"ছুটির আশ্রম " সাল টা সম্ভবত 1860 হবে, মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ প্রখর রোদে বোলপুরে যাচ্ছিলেন,ছাতিম গাছের নিচে বিশ্রাম নিচ্ছিলেন,সামনের বিস্তৃত খাঁ খাঁ মাঠ দেখে তিনি ঠিক কি ভেবেছিলেন তা আমাদের জানা নেই। এরপর যা করেছিলেন, তা আমাদের সবার জানা। রবীন্দ্রনাথ পিতার অসমাপ্ত কাজ কে সমাপ্ত করেন।দেবেন্দ্রনাথ যে শান্তির নিকেতন তৈরির কাজ শুরু করেন, রবীন্দ্রনাথ তাকে তপোবনের আকার দেন। এ একান্তই ব্যক্তিগত উপলব্ধি, কোনো ভ্রমণ কাহিনী নয়, বর্ষায় অপরুপা শান্তিনিকেতনে হঠাৎ করেই যাওয়া আমাদের। প্রকৃতি এখানে উদার হাতে বর্ষা কে আহ্বান জানায়,দৃপ্ত ভঙ্গিতে বরন করে নেয়। গ্রহণ করা তোমার কাজ। কোপাই, খোয়াই, সোনাঝুরি,শ্রীনিকেতন,পাঠভবন, উপাসনা গৃহ,ছাতিমতলা,আম্রকুঞ্জ, আশ্রম বিদ্যালয়, ভুবনডাঙা, রতনপল্লি, সাঁওতালি গ্রাম এগুলো শান্তিনিকেতনের প্রাণভোমরা। ওহ্ ভুলে গেছি কঙকালিতলা (দেবীর একান্ন পিঠের একটি)সেও এই তালিকায় আছে। দীর্ঘ ইউক্যালিপ্টাস গাছের নিচে প্রতি শনিবার খোয়াই এর হাট এখন অন্যতম আকর্ষণ।যতদূর জানি এর নিয়ন্ত্রণ এখন পর্যন্ত সাঁওতাল সম্প্রদায়ের হাতেই।বাউলের গান, সাঁওতালি নাচ, মাদল,একতারা, খোল করতাল,ছিনাথ বহুরুপীদের আনাগোনা, হরেক রকম পসরার বিকিকিনি, লালমাটির মাঝে বসে দরদাম- -"হাট বসেছে শুক্রবারে" মনে করাবে । শ্রীনিকেতন- পল্লি উন্নয়ন সমিতি বা গ্রামীণ স্বনির্ভর প্রকল্প, কবিগুরুর স্বপ্নের প্রকল্প। সম্ভবত 1921এ কবি আমেরিকা গিয়ে এলম্ হাস্ট এর সঙ্গে পরিচিত হন। এই ইংরেজ যুবক কবির কাজে যুক্ত হন। সুরুল গ্রাম কে কেন্দ্র করে এই প্রকল্প শুরু হয়, পরে সুরুল কৃষি সমিতির নাম পাল্টে ' শ্রী নিকেতন গ্রামোন্নয়ন সমিতি ' করা হয়। এখানেই গড়ে ওঠা " আমার কুঠি " স্থানীয় গ্রামীণ হস্ত শিল্পের অভূতপূর্ব নিদর্শন। 1927 এ বিশ্ব ভারতী সমবায় কেন্দ্রীয় ব্যঙ্ক গড়ে ওঠায় শ্রীনিকেতন নিজের ছন্দে এগিয়ে চলে। কবির মূল ভাবনা গ্রামবাসীরা যাতে নিজেরাই নিজেদের সমবেত চেষ্টায় আত্মনিভর্রশীল হতে পারে, সফল হয়। শান্তিনিকেতন আসলে অনুভবের জায়গা, আমার লেখার শিরোনাম দিয়েছি- "ছুটির আশ্রম "। ছুটি আসলে কবি পত্নী মৃণালিনী দেবীর আদরের নাম, যে নামে কবি ওনাকে ডাকতেন।মিউজিয়ামে কয়েকটি ছবি ছাড়া ওনাকে আলাদা করে খুঁজে বের করা অসম্ভব। কিন্তু সত্যি কি তাই ? আশ্রম বিদ্যালয় তৈরীর প্রথম দিন থেকেই কবির পাশে ছিলেন তাঁর আদরের ছুটি। ভাবতে অবাক লাগে জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির সুখের জীবন ছেড়ে পাঁচটি নাবালক সন্তানের জননী চলে এসেছেন শান্তিনিকেতনের রুক্ষ পরিবেশে, শুধুমাত্র স্বামীর স্বপ্ন কে সফলভাবে সম্পন্ন করতে।খুলে দিয়েছেন গায়ের সব গয়না, বিদ্যালয়ের ব্রহ্মচর্যাশ্রমের তিনি দেখাশোনা করতেন। বাবা মা ছেড়ে আসা ছোট ছোট শিশুরা মায়ের ভালোবাসা পেতো কবির ' ছুটির ' কাছে । সহধর্মিনী বোধহয় একেই বলে। বিদ্যালয় তৈরীর এগারো মাস পরেই তিনি জীবন থেকে ছুটি নেন্। হলুদ সাদা ইউনিফর্ম পরা বাচছা গুলোকে দেখতে দেখতে তাঁর কথা মনে আসতে বাধ্য ।আরও কিছু দিন যদি তিনি থাকতেন আশ্রম পরিকল্পনা আরও হয়তো সার্থক হোতো ।কবি নিজেই বলেছেন, " আমি তাদের সব দিতে পারি মাতৃ সেনহ তো দিতে পারি না " আসলে কবির "ছুটি" মিশে আছেন ছাতিম, পলাস,বকুল,চাঁপা আরও নাম না জানা আশ্রম বিদ্যালয়ের অগণিত ফুলের সুরভির মধ্যে,যাকে দেখা যায় না, কিন্তু সপর্শ করা যায়, অনুভব করা যায়,ভালোলাগা ও ভালোবাসায় মন ভরে ওঠে। কবি নিজেই এক জায়গায় লিখেছেন ' মহাপুরুষের ইতিহাস তাঁর বাইরের কাজে স্থায়ী হয়, আর মহৎ নারীর ইতিহাস তাঁর স্বামীর কাজে স্থায়ী হয়, এবং সেখানে তাঁর নাম উললেখ মাত্র থাকেনা।' কবির "ছুটির আশ্রম "তারই প্রতিফলন ।।। Post By:- Krishna Deb Paul
0 Comments
শিয়ালদহ থেকে ৫.১২র নামখানা লোকাল এ চড়ে বসলাম. গন্তব্য? না এখন বলবো না| আড্ডা, গল্প আর টুকটাক মুখ চালাতে চালাতে কখন যে ৩ঘন্টা কেটে গেল টের ই পাইনি. ৮.০৫ নাগাদ পৌছলাম নামখানা. সুন্দর সাজানো ছোট্ট ষ্টেশন| ষ্টেশনের বাইরে থেকে মোটর ভ্যান করে পৌছলাম ফেরিঘাট| বোটে করে পেরিয়ে গেলাম হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী| ভাবছেন বকখালি চলেছি? ধীরে বন্ধু ধীরে| চমক এখন ও অনেক বাকি| নদী পেরিয়ে টোটো নিয়ে গেলাম নামখানা বাস স্ট্যান্ড| সুরজিৎ আগে থেকেই গাড়ী বলে রেখেছিল সেখানে| গ্রাম বাংলার মধ্যে দিয়ে ঝকঝকে পিচ ঢালা পথে মিনিট ৪০এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম চিনাই নদীর ধারে দুর্গাপুর খেয়াঘাটে| চিনাই, কি মিষ্টি নাম না? ফেরিঘাটের পরিবেশটাও মনোরম| জোয়ারের জল ঢুকে এসেছে অনেকটা| দুপাশের সবুজ ম্যানগ্রোভগুলো জলে অর্ধেক ডুবে| মাঝে লাল ইটের পথ| কিন্তু থামলে তো চলবে না| সামনে অজানার হাতছানি| অতএব চরৈবেতি| চিনাই কে অতিক্রম করে বাগডাঙ্গা ফেরিঘাটে নেমে আবার চড়ে বসলাম টোটোতে| একটু এগোতেই অবাককান্ড| নজর করলে একটু দূরে সমুদ্রের ঢেউ চোখে পরছে না? হ্যা তাই তো| জোয়ারের জল ঢুকে পরেছে গ্রামে| কোথাও কোথাও গাড়ী যাবার ঢালাই করা রাস্তার উপরদিয়ে বয়ে চলেছে সেই জল| আর অদ্ভুতভাবে প্রকৃতির এই খেলায় অভ্যস্ত মানব জীবন বয়ে চলেছে তার আপন নিয়মে| ভয়ঙ্কর সুন্দর সে দৃশ্য| নদীর ভাঙ্গন আর আয়েলার দান এটা| জল আর জীবনের এই খেলা দেখতে দেখতে মিনিট ৩০শের মধ্যে পৌঁছে গেলাম এক স্বর্গরাজ্যে| সবাই যখন থাকার জায়গা দেখতে ব্যস্ত, আমি তখন কোনো রকমে napsack টা নামিয়ে রেখে দলের বাকিদের উপর টেন্ট দেখার দায়িত্ব দিয়ে এক ছুটে চলে গেলাম অতল জলের আহ্বানে| যা দেখলাম তা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা আমার ধৃষ্টতা মাত্র| আমাদের থাকার Tent এর সীমানা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু জলরাশি| সামনে একসারি বাবলা গাছ| পিছনে ঝাউয়ের বন| বাবলা গাছের তলায় বাঁশের বেদী| সেখানে বসতেই পায়ের তলায় ছলাৎছল জলের স্পর্শ| স্হানীয় এক মহিলা জাল টেনে টেনে মীন ধরছেন| একটি ছোটো মেয়ে স্কুল পালিয়ে আপন মনে ঢেউ এর সাথে খেলা করছে| একটু দূরে জলে ভাসছে কয়েকটা জেলে নৌকা| সামনে বামদিকে দেখা যাচ্ছে জম্বুদ্বীপ| আরো বামে গেলে হেনরী আইল্যান্ড, দূরে ডানদিকে দেখা যাচ্ছে সাগরদ্বীপ| তাদের মাঝে ঝাউ আর বাবলা গাছে ঘেরা, ঈশ্বরের নিজের হাতে আঁকা এই দ্বীপের নাম? “মৌসুনি”| জোয়ার চলছে, তাই আমাদের এখন জলে নামা বারণ| খানিক বাদে জল একটু নামতেই সবাই এক ছুটে জলে| শ্রী আর ঋষি, আামাদের দুই খুদে সদস্য বালি খুঁড়ে পুকুর বানাচ্ছে| জুটে গেল স্হানীয় কচিকাঁচার দল| আঁজলা করে সাগরের জল এনে তারা ভরে দিচ্ছে বালির পুকুর| শহর আর গ্রামের শৈশব আজ মিলেমিশে একাকার| ঘন্টা দুয়েক জলে দাপিয়ে যখন উঠলাম তখন পেটে ছুঁচোদের ভারী উৎপাত| খাবার তৈরীই ছিল| গাছতলায় প্রকৃতির মাঝে বসে, ধোঁওয়া ওঠা লাল চালের ভাত, ডাল, আলুভাজা, পটল-চিংড়ি, স্হানীয় পুকুরের মাছের ঝোল আর কাঁচা আমের চাটনি, উফ্ যেন অমৃত! জঠরানল স্তিমিত হলে, পথশ্রমে ক্লান্ত সবাই যখন দিবা নিদ্রায় মগ্ন অতি উৎসাহী আমি বেরিয়ে পরলাম পাড়া বেড়াতে| প্রথমে বলি আমরা যেখানে আছি তার কথা| আমাদের টেন্ট গুলো ঘিরে রেখেছে ছোট বড় নিমগাছ| পাশে বিশাল বাবলা আর ঝাউবন| নানারকম পাখীর ডাক ভেসে আসছে| বেনেবৌ, কোকিল, কাঠঠোকরা, হাঁড়িচাচা, দোয়েল, পাপিয়া আরো কত কি| উড়ে বেড়াচ্ছে নানা রঙের প্রজাপতি| জেলেরা তাদের জাল সারিয়ে নিচ্ছে| মাছ ধরার মরশুম সামনে| জল এখন অনেক দূরে সরে গেছে| রুপালী বালির সৈকত দেখা যাচ্ছে| ফণিমনসসা গাছে হলুদ ফুল ফুটেছে| খানিক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমিও নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম প্রকৃতির মাঝে আশ্রয় নিলাম টেন্টের বাইরে নিমগাছে বাঁধা হ্যামক এ| পাখীদের গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি টেরই পাইনি| ঘুম ভাঙলো সুস্মিতার ডাকে. আইভিদি sunset দেখতে যাবে না? সবাইমিলে একছুটে গেলাম বীচে| জল তখন আরো পিছিয়ে গেছে| বিস্তীর্ণ সৈকতে আমরা ৯জন ছাড়া জনমনিষ্যি নেই| একটু এগোতেই ৪টি সারমেয় আমাদের সঙ্গী হলো| এ যেন আমরা চলেছি মহাপ্রস্হানের পথে| জলে এখন অস্তগামী সূর্যের রঙের খেলা| কনে দেখা আলোতে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে মোহময়ী| আমরাও রাঙিয়ে নিলাম নিজেদের আকাশের অস্তরাগে আর সাক্ষী হলাম এক অপূর্ব সূর্যাস্তের| একটু পরেই ভাস্বতী বললো মেঘের পাশ দিয়ে ওটা কি উঁকি মারছে? একফালি চাঁদ না! তাই তো! ঈদের চাঁদ! কাল তো ঈদ. ঈদলফিতর| পরদিন আজানের শব্দ আর পাখীর কলতানে ঘুম ভেঙে গেল| চৈতি, মৌসুমিদি আর আমি ঝাউবন আর গ্রামের মধ্যে ঘুরে ঘুরে মানুষ আর পাখীর সঙ্গে কিছু ভাব জমালাম| আজ ঈদ| গ্রামে উৎসবের আমেজ| আমাদের তারা দাওয়াৎ দিলেন| কিন্তু উপায় নেই| প্রাতরাশ সেরে একটু পরেই বেরিয়ে পড়তে হবে| অনেকটা পথ ফিরতে হবে তো আমাদের| তাই আাবার আসব কথা দিয়ে ফিরে এলাম টেন্ট এ| আসতে তো হবেই আবার| এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝে একদিনে কি মন ভরে? সে তো বারবার ই হারিয়ে যেতে চায় ওই ঝাউবন আর জলের হাতছানিতে| Post By:- Ivy Majumdar
"হাওয়া বদল চাই যাও পশ্চিমে -" দেওঘর :-# [ ২ খণ্ড ] তপোবন - এ যাওয়ার রাস্তায় চলেছি এবার । প্রায় ২০ কিমি পথ অতিক্রম করে এলাম পাহাড়ের পাদদেশ এ , আকাশ ঝলমলে ! হিন্দু পূণ্যার্থী দের আনাগোনা এখানে বরাবরই থাকে তায় শ্রাবন মাস , ফিরতি পথে বাবাদর্শন এর সাথে "রাম,সীতা, লক্ষণ ,বাল্মিকী মুনির " লোককাহিনি বিজড়িত এই পাহাড়ে ঢুঁ মেরে যান সবাই ।পাহাড়ে মন্দির ও গুহা আছে। এখানে কালোমুখো হনুমানের আধিক্য বেশি । এখানকার ইতিহাস টা সংক্ষেপে বলি - রাবন লঙ্কায় শিবলিঙ্গ নিয়ে যাওয়ার সময় এইখানে ধ্যানে বসেন । শৈব রাবন এর তপস্যা ভঙ্গের জন্য দেবতারা পবনপুত্রের কাছে অনুরোধ করে , হনুমান তাঁর গদার ঘায়ে ধরিত্রী কাঁপিয়ে দেয় । রাবনের ধ্যান ভঙ্গ হয়ে যায় ! এই কাহিনী শুনে রাম ও সীতা ১৪ বছর বনবাসের শেষে এই স্থানে এসেছিলেন , সীতা মাতা রাবনের ধ্যানভঙ্গের প্রমান চাইলে হনুমান একটি শিলাতে দাগ দেন , লক্ষণভাই ঐই পাথরটি সমান ভাবে কেটে ফেলেন এবং তার মধ্যে হনুমানের মূর্তি দেখতে পান ,রাম ও সীতা মা খুশি হয়ে ফিরে যান গয়ার পথে এবং দশরথের পিন্ড দান করেন ।সীতা মা এর তপভূমি ও বলাহয় , বাল্মিকী মুনি ও তপস্যা করত এই পাহাড়ে। আমরা নিচের দোকানে জলযোগ করে উঠে পড়লাম সিঁড়িবেঁয়ে । অনিচ্ছাকৃত একটি গাইড ঝুলে পড়ল গলায় , অনুরোধ ফেললাম না দুটো কারনে - ১>ফটো তুলে দেবে আমাদের ২ > এই ভিড়ে ঐরা তাড়াতাড়ি দর্শন করিয়ে সঠিক পথে নিয়ে যাবে , লাইন দিতে হবেনা । চারিদিকের অপরূপ নৈসর্গিকতা সবাইকে মুগ্ধ করেদেবে নিচের মানুষজনকে পিঁপড়ে র মত দেখাচ্ছে ! আর ঐ গাছ পালা রাস্তা ,গাড়ী ও দোকান গুলোকে ছোটবেলার ঝুলনযাত্রার সময় যে গ্রাম বানাতাম ঐ বালি ও সবুজ কাঠের গুড়ো দিয়ে ঠিক সেই রকম লাগছে ! একেকটা পাথর যেন ছোট বলের মত দেখতে লাগছে! তপোবনে ও শিবমন্দির আছে । সিঁড়ি পথের পাকদন্ডি বেঁয়ে উপরে উঠলাম কিছু গুহা ও আছে একে একে দেখে নিলাম। তবে পা সাবধানে ফেলে চলতে হয় ! ফটো তোলার জন্য আদর্শ এক চাতালে এসে ৩৬০° ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলে মন ভালো হতে বাধ্য । অনতিদূরে স্পষ্ট ভাবে #ত্রিকুটপাহাড় “ কে দেখা যাচ্ছে । এগিয়ে চললাম জঙ্গলের পথ ধরে বৌ তো ভয়ে একটা গুহাতে ঢুকলই না , গাইড তার নিজস্ব ভঙ্গিতে ইতিহাস /পুরানের কথা বলে চলেছে যার সার সংক্ষেপ আমি আগেই বর্ণনা করেছি , গরমটা ভালোই লাগছিল তাই গাছের নিচে পাথরের উপর বসে গল্প টা শুনলাম । এবার ঐ চিড় ধরা শিলা টি দর্শন করানোর জন্য এগোলাম । এবার গুহা ততোধিক সংকীর্ন পালিয়ে যাওয়ার পথ নাই । "জয় হনুমান" বলে ঢুকে পড়লাম গুহায় ,আবালবৃদ্ধবনিতা সবাই আগে যাবে , ঠেলা ধাক্কা দিয়ে , যাইহোক দর্শন করে নামলাম নিচে , গাইড কে প্রাপ্য মিটিয়ে নরম পানীয়তে গলা ভিজিয়ে রওনা দিলাম পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দ্যেশে - ত্রিকূট পাহাড়- দেওঘর শহর থেকে ১০ কিমি দূরত্বে দুমকা যাওয়ার পথে অবস্থিত একটি পাহাড়। এটির তিনটি শৃঙ্গ আছে, যা থেকে ত্রিকূট নামটি এসেছে। ধূম্র ধুসর বিরাট ত্রিকূট পাহাড়। হিমালয় এর কাছে এর গড় উচ্চতা কিছুই নয়। কিন্তু বিরাট বলছি এই কারণেই যে যখন পাহাড়ের সামনে দাঁড়ালাম, তখন নিজেকে কত ক্ষুদ্র মনে হল। পাহাড়ের উপরে ঘন জঙ্গলের মধ্যে ত্রিকূটাচল মহাদেবের মন্দির আছে। সবচেয়ে উঁচু শৃঙ্গটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২৪৭০ ফিট ও মাটি থেকে ১৫০০ ফিট উঁচু। দুমকা রোড ধরে কিছুটা যাওয়ার পরই দুর প্রান্তরে ত্রিকূট পাহাড় চোখে পড়ল। দেখে মনে হল কোনও প্রাচীন বৃদ্ধ ঋষি দীর্ঘকাল ধরে তাঁর ধুনির আগুন আগলে বসে আছেন। আর তাঁর ওপারেই যেন অচেনা রাজ্য।তিনটির মধ্যে দুটিতে ট্রেকিং করা যায় ও একটিতে খাড়াইয়ের জন্য হেঁটে ওঠা যায়না। আগের পর্বে বলেছিলাম - দেওঘর শহরটির খুব বেশি পরিবর্তনহয়নি । ঠিকই , তবে দুমকা রেল যোগাযোগ টা হয়েছে ! রাস্তাগুলো ঝাঁ চকচকে , সবথেকে উল্লেখযোগ্য -সোলার পাওয়ার প্ল্যান্ট , যেটা র উৎপন্ন সমস্ত বিদ্যুত ব্যাবহৃত হয় বাবাধাম মন্দিরে ! এই পথেই বাঁদিকে রয়েছে সারিসারি সৌরপ্যানেল । ভালত লাগল তাই উল্লেখ না করে পারলাম না । দুমকা রোড ছেড়ে রাস্তা বাঁ দিকে ঘুরে গেলো। সেই রাস্তা একদম পাহাড়ের সানুদেশ অবধি পৌঁছেছে। তারপরেই সেই রাস্তার গতি রোধ করেছে জঙ্গলে ঢাকা ত্রিকূট পাহাড়। ডানদিকে একটি সিঁড়ী উঠে গেছে কিছুটা, তারপরেই একটি সমতল জায়গা। সেখানে বাবা ত্রিকূটেশ্বর এর মন্দির। আশ্চর্য্য পরিবেশ। শান্ত প্রাচীন সব গাছপালা আগলে রয়েছে চাতাল টাকে। সেখানে দুর্গা মন্দির, গণেশ মন্দির ও আছে। বাবা ত্রিকূটেশ্বর এর মন্দির এর পাশে একটি নল দিয়ে অণর্গল স্বচ্ছ জল নির্গত হয়ে চলেছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে। সেই রকম সুস্বাদু জল খেয়েছি আগেও ।সেই সঙ্গে উপকারিও বটে। ঝাড়খণ্ডের জল-হাওয়া নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। সেই জল পাহাড়ের কোথা থেকে আসছে কে জানে? এই পাহাড় থেকেই কিন্তু ” ময়ূরাক্ষীর “ নদীর উৎপত্তি। পাহাড়ের নিচে এসে রজ্জুপথ এর দিকে এগোলাম ১২৮ /- টাঃ করে একটি টিকিট । চড়ে পড়লাম 4 আসন বিশিষ্ট কেবিনে । প্রথমবার এই রোপওয়ে তে চড়লাম , এর আগে প্রতিবার পায়ে ট্রেক করে উঠেছি । 2006-07 এ বার তিনেক এসেছিলাম। তখন শ্রমিকদের ঘাড়ে করে এই রোপওয়ে তৈরির জিনিস উপরে নিয়ে যেতে দেখতাম । ঐ পথ অনুসরন করেই আমরা বিনা গাইডে উঠতাম এই চূড়ায় ! 1000 ফিট উঠতে গিয়ে দেখতাম 10 জনের দল 4 জনে এসে ঠেকেছে ! এবার তাই অভিজ্ঞতাটা সম্পূর্ণ আলাদা ঝাড়খন্ডের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রের প্রথমবার রোপওয়ে তে প্রিয়জনের সাথে ! ভয় ও এডভেঞ্চার কে সাক্ষী করে দুলতে দুলতে কড়মড় আওয়াজ করতে করতে উঠতে থাকল কেবিন গুলো ।নিচ দিয়ে তখন ঘন জঙ্গলে ঘেরা পাহাড়ের ছোট ছোট চূড়া গুলো ক্রমশঃ ছোট হয়ে যাচ্ছে । খাঁড়াই সর্বোচ্চ চূড়াতে যেতে অসম্ভব ভালো লাগবে ।প্রচুর হনুমান আছে। তাদের জন্য বরাদ্দ ভেজা ছোলা সঙ্গেই ছিল । ১০ মিঃ সব শেষ করেদিল পবনপুত্রেরা! ফিরলাম সেই একই পথে ! ভালোলাগার আবেশ কে সঙ্গে নিয়ে ! ধন্যবাদ ! Post By:- Biltu Aich
লেখার অভ্যেস কোনোদিন ছিল না ....এই গ্রূপে বন্ধুদের পরিবার পরিজন নিয়ে মন্দারমনী ট্রিপ সম্পর্কে লিখে কিছুটা সাহস পেয়েছি..... দীর্ঘ সময়ের কাজের চাপ, স্ট্রেস আর নানা ঝামেলা থেকে মুক্তির সবথেকে ভালো উপায় হচ্ছে ভ্রমণ। যদিও সময় কম। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে পরিকল্পনা করতে থাকি, কোথায় যাওয়া যায়। ভ্রমণ পাগল সজল জানায় পুরুলিয়ার বড়ন্তি যাওয়া যেতে পারে। তবে আমরা সিঙ্গেল যাবো, ফ্যামিলি যাচ্ছে না । বন্ধু মহলে অনেককেই জানানো হয়েছিল কিন্তু কারো কাছে সময় নেই,ঠিক হলো আমরা চারজন যাচ্ছি আমি, সজল, প্রকাশ আর কৌশিক।কিন্তু একটু চিন্তায় পড়লাম যে একা ঘুরতে যাওয়ার ব্যপারে হোম মিনিস্টারের অনুমতি পাওয়াটা কঠিন ব্যপার। বাড়ীতে জানালাম, মেয়ে আর বৌ প্রথমে রাজি নয়, ওদেরকে রেখে যাওয়া চলবে না যাইহোক অনেক বুঝিয়ে রাজি করালাম এই শর্তে পরের ট্রিপে আমরা একসাথে যবো। পরদিন ভোরবেলায় বেড় হতে হবে। একটা ছোট্ট পিঠব্যাগে নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস গুছিয়ে নিলাম। ভোর চারটের সময় ফোন করে সজল জাগিয়ে দিলো। ঘুম থেকে আস্তে আস্তে উঠে রেডি হতে লাগলাম বিনা শব্দে কেননা মেয়ে রাতে ঘুমাতে যাবার আগে বলে রেখেছিলো ভোরবেলায় বেড়নোর সময় ওর ঘুমের কোনো ব্যাঘাত না করা হয় জানি মেয়ে রেগে আছে। এরমধ্যে প্রকাশ আর কৌশিকের একবার করে ফোন রেডি কি না।ঘুরতে যাওয়ার ব্যাপারে সবার মধ্যেই প্রচণ্ড উত্তেজনা। ঠিক 04:55 নাগাদ প্রকাশ নিজের সুইফট ডিজায়ার গাড়ি নিয়ে হাজির। আমি গাড়িতে চড়ে বসলাম, সোজা কৌশিকের বাড়িতে, ওখানে এক কাপ চা খেয়ে ভোর 05:10 নাগাদ আমারা মছলন্দপুর থেকে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।ভোর ভোর যাত্রা শুরু হল । আমাদের এখানে সবাই তখন আধো ঘুমে আচ্ছন্ন। পথে বিরাটি থেকে সজলকে তুলে নিলাম।গন্তব্য বড়ন্তি। যাত্রা শুরু স্কুলে ক্লাস ফাইভ থেকে একসাথে পড়া চার বন্ধু মিলে, ঠিক করলাম এবার “জিন্দেগী না মিলেগী দোবারা”র বাংলা ভার্শন করতেই হবে।কথায় বলে চল্লিশ বছর বয়স নাকি জীবনের দ্বিতীয় অর্ধের শৈশব,তা আমাদের সেই শৈশব এ জাষ্ট পদার্পণ। কোনা এক্সপ্রেস হয়ে দূর্গাপুর এক্সপ্রেস হাইওয়ে দিয়ে শক্তিগড়।পরিকল্পনা ছিলো শক্তিগড়ে ব্রেকফাস্ট করব কিন্তু পরিকল্পনা ভেস্তে যায় কারণ আমাদের কারো তখন ব্রেকফাস্ট করার ইচ্ছা নেই।গাড়ি আসানসোলের দিকে হুহু ছুটতে শুরু করল। গতি ঘণ্টায় একশ,একশ চল্লিশ কিমি। যেহেতু প্রকাশ ড্রাইভ করছে, আমরা নিশ্চিন্ত। এখানে আমরা রাস্তা ভুলে কিছুটা এগিয়ে যাই, আবার ব্রেক করি আমাদের যেতে হবে দুর্গাপুর থেকে আসানসোলের মধ্যে দিয়ে নিয়মতপুর। নিয়মতপুর থেকে বাঁদিকে বেঁকে ডিসেরগড় ব্রীজ পেরিয়ে সোজা বরাকর–পুরুলিয়া রোড ধরতে হবে। এদিকে খিদেতে আমাদের পেট চুঁই চুঁই করছে সবার আর নয় এবার দাড়াও।বরাকর–পুরুলিয়া রোডে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে ঢুকলাম, ডিমটোস্ট ও ঘুগনি খেয়ে পেট শান্ত করে আবার গাড়ি স্টার্ট ।এই রাস্তা ধরে আমাদের মুরাডি যেতে হবে।ভোর 5 টায় বেরিয়েছি মছলন্দপুর থেকে। পথ চিনতে ভরসা গুগল ম্যাপ , আর স্থানীয় মানুষ বরন্তী গ্রামের কাছাকাছি যতই এগোই, ততই মন ভরে যেতে থাকে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে।চারিদিকে পিয়াল,মহুয়া, পলাশ গাছে ভরা,ছোট ছোট পাহাড়, টিলা আর পলাশ ফুল দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম বড়ন্তি ওয়াইল্ডলাইফ নেচার স্টাডি হাট রিসর্টে তখন বেলা 12টা 30 । বুকিং সজল আগে থেকে করে রেখেছিল। (বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ 9830085483,9874887046,9433077951) আমাদের রিসর্টের জায়গাটা বেশ নিরিবিলি অনেকটা খোলামেলা জায়গা নিয়ে তৈরি যেমনটা আমরা চেয়েছিলাম। গেট দিয়ে ঢুকেই গাড়ি রাখার জায়গা ।আশেপাশে আরো কয়েকটা রিসর্ট আছে সেগুলোও বেশ শান্ত পরিবেশের মধ্যেই। ঘরে গিয়ে স্নান সেরে নিলাম, দুপুরের খাবারের অর্ডার আগেই দেয়া ছিল, রিসর্ট কম্পাউন্ডে এক পাশে ডাইনিং রুমে খেতে গেলাম। ভাত,ডাল, বেগুন ভাজা,অসাধারণ আলু পোস্ত, টাটকা রুই মাছ ,পাঁপড়, চাটনি ও মিষ্টি সহযোগে দুপুরের লাঞ্চ সারলাম। রান্নাটা অসাধারণ হয়েছিল,খেয়ে ঘরে এসে একটু বিশ্রাম নিয়ে 3 টা নাগাদ বেরিয়ে পড়লাম লেকের ধারে,গাড়ি দাড় করিয়ে কিছুটা সময় আড্ডা দিয়ে চল্লাম জয়চণ্ডী পাহাড়ের পথে। পথে যেতে দেখলাম রাস্তার পাশেই একটা ছোট্ট হাট বসেছে। গাড়ি দাড় করে হাটে গেলাম চার জন ।এই হাটে চাষিরা নিজেরাই নিজেদের ক্ষেত থেকে সদ্য তুলে এনেছে তরতাজা টাটকা সবজি , আছে দেশি মুরগি সহ নিত্য প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্যাদি , সব জিনিসই টাটকা।গ্রামের মানুষের আনাগোনাই বেশি।বেশ মাটি মাটি একটা গন্ধ আছে এই হাটে। ক্রেতা, বিক্রেতা সবাই সবাইকার চেনাজানা ।ঝুড়িতে পরপর সজনে ডাঁটা, ঢেঁড়স, বাধাকপি,টমেটো,ফুলকপি, বেগুন, বিভিন্ন ধরনের শাক।সব টাটকা সবজি,দেখে মনটা ভরে গেল,আমরা কিছু টাটকা সবজি কেনাকাটা করলাম অনেক কম দাম আমাদের ওখান থেকে। সবজি গুলো গাড়ির ডিকিতে রেখে চল্লাম জয়চণ্ডী পাহাড়ের উদ্দেশ্য (‘হীরকরাজার দেশে’ ছবির কিছু দৃশ্যের শ্যুটিং হয়েছিল এখানেই), জয়চন্ডী পাহাড়ে কিছু সময় কাটিয়ে,জয়চন্ডী মায়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে এগিয়ে চললাম গড় পঞ্চকোট এর পথে।এই সময় হাল্কা বৃষ্টি হওয়াতে, সুন্দর একটা আবহাওয়া পাওয়া গেল।বড় রাস্তায় এসে কিছুটা হাইওয়ে দিয়ে গিয়ে একটি সরু রাস্তা নিলাম। গড় পঞ্চকোট এর পাহাড়ি রাস্তা এঁকে বেঁকে চলেছে, শোভা বাড়িয়েছে দুই ধারের পলাশ। সবুজের ওপর সাদায় লেখা ” পিন্দারে পলাশের বন, পালাব পালাব মন”।আমাদের চার চাকার যান পৌঁছে গেল গড় পঞ্চকোট । সবুজ প্রকৃতির মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমরা,এক দিকে পুরোনো কেল্লা, অন্য দিকে নির্জন পাহাড়। শুনেছি কেল্লা বা গড় স্থাপিত হয়েছিল সিংহ দেও রাজাদের আমলে। অন্য মতে এই কেল্লা আরও অনেক প্রাচীন। সম্ভবত ষোড়শ শতাব্দীতে তৈরি। পুরোনো ভাঙা মন্দিরও আছে কয়েকটা। স্থাপত্যের স্টাইল দেখে মনে হয় নানা রাজার রাজত্বের সাক্ষী গড় পঞ্চকোট। শেষ বিকেলের আভা এসে পড়ছে পাহাড়ের গায়ে, ঠিক সন্ধ্যে নামার মুখে বেরিয়ে পড়া পাঞ্চেত বাঁধের উদ্দেশে । জঙ্গলের বুক চিরে পিচকালো রাস্তা গিয়েছে বেঁকে, শুনশান রাস্তা জনমানবহীন আমাদের গাড়ি যখন পাঞ্চেত ডাম পৌছালো তখন অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। দৈর্ঘ্যে বেশ লম্বা এই বাঁধ, এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত দেখা যায় না। এখান থেকে এবার ফেরার পালা রিসর্টে ফিরে আসার কিছুক্ষন পরেই এসে গেল মুড়ি আর ভেজপকোড়া।এটা রিসর্টে মাথাপিছু দিনপ্রতি Rs.350/- টাকার খাবার প্যাকেজ এর মধ্যেই পরে।আমরা অতিরিক্ত চিকেন পকোড়া অর্ডার করেছিলাম। চার বন্ধুর জমাট আড্ডা। রাজনীতি, খেলাধুলা,ছোটবেলার গল্প কোন কিছুই আর বাদ থাকলো না, আর সঙ্গে অবশ্যই প্রকাশের গলায় গান।চলতে থাকলো দেদার আড্ডা।রিসোর্টটি খালি ছিলো না , ট্যুরিস্টে ভরা ছিলো।আমরা সবার শেষে ডিনার এ বসলাম।গরম গরম রুটির সাথে চিকেন কষা বেশ ভালই লাগলো। সন্ধ্যেবেলা খুব এনজয় করে শুতে শুতে দেরি হয়ে গেল। ভোর থেকে সজল উৎপাত শুরু করলো একবার লাইট অন করে, তো একবার পাখা অফ করে। ভোর পাচটা থেকে ডাকা শুরু করলো সবাইকে,আর শুয়ে থাকা গেলো না, বেরিয়ে পড়লাম আদিবাসীদের গ্রাম ঘুরে আবার লেকের ধারে পৌছালাম।গ্রামের বাচ্চাদের হাতে তৈরি পাতা দিয়ে বানানো ফুল কিনে রিসর্টে ফিরে এলাম। সকালের জলখাবার খেয়ে তৈরী হয়ে একেবারে চেক আউট করে বেরিয়ে পড়লাম। আজ ফেরার পালা। রওনা দিলাম মাইথন ড্যামের দিকে। বরাকর নদীর ওপর এই বাঁধটি তৈরী করা হয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই বাঁধে ১২টি লক গেট তৈরী করা হয়েছে। অসাধারণ সৌন্দর্য্য চারপাশের পাহাড় মাঝে বড় মনোরম পরিবেশ মাইথন লেকের। এর একধারে রয়েছে ঝাড়খন্ড আর একধারে রয়েছে পশ্চিমবাংলা। প্রচুর ট্যুরিস্ট এর জনসমাগম মাইথন লেকের ধারে। এখন থেকে পৌঁছে গেলাম কল্যানেশ্বরী মন্দির। ৫০০ বছরের পুরোনো ইতিহাস এই মন্দিরে। শক্তি রূপে আরাধ্যা দেবী কল্যানেশ্বরী খুবই জাগ্রত হিসেবে খ্যাত।কল্যানেশ্বরী মন্দির থেকে বেরিয়েই রওনা দিলাম বাড়ির পথে। ফিরতি পথ , গাড়িতে করে একইভাবে ফেরা। সব ছবি মোবাইলে তোলা। আমি লেখক নই। যা মনে এলো লিখলাম । Post By:- Tapas Mitra
নানা কারণে জীবনটা যখন একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে।সেই ১০টা ৫টা অফিস,না হয় অন্য কোন কর্মক্ষেত্রে ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলতে চলতে আপনি যখন চরম ভাবে বিরক্ত।মনটা যখন বলবে না এরকম ভাবে আর চলছে না! কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে,আমি বলি কি চলে যান পৃথিবীর সেরা ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি একেবারেই ঠোকবেন না। একদিন বা দুদিন কাটিয়ে আসুন বাদাবন আর দক্ষিণ রায়ের রাজত্বে।মন আপনার ভালো হয়ে উঠবেই। লঞ্চের পাটাতনে বা চেয়ারে বসে ভেসে পরুন নদীর জলে,বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে করতে নয়ন স্বার্থক করে দেখে নিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল,আর তার জীবনের বৈচিত্র্যকে। আমাদের সুন্দরবন মোট সুন্দরবনের মাত্র ৪২০০ বর্গকিলোমিটার যা মোট সুন্দরবনের ৪০ভাগের মতো,৬০ভাগ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত।১৯৭৩ সালে মূল এলাকাটি ব্রাঘ্য প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়।১৯৮৪ সালের ৪ ঠা মে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়।১৯৮৭সালে ইউনেস্কো বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ অরন্য সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে চিহ্নিত করে। সুন্দরবন আমি অনেক বারই গেছি।কখনো রায়দীঘী থেকে তো কখনো আবার সোনাখালী থেকে,আবার দু এক বার ক্যানিং থেকেও গেছি। দেখিছি কলসদ্বীপ,ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, সজনেখালি,সুধন্যখালি ,পিরখালি গাজিখালি,মোল্লাখালি,দোবাকি,বুড়ির ডাবরী , নেতা ধোপানির ঘাট,পঞ্চমুখানী প্রভৃতি জায়গায়। থেকেছি সজনেখালি পাখিরালয় আর লঞ্চের খোলা ডেকে। দেখেছি এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য পথের বড় বড় নদী আর ভয়ানক সব খাড়ি। সুন্দরবন নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা আমি আগেই "সুন্দরী সুন্দরবন", "দক্ষিণ রায় আছেন"এই কাহিনী গুলিতে ব্যক্ত করেছি। এই নদী পথে অলস ভাবে দেহটাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ টাকা যথা সম্ভব সজাগ রেখে শুধু এপাশে ওপাশে আর দুরে তাকিয়ে থাকুন।মাঝে মাঝে জলের দিকে নজর অবশ্যই রাখবেন,হয়তো বা দেখবেন কোন ডলফিন আপনার লঞ্চের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে কখন ভুস ভুস উঠেছে আবার ডুবছে। দেখে নিন সুন্দরী,গড়ান,গেওয়া,হেতালের বাদাবন। কাদার মধ্যে উঁচু হয়ে থাকা শ্বাসমূল,বড় বড় ঠেস মূল ওয়ালা গাছ,কখনো জোয়ারের জল সব ডুবিয়ে জঙ্গলের গভীরে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে।হেতালের পাতার রঙ আর দক্ষিণ রায়ের গায়ের রঙ একই রকম,সেই হেতাল বনের ভেতরের সরুঢালু পথ যা নদীতে এসে মিশেছে আপনার দৃষ্টি ভ্রম হতেই পারে। ভাটার সময়ই হচ্ছে পশুদের দেখার উপযুক্ত সময়।এই সময় অনেকখানি পার উন্মুক্ত হয়।পশুরা এই সময়ে ঐ উন্মুক্ত প্রান্তরে আসে। তবে ভাটার সময় বিপদও আছে।একবারএইরকম বিপদের সন্মুখীন আমাদেরকে হতে হয়েছিল।কাদার মধ্যে লঞ্চের প্রপেলার ঘুরছিলনা।এককথায় লঞ্চ অনেকক্ষন আটকে পরেছিলো।আহা !সে এক অন্যরকম গা ছমছমে অনুভূতি। দুধারের ঘন জঙ্গল আপনার প্রায় কাছাকাছি তার মাঝে আপনি লঞ্চে,"নট নরন চরন"।আবার কখন জোয়ার আসবে তার অপেক্ষায়।কেমন রোমাঞ্চকর অনুভূতি লাগবে বলুন তো! ভাটার সময় দেখতে পাবেন বা এক পা এক পা করে এগুচ্ছে বক ও লম্বা ঠোঁট ওয়ালা সারস মাছের আশায়,আর টপাটপ করে মাছ ধরে কপাৎ করে গিলে নিচ্ছে। কাঁকড়ার ইতি উতি ছোটাছুটি আর টুক করে গর্তে ঢুকে যাওয়া।গাছের ডালে বসে আছে নিরাশক্ত ভাবে মাছরাঙা,লক্ষ কিন্তু জলের দিকে। কোনো কোনো সময় ঝপাং করে জলে ড্রাইভ মারছে। আবার কখনও জল না থাকা থকথকে কাদার মধ্যেই হরিণ পা তুলে ওপরের গাছের পাতা খাবার চেষ্টা করছে,বন শুয়োর কি যেন খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছে,লালমুখো বাঁদরের দল সজাগ চোখে জঙ্গলের দিকে নজর রেখে তাড়াতাড়ি জলে কি যেন ধুয়ে নিচ্ছে। নদী পথে দেখা হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ অভিমুখী মালবাহী ট্রলারের। নজরে পেয়ে যেতে পারেন অলস ভাবে রোদে গা এলিয়ে দিয়ে হাঃ করে কোন কুমির হয়তো বা শুয়ে আছে।আপনি হয়তো বা ভাববেন লঞ্চটা আরেকটু কাছে যাক তারপর ছবি তুলবো,আপনি ভুল করলেন ! হঠাৎ আপনাকে কোন সূযোগ না দিয়েই ঝপাং। আমার একবার এইরকম হয়েছিল।একটা হরিণ ফাঁকা জায়গায় জলের ধারে বসেছিলো।ভাবলাম আর একটু লঞ্চটা এগিয়ে যাক তারপর ছবি তুলবো,হলোনা!হরিণটা হঠাৎ করে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে পালালো,অবিশ্বাস্য ভাবে দেখলাম হরিণটা যেখানে বসেছিল তার কাছেই জলটা দারুন ভাবে ঘুলিয়ে উঠলো।দেখে চমকে উঠলাম।একটা কুমির হরিণটাকে তাক করেছিল।হরিণটা তা বুঝতে পেরেই লাফ দিয়ে উঠে পালালো। আফশোষ রয়ে গেলো কোন ছবিই নিতে পারলাম না। অনেকে তো আবার অন্য কাউকে দেখানোর জন্য ডাকে ,তাহলে তো হলোই,জঙ্গলে সবাইকেই চোখ কান সজাগ রাখতে নজর রাখতে হবে ডায়ে বাঁয়ে দূরে ।আপনার সারেঙ্গ যেই লঞ্চের এক্সিলেটার কমাবে তখনই বুঝতে হবে তার নজরে কিছু পরেছে। আপনি যদি সৌভাগ্যবান হন তাহলে সাক্ষাত হতে পারে #দক্ষিন #রায়ের সঙ্গেও।ভয়ানক সাহসী ও ধূর্ত এই জঙ্গলের রাজা। হয়তো আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না,সে কিন্তু সব সময় আপনাকে নজরে রেখে চলেছে। ভাবতেই পারবেন না যে নদীর দুকূল দেখা যায় না,অবলিলায় ক্রমে কিভাবে এরা সাঁতরে এপার ওপার করে খাবারের সন্ধানে। কিভাবে নৌকা থেকে পাশে ঘুমন্ত মানুষকে না জানিয়ে আরেকজনকে মুখে তুলে নিয়ে চলে যায় একদম নিঃশব্দে। নিদারুণ এক ভয় ভীতির পরিবেশে মাঝিরা নৌকায় রাতে ঘুমায় ভাবুন তো!কিছু কিছু দ্বীপে নদীর চরে লাঠির ডগায় ছেঁড়া কাপড় উড়তে দেখতে পাবেন।বুঝবেন ওখানে কোনো হতভাগ্যের জীবন দক্ষিনরায়ের দক্ষিনায় গেছে। ঐ ভয়ঙ্কর জায়গায় আপনার দেখা হবে জীবন জীবিকার সন্ধানে কাঠুরিয়াদের নৌকার সাথে। দেখা হতে পারে মধূ সংগ্রহকারী মউলেদের নৌকার সাথে। ছিপ নৌকা বা বড় নৌকার জেলেদের সাথেও আপনার দেখা হবে। কিনে নিতেপারেন ট্যাঙরাপাবদা,পাটসে,ভাঙ্গনের মতো সুস্বাদু মাছ। সুন্দরবনের মহিলারা হাঙ্গর,কামট,কুমির ভরা ঐ জলের মধ্যে জীবনকে বাজি রেখে কিভাবে চিংড়ি মাছের মীন ধরে বেড়াচ্ছে তাও আপনার নজরে পরবে। তাৎক্ষনিক ভাবেএই সকল মানুষের জীবন জীবিকা সম্পর্কে আপনার শ্রদ্ধা,ভালোবাসা আস্তে বাধ্য। রায়মঙ্গল,বিদ্যাধরী,মাতলা,স্বরস্বতী,ও অনেক নাম না জানা এই নদী গুলিতে বিশেষ করে পঞ্চমুখানীতে যখন আপনার ছোট্ট লঞ্চটা মোচার খোলায় মতো উথাল পাথাল করবে হয় আপনি হয় ভয় পাবেন নাহলে এক অদ্ভুত অনুভূতি আপনার হবেই হবে! এক এক করে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ারে যখন আপনি উঠবেন,সামনের ফাঁকা জায়গা থেকে আপনি চোখ সরাতে পারবেনা।মনে হবে এক্ষুনি হয়তো বা জঙ্গলের রাজা ও রাস্তা দিয়ে হেঁটে একদিক থেকে অন্য দিকে যাবে। এমনি করেই এক এক বনবিবির থান সহ যখন সব কটি জায়গা দেখে আপনার লঞ্চ যখন সন্ধ্যায় সজনেখালির মাঝ নদীতে নৌঙ্গর করবে তখন সেখান থেকে দুধারের জঙ্গলকে দুর থেকে অনুভব করা আর লঞ্চের সাথে নদীর জলের ধাক্কার ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ শুনতে শুনতে নিজেদের মধ্যেও কি দেখলাম তাই নিয়ে কথা বলা বা গানের আসর বসিয়ে সঙ্গে অবশ্যই চা টিফিন সহযোগে দিনটা বা দিনগুলো কাটলো বল তো!আর সে যদি হয় জোৎস্না আলোকিত চাঁদনী রাত তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এই ভ্রমনের সাথে আপনি গোসাবার বিধবাপল্লী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত হ্যামিলটন সাহেবের বাংলো কেও অন্তভূর্ক্ত করতে পারেন। এক অসাধারণ ভ্রমণ আপনার হাতের কাছেই। সবই আপনার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে। Post By:- Chandan Dutta Roy
রম্ভা চিলকা অভিযান প্রকৃতির সৃষ্ট এশিয়ার বৃহত্তম হ্রদ (লেগুন) হলো চিলকা । পুরী, গঞ্জাম, খুরদা জেলাকে ছুঁয়ে এই চিলকার বিস্তৃতি । চিলকার মূল তিনটি গেটওয়ে । ১) পুরীর সাতপাড়া (ডলফিনের জন্য বিখ্যাত) ২) বালুগাঁওয়ের বড়কুল ৩) বালুগাঁওয়ের রম্ভা বালুগাঁও আর ব্রহ্মপুর স্টেশনের মাঝে রম্ভার অবস্থান । বালুগাঁও স্টেশন থেকে ৩৫ কিমি দূরে রম্ভা জেটিঘাট এবং পান্থনিবাস । বালুগাঁও স্টেশন থেকে ৪০০/৫০০ টাকায় অটোতে ৩৫ কিমি দূরে রম্ভাতে পৌঁছানো যায় । থাকার জন্য ওড়িশা OTDC পান্থনিবাস । রম্ভার জেটিঘাটের পাশে সাজানো বাগানের মধ্যে এক অপরূপ সুন্দর থাকার ঠিকানা । ঘরের রুম থেকেই চিলকার সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায় । সকালের চা ব্রেকফাস্ট ফ্রী । অনলাইন বুকিংয়ের জন্য OTDC ওয়েবসাইট এবং অফলাইনে বুকিংয়ের জন্য কলকাতা লেনিন সরনীতে উৎকল ভবন অফিসে বুক করা যায় । সিনিয়র সিটিজেন, শারীরিক প্রতিবন্ধীদের জন্য দশ শতাংশ ছাড় পাওয়া যায় । চেক ইন/আউট টাইম দুপুর ১২ টা । রম্ভা পান্থনিবাসের খাওয়াদাওয়া খুবই সুন্দর । এরপর চিলকা ভ্রমণ । রম্ভাতে চিলকার বুকে বিভিন্ন আইল্যান্ড আছে। ১) ব্রেকফাস্ট আইল্যান্ড (৩ কিমি), ২) ঘন্টাশিলা হিল আইল্যান্ড (২ কিমি), ৩) বার্ডস (ডাইনোসরস পার্ক) আইল্যান্ড (৫ কিমি), ৪) হানিমুন আইল্যান্ড (৮ কিমি), ৫) সানাকুডা আইল্যান্ড (৭ কিমি) রম্ভা পান্থনিবাস থেকে বিভিন্ন প্যাকেজে পাঁচ সিটার (স্পীড বোট) বা দশ সিটার (মোটর বোট) ভাড়া নিয়ে ঘন্টা তিনেকের মধ্যে এই আইল্যান্ড গুলো ঘুরে নেওয়া যায় । রম্ভা পান্থ নিবাসের বোটিংয়ের তিন রকম প্যাকেজ আছে । পাঁচটা আইল্যান্ডের জন্য খরচ ২৭৩০ টাকা প্রথম তিনটি আইল্যান্ডে যাওয়ার খরচ ১৭০০ টাকা এবং প্রথম দুটো আইল্যান্ড ঘোরার খরচ ১০০০ টাকা । এছাড়াও প্রাইভেট অনেক নৌকা আছে জেটিঘাটে । পুরী, গোপালপুর, ডারিংবাডি ট্রিপের সাথে একদিন এক্সটা যোগ করে নেওয়া যায় রম্ভা ট্রিপকে । রম্ভা থেকে ঘুরে নেওয়া যায় ৫১ পীঠের এক পীঠ তারাতরিনী মন্দির, তামপাড়া লেক হয়ে গোপালপুর কিম্বা বড়কুল । দক্ষিণে চেন্নাইগামী সব ট্রেনেই বালুগাঁও স্টেশনে নেমে রম্ভা পৌঁছানো যায় । Post By:- Subhojit Tokdar
প্রথমেই ধন্যবাদ জানাই Facebook এর বিভিন্ন ভ্রমন পিপাসু গ্রুপ কে, কারন এদের থেকেই আমি এই ভ্রমনের জন্য উদ্বুদ্ধ হই। এবং প্রথম আমি আমার ভ্রমন অভিজ্ঞতা লিখছি। "সবুজে ঘেরা ঘাটশীলা" আমি বরাবরই একটু বেশিই ভ্রমন পিপাসু। আর আমার সেই ভ্রমন পিপাসা মেটাতে আবার বেরিয়ে পড়লাম, এবার উদ্দেশ্যে ঘাটশীলা। রাত দুটো তে উঠে তৈরি হয়ে বেরিয়ে লোকাল ট্রেন ধরে সোজা শিয়ালদহ স্টেশন, তারপর একটা Uber নিয়ে হাওড়া, সকালের কলকাতা সত্যিই অপূর্ব , আর বাড়তি পাওনা গঙ্গার মনোরম দৃশ্য । তারপর 12871 Ispat Experess এ চড়ে বসলাম, ভাড়া মাত্র 110 টাকা (2C), পাশের সিটে এক খাঁটি বাঙালি কাকুর সাথে আলাপ হল সত্যিই খুব নিমল আনন্দ উপভোগ করলাম । বাঙালী ছাড়া এটা অসম্ভব, যাই হোক ওনারা ঝাড়গ্রাম এ নামলেন আর আমরা ঘাটশীলায়, তারপর * অনুপ দার * অটো করে সোজা * সুহাসিনী রিসট * (এক কিলোমিটার স্টেশন থেকে )দারুন মনোরম পরিবেশ । অনুপ দা কে নিয়ে একটু পরে আলোচনা করছি। তারপর ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে পড়লাম ঘুরতে, প্রথমেই # বুরুডি ড্যাম # হোটেল থেকে প্রায় 10 কিমি. যাওয়ার পথে একটা কেনেলের উপর দিয়ে যেতে হয়, দেখলাম গ্রামের কিছু দামাল ছেলে প্রায় 10 - 15 ফুট উপরে থেকে জাম্প করছে ওই কেনেলের জলে সত্যিই খুব সাহসী ওরা। তারপর ওখানকার অসাধারণ পরিবেশে, আর কাঠের উনুন এ রান্না করা দুপুরের খাবার গরম গরম ভাত, ডাল, সব্জি, ডিম আর একটু চাটনি দারুন লাগলো, মাত্র 70 টাকায় মন ভরিয়ে দিল। তারপর চললাম প্রায় 7 কিমি দূরে * বাসাডেরা গ্রামে * ওখানে আছে # ধারাগীরি ফলস # (এখানকার মানুষের একমাত্র জীবিকা বনের কাঠ সংগ্রহ করে প্রায় 17-18 কিলোমিটার পাহাড়ী রাস্তা সাইকেল বা পায়ে হেঁটে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে কাঠ সরবরাহ করে।)বলা বাহুল্য, যে সে কাঠ নয় শাল কাঠ কেটে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করে এরা, যেখানে আমাদের শাল কাঠ কিনতে দম বেরিয়ে যায় সত্যি খুব সরল এরা। তারপর অটো থেকে নেমে পাহাড়ের ভিতর দিয়ে প্রায় দুই কিলোমিটার পায়ে হেঁটে গেলাম গন্তব্যে সাথে পথ সঙ্গী # মনোজ সিং # (লোকাল ছেলে, প্রাপ্য - 50 টাকা), তবে নিরাশ করল ধারাগীরি, যাই এগিয়ে চললাম সোজা সুবর্ণরেখা # Sunset Point # তারপর হোটেলে ফিরে পরদিনের প্রস্তুতি শুরু । এবার অনুপ দা (9334306586) কে নিয়ে একটু আলোচনা করি : অসাধারণ মানুষ, কিছু বলার আগেই বুঝে যায়, আর গাড়ি থামিয়ে দেয় ফটো তোলার জন্য, এক মুখ হাসি নিয়ে, এতটুকু বিরক্ত হয় না মানুষ টা , আর উপরি পাওনা সারা রাস্তায় অজস্র অজানা তথ্য দিতে থাকে, সুতরাং ঘাটশীলায় আসলে অনুপ দা (মুশকিল আসান ) কে বাদ দেবেন না, আশা করি খুব ভালো লাগবে। এরপর দ্বিতীয় দিন : একটু দেরি তে ঘুম থেকে উঠে তৈরি হয়ে চা পান করে বেরিয়ে পড়লাম জামশেদপুরের উদ্দেশ্যে, হোটেলের ম্যানেজার # মিত্র দার # ( 09771831877 ) Ertika Car আর সাথে চালক # তুফান ভাই # খুব Polite ব্যবহার আর সাথে দারুন Driving NH - 33 ধরে সোজা জামশেদপুরে, রাস্তার দু’পাশে সাদা কাশ ফুল ভরা, যদিও NH 33 তে কাজ চলার জন্য প্রচন্ড ধুলোতে কিছু টা বিঘ্ন ঘটল, যাই হোক এভাবেই পৌঁছে গেলাম # ডিমনা লেক # তারপর 114 টা সিঁড়ি ভেঙে উপরে উঠলাম ভিউ পয়েন্টে, দারুন দৃশ্য। এরপর চললাম # দলমা পাহাড়ের উদ্দেশ্যে # কাছ থেকে হরিণ দেখলাম আর হাতির গল্প শুনলাম, তারপর হাইওয়ের ধারে # Hotel river view # একদম সুবর্ণরেখার ধারে, দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম । কিন্তু আপসোস! দলমা টপে ওঠা হল না, যাই হোক তারপর # চান্ডিল ড্যাম # ওখানে গিয়ে দেখি বোটিং করা যাবে, দেখেই নেমে পড়লাম 100 টাকায় মাত্র 10 মিনিট, বেশি সময় উপভোগ করতে পারলাম না । এরপর গেলাম Planning City Jamsedpur, কেনে স্টেডিয়াম উল্টো দিকে রুশি মোদী পার্ক # অপূর্ব সুন্দর করে সাজানো, তারপর সবশেষে # জুবিলি পার্ক# হয়ে আবার NH 33 ধরলাম, কিছু দূর এসে অসাধারন একটু চা পান করে, রাতের খাবার প্যাকিং করে নিয়ে সোজা হোটেল চলে আসলাম , শেষ হল দ্বিতীয় দিনের যাত্রা । রাত শেষে ভোর হলো উঠে একটু হোটেলের চারপাশে ঘুরে কিছু ফটোগ্রাফি করলাম, তারপর হোটেলের সামনে এসে হাজির হল অনুপ দা, আবার বেরিয়ে পড়লাম পরিবেশের সুন্দর দৃশ্যের খোঁজে। প্রথমে টিফিন করলাম ইটলি তারপর গেলাম রামকৃষ্ণ মঠ দিয়ে শুরু করলাম যাত্রা, সুন্দর সাজানো গোছানো মনোরম পরিবেশ এবং তার পরে বিভূতি বাবুর # (বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়)বাড়ি, (গৌরীকুঞ্জ) ওখান থেকে হিন্দুস্হান কপার এরিয়া # পার করে নানা গল্প শুনতে শুনতে গেলাম # রাত মোহনা ভিউ পয়েন্ট # দারুন লাগলো অনেক ফোটো তুললাম, তারপর একটা গ্রামের মধ্যে দিয়ে গিয়ে উঠলাম ঝাড়খন্ড স্টেট Highway MDR 172 Road ধরে সোজা সিদ্বেশ্বর পাহাড়, খুব কষ্ট করে উপরে উঠলাম উপর থেকে চারিদিকের ভিউ আর শিব মন্দির দেখে নীচে নামলাম, মাঝে মাঝে একটু বিশ্রাম নিতে হল। অনুপ দা র পরামর্শ অনুযায়ী একটা জলের বোতল সাথে রেখেছিলাম,শুনলাম যে বিভূতি বাবু এখানে বসেই "দৃষ্টিলিপি" লেখা শুরু করেছিল। যাই হোক ওটা শেষ করে এগিয়ে চললাম # যাদুগোডার # দিকে ওখানে মা রুমকি মন্দির# দর্শন করে Resturent Tanduri Night # এ দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম, খুব ভালো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন । এরপর চললাম নারুয়াফরেস্ট# দারুণ স্নিগ বিউটি দুপাশে পাহাড় আর মাঝখানে # (অনুপ দা বলল সবাই কে আনি না এখানে শুধু তোমার ছবি তোলার সখ দেখে আনলাম) মাঝখানে গোটরা নদী # অপূর্ব মনোরম দৃশ্য, সত্যিই প্রকৃতি যেন তার সর্বস্ব উজার করে সাজিয়েছে ঝাড়খন্ড তথা ঘাটশীলা কে । এরপর ফিরে আসলাম # গালুডী ব্যারেজ # দারুণ লাগলো চারিদিকটা, স্থানীয়রা ব্যারেজের উপর থেকে দড়ি ফেলে মাছ ধরছে, এই ব্যারেজ করার উদ্দেশ্যে কেনেলের মাধ্যমে সারা বছর চাষের জমিতে জল সরবরাহ করা । এরপর আসলাম হোটেলে, শেষ হল # ঘাটশীলা ভ্রমন # রাত হয়ে যাবার কারনে ফুলডুকরি টা দেখা হল না। পরদিন সকালে 06.51 AM এর 12814 Steel Experess ধরে সোজা হাওড়া, ভাড়া মাত্র 110 টাকা ( 2C) । আবার শুরু হলো কর্মব্যাস্ততা জীবন। তবে আর ও একবার ঘাটশীলায় যাবার ইচ্ছা রইল । বাড়ি ফেরার পর ফোন আসল অনুপ দার ও মিত্র দার, কথা একটাই "বাড়ি ফিরতে অসুবিধা হয়নি তো ?" এই বাক্যটাতে ইচ্ছা টা আর ও কয়েক গুন বেড়ে গেল। Post By:- Pralay Basu
১৯ তারিখে বেরিয়েছিলাম ৬ জনাতে ৩ টে বাইক নিয়ে,, গন্তব্য - গড়পঞ্চকোট,পাঞ্চেত,মাইথন,,, বাইক ৩ টি যথাক্রমে - Hero honda Karizma, Glamour এবং Honda Hornet,, অনেকেই সংশয়ে ছিলেন আমাদের এই বাইক টুর নিয়ে, আবার অনেকে চিন্তিতও,, কারন এর আগে এতোটা রাস্তা বাইকে আমরা কেউই কোনদিন যাইনি যদিও আমি বা আর একজন বাইকিং খুব ভালোবাসি,, যাই হোক সকাল ৫:৪৫ মিনিটে চন্দননগর হতে আমরা ২ টো বাইকে ৪ জন রওনা দিলাম,, আর দুজন এসেছিলো আগরপাড়া হতে,, তারা অন্য দিক দিয়ে আমাদের সাথে শক্তিগড়ে যুক্ত হয়,, সেখানে হালকা চা খেয়ে সোজা টানটান বাইক ছোটাতে লাগলাম,, মাঝে দু একবার ব্রেক নিয়ে ১০ টার পরে গড়পঞ্চকোট থেকে ৩০ কিমি মতো আগে এক জায়গায় সকালের আহার সারলাম কচুরি আর চানা সহযোগে,, এতক্ষন রাস্তা ছিল হাইরোড আর তারপর আসানসোলের ভির ভাট্টা এলাকা,, এবার যে রাস্তায় এলাম সেটিকে অনেকেই বাইকারদের স্বর্গ বলে থাকেন,, গড়পঞ্চকোটের রাস্তাটা ছিল অসাধারন,, চারিদিকে শাল পলাশের বন,, মাঝে অসাধারন রাস্তা,, গড়পঞ্চকোটে ৩০ মিনিট মতো কাটিয়ে আবার সেই মনোরম পরিবেশের মধ্য দিয়ে সোজা চললাম পাঞ্চেতের দিকে,, পাঞ্চেত ড্যামের উপরে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে ছবি টবি তুলে আবার চললাম মাইথনের দিকে,, শেষের মাইথন ড্যামের আশেপাশে খানিক্ষন আড্ডা মেরে ওখান থেকে আবার হাইরোডের দিকে চলে এলাম,, প্রচুর গরম ছিল সেদিন,, দুপুরে এক জায়গায় স্নান করলাম, ফ্রেশ হলাম,, হয়ে কল্যানেশ্বরী মন্দিরে ডুকে একটু দর্শন করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা,, সত্যি কথা বলতে কি খাওয়া দাওয়া বলতে ওই সকালের কচুরি,, জল,কোল্ড ড্রিনক্স খেয়েছি বেশ কবার তবে দুপুরের খাবার জোটেনি বা টাইম পাইনি বাইকিং করতে করতে,, যাই হোক ২ টোর পরে হাইরোডের উপর দিয়ে আসার সময়ে প্রচণ্ড বৃষ্টি নামল,, রিস্ক না নিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম,, প্রায় ঘন্টাখানেক মতো দাঁড়ানোর পরে আবার রওনা,, শেষে ল্যাংচা ভবনের কাছে দাঁড়ালাম,, পেটে ছুঁচো ডন মারছিল,, পেট ভরে চাউমিন, পকোড়া খেলাম,, ল্যাংচা নিলাম আর আবার বাইক স্টার্ট,, বাড়ি ফিরলাম ৭ টার কিছুটা আগেই,, এভাবেই আমাদের এই অসাধারন একদিনের ছোট্ট বাইক টুর শেষ হল যার টোটাল কিমি হয়েছিল ৪৬০ কিমি,, যাঁরা বলেন বাইক সেফ না, টাইম বেশী লাগে বা আরও অনেক কিছু বলেন তাঁদের বলি বাইকে যাত্রা যদি ঠিকঠাক করতে পারেন তো অনেক অল্প সময়ে অনেকটা রাস্তা যেতে পারবেন,, তবে অবশ্যই প্রোটেকশন নিয়ে যেতে হবে,, বাইক ঠিকঠাক আছে কিনা দেখে বুঝে তবেই যান,,,,,,, এবার থেকে আমরা ঠিক করেছি ছোটখাটো এরকম টুর করতে শুরু করব,, সত্যি কষ্টের থেকে আনন্দটাই বড়ো হয়ে দাঁড়ায় এরকম টুরে Post By:- Atanu Das
|
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |