দাদা guide লাগবে।
না দাদা লাগবে না। আরে দাদা ভিতরে কিছু বুঝতে পারবেন না guide ছারা। আমি বললাম, না দাদা লাগবে না। তবুও ছিনে জোঁকের মত পিছনে পরে রয়েছে দেখে অগত্যা জিজ্ঞেস করলাম দাদা চেহেলসুতুন টা কোথায় ছিল একটু বলবেন। আর তার প্রধান কে ছিলেন। এটুকু বলে দিলেই হবে। ভদ্রলোক টি বললেন জানি না। আমি আবার জিজ্ঞাসা করলাম আচ্ছা সিরাজ উদ দৌল্লা কি এখানেই থাকতেন। এবার লোকটি দেখলাম বলল না। বলেই উল্টোদিকে হাটা লাগালো। আর আমরাও ধীর পায়ে ঢুকলাম হাজারদুয়ারীতে। ঘটনা টা হল আমি আর আমার স্ত্রী ঝটিতি সফরে গেছি মুর্শিদাবাদ। আমার বার দুই তিন ঘোরা হলেও আমার স্ত্রীর এই প্রথম মুর্শিদাবাদ ভ্রমন। হাজারদুয়ারী হল ব্রিটিশ যুগের বাংলার এক ঐতিহাসিক নিদর্শন বিশালাকার এই প্রাসাদে প্রত্যেকটি হলঘর অনন্য সৌন্দর্যের আলোকে সজ্জিত। বাংলার নবাবি আমলে স্থাপত্যকলার এক উজ্জল প্রতিফলন হল এই হাজারদুয়ারী প্রাসাদ । ১৭শ শতাব্দী থেকে ইংরেজ শাসনের আগে পর্যন্ত সুবা বাংলা, বিহার ও ওড়িষার রাজধানী ছিল মুর্শিদাবাদ শহর ৷ এখানে রাজত্ব করতেন নবাবরা ৷ বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবের স্মৃতি বিজড়িত মুর্শিদাবাদ মুর্শিদকুলি খাঁর নাম থেকেই জেলার নাম হয় মুর্শিদাবাদ, আবার কেউ বলেন মুর্শিদাবাদের নামকরণ হয়েছে নানকপন্থী সাধু মুকসূদন দাসের নাম থেকে।
মুর্শিদাবাদ শহরের সেরা আকর্ষণ হাজারদুয়ারি । ১৮৩৭ সালে নবাব নাজিম হুমায়ুন ঝায়ের জন্য ৮০ ফুট উঁচু তিনতলা গম্বুজওয়ালা এই প্রাসাদটি নির্মিত হয়। আদপে ৯০০টি দরজা হলেও আরও ১০০টি কৃত্রিম দরজা রয়েছে প্রাসাদে। তাই নাম হাজারদুয়ারি। প্রাচীন মুর্শিদাবাদের স্মৃতি নিয়ে অপরূপ গথিকশৈলীর এই প্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। আক্ষরিক অর্থেই এ এক ঐতিহাসিক জাদুঘর। নীচের তলায় রয়েছে তৎকালীন নবাবদের ব্যবহৃত প্রায় ২৭০০টি অস্ত্রশস্ত্র। যার মধ্যে আলিবর্দি ও সিরাজের তলোয়ার এমনকী যে ছুরিটি দিয়ে মহম্মদি বেগ সিরাজকে খুন করেছিল তা পর্যন্ত রক্ষিত আছে এই সংগ্রহশালায়। এই বিশাল রাজপ্রাসাদের দ্বিতলে দেখা যায় একটি রুপোর সিংহাসন যেটি ব্রিটিশ সম্রাজ্ঞী মহারানি ভিক্টোরিয়ার দেওয়া উপহার। ১৬১টি ঝাড়যুক্ত বিশাল ঝাড়বাতির নীচে সিংহাসনে বসে নবাব দরবার পরিচালনা করতেন। মন্ত্রণাকক্ষের লুকোচুরি আয়না, দেশ-বিদেশ থেকে সংগৃহীত বিশ্ববিখ্যাত সব ঘড়ি, মার্শাল, টিশিয়ান, রাফায়েল, ভ্যান ডাইক প্রমুখ ইউরোপীয় শিল্পীদের অয়েল পেন্টিং, প্রাচীন সব পাথরের মূর্তি হাজারদুয়ারিকে আরও বিখ্যাত করে তুলেছে। তিনতলায় আছে নবাবী আমলের ঐতিহাসিক নিদর্শন সোনা দিয়ে মোড়া কোরাণ শরিফ, অমূল্য পুঁথিপত্র, আইন-ই-আকবরির পান্ডুলিপি সহ অসংখ্য বইয়ের সম্ভার। ভারতের ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসেরও কিছু বিশিষ্ট নিদর্শন সংরক্ষিত রয়েছে এই মিউজিয়ামে। হাজারদুয়ারির চত্বরে রয়েছে ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে জনার্দন কর্মকারের তৈরি ১৮ ফুট লম্বা, আট টন ওজনের কামান। একবার তোপ দাগতে ৩০ কেজি বারুদ লাগত বলে জানা যায়। এটি বাচ্চেওয়ালি তোপনামেও পরিচিত।
অনেকে ভাবে এই প্রাসাদ বুঝি নবাব সিরাজউদ্দৌলার তৈরি। আসলে এই প্রাসাদ তৈরী হয় সিরাজ জমানার পরে। সিরাজের প্রাসাদের নাম ছিল হীরাঝিল প্রাসাদ ৷ সেটা এখন ভাগীরথী নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার জেনারেল ম্যাকলাউডের তত্ত্বাবধানে 29 শে আগস্ট 1829 সালে নবাব হুমায়ুন ঝা এই প্রসাদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। 1837 সালের ডিসেম্বরের নির্মাণকার্য শেষ হয়। সমগ্র প্রসাদটি 424 ফুট দৈর্ঘ্য, 200 ফুট চওড়া, 80 ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট। তৈরি করতে খরচ হয়েছিল সেই সময় সাড়ে প্রায় সাড়ে 18 লক্ষ টাকা।
হাজারদুয়ারি প্রাসাদের উল্টোদিকে বড়া ইমামবারা। এইটি একটি মুসলমান ধর্মস্থান, মূলতঃ শিয়া মুসলমানদের জন্য। ইমামবরার দৈর্ঘ্য ৬৮০ ফুট। মহরমের সময় এখানে প্রচুর জনসমাগম এবং পরব পালন হয়। যদিও মুসলমান ধর্মস্থান, মহরমের সময়ে এই স্থান সকল ধর্মের মানুষের জন্য উন্মুক্ত। বছরের অন্যান্য সময়ে এই ইমামবড়া বন্ধ থাকে।
এখানে ঘুরতে লাগলো প্রায় ঘন্টা চারেক এরপরের গন্তব্য খোসবাগ তার জন্য একটা টুকটুক book করে গেলাম সদরঘাট। সেখান থেকে ভাগীরথী নদীতে নৌকা চড়ে খোশবাগ। খোশবাগে আলিবর্দি খান, সিরাজ, সিরাজপত্নী লুৎফউন্নিসা, এবং সিরাজের পরিবার পরিজনের কবর রয়েছে। পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে গেলাম বাকি জায়গা গুলো দেখতে। যেমন কাটরা মসজিদ: নবাব মুর্শিদ কুলি খাঁ ১৭২৩ সালে এই মসজিদ নির্মাণ করান। এই মসজিদের ৫টি গম্বুজ ছিল, কিন্তু ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে দুটি গম্বুজ ভেঙ্গে পড়ে। এই মসজিদে একসময়ে একসাথে ২,০০০ ব্যাক্তি নামাজ করতে পারেন। কাটরা মসজিদের দক্ষিণ-পূর্ব দিকে আগে একটি তোপখানা ছিল। এই স্থানে এখনো জাহান কোষা (জাহান কোষা শব্দের অর্থ বিশ্বের ধ্বংসকারী) নামে একটি বড় কামান আছে। জনশ্রুতি অনুসারে মুর্শিদ কুলি ঢাকা থেকে রাজধানী স্থানান্তরের সময় এই কামানটি সঙ্গে নিয়ে আসেন। এখান থেকে গেলাম নসিপুর প্রাসাদ: রাজা কীর্তিচন্দ্র বাহাদুর ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে এই প্রাসাদ নির্মাণ করান। প্রাসাদের উদ্যানে রাম ও লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির রয়েছে। কাছেই মোহনদাসের আশ্রম এবং জাফরগঞ্জ দেউড়ি রয়েছে। জগৎ শেঠের কুঠি এই স্থানের কাছেই।এটিও এখন সংগ্রহসালা। এরপরের গন্তব্য কাঠগোলা বা কাঠগোলা বাগানবাড়ী: রাজা ধনপত সিং দুগর এবং রাজা লক্ষ্মীপৎ সিং দুগরের বাগানবাড়ী শতাব্দীপ্রাচীন। এখানকার আদিনাথ মন্দিরটি ১৮৭৩ সালে হেরেক চাঁদ নির্মাণ করেন। এই মন্দিরের দেওয়ালের কারুকার্য অতি সুন্দর। কাঠগোলা দেখার পর গেলাম মোতিঝিল: এইটি একটি ঝিল এবং তৎসনলগ্ন বাগান যা সিরাজের পিসি ঘসেটি বেগমের পতি নওয়াজেশ মহম্মদ নির্মাণ করান। এই স্থান কোম্পানি বাগ নামেও পরিচিত। এই ঝিলটি দেখতে ঘোড়ান নালের মত। এর তৎসংলগ্ন স্থানে রবার্ট ক্লাইভ সুবে বাংলার (বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা) দেওয়ানিপ্রাপ্তি উদযাপন করেন (যদিও সেই উদযাপনস্থান এখন ধংসপ্রাপ্ত হয়েছে)। এই মোতিঝিলের প্রাসাদে ওয়ারেন হেস্টিংস কিছুদিন বসবাস করেন। ব্যাস ফুরিয়ে গেল ছুটি। আবার সেই রোজকার জীবনে ফেরা। সেই রোজ কাজ আর থোর বড়ি খাড়া আর খাড়া বড়ি থোর। কাজেই নবাবের শহর থেকে আবার কাজের শহরে ফেরা। কিন্তু সাথে নবাবী স্মৃতি। ফেরার ট্রেনের নাম ও কিন্তু হাজারদুয়ারী express.
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |