একটুকরো রাজস্হান-- জয়পুর এবার পুজোতে golden triangle tour এ গেছিলাম,দিল্লী-আগ্রা-জয়পুর। প্রথমবার রাজস্হানের রাজধানী শহরে প্রবেশ করতে গিয়েই মুগ্ধ হলাম দূর থেকে আমের বা অম্বর ফোর্টের দীর্ঘ প্রাচীর দেখে। মনে হল যেন মুহূর্তে কোনো ইতিহাসের পাতায় ঢুকে পড়লাম,রাজকীয়তা,গল্পে শোনা রাজপুত কাহিনীর অন্দরমহলে। আমের দ্বারের ফটক দিয়ে জয়পুর শহরে ঢুকতেই সেই বিখ্যাত গোলাপী রঙা পুরোনো পুরোনো প্রাসাদ, তার গায়ে নানা রকম রাজস্হানী পসরা সাজানো দোকান--- কেমন যেন হাতছানি দিয়ে ডাক দিলো। হোটেলে পৌঁছেই অম্বর ফোর্টের বিখ্যাত light n sound show দেখতে সন্ধ্যায় বেড়িয়ে পড়েছিলাম।কিন্তু ওখানে গিয়ে শুনলাম যে দিনটা নবরাত্রি,তাই স্হানীয় প্রচুর লোকের ভীড় হওয়ায় 6.30 ও 7.30 টার দুটো শো বাতিল। অগত্যা মন খারাপ নিয়ে ফিরে আসা,তবে রাতের আমের দুর্গের শোভাও অতুলনীয়। ফেরার পথে জলমহলের লেকের ধারে বসে স্হানীয় মেলার মত হাটের মজা নিলাম কিছুক্ষণ। পরের দিন একজন বাঙালি গাইড দাদাকে সঙ্গে নিয়ে ইতিহাসের সরনী ধরে রওনা দিলাম। কতটা সত্য,কতটা মিথ্যা জানি না,তবু এক এক জায়গার গল্প শুনছি আর শিহরিত হচ্ছিলাম ভেবে যে রাজকীয়তা - আত্মমর্যাদাবোধ রাজপুতদের থেকে শিখতে হয়। হাওয়ামহল দেখে শুনলাম যে রাজবাড়ির মহিলারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখতেন ওখানে। যন্তর মন্তর - আমার দেখা বিস্ময়ের একটা জায়গা। রাজা জয় সিংহ২ কতটা বিজ্ঞান সচেতন এবং সময়ের চেয়ে এগিয়ে ছিলেন তার প্রমাণ ওখানে। ঘড়ি ছাড়া সূর্যের আলো দেখে সময়ের হিসেব,রাশিচক্র,দ্রাঘিমা- অক্ষাংশের হিসাব,যেকোনো দিনের লগ্নের অবস্হান... সব কিছু নিয়ে ওঁনার গবেষণা নজিরবিহীন। তারপর এলাম আমরা জয়পুরের রাজপ্রসাদে,সিটি প্যালেসে। রাজবাড়ির সংগ্রহশালা ঘুরে দেখলাম। শুনলাম বর্তমান রাজার বয়স ১৯ বছর,যিনি বিদেশে পড়াশুনা করছেন,রাজার অবর্তমানে রাজবাড়ির একটি পতাকা নামানো থাকে। ঘুরে ঘুরে দেখলাম রাজবংশের লোকেদের যুদ্ধের সরঞ্জাম,রাজপোষাক,তৈলচিত্র ইত্যাদি।আর আছেন রাণী গায়ত্রীদেবী,যাঁর ছবি- বই সর্বত্র বিক্রি হচ্ছে। কিছুজায়গায় ছবি তোলা নিষিদ্ধ। বাইরে দেখলাম কোনো ফিল্মের শুটিং চলছে,এখানের এটি নাকি রোজকার ব্যাপার। কথিত আছে যে রাজা মাধব সিংহ বড় বড় দুই ঘড়া গঙ্গার জল নিয়ে বিদেশ যাত্রা করেছিলেন,সেই ঘড়াগুলো সংগৃহীত আছে।রাজা রাম সিংহের চিন্তাধারা থেকেই জয়পুর শহরকে পিংক সিটি রূপে সাজানো হয়। এরপর আমরা আমের ফোর্ট দেখার উদ্দেশ্যে যেতে আরেক জগতে ঢুকে পড়ি। শহর থেকে বেড়িয়ে পাহাড়ে ঘেরা রাজা মান সিংহের রাজত্ব। পথবিস্তৃত প্রাচীর শহরকে ঘিরে আছে। বেশ অনেকটা সিঁড়ি বেয়ে গিয়ে পৌঁছালাম রূপকথার রাজ্যে। কি অসাধারণ কারুকার্য প্রতিটি কোণায়। রাজার ১২ জন রাণীর আলাদা মহল। তাদের রান্নাঘর,বাগান,স্নানঘর,রাজার মহল... সব দেখে মুগ্ধতায় ভরে ফেরার পালা।এখানে হাতির পিঠে চড়ে ঘোরার ব্যবস্হাও আছে। ফেরার পথে জলমহল দেখে ফিরলাম।আমাদের সাথে বয়স্ক মানুষরা থাকায় নাহারগড়-জয়গড় দুর্গ দেখা সম্ভব হয় নি। তবু আশা নিয়ে থাকলাম যে অদুরভবিষ্যতে রাজস্হান সফরে এসে অসম্পূর্ণ জায়গাগুলো দেখে নেবো। সন্ধ্যাবেলা জয়পুরের মেট্রোরেল চেপে হাওয়ামহলে এসে স্হানীয় টুকিটাকি হাতের কাজের জিনিস কেনা হল। এখানের মেট্রোর সঙ্গে আমাদের কলকাতার তফাত অনেক,এত ফাঁকা কামরা,লোকে ব্যবহার কমই করে। আর আছে জয়পুর জুড়ে শুধু বিদেশীদের আনাগোনা,নানা দেশের এত মানুষের সমাগম অন্য কোনো জায়গায় কম দেখা যায়। তবে জয়পুর শহরের রাস্তার জ্যাম আমাদের মত কলকাতাবাসীকেও অধৈর্য করে তুলেছিলো। হয়ত দশেরার সময় বলে একটু বেশি ছিল। এই প্রথম ওখানে রাবণদহনও চাক্ষুষ করলাম। সব মিলিয়ে দুটো দিন বেশ কাটলো রাজকীয় প্রাসাদ-রাজস্হানী পোষাক- জয়পুরী সাজার জিনিস- রাজস্হানী থালি- রাজকাহিনীর স্বাদ নিয়ে Post By-Bidisha Basu
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |