তখন কলেজ ছেড়েছি সদ্য। বুদ্ধদেব গুহ-র লেখার পরম ভক্ত হয়ে উঠেছি ওঁর লেখনীর গুণে এবং লেখায় প্রকৃতির অন্যতম চরিত্র হয়ে ওঠার ইন্ধনে । লাইব্রেরী থেকে নিয়ে এসে একবেলাতেই শেষ করে ফেললাম “বাংরিপোশির দুরাত্তির” বইটি । লেখকের অন্য বইগুলির মতোই এই উপন্যাসেও কিশা অরি পিকুর পাশাপাশি অন্যতম চরিত্র হয়ে উঠেছিলো বাংরিপোশি-র প্রকৃতি । অতএব শুরু হল, বাংরিপোশিতে যাওয়ার প্রচেষ্টা । নানান কারণে বারংবার বাধার সম্মুখীন হয়েও হাল ছাড়ি নি , অবশেষে ২০০১ সালে সুযোগ হল এখানে আসার । এখন যেটা খৈরী রিসোর্ট , সেটা সে সময়ে ছিল ওটিডিসি-র পান্থশালা । কলকাতার উৎকল ভবন থেকে বুকিং করে ফেললাম বড় বড় চারটি ঘরের এই পান্থশালা, মোটে ১৫০ টাকা করে ঘর ভাড়া, রোজ চারটে বড় বড় ঘরের জন্য ৬০০ টাকা ভাড়া । এই বাংলোতেই তখনও পর্যন্ত ছিলেন উপন্যাসে পড়া মহিলা চৌকিদার লখি মাসি । ওঁর মুখেই লেখক বুদ্ধদেব গুহর এখানে বার বার ছুটে আসার কথা শুনলাম, সাথে ওঁর নানান অভিজ্ঞতার কথা ।
এরপরে অনেকটা সময় পেরিয়ে গেছে । এবছরে পুজোর ট্যুর আদৌ হবে কিনা যথেষ্ট সন্দেহ ছিল তা নিয়ে । কিন্তু উৎসাহী মানুষের অভাব নেই আমার আশে পাশে, অনেকেই জেদ ধরে বসলো ! ছয়-সাত মাসের গৃহবন্দিত্বের একঘেয়েমি কাটিয়ে কোথাও একটা যাওয়ার ব্যবস্থা করতেই হবে ! অগত্যা নানান জায়গার কথা ভাবতে ভাবতেই মনে হল বাংরিপোশি-র কথা । বাংরিপোশি-র তিনটি হোটেলে ফোন করে কেবল সদ্যনির্মিত সিমলিপাল রিসোর্টে আমাদের পছন্দমত তারিখে ঘর মিলল । কিন্তু আমাদের চাহিদার তুলনায় ঘরের সংখ্যা নগণ্য । মোটে ৯টি ঘর, তার ওপরে প্রথমদিনে পাওয়া যাবে সাতটি , কারণ আগেভাগেই দুটি বুকিং হয়ে আছে । খৈরী রিসোর্টে পাওয়া গেল দুটি ঘর। এর সাথে সিমলিপাল রিসোর্টের ছোটো ডরমিটরি পুরোটা নিয়ে নিলাম । আমাদের যেহেতু সবই ফ্যামিলি সেই হেতু ডরমিটরির ভুমিকা কি হবে তা পরে ঠিক করব ভেবে সেই মুহূর্তে বুকিং করে নিলাম । এবছরে ট্রেন বন্ধ থাকায় প্রাইভেট কার ভাড়া করেই যাওয়া হবে ঠিক হল । যদিও এ ব্যাবস্থায় খরচ ও ধকল দুইই বেশি , তবুও উপায়ান্তর না থাকায় এ পথই বেছে নিতে হল । স্বাভাবিক সময়ে শালিমার থেকে সপ্তাহে তিনদিন সিমলিপাল এক্সপ্রেস ছাড়ে যা বাংরিপোশি হয়ে বারিপদা অবধি যায় সোম-বুধ ও শনিবার । ফেরে মঙ্গল , বৃহস্পতি ও রবিবার । পুরো ট্রেন আনরিজার্ভড , তাই আগেভাগে টিকিট কাটার বালাই নেই । এবছরে দুর্গাপুজায় আমরা প্রায় কেউই বের হইনি ঠাকুর দেখতে, নিজেদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখার তাগিদে নিজেরাই সকলে মিলে ঠিক করেছিলাম, পুজা দেখবো টিভিতে ও মোবাইলে । একাদশীর দিন সকালে চারটি টাটা সুমোয় চেপে আমরা রওনা দিলাম সকাল আটটা নাগাদ । সময় বলা ছিল সকাল ৬-৩০ , কিন্তু অপেশাদার মানসিকতার গাড়ির মালিক আগেরদিন দশমীর রাতেও আমাদের জন্য বরাদ্দ চারটি গাড়িই পাঠিয়েছিলো স্থানীয় কিছু মানুষজনকে কলকাতার প্রতিমা দর্শন করাতে , ফলে আমরা লাগেজ নিয়ে অপেক্ষা করতে করতে শেষমেশ গাড়ি ছাড়তে পারলাম সকাল আটটায় । তার আগে অবশ্য গাড়িগুলো ভাল করে স্যানিটাইজ করে নেওয়া হল। সকলের হাতে তুলে দেওয়া হল একটি করে পানীয় জলের বোতল ও মাস্ক ।
রওনা হওয়ার পরে আমাদের প্রথমবার থামতে হল, আলমপুরে সুজিত-দাকে তুলে নেওয়ার জন্য। কিছুটা এগিয়ে রানীহাটি থেকে যোগ দিল ঋত্বিক আর সুস্মিতা । এরপরে এগিয়ে চলা শুরু । চারটে টাটা সুমো গাড়িতে ছোটো বড় মিলিয়ে মোট ৩২ জনের দল, চারজন ড্রাইভার ধরলে ৩৬ জন । আর আমাদের ক্যাটারিং গ্রুপ আগের রাতেই পাড়ি দিয়েছিল বাসে চেপে, সংখ্যায় তারাও চার জন । অর্থাৎ পুরো টিমে মোট চল্লিশজন সদস্য-সদস্যা । পাঁচজন পুঁচকে ছিল আমাদের দলে , তারাই সবচেয়ে বেশি হইহুল্লোর করতে করতে চলল । আর আমরাও প্রাথমিক দেরি হওয়া ভুলে তখন হাওয়ায় মেলে দিয়েছি ডানা বহুদিন পরে মুক্তির আনন্দে ।
কোলাঘাটে অনন্যা হোটেল অ্যানড রেস্টুরেন্টে গিয়ে গাড়ি থামল প্রায় সোয়া একঘণ্টা পরে । আমাদের খুব বাজে অভিজ্ঞতা হল এখানে ব্রেকফাস্ট সারতে গিয়ে । খাবারের কোয়ালিটি খুবই মাঝারি মানের, কিন্তু তুলনায় দাম অনেকই বেশি । সবচেয়ে বড় কথা দামের কোন ঠিকঠিকানা নেই, কাউনটারে বসে থাকা ব্যক্তি এবং টেবিলে অর্ডার নেওয়া ও সারভ করা ব্যক্তির দামের ফারাক প্রায় প্রতিক্ষেত্রেই । লুচি-তরকারি, কেউ কেউ রুটি-চানামশলা খেলেন, কেউ কেউ সাথে নিলেন ডিমের অমলেট । আর প্রত্যেকের জন্যই মিষ্টি ও চায়ের ব্যবস্থাও ছিল। লুচির সাথে প্রথমে দেওয়া তরকারি ভাল ছিল, কিন্তু দ্বিতীয়বারে দেওয়া তরকারি বাসি ছিল এবং বিশ্রী গন্ধ যুক্ত । আমার পরিচিতদের বলবো, কোলাঘাটে ব্রেকফাস্ট সারার জন্য এই হোটেল এড়িয়ে গেলেই ভাল করবেন । কোলাঘাট থেকে তিক্ত অভিজ্ঞতা নিয়ে বেরিয়ে আবার দৌড় শুরু আমাদের । রাস্তাঘাট মোটামুটি ফাঁকাই ছিল, ফলে দুধারের সৌন্দর্য , ফাঁকা মাঠঘাট গাছ-গাছালি দেখতে দেখতে প্রায় দুপুর একটা নাগাদ পৌঁছলাম হাতিবাড়িতে । পথে ধুলাগড়ি, ডেবরা ও গোপীবল্লভপুর—তিন জায়গায় মোট ২৪০ টাকা করে টোল দিতে হল এক একটা গাড়ির জন্য । আমাদের ট্যুর প্ল্যানে হাতিবাড়ি না থাকলেও কয়েকজনকে বলে রেখেছিলাম, হাতে সময় থাকলে যেহেতু একই রাস্তায় পড়বে , তাই হাতিবাড়িও ঘুরিয়ে দেখিয়ে দেবো । মূল রাস্তা থেকে প্রায় এক কিলোমিটার ভিতরে জঙ্গলের লাল মাটির ধুলো উড়িয়ে আমাদের গাড়িগুলো হাতিবাড়ি জঙ্গলের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বন দপ্তরের অধীন কটেজগুলোর সামনে গিয়ে উপস্থিত হল। শাল-পিয়াশাল-মহুয়া-গামহার-অর্জুনে ছাওয়া শান্ত বন্য পরিবেশে সুবর্ণরেখা নদীর ঠিক পাশেই কটেজগুলির অবস্থান । করোনার প্রকোপের সময়ে এখানে কোয়ারানটাইন সেন্টার হওয়ায় আজ অবধি বুকিং শুরু হয়নি । এত সুন্দর লোকেশানে পুজার ছুটিতে বুকিং দিলে ভ্রমন পিয়াসীরা নিশ্চিতভাবেই হামলে পড়তো, কিন্তু ট্যুরিজম নিয়ে সরকারী উদাসীনতা তা হতে দেয়নি । যদিও কিছুদিন আগেই টিভিতে ও খবরের কাগজে দেখেছি এই কটেজগুলোর দায়ভার খুব শীঘ্রই বেসরকারি হাতে দিয়ে দেওয়া হবে । হাতিবাড়ির সৌন্দর্য ও অবস্থান এতোটাই ভাল যে, একটু উদ্যোগী হলে অনায়াসেই এখানে পর্যটকের ঢল নামতে পারে । সুবর্ণরেখার কাকচক্ষু স্বচ্ছ জলে ছোটো নৌকার এপারওপার ভেসে চলা , জঙ্গলের পথ ধরে হেঁটে চলে নাম জানা বা অজানা অসংখ্য পাখির কলকাকলি শুনতে শুনতে নির্বিঘ্নে দুটো দিন শান্তিতে কাটিয়ে দেওয়া যায় । ঘণ্টাখানেক এখানে কাটিয়ে আবার রওনা দিলাম । জামশোলা হয়ে বাংরিপোশি পৌঁছলাম আর আধঘণ্টা পরেই । আমাদের ক্যাটারার বাবুদা অ্যানড কোম্পানি আমাদের লাঞ্চ রেডি করেই রেখেছিলেন, তাই যেহেতু ঘড়ির কাঁটা দুপুর আড়াইটা পেরিয়েছে , সেইহেতু সোজা ডাইনিং স্পেসে পৌঁছলাম গাড়ি থেকে নেমেই । বেসিনে রাখা হ্যান্ডওয়াশে ভাল করে হাত-মুখ ধুয়ে নিয়ে ঝটপট সকলে বসে পড়লাম ছুঁচোয় ডন দেওয়া পেট নিয়ে । লাঞ্চে আমাদের মেনু ছিল—সরু চালের ভাত, ডাল , আলুভাজা, আলু-পটোলের তরকারি, স্যালাড, রুই পোস্ত , চাটনি ও পাঁপড় । পেট পুরে খাওয়ার শেষে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে প্রতেকের জন্য বরাদ্দ করা নির্দিষ্ট ঘর বণ্টন করে দিলাম , আজ আর কোথাও ঘোরাঘুরি নয় । প্রত্যেকেই নিজের নিজের ঘরে স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে সন্ধ্যায় উপস্থিত হলেন সিমলিপাল রিসোর্টের প্রসস্ত বারান্দায় । কেউ কেউ অবশ্য পায়ে হেঁটে ঘুরে নিয়েছেন আশেপাশের ধান ক্ষেত , অদূরের ঠাকুরানী পাহাড়ের পাদদেশ । সূর্যদেব ঠাকুরানী পাহাড়ের ওপারে ঢলে পড়তেই প্রায় সকলে যোগ দিলেন আড্ডায় । গরমাগরম কফিতে চুমুক দিতে দিতে মুচমুচে চিকেন পকোড়ায় কামড় দিয়ে চলল আড্ডা । পাঁচ পুঁচকের দুরন্তপনাও চলছিলো সমানে সমানে । একাদশীর চাঁদের আলো মেঘমুক্ত আকাশ থেকে গলে গলে পড়ছিল মোমের মত । আমরা সকালের প্রাথমিক ঝঞ্ঝাট ভুলে তখন যেন সব পেয়েছির দেশের বাসিন্দা । রিসোর্টের হাতায় সুবিশাল ছাতিম গাছ থেকে ছাতিম ফুলের তীব্র সৌরভ ভেসে আসছিলো বাতাসে সওয়ার হয়ে । দূরে কোন ধানক্ষেতের পাশে লক্ষ্মীপ্যাঁচারা বনভোজনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে , তাদের তীক্ষ্ণ স্বর ভেসে আসতে লাগলো ক্ষণিক বিরতি দিয়ে দিয়ে । বাবুদা অ্যান্ড কোং-এর মেম্বাররা জানান দিলো বেশ রাত হয়েছে , ঠাণ্ডা লাগছিল ভালোই ! সুতরাং আবার সকলে মিলে ডাইনিং হলে উপস্থিত । ভাত বা রুটি যার যা পছন্দ, সেটারই ব্যবস্থা ছিল, সাথে মিক্সড ভেজ, চিকেন কারী , সদ্য বানানো এক্স এল সাইজের গরম গোলাপজাম । এরপরে রাত এগারোটার মধ্যেই হিমের পরশ গায়ে মেখে যে যার ঘরে ঠাঁই নিলাম । প্রথম দিনের ক্লান্তির শেষে ঘুমের দেশে পাড়ি দিলাম অনতিবিলম্বেই । ( এরপরে দ্বিতীয় পর্বে ) © প্রদীপ হাজরা
২৮ শে অক্টোবর বুধবার ২০২০
রাতে ঘুম ভালোই হয়েছে কিন্তু বরাবর সাতসকালে ওঠার অভ্যাসের জন্য ভোরে ঘুম ভাঙলো যখন তখনও সূর্যদেব রথে চড়েন নি । মোবাইলের ঘড়িতে দেখলাম সবেমাত্র ভোর সাড়ে চারটে বাজে । গতকাল সন্ধ্যা থেকেই ভালো ঠাণ্ডা এখানে, দিনের বেলাতে হয়ত গরম লাগবে কিন্তু এই এলাকার আবহাওয়ার চরিত্র এমনই ! অক্টোবরের মাঝামাঝি পেরোলেই সন্ধ্যার পর থেকেই ঠাণ্ডার আমেজ । একটা চাদর জড়িয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম ! আশেপাশের গাছগাছালিতে নানান পাখির হাঁকডাক শুরু হয়ে গিয়েছে, হোটেলের পাশের মেঠো রাস্তা ধরে চাদর মুড়ি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন স্থানীয় এক বয়স্ক মানুষ , হাতে লাঠি । তাঁর সুললিত ধীর গতির চলনের সাথে পাথুরে মাটিতে যে বিরতিযুক্ত শব্দ উৎপন্ন করছে লাঠির আঘাতে , তা চারপাশের নিস্তব্ধতা মুহূর্তের জন্য খান খান করে দিয়েই মিলিয়ে যাচ্ছে হেমন্তের হালকা কুয়াশার চাদরে । ছাদ থেকে দেখতে পেলাম পুব আকাশ ধীরে ধীরে রং বদলাতে শুরু করেছে । হালকা থেকে ক্রমশ গাঢ় হতে লাগলো আকাশের লাল-হলুদ-কমলা রং । ঠাকুরানী পাহাড়ের পাদদেশ থেকে শুরু করে চারদিকের ধানক্ষেত থেকে বন-বনানী থেকে পাখিরা গান গেয়ে শুভেচ্ছা বার্তা দিলো দিন শুরুর ! হই হই করে সাত ঘোড়ার রথে চেপে আকাশ প্রদক্ষিণে বেরিয়ে পড়লেন সূর্যদেব। হোটেলের পিছনের দিকে বাবুদা অ্যান্ড কোং টুং টাং ঠুক ঠাক শব্দে দিন শুরুর আগেই কাজে লেগে গিয়েছিলো । সাড়ে ছ’টার আগেই বেড টি পৌঁছে গেলো ঘরে ঘরে । আর ফ্রেশ হয়ে স্নান সেরে নেওয়ার আগেই ব্রেকফাস্টও রেডি হয়ে গেলো । সারাদিনের ক্লান্তির শেষে ভালো ঘুম সকলের চোখেমুখেই প্রশান্তির ছাপ ফেলেছে তা ডাইনিং হলে পৌঁছেই অনুধাবন করলাম দলের বাকিদের দেখে । গরম কচুরি-তরকারির সাথে বাবুদা-র ভিয়েনে বানানো বোঁদে আর শেষে আরেক প্রস্থ চা সহযোগে জলযোগ সারা হলো সকাল ন’টার মধ্যেই । এর পর গাড়িগুলো স্যানিটাইজ করেই আমাদের যাত্রা হল শুরু । রিসোর্টের বামদিকের রাস্তা ধরে কিছুটা এগোলেই বাংরিপোশির ছোটো বাজার এলাকা । বাজার পেরোলেই অদূরে বাংরিপোশি স্টেশনে যাওয়ার রাস্তা । আড়াআড়ি রাস্তার বুক চিরে যাওয়া রেললাইন পেরিয়ে একটু এগোলেই রাস্তার দুপাশে সারিবদ্ধ বড় বড় গাছ , ফাঁকা রাস্তায় আলো ছায়ার সুচারু আলপনা এঁকে রেখেছে । আমাদের চারটি গাড়ি অনাদরে সে আলপনা মাড়িয়ে এগিয়ে চলল সিমিলা গ্রামের শিবমন্দির দর্শনে । শিবরাত্রিতে এই মন্দির চত্বরে সারাদিন সারারাত ধরে মেলা চলে, এখন ফাঁকা এবং কোভিড বিধি মেনে পুজা দেওয়া চলছে । তবে মন্দির খোলা থাকছে খুব কম সময়ের জন্য । আমরা অবশ্য মন্দির বন্ধ হওয়ার আগেই পৌঁছে গিয়েছিলাম । মন্দিরের প্রাচীরের ভিতরের দিকে এক কোনে রাখা রয়েছে মহাদেবের অনেকগুলি বাহনের প্রস্তর মূর্তি । খুবই সাধারণ গঠনশৈলীর এই মন্দিরের দেবতা কিন্তু খুবই জাগ্রত । স্বাভাবিক সময়ে সারাদিন ভক্তদের আনাগোনা লেগেই থাকে ।
সিমিলা শিবমন্দির থেকে বেরিয়ে আমরা পুরনো পথে রোদ-ছায়ার আলোকঝারি পেরিয়ে ফিরে চললাম । বাংরিপোশি স্টেশনের কিছুটা আগেই রাস্তায় একটা সেতু পড়ে , সেতুর পাশেই বুড়বালাং (স্থানীয় নাম ) তথা বুড়িবালাম নদী , দুরে পাহাড় আর টিলার হাতছানি উপেক্ষা করে সে নীরবে বয়ে চলেছে । তার গোটা শরীর জুড়ে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা হাজারো রঙের নানান আকৃতির পাথর তার নিস্তরঙ্গ চলা রুদ্ধ করার ব্যর্থ প্রয়াস শেষে নিশ্চুপে ঘুমিয়ে পড়েছে । আরও একটু এগিয়ে বাজার এলাকা থেকে বামদিকে বেঁকে বাংরিপোশি স্টেশনকে ডানদিকে রেখে খানিক পরেই আরও একটা সেতু ; এর অবস্থা বুড়বালাং তথা বুড়িবালাম নদীর ওপরে । সেতু পেরিয়ে কিছুটা এগিয়ে গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিলো আমাদের বাহনেরা । আমরা রাস্তার ডানদিকের সংকীর্ণ নুড়ি পাথর ছড়ানো পথে বনতুলসীর উগ্র গন্ধ পেরিয়ে উপস্থিত হলাম বুড়বালাং নদীর তীরে । নদীর একটা অংশ পুরপুরি ছোটো বড় নানা আকৃতির নুড়ি পাথরে ঢাকা , সেখানে জলের লেশমাত্রও নেই । দেখে মনে হবে গতকাল রাতে কোন দানব-এর প্রবল আক্রোশে বড় বড় শিলা চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে বহুদুর থেকে গড়াতে গড়াতে নদীতীরে এসে পড়েছে । নদীর একদিকে পাথর বিছানো চর আর তার পাশের অংশেই স্বচ্ছ জলধারা বড়সড় একাধিক শিলাস্তুপের বাধা এড়িয়ে বয়ে চলেছে নির্দ্বিধায় । কিছুদিন আগেই কাশের মরশুম গেছে এখনও তার চিহ্ন রয়ে গেছে নদীর আনাচে কানাচে । কাশফুলে ঢাকা নদীচর যে আরও সুন্দর হয়ে ওঠে তা বলাই বাহুল্য ।
আমাদের দলের অরি-কিশা-পিকু-রুমি-টুবুলেরা এমণ খোলা আকাশের নীচে প্রসস্ত নদীতীর পেয়ে, এমন প্রকৃতির পটে আঁকা উঠানে ঘণ্টাখানেক মেতে উঠলো মোবাইল ফটোগ্রাফিতে । উৎসাহী দু-একজন স্নানের প্রস্তুতি নিয়েই বেরিয়েছিল, তারাও এমন সুযোগ আর হাতছাড়া করল না, নেমে পড়লো স্নানে । আমাদের পরের গন্তব্য বুড়িবালামের উৎসস্থল ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ড । এখান থেকে প্রায় ৩৫ কিমি দুরের পথ । তাই স্বাভাবিক কারণেই সকলকে তাড়া দিতে হল, গাড়িতে ওঠার জন্য । উৎস থেকে মোহনা পর্যন্ত নদী বার বার রূপ বদলায়, বুড়িবালামের ক্ষেত্রেও তার ব্যাতিক্রম নেই । ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে চাঁদিপুরে বেড়াতে গিয়ে বুড়িবালামের তীরে যেখানে বাঘা যতীনের সাথে ইংরেজদের যুদ্ধ হয়েছিল, সেখানে এর আগে বার দুয়েক গিয়েছি , একই নদীর ভিন্ন রূপ সেখানে । অনেকেরই ইচ্ছে ছিল আরও একটু সময় কাটানোর কিন্তু আরও অনেক স্পট ঘুরে দেখার তাগিদে কিছুটা মনঃক্ষুণ্ণ হয়েই সকলে গাড়িতে উঠে বসলো । আমরা বুড়িবালামের নদী তীরকে বিদায় জানিয়ে এগিয়ে গেলাম ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ড-এর পথে । ( এরপরে তৃতীয় পর্বে ) © প্রদীপ হাজরা
বাংরিপোশি-র তিন রাত্তির ( তৃতীয় পর্ব )
© প্রদীপ হাজরা #সফরের_দ্বিতীয়_দিন ২৮ শে অক্টোবর বুধবার ২০২০ ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ডের পথে চারটে গাড়ির মধ্যে আমাদের গাড়ির সকলে এসে গিয়েছিলো, তাই আমাদের গাড়িটা ইচ্ছে করেই ছেড়ে দিলাম বুড়িবালামের নদী তীর থেকে । বাকি গাড়িগুলোর এক-আধজন করে রয়ে গেছে তখনও , তাই বাকিরা এশে গেলেও দাঁড়িয়েই থাকতে হল । কিছুটা এগিয়ে একটা তিনমাথা রাস্তার মোড়ে গাছের ছায়ায় আমাদের গাড়ি সাময়িক আশ্রয় নিলো । আমরা কয়েকজন নেমে দাঁড়ালাম বাকিরা গাড়িতেই বসে রইলো । এখানে আসা ইস্তক দেখছি রাস্তার মোড়ে , বাজারের প্রান্তের দিকে , গ্রামের প্রবেশপথের দুধারে বড় বড় হাঁড়িতে করে প্রকাশ্যেই মহুয়ার মদ ও হাঁড়িয়া বিক্রি হচ্ছে । বিক্রেতারা মুলতঃ মাঝবয়সী মহিলা । আসলে এই প্রত্যন্ত এলাকার মানুষজনের বেঁচে থাকার তাগিদে দিনরাত প্রাণপাত করে পরিশ্রম করার পরে বিনোদন বলতে এই হাঁড়িয়া বা মহুয়া । বেশিরভাগ এলাকাতেই পরিবহনের ব্যবস্থা অপ্রতুল, হেঁটে , সাইকেলে চেপে বহুদুরের হাটেবাজারে যেতে হয় , তাও হাট বসে সপ্তাহে একদিন বা দুদিন । বাজার এলাকা বলতে বাংরিপোশির ছোটো বাজার আর নয়তো বারিপদা । সে অবশ্য অনেকই দুরের পথ । বাইক থাকলে ভালো, নয়তো সীমিত পরিবহণ ব্যবস্থার সাহায্য নিয়ে সেখানে পৌঁছতে হয় । অনেকেই আছেন যারা সারাটা জীবন নিজের ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের মধ্যেই কাটিয়ে দেন । বিশোই-এর হাট এঁদের কাছে বারিপদার চেয়ে অনেক কাছের । দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে গাছতলায় বসে থাকা দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজনের দিকে এগিয়ে গেলাম । গোদা বাংলায় জিজ্ঞাসা করলাম, ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ডের রাস্তা এই দিকে তো ? - হু । তুমে কৌথে অসিলো ? ( হ্যাঁ । তোমরা কোথা থেকে আসছো? ) - কলকাতা থেকে ! বাংলা বোঝো ? - হু ! কিন্তু মু কহিবারে পারিবো নি । ( হ্যাঁ । কিন্তু আমি বলতে পারবো না ) - আচ্ছা । - তুম্মে কল্লি বাস্রে অসিলা ? ( তোমরা কাল বাসে এসেছ ? ) - না । এই গাড়িতে করেই এসেছি গতকাল। আরও তিনটে গাড়ি আছে , পিছনে আসছে । - গত্ত কল্লি জত্রা কেমিতি থিল্লা ? ( গতকালের যাত্রা কেমন ছিল ? ) - ভালো । ওড়িশা আমার খুব ভালো লাগে । - সেমআনো মন্দিরো গলে । ( তারা মন্দিরে গিয়েছিলো ) - আমরাও গিয়েছিলাম । সিমিলা শিব মন্দিরে । কথার মাঝেই ফোন এসে গেলো । একটা পরিবার শুধুমাত্র উপস্থিত না হতে পারার জন্য এখনও তিনটে গাড়ি আটকে আছে , ড্রাইভার ফোন করে জানালো ।
রাস্তার যেখানে আমরা দাঁড়িয়েছিলাম তার পাশেই একটা মাটির বাড়ির নিকোনো ঝকঝকে তকতকে উঠান । একটা শিশু দাঁড়িয়ে আছে আমাদের দিকে অবাক চোখে চেয়ে । তার পরনে রংচঙে জামা, কিন্তু প্যান্ট বড় বিবর্ণ এবং তার উচ্চতার তুলনায় প্যান্টের দৈর্ঘ্যে বেশ বড় । মুখে একটা মিষ্টি হাসি লেগে আছে । তার পাশেই একটা মুরগী তার পাঁচ-সাতটা ছানা নিয়ে ঘুরে ঘুরে খাবার খাচ্ছে খুঁটে খুঁটে । গাছের উল্টোদিকে একটা বাঁশের মাচা । ওখানেই কয়েকজন স্থানীয় আড্ডা দিচ্ছে, তাদেরই একজন আমার সাথে কোথা বলছিল । পাশে একটা মুরগির মাংসের দোকান । সমান্তরালে কিছুটা এগিয়ে আরও একটা গাছের গোড়ায় দুজন হাঁড়িয়া বিক্রি করছে, সেখানে ভিড় আরও বেশি । দূরে পাহাড় দেখা যাচ্ছে , আর তার অনেকটা আগেই, দৃষ্টির গোচরে একটা বন্ধ স্কুলের মাঠে কিছু গরু চরে বেড়াচ্ছে ।
আরও মিনিট পাঁচেক পরে বাকি গাড়িগুলো এসে গেলো, আমরা আবার যাত্রা শুরু করলাম । গোটা রাস্তায় দুধারে বিস্তীর্ণ ধানক্ষেত, দূরে দূরে পাহাড় । কোথাও কোথাও কয়েকটা ঘর নিয়ে ছোটো ছোটো গ্রাম । দুজন মানুষকে দেখলাম একটা খড়বোঝাই গাড়ি টেনে নিয়ে যেতে । পুরো রাস্তায় প্রচুর নাম জানা বা অজানা গাছ-লতা-গুল্মে পাখিদের জলসা বসেছে । এই মন ভালো করা পরিবেশের জন্যই তো কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে এমন বনবাসে আসা ! আরও একবার আমাদের থামতে হল । আমাদের পিছনে আসা গাড়িগুলোকে দেখা যাচ্ছে না । রাস্তা ভুল করলো কি ? ফোনে নেটওয়ার্ক নেই ! অগত্যা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা ছাড়া গতি নেই । রাস্তার ধারেই একটা পানীয় জলের হ্যান্ড পাম্প । পাশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাড়িগুলোর ব্যবহারের জন্যই বোধহয় । আমাদের জল শেষ হয়ে গিয়েছিলো, তাই মিনারেল ওয়াটারের কথা বেমালুম ভুলে সব বোতলগুলো ময়ুরভঞ্জ জেলার হজমিকারক জলে ভর্তি করে নেওয়া হল । এদিকে গাড়িগুলোও নজরে এসে যাওয়ায় আমরা আবার রওনা দিলাম । অনেকটা পথ পেরিয়ে অনেকগুলো গ্রাম পিছনে ফেলে একটা বজরংবলির মূর্তির সামনে আমাদের গাড়ি থামল, তারপরে ডানদিকের মোরামের লাল রাস্তা কচর মচর শব্দে মাড়িয়ে গাড়িগুলো আরও পাঁচশো মিটার পথ গিয়ে একটা বড় গাছতলায় বাঁধানো চাতালের সামনে থামল । বাকি একশো মিটার পথ হেঁটে ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ডের সামনে উপস্থিত হলাম । বড় একটা জলাশয় সৃষ্টি হয়েছে ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ডের জলে । প্রায় পঞ্চাশ ফুট উচু বড় শিলাস্তুপের অপর থেকে সশব্দে জল এসে পড়ছে অই জলাশয়ে । এতোটাই স্বচ্ছ সেই জল যে নিচের নুড়ি পাথরগুলো পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছে । একটা দিকে রেলিং দেওয়া আছে , সেখানে অনেকগুলো বড় বড় মাছের ভিড় । আমাদের দলবল হইহই করতে করতে নেমে পড়লো সেই গোড়ালি ভেজানো জলে । আরও একপ্রস্থ ফটো সেশন চলল । ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ডের সৌন্দর্য আহামরি কিছু না হলেও ফেলনাও নয় । চারপাশে পাহাড় বড় বড় গাছের আস্তানায় নীরবতা সদা বিরাজমান, আমরা কিছুক্ষণের জন্য তা বিঘ্নিত করলাম শুধু । এই কুণ্ডের জলেই নাকি বুড়বালাং-এর উৎপত্তি , হোটেলের ম্যানেজার বলেছিলেন গতকাল। কিন্তু এই জল কথা থেকে আসছে তা বুঝতে পারলাম না ! কোন প্রস্রবণ থেকে নাকি পাশের পাহাড় থেকে কে জানে ! আমাদের আগের স্পটে বেশ দেরি হওয়ায় এবং ফিরে লাঞ্চ সেরে আবারও বেরনো আছে বলে সবাইকে তাড়া দিয়ে দ্রুত গাড়িতে উঠে ফিরে চললাম হোটেলের দিকে ।
বাংরিপোশি-র তিন রাত্তির (চতুর্থ পর্ব)
© প্রদীপ হাজরা #সফরের_দ্বিতীয়_দিন ব্রাম্ভ্রণ কুণ্ড থেকে ফিরলাম হোটেলে একই রাস্তা ধরে , কিন্তু যেহেতু বারবার দাঁড়াতে হয়নি সেইহেতু কিছুটা তাড়াতাড়িই পথ যেন ফুরিয়ে গেলো । দুপাশের ধানক্ষেত, পাহাড়-টিলা , আদিবাসী গ্রামের ঝকঝকে উঠান , উথানের পাশের কলমি লতা সবকিছুকে পিছনে ফেলে দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ সিমলিপাল রিসোর্টে পৌঁছে গেলাম । বাবুদা অ্যান্ড কোং আমাদের জন্য সরু চালের ভাত, মুগের ডাল, বেগুন ভাজা, আলু-পোস্ত , মাছের কালিয়া এবং চাটনি পাঁপড় বানিয়ে রেখেছিলো । চটজলদি লাঞ্চ সেরে আমরা আবার গাড়িতে চেপে বসলাম । এবারের গন্তব্য ঠাকুরানী হিলস, দুয়ারসিনি মাতার মন্দির , বাঁকবল ড্যাম এবং সুলাইপাট ড্যাম । তবে ঘড়িতে সময় দেখে বুঝে গেলাম , সূর্যদেবের পশ্চিমাকাশে ডুব দেওয়ার আগে এতোগুলো স্পট ঘুরে দেখা কোনোমতেই সম্ভবপর নয় । আসলে কোন একটা জায়গায় বেশি সময় নিলেই এইধরনের সমস্যা দেখা যায় । রিসোর্ট থেকে বেরিয়েই যে হাইওয়ে, সেটা পাহাড়ে চড়েছে অনতিদুরেই । ঠাকুরানী পাহাড়শ্রেণীর দুধারে অসংখ্য বাঁদরের দেখা পাওয়া গেলো । পাহাড়ে ওঠা মানুষজনের মনোরঞ্জনের জন্যই যেন তারা সপরিবারে নানা অঙ্গিভঙ্গি করে চলেছে অবিরাম । রাস্তার বামদিকে পাহাড় আর ডানদিকে নীচের রাস্তা, জঙ্গল আর ছোটো ছোটো গ্রামের দৃশ্য বেশ সুন্দর । কিছুটা ওপরে উঠলেই বামদিকে মাতা দুয়ারসিনির মন্দির । এপথে যত গাড়ি যাতায়াত করে এই মন্দিরের দেবীর উদ্দেশ্যে টাকা পয়সা প্রণামী হিসাবে দিয়ে যায় । কথিত আছে , একসময় দেবীর যখন মন্দির ছিলোনা সেসময়ে এই রাস্তায় অহরহ দুর্ঘটনা লেগেই থাকতো , তাই দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য দেবীকে প্রণামী দিয়ে যাতায়াত শুরু করে ট্রাকসহ সবধরনের গাড়ি । এতেই কাজ হয়, দুর্ঘটনা অনেকই কমে গেছে এ পথে, পরবর্তীতে দেবীর সুদৃশ্য মন্দিরও নির্মিত হয়েছে । মন্দিরের দ্বাররক্ষক দুটি বিশাল আকৃতির সিংহ , দুপাশে রয়েছে নারীর দেহের আদলে তৈরি দুটি মূর্তি যাদের মুখ সিংহের । মন্দিরের মূর্তির ছবি তোলা নিষিদ্ধ । মন্দিরের পাশেই একটা বাঁধানো গাছের ডালে বাঁধা অজস্র লাল জরি লাগানো কাপড়ের টুকরো , বিভিন্ন মানুষ তাঁদের নানান প্রার্থনা পূরণের উদ্দেশ্যে সেগুলি বেঁধে রেখেছেন । মন্দিরে বেশিক্ষণ সময় না কাটিয়ে দুপাশের পাহাড় জঙ্গলময় পাহাড়ি চড়াই উতরাই পথ পেরিয়ে বিশোই থানা এলাকায় উপস্থিত হলাম । বিশোই-এর হাট এলাকায় খুব জনপ্রিয় এবং বাইরের লোকেদের কাছেও তার পরিচিতি আছে । কিন্তু পরবর্তী হাটবার শনিবার হওয়ায় আমরা না থেমে গুগল ম্যাপের দেখানো রাস্তায় এগিয়ে চললাম বাঁকবল ড্যামের অভিমুখে । বিশোই থানা পেরিয়ে হাইওয়ে থেকে বামদিকের তুলনামুলক সংকীর্ণ রাস্তা ধরে একটা ছোটো বাজার এলাকা, অনেকগুলো গ্রাম আর দুধারের মাঠঘাট ধানক্ষেত পেরিয়ে একটা শর্টকাট রাস্তা দিয়ে বাঁকবল ড্যামের কিনারায় যখন পৌঁছলাম তখন সূর্যদেব প্রায় পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়েছেন । বাণী বসু-র উপন্যাসে পড়া “কমলা লেবুর রসের মতো রোদ” তখন অনেকই কোমল হয়ে ঝরে পড়েছে সবুজ পাহাড়ে, বাঁধের জলে, গাছেদের গায়ে মাথায় পায়ে আর বাঁধের ধারের ফিকে কনকবর্ণ আধপাকা ধানের ক্ষেতে ।
ঋত্বিক-এর সৌজন্যে একটা অসাধারণ সূর্যাস্ত দেখার সৌভাগ্য হল আমাদের । আসলে বাঁকবল ড্যামের ঠিক যে জায়গায় পর্যটকেরা যায়, আমরা ঠিক তার উল্টোদিকের কিনারে উপস্থিত হয়েছিলাম । কারণ হাতে সময় এতোটাই কম ছিল যে ওখানে আরও ১৩ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছতে হলে অন্ধকার নেমে যেতো , এবং নিশ্চিতভাবেই এমন সূর্যাস্ত দেখা থেকে বঞ্চিত হতাম ।
আমাদের গাড়িগুলো একটা আদিবাসী গ্রামের সীমানায় রেখে দুপাশের ধানক্ষেতের মাঝের আলপথ পেরিয়ে এক্কেবারে ড্যামের সামনে হাজির হলাম । সারাদিনের ক্লান্তির শেষে সূর্যদেব তখন রথের গতি বেশ বাড়িয়ে দিয়েছেন যেন । সুলাইপাট ড্যামে না যেতে পারার দুঃখ ভুলে তখন আমাদের সহযাত্রীরা সকলে দুচোখ ভরে দেখতে লাগলো কেমন করে দিবাকরের রথ বাঁধের উল্টোদিকের পাহাড়ের পিছনে টুপ করে ডুব দিলো । অস্ত যাবার ঠিক আগের মুহূর্ত পশ্চিমাকাশে এক অবর্ণনীয় অস্তরাগ ছড়িয়ে দিলো , লাল-হলুদ-কমলার হাজারটা শেড মিলে মিশে একটা ভাষায় প্রকাশক্ষমতাহীন রঙের ওড়না মেলে দিলো যেন । সে মুহূর্তে শুধুই নয়ন মেলে চেয়ে থাকা ছাড়া , সেই রং সেই ভালোলাগা মস্তিষ্ক দিয়ে হৃদয় দিয়ে প্রতিটি স্নায়ুতে অনুভব করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবনাতেই আসতে পারে না । ক্যামেরা আর মোবাইলের ব্যস্ততা থামার পরে আমরা আলপথ ধরে আবার গাড়িগুলোর সামনে এসে দাঁড়ালাম । আলের পথ বেয়ে আসার সময় দেখলাম একটা জায়গায় বুনোফুলের চারপাশে অসংখ্য প্রজাপতির ভিড় । আলের পাশে আরেকটা জায়গায় লজ্জাবতীর লতা ভর্তি । উৎসাহীরা তার পাতা স্পর্শ করে সাথে সাথেই জীববিজ্ঞানে পড়া গাছের চলনের ব্যবহারিক পরীক্ষা সেরে ফেললো নিমেষেই । গ্রামের প্রান্তসীমায় রাখা গাড়িগুলোর সামনে গ্রামের উৎসাহী কচিকাঁচার ভিড় জমে গেছে । আসলে এপথে বিশেষ কেউ হয়তো বাঁকবল ড্যাম দেখতে আসে না । পাশেই খাপরার চালের একটা বড় মাটির বাড়ির দাওয়ায় দুজন বয়স্ক মানুষ চাদর মুড়ি দিয়ে বসে আছেন । গাছগাছালিতে তখন সদ্য ঘরে ফেরা পাখিদের কিচিরমিচির । আর মাঠ থেকে একপাল ভেড়া আর ছাগল নিয়ে ফিরতে দেখা গেলো স্থানীয় অধিবাসীদের । ফেরার পথে সন্ধ্যা নেমেছিলো কিন্তু দ্বাদশীর চাঁদের আলোর জোর মেঘমুক্ত আকাশে ভালোই ছিল । অনভ্যস্ত চড়াই উতরাই পথে আমাদের গাড়িচালকরা একটু ধীর গতিতে চালিয়ে কিছুটা বেশি সময় নিয়ে আমাদের ঘরে ফেরালেন । আমার গাড়িটা অবশ্য খৈরী রিসোর্টের সামনে থামাতে হল । আজ এখানে একটা , আগামিকাল দুটো ঘরের বুকিং আছে । কিন্তু আমাদের সাথে আসা কোন পরিবারই সিমলিপাল রিসোর্ট ছেড়ে একলা একলা এখানে থাকতে না চাওয়ায়, ড্রাইভার চতুষ্টয়ের থাকার ব্যবস্থা এখানে করে, ঘরের চাবি নিয়ে পুনরায় রওনা দিলাম । সন্ধ্যায় গরম কফির সাথে বরাদ্দ ছিল চিকেন কাটলেট । আর রাতের মেনুতে ছিল চিকেন বিরিয়ানি ; যারা বিরিয়ানি পছন্দ করেন না তাঁদের জন্য সাদা ভাত বা রুটি, সাথে সকলের জন্যই চিকেন কষা । সন্ধ্যার আড্ডা শেষে ডিনার যখন সারলাম তখন প্রায় রাত সাড়ে দশটা বাজে । বাইরে তখন হিম পড়ছিল টুপ টুপ করে ! পাশের গ্রামে তখন গভীর রাত, সব আলো নিভে দ্বাদশীর চাঁদের জ্যোৎস্না শুধু ঝলমল করছে । নিশাচর পাখি আর পশুদের ডাক শোনা যাচ্ছে দূর থেকে আর পাশের হাইওয়ে দিয়ে চলমান ভারি ভারি ট্রাকের চড়াই বেয়ে ওঠার সময়ে অদ্ভুত একটা গোঙানির মতো শব্দ । নিদ্রার দেবী চোখের পাতায় ভর করে এলেন দ্রুত পায়ে , তারপরে স্বপ্নের দেশে বিচরণ ।
বাংরিপোশি-র তিন রাত্তির (পঞ্চম পর্ব)
© প্রদীপ হাজরা #সফরের_তৃতীয়_দিন ২৯ অক্টোবর ২০২০ বৃহস্পতিবার ভোরে যখন ঘুম ভাঙলো তখন সবেমাত্র পূব দিক ফরসা হতে শুরু করেছে । ফ্রেশ হয়ে চাদরমুড়ি দিয়ে বেরিয়ে এলাম মিনিট পনেরো পরে । আজ যেহেতু সারাদিনের ট্যুর এবং লাঞ্চ সাথে করে নিয়েই বেড়াতে যাবো, সেইহেতু বাবুদা অ্যান্ড কোং একটু তাড়াতাড়িই উঠে রান্নায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে । আমাকে দেখেই চা এগিয়ে দিলো লালু দা । বললো, সবাই ঘুমাচ্ছে একটু ঘুমাক ! সোয়া ছ’টা নাগাদ বেড টি দেবো ঘরে ঘরে । আমি ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম । চা-টা বেশ ভালো লাগলো ওই ঊষাকালীন হালকা ঠাণ্ডার মধ্যে ! আরেকটা কাপ নিলাম । তারপরে হাঁটা দিলাম সামনের হাইওয়ে ধরে । রাস্তা ধরে একটু এগিয়েই ডানদিকে একটা পোলট্রি ফার্ম । সাতসকালে ফার্মের অধিবাসীরা হাঁকডাক শুরু করে দিয়েছে একত্রে । কিন্তু তাদের সেই ডাকাডাকি সেই স্নিগ্ধ সকালে এতোটুকুও কর্কশ বলে মনে হল না । আরও একটু এগিয়ে একটা চায়ের দোকান । দাঁড়াতেই দোকানি স্পষ্ট বাংলায় জিজ্ঞাসা করলো, লিকার চা খাবেন নাকি দুধ চা । মশলা দেওয়া লিকার চা খেয়ে দেখুন, ভালো লাগবে । একটু আগেই কাগজের কাপের দু-কাপ দুধ চা খেয়েছি তাই লিকারই নিলাম । সত্যিই অসাধারণ স্বাদ, আমরা লেবু চা খাই যেমন কতকটা তেমনই কিন্তু কি কি মশলা দেওয়া জানিনা ! লেবু ছাড়াই মশলার গুণে অনন্য হয়ে উঠেছে তার স্বাদ । দোকানে থাকা বাকিরা দোকানির সাথে ওড়িয়াতেই কথা বলছিল , আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না , ভদ্রলোক আদপে বাঙালি নাকি ওড়িয়া । আসলে ওড়িয়া অসমীয়া আর বাংলা ভাষার মধ্যে খুব মিল আছে , কিন্তু বাচনভঙ্গী আলাদা হলেও বোঝাই যায় এরা নিকটাত্মীয় । চায়ের দোকানের সামনেই দুটো তিনটে কুকুর ঘোরাঘুরি করছিলো , একটা বিস্কুট ভেঙে ছুড়ে দিলেন চা খেতে আসা এক ভদ্রলোক ! তাদের উল্লাস দেখে কে আর ! সিমলিপাল রিসোর্ট থেকে প্রায় আধ কিলোমিটার দুরেই খৈরী রিসোর্ট, হাঁটতে হাঁটতে এখানে এসে ঢুকলাম একবার । মেন গেট বন্ধ থাকলেও পাশের দিকের একটা ছোটো গেট খোলা ছিল । ডোরান্দা গাছের বেড়া খুব সুন্দর করে কেটে প্রাচীরের মতো করে রেখেছে সরু রাস্তার দুইধারে । বড় বড় দুটো গাছের কৃত্তিম বাঁশে বাঁধানো চাতাল সুন্দরভাবে রং করা । প্রাচীরের পাশের বটগাছটার অনেকগুলো ঝুরি মাটি ছুঁয়েছে অনেকদিন আগেই, তাদের স্বাস্থ্য সেকথারই জানান দিচ্ছে । খুব সুন্দরভাবে সাজানো গোছানো এই রিসোর্ট । এদিকে ওদিকে বসার কংক্রিটের বেঞ্চ গাছের গুঁড়ির আদলে, ছোটদের জন্য দোলনা আর খোলা জায়গায় চা-চক্রের জন্য ছোটো ছোটো কংক্রিটের ছাউনি । ভিতরে ডিলাক্স এসি কটেজ যেমন আছে তেমনই এসি, নন এসি রুমের পাশাপাশি ডরমিটরিও আছে । আগে যখন ২০০১ সালে এসেছিলাম, তখন শুধুমাত্র চারটে রুম ছিল এখানে । পুরনো পান্থশালার সেই চারটে রুম এখন অনেকটাই ঝাঁ-চকচকে । সব ঘরে এসি বসেছে কিন্তু সেই পুরনো ঐতিহ্য অনেকটাই ফিকে হয়ে গেছে বেশ কিছু অদলবদলে । রিসেপশানে ঢোকার আগে সেই ঘরগুলোর সামনে দাঁড়াতেই অনেক স্মৃতি ভিড় করে এলো । কিছুক্ষণ মানসনয়নে ২০০১ এ ফিরে গিয়েছিলাম , কারও একজনের ডাকে আবার সম্বিত ফিরলো, ২০২০ তে ফিরে এলাম !
-কাউকে খুঁজছেন ? একজন লম্বা করে রোগা চেহারার লোক আমার পাশে দাঁড়িয়ে আছেন ।
- হ্যাঁ রিসেপশানে যাবো । কেউ আছেন ? -আছে । ম্যানেজার-অ বাবু আছে । আমি ভিতরে গিয়ে আমাদের দুটো রুমের পেমেন্টের ব্যাপারে কথা বললাম । উনি সদ্য ঘুম থেকে উঠেছেন , তখনই পেমেন্টের ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখালেন না । বললেন, কাল তো যাবেন ! কাল সকালে পেমেন্ট করলেই হবে । সিমলিপাল রিসোর্টে যখন ফিরলাম তখন প্রায় সাতটা বাজে । দোতলার ঝুলবারান্দা দেখলাম প্রভাতী আড্ডায় গমগম করছে । কচিকাঁচাগুলো বোধহয় এখনও ওঠেনি , তাদের কাউকে দেখলাম না । কচুরি-তরকারি ব্রেকফাস্টে হলেও অনেকেই তরকারি দিয়ে মুড়ি মেখে খেলেন ! আদি অকৃত্তিম বাঙালি ব্রেকফাস্ট ! আসলে কয়েকদিন ধরেই এতো তেল-মশলা খাওয়া হচ্ছে যে , অনেকেই আর সকালে কচুরি খেতে চাইলেন না । সকালে যথারীতি আমরা সবাই স্নান সেরে ব্রেকফাস্ট করে নিলেও ড্রাইভারদের পাত্তা নেই । একটা কথা বলতেই হচ্ছে যে, আমরা প্রত্যেকবার ট্যুরে আসি ট্রেনে করে , এবারে বাধ্য হয়ে টানা গাড়িতে এসে খুব ঝকমারিতে পড়েছি । প্রথমদিনের দেরি না হয় বাদ দিলাম, কিন্তু এখানে আসার পরেও রোজই আমরা বেরনোর জন্য রেডি হয়ে থাকলেও প্রতি ক্ষেত্রে বেরোতে দেরি হচ্ছে ওদের জন্য । সাড়ে আটটা থেকে বারংবার ফোন করে করে অবশেষে তেনারা এসে উপস্থিত হলেন সাড়ে ন’টায় , অথচ বলা ছিল আমরা বের হবো ঠিক ন’টায় । আরও মিনিট পনেরো গেলো ব্রেকফাস্ট সারতে এবং প্রায় পৌনে দশটায় আমাদের গাড়িগুলো হোটেল ছাড়লো । গতকালের দেরি থেকে শিক্ষা নিয়ে আজ ঠিকই করে নিয়েছিলাম, কোন জায়গাতেই বেশিক্ষণ সময় কাটাবো না । যাত্রা শুরু করার পর প্রায় ৪৫ মিনিট পরে পৌঁছলাম শঙ্করমারা ড্যামে । মূল রাস্তা থেকে মোরাম বাঁধানো রাস্তার শুরুতে সিধু কানহুর মূর্তির চারদিকে পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকার মাঝে টলটলে জলে ভরা বাঁধ , আশেপাশের সৌন্দর্যও অনির্বচনীয় । পাহাড়ের সবুজ নীলচে বাঁধের জলে প্রতিচ্ছবি তৈরি করেছে । আর জলের ওপরে হাওয়ায় তৈরি ছোটো ছোটো স্রোত পাশের বনস্পতিগুলোর পা ধুইয়ে দিচ্ছে অবিরাম । বাঁধের পাড় বাঁধানো ; লকগেটের পাশের ফাঁকা জায়গাতে কিছু মানুষ কাজ করছেন দূরে । এছাড়া কাছে পিঠে গোটা উপত্যকায় আমরা ছাড়া আর কোন লোকজন বা জনবসতির চিহ্নমাত্র নেই । আসার পথে রাস্তার দুধারে সার সার অর্জুন বহেড়া আর আমলকী গাছ দেখেছি । আর আছে মহুয়া গাছ । মহুয়ার ফলের গন্ধে নাকি ভালুক আসে জঙ্গল ছেড়ে গ্রামের চৌহদ্দিতে , রাতে মহুয়ার ফল খেয়ে মাতাল হয়ে বসে থাকে গাছের তলায় সকাল পর্যন্ত ! এ সবই স্থানীয় মানুষজনের কাছে শোনা , সত্যি মিথ্যা জানিনা অবশ্য । তবে মহুয়ার ফল থেকে মহুয়ার মদ হয় জানি , বসন্তের মরশুমে গ্রামে গ্রামে মহুয়ার ফল সংগ্রহ করে শুকিয়ে রাখা হয় সারা বছরের প্রয়োজনে , পুরুলিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে আমি দেখেছি । আর গরিবগুরবো সারাদিন হাড়ভাঙা খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দিবাশেষে ওই একটিই বিনোদনের বস্তু ! হাঁড়িয়া কিম্বা মহুয়া না খেলে পরেরদিন সকালে কাজ করবে কেমন করে ! আর রয়েছে কেন্দু গাছ, এ গাছের পাতায় বিড়ি বাঁধা হয় । আসার পথে অনেক বাড়ির উঠানে কেন্দুপাতা শুকাতে দেখেছি । শালগাছের মহিমা আদিবাসী মানুষজনের কাছে অপরিসীম । এই এলাকায় শালজঙ্গলও অঢেল । তবে বাঁধের চারপাশের পাহাড় বাদে সামনের বাকি এলাকা যেন ফাঁকা ফাঁকা । ফেরার পথ ধরে আবার সেই সিধু-কানহুর মূর্তির কাছে পৌঁছলাম । এবারের গন্তব্য বালডিহা ড্যাম । আরও ২০ কিমি রাস্তা প্রায় ! তবে মূল রাস্তা থেকে বাকি এক কিমি রাস্তা বড়ই সংকীর্ণ ! বাঁধের দিকে যাবার মোরামের রাস্তার ধারে বাঁধ থেকে নির্গত জলের ক্যানাল । জল এতোটাই স্বচ্ছ যে অগভীর ক্যানেলের জলের নীচে থাকা নুড়ি পাথরগুলো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । ডানদিকে ক্যানালের পাশে শাল পিয়ালের ঘন জঙ্গল আর টিলা, একটা ন্যাড়া শ্বেতপাথরের মতো টিলা রয়েছে ! পুরোপুরি গাছপালামুক্ত হয়ে । ক্যানালে জল বেরোচ্ছে যে ছিদ্রপথ দিয়ে সেখানে জলের স্রোত ভালোই । সিঁড়ির মতো ধাপ করা রয়েছে বাঁধের জল উপচে বেরনোর বাঁধানো প্রাচীরে , ফেসবুকে ছবিতে দেখেছি এই পথে জল বেরোয় যখন তখন কতকটা বহুস্তরীয় জলপ্রপাতের মতো দেখতে লাগে । এই ড্যামের কিনারেও ছোটো ছোটো টিলা দূরে দূরে রয়েছে । তবে সৌন্দর্যে শঙ্করমারা ড্যাম একে বলে বলে গোল দেবে , যদিও সুলাইপাট ড্যাম আমাদের দেখা হয়নি তাই তার সৌন্দর্য এই তুলনায় আনতেই পারছি না । এখানেও কিছুক্ষণ ফটোশুটের পরে ফিরতি পথে মূল রাস্তায় এসে দৌড় লাগালাম সিমলিপালের পিঠাবাটা গেটের দিকে । জঙ্গল এখন বন্ধ তাই ভিতরে ঢুকতে পারবো না , কিন্তু কাছেই সীতাকুণ্ড ঘুরে নেবো তাই তাড়া দিলাম ড্রাইভারদের । ( এরপরে ষষ্ঠ পর্বে ) ©প্রদীপ হাজরা
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |