আমার চোখে বাবুঘাট:- সলিল হোড় বাবুঘাট বলতেই আমাদের চোখের সামনে দুটো ছবি ভেসে ওঠে। এক, একটা বড়ো আর ভিড়আলা ঘাট, আর দুই, ঘাটের পাশের একটা ঘিঞ্জি বাসস্ট্যান্ড। ওই এলাকার স্টেট ব্যাংকের হেডঅফিসে আমি গেছি বেশ কয়েকবার, তবে তাড়া থাকায়, কোনোদিন ওদিকে যাওয়া হয় নি। এক শনিবারের সকালে আমি বেরিয়ে পড়েছিলাম, ভোরের বাবুঘাটের রূপ দেখতে। ডালহৌসিতে HSBC ব্যাংকের কাছে নেমে, গাস্টিন প্লেসের কাছে পৌঁছাতেই পড়লো সিংজির কচুরি জিলিপির দোকান। এটা তো আমার একটা দুর্বলতার জায়গা! চারটে কচুরি আর দুটো জিলাপি সাঁটিয়ে দিলাম! এই সিংজি কলকাতায় বাবার হাত ধরে এসেছিলেন ১২ বছর বয়সে, আর আজ তার ৬২ বছর বয়স। আপন করে নিয়েছেন এই শহরটাকে, দেখেছেন অনেক ওঠানামা। পাশেই চা হচ্ছিল, কিন্তু মুখের ভিতরে থেকে যাওয়া জিলিপির মিষ্টি গন্ধটা, নষ্ট করতে ইচ্ছা হলো না! হেঁটে হেঁটে চললাম স্ট্যান্ড রোডের দিকে। রাস্তার কলে জল ভরা হচ্ছে, ঝাঁট পড়ছে রাস্তায়, আর ফুটপাথে শুয়ে আছে পাগল ভবঘুরে। একটু এগিয়ে গেলে দেখলাম কয়লা ভাঙছে এক কিশোর। আমাকে ফটো তুলতে দেখে, একটু মাথা তুলে তাকালো, তারপর আবার নিজের কাজে মন দিলো। স্ট্যান্ড রোডে এসে হাঁটতে লাগলাম ঘাটের দিকে। একটু এগোতেই দেখলাম পসরা সাজিয়ে বসে আছে কলকাতার অন্যতম পুরোনো পেশার লোকজন... নাপিতরা! ওতো সকালে, লোকজন বিশেষ নেই। একজনকে পেলাম, তার আবার এক গালে দাঁড়ি কাটা প্রায় শেষ! আমি দাঁড়িয়ে ফটো তুলবো, সে দেখি একটা আবদার করলো! ফটো তুলে, সেই ফটো তাকে whatsapp করে দিতে হবে! করলাম whatsapp! একটু এগিয়ে, রাস্তা ক্রস করে ডানদিকে পড়লো বাবুঘাট। ১৮৩০ সালে এটি তৈরি করেন জানবাজারের জমিদার রানী রাসমণি, তার স্বর্গীয় স্বামী শ্রী রাজচন্দ্র দাসের স্মৃতিতে। কলোনিয়াল স্থাপত্যে তৈরি এই ঘাটের উপরে একটি প্রস্তরফলকে লেখা আছে এর জন্মবৃত্তান্ত। ঘাটের ঠিক গা ঘেঁসেই চলে গেছে চক্ররেলের লাইন। রানী রাসমণির ব্যপারে আর আলাদা করে কিছু লেখার দরকার নেই, কারণ ওনার নাম জগৎজোড়া! আমি যেদিন গেছিলাম, সেদিন ছিল রথের দিন। তাই বেশ সাজানো ছিল ঘাটের বাইরেটা, বসানো হয়েছিল এক অস্থায়ী জগন্নাথের মূর্তি। ওতো সকালেও বেশ ভিড় লেগে গেছে ঘাটে। লোকজন চা খাচ্ছে, পুজো করছে, আবার শ্রাদ্ধকর্ম করছে! পাশে বেশ বড়ো বড়ো পেয়ারা বিক্রি হচ্ছে! নিমের দাঁতন দিয়ে ব্রাশ করছে লোকজন! ঘাটের ভিতর দিয়ে নেমে পড়লাম সিঁড়িতে। ভাঁটা চলছে, সিঁড়িতে এঁটেল মাটির পলি ভরে রয়েছে। লোকজন চান করছে, আহ্নিক করছে গঙ্গার জলে দাঁড়িয়ে। আগে নাকি এখানে একটা স্টিমের পাম্প চলত, যেটা দিয়ে রাস্তা ধোয়ার জল ওঠানো হতো। এখন সেসবের পাট চুকে গেছে। ঘাটে বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি দেখা যায়, যার মধ্যে শিবলিঙ্গ বেশি। এবার গেলাম, ঘাটের এক পাশে, মালিশঅলাদের কাছে। লাইন দিয়ে কাঠের পাটাতন পাতা, তার উপর লোকজন শুয়ে, সরিষার তেল আর অলিভ অয়েল মালিশ নিচ্ছে! ফুল মালিশ ৩০০, আর হাফ মালিশ ১৫০। আমাদের মতো সাধারণ লোকেদের গায় অবশ্য ওসব মালিশ সহ্য হবে না! ঘাটের বাইরে আছে একটা বটগাছ, যার পাশে সার বেঁধের ঝোলানো আছে জলের পট, ওই গঙ্গাজল নিয়ে যাওয়ার জন্য। তার পাশেই বসে আছেন এক সন্ন্যাসিনী, নাম কমলা মা। কাশী থেকে গঙ্গার গতিপথ ধরে ঘুরতে ঘুরতে, এসে ঠেকেছেন এই কলকাতায়। বাংলাকে ভালোবেসে রয়ে গেছেন এখানেই। আমাকে ভালোবেসে আশীর্বাদ করলেন। দেখলাম এক বুটজুতো পড়া ভবঘুরেকে, যে ঘুরে ঘুরে বাঁশি বাজিয়ে চলেছে! অপূর্ব তার বাঁশির সুর, আমাকে মনে করিয়ে দিলো, সেই হ্যামলিনের বাঁশিওয়ালার কথা! এভাবেই চলতে থাকে বাবুঘাট ও তার লোকেদের জীবনযাত্রা। সময় আসে, সময় যায়, কিন্তু এই জায়গাটাতে যেন সময় থমকে দাঁড়ায়, আর দাঁড়িয়ে থেকে চেয়ে দেখে, এক মহিলা জমিদারের এই মহান কীর্তিকে, আর তাকে ঘিরে বয়ে চলা এতো মানুষের জীবনযাত্রাকে... Post By:- Salil Hore
0 Comments
আমার তিলোত্তমার কোথাও একটা "কাঁচের ডেকোরেশন করা জৈন মন্দির আছে"- শুনেছিলাম, কদিন আগে FB-র একটি post-থেকে জানতে পারলাম ওটা khanna-র কাছাকাছি।। আর আজ Bidhannagar -এ Training classটাও একটু আগে শেষ হয়ে গেল।।ব্যস্ সুযোগের সদ্ ব্যাবহার😆 গৌরীবাড়ী স্টপেজ(বিধাননগর স্টেশন ও খান্নার মাঝে) থেকে নেমে বাঁ হাতের গলি বরাবর Google map-এর direction মত চলতে চলতে উঃ কলকাতার আনাচে কানচে যে এখনো পূরোনো কলকাতা লেগে আছে,তার বেশ আভাষ পাচ্ছিলাম।কিছুদূর এগোতেই চোখে পড়লো আমার উদ্দেশ্য।আপাতদৃষ্টি তে বড় পাঁচিলঘেরা মঠ মনে হলেও,অনেককিছু বাকী ছিলো তখন। ভিতরে ঢুকে জানতে পারি একটি নয়, বিভিন্ন সময় তৈরী হওয়া চার চারটি জৈন মন্দির পূঞ্জীভূত এইখানে।বিভিন্ন সময়ে তৈরী হওয়াতে মন্দিরগুলির ধাঁচ আর শিল্পশৈলীও আলাদা। তবে প্রতিটিই সুন্দর।বিশেষ করে নবীনতরটির ভিতরের কাঁচের আর মিনাকারী-র নক্সার অপূর্ব মেলবন্ধন সত্যি বিস্ময় জাগায়।সাথে হাল্কা বৃষ্টি আর সন্ধ্যারতির ঘন্টাধ্বনিকে সাথে করে এক মন্দির থেকে আরেক মন্দিরে ঘুরে বেড়ালাম।মাঝে মাঝে ছবিশিকারীও হলাম বটে, তবে প্রতিটি মন্দিরের সব থেকে সুন্দর অংশ গর্ভগৃহের ছবি তোলা নিষেধ।অবশেষে 6:30pm এ বন্ধ হওয়ার সময় হল। আমিও বৃষ্টি মাথায় করে বেড়িয়ে এলাম।ততক্ষনে ক্ষিদে পেয়ে গেছে।সামনে ফুচকা,ভেলপুরী থাকলেও মন চাইছিল আরো বেশী কিছু।অগত্যা Zoomato-তে তল্লাশি। "Petuk-Kolkata" বড্ড কাছে আর অনেক পুরোনো এই দোকানটির "Chicken-Momo" (আরো অনেককিছুই পাওয়া যায়)খাদ্যরসিকদের বেশ অবগত।সুতরাং উদরপূজা সম্পন্ন হইল। Post By:- Ananya Basu
একমুঠো কলকাতা এটা কোনো ঘুরতে যাবার গল্প নয় এটা আমাদের শহর কলকাতা যেখানে রোজ নতুন নতুন স্বপ্ন জন্ম দেয় রাস্তার কুঁড়েঘরে আর প্রেম হারিয়ে যায় কোনো এক গাছের কোনে তবুও না স্বপ্ন দেখা বন্ধ হয় আর না প্রেমে পড়া রোজ একরাশ আশা নিয়ে পারি দিই এর অলিতে - গলিতে কত অপরিচিত একটা সম্পর্কের রূপ পায়, কত সম্পর্ক সুখ-দুঃখের সঙ্গী হয়ে ওঠে প্রতি মুহূর্তে তবুও তো দিনের শেষে এটাই মনে হয়...... আসি বন্ধু আবার দেখা হবে. Post By:- Soumayan Biswas
এটা দূরে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার গল্প নয়,এটা কোলকাতার গল্প "মনে প্রানে বাঙালী", "মাছে ভাতে বাঙালী",,,, আজ আমরা "চা কফি" তে বাঙালী,, ট্রাম আমাদের ঐতিহ্য, কোলকাতা পুরনো হোক বা নতুন, ঝগড়ায় হোক বা প্রেমে, বাবা মায়ের সাথে হোক বা প্রেমিক/প্রেমিকার সাথে, ট্রাম ছাড়া কোলকাতা ভাবাই যায় না,কি বলেন!!! ভালোবাসার শহর আমাদের কোলকাতা, প্রেমের শহর, মজার শহর। মহারাণী ভিক্টোরিয়া থেকে শুরু করে সুভাষ চন্দ্র বোস, টালিগঞ্জ থেকে শ্যামবাজার, কি নেই আমাদের কোলকাতায়,আর সেই কোলকাতা জুড়ে শিরা উপশিরায় জড়িয়ে আছে ট্রাম, আর বাঙালীর শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে চলেছে চা-কফি সহযোগে আড্ডা। আর এই দুই জিনিস যদি এক হয় তাহলে তো আর কথাই নেই,,,,, আজ ঠিক সেই মজা পেতেই আমি আর আমার বন্ধু চলে গেলাম সেই জায়গায় যেখানে এই দুয়ে মিশে এক হয়েছে,,হ্যা সত্যি, কোলকাতার প্রানকেন্দ্র অর্থাৎ এসপ্ল্যানেড এ। ট্রামে বসে কফি সহযোগে আড্ডা। বিশেষ দু কামরা বিশিষ্ট এসি ট্রাম স্মরণিকা। এখানে কফি বিস্কুট,চিপস, কোল্ড ড্রিংকস পাওয়া যায়। একঘন্টা বসার জন্য ১০টাকা টিকিট কেটে বসে পড়ুন, সাথে একটি আকর্ষণীয় মিউজিয়াম ও দেখতে পাবেন,যেখানে বেশ কিছু ট্রামের বিবরণ, ট্রামের টিকিট,কিছু পুরনো কয়েন দেখতে পাওয়া যায়। অফিসে বসের মুখখিঁচুনি খেয়ে মুড অফ! চলে আসুন এখানে,সস্তায় পুষ্টিকর,মুড ভালো হয়ে যাবে। আবার ধরুন বয়ফ্রেন্ড/গার্ল্ফ্রেন্ড আসতে দেরী করছে? এখানে বসে অপেক্ষা করুন,সময় ভালো কাটবে। কিপটে বন্ধুরা খাওয়ানোর জন্য বলছে!! ব্যাটাগুলোকে এখানে নিয়ে আসুন, ওদেরও ভালো লাগবে আবার আপনারও সস্তায় হয়ে যাবে। Post By:- Rahul Nath
Kali ghat mondir..... Ai mondir ti k nia onek etihash a6.... Ai khane naki sotir pa er kere angul ti pore6ilo. 51soti peeth er akti soti peeth er akti peeth... Aj gia6ilam ai Kalighat a.... Post By:- Sabarna Kundu Singha
-:টুং অন চার্চ, টেরিটিবাজার:- # সলিল হোড় আমার চিনে মন্দিরের দ্বিতীয় গন্তব্য ছিল টুং অন চার্চ। বাইশ নাম্বার ব্ল্যাক বার্ন লেনে, এর ঠিকানা। যদিও এর সামনে ফুটপাথবাসীরা নিজেদের উঠোন করে নিয়েছে, তাও সব কাটিয়ে সামনে গেলে দেখা যায়, লাল রঙের একটি সুন্দর দোতলা মন্দির। এর গ্রাউন্ড ফ্লোরে আগে ছিল নানকিং নামের একটি চিনে রেস্তোরাঁ, যা ১৯২৪ সালে খোলা হয়। এই নানকিংকে কলকাতার পুরোনো চিনে রেস্তোরাঁগুলোর মধ্যে অন্যতম বলা হয়, আর এর দোতালায় ছিল টুং অন চার্চ। ১৯৮০ সাল নাগাদ নানকিং আর মন্দির বন্ধ হয়ে যায়, নানান সম্পত্তি সম্পর্কীয় ঝামেলার জন্য। কলকাতাবাসী হারায় এক বিখ্যাত চিনে রেস্তরাঁকে। পরবর্তীকালে মন্দির আবার খুলে গেলেও, নানকিং সময়ের গর্ভে তলিয়ে যায়। একটা কাঠের গেট ঠেলে ঢুকতে হয় মন্দিরে। ঢুকে যেটা সবার আগে চোখে পড়ে, সেটা হলো একটা বেশ বড়ো বুদ্ধমূর্তি, কালো রঙের। সামনে ধূপ জ্বলছে। আলাপ হলো মিস্টার ওয়াই এর সাথে, যিনি ওই মন্দিরের কেয়ারটেকার। উনি আমাকে দোতালাটা ঘুরিয়ে দেখালেন। উপরে খুব সুন্দর কিছু পেন্টিং দেখলাম, আর দেখলাম এক যোদ্ধার মূর্তি। তিনি আরাধ্য এখানে। এখানেও ভোগ লাগানো হয়েছে লিকার চা। মিস্টার ওয়াইএর থেকেই জানলাম এই বাড়ির ব্যপারে। দুঃখ করলেন, এই বাড়ির হৃত গৌরব নিয়ে। তবে ওনার থেকে বেশ চমকপ্রদ একটা ইনফো পেলাম। সেটা হলো, চিনেরাও এখন জামাইষষ্ঠী করছে, আর সেটা আমাদের জামাইষষ্ঠীর একদিন আগে!!! উনি বললেন, চাইনিজ জামাইষষ্ঠী! আমি তো কিছুক্ষণ হা করে রইলাম এই কথা শুনে!!! উনি আমাকে নেমন্তন্ন করলেন, তোপসিয়ার দিকে যে চিনে নববর্ষের অনুষ্ঠান হয়, সেটা দেখতে আসার জন্য! সকাল সাতটা থেকে বেলা বারোটা পর্যন্ত খোলা থাকে এই চার্চ। এই এলাকায় এলে একবার ঢুঁ মেরে যেতেই পারেন, আর সকাল সকাল এলে জুটে যেতে পারে রাস্তায় বিক্রি হওয়া খোদ চিনেদের হাতের তৈরি ব্রেকফাস্ট! Post By:- Salil Hore
Aj abr o pou6 gia6ilam r ak sundor monomugdhokor poribesh er sondhan a.... Purir Jagannath Dev er Mondir er adol a toiri Kolkatar Birla Mondir a.. Mondir ti 3 te part a bivokto.Mondir er vitor a modhomoni hoa bose a6en"Radha Madhav". Tar left side a onno r akti mondir a bose a6en soyong"Shiva Shomvu". R right side onno r akti mondir a6en "Ma Santoshima". Mondir ti ake opor er sathe jukto. Mondir er vitor a photo tola nisidho... Tai baire thek e photo tule mon k santona dite holo. Mohanogorir buke ato sundor mondir sotti e kolponar otit...... Post By:- Sabarna Singha
Ami ai group er new member. Ami vison e vromon pipasu. Tai majhe majhe ai dik oi dik a chute jai ai vromon er nana sthan gulor thek notun notun ovigota neoa r nijek ai sob jaygay notun kre chenar jonno.... Sei rokom e bisuddho batash er khoj a kal pou6 gia6ilam amader kolkatar e akta bikkhato jaygay. Jayga ti holo "Pareshnath Temple".
Jaiga ti sotti khub sundor. Aiti "Jain" der temple. Ai khane pasapasi mot 4 ti mondir a6. Main mondir er vitor a akta sish mohol o r akti sundor boro jolashoy a6. Obosso proti ta mondir er sathe lagoa akti kore boro jolashoy a6. Bolabahullo, prothom mondir er jolasoy ti chara r baki 3 te jolashoy e akhon nogra obosthay pore roa6. Valo jolashoy a a6 boro boro rong be rong er ma6. Mondir vitorer kono pic tola allow nei. Tobuo ami tolar chests chests kore6ilam r sofol o hoa6i. Ak bela ghure asar jonno mohanogorir bike jayga ti sotti e monorom.... Ki6u pic o dilam....... || St. James' Church (Jora Girja), Kolkata ||
কোন জায়গাটা যে ভালো লেগে যাবে আর কোনটা যে লাগবে না সেটা আগে থেকে বোঝা যায় না। আবার এটাও আগে থেকে বলা যায় না যে, যে জায়গাটা আমার ভালো লাগবে সেটা আপনারও ভালো লাগবেই। কিন্তু আমার বিশ্বাস প্রাচীন কলকাতাকে যাঁরা ছুঁয়ে দেখতে চান, এ জে সি বোস রোডের উপরে অবস্থিত জোড়া গীর্জা তাঁদের ভালো লাগতে বাধ্য। আসুন তবে জমিয়ে গল্পটা বলি। শিয়ালদাহ থেকে বাসে কয়েক মিনিটের পথ অতিক্রম করে "জোড়া গীর্জা" স্টপেজে নেমেও আরও কয়েক পা হাঁটতে হলো চার্চের গেটের সামনে পৌঁছতে। ফুটপাথ থেকেই গাছপালার ফাঁক দিয়ে আমরা চার্চের বিল্ডিংটা দেখতে পাচ্ছিলাম আর যেটা নজর কেড়ে নিচ্ছিলো তা হলো এক জোড়া সুবিশাল চুড়ো (সম্ভবত এর জন্যেই নাম জোড়া গির্জা)। গেটের সামনে পৌঁছে দেখি বড়ো করে লেখা Saint James' Church 1864। হালকা লাল আর হলুদ পিলারের মাঝে লোহার গেট। জায়গাটা বেজায় থমথমে, পাখির ডাক ছাড়া আর কোনো সাড়া শব্দ নেই। আমরা গেট খুলে ভেতরে ঢুকেই দেখি ডান দিকে একটা ছোট্ট ঘর। সেখানে তিন জন সিকিউরিটি গার্ডের পোশাক পড়া লোক বসে গল্প করছেন, আমাদের দেখেই জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন। আমাদের দুটোই ধরাবাঁধা প্রশ্ন - প্রবেশ করা যাবে কি না আর ছবি তোলা যাবে কিনা। উত্তর এলো - এক্সটিরিয়রের ছবি তুলতে বাধা নেই কিন্তু চার্চের ভেতরে ফোটোগ্রাফি প্রহিবিটেড। আমাদের মুখে হাসি, মনে বল, হাতে চাঁদ। চট করে গেট পেরিয়ে ঢুকেই ক্যামেরা বার করে ফেললাম। একটা চওড়া পরিপাটি পিচের রাস্তা সোজা চলে গেছে চার্চকে বাঁহাতে রেখে, আরেকটা রাস্তা ডেভিয়েট করে বাঁদিকে ঘুরে গিয়ে চার্চের মাইন্ হলের দরজা অবধি গেছে সেখানটা খানিকটা পুরোনো দিনের গাড়িবারান্দার মতো ছাউনি দেওয়া। চার্চের গায়ে লাগোয়া একফালি ছোট্ট বাগান সেখানে একজন মালি ফুলগাছের পরিচর্চা করছেন। তা ছাড়াও চারিদিকে আরও অনেক গাছপালা আছে - যেন প্রকৃতি খুব যত্ন করে চার্চটিকে ঘিরে রেখেছে।আমরা বাঁদিকের পথটা নিলাম। চার্চের রঙ হলুদ আর ধূসর মেশানো আর চুড়োর রং হালকা লাল। চুড়োগুলিকে নিচ থেকে দেখলে খানিক রকেট এর মতো মনে হয়, চওড়া থেকে ধাপে ধাপে সরু হয়ে গেছে আর এক্কেবারে উপরে রয়েছে একটি করে ক্রস, আর চুড়োর মাঝামাঝি অংশে একটা করে ঘড়ি। এখানে একটা জিনিস খুব চোখে পড়লো, সেটা হলো lancet বা gothic arch এর আধিক্য। বুঝলেন না? গুগল বলছে "a narrow arch with a pointed crown" - তবুও না বুঝলে গুগলে ছবি সার্চ করে দেখতে পারেন। এখানে সব জানলা, দরজা বা ভেন্টিলেটর এই গথিক আর্চ শেপের। গাড়িবারান্দাটা দেখার মতো, কড়িবর্গা দেওয়া বিরাট এলাকা জুড়ে একটা ছাউনি, হয়তো এখানে একসময় ঘোড়ার গাড়ি এসে দাঁড়াতো। এখান থেকে চার্চে ঢোকার মেইন গেট। কিন্তু সেই দরজা এখন বন্ধ তাই আমাদের অন্য দরজা দিয়ে ঢুকতে হবে। আমরা গাড়িবারান্দাটা পেরিয়ে দেখি ওদিকে দেখার মতো কিছু নেই কিন্তু চার্চের একটা খুব ভালো ভিউ পাওয়া যাচ্ছে তাই আমরা কয়েকটা ছবি তুলে আবার আগের জায়গায় ফিরে এলাম।এদিকে চার্চে ঢোকার চারটে দরজা তবে তাদের মধ্যে একটাই মাত্র খোলা। দরজা অবধি পৌঁছতে হলে ফুলের বাগানের মাঝ বরাবর একটা পা দশেকের পথ অতিক্রম করে যেতে হবে। এই দরজা গুলোও গথিক স্টাইলের এবং প্রতিটা দরজার উপরে দুটো করে সরু আর্চের মতো নকল দরজা আর তাদের উপরে দেওয়ালটা একটি করে কোনের সৃষ্টি করেছে। চারটে কোন দেখে মনে হয় যেন তাসের ঘর সাজানো হয়েছে। বাগান পেরিয়ে আমরা যখন দরজার সামনে পৌঁছলাম তখন বুঝলাম, যে দরজাটা দূর থেকে ছোট মনে হচ্ছিলো সেটা আসলে দুজন মানুষের থেকেও বেশি উঁচু। দরজার পাল্লা হালকা ঠেলে ভেতরে ঢুকেই কয়েক মুহূর্ত আমরা চুপ। লালমোহনবাবুর একটা উক্তি মনে পরে গেলো "স্তব্ধভাষ রুদ্ধশ্বাস বিমুগ্ধ বিমূঢ় বিস্ময়"। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা চার্চের ডানদিকের একটা করিডোর। মেঝেতে সাদা কালো চেক। ডানদিকে অল্টার তাই বাঁদিকে একটা নজর দিয়ে আমরা ডানদিকে এগোলাম। সাদা রঙের দেওয়াল আর তাতে হালকা হলুদ রঙের বর্ডার।প্রকান্ড মোটা দুটো করে পিলারের মাঝে একটা করে দরজা আমাদের ডানদিকে, তার থেকেই যা আলো আসছে তাতেই আলোকিত হয়ে রয়েছে সারাটা চার্চের ইন্টেরিয়র। করিডোরের শেষ মাথায় একটা ঘর আছে।সেখানে বেশ কিছু ডার্ক ব্রাউন রঙের চেয়ার আর বেঞ্চ সার দিয়ে পরিপাটি করে পাতা, একদিকের দেওয়ালে একটা সাদা পর্দা টাঙানো আর তার সামনে একটা ক্রস ও উপরে একটা লাল বাতি ঝুলছে। উপরের দিকে তাকিয়ে আমাদের মাথা ঘুরে গেলো। বিশাল দেওয়ালের উপরের দিকে অনেকখানি জায়গা জুড়ে গোটা দশেক সরু জানালাতে লাল-নীল-সবুজ কাচ বসানো - সেখান দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে ঘরটা ঝলমল করছে। আর তারও উপরে কাঠের সিলিং।এরকম কাঠের সিলিং আমি কোথাও দেখিনি, সারাটা চার্চের সিলিংই কাঠের। কি কাঠ জানিনা তবে দেড়শো বছর যখন টিকে আছে তখন সেগুন হতেও পারে। অতিকায় স্থাপত্যগুলোর সামনে গিয়ে দাঁড়ালে নিজেকে বড্ড ক্ষুদ্র মনে হয়, এখানেও তার ব্যতিক্রম নেই। আমার আন্দাজে চার্চের মাথা আজকের দিনের একটা দোতলা বাড়ির সমান বা তারও বেশি উঁচু হতে পারে। রঙিন কাচ দিয়ে আলো ঢুকছে ঠিকই কিন্তু পুরো চার্চটাকে আলোকিত করতে পারছে না তাই একটা আলো আর অন্ধকারের খেলা চলছে সারাটা ইন্টেরিয়রে। পেছনে ফিরে দেখি যে প্যাসেজটা দিয়ে আমরা এলাম তার দোতলায় ব্যালকনির মতো কিছু একটা আছে ভীষণ মোটা আর কারুকার্যপূর্ণ কাঠের রেলিং দেওয়া। এরপরে অল্টারের সামনে আসতে চার্চের ইন্টেরিয়রের একটা পরিষ্কার ভিউ পেলাম। সেই একই ডার্ক ব্রাউন রঙের চেয়ার পাতা সার দিয়ে আর তাদের দুদিকে পরপর পিলার দোতলা অবধি উঠে গিয়েছে। ব্যালকনির একদম শেষে উপর দিকে একটা ভীষণ বড়ো গোলাকার কারুকার্য করা জানালা। আর তার সামনে একটা পাইপ অর্গান। আর ছাতের দিকে চাইলে দেখা যাবে অতিকায় সিলিং জুড়ে রয়েছে ঘন কাঠের কারুকার্য। সাদা আর হালকা হলুদের সাথে খুব কন্ট্রাস্টিং লাগছে এই ডার্ক ব্রাউন কাঠের রঙ। অল্টারের বাঁদিকে একটা ঘর আছে, একটি পর্দা সরিয়ে সেই ঘরে ঢুকতে হবে - আমরা সেই পর্দায় হাত দেওয়ার সাহস দেখাইনি। এই ঘরটার সামনে চারটে সোনালী রঙের এঙ্গেলের মূর্তি। আমরা যেখানটায় দাঁড়িয়ে আছি অর্থাৎ ঠিক অল্টারের সামনে, এখানে মাথার উপরে তাকালে দেখা যাবে যে দোতলা বাড়ির সমান সুবিশাল চারটে গথিক আর্চ জোড়া লেগেছে একে অন্যের সাথে। এই junction এর সিলিং টাও অতি সুন্দর করে কাঠ দিয়ে তৈরী। Wooden architecture এর একটা আধিপত্য আছে এই চার্চে সেটা স্বীকার করতেই হবে। অল্টারের সামনে অনেকটা জায়গা, আর খুব পরিপাটি ও সিম্পল। যেটা তাক লাগিয়ে দেয় সেটা হলো বিশালত্ব। দূর থেকে দেখলে পরিসরটা খুব বেশি মনে হয় না কিন্তু চেয়ারগুলোর দিকে তাকালে বোঝা যায় দেওয়ালের তুলনায় তারা কতটা ছোট আর সিলিং থেকে তারা কতটা নিচে। অল্টারের সামনে ডান ও বাম দিকের দেওয়ালের সামনে কয়েকটি চেয়ার ও ডেস্ক পাতা আর তাদের মাঝে আরেকটু দূরে গেলে অল্টার।সম্ভবত এটি প্রোটেস্টান্ট চার্চ তাই যীশুর মূর্তির জায়গায় আছে একটি ক্রস। যে টেবিলের উপরে ক্রসটি আছে সেটা মনে হলো শ্বেতপাথরের। এই সমস্ত জায়গাটার ব্যাকগ্রউন্ডে একটা সাদা পর্দা টাঙানো এবং ক্রসের উপরে ঝুলছে একটি লাল বাতি। যেখান থেকে পর্দাটা ঝুলছে ঠিক তার উপরে কতগুলো সরু হলুদ লাইন সোজা উঠে একেবারে সিলিঙে একটা পয়েন্টে গিয়ে জোড়া লেগে একটা ডোম আর আর্চের মাঝামাঝি একটা শেপ সৃষ্টি করেছে। আমরা দুদিকের চেয়ারের সারির মাঝখান দিয়ে এগিয়ে গেলাম। সিলিং থেকে ঝুলছে ছোট ছোট বাতি আর দেওয়াল থেকে মুখ বাড়িয়ে আছে ফ্যান। একটা এলিভেটেড ঘেরা জায়গা আছে - সম্ভবত বক্তৃতা দেওয়ার জন্যে, কারণ মাইকের ব্যবস্থা আছে আর প্রতিটা পিলারের গায়ে একটা করে স্পিকার বসানো আছে। আগেই একটা পাইপ অর্গানের কথা বলেছি এবার দেখলাম আরও একটা পাইপ অর্গান রয়েছে দোতলার ব্যালকনির এক কোনে। এই চার্চের আর্কিটেকচারে একটা magnificence আছে সেটা সামনে থেকে না দেখলে বোঝানো দুষ্কর। ১৮২৯ সালে আমহার্স্ট স্ট্রিটের কাছে সেন্ট জেমস' চার্চ স্থাপিত হয় কিন্তু তিন দশকের মধ্যেই সেটি ভাঙ্গনের সম্মুখীন হয়। সেই চার্চকে রিপ্লেস করতে এই চার্চ বানানো হয় ১৮৬৪ তে। অতএব দ্বিতীয় আটেম্প্ট যাতে নিখুঁত, পোক্ত ও আড়ম্বরপূর্ণ হয় কারিগরেরা নিশ্চই সেদিকে দৃষ্টি রেখেছিলেন। আফসোস একটাই, ইন্টেরিয়রের ছবি তোলা নিষেধ। তবে আপনাদের হতাশ করবো না, হাতে আঁকা দুটো ছবি রইলো, আশা করি ভালো লাগবে। আমার ভাবতে ভালো লাগে এই এ জে সি বোস রোড দিয়ে একসময় গরুর বা ঘোড়ার গাড়ি চলতো আর আজ বাস, ট্যাক্সি আর গাড়ি চলে। আজ চার্চের অপসিটে যেখানে ব্র্যান্ড ফ্যাক্টরি একদিন সেখানে হয়ত খোলা মাঠ ছিল। সেসব দিন আমরা দেখিনি আর আজ ত্থেকে একশো বছর পরে এই রাস্তার কি চেহারা হবে সেটাও আমরা দেখবো না কিন্তু গত দেড়শো বছরে এই সব প্রত্যক্ষ করেছে এবং ভবিষ্যতেও করবে সেইন্ট জেমস চার্চ। সৌজন্যে- https://www.facebook.com/antaroop |
Best Washing MachineCategories
All
Archives
November 2021
Best Autoclean Chimney |