গত ৩১শে আগষ্ট ঠিক সন্ধ্যে ৭টার সময় আমার ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়া পুরানো বন্ধু সুকান্ত হঠাৎ ফোন করে অনুরোধ করলো, ৩দিনের ছুটিতে কোথাও থেকে ঘুরে আসার জন্য। আমি সেই মুহূর্তে কোন decision না জানিয়ে কয়েক ঘণ্টা সময় চেয়ে নিলাম। কিন্তু আমার ভব ঘুরে মন কি এই সুযোগ ছাড়তে চায়? তাই ঘন্টা দুয়েক "যাব কি যাবনা" এই দ্বৈতমানষিকতার ঘোর কাটিয়ে finally যাওয়ার green signal দিয়ে location জানিয়ে দিলাম। এই location নিয়ে কিছুটা আপত্তি থাকলেও পরে অবশ্য রাজি হয়ে যায়।
পরদিন অর্থাৎ ১লা সেপ্টেম্বর পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল ৭টাতে হাওড়ার মন্দিরতলা থেকে গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম জঙ্গল মহলের উদ্দেশ্যে। মাঝে কোলাঘাটে প্রাত:রাশ করার জন্য আধঘন্টার বিরতি নিলাম। তারপর সোজা খরগপুর হয়ে ঢুকে গেলাম লোধাশুলি জঙ্গলের মধ্যে। বর্ষার জলে জঙ্গলের গাছগুলো নিজেদের নতুন করে রাঙিয়ে নিয়ে পূর্ণ যৌবনা হয়ে উঠেছে। এই লাবন্য রূপ দেখতে অপূর্ব লাগছিলো। বর্ষাকাল ছাড়া এদের এই যৌবন রূপ দেখতে পাওয়া যায় না। গাড়ি জঙ্গলের ভিতর দিয়ে আঁকা বাঁকা পথ ধরে এগিয়ে চললো আর আমরা দুপাশের অপূর্ব সুন্দর দৃশ্য দেখতে দেখতে নয়ন সার্থক করতে লাগলাম। মাঝে কয়েকটি ফটো সেশন করে নিলাম। এভাবে কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলাম ঝাড়গ্রামের সেই বিখ্যাত কনক দূর্গা মন্দিরে। জায়গাটির নাম চিলকিগড়। চারিদিকে বিরাজ করছে ঘন সবুজ জঙ্গল এরই পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে বর্ষার জলে পরিপূর্ণ ডুলু্্ নদী। এ রকমই গা ছমছম করা প্রকৃতির কেন্দ্র স্থলে অবস্থান করছে শ্রদ্ধাময়ী মা দূর্গার মন্দিরটি। প্রকৃতি এখানে এক অদ্ভুত অনুভূতিতে ভরিয়ে তুলেছে পরিবেশটিকে।লোক মুখে শোনা যায় এককালে এখানে নাকি নর বলি দেওয়া হত, জানিনা কতটা সত্যি। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার যাত্রা শুরু করলাম আমাদের আজকের গন্তব্য স্থল জঙ্গল মহলে রানিবাঁধের অন্তর্গত ঝিলিমিলির উদ্দেশ্যে। এখানেই আছে একমাত্র থাকার জায়গা "রিমিল লজ" টি। আমরা নেট্ ঘেঁটে পাওয়া ফোন নং দেখে ফোন করে বলে দিলাম আমাদের জন্য একটি ঘর ও দুপুরের খাবার বানিয়ে রাখতে। এরপর ঝাড়গ্রাম কে পিছনে ফেলে এগিয়ে চললাম জঙ্গল মহলের অন্তর্গত অতিপরিচিত সেই জনপদ গুলোর মধ্যে দিয়ে যেমন- বেলপাহাড়ি, বাঁশ পাহাড়ি, ভোলাবেদা ও কাঁকড়াঝোড় ইত্যাদি। এ পথের যাত্রা ভীষণ বৈচিত্র্যপূর্ন, কোথাও আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ সাঁওতাল ও মুন্ডা দের ছোট ছোট জনপদ আবার কোথাও শাল, পিয়াল, মহুয়া,পলাশ ও ইউক্যালিপটাসে ভরা ঘন জঙ্গল। এখানের ভূমি খানিকটা অসমতল তাই রাস্তা কোথাও চড়াই কোথাও উৎরাই। চারিদিকে দিগন্ত বিস্তৃত ঘন সবুজ জঙ্গল, তার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া পীচের চড়াই উৎরাই রাস্তায় গাড়ি চালানোর যে কি মজা, তাহা কেবল যাহারা উপলব্ধি করছেন তারাই বুঝতে পারবেন। এমনি ভাবে রোমাঞ্চকর অনুভূতির মধ্যে দিয়ে আমারা বেলা আড়াইটার সময় পৌঁছে গেলাম "রিমিল লজে"। এরপর স্নান সেরে খাওয়া দাওয়া করে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে নিলাম। ক্রমশঃ প্রকাশিত হবে।***** পুনশ্চ: বানান ভুলের জন্য ত্রুটি মার্জনীয়।
বেলা তখন প্রায় ২-৩০মি.পেটে তখন একটু টান পড়েছে অনুভব করলাম। বন্ধু সুকান্ত বললো জামশেদপুরে গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে আজকের দিনটা ওখানেই কাটিয়ে দিতে। কিন্তু আমার মন তাতে সাধ দিলা না কারণ প্রকৃতির হাতছানি উপেক্ষা করে,জনকোলাহল মূখর ব্যাস্ততার বাতাবরণে থেকে আত্মাকে অপরিতৃপ্ত করাটা আমার ঠিক পছন্দ নয়। তাই বদ্ধ পরিকর হয়ে যাই অয্যোধা পাহাড়ের কোলে প্রকৃতির আপন আলয়ে একটি রাত কাটাতে। 'যথা আজ্ঞা শিরোধার্য" বলে সুকান্ত গাড়ির সম্মুখ পুরুলিয়ার অভিমুখে রেখে গাড়িটা দ্রুত গতিতে ছোটাতে লাগল। ঘন্টা খানেকের মধ্যেই চলে এলাম অযোধ্যা পাহাড়ের নিকটবর্তী পুরুলিয়ার অন্য আরো একটি ছোট শহর বলরামপুরে। পাহাড়ের কোলে এই ছোট্ট শহরটি বেশ সুন্দর। এখানেই একটি হোটেলে আমরা দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম।
এরপর একটু বিশ্রাম নিয়ে আবার চলা শুরু করলাম। আমাদের গাড়ি ট্রেনের লেবেল ক্রসিং পার হয়ে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে চলতে থাকলো। এখানে প্রকৃতি যেন তার রূপের ডালি সাজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। একদিকে গেরুয়া ও সবুজের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সুদীর্ঘ মনমুগ্ধকর পাহাড় আর অন্য দিকে দিগন্ত জোড়া ঘন সবুজে ভরা সমতল ভূমি। এরই মাঝ খান দিয়ে গড়ে ওঠা আঁকা বাঁকা পীচের রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে আমারা মুগ্ধ দৃষ্টিতে প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের স্বাদ উপভোগ করতে থাকলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে এলাম বাঘ মুন্ডির অন্তর্গত সোনকুপি কাফে ও লজ্ এর সামনে। এই লজ্টির অবস্থান আমাদের খুব পছন্দ হয় তাই ম্যানেজার কে বলে একটা এসি রুম বুক করে সমস্ত মালপত্র নিয়ে রুমের ভেতর চলে গেলাম। একটু fresh হয়ে কয়েক ঘণ্টা আশপাশটা ঘুরে ফিরে কাটিয়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম। পরের দিন পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সকাল সকাল জলখাবার খেয়ে বেড়িয়ে পড়লাম 'খয়েরাবেরা' ড্যামের পথে।২৫মি.টে পৌঁছে গেলাম ড্যামের ধারে। অসাধারণ সৌন্দর্যে ভরপুর এই স্থানের দৃশ্য। বহু জনপ্রিয় বাংলা ছবির শুটিং হয়েছে এই স্থানে। এখানে খুব সুন্দর Eco Adventure Resort টি আছে।নানা ধরনের Adventure Event এখানে উপভোগ করা যায়। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে ফিরতি পথে চলে এলাম এখানকার ঐতিহ্য মণ্ডিত মুখোশ তৈরির গ্রাম "চড়িদা" তে। পুরুলিয়ার বিখ্যাত 'ছৌ' নাচে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এরপর যতটা সম্ভব এখানকার বিভিন্ন দ্রষ্টব্য স্থান গুলো - পাখি পাহাড়, অযোধ্যা পাম্পিং স্টোরেজ প্রোজেক্ট,লোয়ার ড্যাম,আপার ড্যাম,বামনি ফলস্,তুরগা ফলস্ ও ময়ূর পাহাড় প্রভৃতি দেখে নিলাম। প্রত্যেকটা জায়গার বর্ণনা করা সম্ভব নয়, তাই এগুলি আপনারা কল্পনা করে উপলব্ধি করুন। তবে একথা অনস্বীকার্য যে হিল টপের আপার ড্যাম আপনাদের সকল ক্লান্তির অবসান ঘটাবে। বিকাল সাড়ে চার টে তে অনন্যা সুন্দরী অযোধ্যা পাহাড় কে বিদায় জানিয়ে কলকাতা অভিমুখে যাত্রা করি। ভোরের আলো ফোটার আগেই আমরা আপন আলয়ে পৌঁছে যাই শুধু ফেলে আসি ভালো লাগা ও ভালবাসার কিছু স্বরনীয় মূহূর্তের স্মৃতি। *********** সমাপ্ত ******** যোগাযোগ তথ্য: ট্রেনে এখানে আসতে হলে - বরাভূম, পুরুলিয়া অথবা ঝালদা হয়ে আসা যায়।অন্যথায় গাড়ি নিয়ে সরাসরি আসতে পারেন। থাকার জন্য উপরে ও নিচে কিছু মাঝারি ধরনের হোটেল ও রিসোর্ট পাওয়া যায়।
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |