।।। জটার দেউল ।।।
মন্দিরের প্রতি আকর্ষণ দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে, আর সেই টানেই আমাকে নিয়ে চলেছে বাংলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত। অনবরত ছুটেই চলেছি মন্দিরের বিভিন্ন রূপ ও কারুকার্য নিজের চামড়ার চোখে ধরে রাখার জন্য এবং এই মুহূর্তগুলো স্মৃতির সিন্দুকে ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা নামক যন্ত্রটি সাহায্য করে চলেছে। আর সেই অনুভূতি গুলি ভাগ না করে নিলে মনের ভালো লাগার পরিমান কমে যায়। প্রথম ইচ্ছাই ঘোষের দেউল দর্শনের মাধ্যমেই আমার মানস কলসে মন্দিরের দেউল শৈলীর পরিচয়। এরপর একের পর এক দেউল এর সন্ধানে এগিয়ে চলা। আজ জটার দেউল কে তুলে ধরার প্রচেষ্টা। অবাক লাগে এই জটার দেউল এর অবস্থান। সুন্দরবনের ঘন জঙ্গলের মাঝে কি ভাবে বা কেন গড়ে উঠলো জটার দেউল তা আজও রহস্যময়। ১৮৭৫ সালে প্রাপ্ত একটি তাম্র লিপি অনুযায়ী রাজা জয়চন্দ্র এই মন্দির স্থাপন করেন খ্রিষ্টীয় ৯৭৫ সনে। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই তাম্র লিপি উধাও হয়ে যাওয়ায় জটার দেউলের ইতিহাস আজও রহস্যময়। দেউল শৈলী যদিও জৈন ধর্মের মন্দির হিসাবে পরিচিত হলেও সুন্দরবন এলাকায় এই ধর্মের তেমন চল ছিল বলে তার বিশেষ প্রমান নেই। কাজেই লোকশ্রুতি হিসাবে ধরে নেওয়াই যায় এটি একটি শিব মন্দির। জটাধারী শিবের নাম অনুসারে জটার দেউল নামে সমধিক পরিচিত। আনুমানিক খ্রিষ্টীয় একাদশ শতক এই দেউল এর নির্মাণ কাল ASI অনুযায়ী। ইষ্টক নির্মিত এই দেব দেউলটি পঞ্চরথ ভিত্তির উপর এক শিখর বিশিষ্ট। দেউল এর প্রবেশ পথ ক্রমবর্ধমান খিলান যুক্ত। মন্দির এর দেওয়াল টেরাকোটার কাজে অলঙ্কৃত হলেও তার বেশি ভাগই সময়ের জালে অবলুপ্তির পথে। দেউল এর শিখর প্রায় ৬৫ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট এবং ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য প্রস্থ যুক্ত বর্গাকার এই মন্দির। মন্দিরের সামনের অংশটি দেখলেই বোঝা যায় যে দেউলটি রথের ন্যায়, এই পঞ্চরথ শৈলী বেশি ভাগ দেউল এই অবলুপ্ত। কাজেই জটার দেউল সেই দিক দিয়ে অবশ্যই দর্শনীয়। দেউলটি একটি মাটির ঢিপির উপর অবস্থিত হওয়াতে আরও দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে। বিস্তীর্ণ খেতি জমির মাঝে উঁচু মাটির ঢিপির উপর জটার দেউল যেন শিবের উপস্থিতি প্রকট ভাবে জানান দেয়, সঙ্গে এমন প্রাকৃতিক পরিবেশে জটার দেউল আরও আকর্ষণীয়। দেউল এর গর্ভে শিব লিঙ্গ এবং আরও অনেক দেব দেবীর ছবি পূজিত হন। জটার দেউল এ শিব আরাধ্য হলেও যেসব মূর্তি পূজিত হয় তাঁর প্রাগৈতিহাসিক মূল্য না থাকলেও স্থানীয় মানুষের কাছে ভক্তির মূল্য যথেষ্ট, তারই নমুনা মন্দিরের লোহার প্রবেশ পথে অসংখ্য লাল হলুদ সুতোয় ইঁট এর টুকরো বাঁধা যা কিনা মানসিক এর প্রতীক। ASI এর অধীনস্ত হওয়ায় আশারাখি পরবর্তী প্রজন্ম এই মন্দির শৈলী চাক্ষুস করতে পারবে।
পথনির্দেশ :- শিয়ালদহ থেকে লক্ষ্মীকান্তপুর বা নামখানা লোকাল ট্রেন এ প্রায় ঘন্টা দুয়েকের মধ্যেই মথুরাপুর স্টেশন। সেখান থেকে ট্রেকার বা বাস বা অটো করে ঘন্টা খানেকের মধ্যে রায়দীঘি পৌঁছে যান। এরপর মুড়ি নদীর উপর ব্রিজে দাঁড়িয়ে আছে মোটর ভ্যান বা লাদেন গাড়ি, এতে করেই গ্রাম্য পথে আধা ঘন্টার মধ্যেই জটার পূর্ব গ্রাম ও পশ্চিম গ্রাম এর মাঝেই পিচকালো রাস্তার ধারেই জটার দেউল আপনার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। প্রসঙ্গত বলে রাখি এই রাইদিঘী হল সুন্দরবনের অন্যতম প্রবেশপথ। মুড়ি নদী বেয়েই চলে যাওয়া যায় সুন্দরবনের গভীরে। এই পুরো পথেই গ্রাম্য সতেজতা আর বিভিন্ন পাখিরা আপনাকে সঙ্গ দেবে। আর আছে কিছু গ্রাম্য সরল মানুষ, যারা আপনাকে প্রতি নিয়ত সাহায্য করবে জটার দেউল এ পৌঁছাতে।।।
পুনঃ:- প্রতি বছর ২ রা বৈশাখ এই জটার দেউল এ ঘোড়া দৌড় এর এক অনন্য আয়োজন হয়ে থাকে। প্রচুর লোকসমাগম এবং ছোট খাটো মেলার আকার নিয়ে জটার দেউল এই বিশেষ দিনে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে আলাদা মাত্রায়।
6 Comments
Amit Kumar Ghosh
3/26/2019 10:20:13 pm
ঐতিহাসিক ব্যাপার। একটু পায়ের ধুলো দিস
Reply
Arindam ghosh
3/26/2019 10:22:51 pm
Darun lekhan badhon. Khub valo
Reply
অনুপ কুমার রায়
3/26/2019 10:36:20 pm
কিভাবে পেয়েছো তুমি বাউলিয়া চোখ,
Reply
Urbi
3/26/2019 10:43:11 pm
Ashadharon
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |