সাগর সঙ্গমে (মন্দারমণি,সমুদ্র সৈকত আর আমরা) অনেক তিয়াসে করেছি ভ্রমণ, জীবন কেবলই খোঁজা! অনেক বচন করেছি রচন, জমেছে অনেক বোঝা। বেঁচু গিরির জীবন মশাই আমাদের। মাসের পর মাস, প্রথম দিনেই স্থির হয়ে যায় আমাদের লক্ষ্য, আর বাকি ঊনত্রিশ দিন ধরে সেই লক্ষ্যভেদের উদ্দেশ্যে ছুটে চলা। আমরা সেলসম্যান। আর সারা মাসের এই কঠোর পরিশ্রমের পর অন্তিম দিনে যখন লক্ষ্য পূরণ হয়, তখন হয় তার উদযাপন। সঙ্গে যদি একটা দিন অতিরিক্ত ছুটি পাওয়া যায় তবে তো আর কোন কথাই নেই। তাই এবার ঠিক হল, উদযাপন টা হবে মন্দারমণির সমুদ্র তটে। সঙ্গী, আমরা নয় জন। কথাতেই তো আছে "যদি হয় সুজন, তেঁতুল পাতায় নয় জন"। তাই দুই বন্ধুর গাড়ি নিয়ে শনিবার সকাল সকাল শুরু হল যাত্রা। চলন্ত গাড়ির ঠান্ডা কেবিনে তখন বাজছে "Party sharty karenge karenge... Long drive pe chaal"। এইভাবে চলতে চলতে সোজা কোলাঘাট। কোলাঘাটে পৌঁছে তেল চপচপে আলুর পরোটা, আচার আর চা দিয়ে হল প্রাতরাশ। কিছু সময় পরেই আবার শুরু হল যাত্রা। নন্দকুমার পেরোনোর পর থেকেই শুরু হল বৃষ্টি। বুঝলাম, প্রকৃতি আজ নিজেকে উজাড় করে দিতে প্রস্তুত। মাঝে কাঁথিতে সামান্য একটু বিশ্রাম নিয়ে সোজা চাউল খোলা। আরও দশ কিলোমিটার চলার পরেই দেখতে পেলাম নীল জলরাশি, আর কানে এল তার গর্জন। অনুভব করলাম গাড়িতে আর এক বিন্দুও বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না। সমুদ্রের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা হোটেলে পৌঁছেই সবাই মিলে তড়িঘড়ি করে গিয়ে নামলাম সমুদ্রে। মনে হল যেন "দিল তো বাচ্চা হেয় জী"। এক একটা ঢেউ তৈরি হচ্ছে তারপর ভাঙ্গছে আবারও তৈরি হচ্ছে। আর আমরা একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে তার তালে তাল মেলাচ্ছি। যেন শৈশব কে আবার ফিরে পাওয়া। সমুদ্র স্নানের পর হোটেলে ফিরে পার্শ্বে আর পমফ্রেট মাছ দিয়ে ভুরি ভোজনের পর, আবারো বেরিয়ে পরা। এবার সামান্য ঘোরাঘুরি করে যখন ফিরছি, বন্ধুর গাড়িতে তখন বাজছে "আভী তো পার্টি শুরু হুই হে"। সন্ধ্যায় হোটেলে ফিরে সমুদ্রের ধারে বসে, শুরু হল চিকেন পকোরা আর কাতলা মাছ ভাজা সহযোগে বাঙালির চিরাচরিত আড্ডা আর গান। দুরে, ওই অনেক দুরে গাঢ় কালো অন্ধকার সমুদ্রের মাঝে তখন ছোট ছোট প্রদীপের শিখা যেন জ্বলজ্বল করছে। জেলে ভাইয়েরা ব্যাস্ত তাদের দৈনন্দিন জীবন সংগ্রামে। সমুদ্রে তখন জোয়ার এসেছে সঙ্গে চলেছে তীব্র হাওয়ার দাপট। আর তার গর্জন যেন আমাদের শিহরিত করছে, এলোমেলো করে দিচ্ছে সম্পূর্ণ। সমুদ্রের ধারে এই সামুদ্রিক হাওয়ার যেন এক আশ্চর্য মাদকতা আছে। তাতে আসক্ত না হয়ে উপায় কি। মনে পরে গেল বিখ্যাত সেই গানের লাইন "মেজাজটাই তো আসল রাজা আমি রাজা নয়"। রাতে মুরগির কষা মাংস আর সঙ্গে গরম গরম রুটি দিয়ে উদর পূর্তি করে যখন শুতে গেলাম, ঠিক হল পরের দিন সূর্যোদয় দেখব। কিন্তু বেয়াড়া ঘুম যখন ভাঙ্গলো, ঘড়িতে তখন সকাল ছটা। কাজেই এই যাত্রায় সমুদ্রের পাড়ে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখার স্বাদ আমার মনেই থেকে গেল। সকাল সকাল বেড়িয়ে, সমুদ্রের পাড়ে বালির উপর দিয়ে খালি পায়ে হাটতে হাটতে সমুদ্র দর্শন যেন চোখের শান্তি, সঙ্গে মনেরো। বেশ কিছুটা সময় সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে হাঁটলাম। তারপর আবার হোটেলে ফিরে গরম গরম লুচি আর আলুর তরকারি দিয়ে প্রাতরাশ সেরে নিলাম। এইবার ফেরবার পালা। সমুদ্রের তীরে বাঁশ আর চাটাই এর দ্বারা নির্মিত একটি সস্তার হোটেলে অপূর্ব দেশী মুরগির মাংস আর গরম গরম বাসমতি চালের ভাত খেয়ে শুরু হল ফেরার পথ চলা। আগামী কাল থেকেই শুরু হবে আরও একটি নতুন মাস আর তার নতুন লক্ষ্য। আর এই সেই লক্ষ্য ভেদ করলেই হবে পুনরুযাপন, হবে হুল্লোড় হবে উল্লাস। সঙ্গী: Shrinjoy Saha, Subhankar Barman, Amit Saha, Ishan Banerjee, Gourav Halder, Mithun Chakraborty, Saikat Das, and Me Post By:- Debapriya Roy
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |