অতি সম্প্রতি লাদাখ ঘুরে আসার পর এই লেখাটা লিখতে বসে মনে একটা সন্দেহ হচ্ছে যে আদৌ এটার কোন দরকার আছে কি না। কারন লাদাখ নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বহু সদস্যে র বহু লেখা প্রকাশিত হয়েছে এবং তার মধ্যে কিছু লেখা এতই সুন্দর এবং অতুলনীয় যে তারপর লাদাখ কে বর্ণনা করে কিছু লেখার ধৃষ্টতা আমার নেই। এই লেখার মধ্য দিয়ে লাদাখের দ্রষ্টব্য স্থান গুলি নিয়ে আমি কোন আলোচনা করব না কারন সেগুলি নিয়ে এত লেখা হয়েছে যে নতুন করে আর কিছু আলোচনা করার আছে বলে মনে হয় না এবং লাদাখের সৌন্দর্জের বর্ণনাও করছি না কারন সে ক্ষমতা আমার নেই। এই লেখাটার মধ্যে দিয়ে আমি সুধু কিছু তথ্য এবং আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা আপনাদের সঙ্গে শেয়ার করতে চাইছি এই ভেবে যে আগামী দিনে লাদাখ ঘুরতে গিয়ে যদি কার কোন সাহায্যে লাগে। যদি সত্যিই কারো কাজে লাগে তবে মনে করব এই লেখা সার্থক হয়েছে। আমার মতে লাদাখ যাওয়ার জন্য সব থেকে উপযুক্ত সময় হল মে র মাঝামাঝি থেকে জুনের প্রথমে অথবা অগাস্টের একদম শেষ থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত। মানালি থেকে লেহ্-মানালি হাইওয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু করে লাদাখ পৌঁছানোর পরিবর্তে শ্রীনগর থেকে জোজিলা পাস এবং দ্রাস, কার্গিল হয়ে লাদাখ পৌঁছানই শ্রেয়। কারন মানালি থেকে লেহ্ পৌঁছাতে গেলে পাঁচটি হাই অল্টিচিউড পাস অতিক্রম করতে হয় কিন্তু সেই তুলনায় শ্রীনগর দিকে এক মাত্র ফোতু লা ( ১৩,৭০০) ছাড়া আর কোন উঁচু পাস অতিক্রম করতে হয় না ফলে Acute Mountain Sickness (AMS) হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আর যাদের AMS সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা আছে তারা নিশ্চই জানেন এটি কি ভয়ানক। আর যাদের অভিজ্ঞতা নেই তাদের এই টুকুই বলতে চাই যে AMS আপনার সম্পুর্ণ ভ্রমনটা নষ্ট করে দিতে পারে। অতএব সব সময় চেষ্টা করা উচিত AMS থেকে বাঁচার। এক্ষেত্রে একটা কথা বলতে চাই যে যদিও অনেকে জোজিলা পাস কে পৃথিবীর অন্যতম ভয়ঙ্কর রাস্তা হিসাবে বর্ণনা করেন তবে আমার নিজের খুব একটা ভয়ঙ্কর মনে হয় নি। আমার মতে শ্রীনগর থেকে শ্রীনগর- লেহ্ হাইওয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু করে লেহ্ - মানালি হাইওয়ে দিয়ে মানালি তে যাত্রা শেষ করলে তবেই লাদাখ ভ্রমন ঠিকভাবে সম্পুর্ণ হয়। যাঁরা বিমানে লেহ্ পৌঁছে লাদাখ ঘুরে আবার বিমানেই ফিরে আসেন তাঁদের লাদাখ দর্শন অসম্পুর্ণই থেকে যায়। লেহ্ তে অজস্র হোটেল এবং গেস্ট হাউস আছে যে গুলির ভাড়া ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ১০,০০০ টাকা পর্যন্ত। যদি কেউ মরসুমের শেষ দিকে জান যখন ভীড় কম থাকে এবং ঠিক মত দর দাম করতে পারেন তবে ৮০০/১০০০ টাকার মধ্যে ভাল গেষ্টহাউসে ডবল বেডরুম পেয়ে যাবেন। লেহ্ তে খাবার জন্য অত্যন্ত দামি রেস্টুরেন্ট থেকে নিয়ে ভাল কিন্তু সাধারন মানের অজস্র হোটেল আছে। একটু খুঁজে নিলে ১০০/১২০ টাকার মধ্যে ভাল নিরামিষ থালি পাওয়া যায় যে গুলির মান যথেষ্ট ভাল। এছাড়া ২০০/২৪০ টাকার মধ্যে ভাল মানের চাইনিজ বা টিবেটান খাবার পাওয়া যায়। এই প্রসঙ্গে বলে রাখা ভাল যে পুরো লাদাখ জুড়ে নিরামিষ থালির রেট মোটামুটি ১৩০/১৫০ টাকার মধ্যে এবং অধিকাংশ জায়গায় নিরামিষ থালি এবং ডিম ছাড়া আর অন্য কিছু পাওয়া মুসকিল। এ ছাড়া অনেক জায়গায় ম্যাগি (৩০/-) ও নুডুলস (১০০/-) পাওয়া যায়। এবার লেহ্ থেকে সম্পুর্ণ লাদাখ ঘোরার ব্যাপারে একটু আলোচনা করা যাক। সাধারণত যাঁরা লাদাখ বেড়াতে জান তাঁরা লেহ্ থেকে নুব্রা ভ্যালি, একই পথ ধরে যাতায়াত করেন। প্যাংগং সো ও সোমোরিরির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। কিন্তু এতে একই পথে বারবার যাতায়ত করার ফলে নতুনত্ব থাকে না এবং সময় ও লাগে অনেক বেশি। উপরন্তু এই পথ ও জায়গা গুলি বড় বেশি পর্যটকের ভিড়ে আক্রান্ত। আমার মতে ভীড় এরিয়ে লাদাখের অপরুপ সৌন্দর্জ যদি সত্যিই দেখতে ও অনুভব করতে হয় তবে পরিচিত পথ ছেড়ে একটি থেকে আরেকটি জায়গা লাদাখের ভিতর দিয়ে যেতে হবে। এক কথায় লাদাখের গভীরে প্রবেশ করতে হবে। আমি এখন এ ব্যাপারেই আলোকপাত করতে চেষ্টা করব যদিও জানি না এ ব্যাপারে কতটা সফল হব। 📌লেহ্ থেকে নুব্রা হয়ে প্যাংগং সো📌 লেহ্ থেকে লাদাখ ভ্রমন দুই দিক থেকে শুরু করা যায়। প্রথমে নুব্রা ভ্যালি দিয়ে শুরু করে সোকার হয়ে লেহ্ অথবা মানালি তে শেষ করা যায় অথবা সোকার দিয়ে শুরু করে নুব্রা ভ্যালি দিয়ে লেহ্ তে বা লেহ্ হয়ে মানালিতে শেষ করা যায়। এখানে বলে রাখা যেতে পারে যে যদি কেউ লে-মানালি হাইওয়ে ধরে লেহ্ তে আসতে চান সেক্ষেত্রে সোকার দিয়ে শুরু করে নুব্রা দিয়ে শেষ করা যেতে পারে তাহলে ১২০ কিমি পথ কমে যাবে। যদিও সেটা করা উচিত হবে না কারন এই পথ ধরে শুরু করলে AMS হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে অনেক বেশি। আমার মতে লেহ্ থেকে খারদুং লা, খারদুং হয়ে পরিচিত পথে নুব্রা ভ্যালি পৌঁছে লাদাখ দর্শন শুরু করাই ভাল। কারন এক্ষেত্রে যদিও খারদুং লার মত সর্বোচ্চ পাস পার হতে হয় তবুও যেহেতু নুব্রাতে রাত্রিবাস করতে হয় এবং নুব্রার উচ্চতা ততটা বেশি নয় ( লেহ্ র থেকেও নিচে ) তাই শরীর উচ্চতাজনিত অসুবিধার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার সময় পায় অনেক বেশি ফলে সুস্থ শরীরে সুন্দর ভাবে ভ্রমন শেষ করা যায়। নুব্রাতে পৌঁছে ডিসকিট্ মনাস্ট্রি দেখে হুন্ডারে থাকাই সব দিক থেকে উপযুক্ত। কারন প্রথমত হুন্ডার অনেক শান্ত এবং নিরিবিলি। দ্বিতীয়ত দুই কুঁজ বিশিষ্ট উঁটে চড়তে হলে হুন্ডারে আসতে হবে এবং প্রথম দিন হুন্ডারে রাত্রিবাস করে পরের দিন তুরতুক্ যাওয়া অনেক সহজ হবে। এখানেও ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি ভাল মানের গেষ্টহাউসে ডবল বেডরুম পাওয়া যায়। তবে এখানে একটির বেশি কোন ভাল রেস্টুরেন্ট আমার চোখে পড়েনি। তাই গেস্টহাউসেই খাবার ব্যাবস্থা করা ভাল। দুই দিনে নুব্রা ভ্যালী দর্শন সম্পুর্ণ করে চলুন প্যাংগং সো র পথে। নুব্রা থেকে সোজা প্যাংগং পৌঁছানর জন্য দুটি পথ আছে। 🚔তার একটি হল:-নুব্রা-খালসার-আগম-শায়ক গ্রাম- দুরবেক-টাঙ্গস্টে হয়ে প্যাংগংসো 🚔আরেকটি হল:- নুব্রা-খালসার-আগম-ওয়াড়ি লা-শক্তি-চাং লা-ডুরবেক-টাঙ্গস্টে হয়ে প্যাংগং। সাধারনত অধিকাংশ পর্যটক প্রথম পথ আর্থাৎ আগম - শায়ক রোড টি ব্যাবহার করেন কারন দ্বিতীয় পথটির তুলনায় এই পথের দুরত্ব অনেক কম (১৪০ কিমি) ফলে সময় ও লাগে অনেক কম। এই পথে ৬/৭ ঘন্টার মধ্যে নুব্রা থেকে প্যাংগং পৌঁছান যায়। যাঁরা এই পথ দিয়ে যাত্রা করেছেন তাঁরাই জানেন এর অপরুপ সৌন্দর্যের কথা। পুরো পথটাতে শায়ক নদী আপনার সঙ্গী হবে। সুতরাং এই পথ ধরেই নুব্রা থেকে প্যাংগং পৌঁছান উচিত। তবে এই পথে যাওয়ার আগে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে যদিও আগের তুলনায় অধিকাংশ জায়গায় এখন রাস্তার প্রভুত উন্নতি হয়েছে ফলে রাস্তা এখন যথেষ্ট ভাল এবং যানবাহন ও অনেক বেশি তবুও কিছু কিছু জায়গায় রাস্তা এখনো অত্যন্ত খারাপ বা নেই বললেই চলে এবং যথেষ্ট নিরিবিলি। এই রাস্তায় অনেক সময় বিশেষত জুলাই-অগাস্ট মাসে কিছু কিছু জায়গায় শায়ক নদী রাস্তার উপর দিয়েই বহে গিয়ে রাস্তা কে গ্রাস করে নেয়। ফলে রাস্তায় জল বৃদ্ধি পেলে যাওয়াটা অনেক কঠিন হয়ে পরে। উপরন্তু কিছু কিছু জায়গা ধ্বসপ্রবন। যেহেতু এই পথ এখনো যথেষ্ট নিরিবিলি ফলে কোন কারনে গাড়ী খারাপ হলে বা আটকে গেলে বা অসুবিধায় পড়লে সাহায্য পেতে যথেষ্ট সময় লাগতে পারে যদিও আগের তুলনায় এখন সাহায্য পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এক কথায় এখনো এই রাস্তা কিছুটা দুর্গম। যাঁরা এই পথে যাবেন তাঁদের উচিত হবে খালসার বা শায়ক গ্রামে পৌঁছে রাস্তার অবস্থা জেনে নিয়ে সব ঠিক থাকলে তবেই অগ্রসর হওয়া অর্থাৎ কোন রকম ঝুঁকি নাওয়া উচিৎ নয়। 📌প্যাংগং সো থেকে হানলে📌 একথা এখন মোটামুটি সবারই জানা যে ১৩৪ কিমি লম্বা প্যাংগং লেকের যতটুকু ভারতের মধ্যে অবস্থিত তার দৈর্ঘ প্রায় ৫০ কিমি। যদি লেহ্ থেকে পরিচিত পথে বা নুব্রা থেকে শায়ক রোড ধরে প্যাংগং পৌঁছান যায় তবে লুকুং এ লেক শুরু হবার পর ১৬ কিমি গেলেই পড়বে স্পাঙ্গমিক এবং অধিকাংশ পর্যটক এইখানেই রাত্রে থেকে পরের দিন লেহ্ ফিরে আসেন। ফলে তাঁরা প্যাংগং লেকের খুব সামান্য অংশই দর্শন করেন এবং এই লেকের অপরুপ সৌন্দর্যের প্রায় সবটাই তাঁদের অদেখা থেকে যায়। উপরন্তু যেহেতু স্প্যাঙ্গমিকে প্রায় সমস্ত পর্যটক থাকেন তাই এখানে পর্যটকের ভীড় অত্যন্ত বেশি। তবে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে এখানে কিন্তু থাকার জন্য চাদ্দর টেন্ট থেকে সুরু করে তাঁবু,গেস্ট হাউস, হোম স্টে প্রভৃতি বিভিন্ন দামের নানা ব্যাবস্থা প্রচুর পরিমানে আছে যেটা অন্য জায়গায় ততটা পরিমানে উপলব্ধ নয়। তবে আমার মতে যদি নিরিবিলি তে প্যাংগং লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে হয় তবে স্প্যঙ্গমিকে না থেকে লেকে র পাড় ধরে ২০ কিমি এগিয়ে মেরাকে রাত্রিবাস করা উচিত। তাহলে প্রথমত ভীড় এড়িয়ে অত্যন্ত শান্ত ও নিরিবিলি পরিবেশে লেকের অপার সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। দ্বিতীয়ত প্যাংগং এর আরো ২০ কিমি প্রথমেই দর্শন হয়ে যায় এবং তৃতীয়ত পরের দিনের যাত্রা পথে ২০ কিমি এগিয়ে থাকা যায়। তবে এখানে স্প্যাঙ্গমিকের মত লেকের পাড়ে থাকার জন্য তাঁবুর ব্যাবস্থা নেই। গেস্ট হাউস বা হোম স্টে পাওয়া যায়। স্প্যাঙ্গমিক বা মেরাকের গেস্ট হাউস গুলিতে ৮০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি মানের ডবল বেডরুম পাওয়া যায়। আর ২৫০০ টাকার মধ্যে ফোর বেডেড তাঁবু পেয়ে যাওয়া উচিত। আমার মতে সেপ্টেম্বরে গেলে তাঁবুতে না থেকে গেস্টহাউসে থাকাই উচিত কারন রাত্রে লেকের প্রচন্ড ঠান্ডা হওয়া তাঁবুতে প্রবেশ করার ফলে কষ্ট হতে পারে। মেরাকে এ রাত্রি বাস করে পরের দিন হানলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে প্রথমে লেকের পাড় ধরে এগিয়ে প্রায় ৩০ কিমি যাবার কিছু পরে চুসুলে পৌঁছান যাবে। স্প্যাঙ্গমিকের পর থেকে চুসুল পর্যন্ত ৫০ কিমি পুরোটাই নুড়িপাথরে ভরা কাঁচা রাস্তা এবং যথেষ্ট খারাপ। কিন্তু এই পুরো পথটাতে প্যাংগং লেকের পাড় বরাবর যাওয়ার ফলে প্যাংগং লেকের ৩৫ সম্পুর্নটাই দেখা হয়ে যায়। আর এই পথের সৌন্দর্জ কতটা তা নিজে চাক্ষুষ না করলে বলে বোঝান সম্ভব নয়। যদিও চুসুল একটি ছোট গ্রাম কিন্তু এখানেই ভারত এবং চীনের সেনাবাহিনী র মধ্যে ৪ টি ফ্ল্যাগ মিটিং সম্পন্ন হয়েছে এবং এখানে একটি এডভান্স মিলিটারি এয়ারবেস ছিল। এই চুসুল থেকে সোমোরিরি যাবার পথে মাহী পর্যন্ত দুটি পথ আছে 🚔একটি হল:- চুসুল- সাগা লা/চাগা লা- সাগা- লোমা - নিয়োমা- মাহী (১২৫ কিমি) 🚔দ্বিতীয় টি হল:- চুসুল- মিটপাল সো- কাকাসাঙ্গ লা- হোর লা- ইয়াই সো- মাহী (৭৭ কিমি) কিন্তু যেহেতু আমাদের গন্তব্য হানলে সেহেতু আমরা চুসুল থেকে প্রথম পথটা ধরে ৭৬ কিমি পথ পেরিয়ে লোমা তে পৌঁছাব। চুসুল থেকে এই পথে গেলে তিন টি হাই অল্টিচিউড পাস পার হতে হয় কিন্তু যেহেতু চড়াই ততটা বেশি নয় তাই প্রায় বোঝাই যায় না যে কখন পাস গুলি পার হয়ে গেল। চুসুল থেকে সাগা অব্দি রাস্তা বলে কিছু নেই সুধুই বালি এবং নুড়িপাথরের কাঁচা পথ, কোন দিক নির্দেশ নেই উপরন্তু বেশ কিছু যায়গায় পথের উপর দিয়ে বরফ গলা জল বহে যাচ্ছে ফলে যেকোন সময় জলের মধ্যে গাড়ীর চাকা আটকে যাবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। কিন্তু সাগা থেকে লোমা পর্যন্ত রাস্তা পিচের এবং যথেষ্ট ভাল। লোমা পৌঁছানোর পর সোমোরিরি র রাস্তা না ধরে বাঁ দিকে ঘুরে ৫৫ কিমি গেলে হানলে পৌঁছান যাবে। এই রাস্তা টি যথেষ্ট ভাল। হানলে হচ্ছে ভারতের শেষ গ্রাম। হানলে বোধ হয় সম্পুর্ন লাদাখের দ্রষ্টব্য স্থান গুলির মধ্যে সব থেকে শান্ত ও নিরিবিলি। এই হানলে কে বলা হয় নরওয়ে অব ইন্ডিয়া। Indian Institute Of Astro Physics এর টেলিস্কোপটি এখানেই অবস্থিত যেটা সাইবেরিয়ার পরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত। তবে ভুলেও একথা ভাববেন না যে এই টেলিস্কোপ দিয়ে পর্যটক দের আকাশের গ্রহ নক্ষত্র দেখানো হয়। সুধু টেলিস্কোপ টি দেখিয়ে তার কার্যপ্রনালীর বিবরন দেওয়া হয়। তবে হানলের আকাশে রাত্রে খালি চোখে গ্রহ নক্ষত্র দেখাও একটা অপার্থিব অভিজ্ঞতা। এখানেও ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে মোটামুটি মানের গেষ্ট হাউসে ডবল বেডরুম পাওয়া যাবে কিন্তু খাবার ব্যাবস্থা গেষ্টহাউসে না করে কোন উপায় নেই কারন আলাদা কোন খাবার রেস্টুরেন্ট আমার চোখে পরে নি। আরেকটা কথা মনে রাখা জরুরী যে IIAP র টেলিস্কোপটি বিকাল ৬টা পর্যন্ত টুরিস্ট দের দর্শনের জন্য খোলা থাকে। এই পুরো জায়গাটি চুমাথাঙ্গ ভ্যালির অন্তর্গত এবং এই চুমাথাঙ্গ ভ্যালি ই হচ্ছে সম্পুর্ন লাদাখের মধ্যে অন্যতম সুন্দর এবং অনাঘ্রাত সেক্টর। এর সৌন্দর্যের বর্ণনা করার ক্ষমতা আমার নেই। যদি জনমানব হীন রুক্ষ নিষ্ফলা ধুধু প্রান্তর, যার জন্য লাদাখ বিখ্যাত সেটা প্রত্যক্ষ করতে হয় তবে এই চুমাথাঙ্গ ভ্যালি আদর্শ জায়গা। এই পথ ধরে যাওয়াটা একটা অবিশ্বাস্য রকমের সুন্দর অভিজ্ঞতা। এই পথের অনেকটাই ইন্দো-চীন সিমান্তের একদম গা ঘেঁসে গেছে ফলে এই পথে যাওয়ার সময় কয়েক বার মিলিটারি চেকিং এর সন্মুখিন হতে হবে। এই পথেই পড়বে মেজর শয়তান সিং এর স্মৃতি সৌধ। সেই অমর শহিদ মেজর শয়তান সিং এবং তার বাহিনীর ১১২ জন জওয়ান যাঁরা ১৯৬২ সালের চীনের সঙ্গে যুদ্ধে অমিত বিক্রমের সঙ্গে শত্রুর মোকাবিলা করে নিজেদের প্রান বিসর্জন দিয়েছিলেন। আমরা কত জনই বা জানি বা জানতে চেষ্টা করি তাঁদের সেই অবিশ্বাস্য বীরত্বের কাহিনী, কত জনই বা খোঁজ রাখি দেশের জন্য তাদের প্রান বলিদানের সেই অমর ঘটনা। জনমানবহীন ধুধু প্রান্তরে তাঁর স্মৃতি সৌধের সামনে দাড়িয়ে একথা মনে করে এক আশ্চর্য অনুভুতি হচ্ছিল এই ভেবে যে আমি দাঁড়িয়ে আছি সেই জায়গায় যেখানে আজ থেকে ৫৬ বছর আগে ভারতীয় এবং চীনের সেনাবাহিনী মুখোমুখি যুদ্ধ করে ছিল। তবে এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলে রাখা উচিত যে যদিও ইদানিং এই পথে যান চলাচল বেড়েছে তবুও এখনো এই পথ অত্যন্ত নির্জন ফলে কোন অসুবিধার সন্মুখীন হলে কতক্ষনে সাহাজ্য পাওয়া যাবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই এবং যতক্ষন না কোন গা়ড়ী আসছে ততক্ষন কোন সাহাজ্য পাওয়া সম্ভাবনা নেই বললেই চলে কারন এই সম্পুর্ণ পথটাতে কোন থাকা বা খাবার ব্যাবস্থা, পেট্রল পাম্প, মেকানিক এমনকি ফোন বা মোবাইলের কানেকশানও পাওয়া যায় না। এই পথের অনেকটা অংশে রাস্তার অবস্থা অত্যন্ত খারাপ বা নেই বললেই চলে। ফলে যে গাড়ীর গ্রাউন্ড ক্লিয়ারেন্স অনেকটা এবং চালক অত্যন্ত দক্ষ তাতে করেই যাওয়া উচিত। এই অপরুপ পথ ধরে প্যাংগং থেকে হানলে পৌঁছতে ৭ থেকে ৮ ঘন্টা সময় লাগে। 📌হানলে থেকে সোমোরিরি📌 হানলেতে একটা রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে সোমরিরি হ্রদের উদ্দেশ্যে যাত্রা করতে হবে। প্রসঙ্গত এটা বলা দরকার যে যদি কেউ হানলেতে না আসেন তবে তিনি প্যাংগং থেকে সোজা সোমোরিরি পৌঁছাতে পারেন। হানলে থেকে সোমোরিরি যাওয়ার জন্য প্রথমে একই পথ ধরে লোমা পর্যন্ত আসতে হবে। যেহেতু রাস্তা এখানে যথেষ্ট ভাল তাই এই পথটা আসতে ঘন্টা দেড়েক সময় লাগবে। এরপর লোমা থেকে বাঁ দিকে ঘুরে নিওমা হয়ে মাহী পর্যন্ত আরো ৫০ কিমি যেতে হবে। রাস্তা এখানে যথেষ্ট ভাল এবং প্রাকৃতিক দৃশ্য অসাধারন রকম সুন্দর। এই পথের বেশ কিছুটা অংশে সিন্ধু নদ আপনার যাত্রা পথের সঙ্গী হবে। অনেক টা সময় ধরে এই সিন্ধু নদের পাড় ধরে যেতে হবে। কোথাও সিন্ধু শীর্নকায় আবার কোথাও বিশাল চওড়া। এই পথের সম্পুর্ন রুপ নিজে চাক্ষুষ না করলে বর্ণনা করে বোঝান অসম্ভব। মাহী থেকে এর পর সুমডো- নামাসাঙ্গ লা হয়ে আরো ৬৩ কিমি পথ অতিক্রম করে সোমোরিরি ( কার্যোক ) পৌঁছাতে হবে। মাহী থেকে সুমডো পর্যন্ত রাস্তা মোটামুটি ভাল। সুমদোর ঠিক পরেই নামাসাঙ্গ লার চড়াই শুরু হবে কিন্তু যেহেতু চড়াই খুব শক্ত নয় এবং রাস্তার অবস্থা খুব খারাপ নয় ফলে খুব একটা কষ্ট হবেনা। কিন্তু নামাসাঙ্গ লার পরে কার্যোক পর্যন্ত পুরো টাই রাস্তা বলতে নুড়িপাথর আর ধুলা মিশ্রিত কাঁচা রাস্তা। কিছু দুর যাওয়ার পর একটি ছোট কিন্তু খুব সুন্দর হ্রদ দেখা যাবে। এটাই কিয়াগর সো। কিয়াগর সোকে বাঁ পাশে রেখে আর এগিয়ে গেলে সোমোরিরি র দেখা পাওয়া যাবে। হানলে থেকে সোমোরিরি পৌঁছতে সাধারনত ৪/৫ ঘন্টা মত সময় লাগে। সোমরিরি হ্রদ টি প্যাংগং এর থেকে ছোট কিন্ত সৌন্দর্জের দিক থেকে কোন অংশে কম নয়। আসলে আমার মনে হয় দুটির সৌন্দর্জ দুই রকম। দুটিই অসাধারন সুন্দর। শান্ত ও নিস্তব্ধ পরিবেশে সোমরিরি কে অপার্থিব মনে হয়। সোমরিরি তে পৌঁছে লেকের পাড় ধরে প্রায় ১০ কিমি যাবার পরে কার্যোকে রাত্রিবাস করতে হবে। এখানেও ৮০০ টাকার মধ্যে গেস্টহাউসে সাধারন মানের ডবল বেডরুম পাওয়া যায়। এছাড়া হোটেল বা তাঁবুর ব্যাবস্থাও আছে। এছাড়া যেখানে থাকার ব্যাবস্থা করবেন সেখানেই খাবার বন্দোবস্ত করা উচিত। 📌সোমোরিরি থেকে সোকার হয়ে কেলং অথবা লেহ📌 সোমরিরি তে রাত্রি বাস করে পরের দিন তাড়া তাড়ি যাত্রা শুরু করা উচিত কারন আজ অনেকটা পথ অতিক্রম করতে হবে। সোমরিরি থেকে প্রথমে একই পথ সুমডো পৌঁছে সেখান থেকে পুগা- পোলোকঙ্গা লা পেরিয়ে সোকার পৌঁছতে আরো ৪৩ কিমি পথ অতিক্রম করতে হবে।সোকারে পৌছে হ্রদ টি দর্শন করুন। ১৪৭০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই লেকের রুপ আমি বর্ণনা করব না কিন্তু কয়েকটি তথ্য দেওয়া প্রয়োজন। সোকার লাদাখের দক্ষিনে রুপসু ভ্যালিতে অবস্থিত। এই লবনাক্ত হ্রদের পাড়ে এতটাই লবন জমা হয় যে দেখতে সাদা লাগে। কিছু বছর আগে পর্যন্ত চাঙ্গপা সম্প্রদায়ের লোকজন এখান থেকে লবন সংগ্রহ করত। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা -৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত নেমে যায়। এখানেই বিভিন্ন ধরনের পাখি দেখা যায় যার মধ্যে কালো গলার সারস অন্যতম। এখানেই তিব্বতী বুনো গাধা, কৃষ্ণসার,নেকড়ে, শিয়ালের দেখা পেলেও পেতে পারেন। এখানে থাকার জন্য তাঁবু বা হোটেল থাকলেও যাঁরা থাকতে চাইবেন তাঁদের উচিৎ হবে লেহ্ থেকে বুক করে আসা উচিত।সোকারে কিছুক্ষন কাটিয়ে যাত্রা করতে হবে ২২ কিমি দুরে লেহ্ মানালি হাইওয়ের উদ্দেশ্যে। লেহ্ মানালি হাইওয়েতে পৌঁছে এবার ঠিক করতে হবে কোন দিকে যাবেন। যদি কেউ লেহ্ তে ফিরে আসতে চান তবে এই হাইওয়ে ধরে লাদাখের দ্বিতীয় উচ্চতম পাস তাংলাং লা(১৭৫০০ ফুট ) পেরিয়ে ডেবরিঙ্গ- রুমসে- উপসী- কেরু হয়ে প্রায় ১৫০ কিমি পথ অতিক্রম করে লেহ্ পৌছতে ৩/৪ ঘন্টা মত সময় লাগবে। আর যদি লেহ্ মানালি হাইওয়ে ধরে মানালির উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন তবে বাঁ দিক ধরে পাঙ্গ- লাচুং লা- নাকি লা- গাটা লুপ- সারচু- ভরতপুর- বরলাচা লা- জিংজিং বার- দরচা- জিসপা- গ্রামফু অতিক্রম করে সন্ধা নাগাদ কেলং এ পৌঁছবেন। সোমোরিরি থেকে কেলং এর দুরত্ব ৩৩৬ কিমি অতিক্রম ১০ ঘন্টা সময় লাগে। লেহ্ মানালি হাইওয়ে কে বর্ণনা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। সুধু এই টুকু বলতে পারি আমার কাছে এই পথ অতিক্রম করা সারা জীবনের জন্য একটা অনন্য অভিজ্ঞতা। কোথাও রুক্ষ ধুসর পাথুরে নিষ্ফলা পরিতক্ত ভুমি আবার কোথাও সবুজ তৃনভুমি, কোথাও পাহাড়ী ছোট্ট জনপদ বা যাযাবর মেষ পালকের দল, বরফে ঢাকা সুউচ্চ পর্বত শিখর বা পাঁচটি সুউচ্চ পাস, গাটা লুপের পরপর ২১ খানা হেয়ার পিন বেন্ড বা চন্দ্রভাগা নদী, কাকে ছেড়ে কার কথা বলব, কি নেই এখানে? আমার কাছে সুধু এই পথ টা অতিক্রম করাই একটা সম্পুর্ণ ভ্রমন। শেষে সুধু একটা কথাই বলব যে বড় ভয়ঙ্কর সুন্দর এই পথ। এর কোন তুলনাই হয় না। কেলং এ রাত্রি বাস করে পরের দিন তাড়াতাড়ি যাত্রা শুরু করে খোকসার, প্রসিদ্ধ রোটাং পাস অতিক্রম করে মারহি হয়ে মানালি পৌঁছাতে ঘন্টা চারেক মত সময় লাগবে এবং এখানেই আমি আমার লেখা শেষ করব কারন মানালির পরে কে কি ভাবে ফিরবেন সেটা নিয়ে লেখার কোন প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। শেষে একটা কথাই শুধু বলব। লাদাখ ভ্রমন কিন্তু অন্যান্য জায়গায় ভ্রমনের তুলনায় আলাদা। আমার মতে কিছু বিশেষ জায়গা দর্শন করা মানেই লাদাখ ভ্রমন করা নয়। উপরে অবর্ণনীয় নীল আকাশ কে সঙ্গী করে রৌদ্রোজ্জল দিনে লাদাখের জনমানবহীন, রুক্ষ, ধুসর, নিষ্ফলা পরিত্বক্ত প্রান্তরের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে লাদাখকে দেখাটাও লাদাখ ভ্রমনের একটা অবিচ্ছেদ্দ অঙ্গ এবং সম্ভবত লাদাখের আসল রুপ দর্শন করা। লাদাখের সৌন্দর্জ যতটাই অসাধারন এর প্রকৃতি ও আবহাওয়া ততটাই কঠিন। লাদাখ কিন্তু যে কোন মানুষের শারীরিক সক্ষমতার পরীক্ষা নেবে। সেই বাধা অতিক্রম করে যাঁরা লাদাখ ভ্রমন সম্পুর্ণ করবেন তাঁরা বোধহয় জীবনের একটি অতুলনীয় ভ্রমন সম্পন্ন করবেন। আমার এই লেখার মধ্যে দিয়ে আমি আমার ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার বর্ণনা করেছি ও মতামত দিয়েছি ফলে অন্য কারো অভিজ্ঞতা ও মতামত আমার সঙ্গে নাও মিলতে পারে এবং যদি কোন তথ্যগত ভুল থেকে থাকে তার জন্য আমি আন্তরিক ভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। Post By:- Rajat Chowdhury
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |