শিয়ালদহ থেকে ৫.১২র নামখানা লোকাল এ চড়ে বসলাম. গন্তব্য? না এখন বলবো না| আড্ডা, গল্প আর টুকটাক মুখ চালাতে চালাতে কখন যে ৩ঘন্টা কেটে গেল টের ই পাইনি. ৮.০৫ নাগাদ পৌছলাম নামখানা. সুন্দর সাজানো ছোট্ট ষ্টেশন| ষ্টেশনের বাইরে থেকে মোটর ভ্যান করে পৌছলাম ফেরিঘাট| বোটে করে পেরিয়ে গেলাম হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদী| ভাবছেন বকখালি চলেছি? ধীরে বন্ধু ধীরে| চমক এখন ও অনেক বাকি| নদী পেরিয়ে টোটো নিয়ে গেলাম নামখানা বাস স্ট্যান্ড| সুরজিৎ আগে থেকেই গাড়ী বলে রেখেছিল সেখানে| গ্রাম বাংলার মধ্যে দিয়ে ঝকঝকে পিচ ঢালা পথে মিনিট ৪০এর মধ্যে পৌঁছে গেলাম চিনাই নদীর ধারে দুর্গাপুর খেয়াঘাটে| চিনাই, কি মিষ্টি নাম না? ফেরিঘাটের পরিবেশটাও মনোরম| জোয়ারের জল ঢুকে এসেছে অনেকটা| দুপাশের সবুজ ম্যানগ্রোভগুলো জলে অর্ধেক ডুবে| মাঝে লাল ইটের পথ| কিন্তু থামলে তো চলবে না| সামনে অজানার হাতছানি| অতএব চরৈবেতি| চিনাই কে অতিক্রম করে বাগডাঙ্গা ফেরিঘাটে নেমে আবার চড়ে বসলাম টোটোতে| একটু এগোতেই অবাককান্ড| নজর করলে একটু দূরে সমুদ্রের ঢেউ চোখে পরছে না? হ্যা তাই তো| জোয়ারের জল ঢুকে পরেছে গ্রামে| কোথাও কোথাও গাড়ী যাবার ঢালাই করা রাস্তার উপরদিয়ে বয়ে চলেছে সেই জল| আর অদ্ভুতভাবে প্রকৃতির এই খেলায় অভ্যস্ত মানব জীবন বয়ে চলেছে তার আপন নিয়মে| ভয়ঙ্কর সুন্দর সে দৃশ্য| নদীর ভাঙ্গন আর আয়েলার দান এটা| জল আর জীবনের এই খেলা দেখতে দেখতে মিনিট ৩০শের মধ্যে পৌঁছে গেলাম এক স্বর্গরাজ্যে| সবাই যখন থাকার জায়গা দেখতে ব্যস্ত, আমি তখন কোনো রকমে napsack টা নামিয়ে রেখে দলের বাকিদের উপর টেন্ট দেখার দায়িত্ব দিয়ে এক ছুটে চলে গেলাম অতল জলের আহ্বানে| যা দেখলাম তা ভাষায় বর্ণনা করার চেষ্টা আমার ধৃষ্টতা মাত্র| আমাদের থাকার Tent এর সীমানা যেখানে শেষ, সেখান থেকেই শুরু জলরাশি| সামনে একসারি বাবলা গাছ| পিছনে ঝাউয়ের বন| বাবলা গাছের তলায় বাঁশের বেদী| সেখানে বসতেই পায়ের তলায় ছলাৎছল জলের স্পর্শ| স্হানীয় এক মহিলা জাল টেনে টেনে মীন ধরছেন| একটি ছোটো মেয়ে স্কুল পালিয়ে আপন মনে ঢেউ এর সাথে খেলা করছে| একটু দূরে জলে ভাসছে কয়েকটা জেলে নৌকা| সামনে বামদিকে দেখা যাচ্ছে জম্বুদ্বীপ| আরো বামে গেলে হেনরী আইল্যান্ড, দূরে ডানদিকে দেখা যাচ্ছে সাগরদ্বীপ| তাদের মাঝে ঝাউ আর বাবলা গাছে ঘেরা, ঈশ্বরের নিজের হাতে আঁকা এই দ্বীপের নাম? “মৌসুনি”| জোয়ার চলছে, তাই আমাদের এখন জলে নামা বারণ| খানিক বাদে জল একটু নামতেই সবাই এক ছুটে জলে| শ্রী আর ঋষি, আামাদের দুই খুদে সদস্য বালি খুঁড়ে পুকুর বানাচ্ছে| জুটে গেল স্হানীয় কচিকাঁচার দল| আঁজলা করে সাগরের জল এনে তারা ভরে দিচ্ছে বালির পুকুর| শহর আর গ্রামের শৈশব আজ মিলেমিশে একাকার| ঘন্টা দুয়েক জলে দাপিয়ে যখন উঠলাম তখন পেটে ছুঁচোদের ভারী উৎপাত| খাবার তৈরীই ছিল| গাছতলায় প্রকৃতির মাঝে বসে, ধোঁওয়া ওঠা লাল চালের ভাত, ডাল, আলুভাজা, পটল-চিংড়ি, স্হানীয় পুকুরের মাছের ঝোল আর কাঁচা আমের চাটনি, উফ্ যেন অমৃত! জঠরানল স্তিমিত হলে, পথশ্রমে ক্লান্ত সবাই যখন দিবা নিদ্রায় মগ্ন অতি উৎসাহী আমি বেরিয়ে পরলাম পাড়া বেড়াতে| প্রথমে বলি আমরা যেখানে আছি তার কথা| আমাদের টেন্ট গুলো ঘিরে রেখেছে ছোট বড় নিমগাছ| পাশে বিশাল বাবলা আর ঝাউবন| নানারকম পাখীর ডাক ভেসে আসছে| বেনেবৌ, কোকিল, কাঠঠোকরা, হাঁড়িচাচা, দোয়েল, পাপিয়া আরো কত কি| উড়ে বেড়াচ্ছে নানা রঙের প্রজাপতি| জেলেরা তাদের জাল সারিয়ে নিচ্ছে| মাছ ধরার মরশুম সামনে| জল এখন অনেক দূরে সরে গেছে| রুপালী বালির সৈকত দেখা যাচ্ছে| ফণিমনসসা গাছে হলুদ ফুল ফুটেছে| খানিক্ষণ ঘোরাঘুরি করে আমিও নিজেকে ভাসিয়ে দিলাম প্রকৃতির মাঝে আশ্রয় নিলাম টেন্টের বাইরে নিমগাছে বাঁধা হ্যামক এ| পাখীদের গান শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি টেরই পাইনি| ঘুম ভাঙলো সুস্মিতার ডাকে. আইভিদি sunset দেখতে যাবে না? সবাইমিলে একছুটে গেলাম বীচে| জল তখন আরো পিছিয়ে গেছে| বিস্তীর্ণ সৈকতে আমরা ৯জন ছাড়া জনমনিষ্যি নেই| একটু এগোতেই ৪টি সারমেয় আমাদের সঙ্গী হলো| এ যেন আমরা চলেছি মহাপ্রস্হানের পথে| জলে এখন অস্তগামী সূর্যের রঙের খেলা| কনে দেখা আলোতে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে মোহময়ী| আমরাও রাঙিয়ে নিলাম নিজেদের আকাশের অস্তরাগে আর সাক্ষী হলাম এক অপূর্ব সূর্যাস্তের| একটু পরেই ভাস্বতী বললো মেঘের পাশ দিয়ে ওটা কি উঁকি মারছে? একফালি চাঁদ না! তাই তো! ঈদের চাঁদ! কাল তো ঈদ. ঈদলফিতর| পরদিন আজানের শব্দ আর পাখীর কলতানে ঘুম ভেঙে গেল| চৈতি, মৌসুমিদি আর আমি ঝাউবন আর গ্রামের মধ্যে ঘুরে ঘুরে মানুষ আর পাখীর সঙ্গে কিছু ভাব জমালাম| আজ ঈদ| গ্রামে উৎসবের আমেজ| আমাদের তারা দাওয়াৎ দিলেন| কিন্তু উপায় নেই| প্রাতরাশ সেরে একটু পরেই বেরিয়ে পড়তে হবে| অনেকটা পথ ফিরতে হবে তো আমাদের| তাই আাবার আসব কথা দিয়ে ফিরে এলাম টেন্ট এ| আসতে তো হবেই আবার| এই সুন্দর প্রকৃতির মাঝে একদিনে কি মন ভরে? সে তো বারবার ই হারিয়ে যেতে চায় ওই ঝাউবন আর জলের হাতছানিতে| Post By:- Ivy Majumdar
1 Comment
Krittika Saha
8/30/2018 01:49:41 pm
Ki apurba lekha. Puro chokher samne shob bheshe uthlo. Tumi ekta boi lekho ebar.
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |