলা ভবন, এর ভিতর খুব সুন্দর, দেওয়ালের কারুকার্য মনমুগ্ধ করে। এই দিকে ঘড়ির টাইম এগিয়ে চলেছে, শর্মা জি কে ফোন লাগলাম মনে আমাদের toto driver Sanjay. আমাদের pickup করে নিয়ে সোজা হোটেল এ। আগেই বলেছিলাম সকালে হোটেল reception এ luggage রেখে check out করে ছিলাম, তাই শর্মা জি কে একটু wait করিয়ে হোটেল থেকে luggage নিয়ে সোজা station 5 টায়। শর্মা জি কে পাওনা মিটিয়ে ছেড়ে দিলাম সাথে বকসিস ও দিলাম ₹50/- ওর ব্যবহারের জন্য। কারণ আগেই শুনেছিলাম সারাদিনের Tour এ minmum ₹700/- টাকা নেয়। তাই মনে হল ₹650/- বদলে ₹700/- দিলে ও খুশি হবে আর আমরাও আনন্দ পাব। কেলেঙ্কারি ঘটলো একটু পরে যখন মনে পড়লো শর্মা জির toto র cabin এ আমাদের কেনা জিনিস গুলো রয়ে গাছে. সঙ্গে সঙ্গে phone লাগালাম, phone ও receive করে না, মনে সব শহুরে চিন্তা ভাবনা গুলো আসতে থাকলো. একটু এগিয়ে গিয়ে দেখতে থাকলাম toto দের ভিড়ে, খুঁজে ও পেলাম... নতুন আবার passanger খুঁজছে, গিয়ে বলতে সঙ্গে সঙ্গে জিভ কামড়ে ওর ছোট্ট pouch থেকে মোবাইল বের করে ক্ষমা চাইতে থাকলো, বুঝলাম গাড়ি ঘোড়ার আওয়াজ এ শুনতে পাইনি। চোখে মুখে পরিষ্কার লজ্জা আর আফসোস এর ছাপ। আমি ওকে আশ্বস্ত করে বললাম "फिर आएंगे तो तुमको ही स्टेशन से ले जाना पड़ेगा पूरा शांतिनिकेतन घुमाना पड़ेगा" শর্মাজি ওরফে আমাদের সঞ্জয় কে বিদায় জানালাম, আমরা স্টেশনের ভেতরে এসে ঢুকে বসলাম, Sahid Express যথাসময়ে এল কিন্তু ওই যে লেট লতিফ, সেটা তো আর পিছু ছাড়ে না ট্রেন তো এলো কিন্তু পথে চলতে চলতে দাঁড়িয়ে গেলো হাওড়া পৌঁছতে পৌঁছতে ন 'টা বাজানো। তারপর বাড়িতে পৌঁছলাম। সুন্দর একটা ছোট্ট যাত্রা শেষ হল।
এবার কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের সাথে শেয়ার করব যেগুলো শান্তিনিকেতন ঘোরার জন্য আপনাদের কাজে লাগতে পারে -
1. যারা প্রথমবার যাবেন শান্তিনিকেতন আর আগাম হোটেল বুকিং ছাড়া, কখনোই টোটো ওয়ালা কে শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতী যাব বলবেন না তাহলে ওরা উল্টোপাল্টা ভাড়া বলবে। বলবেন লজের মোড় যাবো। ভাড়া নেবে ₹10/- লজের মোর হল বিশ্বভারতী থেকে একটা স্টপেজ আগে ওখান থেকে বিশ্বভারতী কাছাকাছি লজ গুলো শুরু হয়। 2. লজের মোড় থেকে সোনাঝুরি হাট টোটো ভাড়া ₹20/- প্রতিজন. আসার সময়ে ও একই rate. 3. প্রকৃতি ভবন এর entry fee ₹20/-, সময় সন্ধে 5 টা পর্যন্ত। 4. সৃজনি গ্রাম entry fee ₹20/- সময় 9:30a.m. - 5:30p.m. 5.শান্তিনিকেতন গৃহ - entry fee নেই. সময় 1p.m. -5:30p.m. 6. রবীন্দ্র ভবন meuseum. টিকিট ₹50/- সময় 8a.m - 1p.m. এবং 2p.m. - 5:30p.m. 7. বিশ্ববাংলা হাট - entry fee নেই, সময় শুরু 2p.m. থেকে। 8. শান্তিনিকেতন এর tour এ সারাদিনের জন্য toto book করার দরকার পড়ে না। Sight seen গুলো আগে সেরে toto ছেড়ে দিতে পারেন বিশ্বভারতী তে ঢোকার আগে। কারণ বিশ্বভারতী টা আপনাকে পায়ে হেঁটে ঘুরতে হবে. তাই সারাদিনের জন্য toto রিজার্ভ করে অযথাই পয়সা নষ্ট হয়। ওই পয়সায় আপনি চাইলে বিশ্বভারতী কে আরো ভালোভাবে জানার জন্য Guide নিতে পারেন। 9. খাওয়া দাওয়া - কোনো একটা দুপুরের খাওয়া রাম শ্যাম ভিলেজ রিসোর্ট এ must. দাম টা একটু বেশি। Recently দাম টা বেড়েছে (Mutton Thali ₹350/-, Vej Thali - ₹130/-). But first service, varieties of food and obviously very tasty food. Meal/ Thali system, যতো খুশি খান। খেলে ...স্বাদ টা অনেক দিন মনে থাকবে। বিশ্বভারতী র ভিতর Kasahara, the cafe তে Hut type এর arrangement. Students এর ভিড় টা বড্ড বেশি. Service খুব late. Menue বা Rate chart এ তে Thali উল্লেখ থাকলেও extra ভাতের জন্য ও charge করে। খাবারের স্বাদ মোটামুটি ঠিকঠাক। তবে না খেলে কিছু মিস করবেন না। আমি personally Recommend করব না. বিশ্বভারতীর canteen এ যদি খেতে হয় তাহলে বোলপুর শান্তিনিকেতন Road এর side এ সর্বসাধারণ এর জন্য একটা canteen আছে যেটা Chinese Language department এর পাশে।
কোচবিহারের ঐতিহাসিক রাসের মেলা। প্রায় ছয় থেকে সাত বিঘা জমির মাঠের উপরে এই মেলাটি হয়। কোচবিহারের মদনমোহন বাড়ীর কাছে একটি রাস চক্র আছে। যা দর্শনার্থীরা এটি হাত দিয়ে ঘুরিয়ে দেয় এবং নমস্কার জানায়।কোচবিহারের রাজাদের আমলে এই রাস চক্রটি তৈরি করেন এক মুসলিম বংশের পরিবার। রাজাদের আমল থেকেই পরিবারটি এই রাস চক্রটি বানিয়ে আসছেন। রাসের মেলার আকর্ষণ গুলি হল সার্কাস, বড় বড় নাগরদোলা, দোলনা নৌকো এবং বাচ্চাদের অনেক কিছু আকর্ষণ জিনিস গুলো আসে। কলকাতা, বাংলাদেশ এবং অন্যান্য জায়গা থেকে জামা কাপড়ের দোকান এই মেলাতে আসে ।
নভেম্বর ২, ২০১৮
বেড়াতে এসেছি সুন্দরবন। কোথায় বাঘ দেখবো তা নয় কেবল জল আর জল। এতপর্যন্ত পড়েই বোধহয় ভাবছো আমার এবারের বেড়াতে যাওয়াটা পুরো মাঠে মারা গেছে তাহলে রোসো আগে আমার গল্প শোনো। আমিতো বেমালুম অবাক, শহরের মেয়ে গ্রাম সেভাবে দেখিনি, আর সুন্দরবন সেতো একেবারেই আলাদা। সোনারপুর থেকে ক্যানিং হয়ে যখন গদখালি এসে পৌঁছালাম তখনো জানিনা আগামী কয়েকটা দিন জলই হয়ে উঠবে ঘর বাড়ি। রাতের বেলায় লজে শুয়েও বোধ হবে দুলছি, কেবলই দুলছি। তা সেসব পরের কথা। উঠে পড়লাম আশালতায়। আমাদের লঞ্চ আশালতায় আনকোরা সাতটা বিছানা নতুন ধপধপে সাদা চাদর বালিশে মোড়া। চমৎকার বাথরুম। দেখে শুনে থ। আগে কাশ্মীরের ডাললেকে থেকেছি। সেখানে বোটে কুপ থাকে তাতে কাশ্মীরি কাজের কার্পেট আঁটা থাকে আগাগোড়া। সে আর এক আর এ, অনেক আলাদা। তো যাইহোক শুরু হলো আমাদের জলজ ভ্রমণ। নদীর পর নদী জল আর জল। এর শেষ কোথায়!! প্রথমদিনেই মনে হলো উফফ নামতে পারলে বাঁচি। চারিদিকে নিরবিচ্ছিন্ন শূন্যতা গ্রাস করে ফেলতে চাইছে যেন। শরীরে ক্লান্তি নেমে আসছে ঘুম আসছে। ভীষণ ঘুম। জলপথে অনেকটা রাস্তা ঘুরে সন্ধ্যে বেলায় নামলাম পাখিরালয়ে। রাতটুকু কটেজেই থাকা। নেমে অনেকখানি ভালো লাগলো। ফ্রেস হয়ে রাতে আদিবাসীদের ঝুমুর, হাসান রাজার পালার নানা গান, সুন্দরবনের লোকগান আর নাচে মুগ্ধ হয়ে রইলাম আমরা।
নভেম্বর ৩, ২০১৮
সকাল ৬টায় আবার এসে উঠলাম আশালতায়। আবার যাওয়া। এবার একটু অন্যরকম। কি বিশাল নদী। কত রকমের নাম না জানা নদী এসে মিশেছে তাতে, কেউ বিদ্যেধরী কেউ রায়মঙ্গল। শহরের মেয়ে নদীর কি বুঝি আমি। আমার দৌড় বাঁকা, জল শুকনো দামোদর খুব বেশী হলে দক্ষিনেশ্বরের গঙ্গা। এই প্রথম দেখছি নদী থেকে নদীতে নানারঙের জলের কি অপূর্ব সম্ভার। কখনো রোদ এসে পড়ছে তো কখনো মেঘ। সাদা মেঘ কখনো বা কালো। কখনো তীব্র রোদ আবার কখনো কেবলই বিভা। আর জল কখনো আকাশি কখনো নীল কখনো ঘোলাটে কখনো সবুজ। দূরে বনানীর শ্রেণী রোদ মেঘের ছায়ায় রঙ পাল্টাচ্ছে অবিরাম। ব্যাস ভালোবেসে ফেললাম। ভীষণ ভালো লেগে গেল হঠাৎ ই। মোহিত হয়ে গেলাম। এতক্ষণ খেয়াল করিনি এবার লক্ষ্য করলাম নদী কই। এতো সমুদ্র! কি ব্যাপার! লঞ্চের সারেং দীপক বাবু ব্যাপারটা খোলসা করলেন। এই যায়গা থেকেই শুরু হচ্ছে বঙ্গোপসাগর। ফলে এখান থেকে আদিগন্ত কেবল জল ই জল গাছ নেই, ছাওয়া নেই কিচ্ছু নেই। যতদূর চোখ যায় শুধু জল। এতক্ষন জোয়ার চলছিল। এবার এলো ভাটা। জল নেমে গেল গাছগুলোর শিকড় বেড়িয়ে এলো। শিকড়ের ঝুড়ি নেমেছে অজস্র। ছেলেবেলায় শ্বাসমূল ঠেসমূলের কথা পড়েছিলাম আজ চাক্ষুস দেখলাম। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। কখন যে বিদ্যাধরী হয়ে গেল বনইভরনী নদী আর কখনই বা হয়ে গেল নিতাই নদী সেকথা আমার পক্ষে জানা অসম্ভব। কোথায় কি জল একটু বেশী গাড় হয়েছিল! কোথায় যেন মনে হচ্ছিল নদীটা বড্ড সরু! কি জানি। দুই যায়গায় বাঘ দেখবো বলে গেলাম আমরা, দোবাঁকি আর নেতা ধোপানীর ঘাটে। কিন্তু ভাগ্য আমাদের নিরাশ করল। বাঘের পায়ের ছাপ দেখেই ফিরে আসতে হলো শেষ পর্যন্ত। মনসামঙ্গলের বিস্ময়টুকু মনকে আচ্ছন্ন করে রাখলো কেবল। নাহ বাঘ আমরা দেখিনি। কিন্তু নদীর সকাল দেখেছি, দেখেছি নদীর সূর্যাস্ত। নদীর জলের রঙ অস্তমিত সূর্যের আলোয় যখন রাঙা হয়ে উঠেছিল তখন গোধুলীর অস্তরাগ মেখে রাঙা হয়ে উঠল নদীর জল। ফাগ লেগেছিলো আগুন রাঙা জলে। আছাড়ি পিছাড়ি জলের ঢেউ বিদ্যাধরীর হাজার বছরের ধ্যান ভাঙছিল যেন। শান্ত জলে গরান গাছের ছাওয়া নাচছে। এ যেন কোন শতাব্দীর খুঁজে পাওয়া সেই হারানো বিকেল, অতল জলে নিবিড় হয়ে আছে। নানা রঙের পাখির মেলা আর হরিণ দেখেই মন শান্ত করতে হলো। আর দেখলাম চরায় শুয়ে ক্লান্ত বয়জ্যেষ্ঠ কুমীরমশাইকে।
নভেম্বর ৪, ২০১৮
আজ সবারই মন খারাপ। মুখ ভার। মেঘলা আকাশ ফেটে সূর্যের বিভা ছড়িয়ে পড়ছে বিদ্যাধরীর জলে। তবে কি আজ আর ঘোরা হবেনা, দেখা হবেনা বাঘ! মন কেমনের প্রহর গুনছি আর পাখিরালয়ে আদরের কুকুর গুলিকে বিস্কুট খাওয়াচ্ছি। লঞ্চ এসে লাগলো ঘাটে। আমরা অন্যপথ ধরলাম। এপথে অজস্র গোসাপ। এদিক ওদিকে রোদে পিঠ দিয়ে শুয়ে আছে চড়ায়। কালকের মতো আজও পেড়িয়ে গেলাম পঞ্চনদীর মিলনক্ষেত্র। এই পাঁচটা নদী হলো গোসাবা, নিতাই, নবাঁকি, হরিণভাঙা আর দেউলভরানি। আজ বিদ্যাধরী থেকে গোমতী নদী দিয়ে সুন্দরবনের আরো গভীরে প্রবেশ করলাম আমরা। এখানে নদী ভয়ঙ্কর রকম শান্ত। আশে পাশে দূরদূরান্ত অবধি কোনো গ্রামের রেখাটুকুও নেই। আছে কেবল গভীর জঙ্গল। দুপাশের সবুজ রঙ ঈষৎ গাঢ়। এমনকি চলতি পথে এক আধটা স্টীমারও চোখে পড়লোনা। শুনলাম এ পথে স্পেশাল পারমিশন করে আসতে হয়। সবাই অনুমতি পায়না। গোমতী ছেড়ে সুধন্যনদী ধরলাম। সবারই মনটা খচ খচ করছিল কেবল পাখি দেখছি হাজার হাজার, হঠাৎ এ যায়গাটা এতো চুপচাপ হয়ে গেল কেন? খুব ধীরে এগোচ্ছে আমাদের লঞ্চ। কোথায় এতটুকু শব্দ নেই। সাংঘাতিক নিস্তব্ধতা। দিনে দুপুরেও ভয় লাগছে, ভীষন ভয়। আমরা চলেছি সড়কখালি ১ নামক খাঁড়ি দিয়ে। খাঁড়িটা এতটাই সরু যে আমাদের লঞ্চের পাশ দিয়ে দ্বিতীয় কোনো নৌকা যাওয়ার রাস্তাটুকুও নেই। হঠাৎ সারেং দীপকবাবু দেখলাম ছটফটিয়ে উঠলেন। বললেন জাহাজ ফেরাও, জাহজ ফেরাও। আমরা দমবন্ধ করে বসে আছি। একেবারে সাইলেন্ট। পুচকু গুলো খালি উত্তেজনায় কথা বলে উঠছে, আর বড়ো দের চোখরাঙানিতে আরো ব্যাকুল হয়ে উঠছে। এমনি সময় দেখলাম সেই কাঙ্খিত দৃশ্য। অদূরে জঙ্গলের গুঁড়িতে ঠেসান দিয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন বাঘমামা। বলতে যতখানি সোজা ততটা সহজে আমরা বাঘ দেখিনি অবশ্য। শুয়ে বসে চেয়ারে উঠে এপাশে বেঁকে,ওপাশে লাফিয়ে তবে দেখা গেছিল সেই নয়নাভিরাম দৃশ্য। আর চোখে যা দেখেছিলাম ক্যামেরাতে ধরা পড়েনি তার এক বিন্দুও। শুধু সেদিনের সেই ক্ষণকাল আঁকা হয়ে গেছিল হৃদয়ে। যাইহোক বাঘ দেখাতো হলো। তবুও দেখে দেখে আশ মেটেনা। লঞ্চ এপাশ ওপাশ ঘুরিয়ে আরো কাছে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা চলছে এমনি সময় বাঘ বাবাজী উঠলেন। বোধহয় ইচ্ছে ছিল আড়মোড়া ভেঙে আমাদের দলের একটিকে নিয়ে ডিনার সারার। তবে আমরা আর তাকে সে অবসরটুকু দিলুম না। কিছু বুঝে ওঠার আগেই লঞ্চ নিয়ে পগারপার। তারপর টানা একঘন্টা নিরবিচ্ছিন্ন যাত্রার পর আমরা আবার ফিরলাম বিদ্যাধরীতে। পৃথিবীর সেই আদিমতা সাময়িক উপভোগ তো করা যায়। কিন্তু প্রাণ হাঁপিয়ে ওঠে। আদিমতা যেন গ্রাস করতে আসে। নিস্তরঙ্গতায় শ্বাসরোধ হয়ে যায়। সেই আদিমতম আদিমতায় প্রকৃতি ঋদ্ধ থাকুক। কয়েকশো বছর পিছিয়ে যাওয়া স্বীয় মুহূর্ত মুহুর্মুহু আমাদের পুলকিত করুক। এই সব ভাবতে ভাবতেই একসময় এ জংলাভূমি, বেঁচে থাকার লড়াই মুছে গিয়ে চারপাশ ভরে উঠল জনপদে। সুন্দরবনকে বিদায় জানিয়ে আমরা আবার ফিরে এলাম আমাদের সুখী গৃহকোণে। পুনশ্চঃ আমাদের আশালতা লঞ্চে রান্না করেছিল টুকাই। প্রথমদিন দাঁতন মাছ আর দ্বিতীয় দিন পায়রাতোলি মাছের যা অনবদ্য রান্না করেছিল সে কথা আজো ভাবলেই মনে পুলক জাগে। একটা ছোটো প্রচেষ্টা রইলো পুরো ব্যাপারটা ৬মিনিটের মধ্যে ধরার। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
গোধূলির রঙ দেখা..প্রিন্সেপ ঘাট থেকে
দিনের শেষের রবি দেখতে দুই বন্ধু মিলে চলে গেছিলাম গঙ্গার ধারে প্রিন্সেপ ঘাটে। যখন পৌঁছলাম তখন সূর্যটা সোনালী রঙ্গের বড় থালা হয়ে পশ্চিমে হেলে পড়ার তোড়জোড় শুরু করেছে। গঙ্গার বুকে সেই কাঁচা সোনার রঙ এক মোহময় দৃশ্যের সৃষ্টি করেছে। বেশ কিছু নৌকা দেখলাম সেই গলিত সোনার মধ্য দিয়ে গঙ্গার বুকে ভেষে বেড়াচ্ছে! আস্তে আস্তে সূর্যটা হলুদ রঙ বদলে লাল হতে লাগল!আর গঙ্গার জলও হয়ে গেল ঈষদ লালচে সোনালী। গঙ্গার বুকে গোধূলির এই আশ্চর্য রূপের দিকে তাকিয়ে থাকি, পাখীরা উড়তে থাকে। ধীরে ধীরে লাল সূর্যটা দিগন্ত পাড়ে অদৃশ্য হতে থাকে! আরও কিছুক্ষন গঙ্গার ধারে কাটিয়ে আমরা প্রিন্সেপ ঘাট সৌধের দিকে যাই।আলোকিত সৌধটিকে দেখতে বেশ লাগে। ইতিহাস বলছে ভারতত্ত্ববিদ জেমস প্রিন্সেপ এর স্মরণে ১৮৪১ সালে কলকাতা নাগরিকদের দানে ১২০০০ টাকায় এই দৃষ্টিনন্দন সৌধটি তৈরী হয়। বর্তমানে পঃবঃ সরকার এর স্থাপত্য রীতি ও নান্দনিক চরিত্র গঠনের নিরাপত্তা পূর্ণ মাত্রায় বজায় রেখে আমূল সংস্কার করেন।
বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্য - স্বাধীন সার্বভৌম ভারতবর্ষকে এভাবেই ব্যাখ্যা করা যায়। বিশেষ করে ভৌগোলিক বৈচিত্র যে ভারতবর্ষের পদে পদে ভ্রমণপিপাসু রাই সে সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত। বৈচিত্রের কথা বললেই মানচিত্রে একটা রাজ্যের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ হয়। সেটা আর কেউ নয়, আমাদের প্রতিবেশী রাজ্য উড়িষ্যা । এখানে অনেক ভ্রমণস্থল দেখা যায় যেখানে প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়। তারই মধ্যে একটি স্থান হলো শিমলিপাল_অভয়ারণ্য। গ্রানাইট পাথরের পাহাড় , অগণিত গাছ, পাখি, সরীসৃপ , স্তন্যপায়ী নিয়ে ময়ূরভঞ্জ জেলার এই জাতীয় উদ্যানটি বৈচিত্রময়তার সাথে সাথে রহস্যময়ী ও বটে।©ইন্দ্রনীল।
শিমলিপাল নামটি এসেছে শিমুল_গাছের জন্য। এই স্থানে প্রচুর লাল_শিমুল_গাছ পাওয়া যায় বলে এর নাম #শিমলিপাল। আয়তনের হিসাবে শিমলিপাল উড়িষ্যা তথা পূর্ব ভারতের বৃহত্তর অরণ্য। ©ইন্দ্রনীল,এটি প্রধানত তিনভাগে বিভক্ত ১. হাদগর_ওয়ার্ল্ডলাইফ_সাংচুয়ারী, ২. কুলডিহা_ওয়ার্ল্ডলাইফ_সাংচুয়ারী, ৩. শিমলিপাল_টাইগার_রিজার্ভ । এই জাতীয় উদ্যান ইকোলজিকাল দিক থেকেও স্বতন্ত্র। ●২৭৫০ বর্গ কিমি র এই অভয়ারণ্যের মধ্যে ●৯৮০বর্গ কিমি সংরক্ষিত ও পর্যটকদের বিচরণ ক্ষেত্র। তার মধ্যে ●৩৩০ বর্গ কিমি কোর_এরিয়া। এখানে ১০৭৬ প্রজাতির উদ্ভিদ,৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ২৪২ প্রজাতির পাখী, ৩০ প্রজাতির সরীসৃপের সাথে ১২ টি নদী ও খৈরীবুরু ও মেঘাসানি_পাহাড় থাকায় অভয়ারণ্য টি সম্পূর্ণ পাহাড়ী ও সমতলভূমি থেকে উচ্চে অবস্থিত।©ইন্দ্রনীল অধিকারী, ভারতবর্ষের একমাত্র মেলানিস্টিক_বাঘের আবাসস্থল এই অরণ্যে শেষ খবর অনুযায়ী ৯৯টি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়। বুধবালঙ্গা, খৈরী, পলপলা, সালান্দা_নদী এই অভয়ারণ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে তিনটি জলপ্রপাতের সৃষ্টি করেছে ১.উস্কি ২.জোরান্ডা(ভারতবর্ষের ১৯তম জলপ্রপাত,সপ্তম সিঙ্গল ড্রপ ওয়াটারফলস) ৩.বরেহপানি( ভারতবর্ষের দ্বিতীয় উচ্চতম জলপ্রপাত) । কলকাতা থেকে এর দূরত্ব প্রায় 300 কিমি। বালাসোর অথবা বারিপদা পৌঁছে , সেখান থেকে গাড়িতে পৌঁছে যাওয়া যায় শিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ। শিমলিপাল নিয়ে একটি পুরানো ঘটনা আপনাদের জানাচ্ছি - অনেক কাল আগে এখানে এক নিঃসন্তান বাঙালি রেঞ্জার ফ্যামিলি বাস করতেন। তারা একবার পথভোলা আশ্রয়হীন এক ব্যাঘ্র শাবক কে খুঁজে পান। তারপর সেই কন্যা ব্যাঘ্রটিকে মানুষ করতে থাকেন সন্তান স্নেহে। তার নাম রাখা হয় #খৈরী । সে যখন বড় হয় আস্তে আস্তে ফিরে পেতে থাকে তার অভিজাত ব্যাঘ্র বংশের গরিমা এবং হিংস্র হয়ে উঠতে থাকে। ইতিমধ্যে একদিন প্রতিদিনের অভ্যাসবশত রেঞ্জার সাহেবের সহধর্মিনী যখন তাদের এই কন্যা সন্তান টিকে সাথে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন তখন #খৈরী তার গলার টুঁটি টিপে ধরে । রেঞ্জার সাহেব কোনোভাবে বুঝতে পেরে ছুটে এসে এই ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যান। মুহূর্তে নিজেকে সামলে নিয়ে নিজ পত্নীর প্রাণ বাঁচাতে তিনি তার লাইসেন্সড রাইফেল থেকে #খৈরী কে গুলি করেন ।©ইন্দ্রনীল অধিকারী মৃত্যু হয় খৈরীর। ততক্ষনে অবশ্য রেঞ্জার সাহেবের স্ত্রীও পরলোক গমন করেছেন। এই ঘটনায় রেঞ্জার সাহেব ভীষণ ভেঙে পড়েছিলেন। একাধারে স্ত্রীর মৃত্যু তারসাথে তারই হাতে প্রাণ প্রিয় কন্যা সন্তান সম খৈরীর মৃত্যুর পরিনামও খুব খারাপ হয়।©ইন্দ্রনীল অধিকারী শোকে ,কিছুদিনের মধ্যে তিনিও মৃত্যু বরণ করেন।শিমলিপালে যারা গেছেন তারা এটা শুনে থাকবেন আর যারা যেতে চান তারা গেলে তারাও স্থানীয় মানুষ জনের থেকে এটা শুনতে পাবেন।©ইন্দ্রনীল অধিকারী। ঘটনাটি যেমন হৃদয়বিদারক তেমনি আরো আকর্ষণীয় করে তোলে সিমলিপালকে। সেই আকর্ষণ আরো ও বাড়বে যখন নিম্নে জঙ্গলের বিভিন্নভাগের নাম জানতে পারবেন ---- ন্যাশনাল হাইওয়ে ৬ নম্বর দিয়ে পৌঁছানো এই অভয়ারণ্যে সর্বমোট ৭ টি চেক গেট আছে। ১. কালিকাপ্রসাদ ২. ব্রুন্দা বান ৩. নিগিরধা ৪. ভজন ৫. পিথাবাটা ৬. চাহালা ৭. এবং #তুলসিবানি। কোর এরিয়া গুলোর মধ্যে পড়ে----- ১. ●বরেহাপানি ২. ●জোরান্ডা ৩. ●ধুদরু চম্পা ৪. ●লুলুং ৫. ●নাবানা ৬. ●ব্রুন্দাবান ৭. ●জেনাবিল ৮. ●বরাকামুরা ৯. ●পিথাবাটা ১০. ●জোরান্ডা ১১. ●মাকাবাড়ি ১২. ●বাকুয়া ১৩. ●বলরামপুর। প্রবেশের জন্য বাংরিপসির নিকটবর্তী ●পিথাবাটা গেট অথবা ঠিক অন্যপ্রান্তের জোশিপদার দিকে ●খৈরী -লুলুং গেট ব্যাবহার করা যায়। এখানে ●চাহালা বলে একটি স্থান আছে যেখানে বন্য জন্তু রা নুনমাটি খেতে আসে। রহস্যময়ী এই জঙ্গলে চলুন একবার ঘুরে আসা যাক।
রোজকার গতে বাঁধা জীবনে হাঁপিয়ে উঠেছিলাম খুব। হাতে ছুটির সংখ্যাও কম তাই দূরে কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও উপায় নেই। অগত্যা একটু অক্সিজেনের খোঁজে তিন হুজুকে মিলে বললাম, "চলো, let's go". আমাদের কর্মক্ষেত্র জামশেদপুরই আমাদের exploration এর ঠিকানা। এই জামশেদপুরের নামের সাথেই কিছু জায়গার নাম অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তার মধ্যে একটি হলো জুবিলী পার্ক। দক্ষিণ ভারতের মাইসোরের বৃন্দাবন গার্ডেন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে 1958 সালে এই জুবিলী পার্কের উদ্বোধন করেন জামশেদ জী টাটা। বর্তমানে এই পার্কের তত্ত্বাবধানে রয়েছে Tata Steel. এই পার্কের উদ্দেশ্যেই ছুটলাম তিন ভ্রমনপ্রিয় মানুষ। মাত্র 30 টাকা মাথাপিছু টিকিটের বিনিময়ে সোজা ঢুকে পড়লাম জুবিলী পার্কের Zoological Garden. রবিবার থাকায় ভিড়টা বেশি। কিন্তু তাতে আমাদের উৎসাহে এতটুকু কমতি নেই। প্রথমেই ঢুকে পড়লাম বাঁদরের রাজত্বে। বেশ কয়েক প্রজাতির বাঁদর দেখার সাথে সাথে চললো selfie এর বাঁদরামিও। সেখান থেকে এসে পড়লাম পাখিদের সংসারে। এরপর আধ ঘন্টাটাক "Kachhua Stall" এ বসে গরম গরম কফির সাথে চললো photosession ও আড্ডা। আমাদের দলের passionate photographer Amitava সাথে আমরা দুজন (আমি আর Ranita) non-paid model এবার রওনা হলাম বাঘমামার উদ্যেশ্যে। চিতা ও সাদা বাঘের সাথে সামনা সামনি মোলাকাত হলেও সাদা বাঘের হারগিলগিলে চেহারা মনটা দমিয়ে দিলো। এরপর গুটি গুটি পায়ে চললাম পশুরাজ সিংহের উদ্দেশ্যে। দুই পশুরাজ তখন দিবানিদ্রা দিচ্ছেন গাছের ছায়ায়। গুনগুনিয়ে উঠলাম,
"কথা বলোনা, কেউ শব্দ করোনা, ভগবান নিদ্রা গিয়েছেন, গোলযোগ সইতে পারেননা..." এরপর ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে এসে পড়লাম হরিণদের ডেরায়। কত তাদের বাহার !! কেউ সাদা তো কেউ কালো, কেউ ধূসর তো কেউ বাহারি শিং এর পসরা নিয়ে হাজির। সমস্ত জায়গাতেই প্রাণোচ্ছলতাকে সাক্ষী রেখে তারা অবাধে বিচরণ করছে। মনটা ভালো হয়ে গেল ! এরপরের প্ল্যান জুবিলী লেকের জলে নৌকোবিহারের। চার যাত্রীবাহী নৌকা মাত্র 60/- টাকা শুনে যেন ঝাঁপিয়ে পড়লাম। জুবিলী লেকের ঠান্ডা পরিষ্কার জল, লেকের ধরে ফুটে থাকা শালুকের সম্ভার আমাদের জলবিহারকে আরও মনোরম করে তুলল। এদিকে ঘড়ির কাঁটা তখন আড়াইটার ঘর ছুঁই ছুঁই। পেটের ভেতর ছুঁচো গুলোও জানান দিচ্ছে তাদের উপস্থিতি। নৌবিহারের শেষে জুবিলী পার্ককে তখনকার মতো বিদায় জানিয়ে মনে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে মোবাইলে Zomato on করে ছুটলাম পেটপুজোর উদ্দেশ্যে। জুবিলী পার্কের বাকি অংশগুলোর গল্প অন্য কোনোদিন শোনাবো। লেন্সে : Amitava |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |