নানা কারণে জীবনটা যখন একঘেয়েমিতে ভরে ওঠে।সেই ১০টা ৫টা অফিস,না হয় অন্য কোন কর্মক্ষেত্রে ধরাবাঁধা নিয়ম মেনে চলতে চলতে আপনি যখন চরম ভাবে বিরক্ত।মনটা যখন বলবে না এরকম ভাবে আর চলছে না! কোথাও যেতে ইচ্ছে করছে,আমি বলি কি চলে যান পৃথিবীর সেরা ম্যানগ্রোভ অরণ্য সুন্দরবন। গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি একেবারেই ঠোকবেন না। একদিন বা দুদিন কাটিয়ে আসুন বাদাবন আর দক্ষিণ রায়ের রাজত্বে।মন আপনার ভালো হয়ে উঠবেই। লঞ্চের পাটাতনে বা চেয়ারে বসে ভেসে পরুন নদীর জলে,বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু খাবারের স্বাদ উপভোগ করতে করতে নয়ন স্বার্থক করে দেখে নিন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল,আর তার জীবনের বৈচিত্র্যকে। আমাদের সুন্দরবন মোট সুন্দরবনের মাত্র ৪২০০ বর্গকিলোমিটার যা মোট সুন্দরবনের ৪০ভাগের মতো,৬০ভাগ বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্ত।১৯৭৩ সালে মূল এলাকাটি ব্রাঘ্য প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করা হয়।১৯৮৪ সালের ৪ ঠা মে জাতীয় উদ্যান হিসাবে ঘোষিত হয়।১৯৮৭সালে ইউনেস্কো বৃহত্তম এই ম্যানগ্রোভ অরন্য সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে চিহ্নিত করে। সুন্দরবন আমি অনেক বারই গেছি।কখনো রায়দীঘী থেকে তো কখনো আবার সোনাখালী থেকে,আবার দু এক বার ক্যানিং থেকেও গেছি। দেখিছি কলসদ্বীপ,ভগবতপুর কুমির প্রকল্প, সজনেখালি,সুধন্যখালি ,পিরখালি গাজিখালি,মোল্লাখালি,দোবাকি,বুড়ির ডাবরী , নেতা ধোপানির ঘাট,পঞ্চমুখানী প্রভৃতি জায়গায়। থেকেছি সজনেখালি পাখিরালয় আর লঞ্চের খোলা ডেকে। দেখেছি এই ম্যানগ্রোভ অরণ্য পথের বড় বড় নদী আর ভয়ানক সব খাড়ি। সুন্দরবন নিয়ে আমার কিছু অভিজ্ঞতার কথা আমি আগেই "সুন্দরী সুন্দরবন", "দক্ষিণ রায় আছেন"এই কাহিনী গুলিতে ব্যক্ত করেছি। এই নদী পথে অলস ভাবে দেহটাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ টাকা যথা সম্ভব সজাগ রেখে শুধু এপাশে ওপাশে আর দুরে তাকিয়ে থাকুন।মাঝে মাঝে জলের দিকে নজর অবশ্যই রাখবেন,হয়তো বা দেখবেন কোন ডলফিন আপনার লঞ্চের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে চলতে কখন ভুস ভুস উঠেছে আবার ডুবছে। দেখে নিন সুন্দরী,গড়ান,গেওয়া,হেতালের বাদাবন। কাদার মধ্যে উঁচু হয়ে থাকা শ্বাসমূল,বড় বড় ঠেস মূল ওয়ালা গাছ,কখনো জোয়ারের জল সব ডুবিয়ে জঙ্গলের গভীরে অনেক দূর পর্যন্ত চলে গেছে।হেতালের পাতার রঙ আর দক্ষিণ রায়ের গায়ের রঙ একই রকম,সেই হেতাল বনের ভেতরের সরুঢালু পথ যা নদীতে এসে মিশেছে আপনার দৃষ্টি ভ্রম হতেই পারে। ভাটার সময়ই হচ্ছে পশুদের দেখার উপযুক্ত সময়।এই সময় অনেকখানি পার উন্মুক্ত হয়।পশুরা এই সময়ে ঐ উন্মুক্ত প্রান্তরে আসে। তবে ভাটার সময় বিপদও আছে।একবারএইরকম বিপদের সন্মুখীন আমাদেরকে হতে হয়েছিল।কাদার মধ্যে লঞ্চের প্রপেলার ঘুরছিলনা।এককথায় লঞ্চ অনেকক্ষন আটকে পরেছিলো।আহা !সে এক অন্যরকম গা ছমছমে অনুভূতি। দুধারের ঘন জঙ্গল আপনার প্রায় কাছাকাছি তার মাঝে আপনি লঞ্চে,"নট নরন চরন"।আবার কখন জোয়ার আসবে তার অপেক্ষায়।কেমন রোমাঞ্চকর অনুভূতি লাগবে বলুন তো! ভাটার সময় দেখতে পাবেন বা এক পা এক পা করে এগুচ্ছে বক ও লম্বা ঠোঁট ওয়ালা সারস মাছের আশায়,আর টপাটপ করে মাছ ধরে কপাৎ করে গিলে নিচ্ছে। কাঁকড়ার ইতি উতি ছোটাছুটি আর টুক করে গর্তে ঢুকে যাওয়া।গাছের ডালে বসে আছে নিরাশক্ত ভাবে মাছরাঙা,লক্ষ কিন্তু জলের দিকে। কোনো কোনো সময় ঝপাং করে জলে ড্রাইভ মারছে। আবার কখনও জল না থাকা থকথকে কাদার মধ্যেই হরিণ পা তুলে ওপরের গাছের পাতা খাবার চেষ্টা করছে,বন শুয়োর কি যেন খুঁজে খুঁজে বেড়াচ্ছে,লালমুখো বাঁদরের দল সজাগ চোখে জঙ্গলের দিকে নজর রেখে তাড়াতাড়ি জলে কি যেন ধুয়ে নিচ্ছে। নদী পথে দেখা হয়ে যেতে পারে বাংলাদেশ অভিমুখী মালবাহী ট্রলারের। নজরে পেয়ে যেতে পারেন অলস ভাবে রোদে গা এলিয়ে দিয়ে হাঃ করে কোন কুমির হয়তো বা শুয়ে আছে।আপনি হয়তো বা ভাববেন লঞ্চটা আরেকটু কাছে যাক তারপর ছবি তুলবো,আপনি ভুল করলেন ! হঠাৎ আপনাকে কোন সূযোগ না দিয়েই ঝপাং। আমার একবার এইরকম হয়েছিল।একটা হরিণ ফাঁকা জায়গায় জলের ধারে বসেছিলো।ভাবলাম আর একটু লঞ্চটা এগিয়ে যাক তারপর ছবি তুলবো,হলোনা!হরিণটা হঠাৎ করে তড়াক করে লাফ দিয়ে উঠে পালালো,অবিশ্বাস্য ভাবে দেখলাম হরিণটা যেখানে বসেছিল তার কাছেই জলটা দারুন ভাবে ঘুলিয়ে উঠলো।দেখে চমকে উঠলাম।একটা কুমির হরিণটাকে তাক করেছিল।হরিণটা তা বুঝতে পেরেই লাফ দিয়ে উঠে পালালো। আফশোষ রয়ে গেলো কোন ছবিই নিতে পারলাম না। অনেকে তো আবার অন্য কাউকে দেখানোর জন্য ডাকে ,তাহলে তো হলোই,জঙ্গলে সবাইকেই চোখ কান সজাগ রাখতে নজর রাখতে হবে ডায়ে বাঁয়ে দূরে ।আপনার সারেঙ্গ যেই লঞ্চের এক্সিলেটার কমাবে তখনই বুঝতে হবে তার নজরে কিছু পরেছে। আপনি যদি সৌভাগ্যবান হন তাহলে সাক্ষাত হতে পারে #দক্ষিন #রায়ের সঙ্গেও।ভয়ানক সাহসী ও ধূর্ত এই জঙ্গলের রাজা। হয়তো আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না,সে কিন্তু সব সময় আপনাকে নজরে রেখে চলেছে। ভাবতেই পারবেন না যে নদীর দুকূল দেখা যায় না,অবলিলায় ক্রমে কিভাবে এরা সাঁতরে এপার ওপার করে খাবারের সন্ধানে। কিভাবে নৌকা থেকে পাশে ঘুমন্ত মানুষকে না জানিয়ে আরেকজনকে মুখে তুলে নিয়ে চলে যায় একদম নিঃশব্দে। নিদারুণ এক ভয় ভীতির পরিবেশে মাঝিরা নৌকায় রাতে ঘুমায় ভাবুন তো!কিছু কিছু দ্বীপে নদীর চরে লাঠির ডগায় ছেঁড়া কাপড় উড়তে দেখতে পাবেন।বুঝবেন ওখানে কোনো হতভাগ্যের জীবন দক্ষিনরায়ের দক্ষিনায় গেছে। ঐ ভয়ঙ্কর জায়গায় আপনার দেখা হবে জীবন জীবিকার সন্ধানে কাঠুরিয়াদের নৌকার সাথে। দেখা হতে পারে মধূ সংগ্রহকারী মউলেদের নৌকার সাথে। ছিপ নৌকা বা বড় নৌকার জেলেদের সাথেও আপনার দেখা হবে। কিনে নিতেপারেন ট্যাঙরাপাবদা,পাটসে,ভাঙ্গনের মতো সুস্বাদু মাছ। সুন্দরবনের মহিলারা হাঙ্গর,কামট,কুমির ভরা ঐ জলের মধ্যে জীবনকে বাজি রেখে কিভাবে চিংড়ি মাছের মীন ধরে বেড়াচ্ছে তাও আপনার নজরে পরবে। তাৎক্ষনিক ভাবেএই সকল মানুষের জীবন জীবিকা সম্পর্কে আপনার শ্রদ্ধা,ভালোবাসা আস্তে বাধ্য। রায়মঙ্গল,বিদ্যাধরী,মাতলা,স্বরস্বতী,ও অনেক নাম না জানা এই নদী গুলিতে বিশেষ করে পঞ্চমুখানীতে যখন আপনার ছোট্ট লঞ্চটা মোচার খোলায় মতো উথাল পাথাল করবে হয় আপনি হয় ভয় পাবেন নাহলে এক অদ্ভুত অনুভূতি আপনার হবেই হবে! এক এক করে বিভিন্ন ওয়াচ টাওয়ারে যখন আপনি উঠবেন,সামনের ফাঁকা জায়গা থেকে আপনি চোখ সরাতে পারবেনা।মনে হবে এক্ষুনি হয়তো বা জঙ্গলের রাজা ও রাস্তা দিয়ে হেঁটে একদিক থেকে অন্য দিকে যাবে। এমনি করেই এক এক বনবিবির থান সহ যখন সব কটি জায়গা দেখে আপনার লঞ্চ যখন সন্ধ্যায় সজনেখালির মাঝ নদীতে নৌঙ্গর করবে তখন সেখান থেকে দুধারের জঙ্গলকে দুর থেকে অনুভব করা আর লঞ্চের সাথে নদীর জলের ধাক্কার ছলাৎ ছলাৎ করে শব্দ শুনতে শুনতে নিজেদের মধ্যেও কি দেখলাম তাই নিয়ে কথা বলা বা গানের আসর বসিয়ে সঙ্গে অবশ্যই চা টিফিন সহযোগে দিনটা বা দিনগুলো কাটলো বল তো!আর সে যদি হয় জোৎস্না আলোকিত চাঁদনী রাত তাহলে তো সোনায় সোহাগা। এই ভ্রমনের সাথে আপনি গোসাবার বিধবাপল্লী, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত হ্যামিলটন সাহেবের বাংলো কেও অন্তভূর্ক্ত করতে পারেন। এক অসাধারণ ভ্রমণ আপনার হাতের কাছেই। সবই আপনার ইচ্ছের ওপর নির্ভর করছে। Post By:- Chandan Dutta Roy
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |