আসানসোল , মাইথন, কল্যানেশ্বরী, পাঞ্চেত, গড়পঞ্চকোট উইকএন্ড ট্রিপ গাইড
আসানসোল : --------------- মাইথন , কল্যানেশ্বরী খুবই কমন উইকএন্ড সার্কিট । কিন্তু আসানসোল একটু অজানা । প্রথমেই বলি নবনির্মিত বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের ব্রাঞ্চ আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের মন্দিরের কথা । শহরের মধ্যে গত ২০ জানুয়ারী, ২০১৯ সদ্য উদ্বোধন হয়েছে এই রামকৃষ্ণ মিশন মন্দির টি । খুব সুন্দর শান্ত পরিবেশে এই মন্দির টি । ভোগ এবং থাকার ব্যবস্থা ও আছে । যোগাযোগের জন্য আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে । এছাড়া ঘুরে নিন ঘাগর বুড়ি চন্ডী মাতা মন্দির । খুব জাগ্রত ঠাকুর । আর আছে চন্দ্রচূর শিব মন্দির । এটিও আসানসোল থেকে ঘুরে দেখে নেওয়া যায় । কল্যানেশ্বরী : ------------------ আসানসোল থেকে ২৫ কিমির মধ্যে এবং মাইথন থেকে চার কিমি আগে প্রায় ৫০০ বছরের পুরনো বিখ্যাত এবং জাগ্রত মন্দির কল্যানেশ্বরী মন্দির । একটা পুরানো কাহিনী এখনও মানুষের মুখে মুখে বিরাজ করে । শোনা যায় এক চুড়ি বিক্রেতা বনের পথে চলতে চলতে একটি পাথর খন্ডের উপর এক সুন্দরী কন্যাকে দেখতে পান । এই সুন্দরী কন্যা তাঁর কাছে এক জোড়া চুড়ি তাকে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন । চুড়ি বিক্রেতা চুরীর বিনিময়ে তাঁর কাছে পয়সা চায় । কন্যা রূপী মা কল্যানেশ্বরী তাকে বলে রাজার কাছ থেকে পয়সা চেয়ে নিতে । একই সময় রাজা স্বপ্নে দেখা পান মা রূপী কন্যা তাঁর কাছে এক জোড়া চুড়ি কিনে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন । রাজা যখন চুড়ি বিক্রেতার কাছে এই কাহিনী শুনলেন তখন রাজা মাকে দেখা দেওয়ার জন্য ব্যকুল হয়ে মাকে ডাকতে লাগলেন । তখন মা কল্যানেশ্বরী তাঁর ডাকে সন্তুষ্ঠ হয়ে তাকে নদীর মধ্য থেকে হাত তুলে হাতের চুড়ি জোড়া দেখিয়ে দিলেন । এখনও মন্দির প্রাঙ্গনে মায়ের পদচিহ্ন লক্ষিত হয় । কথিত আছে অতীতে এখানে মানুষ বলী হতো । সন্তানহীন মহিলারা এখানে আসেন এবং মায়ের কাছে কামনা করেন সন্তান লাভের জন্য । প্রচুর ভক্তগন এখানে আসেন এবং মন্দিরের সামনে ডালিম গাছে ঢিল বাঁধেন তাদের মনষ্কামনা পূরনের জন্য । মনষ্কামনা পূরন হলে আবার তারা ঢিল খুলে দিয়ে মায়ের মন্দিরে পূজা দেন । যারা মাইথন ঘুরতে আসেন তাঁরা একবারের জন্য হলেও মায়ের মন্দিরের দর্শনে আসেন । মন্দিরের পাশে অসংখ্য থাকার হোটেল আছে ।
মাইথন :
---------- কলকাতা থেকে কমবেশি ২৫০ কি.মি. দূরত্বে রয়েছে একদিনের জন্যে ঘুরে আসার জন্য একটি নিরিবিলি এবং মনোরম জায়গা, যেটি হলো মাইথন । রেলপথে যেতে হলে বরাকর অথবা কুমারডুবি তে নামতে হয় । সেখান থেকে গাড়িতে আরও 20 মিনিট মত লাগবে পৌঁছাতে । মাইথন জায়গাটি পশ্চিমবঙ্গ এবং ঝাড়খন্ড সীমান্তবর্তী একটি জায়গা । মাইথন ড্যাম পেরোনোর সাথে সাথেই শুরু হয়েছে যাচ্ছে ঝাড়খন্ড । এখানে বেশ কিছু ভালো ভালো হোটেলও আছে । মাইথন ড্যাম এর সাথেই আছে নৌকা বিহার এর সুব্যাবস্থা । বিকালের দিকে নৌকায় অনেকটা সময় কাটানো ও যায় এবং নৌকায় করে সবুজ দ্বীপ থেকে ঘুরে আসা যায় । এর চারিদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশ অপূর্ব । মন মোহিত করার মতন চারিদিকে সৌন্দর্য । জলাধারের গা থেকে ছোট ছোট পাহাড় উঠে এসেছে এই পাহাড়্গুলি গাছপালা এবং জংলি ফুল এত সুন্দর যে চোখ জুড়িয়ে যায় এই জলাধারটি সুবিশাল । এক কথায় সপরিবারে সপ্তাহের শেষে দুদিন ছুটি থাকলে ঘুরে আসার পক্ষে উপযুক্ত । কি কি দেখবেন: ------------------ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প: এখানে দেখার জন্য অনেক কিছুই রয়েছে জলাধারটি অনেকদূর লম্বা বাঁধ দিয়ে জল আটকে জল বিদ্যুৎ তৈরি করা হচ্ছে । তাছাড়া এখানে জলকে আটকে দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন এর জল সরবরাহ করা হয় । ডিয়ার পার্ক : এই বাঁধ এর দক্ষিণ দিকে সুন্দর ডিয়ার পার্ক আছে বাঁধের উপর থেকে এই ডিয়ার পার্ক এর হরিণ গুলি কে দেখা যায় । এখানে হরিণের সংখা প্রচুর , ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৫০০ । মিলেনিয়াম পার্ক : খুব সুন্দর একটা পার্ক. জলাধারের পাশেই অবস্থিত । এই পার্কে খুব সুন্দর সুন্দর মূর্তি, আছে ফুলের বাগান, গাছপালা, আরো অনেক কিছু দেখার মতন জিনিস রয়েছে । বিকালের দিকে ঘন্টা তিন চার এখানে সময় কাটানো যেতে পারে । পাহাড় : এখানে ছোট ছোট অনেকগুলি পাহাড় জলাধারের গা থেকে উঠে গেছে। এই পাহাড় গুলি অনভিজ্ঞ লোকেদের পক্ষে ট্রাকিং করা খুব সহজ । এই পাহাড়ের উপর উঠে চারিদিকে সৌন্দর্য অবলোকন করলে মন জুড়িয়ে যায় । পাহাড়ের উপরে ছোট ছোট পাথরের টিলা, টিলা গুলি এত ছোট দেখলে মনে হবে এই বুঝি এই গুলো গড়িয়ে পড়বে একটু ঠেলা দিলেই । ঘন্টা দুই তিন সময় এখানে কেটে যাবে । বোটিং পয়েন্ট : এখান থেকে বোটে করে জলাধার এর মধ্যে ঘোরাফেরা করতে খুব ভালো লাগে । নীল জলরাশি মধ্যে ঘুরতে আর মৃদু মধুর বাতাস খেতে খুব ভালো লাগে । ভান্ডার পাহাড় : এখানে আছে ভান্ডার পাহাড়, প্রায় ৩০০ টি সিঁড়ি ভেঙে উঠলে পৌঁছে যাবেন অমরনাথ শিব মন্দিরে ।
পাঞ্চেত এবং গড়পঞ্চকোট :
----------------------------------- মাইথন থেকে একটা গাড়ী ভাড়া করে ঘুরে নেওয়া যায় পুরুলিয়া জেলার পাঞ্চেত এবং গড়পঞ্চকোট । পাঞ্চেতে আছে ড্যাম যা মাইথন ড্যামের তিন চার গুন বড় । কিন্তু কোনো বোটিং এর ব্যবস্থা নেই । নিচে আছে নেহেরু পার্ক । আর আছে স্নেক পার্ক । মাইথন থেকে কমবেশি ৩০ মিনিটের দূরত্বে আছে গড়পঞ্চকোট । এখানে আছে গড়, এখানকার মূল আকর্ষণ হলো পঞ্চতন্ত্র মন্দিরের ধংসস্তূপ, এবং অতুলনীয় টেরাকোটার কাজ । এছাড়াও আরও সংলগ্ন অনেক জায়গা আছে (যেমন জয় চন্ডী পাহাড়) যা হয়তো একদিনের জন্য গিয়ে দেখে ওঠা সবার পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না । কিভাবে যাবেন : ------------------- হাওড়া থেকে অনেক ট্রেন বরাকর যায় । তবে সকালের দিকে ট্রেনে যাওয়াই ভালো । ব্ল্যাক ডায়মন্ড এক্সপ্রেস ৬:১৫ হাওড়া ছাড়ে, বরাকরে পৌঁছোবে দশটা দশ । ওখান থেকে অটোয় করে মাইথন ড্যাম আধ ঘন্টা রাস্তা । এ ছাড়া আছে জম্মু তাই এক্সপ্রেস হাওড়ায় ছাড়ে ১১:৪৫ । শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেস ১:১০ । তবে সকালের দিকেই যাওয়া ভালো । কোথায় থাকবেন : --------------------- মাইথন ড্যামে অনেকগুলি হোটেল আছে । মাইথন ফরেস্ট গেস্ট হাউস, ডব্লিউ বি টি ডি সি মাইথন লজ, জিয়া গেস্ট হাউস, হোটেল শান্তি নিবাস, হোটেল মাইথন, ইত্যাদি । প্রতিটি হোটেলে ভাড়া ৭০০-৮০০ টাকা থেকে শুরু । এসি নন-এসি সবরকম রুম পাওয়া যায় । শীতকালে পিক সিজন, রুমের চাহিদা অনেক বেশী । এছাড়া কল্যানেশ্বরী মন্দিরের কাছেও অনেক হোটেল আছে । আশা রিসোর্ট, হোটেল যাত্রীনিবাস ইত্যাদি ।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |