|| আমাদের শান্তিনিকেতন || মুহূর্তসঞ্চয়ন ও লিখন: শুভজিৎ দে শান্তিনিকেতন....কবিগুরুর স্মৃতি বিজরিত এই জায়গা, আমার কাছে বাড়ির দক্ষিণ খোলা জানলার মতো .. যেখানে বর্ষা আনে যেমন দুহাত মেলে ভিজতে থাকার নিরন্তর ভালোলাগা -বসন্তেও মন ভালো করে দখিনা হাওয়া l যেখানে একধারে কবিগুরুর আদর্শে গড়ে ওঠা বিশ্বভারতীতে এক অনন্য সংস্কৃতি, তেমনি কবির গানে মন ভেসে যায় খোয়াই কিংবা কোপাই এর তীরে l কোনো পরিধি দিয়েই বোলপুর এর ব্যাপ্তি বাঁধতে পারিনি আমি l এখানের মাটির ঘ্রাণ, সোনাঝুরির পাতার মাঝে রোদের লুকোচুরি, খোয়াইয়ের বাউলের একতারা , হাটের বেচা-কেনা , মানুষজন , কোপাইয়ের উদাস করা সকাল, উদাস মাঠে নেমে আসা বিকেলের আলো .....সব মিলিয়ে খুব কাছের,খুব আপন..যেন আত্মস্থ সবটা l মননে -আবেগে-ভালোলাগায়-ভালোবাসায় .... বোলপুর ....মৃত্যুর ১৩ দিন আগে এই স্টেশন থেকেই কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কবিগুরুকে চিকিৎসার জন্য। রবীন্দ্রনাথ যেতে চাননি। কেননা শান্তিনিকেতনে তিনি খুঁজে পেয়েছিলেন ‘প্রাণের আরাম, মনের আনন্দ ও আত্মার শান্তি’; ভয় ছিল যদি আর ফিরে না আসতে পারেন। তাঁর আশঙ্কাই সত্য হয়েছিল। তবে কিছু বলতে গেলে শুরু করতে হয়, ১৮৬৩ সাল থেকে..এই সালেই মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদারের কাছ থেকে ২০ বিঘা জমি বার্ষিক ৫ টাকা খাজনায় অধিগ্রহণ করার পর নির্জনে ঈশ্বরের উপাসনা করবেন বলে বোলপুরে এক দোতলা বাড়ি তৈরি করেছিলেন । এই বাড়িতে রবীন্দ্রনাথ প্রথম এসেছিলেন ১২ বছর বয়সে, উপনয়নের পর। সেই প্রথম দিন থেকেই প্রকৃতির সান্নিধ্যে , রবি জায়গাটাকে ভালোবেসেছিল।১৯০১ সালে কবিগুরু পাকাপাকি ভাবে চলে আসেন এই শান্তিনিকেতনে আর পিতার অনুমতিতে সেই বছরই ব্রম্ভচর্যাশ্রম বিদ্যালয় প্রতিষ্টা করেন,যদিও এর উদ্যোক্তা ছিলেন বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর । কবিগুরুর এই আদর্শ বিদ্যালয়ে প্রথম ছাত্রদলের অন্তর্ভুক্ত চল তার নিজেই বড় ছেলে, রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর । সে সময়ে বিদ্যালয়ের পরিধি ছিল অনেক ছোট । ১৯০২এ স্ত্রী মৃণালিনী দেবী ও কন্যা রেণুকার অকাল প্রয়াণ, তার সাথে ১৯০৫-এ পিতৃবিয়োগ ,১৯০৭ এ পুত্র শমীন্দ্রনাথ এর মৃত্যু...এতো বিষাদ -বিচ্ছেদেও কবিগুরু তার স্বপ্নের শান্তিনিকেতন এর আদর্শ বিদ্যালয়ের পরিধি বৃদ্ধি করেছিলেন ধীরে ধীরে ।ধরে ধীরে পরে গড়ে ওঠে উদয়ন,উত্তরায়ণ, কোনার্ক, শ্যামলী, পুনশ্চ উদীচী,চিত্রভানু -গুহাঘর ,উপাসনা গৃহ ,কালো বাড়ি প্রভৃতি বাড়ি গুলি এক-এক টা গুরুত্বে । এছাড়াও ঘন্টাতলা ,গৌরপ্রাঙ্গন, পাঠাগার ,কলাভবন ,শালবীথি, ইত্যাদি এক এক করে রূপ লাভ করে। জ্যামিতিক গোলাপ বাগান, কবির নিজহাতে লাগানো নিমগাছের ছায়া আর মাটির দেয়াল মাটির ছাদের বাড়ি শ্যামলী যেখানে এসে গান্ধীজি বরাবর উঠতেন, তার মাঝে পাতা ঝরার গান আর মন কেমন করা বাউলি বাতাস—এখানেই রবীন্দ্রনাথকে অনেক বেশি করে পাওয়া যায়। ১৯২২ সালে ৬-ই ফেব্রুয়ারি সুরুলে গ্রাম পুনর্গঠন কেন্দ্র (শ্রীনিকেতন) স্থাপন করেন। ১৯২১ সালে সংগীত ও চিত্রকলা বিভাগ যোগ হয় শান্তিনিকেতন এ । ১৯২৬ সালে বিশ্বভারতী তে শিক্ষাভবন নাম নিয়ে কলেজের পঠন পাঠন শুরু হয় l শান্তিনিকেতনের প্রকৃতি মানেই লাল মাটির ঢাল আর ইউক্যালিপটাস বনের খোয়াই৷ প্রতি শনিবার সেই খোলা জায়গাতেই বসে হাট৷ নানাবিধ হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে এই হাট এখন শান্তিনিকেতনের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ৷বিক্রেতারা সবাই প্রান্তিক উৎপাদক। পার্শ্ববর্তী কোপাই, বোলপুর, গোয়ালপাড়া, সিলিকেতুন, পাটুলডাঙা, চুরুল, প্রান্তিক ও ভুবনডাঙা গ্রামের নারী-পুরুষরা তাদের হাতে তৈরি বিভিন্ন দ্রবাদি নিয়ে হাজির হন হাটে।সূর্য যতো পশ্চিমে ঢলে পড়ে ততোই জমে ওঠে হাট। ঢোকার সময়ই কানে ভেসে আসবে ঢোল আর মাদলের শব্দ। হাটের একপাশে সাঁওতাল দল মাদলের তালে তালে নাচে থাকে মগ্ন l কেনা-বেচায়, নানা রঙে মন ভালো করার রসদ লুকিয়ে এখানে l Post By:-শুভজিৎ দে
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |