বয়স বড় কম হল না। আমার জীবনে জড়িয়ে থাকা নানা স্মৃতি, দর্শন, চিন্তা আমাকে পেছনে টানে । আপনাদের বিচারে তাদের কী মূল্যায়ন হবে তা জানি না। জীবনের প্রতি, পুরনো সবকিছুর প্রতি আমার দুর্মর ভালোবাসাই বোধহয় আমাকে ঘর থেকে বারবার বাইরে বার করে দেয় ! পুরস্কার বা তিরস্কার তাই বাহুল্য মাত্র।
শেকড়ের টানে ঘুরে এলুম বাংলাদেশ 12রাত 13 দিন ! গত 19 সেপ্টম্বর আমরা 20 জন সিনিয়র সিটিজেন কলকাতা থেকে গাড়ী নিয়ে পৌঁছে গেলাম পেট্রাপোল ! সকাল 10টায় ! ওখান থেকে বেনাপোল হেঁটে এসে তিনটে গাড়ী নিলাম ! Toyota Japanese 10seater AC গাড়ী ! প্রথমে যশোরে ! ওখানে মাইকেল মধুসুদন এর বাড়ী ও মিউজিয়াম ! কপোতাক্ষ নদীর তীরে ! তার পরের দিন যশোর থেকে গড়াই নদীর ব্রিজ পেরিয়ে ফরিদপুর ..রাজাবাড়ী জিলা দিয়ে গোয়ালন্দ ঘাটে আসলাম ! তারপর ফেরীঘাটে গাড়ী শুদ্ধ পদ্মা নদী পার হয়ে এলাম পাটুরিয়া ঘাট ঢাকার দিকে ! ফেরী ঘাটে পদ্মার ইলিশ খেলাম ! ওখান থেকে গেলাম মানিকগঞ্জ হয়ে ঢাকা city ! দেখলাম রমনা কালীবাড়ী ; ঢাকেস্মরি দুর্গা ; মুজিবরের বাড়ী / মিউজিয়াম ; 21শে ফেব্রুয়ারি ভাষা আন্দোলন শহীদ স্মৃতি ; বাংলার স্বাধীনতার শহীদ স্মৃতি . দেখলাম নজরুল সমাধি ও national মিউজিয়াম ! ঢাকায় দুই দিন থাকার পর রওনা দিলাম নারায়ণগঞ্জ হয়ে মেঘনা নদী cross করে মুন্সীগঞ্জ হয়ে গোমতী নদী পেরিয়ে এলাম কুমিল্লা ! এখানে দেখলাম ময়নামতি -শালবন বিহারে খননে প্রাপ্ত আনু 8ঠ 12ঠ century - ফোস্সীল wood; বেলে পাথরের তারা মূর্তি , most impressive archaeological site শালবন বিহারি , ময়নামতি মিউজিয়াম ; খনন কার্য যেখানে Buddhism এর প্রচুর নিদর্শন পাওয়া যায় ! তারপর চট্টগ্রাম হয়ে কস্কবাজার ! তারপর গেলাম বন্দরবন ও রাঙ্গামাটি ;হিমচড়ি সমুদ্র সৈকত ; 100 ফুট শায়িত বুদ্ধ ; রাংউ রংকুট বোনাআশ্রম যেখানে সম্রাট অশোক এবং হিউনসাং 238 খৃস্টাব্দে এসেছিলেন আর বপন করেছিলেন একটা বট গাছ যার বয়স এখন 1400 বছর ! বিশাল বট গাছ দেখলাম ! কস্কবাজার তিনদিন থেকে রওনা দিলাম চট্টগ্রাম ! দেখলাম .আদিনাথ মন্দির শিব ও অস্ট্ভুজা সাদা দুর্গা মৈনাক পর্বত এর উপর! মহেশখালী উপজেলায় ! সেখানে ভোগ খেলাম দেখলাম রামকৃষ্ণ আশ্রম ; তারপর চিত্তেস্বর কালী মন্দির ! রামঠাকুর আশ্রম ! দেখলাম পতেঙ্গা sea বিচ !
তারপর ..
রাঙ্গামাটি in.রাঙ্গামাটি জিলা ! কাপ্তাই লেক নৌকো ভ্রমণ করলাম দেখলাম চাকমা ভিলেজ ! প্রায় 4 ঘন্টা ভ্রমণ নৌকোয় ! চট্টগ্রাম এ তিনদিন থেকে রওনা দিলাম . চট্টগাম থেকে ঢাকা ভায়া কুমিল্লা 130 km ; গোমতী নদীর সেতু ; মুন্সীগঞ্জ ; নারায়ণগঞ্জ মেঘনা সেতু হয়ে এলাম বারুদী ! লোকনাথ বাবা আশ্রম ! সোনারগাঁও নারায়ণগঞ্জ জিলা ! সেখানে বাবার ভোগ খেলাম ! জায়গাটা দারুণ মনোরম ! তারপর দেখলাম জ্যোতিবসুর বাড়ী ! ঢাকা থেকে আবার আগের মতো গোয়ালন্দ ফেরী পার হয়ে রাজবাড়ী হয়ে এলাম কুস্ঠিয়া তে ! সেখান থেকে শিয়ালদহ কবির কুঠিবাড়ি ! কবির নানা ব্যবহার করা জিনিস ; বকুল বন ; নানান দুস্প্রাপ্য ছবি ! বকুল তলায় গান শুনলাম ! কবির ব্যবহার করো হাউসবোট; কুয়ো ইত্যাদী ! তারপর গেলাম লালন ফকিরের সমাধি আর আখড়া ! জায়গাটা সবাইকে আকর্ষণ করবে ! সেখানে বাউল গান শুনলাম ! তারপর সেখান থেকে আবার যশোর এ এলাম ! সেখান থেকে গাড়ী করে বেনাপোল ! তারপর আর কী ? সফর শেষে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে পুরোনো শিকড় স্মৃতিগুলো ছিঁড়ে ফিরে এলাম কল্লোলিনী কলকাতায় ! বাংলাদেশে গ্রামীণ রাস্তা খুবই খারাপ ! ঢাকা ও চট্টগ্রাম ছাড়া বাকী জায়গা গুলো সবুজের রমরমা ! মাঠে মাঠে ধান আর কাশফুল ; টিনের চাল ; আর নদী ! শহরের আভিজাত্য ও আধুনিকতা চোখে পড়ল না ! জানি না এটা আর্শীবাদ না অভিশাপ ? নমস্কার !
0 Comments
অজানার সন্ধানে গৌড়বঙ্গ
প্রথমেই জানিয়ে রাখি আজ আমি আপনাদের যে জায়গাটার সম্পর্কে বলতে চলেছি সেটি কোনো টুরিস্ট স্পট নয়, সেজন্য খুব একটা ভালো নাও লাগতে পারে অনেকের। কিন্ত তবুও পুরোটা পড়ার অনুরোধ রইল। 2016 সালের সেপ্টেম্বর মাস, গঙ্গা নদীর পাড় ভাঙন ও স্থানীয় মানুষদের জীবনযাত্রার কিছু তথ্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে আমরা পঞ্চানন্দপুর গ্রাম ছুটে যায়। এটি গৌড় বঙ্গের গঙ্গা তীরের ছোট্ট একটি গ্রাম। আমাদের দলের মোট সদস্য সংখ্যা ছিল 7। রওনা হলাম হাটেবাজারে এক্সপ্রেস এ শিয়ালদহ থেকে রাতে। আমাদের সদস্যদের মধ্যে অনেকেই ছিল যারা ফারাক্কা ব্যারেজ দেখেনি , আবার অনেকের মধ্যে অজানা তথ্য সংগ্রহের আনন্দ। সব মিলিয়ে একটা চাপা উত্তেজনা। ভোর 5 টা নাগাদ ট্রেন পৌছালো মালদা স্টেশনে। সেখান থেকে প্রথমে টোটো তারপর বাসে করে পৌঁছে গেলাম আমাদের গন্তব্যে। ঘড়ির কাটা সকাল 8 টার আশপাশ, আমরা 7 জন ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বেড়িয়ে পড়লাম তথ্য সংগ্রহের কাজে। প্রথমটা ভালো লাগলেও পরবর্তীতে সবার মনটা বিষাদে ভরে উঠলো। প্রকৃতি দেবী যেন রুষ্ট হয়ে বারংবার তান্ডব নিত্য করেছেন এই অঞ্চলে। চারিদিকে শুধুই ধ্বংসের ছাপ। বাঁচার লড়াইয়ে সদ্যজাত থেকে প্রবীণ সবাই যেন এক একজন সৈনিক এখানে। যাদের জীবনে বিনোদনের কোনো অস্তিত্ব নেই, নেই আমাদের মতোন ভ্রমণ পিপাসা। আসে শুধু বেঁচে থাকার জন্য ভগবাদের কাছে করুন আর্তি। ছোট ছোট শিশুদের প্রত্যেকটি দিনের সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত হয় কাজের মধ্যে দিয়ে। দুমুঠো অন্য সংস্থানের জন্য প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে মাঝ গঙ্গায় চলছে মৎস আহরণ। এইসব কাজের ফাঁকে পথ চলতি শিশুদের হাতে তুলে দিলাম আমাদের সাধ্য মতোন কিছু খাবার। মনে হতে লাগলো কতো যুগ পিছিয়ে এসেছি আমরা। বিকাল 3 টে, ফেরার পালা এবার। বাস ধরে পৌছালাম ইংলিশ বাজার। তারপর পায়ে হেটে স্টেশন। রাতের গৌর এক্সপ্রেস এ উঠে পড়লাম কোলকাতা ফেরার জন্য। ভোর হতেই পৌঁছে গেলাম কোলকাতা। সকালের সূর্যটা দেখে মনে হতে লাগলো একটি যুগের অবসান ঘটিয়ে নতুন যুগের সূর্য দেখলাম যেন। প্রকৃতির কাছে আমরা যেন সকলেই অসহায়, সদ্যজাত শিশু। একারনেই প্রকৃতিকে বাঁচিয়ে আমাদের নতুন যুগের ভিত্তিপ্রস্তর বসাতে হবে। আর অন্যথায় হলে হয়তো চারিদিকে দেখা যাবে পঞ্চানন্দপুর গ্রাম, হয়তো থাকবেনা ভ্রমণ পিপাসু মানুষদের এই গ্রূপে পোস্ট করার কিছু। ভালো লাগলে comment ও like করবেন। এবং share করে সকলকে দেখার সুযোগ করে দেবেন এই আশা রাখবো। সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেকেই জানতে / পরামর্শ চান যে একদিনে (সকালে বের হয়ে রাতে ফেরা) ঘুরে আসতে পারবেন এমন জায়গার হদিস । গাড়ি নিয়ে বা গণপরিবহণ ব্যবহার করে যেতে পারবেন, যাতায়াতে বেশী সময় নষ্ট হবে না, খরচ কম হবে, জায়গাটাও উপভোগ্য, নিরাপদ (মহিলা ও শিশু উভয়ের ), স্থানীয় মানুষ উপকারী ও সহযোগী, মত বদলে থাকার ইচ্ছা হলে তারজন্য আস্তানার ব্যবস্থা ইত্যাদি (যাবতীয়) শর্তপূরণে সক্ষম একটা জায়গার হদিস দিচ্ছি ।
NH - 6 ধরে কোলাঘাট পার করে কাঁথি পর্যন্ত যান । তারপর জুনপুটের রাস্তা ধরুন । জুনপুট মোড় (৪ রাস্তার সঙ্গম) থেকে ডানদিকে ৩ কিমি গিয়ে স্থানীয় মানুষকে জিজ্ঞাসা করে বাঁদিকে মোরাম বিছানো ঢালু রাস্তা ধরে চলে যান সোজা হরিপুর সমুদ্রতীরে । মৎসজীবিদের গ্রাম ও বাসিন্দা ছাড়া আর কোনও বহিরাগতদের দেখা পাবেন না । দারুণ চওড়া তট, প্রচুর লাল কাঁকড়া, ঝাউবন, বালির ঢিবি অপেক্ষা করে আছে আপনার আমোদের জন্য । গাড়ি নেমে যাবে বালির শক্তপোক্ত তটে । স্নান করুন, বাচ্চাদের নিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলুন, দৌড়ে বা হেঁটে চষে ফেলুন পুরো চত্বর, কিছু বিছিয়ে সঙ্গে আনা খাবার দিয়ে পিকনিক করুন বা শালীনতা বজায় রেখে যা মন চায় করুন । আর প্রাণভরে ছবি তুলুন । হরিপুর আপনাকে নিরাশ করবে না, গ্যারান্টি দিলাম । পরিশেষে বলি দয়া করে আবর্জনা ফেলে আসবেন না । কোলকাতার জোকার খুব কাছাকাছি (ভাসা) আছে বিখ্যাত স্বামী নারায়ণ মন্দির। ১৪ নং ডায়মন্ড হারবার রোড। আই. আই. এম (কোলকাতা) র কিছু টা পরে। বিশাল এলাকা জুড়ে এই মন্দির। খুব সুন্দর খোলা মেলা পরিবেশ ।এখানে কোন প্রবেশ মূল্য নেই। পূজো র জন্য ধার্য ৫০টাকা(দুজনের) ।এখানে পূজো বলতে ঠাকুর কে স্নান করানো। সবশেষে এই পূজো র প্রসাদ পাওয়া যায়।পূজো দিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। মন্দির খোলা থাকে সকাল সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত। তবে মাঝে মাঝে ঠাকুর কে ভোগ দেওয়ার জন্য মন্দির বন্ধ থাকে। মন্দির দর্শনের সেরা সময় সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত। আরতি র সময় সন্ধ্যা সাড়ে ছটা থেকে। এখানে বিশাল নিরামিষ খাবারের ক্যান্টিন আছে। একটা গোটা দিন কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা।
হুগলী জেলার আরামবাগ মহকুমার এক প্রত্যন্ত গ্রাম বালিদেওয়ানগঞ্জ। বেশ কয়েকটি ভগ্নপ্রায় মন্দির রয়েছে এই গ্রামের রাউতপাড়ায়। এর মধ্যে অন্যতম হল টেরাকোটার দুর্গামন্দির। মিশ্র রীতিতে নির্মিত এই মন্দিরটি অন্যান্য টেরাকোটার মন্দিরের থেকে অনেকটাই আলাদা।
জোড়বাংলা মন্দির দোচালা মন্দির নির্মাণ রীতির এক অনন্যসুন্দর পরিবর্তিত রূপ। নবরত্ন মন্দির নির্মাণ শৈলীতে মন্দিরটি নয়টি চূড়া বিশিষ্ট হয়। বালিদেওয়ানগঞ্জের দুর্গা মন্দিরটি এই দুই রীতির এক অপরূপ মেলবন্ধনে নির্মিত। এই মন্দিরের প্রবেশপথের উপরভাগের প্যানেলে দেবী দুর্গা এবং তাঁর সন্তানসন্ততির মূর্তি আছে। সম্ভবত এটি টেরাকোটায় নির্মিত দেবী দুর্গার সবথেকে বড় প্যানেল। দেবী দুর্গা এবং চার সন্তানের প্রত্যেকেই অবস্থান করছেন পৃথক পৃথক প্যানেলে। সঠিক সংরক্ষণ না হওয়ায় মন্দিরটি আজ ভগ্নপ্রায়। সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আগে দেখে আসতে পারেন এই দূর্গা মন্দির। কাছেই রয়েছে আরও কয়েকটি মন্দির। পথনির্দেশঃ হাওড়া থেকে আরামবাগ বা গোঘাট লোকালে আরামবাগ স্টেশন। সেখান থেকে অটো বা টোটো চেপে বাসষ্ট্যান্ড। সেখান থেকে বাস ধরে বালিদেওয়ানগঞ্জ। হালদারপাড়ায় নেমে মাটির রাস্তা ধরে পৌঁছে যাবেন রাউতপাড়ায়। ফেরার পথে বাসরাস্তায় উঠে আরামবাগের দিকে একটু হাঁটলে চোখে পড়বে একটি ভগ্নপ্রায় অট্টালিকা যার স্থানীয় নাম শিব কুটির।
Post By-Soumen Dey
গত ৩০শেসেপ্টেম্বর দুপুরে মিথিলা এক্সপ্রেস এ চড়ে নেপাল ভ্রমন শুরু হল।প্রথমে যাব মুক্তি নাথ দর্শনে।প্রথম গন্তব্য তাই রক্সৌল।পরদিন সকাল দশটা নাগাদ মোটামুটি রাইট টাইমে ট্রেন রক্সৌল পৌঁছল।যন্ত্রনার শুরু হল।কোন গ্ৰামের রাস্তাও বোধহয় এতো খারাপ হয়না।গ্ন্তব্য বীরগঞ্জ,একমাত্র টাঙা ই যাবে বীরগঞ্জ পর্যন্ত,অটো সীমান্তে গিয়ে ছেড়ে দেবে,ফের আর একটি অটো বীরগঞ্জ এর বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে যাবে,তাই একবারে যাব বলে টাঙাতেই উঠে বসলাম।বাপরে কী রাস্তা,প্রতি মূহুর্তে মনে হচ্ছে টাঙা থেকে পড়ে যাব আর তেমনি জ্যাম,বিহারের প্রশাসন কে প্রনাম করে কোনরকমে প্রান হাতে করে পোখরা যাবার বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলাম,ভাড়া দুশো টাকা।পরের পর্বে পোখরা যাবার দুঃস্বপ্নের যাত্রা বলব।
টাঙা চড়ে প্রান হাতে ফিরে পেয়ে অবশেষে বীরগঞ্জের বাস স্ট্যান্ডে হাজির হলাম,টাঙাওলা কে দুশো টাকা দিয়ে বিদায় করে সামনেই পোখরা যাবার বাস দেখে পাতা করলাম কখন ছাড়বে কত ভাড়া ইত্যাদি,এখন মাঝে মাঝে হিন্দি কথা বেরিয়ে যাবে ,ক্ষমা করবেন।এখান থেকে শুরু হল নেপালি মানি আর ইন্ডিয়ান মানির হিসাব নিকাশ,সোজা কথায় মোবাইল বার করুন আর নেপালি মানিকে ১.৬ দিয়ে ভাগ করুন তাহলেই বুঝতে পারবেন কত টাকা দিতে হবে,ওদের সাহায্য লাগবেনা,ওদের ওপর নির্ভর করলে হিসাব ভুল বলতে পারে , আপনি নিজে হিসাব করলে ওরা মেনে নেবে কিছূ তর্ক করবে না,যদি দুচার টাকা হিসাবে আসে তো সোজা বলে দিন দিতে পারব না,কারন ওখানে ইন্ডিয়ান কয়েন চলেনা।
বাসের ভাড়া ৩৫০টাকা,পার হেড, বীরগঞ্জ টু পোখরা।বলল না,দশ ঘন্টা লাগবে।ভালো বাস,এসি নয় কিন্তু। এবার বাস চলল আপ ডাউন লেফট রাইট হেলতে দুলতে,নড়তে নড়তে কী ভীষন রাস্তা,বুঝলাম এখানেও বিহারী মার্কা প্রশাসন,নির্বিকার।গাড়ী চলল শম্বুক গতিতে,আতঙ্কিত আমরা জিগেস করলাম এরকম চললে কখনোই পৌঁছব?আমাদের বলা হল বেফিকর রহিয়ে ঠিক পৌঁছে জায়েগা রাস্তা নহী দেখা কি ৎ না খারাব।অগত্যা পড়েছি মোগলের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। সাথে সাথে চলেছে ত্রিশুলি নদী,ধূলোর জ্বালায় জানলা খোলার উপায় নেই।অনেকটাই যাবার পর রাস্তা ভালো পাওয়া গেল,ভাবলাম এবার টানবে,হা ভগবান রাস্তা বেদম জ্যাম,হাজার হাজার শ্রী শুধু যাচ্ছে আসছে,সঙ্গে চলেছে কন্ডাক্টরের হাঁক,পোখড়া জায়গা পোখড়া?
অতি ধূলিমলিন ও জঘন্য রাস্তা দিয়ে পোখরা যাত্রা শুরু হল,পার হেড ৩৫০টাকা আই সিতে,বাস প্রায় লোকাল,ডেকে ডেকে লোক তুলছে, শম্বুক গতিতে,কিছুটা খারাপ রাস্তা ও অনেকটাই লরীর জ্যামের জন্য।অবশেষে এক জায়গায় লাঞ্চ ব্রেক।
নেপালি থালি ভেজ,দাম তিনশো টাকা,ঘাবড়াবেন না,আই সি তে সেটা একশো আশি হল,সঙ্গে ডিমের অমলেট,আধা ঘন্টা ব্রেক । পাশে ত্রিশুলি নদী ও চলেছে,বেশ স্রোত আছে,অনেকে র্যাফটিং ও করছে।দেখতে দেখতে চোখে ঘুম,অন্ধকার ও হয়ে এলো।আর লরীর স্রোত বয়ে চলেছে,এতো লরী?আর কত দূর?আ জায়েগা,ঘাবড়াও মৎ।আর ধৈর্য্য থাকছে না, রাত্রি নটায় গাড়ীর স্টাফরা খেতে নামল,তারা লাঞ্চ করেনি,এখন দুধের দিয়ে চিঁড়ে খাবে।অগত্যা,ধৈর্য্য ধরে থাকো।সকাল সাড়ে দশটায় বাস ছেড়ে একশো স্টপেজ দিয়ে অবশেষে রাত সাড়ে দশটার সময় পোখরা পৌঁছলাম।কত ঘন্টা হল? সব গুলিয়ে গেছে।সেখান থেকে ট্যাক্সি নিয়ে আইসি তে তিনশো,পনের মিনিট দূরে হোটেল ডিপ্লোম্যাট,আগে থেকে নেটে বুক করা। ভালো হোটেল,ওরা বলল তাড়াতাড়ি পাশের খাবার দোকানে খেয়ে নিন,নাহলে বন্ধ হয়ে যাবে।ভালো খাবার খেয়ে হোটেলে ফিরে সোজা বিছানায়।কালকের কথা আবার কালকে।
পরদিন ঘুম থেকে উঠে বেড টি খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম,আমাদের হোটেল লেকের কাছেই,তাই হাঁটতে হাঁটতে ফেওয়া লেকের কাছে চলে এলাম।কি বিশাল লেক,লেকের মাঝে দ্বীপের মত একটি মন্দির,সবাই দেখি লাইফ জ্যাকেট পরে নৌকোয় করে যাচ্ছে,আমরাও পত্রপাঠ চললাম,বরাহ দেবতার মন্দির,নিজে নিজে পূজো কর,ভালো ব্যবস্থা,বরাহ অবতারের মূর্তি,আমি তো বুঝতেই পারিনি,ভাবছি কোন দেবী র মূর্তি,মা মা করে ডেকে ফেলেছি,তারপর মাঝির কাছে শুনে কি ফ্যাসাদ।একটু মার্কেটে ঘোরাঘুরি করে হাতে ছ্যাঁকা খেয়ে ফিরে এসে চান টান করে খেতে বেরোলাম।প্রসঙ্গত,আমাদের হোটেলে প্রাতঃরাশ ছাড়া কিছু মিলবে না,নো চিন্তা,পাশেই খাওয়ার হোটেল,নেপালি সিম নিতে একটু সময় লাগল, পাসপোর্ট ছাড়া দেবেনা।লোকাল কলের ক্ষেত্রে কাজে লাগবে।ও মা সিম ভরতে না ভরতে পুরো ডাটা শেষ।ওরা বলল আপনার যা যা আ্যপস চালু ছিল,তাতেই ডাটা খেয়ে নিয়েছে।আবার রিচার্জ করে পয়সা ভরতে হল।ডাটা কে মারো গুলি,সব হোটেলেই ফ্রী ওয়াই ফাই,তো হোটেলে বসে আমরা ইন্ডিয়ান সিমের ডাটার শ্রাদ্ধ করতে লাগলাম।বিকালে সাইট সিয়িং এর জন্য গাড়ী বুক করে খেয়ে দুপুরে বিশ্রাম।ওমা ,আকাশ কালো করে ঝপাঝপ বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল,থামেনা,মেঘ মোটে নড়েনা,এখানে মেঘ উড়ে উড়ে চলে যায়, বৃষ্টি ও উধাও হয়ে,ওখানে মেঘ মোটে ওড়েনা।কি করে সান সেট দেখব।মনকে বোঝালাম,আর কত জায়গার সানসেট দেখবি?সেই একি সান,আর একি সেট।আমাদের বাড়ির ছাদে এক একদিন অপরূপ সানসেট হয়,ফ্রীতে পাই বলে দাম দিই না।দরকার নেই সারানকোট গিয়ে সানসেট দেখার। বৃষ্টি কমতে বুদ্ধ পিস প্যাগোডা দেখতে গেলাম।
প্যাগোডার পাদদেশে এসে দেখি দুশো সিঁড়ি চড়তে হবে, সঙ্গে ঝেঁপে বৃষ্টি। ছাতা মাথায় দিয়ে মরিয়া হয়ে উঠতে লাগলাম,যা থাকে কপালে।এরপর কি হল?কালকে বলব।
Post By-Arpita Ghosh
নীলাচল পর্বতের ওপর ভারতের ধর্মীয় ও পৌরাণিক স্হান ৫১ সতীপিঠের অন্যতম কামাখ্যা।
ধর্মীয় ব্যাখ্যা অনুসারে দেবাদিদেব মহাদেবে যখন সতীর মৃতদেহ নিয়ে ভৈবর নৃত্য করছিলেন সেইসময় সেই নৃত্যের কারনে যে প্রলয়ের সৃষ্টি হয় তার থেকে জগৎ সংসারকে রক্ষা করার জন্য বিষ্নু সুদর্শন চক্রে সতীর দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন করেন এবং স্তব্ধ করেন মহাদেবের প্রলয় নৃত্য। সেই ছিন্নভিন্ন দেহাংশের মধ্যে সতীর যোনি এখানে পতিত হয়। সেই থেকেই কামাখ্যা হিন্দুদের পবিত্র তীর্থস্থান। আমার কামাখ্যা ভ্রমণ প্রথম বাবা মায়ের হাত ধরেইতখন আমি একপ্রকার পরিনত না হলেও বালকই বলা চলে। আমার এক মামা L.IC র কর্মচারী হওয়ার সুবাদে ছিলাম ব্রহ্মপুত্রের ধারে তার আবাসনে। ম্মৃতির পাতায় সেই সময়ের যেটুকু ধরা আছে তা হলো কামাখ্যা মন্দির যাওয়ার রাস্তাটি জঙ্গলাকীর্ণ। ব্রহ্মপুত্র অতি মনোরম নদ। পরবর্তী কালে আমি পুনরায় আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে আসাম সহ মেঘালয় ভ্রমনের সময় আবার যাই কামাখ্যায়।সেই স্মৃতি আমার ডাইরী আর বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে আজকের এই লেখা। তন্ত্র সাধনার পীঠস্থান এই কামাখ্যা।সম্ভবত এই মন্দিরের নির্মাণ কাল ১৫৬৩-১৫৬৪সাল। ঐ জায়গায় পুরাতন একটি মন্দির তার বহুকাল পূর্বেই ছিল।সম্ভবত ৩৫০-৬৫০খৃষ্টাব্দ পূর্বে এই জায়গাকে কামরূপ রাজ্য বলা হোতো এবং সেই রাজবংশ ছিলো বর্মন রাজবংশ।তখন এখানে দেবী পুজিত হতেন অব্রাহ্মন কিরাত বা ব্যাধ সম্প্রদায়ের আরাধ্য দেবী হিসাবে। কথিত আছে,কোচ রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বসিংহ এই মন্দির পুনপ্রবর্তন করেন এবং তার পুত্র নরনারায়ন ১৫৬৫ খীষ্টাব্দেএই মন্দিরের নির্মাণ কাজ শেষ করেন।পরে আহোম রাজ্যের রাজা তাকে আরো সমৃদ্ধ করেন। জনশ্রুতি আছে সুলেমান কিরানির রাজত্বকালে (১৫৬৬-১৫৭২) তার সেনাপতি কালাপাহাড় এই মন্দির ধ্বংস করেন। তবে ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী জানা যায় আলাউদ্দিন হুসেন শাহ ১৪৯৮ খৃষ্টাব্দে কামতা রাজ্য আক্রমণ করলে এই মন্দির ধ্বংস হয়। অহম রাজা জয়ধ্বজ সিংহ আসাম জয় করেন ১৬৫৮খিষ্টাব্দে এবং তারই উদ্দোগে মন্দিরের সংস্কার হয়। পরবর্তী রাজা রূদ্র সিংহ(১৬৯৬-১৭১৪) যখন বৃদ্ধ হন তখন তিনি দীক্ষা গ্রহণ করতে চান কিন্তু অসুবিধা তিনি ছোট হয়ে যাবেন এই ভাবনায় রাজ্যের কোনো ব্রাহ্মনের কাছে মাথা নত করতে পারবেন না। সেই কারনেইএই সময় আহ্বান জানানো হয় পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শান্তিপুরের মালিপোতার বিশিষ্ট শাক্ত ব্রাহ্মন কৃষ্ণরাজের। কিন্তু কৃষ্ণরাজ শর্ত দেন বিনিময়ে তাকে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব দেওয়ার। এই হিসাবেই কৃষ্ণরাজের হাতে আসে কামাখ্যা মন্দিরের দায়িত্ব।রাজা রূদ্র সিংহের মৃত্যুর পর তার পুত্র শিব সিংহ কৃষ্ণরাজকে কামাখ্যা ও তার সংলগ্ন ভূখন্ড দেবোত্তর সম্পত্তি হিসাবে প্রদান করেন। কৃষ্ণরাজ ও তার বংশধরদের পার্বতীয়া গোঁসাই বলা হোতো। কামাখ্যাকে বলা হয় জাদুটোনার,তন্ত্র সাধনার দেশ। অরণ্যের নির্জন পাকদন্ডীর পথে এখানে নাকি দেখা মেলে ভুত পেত্নী,ডাকিনি যোগিনীর। না!আমার নজরে তন্ত্র সাধনার কিছু সাধু ছাড়া তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি। গুয়াহাটি থেকে কামাখ্যা মন্দির যাওয়া যায়। নিলাচল পর্বতের ৮০০মিটার উঁচুতে এই মন্দির। দশ মহাবিদ্যার মন্দির বলা হয় এই মন্দিরকে। এখানে আছে"ভুবনেশ্বরী, ছিন্নমস্তা,তারা,মাতসী, ভৈরবী,বগলামূখী,ধূমবতী,কালী,কমলা, ত্রিপুরেশ্বরী"এই দশ দেবীর মন্দির। মূল মন্দিরের তিনটি প্রকোষ্ঠ আছে,গর্ভগৃহের শেষে সিঁড়ির শেষ ধাপের পর এক যোনির আকৃতির পাথরের ফাটল থেকে অবিরাম জলের ধারা প্রবাহিত হয়। এই মন্দিরকে ঘিরে নানারকমের জনশ্রুতি ও প্রবাদ রয়েছে।তবে হিন্দু ধর্মের অন্যতম একটা জায়গা হিসাবে এর পরিচিতি। অম্বুবাচী,দূর্গাপূজা ও কালীপূজার সময় এখানে বিশেষ মেলা বসে। এখানে বলিদান প্রথা চালু আছে। আমরা কামাখ্যা মন্দিরের আগেই একটা সমতল জায়গায় গাড়ি থেকে নেমে ঐ ঝোপঝাড় ও জঙ্গুলে চড়াই রাস্তা দিয়েই গেছিলাম। বহু ধরনের সাধূ সন্যাসীদেরও দেখেছিলাম। পাশেই আরেকটি পাহাড়ি চুড়া আছে ,তার নাম বশিষ্ট পাহাড় । সেই বশিষ্ট পাহাড়,আর সেই পাহাড়ের নিচে তার কোল দিয়ে বয়ে চলা ব্রহ্মপুত্রকে অনেক খানি উপর থেকে দেখা আর দেখা ঐ দুরের পাহাড়ের মাথায় ছবির মতো সাজানো ঘরবাড়ী দেখার অনুভূতিই আলাদা। ফেরার পথে ঐ ব্রহ্মপুত্রের ওপর এক ভাসমান রেষ্টুরেন্টে বসে চা টিফিন সহযোগে টলটলে জলের ঢেউ তোলা নদীকে দেখা আর তার বুকে ভেসে বেড়ানো নৌকাকে দেখার মধ্যেও ছিলো এক অন্য ধরনের সুখকর অনুভূতি।
Post By-Chandan Dutta Roy
পুরুলিয়া ও ছৌ নাচ ভরা বর্ষায় চলেই গেলাম পুরুলিয়া। তাই ভয় যেটার ছিল সেটাই হল। সকাল ৮ টা নাগাদ বরাভূম এ নামলাম যখন, আকাশ মেঘলা। এই নামে এই নামে ভাব। বাঘমুণ্ডির দিকে কিছুটা এগোতেই নেমে পরল ঝমঝমিয়ে । মন গেল খারাপ হয়ে। যদিও একটু পরেই যা মনোরম দৃশ্য চোখে পড়ল তা এক কথায় অনবদ্য। দুই ধারে সবুজে ঘেরা ছোট ছোট পাহাড়, উপরের দিক মেঘে ঢাকা সাথে মুষলধারে বৃষ্টি। আমরা এগোতে থাকলাম কালো পিচের রাস্তা ধরে। কখন হোটেলে পৌঁছে গেলাম বুঝতেই পারলাম না। দুপুর বেলা নাওয়া খাওয়া সেরে শুরু হল আমাদের পুরুলিয়া সফরের প্রথম ধাপ। পৌছলাম চড়িদা গ্রামে, ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী দেখতে। পরদিন ছৌ নাচ দেখার ও সুযোগ হয়ে গেল। কিছু ছবি আর ছৌ নিয়ে কিছু তথ্য দিয়ে শেষ করলাম। যদিও সেসব তথ্য অনেকেই হয়তো জানেন। আপনাদের মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ------ "ছৌ নাচ বা ছো নাচ বা ছ নাচ পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশায় জনপ্রিয়. কথিত আছে, ছৌ নাচের আদি উৎপত্তি স্থল ওড়িশার সাবেক দেশীয় রাজ্য ময়ূরভঞ্জ। উৎপত্তি ও বিকাশের স্থল অনুযায়ী ছৌ নাচের তিনটি উপবর্গ রয়েছে। যথা– সরাইকেল্লা ছৌ, ময়ূরভঞ্জ ছৌ ও পুরুলিয়া ছৌ। এই তিনটি উপবর্গের মধ্যে প্রধান পার্থক্যটি দেখা যায় মুখোশের ব্যবহারে। সরাইকেল্লা ও পুরুলিয়া ছৌ-তে মুখোশ ব্যবহৃত হলেও, ময়ূরভঞ্জ ছৌ-তে হয় না। পশ্চিমবঙ্গের পুরুলিয়া জেলা ও পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঝাড়গ্রাম মহকুমায় প্রচলিত ছৌ নাচের ধারাটি পুরুলিয়া ছৌ নামে পরিচিত। এই ধারার স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য আছে। পুরুলিয়া ছৌ-এর সৌন্দর্য ও পারিপাট্য এটিকে আন্তর্জাতিক খ্যাতি এনে দিয়েছে। পুরুলিয়ার ছৌ নাচে বান্দোয়ান ও বাঘমুন্ডির দুটি পৃথক ধারা লক্ষ করা যায়। বান্দোয়ানের নাচে পালাগুলি ভাব গম্ভীর এবং বাগমুন্ডির নাচে পালাগুলি হয় বীরত্ব ব্যঞ্জক। জেলায় ছৌ নাচের মূল পৃষ্ঠপোষক ছিলেন ভূমিজ মুন্ডারা। পরে এই নাচে মাহাতো সম্প্রদায়ের মানুষেরা নর্তক হিসেবে ও ডোম সম্প্রদায়ের মানুষেরা বাদক হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। রীতি ছৌ নাচ বিষয়গতভাবে মহাকাব্যিক। এই নাচে রামায়ণ ও মহাভারতের বিভিন্ন উপাখ্যান অভিনয় করে দেখানো হয়। কখনও কখনও অন্যান্য পৌরাণিক কাহিনিও অভিনীত হয়। ছৌ নাচের মূল রস হল বীর ও রুদ্র। নাচের শেষে দুষ্টের দমন ও ধর্মের জয় দেখানো হয়। গ্রামাঞ্চলে এই নাচের আসর কোনো মঞ্চে হয় না; খোলা মাঠেই আসর বসে, লোকজন চারিদিকে জড়ো হয়ে নাচ দেখে। নাচের শুরু হয় ঢাকের বাদ্যের সঙ্গে। এরপর একজন গায়ক গণেশের বন্দনা করেন। গান শেষ হলে বাদ্যকারেরা বাজনা বাজাতে বাজাতে নাচের পরিবেশ সৃষ্টি করেন। প্রথমে গণেশের বেশধারী নর্তক নাচ শুরু করেন। তারপর অন্যান্য দেবতা, অসুর, পশু ও পাখির বেশধারী নর্তকেরা নাচের আসরে প্রবেশ করেন। প্রতিটি দৃশ্যের শুরুতে ঝুমুর গানের মাধ্যমে পালার বিষয়বস্তু বুঝিয়ে দেন। মুখোশ পুরুলিয়া জেলার বাঘমুন্ডি থানার চড়িদা গ্রামের চল্লিশটি সূত্রধর পরিবার এবং জয়পুর থানার ডুমুরডি গ্রামের পাঁচটি পরিবার ছৌ নাচের মুখোশ তৈরী করেন। এছাড়া পুরুলিয়া মফস্বল থানার গেঙ্গাড়া, ডিমডিহা ও কালীদাসডিহি গ্রামে, পুঞ্চা থানার জামবাদ গ্রামে এবং কেন্দা থানার কোনাপাড়া গ্রামেও এই মুখোশ তৈরী হয়ে থাকে। মুখোশ তৈরীর জন্য প্রথমে নদীর দোয়াশ মাটি দিয়ে একটি কাঠের ওপর ছাঁচ তৈরী করে পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট রৌদ্রে শুকিয়ে ছাঁচের নাক, মুখ, চোখ বানানো হয়। এরপর কাপড়ে ছাই রেখে তাতে ফুটো করে মুখোশের ওপর ঝেড়ে ঝেড়ে ছাই দেওয়া হয়, এতে পরে ছাঁচ থেকে মুখোশকে পৃথক করা সহজে সম্ভব হয়। এরপর জলে ময়দা ও তুঁত মিশিয়ে আঠা তৈরী করে মুখোশের ছাঁচে তিন থেকে চার স্তরে কাগজ লাগিয়ে দেওয়া হয়। একদিন পরে কাগজের স্তরগুলি শুকিয়ে গেলে আট-দশটি স্তরে কাগজ লাগাতে হয়। এঁটেল মাটি জল দিয়ে ঘোলা করে আট দশ দিন রেখে দেওয়া হয়, যাকে কাবিজ বলা হয়। এরপর আট থেকে দশটি স্তরে সুতীর কাপড় কাবিজের সাথে লাগিয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে রাখা হয়। মুখোশের নাক, মুখ, চোখ, কান পালিশ করে রৌদ্রে রেখে দেওয়া হয় ও দুই দিন পরে মুখোশের অবয়ব এবং মাটির ছাঁচটি পৃথক করা হয়। এরপর মুখোশের কিনারার কাগজ ও কাপড় কেটে ভেতরের দিকে মুড়ে মুখোশটিকে দুই-আড়াই ঘন্টা উল্টো করে রৌদ্রে শুকিয়ে নিতে হয়। এরপর তেঁতুলের বীজ সেদ্ধ করে খোসা ছাড়িয়ে সারারাত ভিজিয়ে আঠা তৈরী করে তার সাথে খড়িমাটি মিশিয়ে মুখোশের ওপর বার বার লাগিয়ে মুখোশের রঙ সাদা করা হয়। এরপর বিভিন্ন মূর্তিতে পৃথক পৃথক রঙ লাগিয়ে মুখোশের বিভিন্ন অংশ এঁকে সবশেষে চোখের মণি এঁকে রঙের কাজ শেষ করা হয়। এরপর মুখোশের কাঠামোর কাজ শুরু করা হয়। প্রথমে তার দিয়ে বাইরের কাঠামো তৈরী করে পুঁতি, মালা, কানপাশা, কলগা, পালক প্রভৃতি লাগিয়ে কাঠামোর সাজসজ্জা সম্পন্ন করা হয়। মুখোশ তৈরী হয়ে গেলে লোহার রড গরম করে চোখের ফুটো তৈরি করা হয় এবং কানের পাশে দুইটি ফুটো করে তাতে দড়ি বেঁধে দেওয়া হয়, যার সাহায্যে নর্তক মুখোশটি মুখের সাথে বেঁধে নিতে পারেন। এরপর মুখোশে সাবুর মিশ্রণ লাগিয়ে, রৌদ্রে শুকিয়ে বার্ণিশ লাগিয়ে উজ্জ্বল করে তোলা হয়।" Post By-Subrata Das
আজকে আমি নিয়ে চললাম সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত " হীরক রাজার দেশে".. জয়চন্ডী পাহাড়।। ২৩ সে ডিসেম্বর ২০১৭ শনিবার আমি ও বন্ধু সমীর পন্ডিত বেড়িয়ে পড়লাম জয়চন্ডী মায়ের দর্শন করতে।। আগের রাতটা আসানসোল স্টেশনের কাছে একটা হোটেলে কাটিয়ে দিলাম।। পরেরদিন ভোরে স্নান ইত্যাদি করে বেরিয়ে পড়লাম জয়চন্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্য।। সকাল ৮:১৫ এর টাটানগর প্যাসেঞ্জার ধরে চলে এলাম জয়চন্ডী পাহাড় রেলওয়ে স্টেশন।। সময় লাগলো একঘন্টার মত।। তারপর স্টেশনের কাছে থেকে অটো ধরে সরাসরি চলে এলাম জয়চন্ডী পাহাড়ের নিচে।। পাহাড়ে ওঠার মুখে একটা অর্ধচন্দ্রাকৃতি তোরণ আছে।। সেই তোরণের লেখা আছে " শ্রী জয়চন্ডী মাতা ও বজরংবলীজির মন্দির"।। তারপর সামান্য চা, লিট্টি খেয়ে চললাম মায়ের উদ্দেশ্যে।। প্রায় ৪০০ এর মতো সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলাম।। প্রথমে চোখে পড়ল একটি গোলাকৃতি ধ্বংসপ্রাপ্ত দূর্গ।। তার কিছু উপরে শ্রী শ্রী বজরংবলীজির একচূড়া মন্দির।। গর্ভগৃহে রয়েছ অপুর্ব শ্বেতপাথরের নির্মিত গদা ও গন্দমাদন পর্বতধারী ছোট্ট হনুমানজির মুর্তি।। তার খানিকটা উপরে শ্রী শ্রী জয়চন্ডী মায়ের পঞ্চরত্ন মন্দির।। গর্ভগৃহে রয়েছে শ্বেতপাথরের নির্মিত অষ্টভুজা, সিংহবাহিনী, রক্তবস্ত্র পরিহিতা, সালাংকারা, শ্বেতসুভ্রা মা জয়চন্ডী দেবী।। মায়ের আটটি হাতে রয়েছে শঙ্খ, চক্র, গদা, পদ্ম, খড়্গ, ত্রিশূল, অঙ্কুশ, ও অভয়মুদ্রা।। মায়ের মাথার ও ময়ূরপুচ্ছ সজ্জিত মুকুট।। মায়ের দক্ষিণ দিকে রয়েছে শিবলিঙ্গ ও বাম দিকে রয়েছে শালগ্রাম শিলা।। মন্দিরের পাশেই রয়েছে মানতবৃক্ষ।। এখানে ভক্তরা সুতো বেঁধে মানত করে।। এই গাছের নিচে সব ভক্তরা ধুপ, মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে।। তার কাছে রয়েছে তুলসীমঞ্চ ও যজ্ঞকুন্ড।। এইতো গেল মন্দিরের বর্ননা,, এবার আসি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কথায় যা এককথায় অসাধারণ ও অপুর্ব।। কয়েকটি বাড়ি বাদ দিলে সারাদিক ফাঁকা ধু ধু মাঠ ও চাষের জমি।। পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখা যায় জয়চন্ডী পাহাড় রেলওয়ে স্টেশন।। ট্রেন যখন কু ঝিক ঝিক করে ছুটে যায়, সেই দৃশ্য মনকে নিয়ে যায় অজানা এক দেশ।। ডিসেম্বরের ঠান্ডা বাতাস মাঝে মাঝে কাঁপুনি দিয়ে যাচ্ছে।। পাহাড়ের অন্য একটি অংশে রক ক্লাইম্বিং এর প্রশিক্ষণ চলছে, এছাড়াও পাহাড়ের পাদদেশ খোলা বিস্তৃত ফাঁকা মাঠে পিকনিক চলছে।। পাহাড়ের নিচে কিছু অস্থায়ী চা, জলখাবারের দোকান আছে।। পাহাড়ের নিচে একটা সুন্দর জলাশয় আছে।। পাহাড়ের উপর থেকে নিচে নামতে মন চায় না।। ফটোগ্রাফি করা যাদের নেশা,, এই পাহাড় তাদের কাছে আদর্শ স্পষ্ট।। মায়ের চরণ ও প্রকৃতির কোল ছেড়ে যাওয়ার ইচ্ছা তো নেই,, তাও বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে নীচে নামার মনস্থির করলাম।। মন্দিরের পাশে কিছু স্থানীয় লোকেরা ঝালমুড়ি, আলু কাবলি, জল, ইত্যাদি বিক্রি করছেন।। একটু টিফিন করে নিলাম।। এটা হলো কিছুটা আরো সময় কাটানোর অজুহাত।। সর্বশেষ মায়ের মন্দির প্রদক্ষিণ করে মাকে আরো একবার দর্শন করে মায়ের আশীর্বাদ ও অনুমতি নিয়ে নীচে নামলাম।। তার আগে বজরংবলীজির মন্দিরে গিয়েও দেখা করে এলাম হনুমান দাদার সাথে।। এটাই স্বর্গ।। আসার সময় মনটা উদাস হয়ে গেছিলো।। হাওড়া, শালিমার স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে আদ্রা জংশন রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়চন্ডী পাহাড়ের দুরত্ব প্রায় পাঁচ কিলোমিটার।। জয়চন্ডী পাহাড় রেলওয়ে স্টেশন থেকে জয়চন্ডী পাহাড়ের দুরত্ব প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার।। বাসে করে আসলে নামতে হবে রঘুনাথপুর।। তারপর অটোরিক্সা ধরে জয়চন্ডী পাহাড়ের পাদদেশ আসা যাবে।। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের পর্যটন দপ্তর এখানে হলিডে রিসোর্ট খুলেছে।। এছাড়াও আদ্রা ও রঘুনাথপুরে কিছু মধ্যম মানের হোটেল ও লজ আছে।। জয়চন্ডী পাহাড়,, নন্দুয়াড়া গ্রাম,, রঘুনাথপুর সাব-ডিভিশন,, পুরুলিয়া,, পশ্চিমবঙ্গ।। Post By-Anupam Chakraborty
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |