ইতিহাসে উপেক্ষিত কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ী।।
আজ আপনাদের নিয়ে যাব এক উপেক্ষিত রাজবাড়ীর অন্দরমহলে যেখানে তার ইতিহাস বাঙলার বহু অজানা বা স্বল্প পরিচিত ইতিহাসের ঝুলি সযত্নে আপন গরিমায় লালিত করে চলেছে আপনাদেরই স্বীকৃতির আশায়। মুশকিল হল ইতিহাস আশ্রিত লেখা খুব বেশি ছোট করতে গেলে ইতিহাস মাহাত্ম্য হারায়। তবু যতটা সংক্ষিপ্ত পারা যায় করতে গিয়ে যদি কিছু বাদ দিয়ে থাকি তো ক্ষমাপ্রার্থী। ভ্রমণ পিপাসু পাঠক যদি ধৈর্য নিয়ে একটু পড়েন তো এই প্রয়াস সার্থক হবে। বহরমপুরের অনতিদূরেই বহু গৌরবময় ঐতিহ্যের সাক্ষী এই রাজবাড়ীর ইতিহাস জানতে চলুন পিছিয়ে যাই ২৬৫ বছর আগে। পলাশীর যুদ্ধ তখনো হয় নি। ভাগরথীর তীরে তখন দুই বর্ধিষ্ণু বন্দর ভগবানগোলা আর কাশিমবাজার। বানিজ্যিক সুত্রে ডাচ, পর্তুগিজ, আর্মেনীয়, ফরাসী বিভিন্ন জাতির জলযান আর মানুষ ভীড় জমাত এই বন্দর ও সংলগ্ন এলাকায় - রেশম, নীল, নানাবিধ মশলা দ্রব্যের বিকিকিনির হাট জমাতে। অবিভক্ত বাংলার সুবেদার ঔরঙ্গজেবের পৌত্র আজিম উনসানের সাথে মতবিরোধের কারণে দেওয়ান মুর্শিদকুলি খাঁ মোঘলসম্রাটের অনুমতিক্রমে জাহাঙ্গীরনগর (অধুনা ঢাকা) ত্যাগ করে ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দে মুর্শিদাবাদের প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা বিহার উড়িষ্যার রাজধানী হিসাবে, আর সাথে মাত্র তিন মাইল ব্যবধানে থাকা কাশিমবাজার অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । বিজয় রামসেনের তীর্থমঙ্গল, হলওয়েল সাহেবের 'Interesting historical events', আরো অনেক গ্রন্থে এই বানিজ্যপদের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেই যুগে উচ্চবংশীয় ব্রাহ্মণ হয়েও সংস্কার মনষ্ক কৃষ্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায় নিম্নশ্রেণীতে বিবাহ করেন। পরবর্তী কালে সামাজিক ক্ষেত্রে অবদান হেতু তাঁর প্রপৌত্র জয়গোপাল মোগল শাসকের থেকে 'রায়' উপাধি প্রাপ্ত হন। এই বংশেরই সুযোগ্য অযোধ্যারাম রায়ের হাত ধরে কাশিমবাজার রায় বংশের গুরুত্বপূর্ণ গোড়াপত্তন বলে ধরা যায়। ১৭৪২ এর বর্গীহানা, ১৭৫৭র পলাশীর যুদ্ধে পটপরিবর্তণ, ৭৬এর মন্বন্তরের ধাক্কা সামলে জগবন্ধু রায়, নৃসিংহপ্রসাদ রায়ের সুযোগ্য তত্বাবধানে কাশিমবাজার রাজবাড়ী প্রজাবৎসল বংশের সম্মানরক্ষা করে চলে। দানশীল স্বল্পায়ু অন্নদাপ্রসাদ রায় ও তাঁর অবর্তমানে বিদগ্ধা পত্নী রানী আন্নাকালীর কথা না বললেই নয়। রানীর পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠে জুবিলী চতুষ্পাঠী মহাবিদ্যালয়, স্ত্রীধন তহবিল, জেনানা হাসপাতাল, বহু মন্দির যথা দশশিববাড়ী ইত্যাদি। অন্যান্য জমিদার পরিবারের মত শুধু ইংরেজের পৃষ্ঠপোষকতা করে ক্ষান্ত হননি এই রায় পরিবার। জুবিলী টোলবাড়ীটি সেযুগের সশস্ত্র বিপ্লবীদের গোপন আস্তানা ছিল। বর্তমানে এই সুপ্রাচীন রাজবাড়ীটি সাধারণের দর্শন, এমনকি গেস্ট হাউস হিসাবে থাকার জন্যও খুলে দেয়া হয়েছে। দ্বিশয্যা ও চার শয্যা বিশিষ্ট সাতটি ঘর (ভাড়া ৩০০০ থেকে ৭০০০), প্রাতঃরাশ থেকে রাত্রিকালীন খাবার (মূল্য অর্ডার অনুযায়ী)। প্রতিটি ঘর অসম্ভব সুচারু শিল্পমন্ডিত প্রাচীন সামগ্রী দিয়ে সাজানো এবং সর্বপ্রকার আধুনিক সুবিধাযুক্ত। প্রাচীন রাজবাড়ীর সুসজ্জিত রাধাকৃষ্ণের মন্দির, ঝাড় বাতির সারি ঝোলানো দালান, বারান্দা, বিশাল ডাইনিং হল, সুবৃহৎ টেরেস, বাগান, টেনিস লন, একাধিক পুষ্করিনী আর অন্তহীন ঐতিহ্যের মাঝে দিনদুয়েক দিব্যি কেটে যেতে পারে শান্তিতে, সাথে মুর্শিদাবাদের অজস্র ঐতিহাসিক দ্রষ্টব্য। গাড়ীর ব্যবস্থা এখান থেকেও হতেই পারে। পরিশেষে বলি বর্তমান রাজামশাই শ্রী পল্লব রায়, রানীমা আর তাঁদের একমাত্র পুত্র সৌরভের আন্তরিকতা, আতিথেয়তা আর অমায়িক ব্যবহার হবে বাড়তি পাওনা। ব্যাক্তিগত উদ্যোগে কোনো সরকারী বা অন্য সাহায্য ছাড়া যেভাবে এই বিশাল রাজবাড়ী, প্রাচীন তথ্যাদি, আসবাব, বহিঃপ্রাঙ্গন রক্ষনাবেক্ষনের প্রয়াস ওনারা চালাচ্ছেন তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে। দূরভাষ- ৮৫৮৪০৩৫৬৬৩ (এস্টেট ম্যানেজার নিশীথ ঘোষ)। দ্রষ্টব্যের কিছু চালচিত্র আর রাজামশায়ের সাথে আমার আলাপচারিতার একটা ছবি দেবার লোভ সামলাতে পারলাম না । ইতিহাসের সংকলনে শ্রীযুক্ত পল্লব রায় (বর্তমান বংশধর) এবং আশীষ কুমার মন্ডল প্রনীত "কাশিমবাজার ছোট রাজবাড়ীর ইতিহাস" (যে বইটি রাজামশাই আমায় উপহার দিয়েছেন) বইটির কাছে ঋণ স্বীকার করি।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |