বেড়ানো টা আমার কাছে নেশা. ওটা আর এক প্রেমিকা. কাজ করতে করতে ক্লান্ত হলে,বেড়াতে গিয়ে সব ক্লান্তি নষ্ট করে ফেলি শুধু বেঁচে থাকার আনন্দে. তবে এখন নতুন সঙ্গী হয়েছে আমার বাইক টা.বাইক রাইডিং এর মজা হলো, প্রচন্ড মনোনিবেশ এর জন্য সমস্ত চাপ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে শুধু নষ্ট হয় না, নতুন এনার্জি তৈরি হয় খুব তাড়াতাড়ি. মরণ বাঁচন খেলায় এডভেঞ্চার সপ্নাতীত.
22 সে জুন 2019 এক মনে থাকার দিন আমার. একমাস ধরে কলকাতা থেকে বকখালি গ্রুপ রাইডিং এর রোমাঞ্চ চলছে আমার ভিতরে বাইরে. শেষের দিকে তো অধৈয্য হয়ে কোনো কাজ ই করছিলাম না. জীবন সঙ্গিনীও উত্তেজিত ছিল ভীষণ. আমি একা দূরে রাইডিং এ গেলেও ও কোনোদিন দূরে যায় নি. শুধু বাইকিং এডভেঞ্চার এর ভিডিও দেখেছে. সকাল 5 টাই আমি স্ত্রী আরঅন্য বাইক এ দেবজিৎ দা পাড়া থেকে বেরোলাম গন্তব্যের উদ্দেশে. শিয়ালদা জোড়া গির্জার কাছে নর্থ বাইক team টার মিটিং পয়েন্ট. ভয় শুরু হলো বৃষ্টির জন্য, যদি গাড়ির চাকা স্কিড্ করে !শিয়ালদা এ আরো 15 জন রাইডার একসঙ্গে হয়ে বৃষ্টি থামতে শুরু করলাম রাইড 6 টা 45 এ. এসপ্ল্যানেড হয়ে টালিগঞ্জ ধরে আমরা পৌঁছলাম ডায়মন্ড হারবার রোডে. চওড়া রাস্তা ধরে, গাছের মাঝ খান দিয়ে বেশ স্পীডে গাড়ি চালিয়ে আমরা আমতলা ছাড়িয়ে পৌঁছলাম শিরাকল. এখানে আমাদের মেন গ্রুপের মিটিং পয়েন্ট. 40 টা বাইক আর তিনটে ফোর হোইলার নিয়ে 70 জনের বিশাল টিম. ভাবতে অবাক লাগছে আর গর্ব ও লাগছে যে এতো বড় টিম এর মেম্বার আমি. শিরাকল এ সাউথ স্পেশাল ছেড়া পরোটা আর আলুরদম ডিমসেদ্ধ ব্রেকফাস্ট হলো পেটপুরে. তারপর শুরু হলো স্বপ্নের জার্নি. রাস্তার দুদিকে গাছের সারি, সবুজ ক্ষেত, মাটির বাড়ির মাঝে ফাঁকা রাস্তা ধরে ঘন্টায় 65-70 km বেগে আমরা গাড়ি ছুটিয়ে চলেছি 70 জন. স্পিড, প্রকৃতির মাঝে মনোনিবেশ কাজের ক্লান্তি কাটিয়ে ফুরফুরে করে দিলো মন কে অনায়াসে. অর্ধাঙ্গিনী গান ধরেছেন বাইকের পিছনে. দু হাত এক দুবার ছড়িয়ে মাথা আকাশের কাছে তিনি বিলীন করে দিলেন. ভাবতেও ভালো লাগে, তিনিও চাপ মুক্ত হচ্ছেন. মাঝে মাঝে স্পিড 80 ছাড়িয়ে যাচ্ছে আর হাত হ্যান্ডল থেকে ছেড়ে দিচ্ছি. কি অভূতপূর্ব আনন্দে মন হাল্কা হচ্ছে বলে বোজাতে পারবো না. হটুগঞ্জ থেকে আমরা উঠলাম কুলপি-নামখানা রোডে. দেখতে দেখতে পৌঁছে গেলাম নতুন হাতানিয়া-দোয়ানিয়া ব্রিজে. এর মাঝে দু তিন বার আমরা দাঁড়িয়েছি, কখনো পিছিয়ে পড়া মেম্বার দের খুঁজতে কখনো সিগারেট সুসু র ব্রেক নিতে. ব্রিজ পেরিয়ে 26km গিয়ে আমরা পৌঁছলাম ফ্রেজারগঞ্জ হোটেল দীপক এ.বিশাল বড় প্রপার্টি. সুইমিং পুলে তো পৌঁছেই ঝাঁপ. সঙ্গে ছিলো হার্ড ড্রিঙ্কস এর উন্মাদনা. 18 থেকে 55 বছর বয়স গুলো এই সময় টাতে একই লাগছিল. ইয়ং দের সঙ্গে মিশতে আমার বরাবরই অন্য রকম লাগে. কলেজ লাইফ এ ফিরে যাই. তাই ওয়াটার পোলো তে সেই বয়সেই ফিরে গেলাম. দুপুর তো মাছে ভাতে গেল. বিকালে গেলাম দু km দূরে বকখালি বিচ এ. মাজখানে চড়া তে হাঁটু ডুবিয়ে গেলাম বিচ এর জলের কাছে. এল বৃষ্টি. পলুটেড নয় বলে সমুদ্রের বৃষ্টিতে ভিজলাম জলে পা ডুবিয়ে. স্কুইড, লোটে, বাস পাতা মাছ ভাজা না খেলে বকখালি seabeach এ সন্ধ্যা টা অপূর্ন থেকে যেত. তারপরে রাত একটা অবধি হোটেলের ছাদে চললো তুমুল 29 খেলা. সঙ্গে বিয়ার এর তুফানী চুমুক. সকালে সকলে গেলো হেনরি আইল্যান্ড. নুইয়ে পড়া গাছের মাজখানে রাস্তা যেন ওক জঙ্গলের কথা আবার মনে করিয়ে দিলো. সুন্দন seabeach, মাছ চাষ, আর ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন সকাল টা অভিনব রোমান্টিক করে তুললো.
এবার নতুন খেলা. 12 টা নাগাদ গাড়ি নিয়ে আমরা রওনা হলাম বাড়ির উদ্দেশে. পথে হাতানিয়া-দোয়ানিয়ার নতুন ব্রিজে চললো ফটো শুট আর হেলমেট পরে ডান্স. সে এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা. তারপর নামখানা তে মোটাদার হোটেল এ দ্বিপ্রহরের ভোজন. এল তুমুল বৃষ্টি. ভয়েতে আমার বুক শুকিয়ে গেলো, যখন শুনলাম এই বৃষ্টিতেই গাড়ি নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে. আবারো 60-65km স্পীডে গাড়ি চললো. আধ ঘন্টা গাড়ি চালানোর পরে আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম. সময় টা মনে হচ্ছিলো স্বর্গের রাস্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছি. অকল্পনীয় আনন্দের চ্যালেঞ্জ. রাস্তা শেষ করতে ইচ্ছে করছিলো না. বৃষ্টির শেষে পৌঁছলাম জোকা. চা সিগারেটের সঙ্গে ব্রেকের আড্ডা জমিয়ে দিলো কিছুক্ষন. এরপর বাড়ির পথে পা বাড়ানো. 5:30 টার সময় বাড়ি পৌঁছলাম.
বাঙালি সংস্কৃতিতে গ্রুপ বাইক রাইডিং এতটা জনপ্রিয় নয়. কিন্তু যে ঘ্রান আমি গ্রূপে পেয়েছি তা অভূতপূর্ব. অসম্ভব এক এডভেঞ্চার মন কে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে জীবনের নতুন ছন্দে. ঘুমের মধ্যে বার বার বলেছি, এ পথ যেন না শেষ হয় আমৃত্যু. বেড়াতে গেলে গ্ৰুপ রাইডিং এর মজার কোনো তুলনা হয় না. ধন্যবাদ L2RnD গ্রুপ.
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |