আমাদের মধ্যে যে সব খাদ্যরসিক বন্ধুরা বোলপুর আর শান্তিনিকেতন ঘুরেছেন তাঁদের মধ্যে এমন বোধহয় খুব কম আছেন যাঁরা একদিনও বনলক্ষী তে মধ্যাহ্নভোজন সারেন নি। ২০১২ সালে আমি একবার আত্মীয়দের সঙ্গে শান্তিনিকেতন গিয়ে মধ্যাহ্নভোজ সারতে বনলক্ষী তে যাই আর গিয়েই সে স্থানটির সম্পর্কে কৌতুহল বোধ করি। আমাদের নাম্বার আসার আগে হাতে একটু সময় থাকাতে একটু এদিক ওদিক ঘুরে দেখতে গিয়ে বুঝলাম যে যা সময় আছে তাতে এ স্থান পুরো ঘুরে দেখা সম্ভব না। বিশাল তার পরিসর। সেখান ইতস্তত ছড়ানো কিছু কুটির দেখতে পেয়ে এক কর্মচারী কে জিজ্ঞাসা করাতে তিনি জানালেন সেগুলি হল পর্যটকদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা। মনে একটা ইচ্ছা জন্ম নিল একবার এখানেই থাকতে হবে। আর পরেরবার যখন সহকর্মীরা প্রস্তাব দিল (২০১৫) সালে বোলপুর যাবার এবার আমিও শর্ত দিলাম যে বনলক্ষী তেই থাকতে হবে। একটা কথা বলে রাখি বনলক্ষী তে ডর্মিটরি ছাড়া যে ঘরেই থাকুন না কেন আপনার মনে হবে কোনো বনবাংলো তে আছেন। এত গাছপালার সমাহার তার পরিসরের মধ্যে, আর পরিসর এত বিস্তৃত আপনার ভ্রম হতে পারে যে আপনি কোনো অভয়ারণ্যের মধ্যে আছেন। পৌঁছেই অসমাপ্ত কাজে নেমে পড়া গেল। আগেরবারের অতৃপ্ত বাসনা মিটিয়ে বাগানটাকে ঘুরে দেখলাম। প্রচুর গাছের সমারোহ, তার মধ্যে আম আর পেয়ারা বেশি আর অগনিত নাম জানা ও না জানা ফুলের গাছ। এখানে একটা নার্সারিও আছে। আর এবার বর্ষাকাল বলে বন ঘন সবুজ। অনেক পাখির ডাক ও শুনলাম কিন্ত বন এত ঘণ যে পাখির দেখা পাওয়া বড়ই মুশকিল। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা লেগে গেল খালি সেই বাগানের ভিতর ঘুরে দেখতে। ঠিক হল খাওয়া দাওয়া সেরে বের হওয়া যাবে। গন্তব্য হল "আমার কুটির" ও সোনাঝুরির হাট। আমার কুটিরে পণ্যের সম্ভার দেখে মহিলারা অত্যন্ত খুশি, তাঁরা আমাদের ধমক দিলেন যে যেন তাঁদের কেনাকাটার বাধা না দিই সময়ের অজুহাত দিয়ে। তাতে অবশ্য আমি খুশিই হলাম। কারণ আগের অভিজ্ঞতা বলে আমার কুটিরের পিছনে বাগান পের হলেই কোপাই এর তীর। চুপিসারে ক্যামেরা হাতে নিয়ে বের হলাম। আমার কুটিরের বাগান্ বেশ বড়, একখানা শ্মশান ও আছে আর তাতে এখনো কাঠের চুল্লি চলে, সেটা পেরিয়ে গেলাম কোপাই এর ধারে। এখান থেকে কোপাই এর ব্রিজ ও দেখা যায়। নদীর ধার ধরে ধরে একদিকে এগোতে এগোতে দেখতে পেলাম নদীর ভাঙনে ওপারে বেশ দৃশ্য তৈরী হয়েছে। নদীর ওপারে একখানা গ্রাম ও দেখা যাচ্ছে। যাবার ইচ্ছা হচ্ছিল কিন্ত আশেপাশে কোনো নৌকা না দেখে ক্ষান্ত দিলাম। বাগানটা ভালো করে ঘুরে আবার ফিরে এসে সবার সঙ্গে সোনাঝুরির হাটের দিকে এগোলাম। সোনাঝুরির হাটের বিবরণ আর দিলাম না। কারণ এ আপনাদের সবার খুব চেনা। এই ভ্রমনে আমার যেটা বড় পাওনা তা হল অজয়। আমার সামান্য ভৌগোলিক জ্ঞান বলে বনলক্ষীর থেকে অজয়ের দূরত্ব বেশি হবার কথা না। বনলক্ষীর এক প্রবীন কর্মচারীর কাছে জানতে পারলাম অজয় এখান থেকে দু কিমির মত। তাই আগের রাত্রে ঠিক হল প্রাতঃভ্রমনে যাব অজয়ের তীরে। কিন্তু দুঃখের কথা সকালে উঠে কেউ বিশেষ উৎসাহ না দেখানোতে আমরা চারজন মিলেই রওনা দিলাম। হেমন্তের সময় গ্রাম বাংলার এক সৌন্দর্য আর বর্ষাকালে অন্যরকম। চারপাশ এখন ঘন সবুজ। মাঠে এখন সবুজ গালিচা বিছানো। গ্রাম ছাড়িয়ে অজয়ের কাছে এসে পড়েছি এমন সময় কোথা থেকে উদয় হল জলের এক ধারা। সে আবার রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। বোধহয় ক্ষেতে জলসেচের জন্য কাটা এক নালা। মাটি গোলা জল নিয়ে বয়ে চলেছে। সেই নালা পেরিয়ে একটু এগোতেই অজয়ের পাড়ে পোঁছোনো গেল। এখন নদীতে বেশ ভালই জল। ঘোলা জল পাক খেয়ে ছুটে চলেছে। ওপারে এক মাঝিকেও দেখা গেল নৌকা নিয়ে আর হাতে বিরাট লম্বা এক লগি। ডাকাডাকি করতে চলে এল। মাত্র ১০০ টাকার বিনিময়ে সে আমাদের এপার ওপার করাবে বলল। তা সে নৌবিহারও হল। এসব শেষ করতে করতে দেখি আমাদের বাকিরাও আমাদের খুঁজতে খুঁজতে চলে এসেছে নদীর পাড়ে। আবার একপ্রস্থ নৌবিহার, এবার আমরা আরো ২০০ দিলাম। লোক বেড়ে গেছে। বেলা বাড়তে থাকল আর এবার বনলক্ষী ফেরার পালা। স্নানখাওয়া সেরে ডাউন শান্তিনিকেতন এক্সপ্রেস ধরতে হবে যে। এবার কিছু তথ্য দিয়ে রাখি- বোলপুর-ইলামবাজার পথে বোলপুর ছাড়িয়ে কিছুদূর গেলে বাঁদিকে পড়ে দ্বারান্দা বাস স্টপেজ। মূল পথ থেকে বাঁদিকে লাল মাটির পথ ধরে কিছু এগিয়ে ডানদিকে ঘুরলেই পড়বে বনলক্ষী। আসলে এটি একটি সমবায় ধরণের সংস্থা।পুরো নাম বনলক্ষী ঊন্মেষ সমিতি। এদের সমস্ত খাবার নিজেদের চাষ থেকে তৈরী, মশলাও পেষাই করা হয় আর সে খাবারের স্বাদ... যাঁরা খেয়েছেন তাঁরাই জানেন আর যাঁরা খাননি একবার খেয়ে দেখুন। এছাড়া কিছু হস্তুশিল্পজাত দ্রব্য এবং জামাকাপড় ও বিক্রী হয়, তবে বনলক্ষীর বিখ্যাত হল ঘি। অনেক বিখ্যাত লোক কেনেন (আমি শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়কে নিজের চোখে ঘি কিনতে আসতে দেখেছি, জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন এখানে তিনি মাঝেমাঝেই আসেন) আর একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হল এখানে কিন্ত বাতানুকুল ব্যবস্থা নেই। আর এখানে কুকুর ছাড়া থাকে তাই রাতে দশটার পর ঘর ছেড়ে পরিসরে বের হওয়া মানা। আর বাকি বিশদ জানতে ও বুকিং এর জন্য এই লিঙ্ক টি দেখুন https://en.wikipedia.org/wiki/Banalakshmi (03463) 271202 and 94344 46150. দুটোর যেকোন একটায় ফোন করুন, বুকিং পেয়ে যাবেন খালি থাকলে। আমিও একই ভাবে করেছিলাম Post By:- Rudrarup Mukhopadhyay
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |