বেথুয়াডহরী ।। অরণ্যের মাঝে একটা দিন।
_____________________________ নদীয়া জেলার অন্যতম একটি অভয়ারণ্য হলো বেথুয়াডহরী। একসময় নাকি এখানে বেথো (বেথুয়া) শাকের জলাভূমি (ডহরী) ছিলো। সেই থেকেই এর নামকরণ। শুধুমাত্র গেটটা পেরোলেই আপনি বুঝতে পারবেন, বাইরের কোলাহলটাকে কতটা পিছনে ফেলে এসেছেন। অনেকগুলো শালিক, আর ফিঙে, মাছরাঙা, দোয়েল, টুনটুনি, নীলটুনি, মোহনচূড়া, বাঁশপাতি, কোকিল মিলে এখানে অভ্যর্থনার সুর অনবদ্য! শাল, সেগুন, মেহগনি, ওক, ইউক্যালিপটাস এর সাথে জীবনানন্দের আম জাম হিজল বট এর মতো অনেককেই এখানে দেখতে পাবেন। তা ছাড়া জানা অজানা অনেক গাছের সাথে মিলে মিশে রয়েছে নাগকেশর, পিয়াশাল এর মতো গাছেরাও। ইঁট বিছানো পথ ধরে বেশ কিছুটা এগোলেই বা হাতে একটি রাস্তা সোজা হরিনের খাবার জায়গায় পৌঁছেছে। হরিনের এখানে অবাধ বিচরণ (অভয়ারণ্য)। তাই ওদের দেখা নামমাত্রই মেলে এখন। যদিও ওরা যে আমাদের ওপরে নজর রাখে, সে কথা বলাই বাহুল্য! (আগে শুনেছি অনেক হরিণ ঘুরে বেড়াতো চারিদিকে)। হরিনের দেখা পেলাম না বটে। কিন্তু গুটিকতক ছাতারে পাখি সেখানে আড্ডা জমিয়েছে। সঙ্গে একটি দোয়েল। বাঁদিকের পথ ধরে সোজা এগোলে ঘড়িয়ালদের বাসস্থান। একটি চারকোনা পুকুরে প্রায় 8টির মতো ঘড়িয়াল (মেছো কুমির) রয়েছে। আমরা শেষ দুপুরে গিয়েছিলাম। সেসময় তারা জলের নিচেই ছিল। মাঝে মাঝে তারই মধ্যে দু একজন শিকারে বেরিয়েছিল। সারা রাস্তা জুড়েই হাজার রঙের প্রজাপতির দেখা মেলে। শান্ত নিরিবিলি রাস্তার দুধারে ঘন জঙ্গলের মাঝখান থেকে অস্পষ্ট রোদ ঠিকড়ে পরে মাটিতে, গাছের ডালে। জঙ্গলের ভিতরখানা তখন আলো ছায়ার খেলায় মত্ত। মাঝখানে শ্যাওলা মেশানো সবুজ পথে আমরা আর পাশ থেকে উড়ে যাওয়া প্রজাপতির দল। দূর থেকে ভেসে আসা কত না জানি পাখির ডাক। আপনার শহুরে অভ্যাস গুলো এক নিমেষে বদলে যেতে পারে এইখানে পা রাখলে। শহরের ইঁট পাথরের জঙ্গলের থেকে এই জঙ্গল অনেক বেশি শান্তির, অনেক বেশি সুন্দর। সেখান থেকে ফেরার পথে পাখির খাঁচার পথে পা বাড়ালাম। রাস্তায় অনেক নাম না জানা পাখির ডাকে শুধু খুঁজে বেরিয়েছি, কিন্তু পাখি চোখে পড়েনি। হয়তো আরো কিছুটা সময় কাটালে নিশ্চয়ই দেখতে পেতাম। পাখির খাঁচাটাকে ঠিক খাঁচা বলা যায় না। বেশ বড়ো একটা অঞ্চল জুড়ে জাল দিয়ে ঘেরা। তবু পাখিদের জন্য ওটা খাঁচাই। আমাদেরকে আনন্দ দেওয়ার জন্য তাদের জীবন এই খাঁচাতেই সীমাবদ্ধ। পাখিদের মধ্যে 4-5 টি ময়ূর, একটি সাদা ময়ূর, তিতির, সারস, টিয়া, মুনিয়া, কাকাতুয়া, আরো অন্যান্য অনেক পাখি রয়েছে। সবগুলোই বেশ সতেজ! ফাউ হিসাবে সেই খাঁচায় রয়েছে একদল বুনো খরগোশ। তারা তখন নিজেদের মধ্যেই ব্যস্ত। আপনি কি করছেন, তা দেখতে তাদের বয়েই গেছে!! এর ঠিক পিছনেই একটি ঘেরা জায়গায় একটি নীলগাই রয়েছে। একাই, তবে বেশ খোশ মেজাজে। গেট থেকে ঢুকলেই বা দিকে একটি মিউজিয়াম রয়েছে। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নামে নামাঙ্কিত। সময়ের অভাবে যেতে পারিনি। এটি প্রাণী সংরক্ষণের উপরে তথ্য সমৃদ্ধ। একটি কচ্ছপের পুকুর ও রয়েছে এই অরণ্যে। সেটিও দেখার সময় মেলেনি। বেথুয়া ডহরী সত্যিই খুব বড়ো অরণ্য। যদিও তার বেশির ভাগ জায়গাই প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে অসামাজিক কাজ রোধ করবার জন্য। হয়তো বা আরো অনেক কিছু আমরা খুঁজে পেতে পারতাম, উপভোগ করতে পারতাম, যদি সব কিছু স্বাভাবিক থাকতো। যাই হোক, একদিন ঘোরার জন্য এখানে আপনি অনেক কিছু পেয়ে যাবেন। শুনেছি, এখানে মেছো বিড়াল, বন বিড়াল, ভাম, বেজি, সজারু, অনেক ধরণের সাপ, মনিটর, শেয়াল দেখতে পাওয়া যায়। যদিও মাত্র দেড় ঘন্টা সময়ে এত কিছু দেখার সৌভাগ্য হবে না। সারাদিন থাকলে দেখা পাওয়ার সৌভাগ্য হতেও পারে আপনার! নদীয়ার কৃষ্ণনগর থেকে 25 কিমির পথ। ট্রেনে সরাসরি বেথুয়া স্টেশন এ নেমে রিকশা / টোটো পাওয়া যায়। গাড়িতে গেলে NH 34 হয়ে কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর এর রাস্তায় 25 কিমি। গাড়ি পার্কিং এর ব্যবস্থা ভিতরেই রয়েছে। অভয়ারণ্যের ভিতরেই কটেজ রয়েছে। তাছাড়া বেথুয়া বাজারে আপনি থাকার জায়গা পেয়ে যাবেন। ক্যামেরায় Amit Kumar Shaw সঙ্গে Amit Das & Koushik Das Canon 750D (4:3) & Redmi Note 5 Pro (16:9) Unedited
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |