ডুয়ার্স-এ 'বিন্দু'র সংসারের পথে.... পাহাড়ের কোলে একটা ছোট্ট গ্রাম, তার নাম বিন্দু। গ্রামটি ভারত-ভুটান সীমান্তের গায়ে প্রায় 2000 ফুট উচ্চতায় নিজের সংসার পেতেছে। একটি অতিপ্রাচীন জলবিদ্যুৎ প্রকল্প বিন্দুর সংসারকে এতটাই সমৃদ্ধ করেছে, যাতে পর্যটকদের কাছে বিন্দু আরো আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। বাঁধের গায়ে "দুধ খোলা" , "বিন্দু খোলা" আর "জলঢাকা" নদী একে অন্যের সাথে একাত্ম হয়েছে। পাহাড়ী ভাষায় "খোলা" মানে নদী। প্রকৃতি জলঢাকা নদীকে মাধ্যম করে ভারত আর ভুটানের সীমানা গড়েছে। এমন অকল্পণীয় সৌন্দর্যে গা ভাসাতে অপেক্ষা না করেই পরিবারের সাথে একদিন বেরিয়ে পড়লাম। ফালাকাটায় থাকার কারণে গাড়িতে বীরপাড়া, বীনাগুড়ি হয়ে প্রথমে মূর্তি পৌঁছালাম। সেখান থেকে খুনিয়া মোড় থেকে আমরা ডানদিকের রাস্তা ধরে বিন্দু পৌঁছালাম। পাহাড়ের গা বেয়ে যখন সর্পিল রাস্তা এঁকে বেঁকে উঠে যায়, তখন এক মন উদাস করা আবেগ, ভাবনার সাগরে ডুবস্নান দেয়। নাম না জানা অপরিচিত বন্য ঝর্ণার কুলুকুলু রব এক লহমায় নিছকই অপরিচিত থেকে পরিচিত হবার নেশায় মেতে ওঠে। দু'একটা নাম না জানা পাহাড়ি ফুল গন্ধতে কাউকে পরাজিত করতে না পারলেও রূপে হৃদয় ভোলায়। আমরা যতই পাহাড়ের উপর উঠে যাচ্ছিলাম, ততই শীতের আধিপত্য অনুভূত হচ্ছিল। গাড়ির কাঁচে ঝাপসা হয়ে যাওয়া দূরের পাহাড়টা ধীরে ধীরে কাছে আসছিল। কিছু পাইন আর রাবারের সারির মাঝে অচেনা পাখি নিজেদের ভাষায় অজানা সুরে আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিল। একটা নদী যখন পাহাড়ের বুক চিরে পাহাড়টাকে দ্বিখণ্ডিত করে, ঠিক তখনই বিজ্ঞান সেখানে সেতু বানিয়ে পর্যটকদের এক পাহাড় থেকে আর এক পাহাড়ে যাবার সুযোগ করে দেয়। লোহার সেতুর গায়ে পতাকার আকারে বিন্যস্ত নেপালিদের স্তোত্রগাঁথা তাদের সংস্কৃতিকে অন্যভাবে চেনার সুযোগ করে দেয়। গাড়ি থামিয়ে সেই সেতুর উপর দাঁড়িয়ে কিছু মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করলাম। রাস্তা যেন শেষ হচ্ছিলই না, হঠাৎ স্রোতের শব্দ যখন শ্রবণেন্দ্রিয়কে সজাগ করে দিলো, তখনই বুঝলাম বিন্দু পৌঁছে গেছি। শব্দটা আর কিছুই না, ওটা তিনটে নদীর মিলিত হবার অস্তিত্বকে জানান দিয়ে যাচ্ছে। গাড়ি থেকে নেমেই শীতের প্রকোপটা অনুভব করলাম। সামনেই কতগুলো ছোট ছোট দোকান ছিল। সেখানে গরম গরম চাওমিন সেদ্ধ আর মোমো খেয়ে প্রকৃতির সাথে একাত্ম হতে যে যার নিজের মতো করে প্রকৃতিকে অন্নেষণ করতে লাগলাম। আমার আট মাসের ছোট্ট মেয়েটাও প্রকৃতি অনুভব করার আনন্দকে হাত পা নেড়ে হাসিমুখে স্বাগত জানালো। যতটা সম্ভব সব মুহূর্ত ক্যামেরাবন্দি করে আমরা আবার বাড়ির উদ্যেশ্যে রওনা দিলাম। মনের মধ্যে একরাশ ভালোলাগা নিয়ে আমরা বিন্দুর সংসার থেকে নিজের সংসারে পাড়ি দিলাম। Post By:- Arunima Konar Nayak
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |