চলনা দীঘার সৈকত ছেড়ে ….. ------------------------------------------ হঠাৎ সেদিন । হ্যাঁ হঠাৎই । পয়লা আগষ্ট । আমার বন্ধুক্লাব দু-তিনটি । সেদিন হঠাৎই ডাক দিলো চিত্রাঙ্গদা প্রমিলা বাহিনী । খুব বোর লাগছে - একটা কিছু করো - ক্ষণে ক্ষণে মনে মনে শুনি অতল জলের আহ্বান ! ! ব্যস্ পাড়ার ট্রান্সপোর্ট এজেন্টেকে ফোন, ফোর সিটার নিয়ে হাজির পুচকে সারথী গোপাল । চলো বন্ধু বেলঘড়িয়া… না না বেলঘড়িয়া নয়, পুরুষোত্তমপুর … মন্দারমণি থেকে মাত্র চার কিলোমিটার । সকাল সাতটায় রথে চড়লাম । নিবেদিতা সেতু দিয়ে হাওয়ার বেগে ছুটলো রথ । বারবার সারথীকে সাবধান করছি “বাছা আমরা ট্রেন ধরবো না, অফিসে যাবোনা ...একটু আস্তে বাবা … “ একসময়ে থামালাম তাকে । রাস্তার ধাবায় পুরি সব্জি, চা হলো । আবার ছুট । কন্টাই, কাঁথি পার হয়ে চাউল পট্টি মোড় । মন্দারমণির রাস্তা সারথীর চেনা । কিন্তু পুরুষোত্তমপুর রামকৃষ্ণ মিশন ? হ্যাঁ ওটিই আমাদের একদিনের রাত্রিযাপনের হট্টমন্দির । রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা অন্ততঃ চারজন আমাদের চারভাবে দিকনির্দেশ দিলো । আমরা কখোনো পৌঁছে গেলাম অনাথ আশ্রম, কখোনো বন্ধ কারখানার গেটে, কখোনো বা অজানা দিগন্তের মুখোমুখি । শেষে এমন জায়গায় পৌঁছে গেলাম যেখান থেকে কোন রূপকথা শুরু হতে পারে …”সে এক গভীর অরণ্য, চারিদিকে অদ্ভুত নৈশব্দ, দূরাগত সমুদ্রের শোঁ শোঁ শব্দ ...জন মনিষ্যির চিহ্ন মাত্র নাই …” তো সেই উবড় খাবড় জংলা পথ দিয়ে যেতে চোখে পড়লো দূরে গেরুয়া রঙের মিশনের দেওয়াল ….ইউরেকা ...ইউরেকা.. যেন প্রাণ আসলো ধরে !! মহারাজের উষ্ণ অভ্যর্থনায় ঠাঁই হলো দোতলার বেশ বড় ঘরে - দুটি বড় বড় বেড চারজনের জন্য যথেষ্ট । মুখ হাত ধুয়ে বসেছি । খাওয়ার ডাক পড়লো । খুব ভালো ব্যবস্থা । ভাত,ডাল,ভাজা,দু রকমের তরকারি, মাছ, চাটনি, পাঁপড় ! মনে হয় কিচেনের কর্মীদের কিছু ভুল আছে, কেননা দুপুরে মুড়ির চালে ভাত রান্না হয়েছিল আর সন্ধ্যের জলখাবারের সরু সরু মুড়ি - নিশ্চই তা ভাত রান্নার চালে ভাজা । খেয়েই সঙ্গে সঙ্গে টই টই । মহারাজ হাঁ হাঁ করে উঠলেন - একি একটু বিশ্রাম করুন … বিশ্রাম করুন … কে শোনে কার কথা । আমাদের পালে তখন লেগেছে হাওয়া - বাইরে এলেই দেখেছি মন কেমন ছন্নছাড়া হয়ে যায় - " আমরা চঞ্চল, আমরা অদ্ভুত ….!! আশ্রমের উল্টো দিকেই সমুদ্র । নিস্তব্ধ শুনশান সমুদ্রতীর । এখন ভাঁটা চলছে । তীরে লাল কাঁকড়ারা পলাশ ফুলের পাপড়ির মতো ছড়িয়ে আছে - আমাদের পায়ের শব্দে সুরসুর করে গর্তে ঢুকে পড়ছে । তীরে স্টার ফিসের ছাপ, মরা শঙ্কর মাছের বাচ্চা । একটু দূরে দুজন স্থানীয় মহিলা সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে স্থির, সমুদ্রের কোমর জলে দাঁড়িয়ে একটি অল্প বয়সী ছেলে জাল টানছে । পায়ে পায়ে মহিলাদের কাছে এলাম । মহিলাদের একজন তো একদম বাচ্চা মেয়ে - সে বালির মধ্যে পা ঢুকিয়ে, তার উপর অনেকখানি বালি চাপিয়ে আস্তে করে পা টেনে বার করলো, হয়ে গেলো বালির দুর্গ । ছোট বেলার কথা মনে পড়লো । বয়স্ক মহিলার হাতে বালতি - সমুদ্রের মাছ ধরা ছেলেটির দিকে তাকিয়ে । জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম ছেলেটি বাগদা চিংড়ির বিন্ (মীন - সদ্যজাত বাগদার বাচ্চা - খুব সরু সুতোর মতো দেখতে) ধরছে । মা সমুদ্রের দিকে এগিয়ে গেলো, ছেলে তীরের দিকে কিছুটা এলো । ছেলে জাল ঝেড়ে ঐ মায়ের বালতিতে সমুদ্রের জলশুদ্ধু বিন্ ঢেলে দিলো । মা বালতি নিয়ে বালুচর ছেড়ে ঘাস জমিতে উঠলো । কৌতুহলে চললাম সঙ্গে সঙ্গে । সবুজ ঘাস জমিতে চারকোণা একটা গর্তের মধ্যে পলিথিন বিছিয়ে মীন শুদ্ধু সমুদ্রের জল বালতি থেকে ওখানে ঢালা হচ্ছে । একটা ঝিনুক দিয়ে ঐ সরু সুতোর মতো মীন মা তুলে তুলে একটা বাটিতে রাখছে । জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম দেড়শ টাকা হাজার হিসাবে ভেরীর মালিকরা কেনে এই মীন । জিজ্ঞেস করলাম “আজ কতো তুললেন ?” “সকাল দশটা থেকে এই অব্দি দুশ হবে !” আ্যঁ ...মানে এতো পরিশ্রমে হাজার হিসাবে উপার্জন হলো মাত্র তিরিশ টাকা ! উঃ কী নির্মম এই বেঁচে থাকা । মনটা খারাপ হয়ে গেলো । সন্ধ্যার সময় আবাসিক ছাত্ররা প্রার্থনা সঙ্গীত গাইলো । পিছনে বসা বাচ্চাদের লুকিয়ে লুকিয়ে খুনশুটি খুব উপভোগ করলাম “আমরা লক্ষ্মীছাড়ার দল, ভবের পদ্মপত্রে জল, সদা করছি টলমল …. নাহি জানি করণ-কারণ, নাহি জানি ধরণ ধারণ …নাহি মানি শাসন-বারণ গো …” সন্ধ্যেবেলায় মুড়ি ছোলা চা সহযোগে সান্ধ্য নাস্তা । দোতলায় রাস্তার দিকে মুখ করা একটা বেশ বড় বারান্দা । বসলাম সেখানে । যাদপুরের পিএইচডি ছাত্রী আর তার মা, দিদির সঙ্গে আড্ডা হলো, গান গাইলাম । রাতে ভয়ে আর ভাতের দিকে এগোইনি - ডিম রুটি ডিনার । পরদিন সকালে বিচিত্রপুর অভিযান । দীঘা ছাড়িয়ে, উড়িষ্যার বালাসোর জেলায় । এখানেও পথ বিভ্রাট । রাস্তার দুই প্রবীণ আর নবীনের ঝগড়া লেগে গেলো আমাদের দিকনির্দেশকে কেন্দ্র করে । বিচিত্রপুর সম্বন্ধে আমাদের জানাটা একটু কম ছিলো, তাই হই হই করে কুড়ি টাকার টিকিট কেটে উঠে বসলাম ফেরী নৌকায় বিচিত্রপুর দ্বীপের উদ্দেশ্যে । এমন জায়গায় নৌকা ভেড়ালো যেখান থেকে লাফিয়ে স্থলে নামতে হবে । আমাদের দুই বন্ধু পারলোনা । জানা থাকলে প্রাইভেট নৌকা নিতাম - তারা খুব ভালো মতো ঘোরায়, এমন জায়গায় নৌকা ভেড়ায় যেখানে লাফ দিতে হয়না এবং দ্বীপটা সম্পূর্ণ ঘোরা যায় । মন খুব খারাপ ।গোপাল বললো উদয়পুর যাবেন ? অবশ্যই - দেখি মনের ভার কমে কিনা ! উদয়পুর !! উঃ কী হাওয়া ...ঝোড়ো হাওয়া বইছে সোঁ...সোঁ...মাঝেমাঝে ঝেঁপে বৃষ্টি ...সমুদ্র উত্তাল । কংক্রিটের বোল্ডারে সমুদ্রঢেউ লাফিয়ে লাফিয়ে আছাড়ি পিছাড়ি খাচ্ছে ! চারিদিকে মাছ, কাঁকড়া ভাজা আর ভাল্লুকের গন্ধে ম ম করছে । ঐ সব রসে আমরা বঞ্চিত । কিন্তু এত কাছে এসে সমুদ্রের আলিঙ্গন স্পর্শ নেবোনা ...আমি ? তা কি হয় ! তা কি হয় ! দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দস্যু ঢেউয়ের জন্য অপেক্ষা করলাম ...দু দু বার এসে ভিজিয়ে দিলো … পুরো স্নান । জুবজুবে ভিজে । এক বন্ধুও সামান্য ভিজেছে । দীঘায় এলাম । ঘড়ি বলছে একটা বাজে । খুব খিদে পেয়েছে । বন্ধুদের পাহারায় পোষাক পরিবর্তন - গাড়িতেই । খাওয়ার হোটেলে এলাম । দীঘায় প্রতিদিন টন টন ইলিশ উঠছে । তাই রসনা লকলক । রসনাকে নিয়ন্ত্রণ করলাম - দাম শুনে ! দু পিস্ - পাঁচশ টাকা । খাবার টাবার, পানটান খেয়ে চারজনে সুন্দর করে বাঁধানো গার্ড ওয়ালে বসে আড্ডা দিলাম কিছুক্ষণ । এবার ফেরার পালা । সারথী প্রস্তুত । চলো ! অলবিদা……..অলবিদা … লেকিন … চলতে চলতে কভী অলবিদা ন কহনা.. তো ? অন্য কোন দিন, অন্য কোথাও !!! Post By:- Minati Ghosh
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |