পশ্চিমবঙ্গের মন্দির নগরী কিম্বা মন্দিরগ্রামের কথা মনে এলেই আমাদের সর্বাগ্রে মাথায় আসে বিষ্ণুপুরের কথা । হয়তো এর বাইরে আঁটপুরে , কালনায় বা দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে অনেকই টেরাকোটার মন্দির রয়েছে কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুরের এক অখ্যাত গ্রাম পাথরা-র কথা অনেকেই জানেন না । এই গ্রামে এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য প্রাচীন মন্দির।
২০১৪ সালের অক্টোবর মাসে আমরা পাঁচজন মিলে দুই রাত একদিনের সফরে গিয়ে ঘুরে এসেছিলাম পাথরা ও গোপগড়ের জঙ্গল । আমার সাথে ছিল আমার সেসময়ের প্রায় সব ট্যুরের সঙ্গী আমার দুই প্রাক্তন ছাত্র তথা ভ্রাতৃস্থানীয় সোমনাথ ও সৌমাল্য, আমার দুই আত্মীয়বন্ধু কল্যাণ ও শিবশঙ্কর । সকালবেলায় সাঁতরাগাছি স্টেশনে পৌঁছে রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস ধরেও শেষমেশ খড়গপুর থেকে মেদিনীপুর পথটুকু যেতে হয়েছিলো লোকাল ট্রেনে । রূপসী বাংলার এসি কম্পারটমেনটের এসি কাজ না করায় খড়গপুর স্টেশনে যাত্রী বিক্ষোভ শুরু হয় । চোখের সামনে দিয়ে একের পর এক মেদিনীপুরগামি লোকাল ও প্যাসেঞ্জার-এক্সপ্রেস বেরিয়ে যেতে থাকলো । শেষমেশ আমরা রূপসী বাংলার আশা ছেড়ে লোকাল ট্রেন ধরে রওনা দিলাম বাকি পথ টুকু । মেদিনীপুরে পৌঁছে একটা হোটেলে রাত্রিবাসের ব্যাবস্থাপনা সেরেই একজন স্থানীয় অটোচালকের সাথে কথা বলে বেরিয়ে পড়লাম মন্দিরগ্রাম পর্যবেক্ষণে । গরম ছিল বেশ ভালোমতোই, তাই কাঁসাই নদীতে স্নানও সারলাম । ঘুরে এলাম নৌকা চেপে নদীর অপর পাড় থেকে । স্থানীয় একজন মুদির দোকানির আনুকুল্যে একটি ক্লাবের ঘরে আমাদের দ্বিপ্রাহরিক আহারের বন্দোবস্ত হল খুব সামান্য অর্থের বিনিময়ে । সারাদিন ধরে আমরা ঘুরে দেখলাম এই গ্রামের বিভিন্ন মন্দির গুলি ।
এখানে সারা গ্রাম জুড়ে আছে প্রায় ৩৪টি মন্দির ও মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ ৷ ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই পাথরা গ্রাম আসলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ঐক্যের পীঠস্থান।
আলীবর্দি খাঁ যখন বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাব ছিলেন এবং তখন তার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ। বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার কয়েক হাজার পরগণা ছিল নবাবের অধীনস্ত । এইসকল পরগনার মধ্যে একটি ছিল রতনচক। নবাব আলীবর্দি খাঁ রতনচক পরগনায় নায়েব হিসাবে নিযুক্ত করেন ভাটপাড়া ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান রাঘবরাম ঘোষালকে। তিনি এই পরগনার রাজস্ব আদায় করতেন ৷ একবার রাজস্ব আদায়ের টাকা নবাব কে না পাঠিয়ে সেই টাকা দিয়ে তিনি গ্রামে একের পর এক মন্দির তৈরী করতে শুরু করেন৷ নবাব খবর পেয়ে রাঘবরাম ঘোষালকে বন্দি করেন এবং হাতির পায়ে পিষে মারার হুকুম দেন ৷ কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে হাতি তাঁকে মারা তো দুরস্থান, উল্টে শুঁড় তুলে প্রণাম করে । নবাব আলীবর্দি খাঁ এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করে দেখে তাকে মুক্তি দেন এবং সেইসঙ্গে বেশ কিছু উপহার দিয়ে আবার নতুন করে মন্দির তৈরী করার কাজ-এ উৎসাহ প্রদান করেন । তাঁর মৃত্যুর পর তার ছেলে বিদ্যানন্দ ঘোষাল এই পরগনার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। বিদ্যানন্দ ঘোষাল এই পরগণার নতুন নাম রাখেন পাউথরা যা পরবর্তীতে অপভ্রংশে আজকের পাথরা গ্রাম । এই গ্রাম পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে কাঁসাই নদীর তীরে অবস্থিত একটি ছোট্ট গ্রাম। ১৯৭২ সালে ইয়াসিন পাঠান ও এই গ্রামেরই আরও কয়েকজন যুবক মিলিতভাবে গ্রামের ভগ্নপ্রায় মন্দিরগুলির সংরক্ষণ করতে উদ্যোগী হন । প্রাথমিক বাঁধা কাটিয়ে উঠে তাঁরা গ্রামের মানুষজনকে মন্দিরগুলির সংরক্ষণের উপযোগিতা সম্পর্কে অবহিত করতে সক্ষম হন । ইয়াসিন পাঠানের এই উদ্যোগ ও অবদানের জন্য ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ডঃ শঙ্কর দয়াল শর্মা তাকে সন্ত কবির পুরস্কারে ভূষিত করেন, যে পুরস্কার পশ্চিমবঙ্গের আর কোন ব্যক্তি পাননি । ইয়াসিন পাঠানের নিরন্তর প্রচেষ্টাকে সম্মান প্রদর্শন করে ভারতের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ও তৎকালীন যোজনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান প্রণব মুখার্জী ২০ লাখ টাকা প্রদান করেন তাঁর গড়ে তোলা পাথরা পুরাতত্ত্ব সংরক্ষণ কমিটিকে। ফলে সংরক্ষণের কাজে গতি পায় এবং পরবর্তীকালে ২০০৩ সালে ‘আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া’ পাথরায় ৩৪ টি মন্দির ও মন্দির সংলগ্ন ২৫ বিঘা জমি অধিগ্রহণ করেন এবং সংরক্ষণ প্রক্রিয়া শুরু করেন । ইয়াসিন পাঠানের এই অসামান্য অবদানে পাথরা আজ এক ঐতিহাসিক নিদর্শন ও পর্যটন কেন্দ্ররূপে পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের ইতিহাস মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। পাথরায় কোনও একসময়ে অনেকগুলি মন্দির ছিল , তবে বর্তমানে ৩৪ টি মন্দিরের মধ্যে ২৮ টি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে । অনেক মন্দির কাঁসাই নদীর গর্ভে তলিয়ে গেছে । বর্তমানে এখানে রয়েছে নাটমন্দির , কাছারিবাড়ি , রাসমঞ্চ , ঠাকুরদালান , নহবতখানা , শিব মন্দির , শীতলা মন্দির , দুর্গামন্দির ইত্যাদি ।
নদী তীরে রাস্তার দক্ষিণ দিকে রয়েছে পঞ্চরত্ন মন্দির । এটি পাথরা ঢুকতে একেবারে প্রথমে পড়ে, একা বিচ্ছিন্ন একটি মন্দির , তবে এটিতে পূজা হয় । কিছুটা দূরে রাস্তা ধরে গেলে ডান দিকে আর বাম দিকে বেশ অনেকগুলি মন্দির আছে । একটা মাঠ এর কাছে রাস্তার ডান দিকে আছে একটি নবরত্ন মন্দির মন্দির । দারুন এর গঠন শৈলী খুব সুন্দর হলেও এই মন্দিরে পুজো হয়না । নিজের অসুস্থ মায়ের কথা চিন্তা না করে এই মন্দিরের দ্বার উদ্ঘাটনের চেষ্টা করার ফলে এই মন্দির অভিশপ্ত হয় । দ্বার উদ্ঘাটনের দিনেই মায়ের মৃত্যু ঘটে এবং মন্দিরের চুড়ায় বজ্রকাঘাত হয় । তাই এই মন্দিরে আর কোন দিনই পূজা হয়নি । মন্দির সংলগ্ন কয়েকটি কক্ষ আছে , সম্ভবত এখানে পুরোহিতরা থাকতেন । রাস্তার একেবারে ধারে আছে একটি ছোট্ট রাসমঞ্চ । রাস্তার বাম দিকে আছে নাটমন্দির, পঞ্চরত্ন শিব মন্দির, পরপর সারিবদ্ধভাবে থাকা তিনটি এক রত্ন শিব মন্দির । এছাড়া আরও কয়েকটি শিব মন্দির দূরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অবস্থান রয়েছে । কিন্তু কোনো মন্দিরেই বিগ্রহ নেই । একটি দূর্গা মন্দির বা মণ্ডপ একটু দূরেই আছে, যেটি পাথরের তৈরী এবং ভগ্নপ্রায় । এখানে প্রত্যেক বছর দুর্গাপূজা হয় , দুর্গামণ্ডপের পাশেই আছে এক অট্টালিকার ভগ্নাবশেষ , এর উঁচু অংশে ওঠার সিঁড়ি আছে ।
গ্রামের ভেতরের দিকে একটু এগিয়ে আছে কালাচাঁদ মন্দির । রয়েছে তিনটি শীতলা মন্দির । গ্রামের ভেতর দিকে মজুমদারদের তিনটি পঞ্চরত্ন শিব মন্দির আছে, এখানে নিয়মিত পূজা হয়ে থাকে । মন্দিরগুলির টেরাকোটা নির্মিত দ্বারপালের কেউ লাঠি, কেউ তলোয়ার, আবার কেউ বন্দুকধারী। টেরাকোটার কারূকার্যে সমৃদ্ধ মন্দিরগুলিতে কোনোটিতে আছে বিষ্ণুর দশ অবতার, বিভিন্ন জৈন মূর্তি । তিনটি মন্দিরে মোট ৭ টি শিবলিঙ্গ আছে । কিছুটা দূরে দেখা যায় ভগ্ন দোতলা অট্টালিকা । এটি ছিল কাছারিবাড়ি । বেশ লম্বা এই বাড়িটির বাইরে খুব সুন্দর স্তম্ভ বিশিষ্ট প্রাচীর যা সুন্দরভাবেকারুকার্য করা । এই কাছারিবাড়িতে আছে সুড়ঙ্গ, আছে গোপন কক্ষ, গুপ্তপথ। সিঁড়ি বেয়ে ঘুরে ঘুরে ওপরে ওঠা যায় , কিন্তু বর্তমানে কোন ছাদ নেই । কাছারিবাড়ির সামনে পেছনে রয়েছে কয়েকটি শিব মন্দির , যেগুলিতে আছে শিবলিঙ্গ । পাশেই রয়েছে এক অপূর্ব সুন্দর রাসমঞ্চ , যা ২০০০ সালে হেরিটেজ তকমা পায়। পাথরা গ্রাম ও মন্দির সম্পর্কিত তথ্যঃ সাংবাদিক ও গবেষক অনিন্দ্য দাস এর লেখা এবং ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত , এছাড়া পাথরা সম্পর্কিত বিভিন্ন ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত ।
0 Comments
পরেশনাথ মন্দির....
(উত্তর কলকাতা) কলকাতার দর্শনীয় স্থান বা মনো মুদ্ধকর মন্দির গুলির মধ্যে একটি হলো উত্তর কলকাতার গৌরী বাড়ি পরেশনাথ মন্দির l যেমন সুন্দর শিল্পকলা ঠিক তেমনি সুন্দর পরিবেশ l যদিও এটা জৈন মন্দির তবুও সকল ধর্মের মানুষেরাই অগ্রগণ্য এই মন্দির দর্শনের জন্য l মার্বেল পাথর ও কাঁচ দিয়ে নিকাশি করা অপূর্ব সুন্দর l মন্দিরে ঢোকার মুখে চোখে পড়বে পৌরাণিক পটচিত্র l সুন্দর সুসজ্জিত এই মন্দিরটি উত্তর কলকাতার এক উল্লেখ যোগ্য মন্দির বলা যেতে পারে l যা দর্শনার্থীদের নজর কাড়ে l মূল মন্দির ছাড়া আসে পাশে রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি মন্দির l সঙ্গে সেগুলো দেখে নেওয়া যেতে পারে l এগুলো দেখতে দেখতে দিব্য কাটিয়ে দেওয়া যায় একটি বেলা l
হুগলি জেলা শান্ত এক গ্রাম সোমরা বাজারের সুখারিয়া। বাংলার মন্দিরের কয়েকটি অভাবনীয় নিদর্শন বুকে নিয়ে সেইখানে আজও শায়িত এক প্রাচীন জমিদারবাড়ির অবশিষ্ট ভগ্নস্তুপ। সে গ্রামের পাশ দিয়ে একদা বহমান হুগলী নদী তার গতিপথ পালটে ফেলেছে। আর তেমনই, মানুষও যেন ইতিহাসের এই অধ্যায় থেকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে অবহেলায়। অথচ এখানেই রয়েছে বাংলার মন্দির এর স্বর্গরাজ্য। একসময় মন্দির শিল্পে আমাদের বাঙালিরা কতটা শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল, এই মন্দিরগুলি নিঃসন্দেহে তার প্রমান দেয়।
অনেক দিন ধরেই মনটা কোথাও যাই যাই করছিল, আর এই লক ডাউন এ হাঁপিয়ে পড়েছিলাম, তাই আনলক 4 এর আজকের রোববার টা নষ্ট করতে চাইলাম না। চলে এলাম ঘরের কাছে আরশিনগর এই সোমরাবাজারে। এই পর্বে আজ আমরা তিনটি মন্দির দর্শন করেছি। প্রতিটি মন্দির একদম কাছাকাছি। ~ আনন্দময়ী মন্দির: মুস্তাফি পরিবারের সদস্য বীরেশ্বর মুস্তাফি ১৮১৩ সালে সুখারিয়া গ্রামের সবচেয়ে অভিনব মন্দির, আনন্দভৈরবী মন্দির স্থাপন করেন। পঁচিশ রত্ন বিশিষ্ট এই মন্দিরের নিদর্শন বাংলায় আর মাত্র চারটি আছে, তিনটি বর্ধমানের কালনায়, একটি বাঁকুড়ার সোনামুখিতে। ১৮৯৭ সালের প্রবল ভূমিকম্পে এর সবচেয়ে ওপরের পাঁচটি রত্ন ধ্বংস হয়ে যায়, তা আবার নির্মাণ করা হয়েছে। মূল মন্দির চারতলা। মন্দিরে কালী আনন্দময়ী কালী রূপে পূজিতা। মূল মন্দিরের বাইরে দুই দিকে দুসারিতে ছটি করে মোট বারোটি মন্দির। এই বারোটি মন্দিরের প্রথম দুটি পঞ্চরত্ন বিশিষ্ট। বাকি দশটি আটচালা ধারায় তৈরি। একটি পঞ্চরত্ন মন্দিরে গনেশ পূজিত হয়, বাকিগুলিতে শিবলিঙ্গের অবস্থান। একটি আটচালা মন্দির বিপজ্জনক ভাবে হেলে পড়েছে। আনন্দভৈরবী মন্দির প্রাঙ্গনের বাইরে একটি প্রশস্ত দীঘিতে মন্দিরগুলির প্রতিফলনের দৃশ্য মুগ্ধ করে। মূল মন্দিরের গায়ে টেরাকোটার প্যানেল ও পংখের কাজ। কিন্তু ঢালাও রং করে ফেলার কারণে অপূর্ব প্যানেলগুলি অনেকটাই চাপা পড়ে গেছে। রেড অক্সাইডের প্রলেপে ঢাকা পড়ে গেছে পোড়া মাটির কাজ। তবু যেটুকু দেখা যায়, তার অন্যতম হলো কৃষ্ণের বাল্যলীলার আদলে চারজন সখীসহ দুর্গা গণেশকে লালন করছেন। একটি প্যানেলে চিত্রিত হয়েছে গঙ্গাবতরণের দৃশ্য। কালী, জগদ্ধাত্রী প্রমুখ ঠাকুর দেবতা ছাড়াও অভিজাত সমাজের নানা চিত্র ও চরিত্র দেখা যায় এখানে। শিবরাত্রি ও দীপাবলিতে মন্দির চত্বরে বড় উৎসব হয়। রানী রাসমণি এই মন্দিরে এসেছিলেন। বলা হয় পরবর্তীকালে এই মন্দির দেখেই তৈরি করা হয় দক্ষিণেশ্বর মন্দির।
~ হরসুন্দরী কালীমন্দির:
গ্রামের আরেক দিকে হরসুন্দরী কালীমন্দির। মূল মন্দিরটি নবরত্ন বিশিষ্ট, বারো চালার। চাল তিনটি স্তরে বিন্যস্ত। প্রথম স্তরে বারোটি রত্ন, দ্বিতীয় স্তরে আটটি রত্ন, তৃতীয় স্তরে চারটি রত্ন এবং সবার ওপরে বৃহত্তম রত্ন বা শিখর। এই মন্দিরটির বাইরেও আবার দুপাশে দু সারিতে সাতটি করে মোট চোদ্দটি মন্দির। তার মধ্যে মূল মন্দিরের ঠিক পাশের দুটি পঞ্চরত্ন সম্বলিত, আর বাকি বারোটি আটচালা মন্দির। প্রবেশপথের তিনটি আর্চ ও পংখের কাজ দৃষ্টিনন্দন। ১৮১৩ সালে দেওয়ান রামনিধি মিত্র মুস্তাফি এই মন্দিরগুলি নির্মাণ করান। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে এর সামনে দ্বিতলবিশিষ্ট প্রবেশপথটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। শোনা যায়, এই গেটের দ্বিতল থেকেই অতিথিদের সম্মানে ডঙ্কা বাজানো হত। ১৯৬৮ সালে এই মন্দিরগুলির সংস্কার সাধন হয়েছে। তবে অতীতে এদের গায়েও টেরাকোটার কাজ ছিল সম্ভবত, সংস্কার সাধনের নামে যা ঢাকা পড়ে গেছে। মন্দিরের কাছে একটি শ্বেতপাথরের ফলকে মিত্র মুস্তাফি পরিবারের বংশলতিকা দেওয়া আছে। আর বর্তমানে আগাছার জঙ্গল দেখলে এদের প্রতি অবহেলার পরিমাণ অনুমান করা যায়। এই মন্দিরের পাশের পুকুরের ধার ঘেঁষে হাটলে লক্ষ্মীদাস মিত্র মুস্তাফির ঠাকুর দালানের ভগ্নাবশেষ চোখে পড়ে। ইওরোপিয়ান ধাঁচে নির্মিত সুউচ্চ কিছু কলাম, আর্চ আর তাতে প্লাস্টারের কাজ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
~ নিস্তারিণী কালী মন্দির:
এর অদূরে নিস্তারিণী কালী মন্দির। দক্ষিণমুখী এই মন্দিরটিও নবরত্ন মন্দির। ১৮৪৭ সালে কাশীগতি মিত্র মুস্তাফি এটি স্থাপন করেন। পরবর্তীকালে এটিরও সংস্কার করা হয়েছে। মন্দিরের সম্মুখভাগের আটটি দীর্ঘ কলাম ও টালির আচ্ছাদন অভিনবত্বের দাবী রাখে। কলোনিয়াল স্থাপত্যের প্রভাব এর গঠনে সুস্পষ্ট। মন্দিরটি আসলে একটি কলোনিয়াল স্থাপত্যের বাড়ির ওপর রত্নের সমাবেশ। গাছপালার মধ্যে জাগ্রত এর রত্ন ও শিখর। দূর থেকে দেখলে এটিকে ইওরোপিয়ান দুর্গ মনে হয়। এই মন্দিরটির ক্ষেত্রেও একই ইতিহাস, কেবলমাত্র মূল মন্দিরটিই টিকে আছে। চার কোণের চারটি থাম ছাড়া নাটমন্দিরের আজ আর কোনো চিহ্ন নেই। গ্রামের পাশ দিয়ে একদা গঙ্গা প্রবাহিত হতো, বর্তমানে তার গতিপথ বদলে নদী বহু দূরে সরে গিয়েছে। পড়ে আছে শুধু দিগন্ত বিস্তৃত নদীখাত, কিছু নৌকার অবশেষ ও নদীর ধারে এক প্রকাণ্ড বটগাছের ছায়ায় সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। ১৭৮৫ সালে এর নির্মাণ। এটি সুখারিয়ার প্রাচীনতম মন্দির হলেও তার অবয়বে কোথাও সেই ছাপ নেই। এক শিখর বিশিষ্ট সমতল ছাদের এই মন্দির। অন্য মন্দিরগুলির সাথে এর কোনো সাদৃশ্য পাওয়া যায় না। অনবরত সংস্কারের ফলে চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পূর্ণ হারিয়েছে। চত্বরে তুলসি মঞ্চ নজরে আসে। অতীতে এ গ্রামে আরো কিছু শিবমন্দির, রাস মঞ্চ ও দোল মঞ্চও ছিল, কালের গর্ভে তা আজ সবই বিলীন হয়ে গেছে। পুরো এলাকার মালিকানা একদা ছিল মিত্র মুস্তাফিদের হাতে। এখনো যেটুকু সংস্কার বা রক্ষণাবেক্ষণের কাজ হয়, তা তাঁদের উদ্যোগেই। সরকারি কোনো প্রচেষ্টা চোখে পড়ে না। একটি অনাথ আশ্রম, একটি দাতব্য চিকিৎসালয় এই পরিবারের অনুদানে আজও সচল। মিত্র মুস্তাফি পরিবারের কেউই এখানে আর বসবাস করেন না। কিন্তু দুর্গাপুজোর দিনগুলিতে তাঁরা ফিরে আসেন ভদ্রাসনের টানে। তাঁদের পারিবারিক ভদ্রাসন রাধাকুঞ্জের যেকটি ঘর এখনো কোনোমতে টিকে আছে, সেগুলি জনসমাগমে মুখর হয়ে ওঠে। তারপর আবার যে কে সেই, নিঝুম গ্রাম, পাখির ডাক, মন্দিরে ছাগলছানার অবাধ বিচরণ, গ্রামের ঘরে ঘরে হস্তচালিত তাঁতের শব্দ। সেসব নিয়েই সুখারিয়া গ্রাম আকাল নয়, সুকালের সন্ধানেই জেগে থাক। তথ্য সহায়তা ও কৃতজ্ঞতা স্বীকার :- শ্রদ্ধাঞ্জলি বর, পার্থ প্রতিম দাস ও আজ এই সকল মন্দিরের পূজারী ও স্থানীয় মানুষদের কাছে পাওয়া তথ্য...।
সে এক সময় ছিলো ! আহা ভাবলেই আহ্লাদে গলে যেতে ইচ্ছে করে ! আমরা দেখতাম, লোকের খিদে পায় , ঘুম পায়, তেষ্টা পায়, আমাদের থেকে থেকে বেড়ানো পায় ! 2012 সাল তখন | বৈকালিক চায়ের আড্ডায় আমার বাড়িতে দুই প্রাক্তন ছাত্র তথা আমার ডানহাত-বামহাত সোমনাথ-সৌমাল্য এবং দাদাস্থানীয় ভোলাদা । চায়ে চুমুক দিতে দিতে হঠাৎই মনে হলো অনেকদিন কোথাও যাওয়া হয়নি ! সুতরাং চা উঠলো মাথায় ! আমাদের তখন বেড়ানোতে পেয়েছে, পকেট প্রায় গড়ের মাঠ কিন্তু ছোটো খাটো একটা ট্যুরে তো যেতেই হবে । অতএব যেমনি ভাবা তেমনি কাজ ! ঝটপট জায়গা ঠিক হয়ে গেলো !
ট্রেনের টাইম টেবিলে দেখলাম ভোর রাতে আড়াইটের সময়ে হাওড়া থেকে একটা প্যাসেঞ্জের ট্রেন ছাড়ে হাওড়া থেকে, খড়্গপুর লোকাল হিসাবে যায় কিন্তু মিনিট দশেক দাঁড়িয়ে ওটাই আবার টাটানগর প্যাসেঞ্জের হয়ে রওনা হয় । কিন্তু সমস্যা হলো, হাওড়ার পরে প্রথম স্টপেজ সাঁতরাগাছি, তাই ওই ট্রেন ধরতে হলে রাতে আড়াইটের মধ্যেই সাঁতরাগাছি পৌঁছতে হবে, নতুবা পরের ট্রেন ইস্পাত এক্সপ্রেস ধরতে হবে, তাতে ভাড়াও বেশি আবার পৌঁছতেও অনেকটাই দেরি হয়ে যাবে ! পকেট ও সময় দুইয়ের কথা ভেবেই আমার সঙ্গীরা ওই মাঝরাতের ট্রেন ধরাতেই সায় দিলো ! রাত নটার সময় আড্ডা ভাঙলো আর কয়েকঘন্টা পরেই আমাদের যাত্রা শুরু.... গন্তব্য ইতিহাসের ধল রাজাদের পীঠস্থান-- ধলভূমগড় | আমার বাড়ি থেকে সাঁতরাগাছি স্টেশনের দূরত্ব মাত্র দুই কিমি, ছাত্র সৌমাল্যও আমার পাশেই থাকে, আরও এক ছাত্র সোমনাথ থাকে স্টেশন থেকে পায়ে হাঁটা দূরত্বে কিন্তু ভোলাদার বাড়ি তো কাসুন্দিয়ায় ! ভোলা দা বললো, "কুছ পরোয়া নেহি ! আমি ঠিক সময়ে পৌঁছে যাবো" । সুতরাং পরেরদিন মাঝরাতে আমরা চার ভ্রমণ পাগল হাজির হলাম সাঁতরাগাছি স্টেশনে । ট্রেন প্রায় গড়ের মাঠ, তাই বাকি ঘুমের কিছুটা ট্রেনেই সেরে নিলাম সকলে| ধলভূমগড়ে ট্রেন পৌঁছলো প্রায় সকাল সাতটায় ।
স্টেশনের বাইরে বেরিয়ে চা-বিস্কুট, গরম গরম কচুরি আলুর তরকারি আর বড় মাপের জিলিপি দিয়ে জলযোগ সেরেই, দরদাম করে একটা বড় ডিজেল অটো ঠিক করে ফেললাম ! তাতে সওয়ার হয়ে প্রথমেই গেলাম এখানকার প্রসিদ্ধ ধল রাজাদের প্রাচীন দূর্গা মন্দিরে ! কালো কষ্টি পাথরের তৈরি অভিনব দূর্গা প্রতিমার অসাধারণ রূপ! নিত্য পুজো তো হয়ই, তাছাড়া দুর্গাপূজা ও বাসন্তী দূর্গাপূজায় জাঁকজমক করে পুজো হয়ে থাকে, বিশেষতঃ শারদীয়া দুর্গাপূজায় ! মন্দিরের ভিতরের দিকে গর্ভগৃহের প্রবেশদ্বারের দুইদিকে রয়েছে সিংহের এবং হস্তীর মূর্তি ।
পাশেই রয়েছে একটি শিব মন্দির, যেখানে তিনটি ভাঙা শিবলিঙ্গ রয়েছে । মন্দিরের পূজারী বললেন, মুঘল যুগে শের শাহের আমলে কিছু মানুষ অকারণে স্থানীয় হিন্দু মন্দিরগুলির সমস্ত মূর্তি ভাঙা শুরু করে, সেই ভাংচুর থেকে রেহাই পায়নি এই মন্দিরের শিবলিঙ্গ গুলিও ! কিন্তু যারা এই শিবলিঙ্গ গুলি ভেঙেছিলো, কোনো অজ্ঞাত কারণে কয়েকদিন পরেই তারা দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে ! ফলে বাকি মন্দিরগুলো এবং স্থানীয় অন্যান্য মন্দিরগুলোও রেহাই পায় ভাংচুরের হাত থেকে । এই মন্দিরে স্থানীয়দের বিবাহ হয় প্রায়ই, এবং স্মারক হিসাবে বরের টোপর রেখে দেওয়া হয় মন্দিরে । সম্রাট শের শাহ এর কানে এই খবর পৌঁছলে তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং স্থানীয় মানুষের কাছে অবিলম্বে ক্ষমা চেয়ে ওই ক্ষতিগ্রস্ত মন্দিরগুলি পুনর্নির্মানের আদেশ দেন তাঁর স্থানীয় প্রতিনিধিদের ! সে সময়ে মন্দিরের পূজারী স্বপ্নাদেশ পান যে, শিবলিঙ্গগুলির কোনোরকম প্রতিস্থাপন না করে ভাঙা অবস্থাতেই পুজো চালু থাকে যেন ! ফলে, মন্দিরের পুনর্গঠন হলেও মূর্তি বা শিবলিঙ্গগুলি একই অবস্থায় রয়ে যায় ।
এই মন্দিরের আশেপাশে আরও কয়েকটি মন্দির এবং রাসমঞ্চ আছে, সেগুলো ঘুরে দেখে রওনা দিলাম স্থানীয় শিল্পগ্রাম আমাডুবি-র দিকে ! আমাডুবি শিল্পগ্রামে বেশ কয়েকঘর শিল্পীর বসবাস ! পাশাপাশি ঝাড়খন্ড ট্যুরিজম এর শিল্পকেন্দ্র তখন সদ্য তৈরি হয়েছে, যেখানে পর্যটন ও শিল্পকলার বিকিকিনি একসাথে করা যাবে অদূর ভবিষ্যৎ-এ এমন কথা শুনে এসেছিলাম ! আট বছর আগের কথা, তাই এখন কি পরিস্থিতি সেটা জানা নেই, তবে যেটুকু ব্যবস্থাপনা দেখেছিলাম , বেশ ভালো লেগেছিলো ।
বিহারের মধুবনী শিল্প এবং বাংলার পট শিল্পের চর্চা এই গ্রামের বিশেষত্ত্ব বলে জানলাম স্থানীয়দের কাছে | এখান থেকে বেরিয়ে পাড়ি দিলাম পরিত্যক্ত ব্রিটিশ আমলের এয়ারবেস এর রানওয়ে দেখতে এবং তারপরে গ্রামের লাল মাটির রাস্তা ধরে সুবর্ণরেখা দেখতে | বর্ষার জলে তখন সুবর্ণরেখা টইটুম্বুর ! এদিকে ওদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছোটো ছোটো টিলা আর শারদ প্রকৃতির মাঝে সুন্দরী সুবর্ণরেখা.... ঘরে ফিরতে কি আর মন চায় ! সেই সাতসকালে চা জলখাবার খেয়েছিলাম, স্নান হয়নি, ঘেমো গরমের মধ্যেও স্টেশনের কাছের শালবন ঘুরে নিলাম একঝলক ! এরপরে স্নান খাওয়া সেরে দুপুর একটার ঘাটশিলা লোকাল ধরে বাড়ির পথে রওনা দিলাম । তথ্যমিত্রঃ ধলভূমগড় হাওড়ার দিক থেকে টাটানগরের দিকে যেতে ঘাটশিলার আগের স্টেশন । সব ট্রেন থামে না , তবে যেহেতু ঘাটশিলা থেকে দূরত্ব মাত্র ৮ কিমি, তাই ঘাটশিলায় নেমে সহজেই এখানে আসা যায় । এখন অবশ্য ট্রেন বন্ধ আছে, কিন্তু হাওড়া-বারবিল জনশতাব্দী এক্সপ্রেস রোজই স্পেশাল ট্রেন হিসাবে হাওড়া থেকে চলছে । তাই প্রাইভেট গাড়িতে না যেতে পারলেও উপযুক্ত সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে ট্রেনেও যাওয়া যায় একবেলার জন্য । এখানে থাকার মতো জায়গা বিশেষ নেই, তবে বনবাংলোর বুকিং পাওয়া যায় । আমাডুবিতে শিল্পীদের বাড়িতে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এছাড়া শিল্পগ্রামের গেস্ট হাউসে যোগাযোগ করে দেখতে পারেন । রাত কাটানোর ইচ্ছে হলে অবশ্য ঘাটশিলাতেই কাটাতে পারেন কিম্বা গালুডিতে । সেক্ষেত্রে পুরদস্তুর দুরাত্রি তিনদিনের সফরে ফুলদুংরি পাহাড়, বিভুতিভূষণের বাড়ি, অপুর পথ , বুরুডি লেক, ধারাগিরি ফলস, জাদুগোড়ার জাগ্রত রঙ্কিণী মায়ের মন্দির, গালুডি ড্যাম, সুবর্ণরেখা নদী , নারোয়া ফরেস্ট ইত্যাদি জায়গা ঘুরে দেখে নিতে পারেন । তবে একবেলার বা একদিনের ট্যুরের জন্য শুধুমাত্রই ধলভুমগড় আদর্শ ।
পৃথিবীর বড় অসুখ এখন। কারণে-অকারণে মন অশান্ত হয়ে থাকে। শান্ত করতে কখনো প্রকৃতি, কখনো বা ঈশ্বরই ভরসা। নিজেকে সেখানে সমর্পণ ছাড়া গতি নেই যেন।
কলকাতার মধ্যেই এই দুর্গা মন্দির। মেট্রোপলিটন বাইপাসের কাছেই একদম। খুব বেশি প্রচার পায় নি এখনো। তাই জানাতে এলাম মন্দির নিয়ে। মূল আরাধ্য দেবী মা দুর্গা। অপরূপ সুন্দর ধাতুর তৈরি মূর্তি। সাথে মায়ের সাঙ্গপাঙ্গরা তো রয়েছেই। এছাড়া চারিধারে হনুমান, কালি, শিব এবং রাধাকৃষ্ণের মন্দির রয়েছে। ঝাঁ চকচকে মন্দির চত্বর। ফুরফুরে হাওয়া ফাউ হিসেবে মন ভরিয়ে দেবে। সারাদিনে চারবার মায়ের পুজো হয়, সাথে আরতি। ভোর 6.30, সকাল 9.30, দুপুর 12.30 এবং সন্ধ্যা 7 টা। সন্ধ্যার আরতি দেখতে বেশ লাগে। যেকোন দিন একটিবার গিয়ে দেখে আসতে পারেন। কথা হচ্ছিল মন্দিরের প্রধান পুরোহিত বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তীর সাথে। সকালে সবে তিনি পুজোতে বসেছেন। প্রসাদ দিলেন নিজে হাতে করে, সাথে লাড্ডুও পেলাম একটা ঘিয়ে ভাজা। বলছিলেন- "বিশেষ বিশেষ দিনে ভোগের ব্যবস্থা থাকে এখানে। সেদিন সবাই প্রসাদ পায় পেট ভরে। ভোর 5.30 থেকে দুপুর 1 টা পর্যন্ত খোলা। আবার বিকেল 4 টে থেকে রাত 10 টা।" মন্দিরের চারিধারে পরিবেশটাও বেশ মুগ্ধ করার মত। দুই দিকে দুটো পুকুর রয়েছে বিশালাকার। পন্ডিত মশাই বলছিলেন, ওই পুকুর দুটোর নাকি নামও রয়েছে। একটি রাধকুন্ড, অন্যটি শ্যামকুন্ড। সন্ধ্যায় বেশি মনোরম লাগে পরিবেশ আরো। আর পুজো শেষে মায়ের ভোগ তো রয়েছেই। কখনো অন্য ভোগ, কখনো লুচি হালুয়া। তবে আর দেরি না করে একবার চলেই যান এই দুর্গাবাড়িতে। মনে এক প্রসন্নতা নিয়ে ফিরে আসবেন, গ্যারান্টি।
শ্রী শ্রী সিদ্ধেশ্বরী কালী দেবী মায়ের মন্দির।
কৃষ্ণনগর, নদিয়া জেলা, পশ্চিমবঙ্গ। কৃষ্ণনগর সিটি জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে হাই স্ট্রীট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রোডের উপর অবস্থিত এই কালী মন্দির। টোটো করে সহজেই চলে আসা সম্ভব। এই মাতৃ মন্দির নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। এই মন্দিরের বৈশিষ্ট্য হলো যে, এই একই মন্দিরের ছত্রতলে পাশাপাশি দুইটি গর্ভগৃহে দুইটি কালী মাতার বিগ্রহ অবস্থান করছেন। একটি হলেন সিদ্ধেশ্বরী কালী মাতা, অন্যটি হলেন দয়াময়ী কালী মাতা। এছাড়াও একটি কষ্ঠিপাথর দিয়ে তৈরি শিবলিঙ্গ মন্দির চত্ত্বরে আছে। দেওয়ালে খোদাই করা ভগবান মহাদেবের নয়নাভিরাম ধ্যানরত মুর্তি। এছাড়া একটি গনেশ ভগবানের মুর্তিও মন্দিরে আছে। এবং রাধাকৃষ্ণ, নারায়ণ দেবের আবাসও এই মন্দিরে আছে। এই মায়ের মন্দিরে নিত্য ভোগের ব্যবস্থা আছে। ভক্তরা সামান্য কিছু দক্ষিণার বিনিময়ে সেই প্রসাদ বসে খেতে পারবেন। ২৫০ বছরের পুরোনো সিদ্ধেশ্বরী মায়ের মুর্তি।
রঙ্গলিতেও পারমিট করাতে হয়। এখানে একটি বাজারে আমরা থেমেছিলাম। প্রায় ৩০ মিনিটের বেশি সময় লেগে গেল। এই সময়টা আশেপাশের ছবি তুলে সময় কাটালাম। প্রায় ৩ঃ৩০ নাগাদ আমরা আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কিউ খোলা জলপ্রপাতে পউছালাম। এখানে প্রায় আধা ঘণ্টা সময় কাটালাম। চারপাশের দৃশ্য ক্যামেরা বন্দী করলাম। প্রায় ৪ টে নাগাদ আমরা পদমচেন ঢুকলাম, পরের দিনের গন্তব্যর জন্য। পদমচেনে আমরা যেখানে ছিলাম সেটির নাম ‘Newar Home Stay’. এখানে এসে আমরা নিজেদের ঘর ঠিক করে চললাম খেতে। ডাল, পাঁপড় ভাজা, আলু ভাজা ও ডিমের ঝোল দিয়ে ভাত খেলাম। এরপর কয়েক জন মিলে হাঁটতে বেরলাম। সন্ধ্যা ৭ঃ১৫ নাগাদ গরম চা সহ পাকোড়া এলো টিফিন হিসাবে। রাত ৯ঃ৩০ টা নাগাদ রুটি, ফুলকপি, আলুর তরকারি ও মুরগির মাংস সহযোগে খেয়ে শুয়ে পড়লাম ।
তৃতীয় দিন (০৩/০৩/২০১৮) ঃ আজ সকাল সাতটা নাগাদ চা দিয়ে দিন শুরু হল । ৮ঃ৩০ টা নাগাদ লুচি তরকারি দিয়ে টিফিন করে ১০ঃ৩০ টা নাগাদ সিল্ক রুট এর উদ্দেশে রওনা হলাম। সিল্ক রুট পৌঁছাতে আমাদের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াল রাস্তায় জমা হওয়া বরফ। আমরা পদামচেন থেকে জুলুক হয়ে যখন উপরের দিকে উঠছিলাম তখন থেকে দেখলাম রাস্তার দুই ধারে বরফ জমে আছে। তার থেকেও যেটা মনে ধরল সেটা হচ্ছে রাস্তার থেকে ধোঁয়া উঠছে। বরফের জন্য আমাদের গাড়ী আর উপরে উঠতে চাইছিল না। কিন্তু অল্প কিছু সাবধানতা অবলম্বন করে ধীরে সুস্থে উপরে উঠতে থাকল। এই সময় আমরা কাঞ্ছনজঙ্ঘার অপূর্ব ভিউ দেখতে পেয়ে ক্যামেরা বন্দী করলাম। সিল্ক রুট ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করার জন্য যাত্রা পথে একজায়গায় আমাদের গাড়ী দাঁড়াল। আমরা যেখানে দাঁড়ালাম সেখান থেকে সিল্করুট / জিগজাগ রুটের দৃশ্য দারুন ভাবে দেখা যায়। যাত্রা পথের পুরোটাই বরফের চাদরে মোড়া । আমরা যাত উপরে উঠতে লাগলাম ততই মেঘ এসে আমাদের ঘিরে ফেলতে লাগল। তাই গাড়ী ধীরে ধীরে উপরে উঠছিল, মাঝে চলাই দুস্কর হয়ে উঠছিল। আরও কিছুটা উঠে যাওয়ার পর হঠাথ রোদ উঠে পড়ল, সঙ্গে সামনের পথ স্পষ্টই দেখা যাচ্ছিলো। আমরা এগিয়ে চললাম থাম্ভি ভিউ পয়েন্টএর দিকে। কিছুক্ষণ চলার পর আমরা পউছালাম থাম্ভি ভিউ পয়েন্টএ। এখানে কিছুক্ষণ থেকে চারপাশের দৃশ্য দেখে আমরা রওনা হলাম নাথাং ভ্যালির উদ্দেশে। যাত উপরে উঠতে লাগলাম তত বরফের চাদর আরও পুরু হতে লাগল। এখানে বরফ দিয়ে এগিয়ে যেতে গেলে পিছনের চাকায় চেন বেঁধে নিতে হয়। আমরা এগিয়ে যেতে যেতে রাস্তার এক ধারে কোন একটি জন্তুর পায়ের ছাপ দেখতে পেলাম। নাথাং ভ্যালীতে পৌঁছে দেখলাম চারপাশ বরফে ঢাকা। আমি এর আগে কখনো এত বরফ দেখিনি। সেই জন্য আনন্দে মনটা নেচে উঠল। ট্যুরিস্ট নিয়ে যে সব গাড়িগুলো এসেছিলো সেইগুলি ছাড়া দুটি আর্মির ট্রাক ও একটি বরফ কাটার ট্রাক দেখতে পেলাম। এখানে প্রায় ২০-২৫ মিনিট কাটানোর পর আমদেরই একজনের হথাত শ্বাসকষ্ট শুরু হল, যার জন্য চলে আসতে বাধ্য হলাম। এখানে চারপাশে বরফের দৃশ্য এতটাই ভালো লাগছিল যে এত তাড়াতাড়ি ফিরে আসতেও ইচ্ছে করছিল না। আমাদের এই পথেই কুপুপ লেক যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু বরফ কেটে এগোনো আর সম্ভব ছিল না। বাধ্য হয়েই আমরা জুলুকের home stay র দিকে এগিয়ে চললাম । ফেরার সময় দেখলাম বরফ গলা জল সারা রাস্তা ভিজিয়ে দিয়েছে আর মেঘের ঘন আস্তরন পুরো রাস্তাটাকেই যেন অদৃশ্য করে দিয়েছে। কাজেই গাড়ী ধীরে চলছিল।
তুম্বনির হাট
©প্রদীপ হাজরা বাঙালী মানেই দিঘা-পুরী-দার্জিলিং যেমন আবশ্যিকভাবে ঘোরা, তেমনই শক্তিপীঠের তালিকায় সর্বাগ্রে আসে তারাপীঠ । আর তারাপীঠ ঘুরতে গিয়ে হাতে একটু সময় বের করে ঘুরে আসতেই পারেন তুম্বনি । বাংলা ও ঝাড়খণ্ডের সীমান্তে বীরভূম জেলায় তুম্বনি। রামপুরহাট থেকে তুম্বনির দূরত্ব জিপে বা অটোতে মাত্র ৮-৯ কিলোমিটার। বাবলা, সোনাঝুরি ও ইউক্যালিপটাসের ছায়ায় মোড়া পথে পড়ে হালদাসা, সারসডাঙা, ডুমুরিয়া ইত্যাদি গ্রামগুলি । মাঝেমাঝেই পড়বে পাথর খাদান আর পাথরভাঙা কল । চতুর্দিক ধুলোয় ঢেকে ঘড়ঘড় দুদ্দাড় শব্দে পাথর ভাঙা চলছে অনবরত । ভারী ভারী ট্রাক, বাস বা জিপের চলাচল আদিবাসীপ্রধান গ্রামগুলির ব্যস্ততা বা প্রাণচঞ্চলতা ভেঙে দেয় , তারপর আবার নিস্তব্ধতা। মালভূমির মাথায় তুম্বনি। এ-পারে গাছপালা অঢেল আর ওপারে ঝাড়খণ্ডের রুক্ষ, কর্কশ ধুসর উদাসী খোয়াই। গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে একটি আবাসিক স্কুল আর এক বনবাংলো। তার পিছনে প্রশস্ত মাঠ পেরোলে মাঝিপাড়া। সামনের পাকারাস্তা সোজা চলে গেছে দুমকার দিকে। তুম্বনির অদূরে অনুচ্চ মালভূমি। উন্মুক্ত পাহাড় টিলা আর উদার সবুজ বনের হাতছানি। এই এলাকার দূরে দূরে থাকা টিলা আর চারপাশের সবুজের মাঝেই তুম্বনি বনবাংলোয় রাতও কাটানো যায় । তবে মূল রাস্তার খুব কাছেই হওয়ায় অবিরাম নির্জনতা বর্তমানে আর উপভোগ করা যাবে না । তুম্বনি হাটে একবার যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছিলো ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে । মলুটি থেকে হাট দেখতে গিয়েছিলাম রবিবারের বিকেলে । অসাধারণ ছিল সেই অভিজ্ঞতা । সরল আদিবাসী মানুষজনের ভিড় আর হরেকরকম সামগ্রীর বিকিকিনি দেখতে দেখতে কোথা দিয়ে যে সন্ধ্যা নেমেছিল বুঝতেই পারিনি । মোরগ-পাঁঠার মাংস , শীতকালীন সবধরনের সবজি, মাটির হাঁড়িকুড়ি-কলসি-সরা, সস্তার গয়নাগাটি থেকে জামাকাপড়, হাতেগরম তেলেভাজা-জিলিপি-সিঙ্গারা , মুদির দোকানের জিনিসপত্র ...কি নেই ! কোথাও ঘরে পোষার পায়রা বিক্রি হচ্ছে , আবার একটু দূরত্ব রেখে বিকচ্ছে হাঁড়িয়া । আগত ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়েরই মুখে পরম শান্তির হাসিটুকু যেন লেগেই রয়েছে । সেই হাটের কিছু ছবি রইলো বন্ধুদের জন্য । যারা তারাপীঠ বা মলুটি যাবেন, একফাঁকে ঘুরে নিতেই পারেন তুম্বনি, আর একটা দিন বনবাংলোয় কাটালে তো আরও ভালো । খুব সম্ভবত বুধ আর রবিবার হাট বসে , হাটের দিন দেখে অবশ্যই যাবেন, তাহলে এই হাট একটা উপরি পাওনা হবে তুম্বনি ভ্রমণের সঙ্গে । ©প্রদীপ হাজরা
আসানসোল পর্ব।
#মা_ঘাঘর_বুড়ী। আসানসোলের কালীপাহাড়ী অঞ্চলে রয়েছে জাগ্ৰত মন্দির,দেবী ঘাঘরবুড়ী মা। শীর্ণকায় নুনিয়া নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। কোন দেব-দেবী ও তার "থান " বা মন্দির সম্পর্কে জানতে হলে সেই স্থানের ভৌগলিক অবস্থান ,জনজাতি ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে আগে জানা দরকার। কারন ঐ উপাদানগুলির মধ্যেই নিহিত থাকে উক্ত দেবদেবীর আধিষ্ঠান ,প্রতিষ্ঠা এবং পূজা অর্চনার ইতিহাস । সুদুর অতীতে আসান , শাল ,সেগুন ,মূর্গা ,পলাশ বিভিন্ন পর্ণমোচী বৃক্ষ অধ্যূষিত হিংস্র শ্বাপদসংকুল অরন্যভূমি ছিল আসানসোল । ঐতিহাসিক বিচারে এই অরন্যভূমির অধিবাসীরা ছিল নিগ্রোয়েড তথা প্রোটো অস্ট্রাল বা অষ্ট্রিক জাতি । এদের মধ্যে ছিল কোল , মুন্ডা ,ওঁরাও ,সাঁওতাল , শবর প্রমূখ অনার্য সম্প্রদায়ের মানুষ । আসানসোল বনভূমির উত্তরে প্রবাহিত নুনীয়া নদীর উত্তর পাড়ের অপেক্ষাকৃত উচু জমিতে ছিল এদের বাস । পরবর্তীকলে অন্যরা স্থান পরিবর্তন করলেও সঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন স্থায়ীভাবে ঐ অঞ্চলে থেকে যান । প্রাচীনকাল থেকে এদের মধ্যে বৃক্ষ ও শিলা পূজার প্রচলন ছিল । আজো তাদের সংস্কৃতি ও ধর্ম বিশ্বাসে এগুলির অস্তিত্ব বজায় রয়েছে । আসানসোলের আদি দেবী মা ঘাঘরবুড়ী তার একটি ঐতিহাসিক সাক্ষর । প্রাচীনকালেই সাঁওতালরা তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস মতে বসতির অপর পাড়ে নুনী নদীর ধারে বিশাল বৃক্ষের তলায় তিনটি শিলাখন্ড স্থাপন করে দেবতা জ্ঞানে ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান শুরু করেন । ধর্মীয় উৎসবে মাদল আর ধামসার শব্দে সাঁওতালী নৃত্যের ছন্দে মেতে উঠতো বনাঞ্চল । আদিবাসী নৃত্য দেখতে ভিড় জমাতো পঞ্চকোট রাজার সৈন্যবাহিনীর লোকেরা । ১৭৪১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার মসনদে তখন নবাব আলিবর্দী খাঁ। পঞ্চকোট রাজ্যে তখন শত্রূঘ্নশেখর - গড়ুরনারায়ন সিংদেওয়ের রাজত্ব। সেই সময় বারবার বর্গীহানায় বিধস্ত বাংলা । এই হানা থেকে রেহাই মেলেনি পঞ্চকোট রাজ্যের । সে সময় পঞ্চকোটের রাজা গড়ুরনারায়ন সিংদেও তার সৈন্যবাহিনী ও রাজ্যবাসীকে বর্গীহানা প্রতিরোধ করতে আহ্বান জানান । সৈন্যবাহিনীর দুই বীর ক্ষত্রিয় যোদ্ধা কাটোয়া নিবাসী নকড়ি রায় ও রামকৃষ্ণ রায় স্থানীয় সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষজন নিয়ে বর্গীদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন । নকড়ি ও রামকৃষ্ণ রায়ের বীরত্ব , দুরদর্শিতা সর্বোপরি স্বদেশপ্রেমে মুগ্ধ হয়ে রাজা গরুড়নারায়ন তিনশত ছিয়াত্তর টাকা চার আনা দু'পাই জমায় তাদের আসানসোলের বিস্তীর্ণ বনভূমির জায়গীর দান করেন । জায়গীরদারদ্বয় আসন গাছ কেটে সোল জমির উপর বসতি গড়ে তোলেন । সোল জমির পূর্বপদে আসন গাছের নাম জুড়ে বসতির নাম রাখেন আসানসোল গ্রাম । যাকে ঘিরে বর্তমান আসানসোলের ব্যাপ্তি । জায়গীরদার নকড়ি ও রামকৃষ্ণ রায়ের পৃষ্ঠপোষকতায় সাঁওতাল প্রজাদের প্রিয় দেবী ঘাঘর বুড়ীর ' থান ' প্রসিদ্ধি লাভ করলে ধর্মপ্রান মানুষের ভিড় জমতে থাকে। নকড়ি ও রামকৃষ্ণ রায়ের তত্ত্বাবধানে ঘাঘর বুড়ী থানে মন্দির নির্মান ও নিত্যপূজার জন্য পুরহিত নিয়োগের চেষ্টা করা হয় । কিন্তু গ্রামস্থ পুরোহিতরা কেহই জঙ্গলাকীর্ণ ঘাঘর থানে এসে নিয়মিত মায়ের পূজো করতে রাজি ছিলেন না। পরবর্তী কালে চক্রবর্তী পরিবার দেবীর নিত্যপূজার দায়িত্ব নেন এবং সেবাইত মনোনীত হন ।সেই সময় থেকেই আদিবাসীদের পরিবর্তে ব্রাক্ষন দ্বারা পূজিত হতে থাকেন ঘাঘরবুড়ী মাতা চন্ডী । আদিবাসীদের অর্নায পূজাচারে অনুপ্রবেশ ঘটে ব্রাক্ষান্যচারের । পশ্চিমবাংলায় এমন বিভিন্ন লৌকিক দেবীর পূজা হয়ে থাকে যার অধিকাংশই পূজিত হন দেবী চন্ডী রূপে। ঘাঘরবুড়ী মাতা চন্ডী ও তার ব্যাতিক্রম নয় । ঘাঘরবুড়ী মাতা চন্ডীকে নিয়ে বহু জনশ্রুতি রয়েছে।কাঙ্গাল চরণ চক্রবর্তী নামে এক দরিদ্র ব্রাহ্মণকে দেবী ঘাঘরা পরে দেখা দিয়ে ছিলেন, ঘাঘরা থেকে ঘাঘর। ভিন্নমত ঘাঘরা শব্দের অর্থ নদী সেই থেকে ঘাঘরবুড়ী। গবেষকদের ধারনা দেবীকে আগে আদিবাসীরা পূজো করত কাঁসর, ঘন্টা ঘুঙুর,বাদ্য সহকারে। কাঁসর, ঘন্টা, ঘুঙুরকে একসঙ্গে সাঁজ বা ঘাঘর বলে, তাঁর থেকে ঘাঘরবুড়ী। আসানসোল মৌজার ৯৪ নং খাতিয়ান থেকে জানা যায় ঘাঘরবুড়ী মাতা চন্ডী মন্দিরের মালিকানা স্বত্ব নকড়ি রামকৃষ্ণ রায়ের উত্তরসূরী আগুরী সমাজের নীলকন্ঠশ্বর জীউ ট্রা্স্টি বোর্ডের।এই দেবোত্তর সম্পত্তির সেবাইত অতুলচন্দ্র চক্রবর্তী , পিতা কাঙালচন্দ্র। এই মন্দিরে কোনো মূর্তি নেই তিনটি শিলাকে পূজো করা হয় মাঝখানে দেবীচন্ডী, বামে অন্নপূর্না,ডানদিকে বাবা পঞ্চানন।প্রতি বছর ১লা মাঘ মন্দিরের মালিক পক্ষ মন্দির প্রাঙ্গনে মেলার আয়োজন করে । ঐদিন দুপুর ২টোর পর মন্দিরের দায়িত্ব সেদিনের জন্য তুলে দেওয়া হয় সাঁওতাল সমাজের হাতে । ঘাঘরবুড়ী মাতা চন্ডী লৌকিক দেবী না , বৈদিক দেবী এ প্রশ্ন ভূলে বাংলা , বিহার ,ঝাড়খন্ড থেকে সাধারন মানুষের সাথে সাঁওতাল সমাজের প্রচুর মানুষজনের সমাবেশ ঘটে এই মেলা প্রাঙ্গনে । । কারণ মা যে সকলের মঙ্গলময়ী। তথ্য, সহায়তা। ইতিহাস সংস্কৃতি ও ধর্মের মেল বন্ধনে, আদি দেবী ঘাঘরবুড়ি চন্ডীর ইতিবৃত্ত। জগন্নাথ সামন্ত। যাতায়াত। আসানসোল ষ্টেশন থেকে অটো বা রিজার্ভ গাড়িতে। ধন্যবাদ।
গ্রুপ এর অনেকেই হয়তো এই জায়গায় গিয়াছেন, আমাদের ও North sikkim tour এর 2nd দিন এর destination এটাই ছিল। আমার জীবনের সবচেয়ে উঁচু জায়গায় ভ্রমন এটাই। height almost 5200 meter,
সারা রাত বৃষ্টির মধ্যে স্যাঁতসেঁতে অন্ধকার ঘরে রাত কাটাবার পর ভোর 4te বেশ কিছু গাড়ির ইঞ্জিন start করার আওয়াজ এ ঘুম ভেঙে গেল। বুঝলাম গাড়ি ছোটা শুরু করার আগে warmup সেরে নিচ্ছে,। আমরাও অতি উৎসাহে জানলা খুলে ভোরের আলোতে অসম্ভব সুন্দর গ্রাম lachen কে দেখলাম এবং নিজেরাও cofee এর সাথে warmup করে journy start করলাম। রাতের বর্ষা রাস্তায় কিছু জায়গায় জল জমিয়ে দিয়েছে এবং সাথে ল্যান্ডস্লাইড এ কিছু রাস্তা blocked।।। এ সব পর করে মনে অনেক exitment নিয়ে বেশ কিছু আর্মি ক্যাম্প পার করে পৌঁছালাম gurudongmar lake. Tree line অনেক আগেই end হয়েছে , এখন শুধু ন্যাড়া পাহাড় বরফ দ্বারা আবৃত,। খুব এ অবাক করা ব্যাপার লাস্ট 5km রাস্তা পুরো highway এর মত , পরে জানতে পারলাম ওই রাস্তা emergency যে যুদ্ধবিমান অবতরন এর জন্য উপযুক্ত এবং halicapter ও স্বাচ্ছন্দে নামতে পারে, । খুব কাছেই রয়েছে china border। উচ্চতা বাড়ায় বেশ কিছু জনের headache শুরু হলো, lake এ পৌঁছে অল্প এদিক ওদিক ঘুরে বাকি team mate সব গাড়িতে, । শেষে আমি একাই নেমে এগিয়ে গেলাম lake ঘুরে দেখতে, নিজের মত অনেক ছবি তোলার ফাঁকে বরফ জমা lake এর উপর দিয়ে হাঁটা শুরু করলাম।। মনে ভয় ও উত্তেজনা, কারণ বরফ গলছে april মাসে, যদি কোনওভাবে বরফ ভেঙে জলে পরে যাই, কেউ বাঁচাবার নেই। এরম করে বেশ অনেকটা এগোবার পর দেখলাম বরফ এর উপর একটা ফাটল, আর এগোলামনা খুব সাবধানে কিছুটা স্লিপ খেতে খেতে আবার lake এর ধরে ফিরে এলাম এবং সেই দিন এ গাড়ি ধরে একেবারে gantok,। ফেরার পথে শরীর এ অক্সিজেন এর এত ঘর্তি ছিল যে সবাই বেশ মাথা যন্ত্রনা নিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, ঘুম ভেঙেছিল প্রায় 4,5 ঘন্টা পর যখন ড্রাইভার lunch এর জন্য ডেকেছিল।। |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |