# রিশপের দিনগুলো – প্রথম পর্ব অনেক আকাশ পাতাল ভাবনা চিন্তার পর অবশেষে সবাই স্থির করলাম রিশপ যাবো,সেইমতো মাল জংশন পর্যন্ত টিকিট কেটেও ফেললাম। একটু খোঁজ খবর করে জানতে পারলাম রিশপে 3 রাত্রি থেকেই গাড়িতে লাভা লোলেগাঁও ডেলো কালিমপঙ ছঙ্গে সবই ঘোরা সম্ভব। দেরি না করে রিশপে ঘরও বুক করে নিলাম কলকাতা থেকেই। ব্যাস এবার শুধু দিন গোনার পালা। দেখতে দেখতে এসে গেল দিন ,আমরাও বাগপত্তর নিয়ে সোজা শিয়ালদহ স্টেশন। এরপর " চায়ে চায়ে" আওয়াজে সকালে ঘুম ভাঙলো । দেখলাম njp পৌঁছে গেছি। শিলিগুড়ি পেরোতেই কিছুক্ষন পর শুরু হলো চোখজুড়ানো চাবাগানের মেলা। শেষ পর্যন্ত বেশ দেরিই হলো মাল জংশনে নামতে।নেমেই কালবিলম্ব না করে সোজা মালবাজার আর সেখানেই পেটপুজোর সমান্য ব্যবস্থা। খেয়ে উঠেই অনেক দর কষাকষির পর একটা গাড়ি জোগাড় করে একেবারে " ননস্টপ রিশপ "। পথের দুধারে চোখ জুড়ানো সবুজ আর মেঘের ভেলায় ভেসে বিকেলে পৌঁছলাম রিশপ। যেখানে সত্যিই মেঘ গভীর মতো চরে ।তাপমাত্রা হটাৎ করে কমে যাওয়ায় খুব ঠান্ডা বোধ হচ্ছিল কিন্তু গরম গরম কফি আর ম্যাগি পেটে চালান করে কিছুটা স্বস্তি মিললো। আশ পাশ টা একটু এক্সপ্লোর করে সন্ধে নামার আগেই ফিরে এলাম ।রাতের দিকে দূরে পাহাড়ের গায়ে জোনাকির মতো ফুটে থাকা আলো গুলো দেখে অনেক কৌতূহল হলো পরে আমাদের কটেজের বিনোদ দা বললেন ওটা নাকি পেডং। দ্বিতীয় দিন খুব ভোর ভোর উঠে গেলাম কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কিন্তু দেখা পেলাম না কারণ তখনও মেঘ গাভীর মতোই চরছে। ফিরে এসে স্নান সেরেই গাড়িতে চেপে বসলাম,আজ গন্তব্য লোলেগাঁও।মিনিট পনেরো পরেই নেমে পড়লাম 6 মাইলে চা মোমো খেয়ে আবার পাইনবনের মধ্যে ঢুকে পড়লাম। রাস্তায় অনেকবার দাঁড়ালাম ফটোসেশন এর জন্য তবুও মন ভরলো না যেন ।লোলেগাঁও পৌঁছেই প্রধান আকর্ষণ ক্যানপি ওয়াক বা হ্যাংগিং ব্রীজ দেখতে গেলাম। নগদ পঁচিশ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে ঢোকার সময়ই একজন জোঁকের ব্যাপারে সাবধান করে দিলেন,কিন্তু আমার মতো যাদের " চলতে গিয়ে এদিক ওদিক ডাইনে বাঁয়ে " যাওয়ার অভ্যাস তাদের কপালে তো দুর্ভোগ লেখাই থাকবে,সেসব সামলে সুস্থ ভাবে বেরিয়ে এলাম। এরপর গাড়িতে উঠে সোজা খাওয়ার হোটেল। ভরপেট খেয়ে উল্টো দিকের বুদ্ধ পার্কে কিছুক্ষন ঘুরে ,গাড়িতে উঠে বসলাম কারণ এবার রিশপ ফেরার পালা। # রিশপের দিনগুলো –দ্বিতীয় পর্ব দ্বিতীয় দিন লোলেগাঁও থেকে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেল।রিশপ ফিরেই হাঁটা লাগলাম ভিউ পয়েন্ট থেকে দূরে দেখতে পাওয়া গ্রাম্য মনেস্ট্রির দিকে,যদিও মনেস্ট্রির বাহ্যিক বর্ণনা করা দুরূহ ,রঙ চটা দীর্ণ দশা আর বিকেল পাঁচটায় দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুই দেখতে পেলাম না। উৎরাই পথে অনেকটা নেমে গেছি তাই উঠতে গিয়ে সত্যিই কষ্ট হতো কিন্ত ঠিক সেই সময়ে মসিহার মতো উদয় হলেন পাশের রিসোর্টের নীরাজ দা।নিজেই আমাদের ওনার গাড়িতে বসতে বললেন,আমরাও কোনো কথা না বাড়িয়ে উঠে পড়লুম।এরপর শুরু হলো বৃষ্টি আর সাথে ঝড়ো হাওয়া।আমরাও রাত্তিরের মতো ঘরবন্দি। তৃতীয় দিন সকালে আবার নীরাজ দার সাথে দেখা, কথা বলে জানলাম আজ সিন্ডিকেট থেকে ওর গাড়িটি আমাদের ডেলো হয়ে কালিমপঙ যাওয়ার জন্য বরাদ্দ। যাত্রা শুরু করেই রুটিন মেনে 6 মাইলে দাঁড়ালাম জলখাবার এর জন্য।ঘন্টাখানেকের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম ডেলো পাহাড়,রাস্তায় অনেকে Para gliding এ উৎসাহী কিনা জানতে চাইলো কিন্তু নেতিবাচক ঘাড় নাড়া দেখে কথা বাড়ালো না । যেতে যেতে রাস্তায় science centre পড়লো আমরা যদিও ওখানে যায়নি। গাড়ি থেকে নেমেই পাশের দোকানে নেপালি নুডুলস ( যার পোশাকি নাম wai wai ) খেয়ে দেখলাম। যদিও আলাদা কিছু বুঝলাম না তবুও বিদেশি খাবার তো !! লক্ষ লক্ষ ফুলে সাজানো সুন্দর ডেলো পার্কে ঘন্টা খানেক কখন যে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না । ওখান থেকে বেরিয়ে আমাদের গন্তব্য মঙ্গল ধাম। গাড়িতে মাত্র কুড়ি মিনিটের রাস্তা। এখানকার ফুলের সাজানো গোছানো বাগান আর পরিচ্ছন্নতা লক্ষণীয়। তবে যারা কৃষ্ণ ভক্ত প্রধানত তাদের ই এখানে ভালো লাগবে।এছাড়া বলার মতো কিছু নেই। আধঘন্টা ঘুরেই বেরিয়ে পড়লাম পাইন ভিউ নার্সারি যাবো বলে এটাও গাড়িতে মিনিট কুড়ির পথ। পাইন ভিউ নার্সারিটি মূলত বেসরকারি উদ্যোগে বানানো। এখানে প্রবেশ মূল্য কুড়ি টাকা। লাতিন আমেরিকার প্রায় 1500 প্রজাতির ক্যাকটাসের সম্ভার আর সাথে রকমারি ফুলের বাহার আপনাকে মুগ্ধ করবেই। আধ ঘণ্টা কাটিয়ে এবার পেট পুজোর পালা। ফিরে এলাম কালিমপং শহরে,একটা পছন্দমতো হোটেলও খুঁজে নিলাম । পেট পুজো সারলাম একশো টাকায় মাংস ভাত পেটচুক্তি তে। ঘড়ির কাঁটায় তখন দুপুর দুটো। এরপর কালিমপঙ শহরে একটু হাঁটা হাঁটি, অচেনা গলিপথ ধরে কখনো উপরে ওঠা তো কখনো নেমে যাওয়া। ড্রাইভার দাদার ফোনে সম্বিৎ ফিরলো। এবার রিশপ ফেরার পালা শেষ বারের মতো। সাড়ে চারটে নাগাদ রিশপ পৌঁছলাম। রিশপ এমন একটা জায়গা যেখানে গেলে ঘরে বসে একবিন্দু সময় নষ্ট করতে মন চাইবে না । রোজ সকালে ভোর ভোর উঠে সূর্যোদয় দেখার মজাই আলাদা , তবে রোজ সূর্যদেবতা দর্শন দেবেন এমন ও নয়। আকাশ খুব পরিষ্কার থাকলে তবেই দেখা পেতে পারেন । আমাদের একেবারে চতুর্থ তথা শেষ দিনে সৌভাগ্য হয় কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখার । সকাল সকাল রিশপ কে বিদায় জানিয়ে তল্পিতল্পা নিয়ে শেষবারের মতো বেরিয়ে এলাম আমরা। আজ অনেকটা পথ পাড়ি দিতে হবে, মিনিট চল্লিশ পর এসে পৌঁছলাম লাভা মনেস্ট্রি । একটা ঝকঝকে সকালের মিষ্টি রোদের আলো যাকে করে তুলেছে আরো সুন্দর । প্রায় আধ ঘণ্টা কাটিয়ে বেরিয়ে এলাম। গাড়িতে কিছুদূর এসেই ঢুকে পড়লাম নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে । জঙ্গল ক্রমে গভীর থেকে গভীরতর হলো। এখানে রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের কয়েকদিন দিনের শেষে যখন রিশপ ফিরতাম তখন মনে হতো বুঝি রিশপের রাস্তাই খারাপ কিন্তু এখানে এসে ধারণাটা বদলে গেল। গাড়িতে করে দুলে দুলেই পৌঁছে গেলাম খোলাখাম ,ওখানে না দাঁড়িয়েই আরো এগিয়ে গেলাম ছাঙ্গে জলপ্রপাত এর উদ্দেশ্যে। লাভা থেকে গাড়িতে এক ঘন্টা লাগলো এখানে পৌঁছাতে। গাড়ি থেকে নেমেই একটা লাঠি জোগাড় করেই হাঁটা শুরু করলাম । ছাঙ্গে তে আমরা মূল জলপ্রপাতের একদম কাছে পৌঁছে গেছিলাম । এখানকার স্বচ্ছ নীল জলকে একবার স্পর্শ করার জন্যই এতদূর ছুটে আসা। এখানে পৌঁছে অনেকটা সময় কাটিয়ে ফিরতে গিয়ে খুবই কষ্ট হলো কারণ ফেরার পুরো পথটাই চড়াই । ফিরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে এবার আমাদের ফেরার পালা। যারা বিভিন্ন পাখি দেখতে ভালোবাসেন তারা খোলাখামে রাত্রিবাস করতে পারেন কিন্তু আমাদের সীমিত সময়ের জন্য আমরা ফিরে এলাম। আমাদের গাড়ি আবার থামলো গরুবাথানে পৌঁছে, হালকা কিছু খেয়ে স্টেশনে পৌঁছে গেলাম ঘন্টাখানেক আগেই। যথা সময়ে ট্রেন এসে গেল। এবার ঘরে ফেরার পালা।
Post By:- Anindya Naskar
0 Comments
Leave a Reply. |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |