** দুর্ভাগ্যের দীঘা **
প্রথমত, কিছু অসুবিধার জন্য এই পোষ্ট লিখতে একটু দেরী হয়ে গেল। সেজন্য আমি দুঃখিত। যাই হোক, আজ সেই দীঘা পর্ব, যা লেখার জন্য অনেকেই অনুরোধ করেছিলেন। ঘটনাটা অনেক পুরনো। 2010 সালের। তখন আমার ছোট ছেলে হয় নি, আর বড় ছেলের বয়স 8/9 মাস। আজ স্মৃতি রোমন্থন। কয়েকদিন ধরে আমার গিন্নিমা আবদার করছিল, "চলোনা, শনি-রবি ছুটি আছে, দীঘা ঘুরে আসি।" আমার একটাই পয়েন্ট ছিল, ছেলে খুব ছোট। ওকে নিয়ে এই অবস্থায় যাওয়া অসম্ভব। পরে হবে। কিন্তু গিন্নিমা নাছোড়বান্দা। এই টানাপোড়েন নিয়ে সপ্তাহখানেক চলে যাচ্ছিল। একদিন কলেজ থেকে সবে বাড়ি ফিরেছি, সারাদিন কাজের একটু বেশি চাপ ছিল, মাথাটাও ধরে ছিল। দরজা দিয়ে ঘরে ঢুকতে পারিনি, সবে জুতোটা খুলেছি, আবার সেই ঘ্যানঘ্যানানি। "দীঘা নিয়ে যাবেনা তো?", "তাহলে বাপের বাড়ি ই চলে যাই, ছুটি আছে।" গেল মাথাটা গরম হয়ে। কিছুটা বাকবিতণ্ডার পরে, জামাকাপড় না ছেড়েই ব্যাগ গুছতে শুরু করলাম। বাবা, মা বোঝাতে লাগল, "এই রাতে (তখন সন্ধ্যা 6 টা) 8 মাসের বাচ্ছা নিয়ে জাসনা।" আমার একটাই বক্তব্য, "প্রতিদিন ঘ্যানঘ্যানানি শোনার থেকে, বেড়িয়ে আসাই ভালো।" তখন বাচ্ছা দেখার জন্য, 18/19 বছরের একটি মেয়ে ছিল। বৌ, বাচ্ছা, আর মেয়েটিকে নিয়ে একপ্রকার জোর করে বেরিয়ে পড়লাম। বাড়ি থেকে অটো করে গড়িয়া বাস স্ট্যান্ড। সেখানে শুনলাম রাতে দীঘা যাওয়ার কোনো বাস নেই। অগত্যা হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। এবার গিন্নিমার "বোধোদয়" হয়েছে। হাতটা চেপে ধরে শুধু বলছে, "ওগো চলো, বাড়ি ফিরে যাই"। আমার আবার একটা ব্যামো আছে। মাথাটা গরম হয় তাড়াতাড়ি, ঠান্ডা হয় দেরি করে। তখনও ঠান্ডা হয়নি, তাই যাবতীয় অনুরোধ উপেক্ষা করে, হাওড়াগামী হলাম। রাত 8/8.30 নাগাদ হাওড়া পৌছালাম। সরকারি বাস নেই, প্রাইভেট বাস, রাত 9.30 এ ছাড়বে। ছেলেকে দুধ খাইয়ে, নিজেরা খাওয়া দাওয়া করে, কিছু কেক, বিস্কুট, জলের বোতল ও Huggies নিয়ে বাসে চেপে বসলাম। রাতের বাস, থামাথামির প্রশ্ন ই নেই। ঝড়ের গতিতে ছুটল। রাত 1.30 নাগাদ ওল্ড দীঘা পৌছালাম। বাসে তখন 2/4 জন লোক। বাকিরা কোলাঘাট, মেছেদা য় নেমে গেছে। আমাদের নামিয়ে দিয়ে, বাস ছুটল নিউ দিঘার দিকে। বাস থেকে নেমে মনে হল, বুকের ভিতরটা ফাঁকা ফাঁকা লাগছে, শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বয়ে যাচ্ছে। গিন্নিমা তো কেঁদে অস্থির। আমি "কিংকর্তব্যবিমূঢ়"। এতক্ষনে মাথাটা ঠান্ডা হয়েছে। এতক্ষনে উপলব্ধি করলাম, দুই যুবতী ও এক বাচ্চাকে নিয়ে আমি একা এখানে এসে মস্ত বড় ভুল করেছি। রাত 1.30। বাসের তীব্র আলো চলে যাওয়ার পর উপলব্ধি করলাম, ঘুটঘুটে অন্ধকারে শুনশান রাস্তার উপরে আমরা 4 জন ছাড়া আর কেউ নেই। থাকার কথাও নয়। থাকবো কোথায়, খাবো কি???? এক অজানা ভয়ে, শরীরে ঠান্ডা ও কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম অনুভব করছি। কিছুক্ষন অন্ধকার সয়ে যাওয়ার পর অনেক দূরে একটা ক্ষীণ আলো দেখতে পেলাম। আলোর উদ্দেশ্যে আমরা রওনা দিলাম। দেখলাম, একটা চায়ের দোকান থেকে আলোটা আসছে। 4/5 জন মানুষ টলোমলো পায়ে ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আরও ঘাবড়ে গেলাম। দোকানদার কে জিজ্ঞাসা করলাম, দাদা, ঘর পাওয়া যাবে? উত্তর দেওয়ার আগেই বাকি লোকেরা ছেঁকে ধরলেন। দুজন দালাল, আর দুজন "এক গ্লাসের" কাকা ভাইপো বলে নিজেদের পরিচয় দিলেন। দালাল দের বক্তব্য, 1200 টাকার কমে ঘর পাবেন না। সকাল 10 টায় check out। আমি বললাম, এখন তো রাত 2 টো বাজতে যায়। 2010 সালে, 1200 টাকা অনেক বেশি ই মনে হল। কিন্তু তেনারা অনড়। কাকা ভাইপো খুব হেল্পফুল। নিজেরা এগিয়ে এলেন, আমাদের করুন অবস্থা দেখে। বললেন, আমরা গভর্মেন্টের হলিডে হোমে আছি। 50 টাকা ভাড়া। তবে গভর্মেন্ট এমপ্লয়ী না হলে ঘর পাওয়া যাবেনা। আমি i card দেখাতে, টলোমলো পায়ে নিয়ে গেলেন। কাছেই হলিডে হোম টা। অনেক ডাকাডাকি, হাকাহাকি, টর্চের আলো ফেলা, কড়া নাড়া.... সব বৃথা হল, কেয়ারটেকার এর "জেগে ঘুমানোর জন্য"। একটা নোটিশ দেখলাম। রাত 10 টার পর main gate বন্ধ হবে, এবং সকাল 7 টার সময় খুলবে। বুঝলাম, সব চেষ্টা বৃথা। কাকা ভাইপোকে জিজ্ঞাসা করলাম, রাত 10 টায় গেট বন্ধ হয়, আপনারা বাইরে এলেন কিভাবে আর ঢুকবেন ই বা কিভাবে? খ্যাক খ্যাক করে হেঁসে বললেন, "পাঁচিল ডিঙিয়ে"। অগত্যা দালাল বাবুদের শরণাপন্ন হলাম। অনেক দরদাম করে, 800 টাকায় রাজি করানো গেল। হোটেল এ উঠলাম। আগে বাচ্ছার দুধ দরকার, তাই ম্যানেজারকে ঘুম থেকে তুলে, একটু গরম জল দিতে অনুরোধ করলাম। এক বাটি গরম জল, 2010 সালে গরম করতে নিলো 25 টাকা। চায়ের দোকান থেকে egg tost নিয়ে এলাম 3 টে। খেয়ে দেয়ে double bed এ আড়াআড়ি ভাবে 4 জন ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন সকাল হতেই সেই হলিডে হোম। i card দেখাতে কেয়ারটেকার এক কথায় ঘর দিলেন। ওল্ড দিঘায় ঢেউ বেশি, ভিড় কম। কিন্তু বিচ টা ছোট। তাই, বারমুডা পরে, ভ্যানে ওল্ড দীঘা। কিন্তু জলের থেকে মাথার ছড়াছড়ি বেশি। তিল ধারণের জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে ওল্ড দিঘায় স্নান সারলাম।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |