পৃথিবীর অসুখ । মনেরও । চারিদিকে শুধু নেতিবাচক সতর্কতা । সদর দরজায় ঝুলছে বড় তালা । চরণযুগল সুদীর্ঘ বিশ্রামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষনা করার জন্য মুখিয়ে আছে । চড়া বাজারেও তবু যা হোক পেটে জুটছে দুমুঠো কিন্তু দীর্ঘ অনশনে মনের মৃতপ্রায় অবস্হা ।এমন সময়ে Breathe Fresh এর ডাক । মৌমিতা বললো দারোন্দা যাবে ? শান্তিনিকেতন থেকে আট কিলোমিটার আগে ইলামবাজারে । মৌমিতা , - যার হাত ধরে সত্তর বছরের বৃদ্ধ বৃদ্ধারা কার্তিকস্বামী দর্শন করে , সুউচ্চ লাদাখ পরিভ্রমণ করে , লাক্ষাদ্বীপে ফিনিস পাখির মতো এদ্বীপ ওদ্বীপ ঘুরে বেড়ায় । সেই ভরসা আর নির্ভরতার Breathe Fresh এর সাথে , সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করে আমরা সতেরজন , যাদের বয়স ৪০+ , একটা এসি ট্রাভেলারে করে বেড়িয়ে পড়লাম এক শনিবারের সাত সকালে । কিন্তু কিছুদূর গিয়ে দুর্গাপুর হাইওয়েতে রোড এ্যাকসিডেন্টের জন্য বিশাল জ্যাম । অতএব ঘুরপথ ।গাড়ি নেমে পড়লো গ্রামের অলি গলি মেঠো পথে । মৌমিতার কপালে চিন্তার ভাঁজ । যাত্রীদের কিন্তু কোন চিন্তা নেই । তারা দিব্যি তাজা সবজির বাজার , সরু পথের দুধারে চেনা ফুলের সমারোহ আর সবুজ বনানীর ছায়ায় ছায়ায় বেশ আমেজেই ছিল । প্রায় চল্লিশ মিনিট ঘুরপাক খেয়ে আবার গাড়ি উঠলো হাইওয়েতে ।এরপর শুধুই নির্দিষ্ট গন্তব্য । ক্রমশ শহুরে ইমারত অদৃশ্য হয়ে শুরু হলো কংক্রিট শাড়ির শুভ্র কাশপাড় । যতদূর চোখ যায় কাশের ঢেউ আর কাশের ঢেউ ।চোখের আয়নায় উড়ন্ত কাশের শিফন আঁচল , মনের কুঠরিতে অন্ধকার দূর করে আলোর লন্ঠন ।শরতের চিঠি এসে গেছে ।
কাশঘোর কাটিয়ে আমরা কিছুটা দেরিতে পৌঁছলাম উপাসনা রির্সটে । চিত্রশিল্পীর হাতে আঁকা ছবির মতো গ্রাম — ছবির মতো রির্সট । গাড়িতেই breakfast এর পর্ব মিটে গিয়েছিল । তাই চান টান সেরে , ডাল - ভাত - মাছের ঝোল দিয়ে মধ্যাহ্নভোজনের পর বিকেল চারটের সময় আমরা পৌঁছলাম অজয় নদের তীরে । তখন সূর্যাস্তের বিষন্ন আলো কাশের বুকে দিনান্তের ক্লান্তিটুকু জুড়িয়ে নিচ্ছে । নদীর জলে কাশ আর রক্তিম কিরণের ছায়া । আমরা বাক্ স্তব্ধ , মন্ত্রমুগ্ধ । প্রকৃতি দরাজ হাতে তার অতিথিদের আনন্দ বিলোতে ব্যস্ত । আমরাও নিঃসঙ্কোচে তার কাছে সঁপে দিলাম মনের যত অবসাদ । মনে হলো সাহস করে শিকল কাটতেই হয় , তবেই তো মেলে অপার মুক্তি । অদূরে গাছের তলায় চাওলার ছাউনি । ‘ র’ টি খেয়ে ফেরা হলো রির্সটে । সান্ধ্যআড্ডা জমে উঠলো মুড়ি তেলেভাজা আর গরম চায়ের সাথে । একেবারে খাঁটি বাঙালিয়ানা ।
গানের সুরে, গল্পের তোড়ে , নাচের ছন্দে বয়স পালালো হার না মানার দেশে আর কোভিড নিখোঁজ হলো নিরুদ্দেশের পাতায় । সাহস করে শিকল না কাটলে কি যে ভুল হতো তা মনে মনে স্বীকার করে নিলাম । রাত নটায় দিশি চিকেনের ঝোল , নরম রুটি আর লোভনীয় স্বাদের রসগোল্লা সহযোগে ডিনার সেরে যখন ঘরের দিকে পা বাড়ালাম তখন মাথার ওপর তারাদের সাথে অসংখ্য জোনাকিরা আলো জ্বালাতে ব্যস্ত — জীবনের আলো !! উপাসনার কর্ণধার মিন্টুদা ও তাঁর স্ত্রী নিজের হাতে রির্সটের তত্ত্বাবধান করেন । তাই কোথাও নেই কোন কৃত্রিমতার ছোঁয়া । তাঁদের নিজস্ব ভাবনায় অনন্যতার মাত্রা পেয়েছে রির্সটটি । পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে স্টাফেদের নিবিড় আন্তরিকতা কোন অতিথিকেই কোন অভিযোগ জানাবার সুযোগ দেয় না । কোভিডের মোকাবিলা করার জন্য সবরকম সতর্কতাই এখানে অবলম্বন করতে দেখেছি । এ বিষয়ে রিসর্টের কোন খামতি নেই । পরদিন কাকভোরে ছাদে উঠে দেখলাম দিনশুরুর রঙমশাল আলোর হোলি । মেঘের জন্য সূর্যোদয় অধরা থেকে গেল । দিনের আলো পরিষ্কার হতেই আমরা ছুটলাম কামার পাড়ায় লক্ষ্মীসায়র দেখতে । দারোন্দায় এখন ছোট বড় সব দীঘিই শাপলা শালুক পদ্মে ভরপুর । মহামায়াকে বরণ করতে তারা সম্পূর্ণ তৈরি । এখানে তালগাছে এখনও অনেক তাল মজুত । কত তাল মাটিতে পড়ে গড়াগড়ি যাচ্ছে । প্রচুর তাল কুড়নো হলো । লক্ষ্মীসায়র নামের সঙ্গে সাযুজ্য রেখে আয়নার মতো স্বচ্ছ ও পবিত্র । মাছ আছে বলে এই দীঘির পুষ্পবাহার নেই । প্রচুর ছবি তোলা হলো এখানে । বটের ঝুড়ি ধরে খাওয়া হলো দোল । বিজ্ঞান প্রয়োজন প্রকৃতি অপরিহার্য ।পাতাঝড়া মাটির পথ পেরিয়ে মনে মনে একটা প্রতিজ্ঞা হয়েই গেল ‘ আবার আসিব ফিরে ।’ ফেরার সময় মিন্টুদা গ্রুপ ছবি তুলে সকলকে একটা করে ছোট ছোট গাছের চারা উপহার দিলেন , মধুর স্মৃতির ফুল ফুটিয়ে যা আজীবন পল্লবিত হয়ে থাকবে ।
1 Comment
Shyamali Mullick
9/26/2020 10:35:52 am
Thanks 🙏🏼 a lot for sharing my writing
Reply
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |